পিআর আন্দোলনের দলগুলোর ২৪ সালের ভূমিকা কী ছিল?: সালাহউদ্দিন আহমদ

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ অক্টোবর ০৪ ১৪:২৪:২২
পিআর আন্দোলনের দলগুলোর ২৪ সালের ভূমিকা কী ছিল?: সালাহউদ্দিন আহমদ
ছবি: সংগৃহীত

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা পিআর পদ্ধতি নিয়ে যারা আন্দোলন করছে, তারাই মূলত নির্বাচন বিলম্ব ও বানচালের অপচেষ্টা চালাচ্ছে। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, জামায়াত যাদের সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন করছে ও বক্তব্য দিচ্ছে, ‘২৪ এর দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে তাদের ভূমিকা কী ছিল’—তা প্রকাশ করা উচিত।

শনিবার (৪ অক্টোবর) রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে এনডিপি’র ৩৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

পিআর আন্দোলন ও বিভ্রান্তির অভিযোগ

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, পিআরসহ বিভিন্ন দাবিতে জামায়াত ও অন্যান্য দলের কার্যক্রম গণতান্ত্রিক চর্চা। তবে জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে, তারা কাদের ইশতেহার গ্রহণ করবে।

বিএনপির এই সিনিয়র নেতা মন্তব্য করেন, রাজনীতিতে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পিআর নিয়ে যারা আন্দোলন করছে, তারাই নির্বাচন বিলম্ব ও বানচালের অপচেষ্টা চালাচ্ছে। তিনি বলেন, “জনগণকে বিভ্রান্ত করতে কোনো আন্দোলন করা সঠিক হবে না।”

গাজায় ইসরায়েলি হামলার নিন্দা

সালাহউদ্দিন আহমদ তার বক্তব্যে গাজা অভিমুখে যাওয়া আন্তর্জাতিক নৌবহরে ইসরায়েলের হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। তিনি জাতিসংঘকে এ বিষয়ে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনে আহ্বান জানান।


ডিসি-ইউএনও বাদ, ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের রিটার্নিং অফিসার করার প্রস্তাব বিএনপির

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ১৯ ২০:৪৩:৫১
ডিসি-ইউএনও বাদ, ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের রিটার্নিং অফিসার করার প্রস্তাব বিএনপির
ছবিঃ সংগৃহীত

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে প্রশাসনের লোকদের বদলে নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে বিএনপি। বুধবার (১৯ নভেম্বর) রাজধানীর নির্বাচন ভবনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আয়োজিত সংলাপে অংশ নিয়ে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান এই প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। তিনি মনে করেন, প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে কমিশনের নিজস্ব জনবলকে কাজে লাগালে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন সহজ হবে।

সংলাপে মঈন খান উল্লেখ করেন, একটি জাতীয় নির্বাচন পরিচালনার জন্য কয়েক লাখ কর্মকর্তার প্রয়োজন হয়, যা কমিশনের বর্তমান জনবলের তুলনায় অনেক বেশি। তবে তিনি মনে করেন, কমিশনের যতটুকু জনবল আছে, তার সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার করা উচিত। তিনি বলেন, ৩০০ আসনে সাধারণত সরকারের কাছ থেকে রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ধার করে আনা হয়। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব যে জনবল রয়েছে, তা দিয়েই এই গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো পূরণ করা সম্ভব এবং উচিত।

নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশে বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, "একবার সাহস করে এই সিদ্ধান্ত নিন যে, রিটার্নিং অফিসার এবং সহকারী রিটার্নিং অফিসাররা আপনাদের কমিশনের নিজস্ব ও নিবেদিতপ্রাণ লোক হবেন।" তিনি বিশ্বাস করেন, শুধুমাত্র এই একটি সাহসী সিদ্ধান্তের মাধ্যমেই বাংলাদেশের রাজনীতিতে এবং নির্বাচনী ব্যবস্থায় একটি বড় ধরনের গুণগত পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে।

বর্তমান ব্যবস্থার সমালোচনা করে মঈন খান একটি রূপক ব্যবহার করেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে চারটি 'বোতাম' থাকে—জেলা প্রশাসক (ডিসি), পুলিশ সুপার (এসপি), উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)। অভিযোগ করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এই চারটি বোতাম টিপেই ৩০০ আসনের নির্বাচনের ফলাফল বের করে আনা হয়। তিনি জোর দিয়ে বলেন, এই পুরনো এবং প্রশ্নবিদ্ধ পদ্ধতি থেকে দেশকে অবশ্যই বের হয়ে আসতে হবে।

কমিশনকে শক্ত ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়ে মঈন খান বলেন, বিএনপি নির্বাচন কমিশনকে সব ধরনের সহায়তা করবে। তবে শর্ত হলো কমিশনকে মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে হবে। তিনি সতর্ক করে বলেন, কমিশন যদি সরকারের কাছে নতজানু হয়ে থাকে, তবে দেশে নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করা কোনোভাবেই সম্ভব হবে না।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে সাধারণত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ৬৪ জেলার জেলা প্রশাসক এবং ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনাররা রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করে থাকেন। এছাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং কিছু ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পান। প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বদলে ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের এই দায়িত্ব দেওয়ার দাবি এর আগেও বিভিন্ন নির্বাচনের সময় উঠেছিল, যা এবার বিএনপির পক্ষ থেকে জোরালোভাবে উত্থাপন করা হলো।


খালেদা জিয়া প্রধান,তারেকের ছবি ব্যবহার করলে কী হবে? ইসির সক্ষমতা নিয়ে এনসিপির প্রশ্ন

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ১৯ ১৮:০০:৪৮
খালেদা জিয়া প্রধান,তারেকের ছবি ব্যবহার করলে কী হবে? ইসির সক্ষমতা নিয়ে এনসিপির প্রশ্ন

নিবন্ধন পাওয়ার পর নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে অনুষ্ঠিত প্রথম সংলাপেই কমিশনের সক্ষমতা নিয়ে সরাসরি প্রশ্ন তুলেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। বুধবার (১৯ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নিবন্ধিত সাতটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ইসির এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে এনসিপির পক্ষ থেকে নির্বাচনী আচরণবিধি প্রয়োগের ক্ষেত্রে কমিশনের কঠোরতা এবং বাস্তবতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করা হয়। সংলাপে দলটির পক্ষে উপস্থিত ছিলেন মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা এবং যুগ্ম সদস্যসচিব জহিরুল ইসলাম মুসা।

আলোচনায় অংশ নিয়ে এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব জহিরুল ইসলাম আচরণবিধির ৭ ধারার ‘চ’ উপধারাটিকে নির্বাচন কমিশনের জন্য ‘প্রথম পরীক্ষা’ হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, বিএনপির বর্তমান দলীয় প্রধান হলেন বেগম খালেদা জিয়া। কিন্তু আচরণবিধি অনুযায়ী কেবল বর্তমান দলীয় প্রধানের ছবি ব্যবহারের নিয়ম রয়েছে। সেক্ষেত্রে বিএনপির কোনো প্রার্থী যদি প্রচারণায় দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ছবি ব্যবহার করেন, তবে কমিশন সেই প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিধিমালা প্রয়োগ করতে পারবে কি না, সেটাই দেখার বিষয়। তিনি মন্তব্য করেন, তখনই কমিশনের আসল সক্ষমতা প্রমাণিত হবে। উল্লেখ্য, আগামী নির্বাচনের জন্য প্রণীত খসড়া আচরণবিধিতে বলা হয়েছে, প্রার্থীরা পোস্টার বা ব্যানারে কেবল বর্তমান দলীয় প্রধানের ছবি ব্যবহার করতে পারবেন।

সংলাপে এনসিপির নেতারা দাবি করেন, নতুন এই আচরণবিধি বাংলাদেশের প্রচলিত নির্বাচনী সংস্কৃতি ও উৎসবমুখর পরিবেশের সঙ্গে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। জহিরুল ইসলাম অভিযোগ করেন, কিছু বিধিনিষেধের মাধ্যমে দেশের দীর্ঘদিনের নির্বাচনী ঐতিহ্যকে পাশ কাটানোর চেষ্টা করা হয়েছে। তিনি ব্যানারের উপাদান নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, বিধিমালায় কাপড় বা চটের ওপর ব্যানার করার কথা বলা হয়েছে, কিন্তু দেশে চটের ওপর প্রিন্ট করার মতো প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা খুবই নগণ্য, বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে এই সুযোগ নেই বললেই চলে। এছাড়া প্রচারণার সময় সাউন্ডবক্সের শব্দসীমা ৬০ ডেসিবেল নির্ধারণ করা নিয়েও তিনি আপত্তি জানান। তার প্রশ্ন, এই শব্দের মাত্রা কারা পরিমাপ করবে এবং সাধারণ মানুষের কাছে সেই যন্ত্র আছে কি না। অভিযোগ জানানোর প্রক্রিয়াটিও অস্পষ্ট বলে তিনি মন্তব্য করেন।

এনসিপির পক্ষ থেকে আচরণবিধির আইনি কাঠামোর অস্পষ্টতা নিয়েও কথা বলা হয়। জহিরুল ইসলাম বলেন, বিধিমালায় তদন্ত কমিটির কাছে অভিযোগ করার কথা বলা হলেও সেই কমিটির সংজ্ঞা বা গঠনপ্রণালী স্পষ্ট করা হয়নি, যা পুরো প্রক্রিয়াকে জটিল করে তুলতে পারে। এমনকি বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ পাওয়ার পর কমিশনের কোনো কর্মকর্তা যদি ব্যবস্থা না নেন, তবে তার বিরুদ্ধে কী করণীয়, সে বিষয়েও প্রশ্ন তোলে দলটি। এনসিপির আশঙ্কা, এই আচরণবিধির মাধ্যমে পরোক্ষভাবে কিছু প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তিকে সুবিধা দেওয়া হয়েছে।

তবে আচরণবিধির কিছু বিষয়কে স্বাগতও জানিয়েছে এনসিপি। বিশেষ করে ২৪ ও ২৫ ধারায় প্রতীক বরাদ্দের পর সব প্রার্থীর উপস্থিতিতে নির্বাচনী ইশতেহার পাঠ, আচরণবিধি মানার অঙ্গীকার এবং টেলিভিশনে নির্বাচনী সংলাপে অংশ নেওয়ার যে সুযোগ রাখা হয়েছে, সেগুলোকে সাধুবাদ জানিয়েছে দলটি। তারা এই ধারাগুলোকে ঐচ্ছিক না রেখে বাধ্যতামূলক করার দাবি জানিয়েছে। এছাড়া নির্বাচনী সহিংসতা বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ হিসেবে জহিরুল ইসলাম প্রস্তাব দেন যে, কোনো দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল বা সহিংসতায় কেউ নিহত বা আহত হলে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করতে হবে।

সংলাপে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী আসন্ন গণভোটের নীতিমালা সম্পর্কে জানতে চান। তিনি নির্বাচন কমিশনকে পূর্ণ নিরপেক্ষতা বজায় রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেন, কমিশন যদি কোনো বিশেষ দলের প্রতি অনুগত না থেকে কেবল সংবিধানের প্রতি দায়বদ্ধ থাকে, তবে এনসিপি তাদের শতভাগ সহযোগিতা করবে। এছাড়া জোটের প্রার্থীদের নিজ দলের প্রতীকেই নির্বাচন করতে হবে—গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের এমন সংশোধনীকে ইতিবাচক হিসেবে উল্লেখ করে তিনি কমিশনকে এই সিদ্ধান্তে অটল থাকার আহ্বান জানান।


বিশৃঙ্খলা হলে আরেকটি বিপ্লব ঘটবে, নির্বাচন কমিশনকে এনসিপির হুঁশিয়ারি

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ১৯ ১৬:০২:২১
বিশৃঙ্খলা হলে আরেকটি বিপ্লব ঘটবে, নির্বাচন কমিশনকে এনসিপির হুঁশিয়ারি
ছবিঃ সংগৃহীত

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী নির্বাচন কমিশনকে সতর্ক করে বলেছেন, আগামী নির্বাচনে তরুণ প্রজন্মের বিশাল অংশগ্রহণ থাকবে। তাই নির্বাচনের পরিবেশ উৎসবমুখর রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, যদি নির্বাচনে কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয় এবং তরুণদের নির্বাচনের প্রতি যে সম্মানবোধ তৈরি হয়েছে তা নষ্ট হয়, তবে তারা হয়তো আরেকটি বিপ্লবের দিকে ধাবিত হতে পারে।

বুধবার (১৯ নভেম্বর) নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আয়োজিত এক সংলাপে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী আসন্ন নির্বাচনের সঙ্গে যুক্ত গণভোটের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরেন। তিনি কমিশনের কাছে জানতে চান, গণভোট কীভাবে পরিচালিত হবে এবং এটি কবে বাস্তবায়ন করা হবে। বিশেষ করে গণভোটে জালিয়াতি বা প্রতারণা রোধে কমিশন কোনো সুনির্দিষ্ট নীতিমালা গ্রহণ করেছে কি না, তা দ্রুত জনসমক্ষে প্রকাশ করার দাবি জানান তিনি। কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী এনসিপি প্রস্তুতি নেবে এবং প্রয়োজনে সব ধরনের সহযোগিতা করবে বলেও জানান তিনি।

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) স্বাধীনতার ওপর জোর দিয়ে এনসিপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, কমিশন যদি সব রাজনৈতিক দলের প্রভাবমুক্ত হয়ে সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে, তবে তার দল কমিশনকে শতভাগ সহযোগিতা করবে। তিনি অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোকেও সহযোগিতামূলক মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

নারী ভোটারদের নিরাপত্তা ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার বিষয়েও এনসিপি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিয়েছে। নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, নির্বাচনের সময় নারী ভোটাররা অনেক ক্ষেত্রে সাইবার হয়রানি বা হ্যারাসমেন্টের শিকার হতে পারেন। তাই তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশনের অধীনে একটি বিশেষ 'মনিটরিং সেল' গঠনের প্রস্তাব দেন তিনি।

প্রবাসী ভোটারদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সময়সীমা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন এনসিপি সমন্বয়ক। তিনি বলেন, প্রবাসীদের জন্য নির্ধারিত সময় খুবই সীমিত। যদি এই প্রক্রিয়াটি আরও আগে থেকে চালু করা যেত, তবে তাদের অংশগ্রহণ বাড়ত, যা নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা ও ভোটার সংখ্যা বৃদ্ধিতে সহায়ক হতো। এছাড়া নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর যোগাযোগ সহজ করতে তিনি প্রতিটি দলের জন্য একজন নির্দিষ্ট কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া বা 'ট্যাগ' করার প্রস্তাব করেন, যাতে দলগুলো তাদের উদ্বেগ দ্রুত জানাতে পারে।

দীর্ঘ সময় পর প্রার্থীরা নিজস্ব প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিয়ে নিজেদের পরিচয় তুলে ধরার সুযোগ পাচ্ছেন বলে মন্তব্য করেন নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। নির্বাচনের দিন যাদের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হবে, তাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার পদক্ষেপে তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ জানিয়ে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিতে ইসির নির্দেশনা মেনে কাজ করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।


নির্বাচন নিয়ে কেউ কেউ গাছে কাঁঠাল রেখে গোঁফে তেল দিচ্ছেন: জামায়াত আমির

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ১৯ ১৫:৪৫:৪৭
নির্বাচন নিয়ে কেউ কেউ গাছে কাঁঠাল রেখে গোঁফে তেল দিচ্ছেন: জামায়াত আমির
ছবিঃ সংগৃহীত

আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একটি বিশেষ মহল এখনই ষড়যন্ত্রের জাল বুনছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি মন্তব্য করেছেন, কেউ কেউ 'গাছে কাঁঠাল রেখে গোঁফে তেল' দিচ্ছেন এবং পেশিশক্তি ও কালো টাকার জোরে অন্যের ভোট ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করছেন। মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর কাফরুল দক্ষিণ থানা জামায়াতের এক প্রীতি সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। এই অসাধু চক্রের উদ্দেশে তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, যুবকদের ভোট নিয়ে কোনো ছিনিমিনি খেলা বরদাস্ত করা হবে না। ডাকাতরা যেন ভোট চুরির দুঃসাহস না দেখায়, কারণ প্রয়োজন হলে যুবকরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিস্ফোরিত হবে। তিনি তরুণদের আশ্বস্ত করে বলেন, তাদের পছন্দের প্রার্থীকেই তারা ভোট দেবে, জামায়াত তাদের ভোটাধিকার রক্ষায় পাহারাদারের ভূমিকা পালন করবে।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মামলার রায় প্রসঙ্গে জামায়াত আমির বলেন, এই রায়ের মাধ্যমে মজলুম মানুষের কান্না কিছুটা হলেও থামবে এবং স্বজনহারা পরিবারগুলো সাময়িক সান্ত্বনা পাবে। বিচারপ্রক্রিয়াটি সরাসরি সম্প্রচারিত হওয়ায় একে ন্যায়বিচারের মানদণ্ড হিসেবে উল্লেখ করে তিনি সরকার ও বিচার বিভাগকে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান। তিনি স্পষ্ট করেন যে, জামায়াত কারও ওপর অবিচার চায় না, এমনকি প্রতিপক্ষের ওপরও নয়। ক্ষমতায় গেলে তারা কারও সম্পদ কেড়ে নেবে না, বরং বিত্তশালীদের সম্পদের সুরক্ষা নিশ্চিত করবে।

দেশের অর্থনীতি ও দ্রব্যমূল্য নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, দেশ যদি চাঁদাবাজমুক্ত হয়, তবে উন্নয়নের গতি বহুগুণ বেড়ে যাবে এবং দ্রব্যমূল্য অর্ধেকে নেমে আসবে। তিনি অভিযোগ করেন, উৎপাদন পর্যায় থেকে শুরু করে ফুটপাতের হকার পর্যন্ত সবাই এখন চাঁদাবাজির শিকার। তিনি ব্যবসায়ীদের আশ্বস্ত করেন যে, ভবিষ্যতে কাউকে ব্যবসা করতে গিয়ে কোনো দলের বা গোষ্ঠীর মুখাপেক্ষী হতে হবে না। বাপ-দাদার জমিদারি মনে করা চাঁদাবাজদের সমাজ থেকে নির্মূল করার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। একইসঙ্গে ফুটপাতের হকারদের জন্য সম্মানজনক পুনর্বাসনের ব্যবস্থার কথাও উল্লেখ করেন।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে পড়া দুর্নীতির বিষবাষ্প দূর না হওয়া পর্যন্ত তাদের লড়াই থামবে না। বিচার বিভাগের মর্যাদা পুনরুদ্ধারের ওপর জোর দিয়ে জামায়াত আমির বলেন, বিচারকদের এমন সম্মানের আসনে থাকা উচিত যেন কেউ তাদের প্রভাবিত করার সাহস না পায়। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, একসময় বিচারকদের যে গাম্ভীর্য ও সম্মান ছিল, তা আজ নেই। পরিস্থিতির এতটাই অবনতি হয়েছে যে, বিচার করতে করতে শেষ পর্যন্ত পালাতে গিয়ে কাউকে কাউকে কলাপাতায় ঘুমানোর মতো পরিস্থিতিতেও পড়তে হয়েছে। এছাড়া ব্যাংক ও বিমা খাতসহ লুণ্ঠিত হওয়া জনগণের সম্পদ পুনরুদ্ধারেও তার দল লড়াই চালিয়ে যাবে বলে জানান।

পররাষ্ট্রনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে দলের অবস্থান পরিষ্কার করে শফিকুর রহমান বলেন, সভ্য সব দেশের সঙ্গেই তারা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে চান, তবে কারও প্রভুত্ব মেনে নেওয়া হবে না। একটি স্বাধীন দেশের মতোই বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি স্বাধীন ও স্বতন্ত্র হবে।

নারীদের কর্মসংস্থান ও কর্মঘণ্টা নিয়ে তার আগের একটি বক্তব্যের ব্যাখ্যা দেন জামায়াত আমির। তিনি বলেন, ইনসাফের স্বার্থেই নারীদের কর্মঘণ্টা কমানোর কথা বলা হয়েছিল, যা অনেকে ভুল ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি মনে করেন, একজন নারী শুধু কর্মী নন, তিনি একটি পরিবারের কেন্দ্রবিন্দু এবং একজন মা। কর্মঘণ্টা কমিয়ে দিলে নারীরা পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে কাজ শেষ করে পরিবারের ও সন্তানের যত্ন নিতে পারবেন, যা দিনশেষে সমাজ ও রাষ্ট্রকেই শক্তিশালী করবে। তিনি দাবি করেন, বর্তমানে নারীরা যেভাবে কাজ করছেন, ভবিষ্যতে তাদের সম্মান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে আরও ভালো কর্মপরিবেশ তৈরি করা হবে। সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন।


বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র হওয়া থেকে বাঁচাতে গণতন্ত্রের বিকল্প নেই: মির্জা ফখরুল

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ১৯ ১৪:৫০:২৯
বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র হওয়া থেকে বাঁচাতে গণতন্ত্রের বিকল্প নেই: মির্জা ফখরুল
ছবিঃ সংগৃহীত

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মন্তব্য করেছেন, বাংলাদেশকে যদি ব্যর্থ রাষ্ট্র হওয়া থেকে বাঁচাতে হয়, তবে অবিলম্বে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, গণতন্ত্রের পাশাপাশি বিচার বিভাগ, রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতাও নিশ্চিত করা জরুরি।

বুধবার (১৯ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে ‘চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে বিএনপি’ শীর্ষক একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে সতর্কবার্তা উচ্চারণ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তিগুলোর মধ্যে সচেতনভাবে কোনো একটি মহল বিভক্তি সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে কি না, তা গভীরভাবে খতিয়ে দেখা দরকার। তিনি সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত করে প্রশ্ন রাখেন, শেখ হাসিনার রায়কে কেন্দ্র করে যে ধরনের 'মবোক্রেসি' বা বিশৃঙ্খলা দেখা গেছে, তা কি মূল রায় থেকে মানুষের দৃষ্টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য করা হয়েছে? এই বিষয়টি নিয়ে ভাবার অবকাশ রয়েছে।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আরও বলেন, গণতন্ত্র মানে কেবল একটি নির্বাচন আয়োজন করা নয়। নির্বাচনের পরেও গণতন্ত্রকে একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হবে, যাতে রাষ্ট্রের ভিত্তি মজবুত থাকে। তিনি মনে করেন, রাষ্ট্রকে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে হলে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চর্চা অপরিহার্য।

অনুষ্ঠানে তিনি ২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানে দলের নেতাকর্মীদের ভূমিকার কথাও স্মরণ করেন এবং দেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।


যে আসন থেকে লড়বেন নুরুল হক নুর

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ১৯ ০৮:০৪:২৭
যে আসন থেকে লড়বেন নুরুল হক নুর
ছবি: সংগৃহীত

পটুয়াখালী–৩ (দশমিনা–গলাচিপা) আসন থেকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর। মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৪টায় দশমিনা উপজেলা গণঅধিকার পরিষদের আয়োজনে এক জনসভায় তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে এ ঘোষণা দেন। ট্রাক মার্কা নিয়েই তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামবেন বলে জানান এবং উপস্থিত জনতার সমর্থন কামনা করেন।

জনসভায় নুর বলেন, সাম্প্রতিক গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশের মানুষের মধ্যে নতুন প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে। এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য জাতীয় সরকার গঠনের কোনো বিকল্প নেই। তার মতে, জাতীয় সরকারই দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে পারে এবং একটি কার্যকর রাজনৈতিক সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম।

তিনি দাবি করেন, দেশ–বিদেশে তার যে পরিচিতি ও গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে, তা কাজে লাগিয়ে পটুয়াখালী–৩ আসনের উন্নয়নই হবে তার মূল লক্ষ্য। দীর্ঘ অবহেলা, যোগাযোগব্যবস্থার দুরবস্থা এবং পিছিয়ে পড়া জনজীবনের উন্নয়নে তিনি একটি সমন্বিত পরিকল্পনা হাতে নিতে চান।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় ঘোষণার পরদিন নিজের নির্বাচনী এলাকায় এসে নুর বলেন, এ রায় রাজনৈতিক দলগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দিয়েছে। অতীতের নির্যাতন, গুম, খুন, দখলবাজি ও একনায়কতান্ত্রিক আচরণ আর কোনো দলের মুখোশ হয়ে উঠলে জনগণকে ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়াতে হবে বলেও তিনি সতর্ক করেন।

তিনি আরও বলেন, দেশে আবারও ফ্যাসিবাদের আলামত দেখা যাচ্ছে। কোনো রাজনৈতিক নেতা বা দল যদি ক্ষমতার দাপটে দখলদারিত্ব বা জুলুম চালায়, তাহলে জনগণের আদালতে তাদের কোনো গ্রহণযোগ্যতা থাকবে না। এ ধরনের পরিস্থিতি রোধ করতে জনগণকে সজাগ ও ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান তিনি।

অঞ্চলভিত্তিক কিছু নেতার অতিউৎসাহী অবস্থান জাতীয় ঐক্যকে বিঘ্নিত করছে উল্লেখ করে নুর বলেন, দেশকে আর নতুন সংকটের মুখোমুখি করা যাবে না। সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে ঐকমত্যের নির্বাচনই দেশের জন্য কল্যাণকর। দলগুলোর পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে আসন ভাগাভাগি করলে স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের পথ সুগম হবে বলেও তিনি মত দেন।

নুর ঘোষণা দেন, নির্বাচিত হতে পারলে জামায়াত, বিএনপি, ইসলামী আন্দোলনসহ সব রাজনৈতিক দলের নেতাদের নিয়ে বসে চর এলাকার উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হবে। তিনি বলেন, বছরের পর বছর অবহেলার ফলে এলাকার সড়ক–যোগাযোগ, বাজারব্যবস্থা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা পিছিয়ে পড়েছে। এসব খাতে নবজাগরণ ঘটানোই হবে তার অঙ্গীকার।

জনসভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক লিয়ার হোসেন এবং সঞ্চালনা করেন সদস্য সচিব মিলন মিয়া। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা মহানগর উত্তর গণঅধিকার পরিষদের সহসভাপতি মিজান হাওলাদার, জেলা কমিটির আহ্বায়ক সৈয়দ নজরুল ইসলাম লিটু, যুগ্ম আহ্বায়ক আবু কালামসহ অন্যান্য নেতারা।

-রাফসান


পটুয়াখালী-৩: জোটের বলি নাকি দলের প্রার্থী? হাসান মামুন ও ভিপি নুরের অঘোষিত লড়াই

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ১৮ ১৬:৪৮:২২
পটুয়াখালী-৩: জোটের বলি নাকি দলের প্রার্থী? হাসান মামুন ও ভিপি নুরের অঘোষিত লড়াই
ছবিঃ সংগৃহীত

পটুয়াখালী-৩ (দশমিনা-গলাচিপা) আসনে বিএনপির দলীয় প্রার্থী ঘোষণা না হওয়ায় স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম হতাশা ও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। আগামী নির্বাচনে তারা ধানের শীষ প্রতীকে ভোট দিতে পারবেন কি না, তা নিয়ে তাদের মনে সংশয় তৈরি হয়েছে। মূলত জোটের কোনো শরিক দলকে এই আসনটি ছেড়ে দেওয়া হতে পারে—এমন গুঞ্জনে তৃণমূল বিএনপির নেতাকর্মীরা মানসিকভাবে বেশ ভেঙে পড়েছেন। তাদের আশঙ্কা, স্থানীয়ভাবে জনপ্রিয় নেতা হাসান মামুন মনোনয়ন না পেলে এবারও আসনটি দলের হাতছাড়া হতে পারে।

দশমিনা ও গলাচিপা নিয়ে গঠিত এই আসনটি শেষ পর্যন্ত জোটের কোনো অংশীদার পাবে, নাকি বিএনপি তাদের নিজস্ব প্রার্থী দেবে, তা নিয়ে দিনরাত হিসাব-নিকাশ করছেন স্থানীয় নেতারা। স্বাধীনতার পর থেকে কোনো প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনেই বিএনপি এই আসনে জয়লাভ করতে পারেনি। এর পেছনে যোগ্য প্রার্থী বাছাইয়ে ভুল এবং জনগণের আস্থা অর্জনে ব্যর্থতাকে প্রধান কারণ মনে করা হয়। ভোটারদের মধ্যেও আলোচনা চলছে যে, আওয়ামী লীগের আধিপত্য থাকা এই আসনটিতে বিএনপি কি আদৌ কোনোদিন জিততে পারবে না?

গত ৩ নভেম্বর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২৩৭টি আসনে দলের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করলেও পটুয়াখালী-৩ আসনের বিষয়টি স্থগিত রাখা হয়। কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তে নেতাকর্মীদের সন্দেহ আরও গভীর হয়েছে।

স্থানীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ ভোটারদের মতে, এই আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে যোগ্যতার বিচারে সবচেয়ে এগিয়ে আছেন হাসান মামুন। তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি। স্থানীয় বিএনপি তাকে ঘিরেই ঐক্যবদ্ধ এবং তাকেই প্রার্থী হিসেবে চায়। মনোনয়ন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে তাকে ঢাকায় সাক্ষাৎকার দেওয়ার জন্যও ডাকা হয়েছিল।

তবে এই আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকায় আরও নাম রয়েছে। দশমিনা উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাওলাদার মো. ইফতিয়াস উদ্দিন জয় মনোনয়ন চাইছেন। এছাড়া আওয়ামী লীগের (বর্তমানে নিষিদ্ধ ঘোষিত) সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনিও এই আসন থেকে নির্বাচন করতে পারেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামী থেকে অধ্যাপক মুহাম্মদ শাহ-আলম এবং ইসলামী আন্দোলন থেকে হাফেজ মাওলানা মুফতি আবু বকর সিদ্দীককে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।

বিএনপির দুশ্চিন্তার মূল কারণ হলো গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর। দীর্ঘদিনের গুঞ্জন রয়েছে যে, জোটের সমীকরণে বিএনপি এই আসনটি ভিপি নুরকে ছেড়ে দিতে পারে। এই গুঞ্জনকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি এলাকায় সহিংসতাও ছড়িয়েছে। মিত্র দল হিসেবে পরিচিত হলেও স্থানীয় বিএনপি ও গণঅধিকার পরিষদের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে এবং গলাচিপায় দুই পক্ষের নেতাকর্মীদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে।

২০১৮ সালের নির্বাচনের স্মৃতি এখনও নেতাকর্মীদের মনে দগদগে। সেবার হাসান মামুনের মনোনয়ন প্রায় নিশ্চিত ছিল, কিন্তু শেষ মুহূর্তে আওয়ামী লীগ ছেড়ে আসা গোলাম মাওলা রনিকে বিএনপি মনোনয়ন দেয়। এর প্রতিবাদে তখন দশমিনা-গলাচিপায় নেতাকর্মীদের মধ্যে পদত্যাগের হিড়িক পড়ে গিয়েছিল। স্থানীয় নেতাদের দাবি, এবারও যদি দলের বাইরের কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হয়, তবে একই পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি ঘটবে।

দশমিনা-গলাচিপা আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৫২ হাজার ২৬১ জন। আনোয়ার হোসেন নামে এক স্থানীয় ভোটার জানান, এই এলাকার মানুষ একসময় নৌকায় ভোট দিলেও হাসান মামুনের কারণে স্থানীয় রাজনীতিতে পরিবর্তন এসেছে। তার ব্যক্তিগত ইমেজের কারণে অনেকেই বিএনপির দিকে ঝুঁকেছেন এবং তিনি মনোনয়ন পেলে জয়ের সম্ভাবনা প্রবল।

বিএনপি নেতা হাওলাদার মো. ইফতিয়াস উদ্দিন জয় নিজেও মনোনয়নপ্রত্যাশী হলেও তিনি হাসান মামুনের পক্ষে মত দিয়েছেন। তিনি বলেন, "মনোনয়ন ভাগ্যের ব্যাপার। তবে এই আসনে জোটের কাউকে নয়, হাসান মামুনকে ধানের শীষের প্রার্থী করা হোক। তার ত্যাগ আমার চেয়েও বেশি। ছাত্রনেতা থাকাকালে তিনি যুবকদের কর্মসংস্থান করেছেন এবং নিজ খরচে অসহায়দের চিকিৎসা ও সাহায্য করেছেন। এই আসনে জয়ের জন্য তার বিকল্প নেই।" তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে, হাসান মামুন বাদে অন্য কাউকে বা জোটকে আসন দিলে জামায়াত প্রার্থীর জয়ের সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।

দশমিনা উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি মো. মোফাজ্জেল হোসেন বলেন, "হাসান মামুন দলের দুর্দিনে রক্ষাকবচ হিসেবে ছিলেন। যখন কেউ ছিল না, তখন তিনিই নেতাকর্মীদের আগলে রেখেছিলেন। আমরা ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী চাই এবং হাসান মামুনই এর যোগ্য।"

এদিকে, গণঅধিকার পরিষদের ঢাকা উত্তরের সহ-সভাপতি ও ভিপি নুরের ভগ্নিপতি মিজান হাওলাদার জানিয়েছেন, জোটের বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি এবং তারা আপাতত এককভাবেই প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।


ওয়াশিংটন–সিউল চুক্তিতে তীব্র প্রতিক্রিয়া পিয়ংইয়ংয়ের: এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরে অস্থিরতার ইঙ্গিত

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ১৮ ১১:৫০:২১
ওয়াশিংটন–সিউল চুক্তিতে তীব্র প্রতিক্রিয়া পিয়ংইয়ংয়ের: এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরে অস্থিরতার ইঙ্গিত
ছবিঃ সংগৃহীত

দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পারমাণবিকচালিত সাবমেরিন নির্মাণ নিয়ে হওয়া নতুন চুক্তির কড়া নিন্দা জানিয়েছে উত্তর কোরিয়া। মঙ্গলবার দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম কেসিএনএ-তে প্রকাশিত মন্তব্যে পিয়ংইয়ং দাবি করেছে, এই চুক্তি এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে “পারমাণবিক ডোমিনো” সৃষ্টি করবে এবং সামগ্রিক নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করে তুলবে।

গত সপ্তাহে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ং বহু প্রতীক্ষিত যুক্তরাষ্ট্র-দক্ষিণ কোরিয়া নিরাপত্তা ও বাণিজ্য চুক্তির চূড়ান্তকরণ ঘোষণা করেন। চুক্তির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন উন্নয়ন পরিকল্পনা এগিয়ে নেওয়া। সিউল জানিয়েছে, তারা ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ এবং ব্যবহৃত জ্বালানি পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণে তাদের সক্ষমতা ও সিদ্ধান্তগ্রহণের পরিধি বাড়ানোর বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন পেয়েছে—যা দীর্ঘদিন ধরেই তাদের লক্ষ্য ছিল।

চুক্তির প্রথম প্রতিক্রিয়ায় উত্তর কোরিয়া একে “বিপজ্জনক সংঘাত-প্ররোচনামূলক উদ্যোগ” হিসেবে বর্ণনা করে বলেছে, এটি শুধু কোরীয় উপদ্বীপ নয়, বরং গোটা এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের নিরাপত্তাকে গভীরভাবে অস্থির করে তুলবে। কেসিএনএ-র ভাষ্য অনুযায়ী, এই উদ্যোগ বৈশ্বিক অ-প্রসারণ কাঠামোকেও দুর্বল করে “নিউক্লিয়ার নিয়ন্ত্রণহীনতার” পরিবেশ সৃষ্টি করবে।

পিয়ংইয়ং আরও সতর্ক করে জানায়, দক্ষিণ কোরিয়ার হাতে পারমাণবিকচালিত সাবমেরিন গেলে তা এলাকায় একটি “পারমাণবিক ডোমিনো ঘটনার সূত্রপাত” করবে এবং নতুন করে অস্ত্র প্রতিযোগিতা উসকে দেবে। উত্তর কোরিয়া যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার “সামরিক মোকাবেলার অভিপ্রায়” উদ্ধৃত করে বলেছে, তারা “ন্যায্য ও প্রয়োজনীয় প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ” নিতে বাধ্য হবে।

অক্টোবর মাসে উত্তর কোরিয়া একটি ব্যালিস্টিক রকেট ইঞ্জিনের নবম ও চূড়ান্ত পরীক্ষার কথা জানায়, যা দ্রুতই নতুন আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম) পরীক্ষার ইঙ্গিত দেয়। এমন পরিস্থিতিতে পারমাণবিকচালিত সাবমেরিন ইস্যুটি অঞ্চলজুড়ে আরও উত্তেজনা ছড়াচ্ছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার নতুন মন্তব্যটি এসেছে এমন সময়, যখন সিউল সাত বছর পর প্রথমবারের মতো আন্তঃসীমান্ত সামরিক উত্তেজনা কমাতে পিয়ংইয়ং-কে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছে। প্রেসিডেন্ট লি কঠোর অবস্থানের জন্য পরিচিত তার পূর্বসূরীর নীতির বিপরীতে শর্তহীনভাবে আলোচনায় বসার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।

সিউলের নর্থ কোরিয়ান স্টাডিজ ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ইয়াং মু-জিন এএফপিকে বলেন, উত্তর কোরিয়ার উদ্বেগের মূল কারণ হলো—দক্ষিণ কোরিয়ার পারমাণবিকচালিত সাবমেরিন অর্জন “তাদের আংশিক পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার সোপান হয়ে উঠতে পারে।” তার মতে, এই পরিস্থিতি আন্তঃকোরীয় সামরিক আলোচনার সম্ভাবনাকেও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

উত্তর কোরিয়া এখনো দক্ষিণ কোরিয়ার আলোচনার প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি।

এদিকে চীনও ওয়াশিংটন-সিউল পারমাণবিক সাবমেরিন সহযোগিতা নিয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছে। সিউলে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত দাই বিং বলেন, এই অংশীদারিত্ব “শুধু বাণিজ্যিক প্রকল্পের বাইরে গিয়ে বৈশ্বিক অ-প্রসারণ ব্যবস্থাকে সরাসরি প্রভাবিত করে, যা কোরীয় উপদ্বীপ ও বৃহত্তর অঞ্চলের স্থিতিশীলতার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।”

-নাজমুল হাসান


যুক্তরাষ্ট্র–সৌদি সম্পর্ক পুনর্গঠনে কূটনৈতিক দেনদরবার ও আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ১৮ ১১:৩৮:৩৬
যুক্তরাষ্ট্র–সৌদি সম্পর্ক পুনর্গঠনে কূটনৈতিক দেনদরবার ও আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা
ছবিঃ সংগৃহীত

মঙ্গলবার ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের নতুন অধ্যায় সূচনার লক্ষ্য নিয়ে হোয়াইট হাউসে পৌঁছেছেন সৌদি আরবের প্রভাবশালী ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান। গত কয়েক দশকের তেলনির্ভর সহযোগিতা ও নিরাপত্তা অংশীদারিত্ব আরও গভীর করার পাশাপাশি বাণিজ্য, প্রযুক্তি, প্রতিরক্ষা এবং সম্ভাব্যভাবে বেসামরিক পারমাণবিক শক্তি উন্নয়ন—এই বিস্তৃত ক্ষেত্রগুলোতে সম্পর্ক আরও সম্প্রসারণ করাই সফরের মূল ফোকাস।

২০১৮ সালে ইস্তাম্বুলে সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ডের পর এটি এমবিএস–এর প্রথম যুক্তরাষ্ট্র সফর। ওই হত্যাকাণ্ড বিশ্বব্যাপী তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছিল এবং মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো উপসংহারে এসেছিল—মোহাম্মদ বিন সালমান অভিযানটির অনুমোদন দিয়েছিলেন। তিনি অবশ্য সরাসরি কোনও নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন, তবে দেশের কার্যত শাসক হিসেবে দায় স্বীকার করেছিলেন।

সাত বছরের বেশি সময় পর ভিন্ন প্রেক্ষাপটে আবারও ঘনিষ্ঠতায় ফিরতে চায় উভয় দেশ—একদিকে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি, অন্যদিকে বৈশ্বিক জ্বালিবাজারের শীর্ষ উৎপাদক।

ট্রাম্প তার গত সফরে সৌদি আরবের করা ৬০০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ অঙ্গীকারকে সামনে রেখে নতুন অর্থনৈতিক সুযোগ উন্মোচনে আগ্রহী। মানবাধিকার ইস্যু তিনি আগে এড়িয়ে গিয়েছিলেন, এবারও সেই ধারা বজায় রাখার ইঙ্গিত দিয়েছেন। অন্যদিকে সৌদি নেতৃত্ব আঞ্চলিক অস্থিরতার মধ্যে শক্তিশালী নিরাপত্তা নিশ্চয়তা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তিতে প্রবেশাধিকার এবং বেসামরিক পারমাণবিক কর্মসূচির লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা চায়।

সোমবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প নিশ্চিত করেন যে, রিয়াদকে উন্নত মার্কিন এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান বিক্রি করতে তিনি অনুমোদন দেবেন। এই বিক্রয় অনুমোদন মধ্যপ্রাচ্যের সামরিক ভারসাম্যে বড় ধরনের পরিবর্তন এনে দিতে পারে এবং দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েলের প্রতিবেশীদের ওপর ‘গুণগত সামরিক সুবিধা’ বজায় রাখার মার্কিন নীতিকে নতুন করে প্রশ্নের মুখে ফেলতে পারে।

সৌদি বিশ্লেষক আজিজ আলঘাশিয়ান বলেন, খাশোগি হত্যাকাণ্ডের অধ্যায় “এখন কার্যত পেছনে ফেলে এগিয়ে যাচ্ছে” ওয়াশিংটন ও রিয়াদ।

প্রতিরক্ষা অংশীদারিত্বে নতুন সমীকরণ

দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্র–সৌদি সম্পর্কের ভিত্তি ছিল তেলের স্থিতিশীল সরবরাহ এবং বিনিময়ে মার্কিন নিরাপত্তা নিশ্চয়তা। তবে ২০১৯ সালে ইরানের হামলায় সৌদি তেল স্থাপনাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ওয়াশিংটনের কার্যকর প্রতিক্রিয়া না পাওয়া দুই দেশের সম্পর্কে অস্বস্তি তৈরি করে। সাম্প্রতিক সময়ে হামাস সদস্যদের লক্ষ্য করে ইসরায়েলের দোহা বোমা হামলা এই উদ্বেগ নতুন করে উসকে দেয়।

এ প্রেক্ষাপটে ট্রাম্প নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে কাতারের সঙ্গে একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন। অনেক পর্যবেক্ষক মনে করেন, সৌদি আরবও এ ধরনের সুবিধা পাবে।

রিয়াদ সবশেষ আলোচনায় কংগ্রেস অনুমোদিত পূর্ণাঙ্গ প্রতিরক্ষা চুক্তির দাবি জানালেও, ওয়াশিংটন এটিকে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার শর্তসাপেক্ষে বিবেচনা করছে।সৌদি নেতৃত্ব আবার ইসরায়েলের কাছ থেকে একটি দৃশ্যমান ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি না পাওয়া পর্যন্ত সেই পদক্ষেপ নিতে রাজি নয়।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সম্প্রতি গাজায় যুদ্ধবিরতির পরও ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিপক্ষে তার অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছেন। ফলে প্রতিরক্ষা চুক্তির পথ আপাতত জটিল হয়ে আছে।

পাশাপাশি আলঘাশিয়ান মনে করেন, কাতারের মডেলের মতো যে কোনও নির্বাহী আদেশ পূর্ণাঙ্গ চুক্তি না হলেও “প্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ” হবে।

এক পশ্চিমা কূটনীতিক সংক্ষেপে বলেন, “ট্রাম্প চান স্বাভাবিকীকরণ, সৌদি চায় পূর্ণ প্রতিরক্ষা চুক্তি—কিন্তু দুই পক্ষই পুরোটা পাবে না; এটিই বাস্তবকথা, এটিই কূটনীতি।”

বিশেষজ্ঞ ডেনিস রস মনে করেন, সম্ভাব্য নির্বাহী আদেশ যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবকে যে কোনো নিরাপত্তা হুমকির ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক পরামর্শ ও সহযোগিতার কাঠামো দেবে। এতে অস্ত্র প্রতিস্থাপন থেকে শুরু করে থাড বা প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা মোতায়েন, এমনকি আঞ্চলিক নৌবাহিনী পাঠানোর মতো বিস্তৃত সহায়তা থাকতে পারে।

নিউক্লিয়ার ও এআই এজেন্ডা: আঞ্চলিক প্রতিযোগিতা তুঙ্গে

সৌদি আরবের ভিশন ২০৩০ পরিকল্পনার লক্ষ্য—তেলনির্ভরতা কমিয়ে প্রযুক্তি, জ্বালানি, উদ্ভাবন ও শিল্পায়নে নিজেদের শক্তিশালী অবস্থানে স্থাপন করা। এ কারণেই তারা এআই প্রযুক্তি এবং উন্নত চিপস অ্যাক্সেসকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে। তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী সংযুক্ত আরব আমিরাত সম্প্রতি উন্নতমানের মার্কিন চিপস ব্যবহারের সুযোগ পেয়েছে, যা রিয়াদের ওপর প্রতিযোগিতার চাপ বাড়িয়েছে।

এছাড়া সৌদি নেতৃত্ব একটি পূর্ণাঙ্গ বেসামরিক পারমাণবিক কর্মসূচির স্বপ্ন দেখছে। তবে এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের শর্ত—ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বা ব্যবহৃত জ্বালানির পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণের অধিকার না রাখার অঙ্গীকার—রিয়াদ গ্রহণে অনীহা প্রকাশ করেছে। কারণ এই দুটি প্রক্রিয়া পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির প্রযুক্তিগত পথ উন্মুক্ত করতে পারে।

ডেনিস রস আশা করেন, আলোচনায় কিছু অগ্রগতি হবে এবং অন্তত একটি পারমাণবিক সহযোগিতা চুক্তি—অথবা এ নিয়ে আশাবাদী বিবৃতি—ঘোষণা হতে পারে।

-আলমগীর হোসেন

পাঠকের মতামত:

ন্যায়ভিত্তিক ও মানবিক সমাজ গড়তে হলে রাষ্ট্রকে অবশ্যই তার সামাজিক ও নৈতিক দায়বদ্ধতা পুনরুদ্ধার করতে হবে

ন্যায়ভিত্তিক ও মানবিক সমাজ গড়তে হলে রাষ্ট্রকে অবশ্যই তার সামাজিক ও নৈতিক দায়বদ্ধতা পুনরুদ্ধার করতে হবে

রাষ্ট্রের ধারণাটি একসময় কেবল প্রশাসনিক ক্ষমতা, আইনের শাসন এবং নিরাপত্তা প্রদানের সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল। কিন্তু আধুনিক বিশ্বে রাষ্ট্রের ভূমিকা এখন... বিস্তারিত