করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট কতটা ভয়ানক?

স্বাস্থ্য ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ১০ ১১:২৪:৩৮
করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট কতটা ভয়ানক?

করোনাভাইরাসের অমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের একটি উপধরন হলো এক্সবিবি, যা মূলত BA.2.10.1 এবং BA.2.75—এই দুটি অমিক্রন সাব-ভ্যারিয়েন্টের সংমিশ্রণে গঠিত। এক্সবিবি প্রথম শনাক্ত হয় ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময়ে এবং পরে এটি ধীরে ধীরে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে।

এই উপধরনটি অত্যন্ত সংক্রামক এবং এতে রয়েছে ইমিউন এস্কেপ ক্ষমতা—অর্থাৎ এটি প্রাকৃতিকভাবে সংক্রমণ থেকে সুস্থ হওয়া ব্যক্তির রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা কিংবা টিকা নেওয়া ব্যক্তির প্রতিরোধ ক্ষমতাকেও আংশিকভাবে এড়িয়ে যেতে পারে। তবে এখন পর্যন্ত এক্সবিবি উপধরনের কারণে মারাত্মক অসুস্থতা বা মৃত্যুহার বাড়ার কোনো সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, হালনাগাদ বুস্টার ডোজ—বিশেষ করে এক্সবিবি-ভিত্তিক ভ্যাকসিন—এই উপধরন থেকে সৃষ্ট গুরুতর অসুস্থতা, হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন এবং মৃত্যুর ঝুঁকি কমাতে কার্যকর ভূমিকা রাখে। যদিও এই ভ্যাকসিন সংক্রমণ পুরোপুরি ঠেকাতে সক্ষম নয়, তবে তা জটিলতা হ্রাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

এক্সবিবি থেকে ইতোমধ্যে আরও কয়েকটি উপধরনের সৃষ্টি হয়েছে, যেমন: এক্সবিবি.১, এক্সবিবি.১.৫ এবং সাম্প্রতিক আলোচিত এনবি.১.৮.১। এসবের মধ্যে কিছু কিছু ধরন আরও বেশি সংক্রামক হলেও, টিকা এখনো এসবের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরক্ষা দিয়ে চলেছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এক্সবিবি এবং এর উপধরনগুলোকে Variant of Interest বা Variant Under Monitoring হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। এর অর্থ হলো, এই ধরনগুলোর ওপর বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণ চলছে, কারণ এগুলো ভবিষ্যতে জনস্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।

এদিকে গ্লোবাল ভাইরাস নেটওয়ার্ক (GVN) জানিয়েছে, যদিও এক্সবিবি উপধরনের সংক্রমণ ক্ষমতা বেশি, তবে এখন পর্যন্ত এটি গুরুতর অসুস্থতা বা মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ায় এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। সংস্থাটি সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছে এবং টিকা গ্রহণে গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

সাধারণ মানুষের করণীয় হিসেবে বিশেষজ্ঞরা কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন:

১. টিকার সর্বশেষ ডোজ নেওয়া হয়েছে কিনা, তা নিশ্চিত করুন।২. জনসমাগমপূর্ণ জায়গায় গেলে অবশ্যই মাস্ক পরুন।৩. উপসর্গ দেখা দিলে করোনা পরীক্ষা করুন এবং প্রয়োজনে আইসোলেশনে থাকুন।৪. স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মেনে চলুন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এক্সবিবি ও এর উপধরনগুলো অমিক্রনের নতুন রূপ হলেও এখন পর্যন্ত তা গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়নি। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, টিকা গ্রহণ এবং সচেতন থাকাই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

টিকা সংক্রান্ত পরামর্শ হিসেবে গ্লোবাল ভাইরাস নেটওয়ার্ক বলছে: যেহেতু কোভিড-১৯-এর এখনো সম্পূর্ণ প্রতিকার নেই, তাই প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নেওয়াই সবচেয়ে কার্যকর উপায়। এ লক্ষ্যে কিছু বিষয় খেয়াল রাখা জরুরি:

১. ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সী এবং ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের জন্য হালনাগাদ বুস্টার ডোজ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।২. ৬ মাস বয়স থেকে সব বয়সীদের টিকার সম্পূর্ণ ডোজ নেওয়া উচিত।৩. শিশু ও কিশোরদের বছরে অন্তত একবার আপডেটেড টিকা দেওয়া প্রয়োজন, কারণ আগের টিকার সুরক্ষা সময়ের সঙ্গে কমে যেতে পারে।৪. গর্ভবতী নারীদের টিকা নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এতে শুধু মায়ের নয়, নবজাতকেরও প্রথম ৬ মাস পর্যন্ত সুরক্ষা পাওয়া যায়।

গবেষণায় দেখা গেছে, গর্ভাবস্থায় সংক্রমণের ফলে শিশুর জন্মের আগেই মৃত্যুঝুঁকি বাড়ে এবং পরবর্তীতে দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য জটিলতা দেখা দিতে পারে। ফ্লু এবং কোভিড টিকা একসঙ্গে নেওয়া যেতে পারে এবং এতে কোনো গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।

এদিকে দেশে করোনায় আক্রান্তের হার আবারও বাড়তে শুরু করেছে। রোববার (৮ জুন) স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এদিন চারজনের করোনা পরীক্ষা করে তিনজনের শরীরে ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। তবে কোনো মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। এই পরিস্থিতিতে সোমবার (৯ জুন) স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় নতুন নির্দেশনা জারি করেছে।

নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি বিবেচনায় জনসমাগমপূর্ণ এলাকায় সবাইকে মাস্ক পরার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। বিশেষ করে বয়স্ক ও অসুস্থ ব্যক্তিদের এমন স্থান এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের এপ্রিল মাসে দেশে ২৩ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। কিন্তু মে মাসে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৮৬-তে। চলতি মাসে (জুন) করোনায় আক্রান্ত হয়ে ইতোমধ্যে একজন মারা গেছেন।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ২০ লাখ ৫১ হাজার ৭৪২ জন। এদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ২০ লাখ ১৯ হাজার ৩৬৩ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৫০০ জনের।

পাঠকের মতামত:

ট্যাগ: করোনা

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

একজন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ, সামাজিক ব্যবসার পথপ্রদর্শক এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণের নেতৃত্বদানকারী রাষ্ট্রনায়ক—এই তিনটি পরিচয়ই এখন সমভাবে প্রযোজ্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের... বিস্তারিত