ইরান- ইসরায়েল সংঘাত
ইরান ইস্যুতে ট্রাম্পের ‘দুই সপ্তাহ’ অপেক্ষা! এরপর যা করবেন..

মধ্যপ্রাচ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি সামরিক বা কূটনৈতিক হস্তক্ষেপ করবে কি না, সে বিষয়ে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলাইন লেভিট বৃহস্পতিবার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, "ইরানের সঙ্গে আলোচনার একটি বাস্তব সম্ভাবনা রয়েছে। সে কারণে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেবেন যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি পদক্ষেপ নেবে কি না।"
লেভিট বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে এখনো যোগাযোগ অব্যাহত আছে, তবে তা সরাসরি কি না, সে বিষয়ে স্পষ্ট কিছু জানাননি। তিনি জানান, সম্ভাব্য কূটনৈতিক সমঝোতার অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র চাইছে ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধিকরণ কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ করুক এবং পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের পথ বন্ধ করে দিক।
ট্রাম্পও বুধবার সাংবাদিকদের প্রশ্নে সরাসরি কোনো সিদ্ধান্ত ঘোষণা না করে কৌশলী উত্তর দেন: "আমি এটা করতেও পারি, না-ও করতে পারি। কেউ জানে না আমি কী করব।" তিনি আরও বলেন, "ইরান এখন বড় সমস্যায় আছে এবং আলোচনায় বসতে চায়। আমি বলি, ‘তবে এত মৃত্যু ও ধ্বংসের আগে কেন আলোচনা করনি?’”
ট্রাম্পের এ ধরনের সময়সীমা নির্ধারণ নতুন কিছু নয়। অতীতেও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ইস্যুতে তিনি ‘দুই সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত’ নেবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়েও সম্প্রতি তিনি বলেছিলেন, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আলোচনায় বসবেন কি না, তা তিনি দুই সপ্তাহের মধ্যে বুঝতে পারবেন।
লেভিট জানান, ট্রাম্প বর্তমানে প্রতিদিন হোয়াইট হাউসের সিচুয়েশন রুমে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের সঙ্গে ঘনঘন বৈঠক করছেন। পরিস্থিতি মূল্যায়ন এবং সম্ভাব্য জবাব নির্ধারণ করতেই এই বৈঠকগুলো অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক মহলেই ইরান নিয়ে ভিন্ন মত স্পষ্ট। কংগ্রেস সদস্য মারজোরি টেলর গ্রিন সতর্ক করে বলেছেন, ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়ানো উচিত নয়। তার মতে, ট্রাম্প নিজের নীতিতেই বরাবর বিদেশি সংঘাতে জড়ানো এড়িয়ে চলেছেন।
অন্যদিকে সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহামসহ আরও কিছু রিপাবলিকান নেতা ইরানের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের পক্ষে। তারা মনে করেন, ইরান এখন শুধু ইসরায়েলের নয়, যুক্তরাষ্ট্রেরও জাতীয় নিরাপত্তার জন্য একটি ‘স্পষ্ট ও তাত্ক্ষণিক হুমকি’ হয়ে উঠেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের সামনে এখন দুটি পরস্পরবিরোধী বাস্তবতা একদিকে তিনি তাঁর পূর্বঘোষিত ‘No more endless wars’ নীতিতে অবিচল থাকতে চান; অন্যদিকে তাঁর প্রশাসন একাধিক আন্তর্জাতিক ফ্রন্টে (ইরান, ইউক্রেন, চীন) চাপের মুখে রয়েছে।
ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের গবেষক রেবেকা সিমন্স বলেন, “ট্রাম্পের জন্য এখন সিদ্ধান্তটা শুধু কূটনৈতিক নয়, রাজনৈতিকও। তিনি যদি খুব দুর্বল অবস্থান নেন, তবে তাঁকে ‘মধ্যপ্রাচ্যে নেতৃত্ব হারানো প্রেসিডেন্ট’ বলা হবে। আবার আক্রমণাত্মক সিদ্ধান্ত নিলে, সেটা তাঁর নিজের নির্বাচনী ঘাঁটির সঙ্গে সাংঘর্ষিক হতে পারে।”
আগামী দুই সপ্তাহেই বোঝা যাবে, যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যের এই উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে শুধু ‘প্রভাবশালী মধ্যস্থতাকারী’ হিসেবে থাকবে, নাকি সরাসরি সামরিক কিংবা কৌশলগত হস্তক্ষেপে নামবে। ট্রাম্পের এই ‘দুই সপ্তাহ’ এখন শুধু মার্কিন রাজনীতি নয়, আন্তর্জাতিক কূটনীতি ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের জন্যও এক অস্থির প্রতীক্ষার সময়।
-ইসরাত, নিজস্ব প্রতিবেদক
পাঠকের মতামত:
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- ভবিষ্যতের গণতন্ত্র না পুরাতনের পুনরাবৃত্তি? ইউনুস-তারেক সাক্ষাৎ পর্যালোচনা
- জুলাই চার্টার ও জাতীয় ঐকমত্য: জামায়াতের অনুপস্থিতি কতটা যুক্তিসঙ্গত?
- রিজার্ভের দাপট: বিদ্যুৎ খাতের ১৪ কোম্পানি বিনিয়োগের নতুন ঠিকানা
- ইউনূস-তারেক ঐতিহাসিক ও সফল বৈঠক: সংস্কার, একতা ও ন্যায়বিচার— এই তিন স্তম্ভে গড়ে উঠুক নতুন বাংলাদেশ
- বিশ্ববিদ্যালয় সংকট, বাজেট বৈষম্য ও শিক্ষায় ন্যায্যতার দাবি
- উৎসব: ঈদের পর্দায় অনবদ্য এক উদযাপন
- Clash of Civilizations: মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধের নতুন রূপরেখা
- মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন ভূ-রাজনৈতিক আধিপত্যের নতুন কৌশল: চীন ও রাশিয়া কী করবে?
- লন্ডনে তারেক-ইউনূসের বৈঠকের পরে পর পর ২টি স্ট্যাটাসে কি বললেন পিনাকী?
- ইসরায়েলে ইরানি মিসাইল, নিহত অন্তত ৭
- তুরস্ক, সৌদি, ইরান-পাকিস্তানের হাতে ‘ইসলামিক আর্মি’ গঠন! কি হতে যাচ্ছে?
- ইসরায়েল নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে রাশিয়ার সতর্কবার্তা
- ভোক্তার কষ্ট বুঝছে সরকার:বাণিজ্য উপদেষ্টা
- ২৮ জুন ঢাকায় জনতার ঢল: সোহরাওয়ার্দী উদ্যান হবে মহাসমুদ্র!
- নির্বাচিত নারী, অলঙ্কার নয়: গণতন্ত্রে নারীর শক্তির সন্ধান