রামেকে করোনা রোগীর মৃত্যু, টয়লেটের দরজা ভেঙে উদ্ধার

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মনসুর রহমান (৬৫) নামের এক করোনা আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু হয়েছে। তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার বাসিন্দা ছিলেন। বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) সকালবেলা হাসপাতালের করোনা ইউনিটে সংযুক্ত টয়লেটে পড়ে গিয়ে তার মৃত্যু হয় বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। তবে চিকিৎসকদের ধারণা, তিনি হৃদরোগে (হার্ট অ্যাটাক) আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, মনসুর রহমান শ্বাসকষ্টসহ বেশ কিছু উপসর্গ নিয়ে গত ৯ জুন রামেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে ভর্তি হন। তার শারীরিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে নমুনা পরীক্ষার মাধ্যমে কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়। পরে ১৬ জুন তাকে করোনা ইউনিটে স্থানান্তর করে নিবিড় পর্যবেক্ষণের আওতায় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। তার অবস্থার জটিলতা বিবেচনায় রেখে অক্সিজেন সাপোর্টে রাখা হয়েছিল।
হাসপাতালের করোনা ইউনিটের মুখপাত্র ডা. আমিনুল ইসলাম কটন গণমাধ্যমকে জানান, সকালে রোগীর স্বজনেরা তাকে টয়লেটে নিয়ে যান। করোনা ইউনিটে রোগীদের একা টয়লেটে প্রবেশ করতে নিরুৎসাহিত করা হয় এবং দরজা পুরোপুরি না বন্ধ করার নির্দেশনা থাকে। তবে মনসুর রহমান টয়লেটের দরজা বন্ধ করে দেন। কিছু সময় পর হঠাৎ শব্দ শুনে এবং দীর্ঘক্ষণ কোনো সাড়া না পেয়ে স্বজনেরা ডাকাডাকি শুরু করেন। এরপর দ্রুত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানানো হলে, তারা টয়লেটের দরজা ভেঙে মনসুর রহমানকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে। কিন্তু ততক্ষণে তার প্রাণ চলে গেছে।
চিকিৎসকদের ধারণা, এই মৃত্যুর পেছনে প্রধান কারণ হতে পারে আকস্মিক হৃদরোগ। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ হৃদযন্ত্রে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষ করে যারা বয়স্ক এবং পূর্বে থেকেই হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। তদুপরি, টয়লেটের মতো একটি সুনির্জন জায়গায় পড়ে যাওয়ার ঘটনায় মৃত্যুর কারণ নির্ধারণে আরও তদন্ত প্রয়োজন হতে পারে। যদিও ময়নাতদন্ত ছাড়াই এই মৃত্যু ‘হার্ট অ্যাটাক’-জনিত বলেই আপাত সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে।
এই ঘটনায় জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে করোনা চিকিৎসা প্রক্রিয়ার কিছু বাস্তব সমস্যা। করোনা ইউনিটে ভর্তি রোগীদের শারীরিক এবং মানসিক দুর্বলতা বিবেচনায় নিয়ে আরও নিবিড় পর্যবেক্ষণ এবং সহায়ক সেবার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে রোগীদের নিরাপত্তা ও সহায়তার বিষয়ে অধিক সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট মহল।
মনসুর রহমানের মৃত্যু শুধু একটি ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডি নয়, বরং করোনা পরবর্তী স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় সংকটের একটি প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। বিশেষত যখন করোনা রোগীর যত্নের ক্ষেত্রে সীমিত জনবল, পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণহীনতা এবং তত্ত্বাবধানের অভাব একত্রে কাজ করে, তখন এমন দুঃখজনক ঘটনা প্রতিরোধ করা কঠিন হয়ে পড়ে।
-শরিফুল, নিজস্ব প্রতিবেদক
পাঠকের মতামত:
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- ভবিষ্যতের গণতন্ত্র না পুরাতনের পুনরাবৃত্তি? ইউনুস-তারেক সাক্ষাৎ পর্যালোচনা
- জুলাই চার্টার ও জাতীয় ঐকমত্য: জামায়াতের অনুপস্থিতি কতটা যুক্তিসঙ্গত?
- বিশ্ববিদ্যালয় সংকট, বাজেট বৈষম্য ও শিক্ষায় ন্যায্যতার দাবি
- ইউনূস-তারেক ঐতিহাসিক ও সফল বৈঠক: সংস্কার, একতা ও ন্যায়বিচার— এই তিন স্তম্ভে গড়ে উঠুক নতুন বাংলাদেশ
- উৎসব: ঈদের পর্দায় অনবদ্য এক উদযাপন
- Clash of Civilizations: মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধের নতুন রূপরেখা
- চলমান সংঘাতে ইসরায়েলের ১০টি বড় ক্ষতি
- মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন ভূ-রাজনৈতিক আধিপত্যের নতুন কৌশল: চীন ও রাশিয়া কী করবে?
- ইসরায়েলে ইরানি মিসাইল, নিহত অন্তত ৭
- তুরস্ক, সৌদি, ইরান-পাকিস্তানের হাতে ‘ইসলামিক আর্মি’ গঠন! কি হতে যাচ্ছে?
- ভোক্তার কষ্ট বুঝছে সরকার:বাণিজ্য উপদেষ্টা
- ইসরায়েল নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে রাশিয়ার সতর্কবার্তা
- ২৮ জুন ঢাকায় জনতার ঢল: সোহরাওয়ার্দী উদ্যান হবে মহাসমুদ্র!
- এবার পাকিস্তানকে হামলার হুমকি দিল ইসরায়েল
- নির্বাচিত নারী, অলঙ্কার নয়: গণতন্ত্রে নারীর শক্তির সন্ধান