ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনের প্রেক্ষাপট

মতিঝিল-পল্টনের আসনে হেভিওয়েট বনাম নবাগত: আলোচনায় ঢাকা-৮

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ১৭ ২১:৩৯:৩৫
মতিঝিল-পল্টনের আসনে হেভিওয়েট বনাম নবাগত: আলোচনায় ঢাকা-৮
সত্য নিউজ গ্রাফিক্স

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সারাদেশের মানুষের আগ্রহ বাড়তে শুরু করেছে। বিভিন্ন আসনে নানা ধরনের রাজনৈতিক সমীকরণ নিয়ে আলোচনা চলছে। এর মধ্যে রাজধানীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল আসন ঢাকা-৮ (শাহবাগ, মতিঝিল, রমনা, পল্টন ও শাহজাহানপুর) এবার ভিন্ন কারণে আলোচনায় এসেছে। এই আসনে অভিজ্ঞতার বিপরীতে তারুণ্য এবং প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থীর এক জমজমাট লড়াই দেখার অপেক্ষায় আছেন ভোটাররা।

কেন গুরুত্বপূর্ণ ঢাকা-৮

ঢাকা-৮ আসনকে প্রায়শই রাজধানীর 'রাজনৈতিক স্নায়ুকেন্দ্র' বা 'হার্ট' হিসেবে বিবেচনা করা হয়। দেশের প্রধান প্রশাসনিক কেন্দ্র সচিবালয়, প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিল, রাজনৈতিক সমাবেশের কেন্দ্রবিন্দু পল্টন ময়দান এবং দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বড় অংশ এই আসনেই পড়েছে। তাই এই আসনের নির্বাচনী ফলাফল সব সময়ই একটি বিশেষ তাৎপর্য বহন করে।

বিএনপির 'হেভিওয়েট' প্রার্থী মির্জা আব্বাস

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এই গুরুত্বপূর্ণ আসনে তাদের অন্যতম শীর্ষ নেতা ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস উদ্দিন আহমেদকে (মির্জা আব্বাস) প্রাথমিক মনোনয়ন দিয়েছে। তিনি ঢাকার সাবেক মেয়র এবং বিএনপির একজন পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত। ঢাকার রাজনীতিতে তার দীর্ঘদিনের বিচরণ এবং দলের ভেতরে ও ভোটারদের মধ্যে তার একটি শক্ত ভিত্তি রয়েছে। মির্জা আব্বাসের মতো একজন 'হেভিওয়েট' প্রার্থীর অংশগ্রহণ এই আসনের নির্বাচনকে স্বাভাবিকভাবেই গুরুত্বের শীর্ষে নিয়ে এসেছে।

স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় হাদি

অন্যদিকে, বিএনপির এই হেভিওয়েট প্রার্থীর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মাঠে নেমেছেন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি। তিনি এই আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে লড়ছেন। একজন তরুণ মুখ হিসেবে এবং স্বতন্ত্র পরিচয়ে তিনি ভোটারদের, বিশেষত নতুন প্রজন্মের ভোটারদের, নজর কাড়ার চেষ্টা করছেন।

শরিফ ওসমান হাদি এরই মধ্যে তার নির্বাচনী প্রচারণার মাধ্যমে আলোচনায় এসেছেন। গত ১৫ নভেম্বর মতিঝিলের এ জি বি কলোনিতে প্রচারণা চালানোর সময় তার গায়ে দুর্বৃত্তরা ময়লা পানি ছুড়ে মারে বলে অভিযোগ ওঠে। এই ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে হাদিকে বলতে শোনা যায়, "ভাই ময়লা পানি যে মারছেন আরও মারতে পারেন, সমস্যা নেই মারেন...।" প্রচারণার শুরুতেই এই ধরনের বাধার শিকার হওয়ায় তিনি ভোটারদের সহানুভূতির পাশাপাশি তার দৃঢ় মনোবলের কারণেও আলোচনায় থাকছেন।

অভিজ্ঞতা বনাম নতুন ধারার রাজনীতি

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ঢাকা-৮ আসনের এই লড়াইটি হতে যাচ্ছে 'অভিজ্ঞতা বনাম নতুন মুখ'-এর এক আদর্শ উদাহরণ। একদিকে মির্জা আব্বাস তার দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা এবং দলের শক্তিশালী সাংগঠনিক কাঠামোর ওপর নির্ভর করে লড়বেন। অন্যদিকে, শরিফ ওসমান হাদি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত দলগুলোর বাইরের ভোটারদের এবং পরিবর্তনের পক্ষে থাকা তরুণদের ভোট টানার চেষ্টা করবেন।

মতিঝিল, পল্টন ও শাহবাগের মতো বৈচিত্র্যময় এলাকার ভোটাররা কাকে বেছে নেবেন, তা নিয়ে এখনই জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়ে গেছে। এই আসনে যেমন ব্যবসায়ী ও সরকারি চাকরিজীবীদের একটি বড় ভোটব্যাংক রয়েছে, তেমনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার তরুণ শিক্ষার্থী ও প্রগতিশীল ভোটারদেরও একটি বড় প্রভাব রয়েছে। সব মিলিয়ে, ঢাকা-৮ আসনের এই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ লড়াইটি এবারের নির্বাচনের অন্যতম আকর্ষণীয় একটি ইভেন্ট হতে চলেছে।


২৮ নেতার বহিষ্কারাদেশ তুলে নিল বিএনপি, রিজভীর বিজ্ঞপ্তিতে ঘোষণা

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ১৭ ২১:১৯:৩০
২৮ নেতার বহিষ্কারাদেশ তুলে নিল বিএনপি, রিজভীর বিজ্ঞপ্তিতে ঘোষণা
ছবিঃ সংগৃহীত

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) তাদের ২৮ জন নেতার ওপর থেকে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে নিয়েছে। এর আগে, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং দলের নীতি ও আদর্শের পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে তাদের বহিষ্কার করা হয়েছিল। নেতারা আবেদন করার পর, দলীয় সিদ্ধান্তে তাদের বহিষ্কারাদেশ তুলে নেওয়া হয়। সোমবার (১৭ নভেম্বর) দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এই ২৮ জনের মধ্যে একটি বড় অংশই গাজীপুর মহানগর এলাকার। তাদের মধ্যে রয়েছেন গাজীপুর মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. তানভীর আহম্মেদ, সাবেক অর্থবিষয়ক সম্পাদক মো. ছবদের হাসান, সাবেক সদস্য মো. আবুল হাশেম, খায়রুল আলম এবং মো. মনির হোসেন (মাটি মুনির)।

আরও রয়েছেন বাসন মেট্রো থানা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. মনির হোসেন মনির, বাসন থানা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোসলেম উদ্দিন চৌধুরী মুসা, বাসন থানার ১৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি মো. রফিকুল ইসলাম রাতা এবং গাজীপুর মেট্রো থানা বিএনপির সাবেক সদস্য আনোয়ার সরকার।

একই এলাকার ১১, ১২ ও ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফিরোজা আক্তার এবং ২৮, ২৯ ও ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাসিনা আক্তার বীথিও দলে ফিরেছেন। এছাড়া ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপি নেতা মো. মাহাফুজুর রহমান, ১৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহীন আলম এবং ১১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট আলমের বহিষ্কারাদেশও প্রত্যাহার করা হয়েছে।

গাজীপুর ছাড়াও দেশের অন্যান্য জেলার বেশ কয়েকজন নেতার প্রাথমিক সদস্যপদ ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই তালিকায় আছেন বরিশাল দক্ষিণ জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার নিয়ামতি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আব্দুস সালাম মৃধা, দিনাজপুর জেলা বিএনপির উপদেষ্টা মো. রেজওয়ানুল ইসলাম রিজু, কুমিল্লা উত্তর জেলার মেঘনা উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মো. রমিজ উদ্দিন লন্ডনি ও যুগ্ম আহ্বায়ক দিলারা শিরিন এবং সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সহ স্থানীয় সরকার বিষয়ক সম্পাদক আরিফুল ইসলাম জুয়েল।

আরও রয়েছেন নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সহ সভাপতি এস এম আসলাম ও সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক টি এইচ তোফা, সিরাজগঞ্জ জেলার বেলকুচি উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুর রাজ্জাক মন্ডল, টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল-মামুন সিদ্দিকী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ভোলাহাট উপজেলা বিএনপির সাবেক কোষাধ্যক্ষ মো. কামাল উদ্দিন এবং ছাতক উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য মো. ইজাজুল হক রনি।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও দুটি বিশেষ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে। হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সৈয়দ লিয়াকত হাসান, যিনি এর আগে স্বেচ্ছায় দল থেকে পদত্যাগ করেছিলেন, তার সেই পদত্যাগপত্র আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

এছাড়াও, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়ি উপজেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যক্ষ মো. খুরশিদ আলমের (মতি) ওপর যে স্থগিতাদেশ ছিল, তা প্রত্যাহার করে তাকে বিএনপির স্বপদে পুনর্বহাল করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, এর আগেও বিভিন্ন সময়ে বিএনপি বহিষ্কৃত বেশ কয়েকজন নেতার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করেছিল।


হাসিনার মৃত্যুদণ্ড: আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ কী?

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ১৭ ২০:৫৩:০৫
হাসিনার মৃত্যুদণ্ড: আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ কী?
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি: এএফপি

২০১০ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়েই মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত যুদ্ধাপরাধের বিচার করার উদ্দেশ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছিল। এক দশকের বেশি সময় পর, সেই একই আদালতেই জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা।

এই রায়ের পর এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে, এটি কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষিত দল আওয়ামী লীগের ওপর কী ধরনের প্রভাব ফেলবে? শেখ হাসিনা এখনও দলটির প্রধান। এই রায়ের ফলে তার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কেমন দাঁড়াবে, তা নিয়েও বিশ্লেষণ শুরু হয়েছে।

গত কয়েক মাস ধরেই বাংলাদেশ সরকার শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার (প্রত্যর্পণ) জন্য ভারতের কাছে দাবি জানিয়ে আসছে। এর আগে আদালত অবমাননার একটি মামলায় সাজা হওয়ার পরও তাকে প্রত্যর্পণের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছিল। কিন্তু ভারত সেই অনুরোধে কোনো আনুষ্ঠানিক জবাব দেয়নি।

এই প্রসঙ্গে বিবিসির বাংলা বিভাগের সম্পাদক মীর সাব্বির লিখেছেন, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সেই নির্বাচনে যদি একটি নতুন সরকার ক্ষমতায় আসে এবং তারা শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের বিষয়ে জোরালো দাবি তোলে, অথবা তিনি যেন ভারতে বসে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাতে না পারেন সেজন্য চাপ সৃষ্টি করে, তবে সেই নির্বাচিত সরকারের অনুরোধ উপেক্ষা করা ভারতের জন্য আরও কঠিন হয়ে উঠতে পারে।

এই রায় ঘোষণার আগেই আদালত গণমাধ্যমে শেখ হাসিনার 'উসকানিমূলক' বক্তব্য প্রচারের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল, যার নিন্দা জানিয়েছিল আওয়ামী লীগ। এর পাশাপাশি, অন্তর্বর্তী সরকার একটি নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে দল হিসেবে আওয়ামী লীগের কার্যক্রমও নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।

গণঅভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর থেকেই আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রায় 'অদৃশ্য' দেখা যাচ্ছে। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের বেশিরভাগ নেতাই বর্তমানে নির্বাসনে রয়েছেন। তাদের কেউ কেউ ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন, আবার অনেকেই দেশে গ্রেপ্তার হয়েছেন।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আজকের এই রায়ের পর যদি শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রচার বা আওয়ামী লীগের কার্যক্রমের ওপর আরও নতুন বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়, তবে দলটি আরও বেশি চাপের মুখে পড়বে। যদিও দলটি দাবি করছে যে, তাদের নেতৃত্ব নিয়ে কোনো অভ্যন্তরীণ বিতর্ক নেই, তবে এখন দেখার বিষয় হলো, এই ক্রমবর্ধমান আইনি সীমাবদ্ধতা এবং প্রত্যর্পণের কূটনৈতিক চাপের মুখে আগামী দিনে দলটি ভিন্ন কোনো কৌশল গ্রহণ করতে বাধ্য হয় কি না।


শুধু ব্যক্তি নয়, দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার চাই: নাহিদ ইসলাম

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ১৭ ১৮:১০:৪০
শুধু ব্যক্তি নয়, দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার চাই: নাহিদ ইসলাম
ছবিঃ সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়কে স্বাগত জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। তবে দলটি শুধু ব্যক্তির নয়, দল হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগেরও বিচার দাবি করেছে। সোমবার (১৭ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এই দাবি জানান।

নাহিদ ইসলাম রায় দ্রুত কার্যকরের ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত শেখ হাসিনাকে অবিলম্বে দিল্লি থেকে দেশে ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ নিতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের নিরাপত্তা উপদেষ্টার আসন্ন ভারত সফরের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, "আমরা আশা করি, তিনি শেখ হাসিনাকে সঙ্গে নিয়ে ফিরবেন।" এনসিপি আহ্বায়ক আরও বলেন, "আগামী এক মাসের মধ্যে তাকে দেশে এনে ফাঁসি কার্যকর করতে হবে।"

তিনি শুধু শেখ হাসিনাই নয়, মৃত্যুদণ্ড পাওয়া সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ এবং 'ফ্যাসিস্ট' সরকারের সময় অপরাধে জড়িত সবাইকে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান। নাহিদ ইসলাম বলেন, "যারা বর্তমানে কারাগারে আছেন, তাদের মামলার রায়ও দ্রুত দিতে হবে। এটা শুধু রাজনৈতিক দলের দাবি নয়, এটা জুলাই-আগস্টের ভুক্তভোগীদেরও দাবি।"

দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচারের যৌক্তিকতা তুলে ধরে নাহিদ ইসলাম বলেন, "আজকের রায়ের মধ্য দিয়ে এটা পরিষ্কার হয়েছে যে, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে গণহত্যার নির্দেশদাতা ও পরিকল্পনাকারী ছিলেন। এর ফলে দল হিসেবে আওয়ামী লীগও মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত। তাই দলেরও বিচার শুরু করতে হবে।"

তিনি জুলাই বিপ্লবের স্মৃতিচারণ করে বলেন, "১৬ জুলাই আবু সাঈদকে হত্যার পর আমরা শপথ নিয়েছিলাম—বিচার আদায় করেই ছাড়ব। জুলাই বিপ্লবে হাজার হাজার শহীদ ও আহতদের ওপর যে জুলুম হয়েছে, তার বিচার আজ দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে।"

এনসিপির আহ্বায়ক এই রায়কে বাংলাদেশের বিচারিক ইতিহাসে একটি 'মাইলফলক' হিসেবে বর্ণনা করেন। তবে তিনি বলেন, "আমরা সন্তুষ্ট হব সেদিনই, যেদিন এই রায় কার্যকর হবে। সেদিনই শহীদদের আত্মা শান্তি পাবে।"

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন দলের উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, যুগ্ম আহ্বায়ক আতিক মুজাহিদ এবং যুগ্ম সদস্যসচিব আব্দুল্লাহ আল-আমিন, মুশফিক উস সালেহীন ও মোল্লা মোহাম্মদ ফারুক আহসানসহ অন্যান্য নেতারা।

এর আগে আজ সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড দেন। একই মামলায় পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।


হাসিনাকে ফেরত দিন, প্রতিবেশীর 'প্রথম দায়িত্ব' নিয়ে যা বলল জামায়াত

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ১৭ ১৭:০০:২০
হাসিনাকে ফেরত দিন, প্রতিবেশীর 'প্রথম দায়িত্ব' নিয়ে যা বলল জামায়াত

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার পর জামায়াতে ইসলামী তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছে। দলটি শেখ হাসিনাকে আশ্রয় না দেওয়ার জন্য ভারতের প্রতি এই আহ্বান জানায়।

সোমবার (১৭ নভেম্বর) বিকেল ৩টার দিকে রাজধানীর মগবাজারে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার এই মন্তব্য করেন।

ট্রাইব্যুনালের রায়ের প্রতিক্রিয়ায় জামায়াত বলেছে, "আমরা মনে করি এই বিচারের ব্যাপারে কোন প্রশ্ন তোলার সুযোগ কারো নেই। কারণ বিচার স্বচ্ছ হয়েছে, নিরপেক্ষ হয়েছে, আন্তর্জাতিক মানের হয়েছে।"

মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, "পলাতক মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে যারা আশ্রয় দিয়েছে আমরা মনে করি এই ঘৃণ্য অপরাধীদের পক্ষে তারা অবস্থান নিয়েছে। আমরা দাবি করব তাদের অবশ্যই বাংলাদেশে ফেরত দিতে হবে এবং আইনের কাছে তাদেরকে সোপর্দ করতে হবে।"

তিনি আরও বলেন, "সৎ প্রতিবেশীসুলভ আচরণ দাবি করলে, সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের দাবিদার প্রতিবেশী হলে, এটি হচ্ছে তার প্রথম দায়িত্ব।"

উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ আজ একটি ঐতিহাসিক রায় ঘোষণা করেন। বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের প্যানেল এই রায় দেন।

রায়ে শেখ হাসিনাকে তিনটি পৃথক অপরাধের অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড এবং আরও দুটি অভিযোগে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। একই মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকেও মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। মামলার রাজসাক্ষী সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।


মোট যতটি মামলার মুখোমুখি শেখ হাসিনা

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ১৭ ০৯:৪৩:৫৯
মোট যতটি মামলার মুখোমুখি শেখ হাসিনা
ছবি: সংগৃহীত

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে দায়ের করা বহুল আলোচিত মামলার রায় আজ সোমবার ঘোষণা করা হচ্ছে। গোটা জাতি এই রায়ের অপেক্ষায় রয়েছে, কারণ গণহত্যা–নির্যাতনের অভিযোগে সরকারের সর্বোচ্চ পদে থাকা একজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এটাই হবে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম বিচারিক রায়।

এই মামলাটি কেবল একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়; গত বছরের জুলাই–আগস্টে ছাত্র–জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর পুরো দেশজুড়ে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আইনি অভিযোগের ঢল নেমেছে। বিভিন্ন আদালত ও থানায় এখন পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে দায়ের হয়েছে ৫৮৬টি মামলা, যার মধ্যে রয়েছে হত্যা, হত্যাচেষ্টা, অপহরণ, অগ্নিসংযোগ, সহিংসতা, হুমকি, লুটপাট এবং দুর্নীতি-সংক্রান্ত অসংখ্য অভিযোগ।

এর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় তদন্তাধীন রয়েছে আরও চারটি মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলা, যেখানে অভিযোগ হিসেবে রয়েছে পরিকল্পিত গণহত্যা, নির্যাতন, গুম এবং রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে ব্যবহার করে অসামরিক নাগরিকদের ওপর আক্রমণ পরিচালনার অভিযোগ।

৫৮৬ মামলার মধ্যে ৩২৪টি হত্যা মামলা, যেখানে শেখ হাসিনাকে নির্দেশদাতা, হুকুমদাতা এবং ঘটনাগুলোর প্রধান পরিকল্পনাকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এই বিশাল সংখ্যক হত্যার অভিযোগ গণঅভ্যুত্থানকালে ঘটে যাওয়া হত্যাকাণ্ডের মাত্রা এবং নৃশংসতার গভীরতা তুলে ধরে।দুদকের ছয়টি দুর্নীতি মামলাও বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে।

তদন্ত সংস্থার কাছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আরও ৫০টির বেশি অভিযোগ পৌঁছেছে, যার মধ্যে রয়েছে পিরোজপুরের সুখরঞ্জন বালি হত্যা, মাইকেল চাকমার নিখোঁজ হওয়া, বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদের ওপর আক্রমণসহ আরও বহু অভিযোগ। এগুলোর সত্যতা যাচাই–বাছাইয়ের পর প্রয়োজনীয় হলে মামলায় রূপান্তর হবে বলে সূত্র জানিয়েছে।

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রথম মামলা করা হয় ২০২৪ সালের ১৩ আগস্ট, ঠিক গণঅভ্যুত্থানের পরপরই। মোহাম্মদপুর থানায় দায়ের হওয়া সেই মামলায় শহীদ আবু সাঈদ হত্যার অভিযোগ তদন্ত করছে পুলিশ।

পুলিশ সদর দপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছরের জুলাই–আগস্ট আন্দোলনের পর দেশে মোট ১,৬১২টি মামলা করা হয়েছে। এসব মামলার মধ্যে রয়েছে

  • ৫৯৯টি হত্যা মামলা
  • ১,০০৩টি সহিংসতা, অগ্নিসংযোগ, হামলা ও লুটপাট মামলা

এই বিস্তৃত মামলার তালিকায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলার সংখ্যা ৫৮৬, যা অন্যান্য রাজনৈতিক ব্যক্তিদের তুলনায় বিপুল। বিভিন্ন আসামির মধ্যে এটি সর্বোচ্চও বটে।

আরও উল্লেখযোগ্য হলো, আদালত অবমাননার অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাকে ৬ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছিল গত ২ জুলাই।


‘কোথায় আওয়ামী লীগ? শাটডাউন শুধু ঘোষণাতেই’

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ১৭ ০৯:৩৭:২১
‘কোথায় আওয়ামী লীগ? শাটডাউন শুধু ঘোষণাতেই’
ছবি: সংগৃহীত

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে দায়ের করা ঐতিহাসিক মামলার রায় আজ সোমবার ঘোষণা করা হবে। এই রায়কে কেন্দ্র করে সারা দেশের মতো রংপুরেও নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগ শাটডাউন কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছিল। তবে বাস্তবে সেই কর্মসূচির কোনো প্রভাবই দেখা যায়নি নগরীতে। বরং শাটডাউন ডাক দিয়েই গায়েব হয়ে গেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

রোববার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নগরজুড়ে ঘুরে দেখা গেছে, রংপুর মহানগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়, বাণিজ্যিক এলাকা, বাজার এবং আন্তঃজেলা সড়কে স্বাভাবিক যানবাহন চলাচল রয়েছে। কোথাও শাটডাউনের কোনো প্রভাব নেই, বরং বেশ কিছু এলাকায় যানজটও ছিল তীব্র। শাটডাউন পালনে আওয়ামী লীগের কোনো তৎপরতা না থাকলেও বিপরীতে বিএনপি, জামায়াত এবং নতুন রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা ছিলো রাস্তাজুড়ে সক্রিয়।

রংপুর সাইড বেকারির স্বত্বাধিকারী, ব্যবসায়ী সুমন মিয়া বলেন, “এ শহরে আওয়ামী লীগ নিজেই লাপাত্তা। শাটডাউন ডেকেছিল, কিন্তু তাদের কাউকেই দেখা যায়নি। রংপুরের মানুষ জুলাইয়ের শহীদদের পাশে আছে। মানুষ চায় হাসিনা ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে বিচার হোক।”

হোটেল ব্যবসায়ী রমজান আলীও একই বক্তব্য দিয়ে বলেন, “রংপুরে আওয়ামী লীগ মানেই এখন ভয়ে লুকিয়ে থাকা কিছু লোক। জনগণের ক্ষোভের মুখে তাদের মুখ দেখানোরও সাহস নেই।”

অটোচালক রহমত আলী ও বশির মিয়া বলেন, “শাটডাউন দেখিনি, শুধু যানজটই দেখেছি। জনগণের চলাচল স্বাভাবিক ছিল। মানুষের মুখে শাটডাউনের কথা শুনেছি, বাস্তবে কিছু ঘটেনি।”

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম বলেন, “স্বৈরাচার হাসিনার রায়কে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ শাটডাউন ডেকেছিল। যাতে অপতৎপরতা চালাতে না পারে সেজন্য আমাদের নেতাকর্মীরা মাঠে ছিল। আমরা সতর্ক অবস্থানে আছি।”

জামায়াতে ইসলামীর জেলা সেক্রেটারি মওলানা এনামুল হক বলেন, “গণহত্যা মামলার রায়কে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ যদি নাশকতা করতে চায়, আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলব।”

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রশাসনও ছিল সক্রিয়। রংপুরের তিন থানার ওসি শফিকুল ইসলাম শফিক (পীরগঞ্জ), আতিকুর রহমান আতিক (বদরগঞ্জ) এবং আতাউর রহমান (রংপুর মেট্রো কোতোয়ালি) জানান যে শাটডাউনকে কেন্দ্র করে সম্ভাব্য যেকোনো অপতৎপরতা ঠেকাতে তারা দিন–রাত মাঠে আছেন।

রংপুর জেলা পুলিশ সুপার আবু সাইম বলেন, গত কয়েকদিনে সন্ত্রাস দমন আইনে নাশকতা, রাষ্ট্রবিরোধী তৎপরতা ও শাটডাউনের নামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে ৪টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের ২০ জনের বেশি নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জেলা পুলিশের বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা ১৩ নভেম্বর থেকে কার্যকর রয়েছে।

রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মজিদ আলী জানান, “পুরো নগরীতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করছে। যেকোনো ধরনের নাশকতা বা বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে আমাদের প্রস্তুতি সর্বোচ্চ পর্যায়ে।”

-রফিক


 এনসিপির মনোনয়ন নিলেন সারজিস,একই আসনে বিএনপি-এনসিপি দুই হেভিওয়েট প্রার্থী

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ১৬ ২১:৫০:০৩
 এনসিপির মনোনয়ন নিলেন সারজিস,একই আসনে বিএনপি-এনসিপি দুই হেভিওয়েট প্রার্থী
ছবিঃ সংগৃহীত

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) হয়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন দলটির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। তিনি পঞ্চগড়-১ আসন থেকে নির্বাচনে লড়তে চান। রোববার (১৬ নভেম্বর) রাতে ঢাকার বাংলামোটরে এনসিপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে তিনি এই মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন।

পঞ্চগড়-১ আসনটি সদর উপজেলা, তেঁতুলিয়া উপজেলা এবং অটোয়ারী উপজেলা (বোদা পৌরসভার কিছু অংশ বাদে) নিয়ে গঠিত। এই আসনে সারজিস আলমের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী হবেন বিএনপির ব্যারিস্টার মোহাম্মদ নওশাদ জমির। বিএনপি এই আসনে তাকে প্রাথমিকভাবে মনোনীত করেছে।

এদিকে, এনসিপির মনোনয়নপত্র বিক্রি কার্যক্রম পুরোদমে চলছে বলে জানিয়েছে দলটি। এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী জানিয়েছেন, রোববার রাত পর্যন্ত তাদের দল থেকে সারা দেশে মোট ১১০০টি মনোনয়নপত্র বিক্রি হয়েছে। তিনি আরও জানান, যারা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন, তাদের সাক্ষাৎকার বা ভাইভা আগামী ২১ ও ২২ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে।

এর আগে, বিএনপি গত ৩ নভেম্বর তাদের প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সেসময় পঞ্চগড়-১ আসনে ব্যারিস্টার মোহাম্মদ নওশাদ জমিরকে প্রাথমিকভাবে মনোনয়ন দেওয়ার কথা নিশ্চিত করেছিলেন।


জামায়াতে ইসলামী: অতীতের ছায়া ছাপিয়ে কি নতুন শুরু সম্ভব?

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ১৬ ২১:১১:০৮
জামায়াতে ইসলামী: অতীতের ছায়া ছাপিয়ে কি নতুন শুরু সম্ভব?

লাহোর প্রস্তাব, পাকিস্তান আন্দোলন, ভারত ভাগ, তারপর পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ পর্যন্ত উপমহাদেশের মুসলিম রাজনীতির এক জটিল অধ্যায়ের নাম জামায়াতে ইসলামী। দলটি কখনো পাকিস্তান রাষ্ট্রের কঠোর বিরোধী, কখনো সেই পাকিস্তানেরই শরিক, আবার ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধী শক্তি হিসেবে ইতিহাসে চিহ্নিত। স্বাধীন বাংলাদেশের ভেতরেও নিষেধাজ্ঞা, পুনরুত্থান, জোট রাজনীতি, যুদ্ধাপরাধের বিচার, সাম্প্রতিক নিষিদ্ধ ঘোষণা, সব মিলিয়ে জামায়াতে ইসলামীকে ঘিরে প্রশ্নের শেষ নেই। আজকের আলোচনায় তাই গোড়া থেকে বর্তমান পর্যন্ত জামায়াতের রাজনৈতিক চিন্তা, কৌশল, অর্জন, ব্যর্থতা এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নিয়ে বিশদ অনুসন্ধান।

লাহোর প্রস্তাব, রাষ্ট্রধারণার জন্ম এবং পাকিস্তান আন্দোলনের ভূমিকা

শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাবে ভারতের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলগুলো নিয়ে রাষ্ট্র গঠনের একটি প্রস্তাব পেশ করলেন। তার সেই প্রস্তাবকে হিন্দু বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদ এবং তাদের দ্বারা পরিচালিত পত্রপত্রিকাগুলো প্রচার করতে লাগল পাকিস্তান প্রস্তাব হিসেবে। কিন্তু সেই প্রস্তাবে কোথাও পাকিস্তান নামটির উল্লেখ ছিল না। এমনকি মুসলিম লীগের মুখপাত্রদেরও এই বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণা ছিল না।

হিন্দু মহলের ধারাবাহিক প্রচারণার ফলেই মুসলিম নেতৃবৃন্দের মাঝে রাষ্ট্রধারণার স্পষ্ট বোধ তৈরি হতে শুরু করে। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৪১ সালের ১৫ই এপ্রিল মাদ্রাজ অধিবেশনে তথাকথিত পাকিস্তান প্রস্তাবকে নিখিল ভারত মুসলিম লীগের শাসনতন্ত্রে মূল নীতি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এরপর ধীরে ধীরে জোরালো হতে থাকে পাকিস্তান আন্দোলন। অন্যদিকে কংগ্রেসের নেতৃত্বে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনও প্রবল হয়ে উঠছিল। ইতিহাসের এমন এক যুগসন্ধিক্ষণে মুসলিম রাজনীতির আরেকটি নতুন ধারার উদ্ভব ঘটে, যেখান থেকে পরবর্তীতে জামায়াতে ইসলামী আত্মপ্রকাশ করে।

জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ, মুসলিম লীগ এবং মতাদর্শিক বিভক্তি

যখন পাকিস্তান আন্দোলন জোরালো হচ্ছিল, সেই সময় উপমহাদেশে মুসলিমদের বড় দুটো রাজনৈতিক শিবির ছিল মুসলিম লীগ ও জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ। পাকিস্তান প্রশ্নে এই দুই পক্ষের মধ্যে স্পষ্ট মতানৈক্য দেখা দেয়। মুসলিম লীগ ছিল পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পক্ষে, আর জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ ছিল ভারতের অখণ্ডতার পক্ষে।

জমিয়তের চিন্তা ছিল, ইতিপূর্বেই ভারতবর্ষে মুসলিম শাসনের বিস্তৃত ইতিহাস রয়েছে, ভবিষ্যতের অখণ্ড ভারতেও মুসলিমরাই শাসন ক্ষমতায় ফিরে আসতে পারবে। তাদের কাছে ভূখণ্ড অখণ্ড রাখা এবং তার ভেতরেই মুসলিম আধিপত্য প্রতিষ্ঠা ছিল বেশি যৌক্তিক। কিন্তু মুসলিম লীগের চোখে রাজনৈতিক বাস্তবতা ছিল ভিন্ন, তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলের ভিত্তিতে একটি পৃথক রাষ্ট্র গঠনের মধ্যে মুসলিম নিরাপত্তা ও ক্ষমতায়নের পথ খুঁজছিল।

তৎকালীন জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের মুখপত্র ছিল ‘আল জমিয়ত’ পত্রিকা, যেই পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদী। জমিয়তের সাথে মতপার্থক্যকে কেন্দ্র করে তিনি ধীরে ধীরে সেই প্ল্যাটফর্ম থেকে দূরে সরে যান এবং পৃথক রাজনৈতিক দল গঠনের সিদ্ধান্ত নেন, যার ফলস্বরূপ প্রতিষ্ঠা লাভ করে জামায়াতে ইসলামী হিন্দ।

জামায়াতে ইসলামী হিন্দের জন্ম ও পাকিস্তানবিরোধী অবস্থান

১৯৪১ সালের ২৬ আগস্ট লাহোরের ইসলামিয়া পার্কে সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদীর নেতৃত্বে জামায়াতে ইসলামী হিন্দ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। লাহোরে অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে ৭৫ জন সদস্যের উপস্থিতিতে জামায়াতে ইসলামী ঘোষণার পর মওদুদী জামাতের আমির হিসেবে মনোনীত হন। সেখান থেকেই শুরু তার দীর্ঘ রাজনৈতিক ও আদর্শিক যাত্রা।

সে সময় থেকেই তিনি পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার তীব্র বিরোধিতা করতে থাকেন। তিনি পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা প্রসঙ্গে দাবি করেন, পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবি করা মুসলিম লীগ, জিন্না, এরা কেউই খাঁটি মুসলিম নন। অর্থাৎ প্রাথমিকভাবে জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠারও পক্ষে ছিল না। প্রশ্ন জাগে, তাহলে জামাত তথা মওদুদীর উদ্দেশ্য কী ছিল?

মওদুদী সম্পর্কে একটি বিষয় আগে জানা দরকার। যৌবনে ভারতের মার্ক্সবাদী নেতা আব্দুস সাত্তার খায়রীর বিশেষ অনুরাগী ছিলেন তিনি, আবার ছিলেন সিদ্ধহস্ত লেখক। মুসলিম সমাজের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক কাঠামো নিয়ে তার আগ্রহ ছিল ব্যাপক। ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে মাসিক ‘তরজমানুল কোরআন’ পত্রিকা প্রকাশের মাধ্যমে তিনি নিজের মতবাদ প্রচার শুরু করেন। এই পত্রিকার ফেব্রুয়ারি সংখ্যায় মওদুদী পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিরোধিতা করে লেখেন, পাকিস্তান নামক কোন রাষ্ট্রের জন্ম হলে সেটা আহাম্মুকের বেহেশত এবং মুসলমানদের কাফেরানা রাষ্ট্র হবে।

এই ধরনের লেখালেখি ও প্রচারণার ফলে মুসলিম লীগ সমর্থকরা জামাতকে ব্রিটিশ ও কংগ্রেসের দালাল বলে মনে করতে শুরু করে। পাকিস্তান রাষ্ট্রের কঠোর বিরোধিতা সত্ত্বেও ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়, এবং পরিহাসের বিষয় হচ্ছে সেই পাকিস্তানেরই মাটিতে গিয়ে ঠাঁই নিতে হয় পাকিস্তানবিরোধী জামায়াতে ইসলামী হিন্দের প্রতিষ্ঠাতা সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদীকে।

পাকিস্তানে জামায়াতে ইসলামী: গ্রেপ্তার, দাঙ্গা ও মৃত্যুদণ্ডাদেশ

১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর জামায়াতে ইসলামী হিন্দ ও জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তান নামে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায় সংগঠনটি। জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তানের আমির হন মওলানা মওদুদী, আর জামায়াতে ইসলামী হিন্দের আমির হন আবুল লাইস ইসলাহী নাদভী।

পাকিস্তানে গিয়ে মওদুদী ইসলামী সংবিধান ও ইসলামী সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য জোরালো প্রচারণা শুরু করেন। এই কারণে পাকিস্তান সরকার জননিরাপত্তা আইনে তাকে গ্রেপ্তার করে। একই বছরে পাকিস্তানি জামায়াতে ইসলামী পূর্ব পাকিস্তান শাখা খোলে। এরই মধ্যে জামায়াতের সাংগঠনিক তৎপরতায় সংগঠনটির শক্তি ক্রমে বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং ১৯৫০ সালে মওদুদীকে মুক্তি দেওয়া হয়।

১৯৫৩ সালে পাকিস্তানে কাদিয়ানীদেরকে অমুসলিম ঘোষণা করে আইন পাশ করার দাবিতে আবারো আন্দোলন শুরু করে জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তান। মওদুদী পাকিস্তানের জুলফিকার আলী ভুট্টোসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা এবং পাকিস্তান সরকারকে আহমদীয়া সম্প্রদায়কে অমুসলিম ঘোষণা দেয়ার জন্য চাপ দিতে থাকেন। সে সময় জামায়াতের কিছু সমর্থক লাহোরে আহমদীদের উপর হামলা চালায়, এর জের ধরে শুরু হয় দাঙ্গা। সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপে দাঙ্গা দমে গেলেও, এই সহিংসতায় প্রায় দুই হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়। ভারত–পাকিস্তান বিভাজনের পর কোনও একক দাঙ্গায় এত মানুষ নিহত হওয়ার ঘটনা এটি প্রথম।

ঘটনার পর মওলানা মওদুদীকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা গ্রেফতার করে। বিচারে তাকে দাঙ্গার মদদদাতা হিসেবে চিহ্নিত করা হয় এবং মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যের কিছু মুসলিম দেশের মধ্যস্থতায় তার মৃত্যুদণ্ড মওকুফ করা হয়। ১৯৫৫ সালে তিনি জেল থেকে মুক্তি পান। ১৯৫৬ সালে জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র শাখা ‘ছাত্র সংঘ’ প্রতিষ্ঠিত হয়, যা এখন ইসলামী ছাত্রশিবির নামে পরিচিত।

পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ: স্বাধীনতা যুদ্ধ, বিরোধিতা ও নিষেধাজ্ঞা

জামায়াতে ইসলামী এবং বাংলাদেশ স্বাধীনতা যুদ্ধের সম্পর্ক এক জটিল ও বিতর্কিত অধ্যায়। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিরোধিতাকারী জামাত ১৯৭১ এ এসে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের বিরোধী শক্তিতে পরিণত হয়। অনেকের বিশ্লেষণে ধরা হয়, পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিরোধিতার যে ঐতিহাসিক ভুল তারা মনে করেছিল, তার কাফফারা দিতেই একাত্তরে জামায়াত শুধু বাংলাদেশের বিরোধিতাই করেনি, বরং স্বাধীনতা আন্দোলন রুখে দিতে শান্তি কমিটি গঠনের মাধ্যমে পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সক্রিয় সমর্থন দিয়েছে।

জামায়াতের প্রেসক্রিপশন অনুসারেই তাদের ছাত্র উইং ছাত্রসংঘের সদস্যদের নিয়েই রাজাকার, আল বদর ও আলশামস বাহিনী গঠিত হয়। এমনকি স্বাধীনতা-উত্তর সময়েও পাকিস্তান পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে জামায়াত নানা কার্যক্রম পরিচালিত করে, যার ধারাবাহিকতায় ১৯৭২ সালে গোলাম আজম লন্ডনে গিয়ে পাকিস্তান পুনরুদ্ধার কমিটি গঠন করেন।

কিন্তু পাকিস্তানের বিরোধিতার মতো বাংলাদেশের বিরোধিতাও শেষ পর্যন্ত অকার্যকর প্রমাণিত হয়। যুদ্ধে পাকিস্তানের পরাজয় যখন সুনিশ্চিত, তখন জামায়াত নেতারা পালিয়ে যান সেই পাকিস্তানেই, যে পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিরোধিতা তারা একসময় করেছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে জামাতসহ মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী সকল দলকে নিষিদ্ধ করা হয়। বাংলাদেশের বিরোধিতা ও গণহত্যায় সহায়তার জন্য ১৯৭৩ সালে যে ৩৮ জনের নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়, তার অন্যতম ছিলেন গোলাম আজম। তবু প্রহসনের মতো কিছুদিন পরই গোলাম আজমকেও মওদুদীর মতো সেই রাষ্ট্রেই ফিরতে হয়, যে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে তিনি এবং তার দল কার্যত যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন।

স্বাধীন বাংলাদেশে জামায়াতের পুনরুত্থান, জোটরাজনীতি ও যুদ্ধাপরাধের বিচার

১৯৭৫ সালের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর জামায়াতের সামনে নতুন সুযোগ তৈরি হয় বাংলাদেশের রাজনীতিতে নিজেদের পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার। রাষ্ট্রপতি এ এস এম সায়েম এক অধ্যাদেশের মাধ্যমে সংবিধানের ৩৮ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল করেন, যা ধর্মভিত্তিক রাজনীতিকে নিষিদ্ধ করেছিল। এই সুবর্ণ সুযোগ কাজে লাগাতে জামাত সমমনোভাবাপন্ন ইসলামী দলগুলোকে নিয়ে ১৯৭৬ সালের ২৪ আগস্ট ইসলামিক ডেমোক্র্যাটিক লীগ (আইডিএল) নামে একটি রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম গঠন করে। আইডিএলের ছায়ায় জামাতের নেতা–কর্মীরা রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হওয়ার সুযোগ পেয়ে যায়।

জিয়াউর রহমানের বহুদলীয় গণতন্ত্র নীতি ইসলামী দলগুলোর জন্য, বিশেষ করে জামায়াতের জন্য, সাপে বর হয়ে আসে। ফলস্বরূপ ইসলামিক ডেমোক্রেটিক লীগের ব্যানারে জামায়াতে ইসলামীর কয়েকজন নেতা ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে ছয়টি আসন জিতে নেয়, যা জামাতের শক্তি ও মনোবল বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ও জাতীয় পার্টির উত্থান ঘটে। দীর্ঘ সামরিক শাসনের পর ১৯৯০ সালের এরশাদবিরোধী আন্দোলনে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতও অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। এরশাদের পতনের পর ১৯৯১ সালের নির্বাচনে জামায়াত ১৮টি আসন লাভ করে এবং ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটে যোগ দিয়ে ১৭টি আসন ও দুটো মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বও পায়। যদিও ১৯৯৬ ও ২০০৮ এর নির্বাচনে যথাক্রমে মাত্র ৩টি ও ২টি আসন পায় তথাপিবাংলাদেশের রাজনীতিতে জামায়াত এক বড় ফ্যাক্টরে পরিণত হয়।

২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে সরকার গঠন করলে, কিছুদিন পর থেকেই যুদ্ধপরাধীদের বিচারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এই বিচার কতটা প্রকৃত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের লক্ষ্য নিয়ে আর কতটা রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীকে নিশ্চিহ্ন করার লক্ষ্য নিয়ে পরিচালিত হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন অবশ্যই ওঠে। কারণ সেই বিচার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই জামায়াতকে রাজনীতি থেকে মাইনাস করার আওয়ামী লীগের নীলনকশা অনেকটা বাস্তবায়িত হয়ে যায় বলে বিশ্লেষণ রয়েছে।

তবে আওয়ামী লীগ সরাসরি জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ না করে দলটিকে নানা উপায়ে ব্যবহার করারও চেষ্টা করেছে বলে এক ধরনের মত প্রচলিত আছে। তবু আসল সত্য এই যে, এত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও জামায়াত কোনোভাবে টিকে আছে, এটাকেই অনেকে তাদের সবচেয়ে বড় সফলতা হিসেবে তুলে ধরেন। রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতার খুব কাছাকাছি যাওয়ার সুযোগ তাদের কমই হয়েছে, প্রশ্ন থাকে কেন?

বাংলাদেশের সামাজিক মনস্তত্ত্ব ও জামায়াতের সীমাবদ্ধতা

উপমহাদেশের ক্যাডারভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর ইতিহাস বিবেচনায় জামায়াতে ইসলামী অন্যতম প্রাচীন ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল। তথাপি রাজনীতির এই দীর্ঘ সময়ে দলটির আহামরি কোনও অর্জন নেই। বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মুসলিম হওয়া সত্ত্বেও জামায়াতের মতন সুসংগঠিত ইসলামী দল কেন একবারের জন্যও এককভাবে ক্ষমতার স্বাদ নিতে পারেনি, কিংবা ক্ষমতার খুব কাছাকাছি যেতে পারেনি, তা ব্যাখ্যার দাবি রাখে।

প্রথমত, ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশের মানুষ ভক্তিপ্রবণ হলেও বিশ্বাসের দিক থেকে তুলনামূলক উদার। এই অঞ্চলের আবহাওয়া ও ভৌগোলিক বাস্তবতার পাশাপাশি সুফি ঐতিহ্য মানুষের ধর্মীয় আবেগকে নরম ও আধ্যাত্মিক রেখেছে। ধর্মের র‍্যাডিকাল ব্যাখ্যা কখনোই এই অঞ্চলের মানুষের মূল চরিত্র গড়ে দিতে পারেনি। যার ফলে জামায়াত কিংবা জামায়াতের মত রেডিক্যাল মতাদর্শের দল কখনোই সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারেনি।

দ্বিতীয়ত, জামায়াতসহ অনেক ইসলামী দল সেই অর্থে ‘গণমানুষের অংশ’ হয়ে উঠতে পারেনি। এজন্য আমরা দেখি ১৯৪৭ কিংবা ১৯৭১ সালের মতো জনজাগরণের সময়ও গণআকাঙ্ক্ষার বিপরীতে তারা অবস্থান নিয়েছে। এ ধরনের অবস্থান তাদের প্রতি বিস্তৃত জনগোষ্ঠীর আস্থা গড়ে ওঠার পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তৃতীয়ত, ইসলামপন্থীদের মধ্যে শতধা বিভক্তিও এই ব্যর্থতার বড় কারণ। সংখ্যাগরিষ্ঠ না হলেও বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যক জনগণের মনে ইসলাম ও ইসলামী শাসন ব্যবস্থার প্রতি এক ধরনের পক্ষপাতিত্ব আছে, কিন্তু বাস্তবে ইসলামপন্থী রাজনীতি নানা দল এবং উপদলে বিভক্ত। এতে জামায়াতের সম্ভাব্য ভোটব্যাংক ছড়িয়ে–ছিটিয়ে গেছে।

দেওবন্দী, সুফি, ওয়াহাবি: আকিদাগত দ্বন্দ্ব এবং জামায়াতের অবস্থান

বাংলাদেশ মূলত সুন্নি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ। সুন্নিদের মধ্যে দেওবন্দী, সুফিবাদী ধারা এবং ওয়াহাবি মতাদর্শ একটি ডমিনেন্ট উপগোষ্ঠী হিসেবে বিদ্যমান। জামায়াতে ইসলামীর ধর্মীয় আকিদা মধ্যপ্রাচ্যের ওয়াহাবিজম দ্বারা অনেকটাই প্রভাবিত, আর রাজনৈতিক দিক থেকে জামায়াত ইসলাম মিশরের ইখওয়ানুল মুসলিমিনের মতাদর্শধারী। তাদের এই মতাদর্শিক কাঠামোর সাথে প্রচলিত সুন্নি ও দেওবন্দী ধারার দ্বন্দ্ব সুস্পষ্ট। অনেক সময় একদল অন্যদলকে কাফের বা ভণ্ড হিসেবে আখ্যা দিয়ে থাকে।

এছাড়াও সুফিদের মাধ্যমে ইসলাম আসা এই ভূখণ্ডে সুফিজম বা মিস্টিসিজমের প্রভাবও লক্ষণীয়। যাদেরকে জামাত অনেকটা প্রকাশ্যেই ‘বেদাতি’ হিসেবে গণ্য করে। ফলে ইসলামী শাসনব্যবস্থার প্রতি সহানুভূতিশীল জনগোষ্ঠীও নানাভাবে দলে বিভক্ত হয়ে পড়ে।

প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই এই মতবিরোধের ঐতিহাসিক শিকড় রয়েছে। জমিয়ত তথা দেওবন্দী সিলসিলার আলেমগণ, বিশেষ করে হুসাইন আহমদ মাদানীর সাথে সায়েদ আবুল আলা মওদুদীর মতানৈক্য এবং সেখান থেকে উদ্ভূত দ্বন্দ্বের ভেতর দিয়েই জামায়াতে ইসলামীর জন্ম। মওদুদীর দৃষ্টিভঙ্গি ছিল, মুসলমানদের জাতীয়তা বা পরিচয় দেশ বা স্থানের সাথে নয়, বরং বিশ্বাসের সাথে যুক্ত। অপরদিকে ওলামায়ে দেওবন্দের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল, জাতীয়তা দেশ এবং ভূখণ্ডের সাথে সম্পৃক্ত।

তারা যুক্তি দেখিয়েছিলেন, কওমে আদ এবং কওমে সামুদের মত কওমগুলোর পরিচয়ও স্থান এবং দেশের সাথে জড়িত, আল্লাহ পবিত্র কোরআনেও তাদেরকে কওম হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ওলামায়ে দেওবন্দের সাথে জামায়াতের আরেকটি মৌলিক মতবিরোধ ছিল সাহাবায়ে কেরাম সম্পর্কে। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের মতে সব সাহাবী ঈমান, আমল, আদর্শ – সব ক্ষেত্রে সত্যের মাপকাঠি, কিন্তু মওদুদী তার ‘মিয়ারে হক’ বইতে সাহাবায়ে কেরামকে সেই অর্থে হকের একমাত্র মাপকাঠি নন বলে মন্তব্য করেন বলে অভিযোগ ওঠে।

তার ‘খেলাফত ও মলিকিয়াত’ এবং ‘রাসায়েল মাসায়েল’ বইয়ে উটের যুদ্ধ, সিফফিনের যুদ্ধ ইত্যাদি প্রসঙ্গে আমিরে মুয়াবিয়া সহ কিছু সাহাবীর প্রসঙ্গে তাঁর কিছু সমালোচনামূলক মন্তব্যকে দেওবন্দী আলেমরা সাহাবাবিরোধী মনোভাব হিসেবে দেখেন। তাদের মতে, যারা সাহাবায়ে কেরামের সমালোচনায় লিপ্ত থাকে, তারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের ভেতর অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে না। এই আকিদাগত মতপার্থক্য থেকে রাজনৈতিক মতবিরোধ আরও তীক্ষ্ণ হয়ে ওঠে। হোসাইন আহমদ মাদানীর নেতৃত্বে তৎকালীন ওলামায়ে দেওবন্দ মওদুদীকে ‘গোমরাহ’ বলে ফতোয়া দেন বলে প্রচলিত। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের কওমী আলেম ও জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ – দুই ধারার মধ্যেও এই দ্বন্দ্ব এখনো কমবেশি বিদ্যমান।

জামায়াত কি ইসলামী দল, নাকি রাজনৈতিক ব্র্যান্ড?

এই প্রশ্নটি প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই আছে: জামায়াতে ইসলামী কি আসলেই ইসলামী দল, নাকি ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক দল হিসেবে অভিনয় করছে? অনেক বিশ্লেষকের মতে, ধর্মের কথা বলা হলেও মূলত ভারতের কমিউনিজমবিরোধী শক্তি হিসেবেই একটি সংগঠনের জন্ম হয়েছিল, ব্রিটিশ শাসকরাও তখন তাদের কিছুটা আনুকূল্য দিয়েছিল বলে ধারণা প্রচলিত।

মওলানা মওদুদীর রাজনৈতিক ও ধর্মীয় দর্শনের উপর প্রতিষ্ঠিত জামায়াতে ইসলামকে বাংলাদেশের অনেক ইসলামপন্থী দল ইসলামী দল হিসেবে গ্রহণ করে না। অনেক কওমী ঘরানার ও পীরপন্থী দলগুলো জামাতকে ‘গোমরাহ’ মনে করে। অন্যদিকে জামাতের ভেতরের অনুরাগীরা নিজেদেরকে একটি আদর্শ ইসলামী আন্দোলনের বাহক হিসেবে দেখেন।

নিষেধাজ্ঞা, টিকে থাকা এবং সাম্প্রতিক পুনর্নিষেধাজ্ঞা

পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ পর্যন্ত অন্তত চার দফায় জামায়াতে ইসলামী নিষিদ্ধ হয়েছে। পাকিস্তান আমলে ১৯৫৮ ও ১৯৬৪ সালে, আর বাংলাদেশে ১৯৭২ ও সর্বশেষ ২০২৪ সালে মোট দুইবার নিষিদ্ধ হয় দলটি। তারপরও সংগঠনটি আন্ডারগ্রাউন্ড বা বিকল্প প্ল্যাটফর্মে থেকে সাংগঠনিক উপস্থিতি বজায় রাখার চেষ্টা করেছে।

জামাত দীর্ঘ সময় ধরে যুক্তি দিয়ে আসছে, নিষেধাজ্ঞা, দমন–পীড়ন সত্ত্বেও টিকে থাকা – এটাই তাদের রাজনৈতিক সফলতা। সমালোচকদের মতে, এটি টিকে থাকা হলেও গণআকাঙ্ক্ষার মূলধারায় প্রবেশ করতে না পারার এক দীর্ঘ ব্যর্থতার ইতিহাসও বটে।

বর্তমান প্রেক্ষাপট: ইসলামী ঐক্যের কথা, জেনারেশন জেড এবং ‘হিন্দু শাখা’ বিতর্ক

বাংলাদেশে ইসলামপন্থীদের মধ্যে জামাতের সাথে মতাদর্শিক বিবাদ থাকা সত্ত্বেও সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে তোলার কিছু প্রচেষ্টা চোখে পড়ছে। কিছুদিন আগে ইসলামী দলগুলোর কিছু নেতা–কর্মীকে নিয়ে একটি মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়, সেখান থেকে ইসলামী দলগুলোর মধ্যে ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা হয়। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ তথা চরমোনাই পীরও এক পর্যায়ে জামাতের সঙ্গে ঐক্যের সম্ভাবনার কথা ইঙ্গিত করেছেন, যদিও ইতিহাস বলে, ইসলামপন্থী দলগুলো ইতিপূর্বেও একাধিকবার ঐক্যের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে।

অন্যদিকে জুলাই অভ্যুত্থানের সামনের সারিতে থাকা জেনারেশন জেড বা জেনজি প্রজন্মের বড় অংশের মধ্যে জামায়াতকে নিয়ে বিরূপ বা অন্তত মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। যুদ্ধাপরাধের ইস্যু, ৭১-এর ভূমিকা, নারী ও সংখ্যালঘু প্রশ্নে জামাতের ভাবমূর্তি – সব মিলিয়ে তরুণদের মধ্যে তাদের গ্রহণযোগ্যতা স্বয়ংক্রিয়ভাবে তৈরি হয়নি।

তারপরও এখন পর্যন্ত জামাতের নেতৃস্থানীয়রা তুলনামূলক ঠান্ডা মাথায় পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে। জামাত যদি তাদের ঐতিহাসিক ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে গণআকাঙ্ক্ষার সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিতে পারে, তবে আগামী সংসদ নির্বাচনে তারা এযাবতকালের সবচেয়ে শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করতে পারে – এমন সম্ভাবনার কথাও অনেকে বলছেন। তবে জামাত শক্তিশালী হলেই দেশে সরাসরি শরীয়াহ আইন প্রতিষ্ঠিত হবে – এমন ধারণা করারও সুযোগ নেই। কারণ ইতিপূর্বে বিএনপির সঙ্গে দুটো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব এবং ১৮ জন সংসদ সদস্য নিয়ে সরকারে থেকেও ইসলামের প্রশ্নে তারা কার্যত উল্লেখযোগ্য কোনো কাঠামোগত পরিবর্তন আনেনি।

২৬ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে সংবাদমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রেন্ডি টপিক হিসেবে দেখা যায়, রংপুরে জামাতের ‘হিন্দু শাখা’র কমিটি গঠন করা হয়েছে। জামাত দেশি–বিদেশি পরিমণ্ডলে এই বার্তাই দিতে চাইছে যে তারা কট্টরপন্থী মুসলিম সংগঠন নয়, বরং ‘মডারেট ইসলাম’-এর ধারক। ঐতিহাসিক এসব দিক পর্যালোচনা করলে অনেকে মনে করছেন, জামাতকে ইসলামী দলের চেয়ে রাজনৈতিক দল হিসেবে বিবেচনা করাই বেশি যুক্তিযুক্ত।

ইতিহাসের ভার, বর্তমানের হিসাব, ভবিষ্যতের প্রশ্ন

উপমহাদেশের এক বিরল রাজনৈতিক অর্গানাইজেশন হিসেবে জামায়াতে ইসলামী একই সঙ্গে পাকিস্তানবিরোধী, পাকিস্তানের শরিক, স্বাধীনতা–বিরোধী এবং আবারও নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতায় নিজেদের মানিয়ে নিতে চাওয়া এক সংগঠন। লাহোর প্রস্তাব থেকে পাকিস্তান, পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ – এই দীর্ঘ পথচলায় তাদের আদর্শ, অবস্থান, কৌশল বহুবার বদলেছে।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি, জনগণের ঐতিহাসিক চরিত্র, ইসলামপন্থীদের ভেতরের বিভক্তি, আকিদাগত দ্বন্দ্ব, এবং যুদ্ধাপরাধের প্রশ্ন – সব কিছু মিলিয়ে জামাত কখনোই এই দেশে মূলধারার সর্বজনগ্রাহ্য শক্তি হতে পারেনি। তবু তারা টিকে আছে, এবং আবারও নতুন রাজনৈতিক সমীকরণে জায়গা করে নেওয়ার চেষ্টা করছে।

প্রশ্ন রয়ে যায়, আগামী দিনে কি জামায়াতে ইসলামী নিজেদের অতীতের ছায়া থেকে সত্যিই বেরিয়ে আসতে পারবে? নাকি ইতিহাসের ভারই শেষ পর্যন্ত তাদের সম্ভাবনাকে বারবার থামিয়ে দেবে? এই উত্তর সময়ই দেবে।

-সালেহিন


রাজনীতিকে বিদায় জানালেন শমসের মবিন চৌধুরী

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ১৬ ২১:১২:১৩
রাজনীতিকে বিদায় জানালেন শমসের মবিন চৌধুরী
ছবিঃ সংগৃহীত

প্রবীণ রাজনীতিবিদ শমসের মবিন চৌধুরী (বীরবিক্রম) রাজনীতি থেকে অবসরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি বর্তমানে ‘তৃণমূল বিএনপি’ দলটির চেয়ারপারসনের পদে আসীন ছিলেন। রোববার (১৬ নভেম্বর) তিনি দলের মহাসচিব অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে তার এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন।

তৈমূর আলম খন্দকারকে দেওয়া ওই চিঠিতে শমসের মবিন চৌধুরী লিখেছেন, "এই মর্মে আপনাকে এবং আপনার মাধ্যমে সবাইকে অবগত করছি যে, শারীরিক কারণে আমি শমসের এম চৌধুরী রাজনীতি থেকে অবসর গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।"

চিঠিতে তিনি আরও উল্লেখ করেন, "একই সঙ্গে তৃণমূল বিএনপির সব পদ থেকে আমি পদত্যাগ করিলাম। আমার এই সিদ্ধান্ত অবিলম্বে ১৬ নভেম্বর ২০২৫ থেকে কার্যকর হইল।"

সাবেক এই সামরিক কর্মকর্তা, রাষ্ট্রদূত ও পররাষ্ট্রসচিবের রাজনীতিতে প্রবেশ এবং উত্থান ছিল বেশ নাটকীয়। তিনি একাধারে একজন কূটনীতিক এবং সেনা কর্মকর্তা ছিলেন।

বিএনপি-জামায়াতে ইসলামীর জোট সরকারের শাসনামলে শমসের মবিন চৌধুরী পররাষ্ট্রসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ওই একই সরকারের সময়ে তাকে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবেও নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।

সরকারি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের পর তিনি বিএনপিতে যোগ দেন এবং খুব দ্রুতই দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা হিসেবে পরিচিতি পান। পরবর্তীতে, ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে তিনি বিকল্পধারা বাংলাদেশে যোগ দেন এবং দলটির পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টার পদে আসীন হন।

সবশেষ, ২০২৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর শমসের মবিন চৌধুরী বিকল্পধারা ত্যাগ করে তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দেন এবং দলটির চেয়ারপারসন হিসেবে মনোনীত হয়েছিলেন।

পাঠকের মতামত:

ন্যায়ভিত্তিক ও মানবিক সমাজ গড়তে হলে রাষ্ট্রকে অবশ্যই তার সামাজিক ও নৈতিক দায়বদ্ধতা পুনরুদ্ধার করতে হবে

ন্যায়ভিত্তিক ও মানবিক সমাজ গড়তে হলে রাষ্ট্রকে অবশ্যই তার সামাজিক ও নৈতিক দায়বদ্ধতা পুনরুদ্ধার করতে হবে

রাষ্ট্রের ধারণাটি একসময় কেবল প্রশাসনিক ক্ষমতা, আইনের শাসন এবং নিরাপত্তা প্রদানের সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল। কিন্তু আধুনিক বিশ্বে রাষ্ট্রের ভূমিকা এখন... বিস্তারিত