বিশেষ প্রতিবেদন
মাহাথির মোহাম্মদ ও মালয়েশিয়ার অর্থনৈতিক রূপান্তর: নীতি, সংস্কার ও উত্তরাধিকার

মো. অহিদুজ্জামান
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও গবেষক

বিশ শতকের শেষভাগে মালয়েশিয়ার দ্রুত অর্থনৈতিক রূপান্তরের কৃতিত্ব প্রায়ই মাহাথির মোহাম্মদের দূরদর্শী নেতৃত্ব ও সাহসী নীতির সঙ্গে যুক্ত করা হয়। তিনি ১৯৮১ থেকে ২০০৩ এবং পরে আবার ২০১৮ থেকে ২০২০ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। প্রথম ২২ বছরের শাসনামলে মাহাথির মালয়েশিয়ার অর্থনীতিকে আধুনিকীকরণ ও বহুমুখীকরণের মাধ্যমে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যান। একটি পণ্যনির্ভর পশ্চাৎপদ অর্থনীতি থেকে এটিকে রূপান্তরিত করেন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে গতিশীল উদীয়মান শিল্প অর্থনীতির একটিতে।
তিনি জাতীয় উন্নয়নের জন্য উচ্চাভিলাষী কর্মসূচি হাতে নেন। এর মধ্যে ছিল Look East Policy, Vision 2020 এবং বিশাল অবকাঠামোগত প্রকল্পসমূহ। তিনি প্রচলিত ধ্যানধারণাকে চ্যালেঞ্জ করতে দ্বিধা করেননি। ১৯৯৭ সালের এশীয় আর্থিক সংকটে আইএমএফ-এর সহায়তা প্রত্যাখ্যান এবং পুঁজি নিয়ন্ত্রণ ব্যবহারের মধ্য দিয়ে তিনি এর দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। মাহাথির মূলধারার অর্থনীতিতে ইসলামী নীতিমালা যেমন ইসলামী ব্যাংকিং ও সুকুক বন্ড সংযুক্ত করেন। উদারীকরণ ও বেসরকারীকরণের মাধ্যমে বিদেশি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করেন এবং রাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত উদ্যোগ তৈরি করেন উন্নয়নের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য।
আশির দশকের শুরু: শিল্পায়ন উদ্যোগ ও “লুক ইস্ট” নীতি
১৯৮১ সালে মাহাথির ক্ষমতায় আসার সময় মালয়েশিয়া তীব্র বাজেট ঘাটতি এবং রাবার, টিন ও পাম তেল রপ্তানিনির্ভর অর্থনীতির চাপে ভুগছিল। শিল্পায়নে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে তিনি একটি বৃহৎ শিল্পায়ন কর্মসূচি হাতে নেন এবং ১৯৮২ সালে প্রবর্তন করেন “Look East Policy”। এর উদ্দেশ্য ছিল জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার কর্মনৈতিকতা ও শিল্প দক্ষতাকে অনুসরণ করা।
এই নীতির আওতায় হাজার হাজার মালয়েশিয়ান শিক্ষার্থী ও প্রশিক্ষণার্থীকে জাপানে পাঠানো হয় এবং জাপানি বিশেষজ্ঞদের আমন্ত্রণ জানানো হয় মালয়েশিয়ায়। আশা করা হয়েছিল যে পূর্ব এশীয় দক্ষতা ও শৃঙ্খলা মালয়েশিয়ার অর্থনীতিতে স্থানান্তরিত হবে। লুক ইস্ট নীতির ৪০তম বার্ষিকীতে মাহাথির উল্লেখ করেন যে ১৯৮২ সালের পর থেকে ২৬,০০০-এরও বেশি মালয়েশিয়ান জাপানে পড়াশোনা করেছে এবং প্রায় ১,৫০০ জাপানি কোম্পানি মালয়েশিয়ায় কার্যক্রম চালাচ্ছে, যেখানে চার লক্ষাধিক মানুষ কর্মরত।
এই নীতি প্রাথমিকভাবে মালয়েশিয়ার কৌশলগত ঝোঁককে পশ্চিমা নির্ভরতা থেকে সরিয়ে পূর্ব এশীয় মডেলের দিকে নিয়ে যায়। এতে যেমন অর্থনৈতিক বাস্তববাদ প্রতিফলিত হয়, তেমনি উন্নয়নে অধিক জাতীয় স্বায়ত্তশাসনের জন্য মাহাথিরের রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষাও স্পষ্ট হয়।
মাহাথিরের প্রথম দিককার বছরগুলোতে জাতীয় শিল্প অগ্রদূত তৈরির পদক্ষেপ নেওয়া হয়। ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় মালয়েশিয়ার প্রথম জাতীয় গাড়ি কোম্পানি Proton (মিতসুবিশির প্রযুক্তিগত সহায়তায়), যার লক্ষ্য ছিল দেশীয় অটোমোবাইল শিল্প গড়ে তোলা। ইস্পাত ও সিমেন্টের মতো ভারী শিল্পগুলোকে উৎসাহিত করা হয় রাষ্ট্রায়ত্ত Heavy Industries Corporation of Malaysia (HICOM) এর মাধ্যমে, যা প্রায়ই স্বল্পসুদে জাপানি ঋণ ব্যবহার করে যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত হতো।
এই পদক্ষেপগুলোর লক্ষ্য ছিল দেশীয় উৎপাদন সক্ষমতা তৈরি করা এবং শিল্পপণ্য আমদানির ওপর নির্ভরতা কমানো। রাজনৈতিকভাবে এর আরেকটি উদ্দেশ্য ছিল: আধুনিক শিল্পে বুমিপুত্রা অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা এবং জাতীয় গর্বের প্রতীক তৈরি করা (যেমন মালয়েশিয়ায় তৈরি গাড়ি), যা জাতিগত অর্থনৈতিক বৈষম্য হ্রাসে সহায়ক হতো। তবে এই রাষ্ট্রনেতৃত্বাধীন শিল্পায়ন উদ্যোগ ব্যয়বহুল ছিল এবং কিছু ক্ষেত্রে ব্যর্থতাও দেখা দেয়। যেমন, Perwaja Steel প্রকল্প পরবর্তীতে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ে। তবুও, এই নীতি মালয়েশিয়ার শিল্প অর্থনীতির প্রাথমিক ভিত্তি স্থাপন করে।
অর্থনৈতিক উদারীকরণ ও বিদেশি বিনিয়োগের উত্থান (মধ্য আশির দশক–নব্বইয়ের দশক)
মধ্য আশির দশকে বৈশ্বিক মন্দা এবং পণ্যের দামের পতন মালয়েশিয়াকে কঠোরভাবে আঘাত করে। ১৯৮৫ সালে দেশটি মন্দার কবলে পড়ে। এই পরিস্থিতি মাহাথিরকে নতুনভাবে চিন্তা করতে বাধ্য করে। ১৯৮৬ সালের পর তাঁর সরকার রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ থেকে বাজারমুখী নীতির দিকে ঝুঁকে পড়ে। অর্থমন্ত্রী দাইম যায়নুদ্দিনের নেতৃত্বে সরকার কৃচ্ছ্রসাধন, নিয়ন্ত্রণ শিথিলকরণ এবং রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বেসরকারীকরণের মতো পদক্ষেপ নেয়।
এর আগেই ১৯৮৩ সালে মাহাথির “Malaysia Incorporated” ধারণা উত্থাপন করেছিলেন, যেখানে সরকার ও বেসরকারি ব্যবসাকে উন্নয়নের অংশীদার হিসেবে কল্পনা করা হয়। নব্বইয়ের দশকে এই ধারণা গতি পায়। অনেক সরকারি দপ্তর করপোরেট রূপে রূপান্তরিত হয় বা বেসরকারীকরণ করা হয়। Telekom Malaysia, Tenaga Nasional, এমনকি Malaysia Airlines-কেও আংশিক বা সম্পূর্ণ বেসরকারীকরণ করা হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল দক্ষতা বাড়ানো, সরকারের আর্থিক বোঝা হ্রাস করা এবং একই সঙ্গে মালয় উদ্যোক্তাদের একটি করপোরেট শ্রেণি তৈরি করা।
মাহাথিরের অবসর গ্রহণের সময় ২০০৩ সালে দেখা যায়, ১৯৮১ সালের তুলনায় শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা তিনগুণেরও বেশি বেড়ে ৯০৬-এ দাঁড়িয়েছে এবং বাজার মূলধন ৫৫ বিলিয়ন রিঙ্গিত থেকে বেড়ে ৬৪০ বিলিয়ন রিঙ্গিতে পৌঁছেছে। এটি প্রমাণ করে তাঁর শাসনামলে বেসরকারি খাত কতটা সক্রিয় ও শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল।
বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (FDI) আকর্ষণও ছিল এই নীতির আরেকটি মূল লক্ষ্য। ১৯৮৬ সালে সরকার Promotion of Investments Act চালু করে, যেখানে রপ্তানিমুখী উৎপাদনকারীদের জন্য কর প্রণোদনা দেওয়া হয় এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নিরুৎসাহিত করা বুমিপুত্রা মালিকানার কিছু শর্ত শিথিল করা হয়। এর ফলে উচ্চমূল্যের রপ্তানিমুখী শিল্প, দক্ষতা উন্নয়ন ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতি ত্বরান্বিত হয়।
সময়ও ছিল অনুকূল। ১৯৮৫ সালের Plaza Accord-এর পর জাপানি ইয়েনের মান বাড়তে শুরু করে। ফলে অনেক জাপানি কোম্পানি (পরে কোরিয়ান ও তাইওয়ানিজ কোম্পানিও) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় উৎপাদন স্থানান্তর করতে থাকে। মালয়েশিয়ার নতুন উদার বিনিয়োগ পরিবেশ এই ঢেউয়ের প্রধান সুবিধাভোগীতে পরিণত হয়। ফলে মুক্তবাণিজ্য অঞ্চল ও শিল্পাঞ্চলে সেমিকন্ডাক্টর, ইলেকট্রনিক্স ও অন্যান্য পণ্য উৎপাদনকারী কারখানার প্রসার ঘটে। পূর্ব এশিয়া থেকে মূলধন ও প্রযুক্তির প্রবাহ মালয়েশিয়াকে নব্বইয়ের দশকে এক দশকব্যাপী উচ্চ প্রবৃদ্ধি ও কাঠামোগত রূপান্তরের পথে এগিয়ে দেয়। ফলে নব্বইয়ের শুরুর দিকেই মালয়েশিয়া এক প্রধান ইলেকট্রনিক্স রপ্তানিকারক দেশে পরিণত হয়।
রাজনৈতিকভাবে এ নীতি ছিল মাহাথিরের এক বাস্তববাদী রূপান্তর। পূর্বের অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদী দৃষ্টিভঙ্গির ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি এটি ছিল Vision 2020-এর লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য বৈদেশিক মূলধন ও বৈশ্বিক বাজারে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার প্রয়াস। নব্বইয়ের দশকে মালয়েশিয়া নিয়মিতভাবে ৮–১০ শতাংশ বার্ষিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করে এবং কৃষি ও খনিজের বাইরেও অর্থনীতিকে দৃঢ়ভাবে বহুমুখীকরণ করে। মাহাথির নিজেও বলেছিলেন, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরির মধ্য দিয়ে নব্বইয়ের দশকে মালয়েশিয়া বিশ্বের শীর্ষ ২০ বাণিজ্যিক দেশের একটিতে পরিণত হয়।
প্রতিবেশী অনেক দেশের তুলনায় মালয়েশিয়া বৈশ্বিক অর্থনীতির সঙ্গে নিজেদের শর্তে একীভূত হতে সক্ষম হয়েছিল। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের স্বাগত জানালেও সরকার-সংযুক্ত কোম্পানি ও নীতির মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোতে জাতীয় স্বার্থ সুরক্ষিত করা হয়েছিল। এর ফলে প্রবৃদ্ধির সুফল মালয়েশিয়ার জনগণ ভোগ করতে পেরেছিল।
ভিশন ২০২০ ও উচ্চাভিলাষী আধুনিকায়ন কর্মসূচি
১৯৯১ সালে আত্মবিশ্বাসের জোয়ারে ভেসে মাহাথির ঘোষণা করেন Vision 2020। এটি ছিল এক সাহসী জাতীয় কর্মসূচি, যার লক্ষ্য ছিল ২০২০ সালের মধ্যে মালয়েশিয়াকে একটি উন্নত দেশে রূপান্তর করা। এই দীর্ঘমেয়াদি ভিশন শুধু অর্থনীতি নয়, আরও বিস্তৃত একটি কাঠামোকে অন্তর্ভুক্ত করে। এতে নয়টি চ্যালেঞ্জের কথা বলা হয়েছিল। এর মধ্যে ছিল একটি বৈজ্ঞানিক ও প্রগতিশীল সমাজ গঠন থেকে শুরু করে জাতীয় ঐক্য সুদৃঢ় করা পর্যন্ত।
অর্থনৈতিকভাবে ভিশন ২০২০ প্রতি বছর প্রায় ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ করে এবং জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির ওপর জোর দেয়। রাজনৈতিকভাবে এর উদ্দেশ্য ছিল জাতিগত ভেদাভেদ অতিক্রম করে সকল মালয়েশিয়ানকে সমৃদ্ধি ও আধুনিকতার যৌথ লক্ষ্যের চারপাশে ঐক্যবদ্ধ করা। এটি New Economic Policy (১৯৭০–১৯৯০)-এর পরবর্তী ধাপ হিসেবে প্রণীত হয়েছিল। NEP মূলত দারিদ্র্য দূরীকরণ ও জাতিগত গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সম্পদের পুনর্বিন্যাসে গুরুত্ব দিয়েছিল। আর Vision 2020 সেই ধাপ অতিক্রম করে এক সমন্বিত আধুনিক উন্নয়ন কৌশল প্রস্তাব করে। একই বছর মাহাথির National Development Policy চালু করেন, যা NEP-এর উত্তরসূরি হলেও সামগ্রিক প্রবৃদ্ধি ও বেসরকারি খাতের সম্প্রসারণে বেশি জোর দেয়।
নব্বইয়ের দশকের অর্থনৈতিক বুম ও অবকাঠামো উন্নয়ন
নব্বইয়ের দশকের প্রথম ও মধ্যভাগে মালয়েশিয়া এক অর্থনৈতিক বুমের সাক্ষী হয়। এই সময় মাহাথির সরকার দেশকে আধুনিকায়নের জন্য বিশাল অবকাঠামো ও নগর উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেয়। মহাসড়ক, আকাশচুম্বী ভবন, বিমানবন্দর, এমনকি নতুন শহরও রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনায় গড়ে ওঠে।
একটি ঐতিহাসিক প্রকল্প ছিল North–South Expressway। এটি ৮৪৭ কিলোমিটার দীর্ঘ মহাসড়ক, যা থাইল্যান্ড সীমান্ত থেকে সিঙ্গাপুর পর্যন্ত সংযোগ স্থাপন করে। ১৯৯৪ সালে এটি সম্পন্ন হয় এবং দেশের অভ্যন্তরীণ সংযোগ বৃদ্ধি পায়। রাজধানী কুয়ালালামপুরের আকাশরেখা পাল্টে যায় Petronas Twin Towers নির্মাণের মাধ্যমে। ৪৫২ মিটার উচ্চতার এই ভবন দুটি ১৯৯৮ সালে সম্পন্ন হলে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভবনে পরিণত হয়। এতে জাতীয় তেল কোম্পানি পেট্রোনাসের প্রধান কার্যালয় স্থাপন করা হয়। এটি মালয়েশিয়ার আধুনিক আকাঙ্ক্ষা ও দ্রুত উন্নয়নের প্রতীক হয়ে ওঠে।
সরকার নতুন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর KLIA নির্মাণ করে। এটি ১৯৯৮ সালে চালু হয় এবং দ্রুতই বিশ্বমানের বিমানকেন্দ্র হিসেবে খ্যাতি অর্জন করে। এর পাশাপাশি নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি সময়ে শুরু হয় নতুন প্রশাসনিক রাজধানী Putrajaya-এর নির্মাণ। ১৯৯৬ সালে কাজ শুরু হয় এবং ১৯৯৯ সালের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সেখানে স্থানান্তরিত হয়। পরে এটিকে ফেডারেল টেরিটরি ঘোষণা করা হয়। সুপরিকল্পিত এই শহরে বিশাল সরকারি ভবন, আধুনিক অবকাঠামো, বাগান ও স্মার্ট প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এটি মাহাথিরের কল্পিত আধুনিক ও দক্ষ প্রশাসনিক ব্যবস্থার প্রতিফলন।
আরেকটি দূরদর্শী প্রকল্প ছিল Multimedia Super Corridor (MSC)। ১৯৯৬ সালে চালু হওয়া এই উচ্চপ্রযুক্তি অঞ্চল কুয়ালালামপুর থেকে নতুন বিমানবন্দর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এর অন্তর্ভুক্ত ছিল সাইবারজায়া শহর। MSC-কে মালয়েশিয়ার “সিলিকন ভ্যালি” হিসেবে কল্পনা করা হয়েছিল। লক্ষ্য ছিল প্রযুক্তি বিনিয়োগ আকর্ষণ করা এবং তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প গড়ে তোলা। মাহাথির নিজেই বৈশ্বিক প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতেন। এমনকি তথ্যপ্রযুক্তি খাতের নেতৃস্থানীয় উদ্যোক্তাদের নিয়ে আন্তর্জাতিক উপদেষ্টা প্যানেলও গঠন করেন। ২০০০ সালের মধ্যে বিল গেটসের মতো প্রযুক্তি বিশ্বনেতারা MSC-কে পশ্চিমা বিশ্বের বাইরে সবচেয়ে উচ্চাভিলাষী প্রযুক্তি উদ্যোগ হিসেবে আখ্যা দেন।
কুয়ালালামপুরে অবস্থিত পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার, যা ১৯৯৮ সালে সম্পন্ন হয়, সে সময় বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভবন হিসেবে খ্যাতি পায়। মাহাথির মোহাম্মদের উন্নয়ন নীতির অধীনে এগুলো শুধু আকাশচুম্বী স্থাপত্যই নয়, বরং মালয়েশিয়ার দ্রুত আধুনিকায়নের গর্বিত প্রতীক হয়ে ওঠে।
নব্বইয়ের দশকে মাহাথির সরকারের রাষ্ট্র-নেতৃত্বাধীন উন্নয়ন কর্মসূচির অংশ হিসেবে শুধু এই টুইন টাওয়ারই নয়, নতুন মহাসড়ক, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং নতুন প্রশাসনিক রাজধানী পুত্রাজায়া নির্মাণ করা হয়। এসব বৃহৎ অবকাঠামো প্রকল্প মালয়েশিয়ার আধুনিক রাষ্ট্রে রূপান্তরের প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে এবং বিশ্বমঞ্চে দেশটির সক্ষমতা তুলে ধরে।
এই প্রকল্পগুলো ছিল ব্যয়বহুল এবং অনেক সময় সমালোচিতও হয়েছে। তবে এতে কোনো সন্দেহ নেই যে এগুলো মালয়েশিয়ার ভৌত ও প্রযুক্তিগত অবকাঠামোকে উন্নত করেছে এবং ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধির ভিত্তি স্থাপন করেছে। এসব অবদানের জন্য মাহাথির “বাপা পেমোডেনান” বা “Father of Modernisation” উপাধি অর্জন করেন।
এ ধরনের বৃহৎ রাষ্ট্র-নেতৃত্বাধীন আধুনিকীকরণের পেছনে দুটি প্রধান যুক্তি ছিল। অর্থনৈতিকভাবে মাহাথির বিশ্বাস করতেন যে বিশ্বমানের অবকাঠামো ও প্রতীকী প্রকল্প বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করবে এবং মালয়েশিয়াকে নবশিল্পায়িত দেশের কাতারে উন্নীত করবে। সত্যিই, ২০০৩ সালের মধ্যে মালয়েশিয়া বিশ্বের ১৭তম বৃহত্তম বাণিজ্যিক জাতিতে পরিণত হয় এবং প্রতিযোগিতামূলক উৎপাদন ও সেবা খাত গড়ে তোলে।
ইসলামী অর্থনীতি ও নীতিমালার সংযুক্তি
পশ্চিমা ধাঁচের শিল্প আধুনিকায়নের পাশাপাশি মাহাথিরের মালয়েশিয়া ধীরে ধীরে ইসলামী অর্থনৈতিক নীতিগুলোকে আর্থিক ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত করে। এতে দেশের মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ বাস্তবতা প্রতিফলিত হয় এবং মাহাথিরের আধুনিক মুসলিম রাষ্ট্র গড়ার ধারণাও প্রকাশ পায়। আশির দশকে মাহাথিরের সরকার ইসলামীকরণ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ইসলামী ব্যাংকিং চালু করে। এর উদ্দেশ্য ছিল জনগণের চাহিদা পূরণ করা, একই সঙ্গে ইসলামী বিরোধী দলের প্রভাবও হ্রাস করা। ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় মালয়েশিয়ার প্রথম ইসলামী ব্যাংক Bank Islam Malaysia Berhad। মাহাথির এটিকে আখ্যা দেন “একটি বৃহত্তর ইসলামী অর্থনীতির প্রথম ধাপ” হিসেবে। এর পরের বছর চালু হয় দেশের প্রথম তাকাফুল বা ইসলামী বীমা প্রতিষ্ঠান, যা শরীয়াহ-সম্মত আর্থিক সেবা প্রদান শুরু করে। এই প্রাথমিক উদ্যোগগুলো মালয়েশিয়াকে আধুনিক ইসলামী অর্থনীতির অন্যতম অগ্রদূত করে তোলে।
নব্বইয়ের দশক জুড়ে সরকার প্রচলিত ব্যবস্থার পাশাপাশি ইসলামী আর্থিক অবকাঠামো গড়ে তুলতে থাকে। ১৯৯০ সালে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক অর্জিত হয়, যখন Shell MDS বিশ্বের প্রথম সুকুক বা ইসলামী বন্ড মালয়েশিয়ায় ইস্যু করে। এতে ১২৫ মিলিয়ন রিঙ্গিত সংগ্রহ করা হয় এবং শরীয়াহ-সম্মত মূলধনবাজারের নতুন পথ উন্মুক্ত হয়। নব্বইয়ের শেষভাগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সিকিউরিটিজ কমিশনে বিশেষ শরীয়াহ উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করা হয়, যাতে ইসলামী ব্যাংকিং ও মূলধন বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যায়। একই সময়ে ইসলামী আন্তঃব্যাংক অর্থবাজার চালু করা হয়, যাতে ইসলামী ব্যাংকগুলো তারল্য ব্যবস্থাপনা করতে পারে। মাহাথির এসব উদ্যোগকে সমর্থন করেন, কারণ এগুলো তাঁর কল্পিত অর্থনৈতিকভাবে গতিশীল ইসলামী রাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল। তিনি প্রায়ই বলতেন, ইসলাম উন্নয়নের অন্তরায় নয়। মুসলমানরা আধুনিক কাঠামোর মধ্যেও সফল হতে পারে এবং তিনি নীতির মাধ্যমে তা প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন।
ইসলামী অর্থনীতি সম্প্রসারণের রাজনৈতিক যুক্তি ছিল বহুমুখী। একদিকে এটি মুসলিম নাগরিকদের ধর্মীয়-অর্থনৈতিক প্রয়োজন পূরণ করত। তারা যাতে বিশ্বাস অনুযায়ী ব্যাংকিং ও বিনিয়োগ করতে পারে, সে সুযোগ তৈরি হতো। অন্যদিকে মালয়েশিয়াকে একটি বৈশ্বিক ইসলামী আর্থিক কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করত, যা মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মূলধন আকর্ষণ করত।
এই কৌশলের দীর্ঘমেয়াদি সুফল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণিত হয়েছে। ২০২৩ সালের মধ্যে মালয়েশিয়া বিশ্বের সবচেয়ে বড় সুকুক ইস্যুকারী রাষ্ট্রে পরিণত হয়। একই সঙ্গে দেশটি বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ইসলামী ব্যাংকিং খাত গড়ে তোলে। বর্তমানে মালয়েশিয়ার প্রায় ৪৫ শতাংশ অর্থায়ন ইসলামী ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে হয়। দেশটি ধারাবাহিকভাবে ইসলামী অর্থনীতি উন্নয়ন সূচকে শীর্ষে থাকে।
১৯৯৭–৯৮ এশিয়ান আর্থিক সংকট: আইএমএফকে অস্বীকার করে পুঁজি নিয়ন্ত্রণ
নব্বইয়ের দশকের শেষভাগে মাহাথিরের নেতৃত্বে মালয়েশিয়া সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক পরীক্ষার মুখোমুখি হয়। এটি ছিল এশিয়ান আর্থিক সংকট। ১৯৯৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে যখন আঞ্চলিক মুদ্রার অস্থিরতা দেখা দেয়, মালয়েশিয়াও প্রতিবেশী দেশগুলোর মতোই গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রিঙ্গিতের মান দ্রুত পতন ঘটে, শেয়ারবাজার প্রায় অর্ধেক ধসে পড়ে এবং বিপুল মূলধন দেশ থেকে বেরিয়ে যায়। ১৯৯৮ সালের শুরুর দিকে মালয়েশিয়ার জিডিপি প্রবলভাবে সংকুচিত হচ্ছিল এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অত্যন্ত কমে গিয়েছিল।
অনেক পর্যবেক্ষক ধারণা করেছিলেন মালয়েশিয়াও থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো আইএমএফের সহায়তা চাইবে এবং কঠোর মিতব্যয়ী নীতি গ্রহণ করবে। সত্যিই, প্রথমদিকে উপপ্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের নেতৃত্বে সরকার সুদের হার বৃদ্ধি ও সরকারি ব্যয় কমানোর মতো আইএমএফ-ধাঁচের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল। কিন্তু মাহাথির ক্রমশ এসব পদক্ষেপে অসন্তুষ্ট হয়ে ওঠেন। তিনি মনে করছিলেন এগুলো মন্দাকে আরও গভীর করছে এবং দেশের অর্থনৈতিক নীতির নিয়ন্ত্রণ বিদেশি ঋণদাতাদের হাতে চলে যাচ্ছে।
১৯৯৮ সালের মাঝামাঝি মাহাথির নাটকীয়ভাবে আনোয়ারকে সরিয়ে দেন এবং একেবারে ভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। মালয়েশিয়া আইএমএফের সহায়তা নেবে না, বরং নিজস্বভাবে পুঁজি নিয়ন্ত্রণ আরোপ করবে।
১৯৯৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর মালয়েশিয়া রিঙ্গিতের বিনিময় হার মার্কিন ডলারের বিপরীতে ৩.৮০ নির্ধারণ করে এবং বিদেশে রিঙ্গিত লেনদেন নিষিদ্ধ করে। এর ফলে জল্পনাকারীদের মূলধন পালানোর পথ কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। বিদেশি পোর্টফোলিও বিনিয়োগের ওপর এক বছরের জন্য উত্তোলন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয় (পরে তা উত্তোলনের ওপর কর ধার্য করে পরিবর্তন করা হয়)। একই সময়ে আইএমএফের নির্দেশনার বিপরীতে সুদের হার কমানো হয়, যাতে ব্যাংক ঋণ বাড়াতে পারে এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল হয়। মাহাথির স্পষ্ট করে বলেন যে আইএমএফের সহায়তা প্রত্যাখ্যান করার মূল কারণ ছিল অর্থনৈতিক নীতির পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা এবং কঠোর মিতব্যয়ী পদক্ষেপ এড়ানো। তিনি লক্ষ্য করেছিলেন যে ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ও দক্ষিণ কোরিয়ায় আইএমএফ-নির্ধারিত নীতির কারণে মন্দা আরও গভীর হয়েছে এবং সেখানে ব্যাপক বেকারত্ব ও সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। মালয়েশিয়া সেই পথ এড়াতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিল।
মাহাথিরের এই নীতি শুরুতে সমালোচিত হয়েছিল। বলা হয়েছিল বিনিয়োগকারীরা ভয় পেয়ে দীর্ঘদিন মালয়েশিয়ায় ফিরবে না। কিন্তু বাস্তবে দ্রুত স্থিতিশীলতা আসে। নির্ধারিত বিনিময় হার রিঙ্গিতের পতন থামিয়ে দেয়। ব্যবসার জন্য নিশ্চয়তা তৈরি হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিকে সহজ করার দিকে মনোযোগ দিতে পারে। মূলধনের দেশত্যাগ বন্ধ হওয়ায় রিজার্ভ রক্ষা পায় এবং নতুন করে জল্পনামূলক আক্রমণ প্রতিরোধ হয়।
১৯৯৮ সালে অর্থনীতি ৭.৪ শতাংশ সংকুচিত হলেও ১৯৯৯ সালে প্রবৃদ্ধি ফিরে আসে ৬.১ শতাংশে। তা-ও আইএমএফ ঋণ ছাড়াই। এই সাফল্য মাহাথিরের অবস্থানকে অনেকের চোখে বৈধতা দেয়। পরে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকও স্বীকার করে যে নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে অস্থায়ী পুঁজি নিয়ন্ত্রণ বৈধ নীতি হতে পারে। পল ক্রুগম্যানের মতো অর্থনীতিবিদও মন্তব্য করেন যে মালয়েশিয়ার বিকল্প প্রতিক্রিয়া অর্থনীতিকে গভীর ক্ষতি থেকে রক্ষা করেছে এবং তা পরে সঠিক প্রমাণিত হয়েছে। তুলনায় ইন্দোনেশিয়ার আইএমএফ কর্মসূচি এতটাই কঠোর ছিল যে ১৯৯৮ সালে অর্থনীতি ১৩ শতাংশের বেশি সংকুচিত হয় এবং সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়ে প্রেসিডেন্ট সুহার্তোকে ক্ষমতাচ্যুত করে। মালয়েশিয়া আইএমএফের শর্ত এড়িয়ে রাজনৈতিক ও সামাজিক বিপর্যয় থেকেও রক্ষা পায়।
রাজনৈতিকভাবে সংকট শুরুর ১৪ মাস পর পুঁজি নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা নেতৃত্বের এক দৃঢ় প্রকাশ ছিল। এটি মন্ত্রিসভার প্রচলিত মতের বিরুদ্ধে গিয়ে প্রয়োগ করা হয়েছিল। এর সঙ্গে যুক্ত ছিল আনোয়ার ইব্রাহিমকে বরখাস্ত ও গ্রেপ্তার করা, যিনি এসব নীতির বিরোধিতা করেছিলেন। বিতর্ক সত্ত্বেও ফলাফল স্পষ্ট ছিল। মালয়েশিয়া অধিকাংশ প্রতিবেশীর তুলনায় দ্রুত সংকট থেকে বেরিয়ে আসে। কোনো আইএমএফ ঋণ বা শর্ত ছাড়াই এবং মৌলিক শিল্প অক্ষত রেখেই। এই ঘটনাই স্পষ্টভাবে তুলে ধরে মাহাথির ফর্মুলা। বৈশ্বিক প্রচলিত নীতিকে অগ্রাহ্য করার সাহস এবং জাতীয় অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার স্বার্থে সার্বভৌমত্ব ও সামাজিক সংহতিকে অগ্রাধিকার দেওয়া।
বেসরকারীকরণ ও রাষ্ট্র-সংযুক্ত প্রতিষ্ঠান: রাষ্ট্র ও বাজারের মধ্যে ভারসাম্য
মাহাথিরের অর্থনৈতিক কৌশলের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল রাষ্ট্রীয় দিকনির্দেশনা ও বেসরকারি খাতের দক্ষতার বাস্তবসম্মত সমন্বয়। এর প্রতিফলন ঘটে তাঁর বেসরকারীকরণ কর্মসূচি এবং রাষ্ট্র-সংযুক্ত কোম্পানি বা GLC (Government-Linked Companies) গঠনের মাধ্যমে। আশি ও নব্বইয়ের দশকে মালয়েশিয়ায় টেলিযোগাযোগ, বিদ্যুৎ, মহাসড়ক থেকে শুরু করে এয়ারলাইন্স পর্যন্ত ১০০টিরও বেশি প্রতিষ্ঠান বেসরকারীকরণ করা হয়।
সরকারের দাবি ছিল যে “বেসরকারি খাত-নির্ভর প্রবৃদ্ধি” সেবার মান উন্নত করবে এবং সরকারি আর্থিক বোঝা হ্রাস করবে। তবে অনেক ক্ষেত্রে বেসরকারীকরণ মানে এই নয় যে রাষ্ট্র পুরোপুরি ব্যবসা থেকে সরে গেছে। বরং প্রায়ই দেখা গেছে রাষ্ট্রীয় সম্পদকে করপোরেট রূপ দেওয়া হয়েছে, আংশিক শেয়ার বাজারে ছাড়া হয়েছে, কিন্তু সরকার বা বুমিপুত্রা ট্রাস্ট সংস্থা গুরুত্বপূর্ণ অংশ ধরে রেখেছে। এর ফলে রাষ্ট্র-সংযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর উত্থান ঘটে, যেখানে সরকার হয় শেয়ারহোল্ডার হিসেবে বা রাজনৈতিকভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত নেতৃত্বের মাধ্যমে প্রভাব বিস্তার করত।
Petronas (তেল), Tenaga Nasional (বিদ্যুৎ), Telekom Malaysia এবং POS Malaysia-এর মতো কোম্পানিগুলো করপোরেট কাঠামোতে রূপান্তরিত হয়ে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। তবে এসব খাতে সরকার প্রধান অংশীদার বা নিয়ন্ত্রক হিসেবে রয়ে যায়। ১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় সার্বভৌম সম্পদ তহবিল Khazanah Nasional, যা এসব বিনিয়োগ সরকারের পক্ষে পরিচালনা করে।
বেসরকারীকরণের মূল উদ্দেশ্য ছিল অদক্ষ ও লোকসানী সরকারি সংস্থাগুলোকে বাজারের শৃঙ্খলার আওতায় আনা। এর ফলে উৎপাদনশীলতা ও মুনাফা বাড়বে বলে আশা করা হয়েছিল। পাশাপাশি বিক্রির অর্থ দিয়ে সরকারের ঋণ কমানো সম্ভব হবে, যা আশির দশকে জিডিপির শতভাগেরও বেশি ছাড়িয়ে গিয়েছিল। মাহাথিরের সংস্কারের পর বাজেট ঘাটতি হ্রাস পায় এবং নব্বইয়ের দশকের শুরুতে সরকার উদ্বৃত্ত বাজেট চালাতে সক্ষম হয়। বেসরকারি খাতের জিডিপিতে অংশও উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়।
রাজনৈতিকভাবে বেসরকারীকরণ ছিল একটি কৌশল। এর মাধ্যমে New Economic Policy-এর লক্ষ্য অর্থাৎ বুমিপুত্রা ব্যবসায়ী শ্রেণি গড়ে তোলা সম্ভব হয়। অনেক বেসরকারীকৃত চুক্তি বা লাইসেন্স শাসক দলের ঘনিষ্ঠ মালয় ব্যবসায়ীদের দেওয়া হয়। এতে রাজনীতি ও ব্যবসা গভীরভাবে জড়িয়ে পড়ে। মহাসড়ক নির্মাণ ছিল এর একটি উদাহরণ। বেসরকারি ঠিকাদাররা দীর্ঘমেয়াদি ও লাভজনক টোল চুক্তি পেত, প্রয়োজনে সরকারি সাহায্যও পেত। এর ফলে এক শ্রেণির “কর্পোরেট মালয়” ব্যবসায়ী গোষ্ঠী গড়ে ওঠে, যারা সরকারি সুবিধার মাধ্যমে উপকৃত হতো। সমালোচকরা একে ক্রোনি ক্যাপিটালিজম বলে অভিহিত করেন। অর্থনীতিবিদ জোমো কে এস মন্তব্য করেছিলেন যে মাহাথির আমলে অনেক সময় “privatization” আসলে “piratization” ছিল। জনগণের সম্পদ সস্তায় রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠানের হাতে তুলে দেওয়া হতো এবং সংকটকালে রাষ্ট্র উচ্চমূল্যে আবার তা কিনে নিত।
তবুও মাহাথিরের বেসরকারীকরণ ও রাষ্ট্র-সংযুক্ত প্রতিষ্ঠান কৌশলের সামগ্রিক প্রভাব মূলত ইতিবাচক ছিল। এর ফলে মালয়েশিয়ায় আধুনিক টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক, দক্ষ বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং সম্প্রসারিত পরিবহন অবকাঠামো গড়ে ওঠে। Petronas-এর মতো কিছু প্রতিষ্ঠান বিশ্বমানের কোম্পানিতে পরিণত হয় এবং সরকারকে বিপুল রাজস্ব প্রদান করে।
Malaysia Incorporated নীতি, যা সরকার ও ব্যবসার ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা তৈরি করেছিল, জাপানের keiretsu মডেলের অনুকরণে গড়ে তোলা হয়। এর ফলে বৃহৎ প্রকল্পে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ সম্ভব হয়। যদিও এতে স্বচ্ছতার ঘাটতি এবং দুর্নীতি দেখা দেয়, তবুও সরকারকে জাতীয় লক্ষ্য অর্জনে বেসরকারি খাতকে কাজে লাগানোর সুযোগ দেয়।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় মালয়েশিয়া একটি তুলনামূলক ভালো ভারসাম্য অর্জন করে। ইন্দোনেশিয়া বা ভিয়েতনামের মতো রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত অর্থনীতির চেয়ে এটি বেশি বাজারভিত্তিক, আর ফিলিপাইনের মতো ল্যাসে-ফেয়ার মডেলের চেয়ে বেশি রাষ্ট্র-সমন্বিত। এই মধ্যপন্থা মালয়েশিয়াকে অবকাঠামোতে কম বিনিয়োগের সমস্যা থেকে রক্ষা করে এবং একই সঙ্গে পুরোপুরি রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনার অদক্ষতাও এড়াতে সাহায্য করে। এটিই মাহাথির যুগে টেকসই প্রবৃদ্ধির অন্যতম মূল রহস্য।
দ্বিতীয় মেয়াদ (২০১৮–২০২০): সংস্কার, কৃচ্ছ্রসাধন ও যৌথ সমৃদ্ধি
৯২ বছর বয়সে ২০১৮ সালের নির্বাচনে অপ্রত্যাশিতভাবে ক্ষমতায় ফিরে আসেন মাহাথির। এতে তিনি মালয়েশিয়ার অর্থনৈতিক দিকনির্দেশনায় আবারও প্রভাব বিস্তার করার সুযোগ পান। তবে প্রেক্ষাপট ছিল একেবারেই ভিন্ন। এ সময় তিনি একটি মধ্যম আয়ের এবং বহুমুখীকৃত অর্থনীতি উত্তরাধিকারসূত্রে পান, যা নানা সমস্যায় জর্জরিত ছিল। সরকারি ঋণ ছিল এক ট্রিলিয়ন রিঙ্গিতেরও বেশি (দায়সহ)। পাশাপাশি ছিল 1MDB দুর্নীতির কেলেঙ্কারির প্রভাব এবং প্রবৃদ্ধি শ্লথ হওয়া ও বৈষম্যের উদ্বেগ।
একটি সংস্কারবাদী জোট Pakatan Harapan নেতৃত্ব দিয়ে মাহাথির দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা দলকে পরাজিত করে। ক্ষমতায় এসে তিনি প্রথমেই দুর্নীতি দমন ও সুশাসনের দিকে মনোযোগ দেন। 1MDB কেলেঙ্কারির তদন্ত শুরু করেন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। এর মাধ্যমে তিনি বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করেন। একই সঙ্গে অর্থনৈতিক সংস্কারের জন্য অভিজ্ঞ অর্থনীতিবিদ ও প্রাক্তন অর্থমন্ত্রীদের নিয়ে Council of Eminent Persons গঠন করেন।
দ্বিতীয় দফায় মাহাথির ব্যয়সংকোচন ও অগ্রাধিকারের ওপর জোর দেন। এটি ছিল নব্বইয়ের দশকের তাঁর বিলাসী উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর প্রায় বিপরীত। তিনি যুক্তি দেন অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানো জরুরি। তাই পূর্ববর্তী সরকারের শুরু করা একাধিক মেগা প্রকল্প বাতিল বা পুনর্বিবেচনা করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, ৩৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ কুয়ালালামপুর–সিঙ্গাপুর হাই-স্পিড রেল প্রকল্প বাতিল করা হয়। মাহাথির যুক্তি দেন এটি “লাভজনক নয়, আমাদের বিপুল অর্থ ব্যয় হবে, কিন্তু এর থেকে আয় হবে না।” আরেকটি বড় প্রকল্প, চীন-সমর্থিত ইস্ট কোস্ট রেল লিংক, স্থগিত করে পরে কম খরচে পুনঃআলোচনা করা হয়।
দেশীয়ভাবে সরকার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণ করে বহুল সমালোচিত GST (Goods and Services Tax) বাতিল করে। এর পরিবর্তে চালু করা হয় সহজতর সেলস ট্যাক্স। যদিও এতে সরকারি আয় স্বল্পমেয়াদে হ্রাস পায়, তবুও এটি জনগণের কাছে জনপ্রিয় হয় এবং ভোগ ব্যয় বাড়াতে সহায়ক হয়।
যৌথ সমৃদ্ধি ভিশন ২০৩০
মাহাথিরের সংক্ষিপ্ত দ্বিতীয় মেয়াদের অন্যতম প্রধান উদ্যোগ ছিল ২০১৯ সালের শেষ দিকে Shared Prosperity Vision 2030 (SPV 2030) চালু করা। স্বীকার করা হয়েছিল যে Vision 2020-এর উন্নত দেশ হওয়ার লক্ষ্য পূর্ণাঙ্গভাবে অর্জিত হয়নি, বিশেষ করে সমবণ্টনের ক্ষেত্রে। তাই নতুন এই রোডম্যাপ তৈরি করা হয়। এর লক্ষ্য ছিল ২০৩০ সালের মধ্যে সকল মালয়েশিয়ানকে একটি মর্যাদাপূর্ণ জীবনমান প্রদান এবং দেশটিকে আবারও “নতুন এশিয়ান টাইগার” হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা। এতে অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি, আয় ও সম্পদের বৈষম্য হ্রাস এবং নতুন প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্র চিহ্নিত করার ওপর জোর দেওয়া হয়। উদ্বোধনী ভাষণে মাহাথির বলেন দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারকে “ক্যানসারের মতো অঙ্গচ্ছেদের মাধ্যমে” দূর করতে হবে।
SPV 2030 মূলত অর্থনৈতিক লক্ষ্য ও সুশাসন সংস্কারকে একত্রিত করে। এতে অতীতের অতিরিক্ততা ও বৈষম্য থেকে শিক্ষা নেওয়া হয়। এটি ছিল মাহাথিরের বিদায়ী ভিশন যাতে তিনি নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন যে আশি ও নব্বইয়ের দশকে যে সমৃদ্ধি সৃষ্টি করেছিলেন তা টেকসই হবে এবং আরও সমভাবে বণ্টিত হবে।
২০২০ সালের মার্চে রাজনৈতিক পুনর্গঠন এবং একই সঙ্গে কোভিড-১৯ মহামারির সূচনার কারণে তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদ সংক্ষিপ্ত হয়। মাত্র ২১ মাসে উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক ফলাফল অর্জিত না হলেও এটি প্রমাণ করে স্বল্প সময়ে পরিবর্তন আনা কতটা কঠিন। তবে প্রতীকীভাবে তাঁর প্রত্যাবর্তন উন্নয়ন দর্শনের স্থায়ী প্রভাবকে তুলে ধরে। তিনি মালয়েশিয়াকে আর্থিক শৃঙ্খলা ও নৈতিক নেতৃত্বের দিকে পুনরায় মনোযোগী করেন। তাঁর মতে, উত্তরসূরীরা যে শৃঙ্খলাবদ্ধ উন্নয়নের পথ থেকে সরে গিয়েছিল তা সংশোধন করার চেষ্টা করেন তিনি।
মাহাথির মোহাম্মদের মোট ২৪ বছরের নেতৃত্বে মালয়েশিয়া এক অসাধারণ রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যায়। একটি স্বল্প আয়ের পণ্য রপ্তানিকারক দেশ থেকে এটি পরিণত হয় এক বহুমুখী, উচ্চ-মধ্যম আয়ের অর্থনীতিতে। ১৯৮০ সালে মাথাপিছু জিডিপি যেখানে প্রায় ১,৮০০ ডলার ছিল, তা ২০০০ সালের শুরুর দিকে ৯,০০০ ডলারেরও বেশি হয়ে যায়। দারিদ্র্যের হার নাটকীয়ভাবে হ্রাস পায়। শতাব্দীর শুরুতে মালয়েশিয়া শুধু রাবার ও পাম তেল নয়, মাইক্রোচিপ ও গাড়িও উৎপাদন করছিল। জনগণ উন্নত দেশের মানসম্মত অবকাঠামো ও সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে শুরু করে। মাহাথিরের শাসনামল মালয়েশিয়ার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ভূদৃশ্যকে মৌলিকভাবে পরিবর্তন করে। এজন্য তিনি উন্নয়নশীল বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী নেতা হিসেবে খ্যাতি পান। দেশীয়ভাবে তিনি “Father of Modernisation” নামে পরিচিত হন। গুরুত্বপূর্ণ হলো, মাহাথির সামাজিক স্থিতিশীলতা ও নীতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন। যদিও কখনো কখনো কর্তৃত্ববাদী পদ্ধতি অনুসরণ করেছেন, তবে এই স্থিতিশীলতাই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করেছিল।মাহাথির মোহাম্মদের অধীনে মালয়েশিয়ার অর্থনৈতিক রূপান্তরের রহস্য ছিল দূরদর্শী পরিকল্পনা, রাষ্ট্র-নেতৃত্বাধীন উদ্যোগ ও অভিযোজিত বাস্তববাদের সমন্বয়ে। তিনি একদিকে বৃহৎ ধারণা যেমন জাতীয় ভিশন, অবকাঠামো বিনিয়োগ ও সামাজিক প্রকৌশলকে কাজে লাগিয়েছেন, অন্যদিকে নীতিতে নমনীয়তা দেখিয়ে কখনো রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ, কখনো বাজারমুখী সংস্কার গ্রহণ করেছেন। প্রয়োজনে প্রচলিত বৈশ্বিক নীতি ভেঙে গিয়েছেন, আবার প্রয়োজনে বিদেশি বিনিয়োগ ও প্রযুক্তি আমন্ত্রণ করেছেন।
এই দ্বৈত কৌশল—একই সঙ্গে জাতীয়তাবাদী ও বৈশ্বিক, প্রচলিত ও অপ্রচলিত—মালয়েশিয়ার অনন্য প্রেক্ষাপটে কার্যকর প্রমাণিত হয়েছিল। এর মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ মানুষ মধ্যবিত্ত শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েছে এবং দেশটি একদিকে উৎপাদনশীল শিল্পশক্তি, অন্যদিকে ইসলামী অর্থনীতির বৈশ্বিক কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
আজ মাহাথির যখন ২০২৫ সালে শতবর্ষে পা রাখছেন, সমালোচকরাও স্বীকার করেন যে তিনি মালয়েশিয়াকে রূপান্তরিত, আধুনিকায়িত, শিল্পায়িত এবং শক্তিশালী অর্থনীতিতে পরিণত করেছেন। তাঁর উত্তরাধিকার জটিল হলেও এটি নিঃসন্দেহে এক মূল্যবান পাঠ, যেখানে অর্থনৈতিক কৌশল ও রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তির সমন্বয়ে জাতি গঠনের দিশা খুঁজে পাওয়া যায়।
বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য অনলাইনে আয়ের ৬টি সহজ উপায়
বর্তমান সময়ে পড়াশোনার চাপ সামলেও অনলাইনে আয় করা অনেক শিক্ষার্থী ও তরুণদের জন্য সম্ভব হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সঠিক পরিকল্পনা এবং সময় ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দিনে ৫০ ডলার আয় করা এখন আর স্বপ্ন নয়। তবে এর জন্য প্রয়োজন ধৈর্য, একটি নির্দিষ্ট দক্ষতা এবং ধারাবাহিক চেষ্টা।
আয়ের সহজ কিছু উপায়:
১. ফ্রিল্যান্সিং: দক্ষতা দিয়ে আয়
আপনি যদি কোনো নির্দিষ্ট কাজে পারদর্শী হন, তাহলে ফ্রিল্যান্সিং আপনার জন্য হতে পারে আয়ের সেরা মাধ্যম।
প্ল্যাটফর্ম: Upwork, Fiverr, Freelancer.com-এর মতো প্ল্যাটফর্মে নিজের পোর্টফোলিও তৈরি করে কাজ শুরু করতে পারেন।
কাজের ধরন: ডেটা এন্ট্রি, গ্রাফিক ডিজাইন, সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট, ট্রান্সক্রিপশন বা টাইপিং।
আয়: শুরুতে প্রতি প্রজেক্টে ৫-১০ ডলার আয় হলেও, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা বাড়লে তা সহজেই দিনে ৫০ ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।
২. কন্টেন্ট রাইটিং ও ব্লগিং: কথায় টাকা
ওয়েবসাইট, ব্লগ বা নিউজ পোর্টালের জন্য আর্টিকেল লিখেও আয় করা সম্ভব।
পেমেন্ট: প্রতি ৫০০-১০০০ শব্দে ৫-২০ ডলার পর্যন্ত পাওয়া যায়।
গুরুত্বপূর্ণ: পাঠকের চাহিদা অনুযায়ী সহজ ভাষায় লেখা এবং SEO (Search Engine Optimization)-এর নিয়ম মেনে চললে আপনার লেখার চাহিদা বাড়বে।
৩. অনলাইন টিউটরিং: শেখার পাশাপাশি শেখানো
আপনার যদি কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে ভালো জ্ঞান থাকে, তাহলে অনলাইনে সেই বিষয়ে অন্যদের পড়িয়েও আয় করতে পারেন।
প্ল্যাটফর্ম: Preply, Cambly, Italki-এর মতো সাইটগুলোতে শিক্ষক হিসেবে যোগ দিতে পারেন।
আয়: প্রতি ঘণ্টায় ৫-২০ ডলার পর্যন্ত আয় করা সম্ভব।
৪. ডিজিটাল প্রোডাক্ট বিক্রি: একবার তৈরি, বারবার আয়
আপনি যদি কোনো ডিজাইন বা শিক্ষামূলক বিষয় ভালো বোঝেন, তাহলে নোটস, প্রেজেন্টেশন বা প্রিন্টেবল ডিজাইন তৈরি করে অনলাইনে বিক্রি করতে পারেন।
প্ল্যাটফর্ম: Etsy এবং Gumroad-এর মতো প্ল্যাটফর্ম এক্ষেত্রে বেশ জনপ্রিয়।
সুবিধা: একবার প্রোডাক্ট তৈরি করলে তা দীর্ঘ সময় ধরে বিক্রি করা যায়।
৫. অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং: কমিশনভিত্তিক আয়
কোনো কোম্পানির পণ্য রিভিউ করে বা প্রচার করে বিক্রিতে সাহায্য করার মাধ্যমে আপনি কমিশন পেতে পারেন।
প্ল্যাটফর্ম: Amazon Associates, ClickBank, Daraz Affiliate-এর মতো প্রোগ্রামগুলো এই সুযোগ দেয়।
আয়: প্রতি বিক্রিতে ৫-২০% পর্যন্ত কমিশন পাওয়া সম্ভব।
বিশেষজ্ঞদের কিছু জরুরি পরামর্শ
ধৈর্য ও ধারাবাহিকতা: অনলাইনে আয় একদিনের কাজ নয়। নিয়মিত সময় দিলে এবং একটি কাজে লেগে থাকলে সফলতা আসবেই।
একটি নির্দিষ্ট দক্ষতা: শুরুতে একাধিক কাজ না করে একটিমাত্র কাজে দক্ষতা অর্জন করুন। এতে আপনার কাজের মান বাড়বে এবং চাহিদা তৈরি হবে।
ডলার উত্তোলনের মাধ্যম: Payoneer, Wise-এর মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে সহজে ও নিরাপদে আপনার উপার্জিত অর্থ দেশে আনতে পারেন।
পড়াশোনার পাশাপাশি অনলাইন ইনকাম শুধু আর্থিক স্বাধীনতা দেয় না, বরং নতুন নতুন দক্ষতা অর্জন এবং পেশাদার জীবনে এগিয়ে যাওয়ার পথও তৈরি করে।
/আশিক
এআইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ার ফলে কি কমছে মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক?
আজকের দ্রুতগতির জীবনে মানুষের জীবনযাত্রায় নতুন সংযোজন হলো এআই, যা মনোযোগ দিয়ে কথা শোনে এবং সমস্যা সমাধানেও সাহায্য করে। একসময় যখন ব্যক্তিগত কথা বলতে বন্ধু ও পরিবারের কেউ পাশে থাকতো, এখন সেসব সময় বদলে গেছে। সবাই নিজের কাজে ব্যস্ত, আর তখন হাতের মুঠোয় থাকা এআই-ই হয়ে উঠেছে অভিন্ন সঙ্গী। এটি শুধু জটিল গণিত সমস্যা বা অফিসের কাজই সমাধান করে না, ব্যক্তিগত গল্প শুনে সহানুভূতিও দেখায়।
তবে এআইয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ার সঙ্গে মনে প্রশ্ন জাগে, আমরা কি নিজের আবেগ-অনুভূতি হারাচ্ছি? এআই যন্ত্র হলেও বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে সঠিক উত্তর দিতে সক্ষম, যেটা তার প্রধান কাজ। ২৪ ঘণ্টা, সপ্তাহের সাত দিন যে কেউ যেকোনো সময় এটি ব্যবহার করতে পারেন, যেখানে মানুষের সঙ্গে সব সময় কথা বলা সম্ভব নয়। তাছাড়া এআইয়ের কাছে কথা বললে ভুল বোঝাবুঝি ও সামাজিক ঝুঁকি থাকে না।
তবে এআইয়ের কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। এটি সব সময় প্রকৃত সহানুভূতি দিতে পারে না, কারণ যন্ত্র মানুষের জীবন ও অভিজ্ঞতার আলোকে বিচার-বিবেচনা করতে অক্ষম। এআই শুধু আপনার কথামতো পরামর্শ দেয়, কিন্তু ভুল ধরিয়ে দিয়ে মানসিক শক্তি গড়ে তোলার কাজ করে না। এতে অনেকের আত্মনির্ভরশীলতা কমে যায়, যারা ছোটখাটো সমস্যার জন্যও এআইর ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন।
তাই এআই ব্যবহার করবেন, কিন্তু ব্যক্তিগত সমস্যার জন্য অবশ্যই মানুষের কাছে যাবেন। কারণ মানুষের আবেগ-অনুভূতি ও অভিজ্ঞতা থেকে পাওয়া সহানুভূতি ও পরামর্শ যন্ত্র কখনো দিতে পারে না।
সূত্র: এমএসএন
কেন বিড়াল-কুকুর ঘাস খায়, বিজ্ঞান কী বলে?
অনেকেই হয়তো লক্ষ্য করেছেন, পোষা কুকুর বা বিড়াল মাঝেমধ্যে ঘাস খায়। বিষয়টি অনেকের কাছে অস্বাভাবিক মনে হতে পারে—বিশেষ করে বিড়ালের ক্ষেত্রে, যাদের খাদ্যতালিকায় সাধারণত মাছ বা মাংসই থাকে। তাহলে আসলে কেন তারা ঘাস খায়?
নিউ ইয়র্কের সিরাকিউসের স্ট্যাক ভেটেরিনারি হাসপাতাল-এর পশুচিকিৎসক ড. জেমি লাভজয়ের মতে, এই আচরণের পেছনে একাধিক কারণ থাকতে পারে। যদিও কুকুর ও বিড়ালের হজমতন্ত্র ঘাসের মতো আঁশযুক্ত উদ্ভিদ ভাঙতে তেমন উপযোগী নয়, তবুও তারা নিয়মিত এমন কাজ করে। ঘাস খাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যাকটেরিয়া ও দীর্ঘ পরিপাকতন্ত্র সাধারণত তৃণভোজী প্রাণীদের মধ্যে দেখা যায়, যা বিড়াল-কুকুরের নেই।
অসুস্থতার জন্য নয়, বরং স্বভাবজাত অভ্যাসএকটি প্রচলিত ধারণা হলো—পোষা প্রাণী পেট খারাপ বা বমির উদ্দেশ্যে ঘাস খায়। তবে গবেষণা বলছে, এ ধারণা সবসময় সঠিক নয়।২০০৮ সালের এক জরিপে দেখা যায়, ১,৫৭১ জন কুকুর মালিকের মধ্যে ৬৮% জানিয়েছেন, তাদের কুকুর নিয়মিত বা সপ্তাহে অন্তত একবার ঘাস খায়। কিন্তু মাত্র ৮% বলেছেন, ঘাস খাওয়ার আগে তাদের কুকুর অসুস্থতার লক্ষণ দেখিয়েছিল।
২০২১ সালে অ্যানিম্যালস জার্নালে প্রকাশিত দুটি আলাদা জরিপে বিড়াল মালিকদের অভিজ্ঞতাও প্রায় একই রকম। প্রথম জরিপে মাত্র ৬% ও দ্বিতীয়টিতে ৯% মালিক বলেছেন, ঘাস খাওয়ার আগে তাদের বিড়াল অসুস্থ লাগছিল। তবে ঘাস খাওয়ার পর যথাক্রমে ২৭% ও ৩৭% বিড়াল ঘন ঘন বমি করেছে। একই গবেষণায় দেখা গেছে, ৭১% মালিক তাদের বিড়ালকে অন্তত ছয়বার লতাপাতা খেতে দেখেছেন।
চুলের জন্য ঘাস খাওয়া? প্রমাণ নেইঅনেকে মনে করেন, বিড়াল চুল গিললে তা বের করার জন্য ঘাস খায়। তবে গবেষণায় লম্বা চুলওয়ালা ও ছোট চুলওয়ালা বিড়ালের ঘাস খাওয়ার হারে তেমন কোনো পার্থক্য পাওয়া যায়নি।
স্বভাবের শিকড়ে বন্য পূর্বপুরুষ গবেষকরা জানিয়েছেন, বন্য কুকুর ও বিড়ালেরও ঘাস খাওয়ার প্রবণতা আছে। ধারণা করা হয়, এটি পরজীবী দূর করার একটি স্বভাবজাত পদ্ধতি।
২০০৮ সালের গবেষক দলের মতে, ঘাসে তেমন পুষ্টিগুণ নেই। যদিও টেক্সাস এন্ড এম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি মেডিসিন কলেজ-এর ড. লরি টেলার মনে করেন, কিছু প্রাণী হয়তো ভিটামিন বি-এর মতো মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের জন্য লতাপাতা খেতে পারে। তবে সুষম খাদ্য পাওয়া সুস্থ প্রাণীর ক্ষেত্রে এই কারণ সাধারণত প্রযোজ্য নয়।
সতর্কতার পরামর্শড. টেলার বলেন, “যদি পোষা প্রাণী সুস্থ থাকে, সুষম খাদ্য খায় এবং মাঝে মাঝে ঘাস খায়, তাহলে চিন্তার কারণ নেই। তবে যদি অতিরিক্ত খায় বা ঘন ঘন বমি করে, তখন পশুচিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।”
ড. লাভজয় জানান, বিড়াল-কুকুরের ঘাস খাওয়া নিয়ে গবেষণা তুলনামূলকভাবে কম হয়েছে, কারণ এটি খুব কম ক্ষেত্রেই গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে। তার মতে, বেশিরভাগ সময় প্রাণীরা কেবল স্বাদ, উদ্দীপনা বা পরিবেশ অন্বেষণের জন্য ঘাস খায়।
তবে মালিকদের সতর্ক করে তিনি বলেন, সব উদ্ভিদ প্রাণীর জন্য নিরাপদ নয়। তাই ঘরে বা আঙিনায় থাকা গাছপালার মধ্যে কোনোটি বিষাক্ত কি না, তা আগে যাচাই করা উচিত।
তথ্যসূত্র: লাইভ সায়েন্স
জামালপুরে প্রথম বিড়াল প্রদর্শনী, রাজকীয় সাজে মুগ্ধতা
জামালপুরে প্রথমবারের মতো আয়োজিত হলো ব্যতিক্রমধর্মী বিড়াল প্রদর্শনী
জামালপুরে প্রথমবারের মতো আয়োজন করা হলো ব্যতিক্রমী এক বিড়াল প্রদর্শনীর, যেখানে রাজকীয় ভঙ্গিমায় সজ্জিত ছিল অর্ধশতাধিক দেশি ও বিদেশি জাতের বিড়াল। সাদা, ধূসর, কালো কিংবা বিভিন্ন রঙের লোমে ঢাকা ছোট প্রাণীগুলোর চোখেমুখে ছিল কৌতূহল, আচরণে রাজকীয়তা। প্রাণীপ্রেমীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ জাগায় এ আয়োজন।
শনিবার (২ আগস্ট) সকালে শহরের নিউ কলেজ রোড এলাকায় অনুষ্ঠিত হয় এ প্রদর্শনী। নানা জাতের বিড়ালের উপস্থিতি প্রদর্শনীটিকে পরিণত করে প্রাণীপ্রেমীদের মিলনমেলায়। কেউ এসেছেন নিজের আদরের বিড়াল নিয়ে, কেউবা এসেছেন শুধুই দর্শনার্থী হিসেবে। কারো চোখ নীল, কারো লোমে বিচিত্র দাগ, কেউ নিছকই দুষ্টুমি করে দর্শকদের আনন্দ দিচ্ছিল।
আয়োজনস্থলে ছিল রঙিন ব্যানার, ক্যাট ফুডের স্টল এবং বিড়ালের স্বাস্থ্য ও পরিচর্যা বিষয়ে সচেতনতামূলক পোস্টার। আয়োজকদের পক্ষ থেকে অংশগ্রহণকারী বিড়ালদের বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়, যা প্রদর্শনীর মানবিক দিকটিও তুলে ধরে।
আয়োজক ডা. নাজমুন নাহার জানান, অনেক সময় বিড়ালকে সমাজে নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা হয়। এই মনোভাব বদলাতে ও মানুষকে সচেতন করতেই এ প্রদর্শনীর আয়োজন। তিনি বলেন, “আমরা চাই বিড়াল যেন সঠিকভাবে লালন-পালন পায়। সে বিষয়ে দিকনির্দেশনাও দিচ্ছি এবং ভবিষ্যতেও এমন আয়োজন চালিয়ে যেতে চাই।”
আশেক মাহমুদ কলেজের শিক্ষার্থী শাকিলা জান্নাত বলেন, “আমরা হঠাৎ করেই এখানে এসে এমন আয়োজন দেখতে পেলাম। ভাবিনি জামালপুরে এমন কিছু হবে। খুব ভালো লেগেছে।”
প্রদর্শনীতে জান্নাতুল ফেরদৌস নামের একজন অংশগ্রহণকারী বলেন, “আমি আমার বিড়ালকে সঙ্গে এনেছিলাম এবং তাকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। আগে ভেবেছিলাম বিড়াল বাইরে অশান্ত হবে, কিন্তু এখানে এসে খুব শান্ত ছিল।”
এমন আয়োজন প্রাণীপ্রেমী মানুষের জন্য যেমন আনন্দের, তেমনি সমাজে ইতিবাচক বার্তা ছড়ায় প্রাণীদের প্রতি দায়িত্বশীল আচরণের গুরুত্ব সম্পর্কে।
/আশিক
মৃত ৮ মিনিট, জীবনের সন্ধান: এক নারীর অতিলৌকিক অভিজ্ঞতা
বিশ্বজুড়ে মানুষের মধ্যে বহুকাল ধরেই মৃত্যু-পরবর্তী জীবনের রহস্য ঘিরে রয়েছে এক গভীর আগ্রহ ও কৌতূহল। সভ্যতার প্রারম্ভ থেকে ধর্ম, দর্শন ও বিজ্ঞান এ নিয়ে নানা ব্যাখ্যা ও ব্যাখ্যার বিপরীতে বিতর্ক তুলে ধরেছে। তবে কখনো কখনো বাস্তব জীবনের কিছু বিরল অভিজ্ঞতা এই বিতর্কের কেন্দ্রে এসে দাঁড়ায়— যেমনটি ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রের এক নারী, ব্রিয়ানা লাফার্টির জীবনে। মৃত্যুর মতো এক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়ে ফিরে এসে তিনি নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন চেতনা, অস্তিত্ব এবং মানবজীবনের গভীর অর্থ।
ব্রিয়ানা লাফার্টি, বয়স ৩৩, দীর্ঘদিন ধরে ভুগছিলেন Myoclonus Dystonia নামক একটি জটিল ও প্রাণঘাতী স্নায়বিক রোগে। একপর্যায়ে তার দেহের সব শারীরবৃত্তীয় কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। চিকিৎসকেরা তখন তাকে ‘ক্লিনিক্যালি মৃত’ ঘোষণা করেন। সময়কাল— আট মিনিট। এই আট মিনিটের মধ্যেই ঘটে যায় এমন কিছু, যা তার ভাষায় ছিল ‘জীবনের চেয়েও গভীর এক উপলব্ধি’।
‘আমি তখন আর দেহে ছিলাম না, কিন্তু বেঁচে ছিলাম— আরও বেশি জীবন্ত, আরও বেশি গভীরভাবে সচেতন।’
এভাবেই শুরু করেন ব্রিয়ানা তার অভিজ্ঞতার বর্ণনা। তার ভাষায়, “আমি অনুভব করলাম আমার আত্মা যেন শরীর থেকে আলাদা হয়ে গেছে, অথচ আমি সম্পূর্ণ চেতন এবং গভীর প্রশান্তিতে আচ্ছন্ন। কোনো ব্যথা ছিল না, ভয় ছিল না, বরং ছিল এক বিস্ময়কর স্বচ্ছতা।”
এই অবস্থায় তিনি উপলব্ধি করেন যে মানবজীবন আসলে এক ক্ষণস্থায়ী মায়া, যার অন্তরালে রয়েছে এক উচ্চতর সত্ত্বার উপস্থিতি— যিনি নিঃশর্ত ভালোবাসায় আমাদের রক্ষা করেন। “আমার মনে হয়েছিল, আমি এমন এক বাস্তবতায় প্রবেশ করেছি, যেখানে সময় নেই, তবু সব কিছু নিজ নিজ স্থানে নিখুঁতভাবে সংগঠিত। সবকিছু একসাথে ঘটছিল, কিন্তু অদ্ভুত এক শৃঙ্খলার মধ্যে।”
ব্রিয়ানা জানান, তিনি এমন কিছু সত্ত্বার উপস্থিতি অনুভব করেছিলেন, যারা মানুষের মতো নয়, তবুও অচেনা নয়। তাদের আচরণ ছিল আশ্বাসদায়ক, এবং তার প্রতি তারা যেন গভীর আত্মীয়তার স্নেহে সাড়া দিয়েছিল।
“মৃত্যু আসলে শেষ নয়, বরং একটি রূপান্তর।”
এটি ব্রিয়ানার অভিজ্ঞতার সারকথা। তিনি বিশ্বাস করেন, মৃত্যুর পরে চেতনা বিলীন হয় না, বরং এক ভিন্ন মাত্রায় প্রবেশ করে— যেখানে চিন্তা ও ইচ্ছাই বাস্তবের রূপ দেয়।
এই অভিজ্ঞতা তার দৃষ্টিভঙ্গিকে সম্পূর্ণ পাল্টে দিয়েছে। “যে বিষয়গুলো একসময় খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে হতো, এখন আর তা তেমন কিছু নয়। এখন আমার জীবন অর্থবহ, কারণ আমি জানি— আমার এখানে আসার উদ্দেশ্য আছে।”
আবার নতুন করে জীবন শিখতে হয়েছে
এই অলৌকিক অভিজ্ঞতার পর ব্রিয়ানাকে আবার হাঁটা ও কথা বলা শিখতে হয়েছে নতুন করে। কারণ তার pituitary gland মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে তাকে এক জটিল ও পরীক্ষামূলক মস্তিষ্ক অস্ত্রোপচারের মধ্য দিয়ে যেতে হয়, যা এখন পর্যন্ত সফল বলে বিবেচিত হচ্ছে।
তবে ব্রিয়ানা আরেকবার এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে চান না। তার ভাষায়, “শারীরিকভাবে যে পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া আমাকে পেরোতে হয়েছে, তা এতটাই কষ্টকর ছিল যে দ্বিতীয়বার সেই অভিজ্ঞতা হলে হয়তো আমি ফিরতে পারতাম না।”
বিজ্ঞান বনাম অভিজ্ঞতা
ব্রিয়ানার অভিজ্ঞতা এমন এক জায়গায় দাঁড়িয়ে রয়েছে, যেখানে বিজ্ঞান, আধ্যাত্মিকতা ও চেতনাবিদ্যার সীমারেখা ঘোলাটে হয়ে যায়। ‘নিউরোসায়েন্স’ এখনো মৃত্যুর পরবর্তী চেতনা বা ‘near-death experience’-এর সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা দিতে পারেনি। তবে এই ধরনের ঘটনা আমাদের চেতনার সংজ্ঞা ও মানব অস্তিত্বের গভীরতা নিয়ে ভাবতে বাধ্য করে।
ব্রিয়ানা লাফার্টির ঘটনা হয়তো আরও একবার আমাদের মনে করিয়ে দেয়— জীবন শুধু একটি শারীরিক অস্তিত্ব নয়, বরং একটি জটিল চেতনার প্রক্ষেপ, যার উৎস ও গন্তব্য এখনো মানববুদ্ধির ধরাছোঁয়ার বাইরে। হয়তো এই জীবনই যথেষ্ট নয় তা অনুধাবনের জন্য— প্রয়োজন এমন এক অভিজ্ঞতা, যা সীমা ছাড়িয়ে দেয় অস্তিত্বের দিগন্ত।
হুয়াংহে নদীর তীরে এক মহাজাতির উত্থান: চীনা সভ্যতার আদিগন্ত ইতিহাস
দক্ষিণ এশিয়ার পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত এক বিস্ময়কর ভূখণ্ড—চীন। পাহাড়, মরুভূমি, নদীনালা আর বিস্তৃত সমভূমির মাঝে হাজার হাজার বছরের এক বর্ণাঢ্য ইতিহাস ধারণ করে আছে এই দেশটি। প্রাচীন চীন কোনো একক রাজ্যের নয়, বরং এক মহাজাতির আত্মপরিচয়, দর্শন ও ঐতিহ্যের প্রতিচ্ছবি। আজকের চীন শুধু একটি আধুনিক রাষ্ট্র নয়—এর জন্ম, বিকাশ ও বিস্তার এক মহাকাব্যিক যাত্রা।
হুয়াংহে নদী: সভ্যতার জননী
প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে, পৃথিবীর মানচিত্র তখনো গঠিত হয়নি, নগরায়নও শুরু হয়নি। কিন্তু আজকের চীনের উত্তরাংশে এক নদী—হুয়াংহে, বা ‘হলুদ নদী’—বয়ে চলেছিল। কখনও শান্ত, কখনও করাল; এই নদী ছিল একদিকে মৃত্যুর কারণ, অপরদিকে প্রাণের উৎস। এই নদীকে ঘিরেই গড়ে ওঠে হুয়াশিয়া নামক সভ্যতা, যেটি চীনের ভাষা, সংস্কৃতি ও রাজনীতির বীজ রোপণ করে।
গবেষণা বলছে, হুয়াংহে নদীর তীরে গড়ে ওঠা ন্যাঙ্গাও ও লুয়াংঝু সংস্কৃতির মানুষ কৃষি করত, পশুপালন করত, আর মৃত্তিকা দিয়ে গৃহস্থালির পাত্র বানাতো। তারা ধর্মীয় রীতিতে বিশ্বাস করত এবং সমাজবদ্ধ জীবনযাপন করত। এদের ধাতব অস্ত্র ছিল না, রাজাও ছিল না, কিন্তু ছিল চিন্তা, দর্শন এবং শিল্প।
শিয়া রাজবংশ: কিংবদন্তির ইতিহাস
হুয়াংহে নদীভিত্তিক সভ্যতার ধারাবাহিকতায় চীনের প্রথম কিংবদন্তীতুল্য রাজবংশ ছিল ‘শিয়া’। যদিও এই রাজবংশের কোনো লিখিত প্রমাণ পাওয়া যায়নি, তথাপি ‘গ্রেট ইউ’-এর বাঁধ নির্মাণ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণের কাহিনী প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে পড়ে। তাকে চীনের প্রথম রাজা হিসেবে স্মরণ করা হয়।
এই পর্যায়ে আকাশপূজা, ধর্মীয় বিশ্বাস এবং ড্রাগনের ধারণা সমাজে গুরুত্ব পেতে শুরু করে। ড্রাগন এখানে ছিল শক্তি, বৃষ্টি ও রাজত্বের প্রতীক। স্বর্গের অনুমোদন ব্যতীত কেউ রাজা হতে পারবে না—এই বিশ্বাস থেকেই জন্ম নেয় "Mandate of Heaven" ধারণা, যা পরবর্তী চীনা রাজতন্ত্রের মৌলিক নৈতিক ভিত্তি হয়ে দাঁড়ায়।
সাং রাজবংশ: লিখিত ইতিহাসের শুরু
খ্রিস্টপূর্ব ১৬০০ থেকে ১০৪৬ অব্দ পর্যন্ত স্থায়ী সাং বা শ্যাং রাজবংশ ছিল চীনের প্রথম প্রমাণিত শাসনব্যবস্থা। এই রাজবংশের হাতে গড়ে ওঠে সংগঠিত প্রশাসন, শক্তিশালী সেনাবাহিনী ও কর ব্যবস্থা। রাজারা নিজেদের ঈশ্বরের প্রতিনিধি মনে করত এবং পূর্বপুরুষদের আত্মাকে সম্মান জানাতো।
সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার ছিল অরেকেল বোনস—গরুর হাড় বা কচ্ছপের খোলে খোদাই করা প্রতীক, যা আগুনে গরম করে ফাটলের মাধ্যমে ভবিষ্যদ্বাণী করা হতো। এই প্রতীকগুলোই চীনা ভাষার প্রাচীনতম রূপ জিয়াগুয়ানের সূচনা করেছে। পাশাপাশি সাং রাজবংশ ব্রোঞ্জ প্রযুক্তি এবং যুদ্ধ সংস্কৃতিতে চীনের ভিত মজবুত করে।
ঝৌ রাজবংশ: চীনা দর্শনের অগ্রযাত্রা
খ্রিস্টপূর্ব ১০৪৬ সালে ঝৌদের রাজা উ একটি বিশাল যুদ্ধে সাং রাজবংশকে পরাজিত করেন। এই যুদ্ধ ছিল কেবল সামরিক বিজয় নয়, বরং এক নতুন রাজনৈতিক দর্শনের প্রতিষ্ঠা। “Mandate of Heaven” ধারণার ওপর ভিত্তি করে ঝৌ শাসকরা স্বর্গীয় অনুমোদনের মাধ্যমে তাদের শাসনের বৈধতা প্রতিষ্ঠা করে।
ঝৌ রাজবংশ ছিল ইতিহাসের দীর্ঘতম—প্রায় ৮০০ বছর। এই সময়েই গড়ে ওঠে সমাজ শ্রেণীবিন্যাস (শাসক, কৃষক, কারিগর, ব্যবসায়ী), ধর্মীয় রীতিনীতির পরিশীলন, এবং ৫ উপাদান তত্ত্ব—আগুন, জল, মাটি, ধাতু ও কাঠ। পাশাপাশি সমাজে শুরু হয় দার্শনিক আত্মানুসন্ধান।
আত্মার জন্ম: কনফিউশনিজম ও টাওইজমের বীজ
ঝৌ যুগের শেষার্ধে চীন বিভক্ত হতে থাকে ছোট ছোট রাজ্যে। যুদ্ধ, বিশৃঙ্খলা আর কেন্দ্রীয় শাসনের দুর্বলতার মধ্যেও জন্ম নেয় চিন্তা, দর্শন এবং আত্মপরিচয়ের খোঁজ। এখানেই সূচনা হয় চীনের দুই মহান দার্শনিক ধারা—কনফিউশনিজম এবং টাওইজম—যা আগামী হাজার বছর ধরে চীনের সামাজিক কাঠামো, শাসন ও মূল্যবোধ গঠনে গভীর প্রভাব ফেলে।
সময়ের গভীরে গাঁথা চীনের আত্মপরিচয়
হুয়াংহে নদীর পলিমাটি শুধু চাষযোগ্য জমি তৈরি করেনি, বরং ধারণ করেছে এক জাতির ইতিহাস, দর্শন এবং সাংস্কৃতিক আত্মপরিচয়। শিয়া থেকে ঝৌ—প্রতিটি রাজবংশ, প্রতিটি আবিষ্কার, প্রতিটি বিশ্বাস গড়ে তুলেছে এমন এক চীন, যা সময়ের চেয়ে প্রাচীন, কল্পনার চেয়েও বিস্তৃত।
আজকের আধুনিক চীন যখন অর্থনীতিতে, ভূরাজনীতিতে এবং প্রযুক্তিতে বিশ্বমঞ্চে নেতৃত্ব দেয়, তখন তার শেকড় ফিরে যায় সেই প্রাচীন হুয়াংহে নদীর তীরে গড়ে ওঠা এক নিরব, অথচ প্রবল, সভ্যতায়।
বারমুডা ট্রায়াঙ্গল: রহস্য, ইতিহাস ও বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ
বারমুডা ট্রায়াঙ্গল (যাকে ডেভিল’স ট্রায়াঙ্গলও বলা হয়) উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের একটি কাল্পনিক ত্রিভুজাকার অঞ্চল, যেখানে লোকমুখে বলা হয়ে থাকে যে ৫০টির বেশি জাহাজ এবং ২০টিরও বেশি বিমান রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়েছে। বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় থেকে এই এলাকাকে ঘিরে নানা ঘটনার কিংবদন্তি গড়ে উঠেছে এবং অদ্ভুতভাবে জাহাজ-উড়োজাহাজ উধাও হয়ে যাওয়ার গল্প জনপ্রিয় সংস্কৃতি ও জনমনে গভীর প্রভাব ফেলেছে।
অবস্থান ও ভৌগোলিক সীমা
বারমুডা ট্রায়াঙ্গল মূলত উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের পশ্চিমাংশে অবস্থিত একটি অঞ্চলের ধারণাগত নাম। এর সুনির্দিষ্ট সীমানা সর্বজনস্বীকৃত নয়, তবে সাধারণভাবে এই ত্রিভুজের কোণ তিনটি হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের মায়ামি উপকূল, আটলান্টিকের বারমুডা দ্বীপ, এবং ক্যারিবীয় অঞ্চলের পুয়ের্তো রিকোর সান জুয়ান। এই বিন্দুগুলোকে যোগ করলে সমুদ্রে একটি প্রশস্ত ত্রিভুজাকৃতি এলাকা গঠিত হয়, যার মোট আয়তন বিভিন্ন হিসাবে প্রায় ১৩,০০,০০০ থেকে ৩৯,০০,০০০ বর্গকিলোমিটার হতে পারে। বারমুডা ট্রায়াঙ্গল কোনো প্রশাসনিক বা সরকারি স্বীকৃত অঞ্চল নয়; যুক্তরাষ্ট্রের ভূগোল নামকরণ বোর্ড এই নামে কোনো স্থানকে স্বীকৃতি দেয়নি এবং আনুষ্ঠানিক মানচিত্রেও এটির সীমারেখা চিহ্নিত নেই।
ছবি: মানচিত্রেবারমুডা ট্রায়াঙ্গল
ইতিহাস ও গুরুত্বপূর্ণ নিখোঁজ ঘটনা
বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের রহস্যের ইতিহাস উনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকে শুরু হয় বলে ধারণা করা হয়। তখন থেকেই মাঝে মাঝে এমন প্রতিবেদনের কথা শোনা গেছে যে কিছু জাহাজ সমুদ্রে পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে কিংবা কোনো বিপদ সংকেত পাঠানো ছাড়াই হঠাৎ করে উধাও হয়ে গেছে। বিশেষ করে বিংশ শতকের মধ্যভাগ থেকে এই অঞ্চলে একের পর এক নিখোঁজির ঘটনার কাহিনি গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং “বারমুডা ট্রায়াঙ্গল” একটি আলোচিত রহস্যে পরিণত হয়। নিম্নে এ পর্যন্ত আলোচিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিখোঁজ ঘটনার তালিকা তুলে ধরা হলো:
এইচএমএস এটলান্টা (১৮৮০): রয়্যাল নেভির প্রশিক্ষণ帆 জাহাজ এটলান্টা (পূর্ব নাম এইচএমএস জুনো) ৩১ জানুয়ারি ১৮৮০ তারিখে বারমুডা থেকে ইংল্যান্ডের ফ্যালমাউথের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার পর পূর্ণ ক্রুসহ অদৃশ্য হয়ে যায়। ধারণা করা হয় পথিমধ্যে এক প্রবল ঝড়ে জাহাজটি ডুবে যায়, যদিও পরবর্তীতে অনেকেই এটিকে ট্রায়াঙ্গলের রহস্যময় নিখোঁজের অংশ বলে প্রচার করেছিলেন।
ইউএসএস সাইক্লোপ্স (১৯১৮): মার্কিন নৌবাহিনীর কয়লা বহনকারী জাহাজ ইউএসএস সাইক্লোপ্স বার্বাডোস দ্বীপ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ফেরার পথে মার্চ ১৯১৮ সালে ৩০৬ জন ক্রুসহ রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়েছিল। যুদ্ধকালীন শত্রুদের আক্রমণ, ঝড় অথবা অতিরিক্ত ভারের কারণে জাহাজের কাঠামোগত ভাঙ্গনসহ নানা কারণ অনুমান করা হলেও কোনোটির পক্ষেই দৃঢ় প্রমাণ মেলেনি এবং জাহাজের ধ্বংসাবশেষও আজ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
ক্যারল এ. ডিয়ারিং (১৯২১): পাঁচ-মাস্তওয়ালা বাণিজ্যিক পালতোলা জাহাজ ক্যারল এ. ডিয়ারিং ৩১ জানুয়ারি ১৯২১ তারিখে নর্থ ক্যারোলাইনার কাছাকাছি ডায়মন্ড শোলস অঞ্চলে ধ্বংসাবশেষসহ আটকে থাকতে দেখা যায়, কিন্তু জাহাজটিতে একজনও ক্রু উপস্থিত ছিল না। তদন্তে জলদস্যুতা, নাবিকদের বিদ্রোহ, রাম চোরাচালানসহ নানা সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা হলেও কী কারণে জাহাজটি পরিত্যক্ত হয়েছিল তার নির্ভরযোগ্য ব্যাখ্যা মেলেনি।
ফ্লাইট ১৯ (১৯৪৫): এটি ছিল পাঁচটি টিবিএম অ্যাভেঞ্জার টর্পেডো বোমারু বিমানের একটি নৌবাহিনীর প্রশিক্ষণ মিশন, যারা ৫ ডিসেম্বর ১৯৪৫ তারিখে ফ্লোরিডার ফোর্ট লডারডেল ঘাঁটি থেকে উড্ডয়ন করার পর আটলান্টিকের উপর দিক নির্ধারণে বিভ্রান্তিতে পড়ে নিখোঁজ হয়ে যায়। নৌবাহিনীর তদন্তে ধারণা করা হয় যে দিকভ্রান্ত হয়ে জ্বালানি ফুরিয়ে যাওয়ার ফলে বিমানগুলো সাগরে বিধ্বস্ত হয়েছিল। এই বিমানের খোঁজে পাঠানো একটি উদ্ধারকারী PBM মেরিনার উড়োজাহাজও বিস্ফোরণে বিধ্বস্ত হয়ে নিখোঁজ হয় এবং ১৩ জন উদ্ধারকর্মীরও কেউ জীবিত ফেরত আসেননি।
স্টার টাইগার ও স্টার এরিয়েল (১৯৪৮–১৯৪৯): ব্রিটিশ সাউথ আমেরিকান এয়ারওয়েজের দুইটি যাত্রীবাহী বিমান স্টার টাইগার (৩০ জানুয়ারি ১৯৪৮) এবং স্টার এরিয়েল (১৭ জানুয়ারি ১৯৪৯) আটলান্টিক উড়ানে চলাকালীন হঠাৎ রেডার থেকে অদৃশ্য হয়ে যায়। প্রথমটি অ্যাজোরেস থেকে বারমুডাগামী ও দ্বিতীয়টি বারমুডা থেকে জ্যামাইকার পথে ছিল। দুটো বিমানই তাদের সর্বোচ্চ সীমা পর্যন্ত জ্বালানি নিয়ে উড়ছিল এবং সামান্য যান্ত্রিক ত্রুটি বা নাবিকদের ভুল দিকচ্যুতি ঘটালে ছোট দ্বীপ লক্ষ্যে পৌঁছানো অসম্ভব হয়ে পড়ত বলে তদন্তকারীরা উল্লেখ করেন। কোনো বিমানটিরই ধ্বংসাবশেষ সন্ধান করা যায়নি।
ডগলাস ডিসি-৩ (১৯৪৮): ২৮ ডিসেম্বর ১৯৪৮ তারিখে সান জুয়ান (পুয়ের্তো রিকো) থেকে মিয়ামিগামী একটি চার্টার্ড ডগলাস ডিসি-৩ বিমান (নম্বর NC16002) ৩২ জন আরোহীসহ আচমকা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে নিখোঁজ হয়ে যায়। বিমানটি কি কারণে হারিয়ে গেল তা নির্ণয়ের মতো পর্যাপ্ত তথ্য তদন্তকারীরা পাননি, এবং এটিও বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের রহস্যময় ঘটনাগুলোর একটি হিসেবে আলোচিত হয়ে আছে।
ছবি: বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের সমুদ্রগর্ভে বিলিন হওয়া জাহাজের ধ্বংসাবশেষ
উপরোক্ত ঘটনাসমূহ ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে অনেক নৌযান ও উড়োজাহাজের দুর্ঘটনা বা নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের সাথে জুড়ে জনশ্রুতিতে স্থান পেয়েছে। বিশেষজ্ঞরা লক্ষ্য করেছেন যে বহু ক্ষেত্রে এগুলো প্রকৃতপক্ষে খারাপ আবহাওয়া, প্রযুক্তিগত ত্রুটি বা মানবিক ভুলের ফল হলেও জনমনে “রহস্য” হিসেবে বেশি স্মরণীয় হয়ে থাক।
জনপ্রিয় তত্ত্ব ও কল্পনাবারমুডা ট্রায়াঙ্গলের ঘটনাগুলোর জন্য নানা জনপ্রিয় তত্ত্ব ও কল্পনাপ্রবণ ব্যাখ্যা প্রচলিত আছে। গণমাধ্যম ও লোককাহিনীতে বারবার উঠেছে এমন কিছু কাল্পনিক তত্ত্ব নিচে উল্লেখ করা হলো:
ভিনগ্রহের প্রাণী (এলিয়েন) কর্তৃক অপহরণ: অনেকের বিশ্বাস, এলিয়েনরা গবেষণার জন্য মানুষ বা যানবাহনকে অপহরণ করে থাকে এবং বারমুডা ট্রায়াঙ্গল এলাকা এসব ভিনগ্রহবাসীদের ক্রিয়াকলাপের একটি হটস্পট হতে পারে। উড়ন্ত সাজ এবং অদ্ভুত আলো দেখার দাবিও মাঝে মাঝে এই এলাকার সাথে যুক্ত করে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে।
আটলান্টিসের ডুবে যাওয়া মহাদেশের প্রভাব: কিংবদন্তি মহাদেশ আটলান্টিস আটলান্টিক মহাসাগরে তলিয়ে গেছে বলে যাদের বিশ্বাস, তারা মনে করেন আটলান্টিসের অবশিষ্ট অত্যাধুনিক প্রযুক্তি বা শক্তির ক্ষেত্র বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের ঘটনার জন্য দায়ী হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, বাহামার বিমিনি দ্বীপের উপকূলের রহস্যময় প্রস্তর কাঠামো “বিমিনি রোড” কেউ কেউ আটলান্টিসের সড়ক বলে রটনা করেন, যদিও ভূতত্ত্ববিদদের মতে এটি প্রাকৃতিক গঠন।
টাইম ওয়ার্প বা অন্য মাত্রায় প্রবেশ: কিছু তত্ত্ব অনুযায়ী বারমুডা ট্রায়াঙ্গল এলাকায় সময় ও স্থান বাস্তবতার বিকৃতি ঘটে; অর্থাৎ এখানে এক ধরনের টাইম ওয়ার্প বা সমান্তরাল ব্রহ্মাণ্ডের সঙ্গমস্থল রয়েছে, যেখানে প্রবেশ করলে জাহাজ-উড়োজাহাজ অন্য কোন কাল-মাত্রায় হারিয়ে যেতে পারে। এমনকি “ভূতুড়ে ত্রিভুজে” প্রবেশ করে ভিন্ন সময়ে পৌঁছে যাওয়ার কাহিনিও কল্পনায় শোনা যায়।
কল্পনা থেকে এনিমেটেড ছবি
অতিপ্রাকৃত বা ভৌতিক শক্তি: ডেভিল’স ট্রায়াঙ্গল নামটিই ইঙ্গিত করে অনেকের ধারণায় এটি কোন শয়তানি বা অতিপ্রাকৃত শক্তির আখড়া। কিছু লেখক দাবি করেছেন এই অঞ্চলে এমন অজানা শক্তি কাজ করে যা কম্পাস বিকল করে দেয়, যন্ত্রপাতি অচল করে দেয় কিংবা মানুষকে বুদ্ধিভ্রষ্ট করে ফেলে। ভূত-পেত্নীর অভিশাপ থেকে শুরু করে সমুদ্রের দানব—এ ধরনের নানা অলৌকিক ব্যাখ্যাও লোকমুখে প্রচলিত।
এই সব তত্ত্বের পক্ষে বাস্তব প্রমাণ না থাকলেও সত্তরের দশকে জনপ্রিয় বই, চলচ্চিত্র ও ডকুমেন্টারির মাধ্যমে এগুলো ব্যাপক প্রচার পায় এবং বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের রহস্যকে ঘিরে জনинтерес আরও বাড়িয়ে তোলে।
বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা ও গবেষণালব্ধ তথ্য
বারমুডা ট্রায়াঙ্গল নিয়ে বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও অনুসন্ধানে যেসব বাস্তবসম্মত কারণ উঠে এসেছে, সেগুলো নিচে তুলে ধরা হলো:
কম্পাসের চৌম্বক বিচ্যুতি: অনেক নিখোঁজ ঘটনার বর্ণনায় কম্পাস অস্বাভাবিকভাবে ঘোরাফেরা করেছে বলে দাবি করা হয়। আসলে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে চৌম্বক উত্তর ও ভৌগোলিক উত্তরের মধ্যে প্রাকৃতিক ভ্রম থাকেই, এবং বারমুডা অঞ্চলেও কম্পাসের দিক কিছুটা পরিবর্তিত হওয়া স্বাভাবিক ঘটনা। কিছু পুরনো নাবিক হয়তো এ বিষয়ে কম জ্ঞাত ছিলেন এবং ভুল করে কম্পাসের নির্দেশনা মেনে পথভ্রষ্ট হন। তবে আধুনিক জরিপে ঐ অঞ্চলে কোনো অস্বাভাবিক চৌম্বকীয় অনিয়ম পাওয়া যায়নি।
সাগরের স্রোত (গাল্ফ স্ট্রিম): এই ত্রিভুজাক্ষেত্রের ভেতরে গাল্ফ স্ট্রিম নামের একটি প্রবল সাগরধারা মেক্সিকো উপসাগর থেকে উত্তরমুখী হয়ে প্রবাহিত হয়। একটি নৌযান ইঞ্জিন বিকল হয়ে ভাসতে থাকলে বা ছোট বিমানের সমুদ্রে اضطرকালী অবতরণ ঘটলে এই স্রোত সেটিকে মূল অবস্থান থেকে বহুদূরে টেনে নিয়ে যেতে পারে। ফলে দুর্ঘটনাস্থলের ভুল হিসেবের কারণে পরবর্তীতে ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়।
মানবিক ভুল: সমুদ্র ও আকাশপথে ঘটে যাওয়া বহু দুর্ঘটনার মূল কারণই মানবীয় ভুল বা অবহেলা বলে তদন্তে দেখা গেছে। অভিজ্ঞতার অভাব, ভুল সিদ্ধান্ত, দুর্বল নকশার জাহাজ কিংবা পাইলটের দূর্নিবার জেদ - এসব কারণে খারাপ আবহাওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ পথে পাড়ি দিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হওয়ার উদাহরণ আছে। উদাহরণস্বরূপ, ব্যবসায়ী হার্ভি কোনোভার ১ জানুয়ারি ১৯৫৮ তারিখে ঝড়ের মধ্যে জোর করে নিজের ইয়ট নিয়ে রওনা হলে সেটিও ফ্লোরিডা উপকূলে ডুবে যায়।
প্রচণ্ড আবহাওয়া ও ঝড়: আটলান্টিক মহাসাগরের এই অংশে ট্রপিক্যাল ঘূর্ণিঝড় ও হারিকেন প্রায়শই আঘাত হানে, যা অতীতে হাজারো প্রাণহানি ও জাহাজডুবির কারণ হয়েছে। বিশেষ করে আধুনিক আবহাওয়া সতর্কতার যুগের আগে, হঠাৎ করে উদয় হওয়া হারিকেনে সতর্কবার্তা ছাড়াই বহু জাহাজ নিমেষে ডুবে যেত। এছাড়া বজ্রঝড় থেকে সৃষ্টি হওয়া আকস্মিক ডাউনড্রাফট বা মাইক্রোবার্স্টও সমুদ্রপৃষ্ঠে বোমার মতো আঘাত হেনে জাহাজ ডুবিয়ে দিতে পারে। ১৯৮৬ সালে Pride of Baltimore নামক জাহাজ এমন এক ভয়ানক প্রবল বায়ুর ধাক্কায় ডুবে গিয়েছিল বলে ধারণা করা হয়।
দৈত্যাকার ঢেউ: সমুদ্রের বুকে খুব কমই হলেও হঠাৎ অত্যন্ত বিশাল আকারের ঢেউ জন্ম নিতে পারে, যাকে রোগ ঢেউ বলা হয়। এই ঢেউ সাধারণ সমুদ্রের তরঙ্গ থেকে বহু গুণ বড় (১০০ ফুট বা তারও বেশি উচ্চতা) হতে পারে এবং শিকারকে সম্পূর্ণ গ্রাস করে কোনো চিহ্ন অবশিষ্ট না রাখার ক্ষমতা রাখে। বারমুডা অঞ্চলে বহুমুখী ঝড়-ঝঞ্ঝার মিলনক্ষেত্র হওয়ায় এমন ঢেউ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। বিজ্ঞানীরা অনুমান করেছেন যে কিছু জাহাজ বা বিমানের নিখোঁজ হওয়ার পেছনে এমন বিরল প্রকৃতির বিশাল ঢেউ দায়ী থাকতে পারে।
মিথেন গ্যাসের উদ্গিরণ: সমুদ্রতলের নিচে প্রচুর পরিমাণে জমাট বাঁধা মিথেন হাইড্রেট গ্যাস রয়েছে, যা কোনো কোনো সময় হঠাৎ বড় বুদবুদ আকারে পানির মধ্যে মুক্ত হতে পারে। গবেষণাগারে দেখা গেছে, মিথেন গ্যাসের বিস্তর বুদবুদ পানির ঘনত্ব কমিয়ে দিতে পারে এবং এর মধ্যে কোনো জাহাজ পড়লে তা হঠাৎ নিমজ্জিত হয়ে যেতে পার। এধরনের গ্যাস উদ্গিরণের ফলে জাহাজডুবি ঘটলে ধ্বংসাবশেষ দ্রুত তলিয়ে যায় বা স্রোতে ছড়িয়ে পড়ে, ফলে সন্ধান পাওয়া কঠিন হয়। তবে মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ (USGS) জানিয়েছে যে গত ১৫,০০০ বছরে বারমুডা ট্রায়াঙ্গল এলাকায় এ ধরনের বিশাল মিথেন উদ্গিরণের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, উপরের কারণগুলো ছাড়াও আরও নানা বাস্তব কারণ (যেমন যান্ত্রিক ত্রুটি, আগুন, আটকে পড়া ইত্যাদি সাধারণ দুর্ঘটনা) অনেক তথাকথিত রহস্যময় ঘটনার নেপথ্যে ছিল। কিন্তু মানুষের মন সাধারণ কারণের বদলে অজানা এবং রোমাঞ্চকর কারণকেই বেশি গুরুত্ব দিয়ে মনে রাখে বলে বারমুডা ট্রায়াঙ্গল নিয়ে জল্পনা কল্পনা দীর্ঘদিন ধরে টিকে ছিল।
রহস্যেরপ্রভাব
বারমুডা ট্রায়াঙ্গল রহস্যের গল্প বিশ্বজুড়ে গণমাধ্যম ও populaire সংস্কৃতিতে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছিল এবং জনমনে ভীতি ও কৌতূহল দুটোই তৈরি করেছিল।
গণমাধ্যম ও জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে: ১৯৭০-এর দশকে বারমুডা ট্রায়াঙ্গল নিয়ে সত্য-মিথ্যা মিশিয়ে একপ্রকার ক্রেজ সৃষ্টি হয়েছিল। এই সময়ে বিখ্যাত লেখক চার্লস বার্লিৎস ১৯৭৪ সালে The Bermuda Triangle নামে একটি বেস্টসেলার বই প্রকাশ করেন, যা বিশ্বব্যাপী ২০ মিলিয়নের বেশি কপি বিক্রি হয় এবং জনসাধারণের কল্পনাশক্তিকে উসকে দেয। জনপ্রিয় টিভি সিরিজ Scooby-Doo কিংবা Wonder Woman-এর এপিসোডে বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের প্রসঙ্গ এসেছে, ভিনসেন্ট প্রাইস বর্ণিত ১৯৭৪ সালের তথ্যচিত্র The Devil’s Triangle-এ নানা তত্ত্ব উপস্থাপন করা হয়েছে, এমনকি বারি ম্যানিলো (১৯৮১) ও ফ্লিটউড ম্যাক (১৯৭৪) ব্যান্ডের গানে বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের উল্লেখ রয়েছে। এসবের ফলে বারমুডা ট্রায়াঙ্গল রহস্যটি বিশ্বজনীন জনপ্রিয় সংস্কৃতির অংশে পরিণত হয়। পত্র-পত্রিকায়, সিনেমায় এবং সাহিত্যেও এ রহস্যের উল্লেখ বহুবার এসেছে, যা সাধারণ মানুষের মধ্যে এ নিয়ে উদ্দীপনা ও শিহরণ জাগিয়ে তোলে।
জনমনে ভীতি ও কৌতূহল: বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের গল্পগুলি একদিকে যেমন রোমাঞ্চকর কৌতূহল সৃষ্টি করেছে, তেমনি অনেকের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্কও জাগিয়েছে। বিশেষ করে যাত্রীবাহী জাহাজ বা বিমানে এ অঞ্চলের ওপর দিয়ে ভ্রমণ করবেন যাঁরা, কখনও কখনও তারা অমূলক ভীতিতে ভোগেন। বাস্তবে যদিও এই ত্রিভুজ এলাকার মধ্য দিয়ে নিয়মিত অসংখ্য জাহাজ ও উড়োজাহাজ নির্ঘাতপূর্বক যাতায়াত করছে এবং কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটছে না, তবু লোককাহিনি এবং মিডিয়ার প্রভাবে মানুষের মনে বারমুডা ট্রায়াঙ্গলকে ঘিরে এক রহস্যময় বিপদের ধারণা থেকে গেছে। এমনকি আধুনিক যুগে শিশুরাও কখনও কখনও বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের কথা শুনে আতঙ্কিত হয়, ফলে অভিভাবকদের তাদের ভুল ধারণা ভাঙতে হয় বলে শোনা যায়। এসবই বারমুডা ট্রায়াঙ্গল মিথের গণমনের উপর প্রভাবের উদাহরণ।
পর্যটন ও বাস্তবতা: ভয়ের পাশাপাশি বারমুডা ট্রায়াঙ্গল পর্যটন সংশ্লিষ্ট কৌতূহলের বিষয়ও হয়ে উঠেছে। অনেক পর্যটক বরং এই রহস্যময় এলাকাকে কাছ থেকে দেখতে আগ্রহী। বাস্তবে আজকের দিনে বারমুডা ট্রায়াঙ্গলকে ঘিরে কোনো বাস্তব বিপদ না থাকায় ক্রুজ জাহাজ কোম্পানিগুলি নিশ্চিন্তে এই পথ দিয়ে চলাচল করে এবং কিছু পর্যটন প্যাকেজে “বারমুডা ট্রায়াঙ্গল ট্যুর” বলে আকর্ষণও তৈরি করা হয়। আধুনিক নৌপরিবহন ও বিমান চলাচলের জন্য এই অঞ্চল সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং নিয়ন্ত্রিত, তাই ইচ্ছুক পর্যটকরা ভয়ের বদলে রোমাঞ্চের স্বাদ নিতেই এখানে আসেন।
সমসাময়িক দৃষ্টিকোণ
আধুনিক বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণের দৃষ্টিতে বারমুডা ট্রায়াঙ্গল আর ততটা রহস্যময় নয়, যতটা আগে ভাবা হত। বহু বছরের তদন্ত ও পরিসংখ্যান থেকে বিশেষজ্ঞদের সার্বিক মত হলো:
বিশ্বমানের অন্যান্য সমুদ্রপথের তুলনায় বারমুডা ট্রায়াঙ্গলে দুর্ঘটনা বা নিখোঁজের ঘটনা সংখ্যাগতভাবে বেশি নয়। মার্কিন নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ড স্পষ্টভাবে বলেছে যে এখানে ঘটে যাওয়া রহস্যময় ঘটনাগুলো প্রকৃতপক্ষে প্রাকৃতিক পরিস্থিতি ও মানবীয় ভুলের সাধারণ ফলাফল – এর পিছনে অলৌকিক কিছু নেই । কোনো সরকারি সংস্থার রেকর্ডে বারমুডা ট্রায়াঙ্গল আলাদা করে বিপজ্জনক এলাকা হিসেবে চিহ্নিত নয় এবং আনুষ্ঠানিক মানচিত্রে এর সীমানা চিত্রিত করা হয় না। আধুনিক জিপিএস ন্যাভিগেশন, উন্নত আবহাওয়ার পূর্বাভাস ও যোগাযোগ প্রযুক্তির কল্যাণে জাহাজ ও বিমান এখন সমুদ্রে অনেক নিরাপদ এবং নজরদারির মধ্যে চলাচল করে। তাই আগে যেসব ঘটনা রহস্যে ঢেকে ছিল সেগুলোরও অধিকাংশ ব্যাখ্যা উদঘাটিত হয়েছে বা সহজ ব্যাখ্যা রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। এক সময় যে বারমুডা ট্রায়াঙ্গলকে ‘মৃত্যুত্রিভুজ’ বলে ভয় করা হত, আজ তা বাস্তবে নির্ঝঞ্ঝাট ও পর্যটনবান্ধব এলাকা – রহস্যের চেয়ে যার গুরুত্ব এখন রোমাঞ্চকর ঐতিহাসিক কিংবদন্তি হিসেবেই বেশি। বিজ্ঞানী ও গবেষকদের কাছে বারমুডা ট্রায়াঙ্গল হল মানুষের স্মৃতিতে জায়গা করে নেয়া একটি নগরকথা (আর্বান লেজেন্ড), যার পেছনে বাস্তবিক বিশেষত্বের চেয়ে মানুষের ভুল ধারণা এবং গল্প বলার প্রবণতাই বেশি দায়ী।
স্মার্টফোনই এখন আয়ের প্ল্যাটফর্ম: তরুণদের মাসে আয় হাজার ডলার
আজকাল স্মার্টফোন শুধু যোগাযোগের মাধ্যম নয়—এখন এটি হয়ে উঠেছে এক শক্তিশালী আয়ের উপায়। বাংলাদেশের অনেক তরুণ-তরুণী এখন শুধুমাত্র একটি স্মার্টফোন ব্যবহার করেই মাসে এক হাজার ডলারের বেশি আয় করছেন। প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে বাড়ছে ঘরে বসে উপার্জনের সুযোগ।
বিশ্বজুড়ে স্মার্টফোনভিত্তিক প্ল্যাটফর্মগুলোর চাহিদা বেড়েছে, যা ব্যবহার করে তরুণ প্রজন্ম এখন নানা উপায়ে আয় করছে। শুধু ইন্টারনেট সংযোগ আর কিছু নির্দিষ্ট স্কিল থাকলেই আয় সম্ভব।
কীভাবে আয় করছেন তরুণরা?
✅ ফ্রিল্যান্সিং
প্ল্যাটফর্ম: Fiverr, Upwork, PeoplePerHour
কাজের ধরন: কনটেন্ট লেখা, গ্রাফিক ডিজাইন, ভয়েসওভার, সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট
অ্যাপ ও টুলস: ChatGPT, Canva, Grammarly—সবই মোবাইলেই ব্যবহারযোগ্য
✅ কনটেন্ট ক্রিয়েশন (ইউটিউব ও টিকটক)
ভিডিও সম্পাদনা অ্যাপ: CapCut, InShot, Kinemaster
স্ক্রিপ্ট ও ভয়েসওভার: AI টুলস বা নিজস্ব
কণ্ঠআয়ের উৎস: Google AdSense, স্পনসরশিপ, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং
✅ অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং
Amazon, Daraz, ClickBank-এর প্রোডাক্ট লিংক স্মার্টফোন থেকেই শেয়ার করে আয় করা সম্ভব।
✅ অনলাইন টিউশন ও কোচিং
Zoom বা Google Meet-এর মাধ্যমে ভিডিও ক্লাস নেওয়া যাচ্ছে। কেউ কেউ AI টুল ব্যবহার করে লেসন প্ল্যান তৈরি করছেন এবং বিদেশি শিক্ষার্থীদের পড়িয়ে ভালো আয় করছেন।
বাস্তব উদাহরণ
মারিয়া ইসলাম নামে এক ফ্রিল্যান্সার জানান, "আমি মোবাইল দিয়েই শুরু করি। প্রথম মাসে ২৮০ ডলার আয় হয়, এখন মাসে ১,০০০ ডলারের বেশি আসে।"মিরপুরের শাওন বলেন, "CapCut দিয়ে মোবাইলে ভিডিও এডিট করে ইউটিউবে দিতাম। এখন মাসে ৮০-৯০ হাজার টাকা আয় হয়।"
ডিজিটাল মার্কেটিং বিশেষজ্ঞ সজল রহমান বলেন, "স্মার্টফোন এখন একটি পূর্ণাঙ্গ ব্যবসার হাতিয়ার। যিনি জানেন কীভাবে ব্যবহার করতে হয়, তিনিই নিজের বস।"
শুরু করবেন কীভাবে?
১. আপনার দক্ষতা বেছে নিন (যেমন: লেখা, ডিজাইন, কথা বলা)
২. স্মার্টফোনে প্রয়োজনীয় অ্যাপ ডাউনলোড করুন
৩. Fiverr বা Upwork-এ প্রোফাইল তৈরি করুন
৪. নিজস্ব কনটেন্ট তৈরি করে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার করুন
৫. প্রতিদিন ২-৩ ঘণ্টা সময় দিলেই শুরু হবে আয়
স্মার্টফোনে সময় নষ্ট না করে যদি সঠিকভাবে ব্যবহার করা যায়, তবে ঘরে বসেই নিশ্চিত করা সম্ভব একটি সফল ক্যারিয়ার।
/আশিক
কর্ণফুলীর তীরে এক নীরব বিপ্লব: বাংলাদেশের অস্ত্র কারখানা নিয়ে উত্তপ্ত দক্ষিণ এশিয়া
জুলাইয়ের শেষ বিকেলে চট্টগ্রামের বাতাসে যেন ভেসে বেড়াচ্ছিল এক অদৃশ্য উত্তেজনা। পাহাড়ঘেরা পুরনো একটি পরিত্যক্ত টেক্সটাইল মিল—বছরের পর বছর ধরে যেখানে নীরবতা ছিল অবিচল, সেখানে হঠাৎ করেই ঢুকে পড়ে সামরিক যানবাহনের একটি বহর। আশেপাশের মানুষ বুঝতে পারে কিছু একটা ঘটতে চলেছে। তবে কেউ নিশ্চিত নয় কী ঘটতে যাচ্ছে। যেন হঠাৎ করেই কারো কানে কানে কেউ বলে দিয়েছে—বাংলাদেশ বদলে যাচ্ছে।
মাত্র ৬২ কিলোমিটার দূরে ভারতের সীমান্ত রেখা। আর এই সীমান্ত ঘেঁষেই গড়ে উঠছে বাংলাদেশের দ্বিতীয় অস্ত্র নির্মাণ কারখানা, সরাসরি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে। এটি কেবল একটি অস্ত্র কারখানা নয়—এটি এক প্রতীক। এটি হলো আত্মবিশ্বাসের, কৌশলগত স্বাধীনতার, এবং সবচেয়ে বড় কথা, দক্ষিণ এশিয়ার দ্রুত বদলে যাওয়া ভূরাজনৈতিক মানচিত্রে বাংলাদেশের নতুন অবস্থানের।
জলিল টেক্সটাইল থেকে প্রতিরক্ষা বিপ্লব
চট্টগ্রামের ভাটিয়ারী এলাকায় অবস্থিত পুরনো জলিল টেক্সটাইল মিলের ৫৪.৯৯ একর জমি এখন শুধুই স্মৃতির ধ্বংসাবশেষ নয়। এই ভূমি হয়ে উঠেছে একটি সামরিক-শিল্প বিপ্লবের ভিত্তি। জমিটির সরকারি মূল্য ধরা হয়েছে ১১১ কোটি টাকা, কিন্তু সেনাবাহিনী সেটি পাচ্ছে মাত্র ১৭ কোটিতে—টোকেন মূল্যে। অভ্যন্তরীণ পর্যবেক্ষকরা একে বলছেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার "দ্বিতীয় স্তম্ভ", কারণ এটি দেশকে আত্মনির্ভর প্রতিরক্ষা শিল্পের দিকে ধাবিত করছে।
বাংলাদেশ এতদিন ধরে আমদানিনির্ভর অস্ত্র ও নিরাপত্তা নীতিতে চলে এসেছে। এবার নিজস্ব সামরিক শিল্প গড়ার মধ্য দিয়ে এই নির্ভরতার অবসান ঘটানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
চট্টগ্রাম: একটি কৌশলগত অবস্থানের নাম
কারখানার জন্য চট্টগ্রাম নির্বাচিত হওয়া কেবল স্থানগত সুবিধার বিষয় নয়; এটি একটি সুপরিকল্পিত কৌশল। কর্ণফুলী নদীর তীরবর্তী এই অঞ্চল দেশের বাণিজ্যিক, সামুদ্রিক এবং সামরিক কেন্দ্র। নেভাল একাডেমি, রপ্তানিমুখী ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন, মেরিন একাডেমি ও বন্দর অবকাঠামো—সবই এই অঞ্চলে ঘনীভূত। এমন একটি জায়গায় অস্ত্র কারখানা গড়ে উঠা মানেই কেবল যুদ্ধ প্রস্তুতি নয়, বরং সমুদ্রপথে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় নিজের অবস্থান শক্ত করা।
এই প্রতিযোগিতা এখন কেবল আঞ্চলিক নয়; চীন হাম্বানটোটা বন্দর দখল করে ফেলেছে, ভারত আন্দামানে সামরিক উপস্থিতি জোরদার করছে, যুক্তরাষ্ট্র চাইছে বঙ্গোপসাগরে সক্রিয় নৌবাহিনী ঘাঁটি। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ নিজের অবস্থানকে নীরবে পুনঃসংজ্ঞায়িত করছে।
একটি নতুন সামরিক কল্পনাঃ ড্রোন, ইলেকট্রনিকস এবং প্রযুক্তি হস্তান্তর
এই কারখানা কেবল রাইফেল বা গ্রেনেড তৈরির মতো প্রাথমিক উদ্দেশ্য নয়, বরং উচ্চ প্রযুক্তি নির্ভর সামরিক সরঞ্জাম—ড্রোন, মিলিটারি ইলেকট্রনিকস, আর্মড ভেহিকেল, কন্ট্রোল সিস্টেম ইত্যাদি তৈরির সম্ভাবনা নিয়ে গড়ে উঠছে। এখানেই এসে যাচ্ছে বিদেশি অংশীদারত্বের প্রসঙ্গ—বিশেষ করে তুরস্কের ASELSAN এবং চীনের NORINCO-এর সম্ভাব্য প্রযুক্তিগত ও যৌথ বিনিয়োগ।
অভ্যন্তরীণ সূত্র বলছে, বাংলাদেশ এই প্রকল্পে শুধু অস্ত্র কিনবে না, বরং প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে নিজস্ব সামরিক উৎপাদন সক্ষমতা গড়ে তুলবে। অর্থাৎ এটি একটি অস্ত্র কারখানা নয়, বরং এক নতুন ভূরাজনৈতিক সক্ষমতার নাম।
দিল্লির ঘুম ছুটে গেছে
এই খবরের প্রতিক্রিয়া ইতোমধ্যেই ভারতের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা নীতিতে আলোড়ন তুলেছে। পাকিস্তান ও চীনের সঙ্গে সীমান্ত উত্তেজনার মাঝে বাংলাদেশের এই সিদ্ধান্ত ভারতের জন্য একটি অপ্রত্যাশিত চ্যালেঞ্জ। দিল্লির থিংক ট্যাংক ও সামরিক বিশ্লেষকদের ভাষায়, ভারত দীর্ঘদিন ধরে দক্ষিণ এশিয়ার ‘বড় ভাই’ হয়ে থাকতে চেয়েছে, কিন্তু আজ বাংলাদেশ, চীন ও পাকিস্তান একটি নতুন ‘স্ট্র্যাটেজিক ব্যালেন্স’ তৈরি করছে, যেখানে ভারত একঘরে হয়ে পড়ছে।
এটিকে ভারতীয় কূটনীতির ব্যর্থতা হিসেবেই দেখছেন অনেকে—যেখানে সম্মান ও আস্থার জায়গায় বারবার প্রদর্শিত হয়েছে আধিপত্য ও চাপ।
নীরব বাংলাদেশ, শঙ্কিত প্রতিবেশী
বাংলাদেশ সরকার এই বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলেনি। কিন্তু এই ‘নীরবতা’ই যেন হয়ে উঠেছে সবচেয়ে বড় বার্তা। ঢাকায় কেউ উচ্চস্বরে কিছু বলছে না, তবে ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও তুরস্কের কূটনৈতিক প্রতিনিধিরা সক্রিয়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে কর্ণফুলীর প্রতিটি নড়াচড়া।
চীন, তুরস্ক ও পাকিস্তানের সম্ভাব্য পর্দার পেছনের উপস্থিতি এবং প্রযুক্তিগত বিনিয়োগ এই উদ্যোগকে পরিণত করেছে একটি ‘সাইলেন্ট ওয়ার ফ্রন্ট’-এ। কূটনীতির পরিভাষায় একে বলা হয় pre-conflict posture—এক ধরনের অঘোষিত যুদ্ধ প্রস্তুতি।
মিডিয়ার নিরবতা ও আন্তর্জাতিক নজরদারি
ভারতের প্রভাবশালী মিডিয়া যেমন টাইমস নাউ, রিপাবলিক, হিন্দুস্তান টাইমস—সবাই আশ্চর্যজনকভাবে চুপ। কেউ সরাসরি বলছে না কিছু, কেউ বলছে বাংলাদেশ চীনের কৌশলে জড়াচ্ছে, আবার কেউ বলছে, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক এতটাই বন্ধুত্বপূর্ণ যে এমন কিছু হবার কথা নয়। কিন্তু এই নিরবতা বিশ্লেষকদের মতে “ভয়ের প্রতিফলন”।
যুক্তরাষ্ট্রের সিআইএ, রাশিয়ার এফএসবি ও চীনের MSS—সবাই এখন বাংলাদেশে নতুন কূটনৈতিক ধারা এবং প্রতিরক্ষা শিল্পে নজর রাখছে। দক্ষিণ এশিয়ায় একটি নয়া রেখা আঁকা হচ্ছে, যা ভবিষ্যতের দ্বিধাবিভক্ত জোট ব্যবস্থার ইঙ্গিত দিতে পারে।
একটি নীরব বিপ্লবের সূচনা
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তীরে পুরনো পরিত্যক্ত এক টেক্সটাইল মিল আর শুধু একটি ঐতিহাসিক জমি নয়—এটি আজ একটি প্রতিরোধের প্রতীক। এখানে গড়ে ওঠা অস্ত্র কারখানা কেবল বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা নয়, বরং কৌশলগত অবস্থান, কূটনৈতিক শৃঙ্খলা ও ভূরাজনৈতিক মনোভঙ্গির এক মৌলিক রূপান্তরের সূচনা করছে।
প্রশ্ন হচ্ছে, এই রূপান্তর কতটা দীর্ঘস্থায়ী হবে? বাংলাদেশ কি সফলভাবে কৌশলগত ভারসাম্য রক্ষা করতে পারবে? নাকি এক সময় এই অস্ত্র কারখানাই পরিণত হবে আঞ্চলিক উত্তেজনার উৎসে?
সত্যিটা হলো—ইতিহাস নীরবতায় গঠিত হয় না, তবে অনেক সময় নীরবতা থেকেই ইতিহাস শুরু হয়।
পাঠকের মতামত:
- মাহাথির মোহাম্মদ ও মালয়েশিয়ার অর্থনৈতিক রূপান্তর: নীতি, সংস্কার ও উত্তরাধিকার
- অমীমাংসিত ইস্যু সরকারের বিষয়, মুসলিম বিশ্বের ঐক্য শক্তিশালী করার আহ্বান জামায়াতের
- পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক নতুনভাবে ভাবতে চায় এনসিপি, ৭১-এর অমীমাংসিত ইস্যু সমাধানের আহ্বান
- বিএনপি থেকে নির্বাচন করবেন মাহফুজ? যা বললেন বাবা
- কুকুরকে খাবার দেওয়ায় নারীকে বেধড়ক মারধর, ভিডিও ভাইরাল
- প্রকৃতিবিরোধী কোনো উন্নয়ন প্রকল্প বরদাশত করা হবে না: রিজওয়ানা হাসান
- ম্যানসিটি বনাম টটেনহাম: ইতিহাদে ফের বিধ্বস্ত সিটিজেনরা
- মওলানা ভাসানী সেতু: ৫ লাখ ১০ হাজার টাকার তার চুরি
- যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করার জন্য নেতানিয়াহু আলোচনা ভণ্ডুল করছেন: হামাস
- বিশ্বে এমন মার্কিন প্রেসিডেন্ট আগে দেখা যায়নি: ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী
- এশিয়া কাপে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হতে পারে, মনে করেন প্রধান নির্বাচক
- জনগণের আকাঙ্ক্ষা যে দল বুঝবে না, তার ভবিষ্যৎ নেই: আমীর খসরু
- বঙ্গোপসাগরে নৌকাসহ বাংলাদেশি ১২ জেলেকে ধরে নিয়ে গেল 'আরাকান আর্মি
- দেশের সিস্টেমটাই হয়ে গেছে দখলের: মির্জা ফখরুল
- খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের খোঁজ নিতে তার বাসভবনে যাবেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী
- ঢাকার অপরাধপ্রবণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত দুটি এলাকা: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
- নির্বাচনের প্রস্তুতি: ২৫ আগস্টের মধ্যে ব্যালট বাক্সের হিসাব চাইল ইসি
- ১৩ বছর পর ঢাকায় পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী
- শিশুদের সুরক্ষায় নতুন নোকিয়া ফোন: 'নগ্ন ছবি' ব্লক করবে এআই
- হোয়াটসঅ্যাপে নতুন ফিচার: গ্রুপ কল শিডিউল করার সুযোগ!
- মাইলস্টোনে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ৩৩ দিন পর মৃত্যুর কাছে হার মানল দগ্ধ শিক্ষার্থী তাসনিয়া
- খুলনায় ডুমুরিয়ায়া বাড়িতে ঢুকে যুবদল নেতাকে হত্যা
- ডিজিএফআই ও বসুন্ধরা গ্রুপের প্রভাবে স্বাধীন সাংবাদিকতা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে: হাসনাত আব্দুল্লাহ
- কোনো কেন্দ্র দখল করলে পুরো কেন্দ্রের ভোট বাতিল:সিইসি
- আমদানি ব্যয় ৮০ টাকা, খুচরায় ৩০০: কাঁচা মরিচের দাম নিয়ে চলছে কারসাজি
- ‘মোদির বিরুদ্ধে মিছিল করা বাহার এখন মেয়েকে নিয়ে কলকাতায়’
- বেশি ভিউয়ের লোভে তরুণী সেজে ভিডিও বানাতেন টিকটকার, গ্রেপ্তার
- ১১ বছরের শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে ইমাম গ্রেপ্তার
- হৃদপিণ্ডের দুর্বলতার লক্ষণ: জেনে নিন ৩টি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ
- জেনে নিন আজকের স্বর্ণের বাজারদর: এক ভরি স্বর্ণ কিনতে কত টাকা লাগবে?
- ‘ক্রাশের’ স্বামীকে হত্যা করতে গুগলের সাহায্য নিয়ে বোমা বানালেন প্রেমিক!
- ‘সীমিত আয়ের মানুষ খাবেটা কী?’: ইলিশের পর পটোলের দামও আকাশছোঁয়া
- সামিট গ্রুপ: কালো টাকা সাদা করার আন্তর্জাতিক কৌশল
- গভীর সংকটে দেশের ব্যাংক খাত: মূলধন সংরক্ষণে দক্ষিণ এশিয়ায় তলানিতে বাংলাদেশ
- গাজা উপত্যকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করল সৌদি আরব
- টিভিতে আজকের খেলা: এক নজরে ক্রিকেট ও ফুটবলের সূচি
- দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের পূর্বাভাস, অতি ভারি বর্ষণেরও সম্ভাবনা
- দেশের জন্য পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন জরুরি: চরমোনাই পীর
- গাজায় ইসরাইলের হামলা বৃদ্ধি, গত একদিনে আরও ৭১ ফিলিস্তিনি নিহত
- মেঘনার বুকে ভেসে উঠল নিখোঁজ সাংবাদিক বিভুরঞ্জনের লাশ, স্তব্ধ পরিবার-সহকর্মীরা
- শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রচারে গণমাধ্যমকে সতর্ক করল অন্তর্বর্তী সরকার
- আওয়ামী লীগ থেকে একসঙ্গে ৮ নেতার পদত্যাগ
- সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর জন্য সুখবর!
- ইছাপুর ইউনিয়ন বিএনপির নেতৃত্বে জয়ী মাহফুজ আলমের বাবা
- বিএসএফের হাতে বিজিবি সদস্য আটক
- বাউফলে এএসপির বাসায় চাঁদাবাজি, যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার
- রাজধানীর বাজারে সবজির আগুন, খালি হাতে ফিরছেন অনেকে
- জাতিসংঘে রোহিঙ্গা সম্মেলনের উদ্যোগে ইউনূস
- গাজা শহর দখলের চূড়ান্ত নির্দেশ নেতানিয়াহুর
- আগে গণপরিষদ নির্বাচন ও সংবিধান সংশোধন, তারপর জাতীয় নির্বাচন: আখতার হোসেন
- একাদশে ভর্তি: প্রথম ধাপের ফল প্রকাশ হলো,যেভাবে দেখবেন
- ফেসবুক পোস্টে রনির বিরুদ্ধে জুলকারনাইন সায়েরের ক্ষোভ
- ১৭ আগস্ট ডিএসইতে দর বৃদ্ধির শীর্ষ দশ শেয়ার
- শেয়ারবাজারে বেক্সিমকো ও ইসলামী ব্যাংকের সর্বশেষ দর-বদলের চিত্র
- আল্লাহ আমাকে পাকিস্তানের অভিভাবক বানিয়েছেন,প্রেসিডেন্ট হওয়ার আকাঙ্ক্ষা নেই: মুনির
- আলবার্ট আইনস্টাইনের শেষ মুহূর্ত: এক ছবিতে ধরা পড়ল এক যুগের অবসান
- আখেরি চাহার শোম্বা: সফর মাসের শেষ বুধবারের ইতিহাস ও তাৎপর্য
- দেশের স্বর্ণের বাজার স্থিতিশীল, জানুন ভরি প্রতি দাম
- জিআইবি জানালো আইপিও অর্থ ব্যবহারে প্রতিবন্ধকতার কারণ
- খুলনা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন
- রহিমা ফুডসের শেয়ার মালিকানা বদল
- সপ্তাহ শুরুতেই ডিএসইতে উত্থান, সূচক ও লেনদেনে চাঙ্গাভাব
- পিকাসো থেকে নিকোলস: প্রতিভা, সংগ্রাম আর অর্থপূর্ণ জীবনের দিশা
- ১৮ আগস্ট ডিএসইতে দর বৃদ্ধির শীর্ষ দশ শেয়ার
- ১৮ আগস্ট ডিএসইর দরপতনের শীর্ষ দশ শেয়ার