ইরান-ইসরাইল সংঘাত
পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি থেকে বের হতে চায় ইরান?

ইরান পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি, যাকে সংক্ষেপে এনপিটি (Nuclear Non-Proliferation Treaty) বলা হয়, থেকে সরে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে। এ লক্ষ্যে দেশটির পার্লামেন্টে একটি বিল উত্থাপনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে।
সোমবার (১৬ জুন) ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাঈল বাকাই হামানে এ তথ্য জানিয়েছেন। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা এই খবর প্রকাশ করেছে।
বাকাই আরও বলেন, ‘তেহরান সবসময় গণবিধ্বংসী অস্ত্র তৈরির বিরোধিতা করে এসেছে এবং এ বিষয়ে তাদের অবস্থান স্পষ্ট।’ তবে বর্তমান আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি ও পশ্চিমা দেশগুলোর চাপের প্রেক্ষাপটে ইরান এ চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পথ খুঁজছে।
এনপিটি চুক্তি কী?
১৯৬৮ সালে জাতিসংঘের উদ্যোগে স্বাক্ষরিত এনপিটি চুক্তির মূল উদ্দেশ্য হলো বিশ্বব্যাপী পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার রোধ, পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণে সহায়তা এবং শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক শক্তি ব্যবহারে সহযোগিতা নিশ্চিত করা। এখন পর্যন্ত বিশ্বের ১৯১টি দেশ এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে, যার মধ্যে ইরানও অন্যতম।
চুক্তি অনুযায়ী, যেসব দেশ ইতোমধ্যে পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী নয়, তারা ভবিষ্যতেও এ ধরনের অস্ত্র অর্জন করবে না বলে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়। সেইসঙ্গে অস্ত্রধারী দেশগুলো অস্ত্র কমানোর প্রতিশ্রুতি দেয়। প্রতি পাঁচ বছর পরপর এই চুক্তির বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণ করতে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
ইরানের অবস্থান এবং প্রেক্ষাপট
ইরান দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছে যে তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে, যেমন বিদ্যুৎ উৎপাদন ও চিকিৎসা খাতে ব্যবহারের জন্য। তবে পশ্চিমা দেশগুলো, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল, সন্দেহ করে যে ইরান গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
২০১৫ সালে ছয়টি প্রধান শক্তিধর দেশের (P5+1) সঙ্গে ইরান একটি পারমাণবিক চুক্তিতে (JCPOA) স্বাক্ষর করলেও ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার পর পরিস্থিতি জটিল হয়ে ওঠে। এরপর ইরান ধাপে ধাপে চুক্তির বিভিন্ন শর্ত লঙ্ঘন করে, যার মধ্যে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ সীমা অতিক্রম করাও রয়েছে।
বর্তমানে ইরানের ওপর কঠোর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা এবং কূটনৈতিক চাপ অব্যাহত রয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে এনপিটি থেকে সরে যাওয়ার সম্ভাব্য পদক্ষেপকে অনেকেই আন্তর্জাতিক পারমাণবিক স্থিতিশীলতার জন্য একটি বড় ধাক্কা হিসেবে দেখছেন।
সম্ভাব্য প্রভাব
ইরান যদি আনুষ্ঠানিকভাবে এনপিটি চুক্তি থেকে সরে আসে, তাহলে এটি বিশ্বব্যাপী পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ উদ্যোগের প্রতি একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হবে। এতে মধ্যপ্রাচ্যে অস্ত্র প্রতিযোগিতার আশঙ্কাও বাড়তে পারে। একই সঙ্গে ইরানের ওপর নতুন করে কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক চাপ বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে।
এই পদক্ষেপ বাস্তবায়ন হলে এটি হবে একটি নজিরবিহীন ঘটনা, কারণ বেশিরভাগ দেশই এখন পর্যন্ত এই চুক্তির আওতায় থাকার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে। ফলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ কূটনৈতিক পদক্ষেপ ইরানের এই সিদ্ধান্তকে ঘিরেই এখন গুরুত্ব পাচ্ছে।
-আশিক, ডেস্ক রিপোর্টার।
পাঠকের মতামত:
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- ভবিষ্যতের গণতন্ত্র না পুরাতনের পুনরাবৃত্তি? ইউনুস-তারেক সাক্ষাৎ পর্যালোচনা
- শেয়ারবাজারে এল বড় সুখবর!
- স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ
- রিজার্ভের দাপট: বিদ্যুৎ খাতের ১৪ কোম্পানি বিনিয়োগের নতুন ঠিকানা
- ইউনূস-তারেক ঐতিহাসিক ও সফল বৈঠক: সংস্কার, একতা ও ন্যায়বিচার— এই তিন স্তম্ভে গড়ে উঠুক নতুন বাংলাদেশ
- নারায়ণগঞ্জে বিএনপি নেতার বাড়িতে সেনা অভিযান:উদ্ধার ইয়াবা ও ধারালো অস্ত্র!
- মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন ভূ-রাজনৈতিক আধিপত্যের নতুন কৌশল: চীন ও রাশিয়া কী করবে?
- তিন মাসেই যে ১০ বেসরকারি ব্যাংকে ৩২ হাজার কোটি টাকার আমানত বৃদ্ধি!
- তারেক রহমানের দেশেফেরার সম্ভাব্য সময় জানালেনমির্জা ফখরুল
- লন্ডনে তারেক-ইউনূসের বৈঠকের পরে পর পর ২টি স্ট্যাটাসে কি বললেন পিনাকী?
- তুরস্ক, সৌদি, ইরান-পাকিস্তানের হাতে ‘ইসলামিক আর্মি’ গঠন! কি হতে যাচ্ছে?
- ইসরায়েলে ইরানি মিসাইল, নিহত অন্তত ৭
- ২৮ জুন ঢাকায় জনতার ঢল: সোহরাওয়ার্দী উদ্যান হবে মহাসমুদ্র!
- নির্বাচিত নারী, অলঙ্কার নয়: গণতন্ত্রে নারীর শক্তির সন্ধান
- ডিএসইতে সাধারণ বীমা খাতের প্রান্তিক বিশ্লেষণ:মুনাফা বৃদ্ধির শীর্ষে কারা?