“বিএনপি পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় যায় না”- ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ১৭ ১১:২১:০৭
“বিএনপি পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় যায় না”- ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন
ছবি: সংগৃহীত

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেছেন, সমাজে অনেকেই ধর্মের কথা বলেন, কিন্তু তাদের কথার সঙ্গে কাজের সামঞ্জস্য থাকে না। এ ধরনের ভণ্ডামি তাকে ব্যথিত করে। তিনি বলেন, আয়নায় নিজের চেহারা দেখুন এবং প্রশ্ন করুন—জনগণের মধ্যে আপনাদের অবস্থান কী? জনগণ কখনও কি সত্যিই আপনাদের প্রতি আস্থা রেখেছিল? বিএনপি সেই দল, যারা স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে পালায়নি বা আত্মসমর্পণ করেনি; বরং অস্ত্র হাতে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে এবং দেশকে স্বাধীন করেছে।

শনিবার মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন ও কাউন্সিল উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে বেলা ১১টায় সম্মেলনের কার্যক্রম শুরু হয়।

ডা. জাহিদ হোসেন বলেন, বিএনপি সেই রাজনৈতিক শক্তি, যারা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে বাকশালের কবরের ওপর বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে। এ দলই সংবিধানে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করেছে, যা জনগণের ভোটাধিকার সুরক্ষার জন্য ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। তিনি জোর দিয়ে বলেন, বিএনপি কখনও পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার দল নয়। তাই বিএনপির সমালোচনা করা হোক, তবে সেটি হতে হবে তথ্যভিত্তিক ও বাস্তবসম্মত, বিভ্রান্তিকর নয়।

তিনি আরও বলেন, ১৫ আগস্ট ছিল দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ৮১তম জন্মদিন। তার সুস্থতার জন্য যারা দোয়া, রোজা, সাদকা, ওমরাহ ও তাওয়াফ করেছেন তাদের প্রতি বিএনপির পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। তিনি মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনের শহীদদের স্মরণ করেন এবং বলেন, আমরা ইলিয়াস আলী, দিনার, জুনেদসহ হাজার হাজার ভাইকে হারিয়েছি। অনেকেই গুম হয়েছেন, অনেকেই স্থায়ীভাবে পঙ্গুত্ববরণ করেছেন। তাদের পুনর্বাসনে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনগুলো ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে কাজ করে যাচ্ছে।

বিএনপি স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, আজকাল অনেকে এমন ভাষায় কথা বলেন যা গণতন্ত্রের ভাষা নয়; বরং কর্তৃত্ববাদী শাসকের ভাষা। কিন্তু বিএনপি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে গণতন্ত্রে এবং জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায়। তিনি বলেন, ছাত্র-যুবসমাজের ভবিষ্যৎ, দেশের ভঙ্গুর অর্থনীতি, কৃষি, স্বাস্থ্য, বিচারব্যবস্থা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান।

জনগণের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার সংগ্রামে ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে ডা. জাহিদ হোসেন বলেন, ধর্মের নামে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করবেন না। আমরা চাই, যারা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে শামিল আছি, সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকি। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে জনগণের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার সুযোগ আসবে এবং ইনশাআল্লাহ বিএনপি সেই লক্ষ্য অর্জন করবে।

তিনি আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচন কমিশনকে যে আশ্বাস দিয়েছেন, বিএনপি তাতে আস্থা রাখতে চায়। তাই বিভেদ নয়, কাদা ছোড়াছুড়ি নয়; বরং জনগণের ভাষা বুঝে তাদের কাছে যেতে হবে। তিনি উল্লেখ করেন, বিএনপি ইতোমধ্যেই ৩১ দফা রূপরেখা জনগণের সামনে তুলে ধরেছে। অন্যরাও তাদের কর্মপরিকল্পনা নিয়ে জনগণের কাছে যাক। শেষ পর্যন্ত জনগণ যাকে ভালোবাসবে, তাকেই গ্রহণ করবে।

-রফিক


"বিএনপি ভোটাধিকার রক্ষায় আপসহীন"

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ১৭ ১১:১৫:০৮
"বিএনপি ভোটাধিকার রক্ষায় আপসহীন"
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান

বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়নে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেছেন, দেশে নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে, তবে বিএনপি কোনোভাবেই তা মেনে নেবে না। তিনি জোর দিয়ে বলেন, বিএনপি সবসময় মানুষের ভোটাধিকার রক্ষার আন্দোলন করে আসছে এবং সেই গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে আনতে লড়াই অব্যাহত থাকবে। তার মতে, সাধারণ মানুষের ভোটের মাধ্যমেই একটি সুন্দর ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব, আর সেই লক্ষ্যেই সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।

শনিবার ইউনিয়নের আলতাফ মেমোরিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করেছিলেন। কিন্তু বেগম জিয়া কখনো আপস করেননি, বরং সবসময় জনগণকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন “দেশ বাঁচাও, মানুষ বাঁচাও”। তার এই অবস্থান গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে আজও দলের জন্য প্রেরণার উৎস।

বেগম সেলিমা রহমান বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান রাষ্ট্র ব্যবস্থার ন্যায়ভিত্তিক সংস্কারের ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি বারবার বলেছেন, রাষ্ট্রের কাঠামো যদি ন্যায়ভিত্তিক না হয় তবে জনগণ কখনো তাদের ন্যায্য অধিকার ফিরে পাবে না। সেই দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই তারেক রহমান “৩১ দফা রাষ্ট্র কাঠামো” প্রস্তাব করেছেন, যার লক্ষ্য একটি আত্মনির্ভরশীল ও শক্তিশালী জাতি হিসেবে বাংলাদেশকে গড়ে তোলা এবং বিশ্ব দরবারে মর্যাদার আসনে পৌঁছে দেওয়া।

সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির ১ নম্বর সহ-সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার মনিরুজ্জামান আসাদ। তিনি সরকারের দমননীতি ও বিচার ব্যবস্থার সংকটের সমালোচনা করে বলেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে আইনজীবী সমাজেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি এস এম শফিউল আজম শাহিনের সভাপতিত্বে এবং ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এই মতবিনিময় সভায় ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ের বহু নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।

-শরিফুল


গাইবান্ধায় শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন নেতার গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ১৭ ১০:৫৪:২০
গাইবান্ধায় শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন নেতার গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার
ছবিঃ সংগৃহীত

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় জামায়াতে ইসলামীর অঙ্গসংগঠন শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের এক নেতাকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে, যা পুরো এলাকায় তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। রোববার (১৭ আগস্ট) সকালে উপজেলার নাকাই ইউনিয়নের শীতল গ্রামের বাগুরার বিলের ধারে তার মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেন। পরে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে। নিহতের নাম নজরুল ইসলাম (৩৪)। তিনি শীতলগ্রাম ওয়ার্ড শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি ছিলেন এবং গ্রামের মৃত তোফাজ্জল ইসলামের ছেলে। রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় হওয়ার পাশাপাশি তিনি জীবিকা নির্বাহের জন্য শীতল গ্রাম বাজারে একটি মুদি দোকান চালাতেন এবং বিকাশ এজেন্ট হিসেবে কাজ করতেন।

পরিবারের সদস্যরা জানান, নজরুল ইসলাম প্রায়ই দোকানেই রাত কাটাতেন। শনিবার রাতেও ধারণা করা হয়েছিল তিনি দোকানে ছিলেন। কিন্তু রবিবার সকালে স্থানীয় কয়েকজন পথচারী বিলের ধারে রক্তাক্ত এক মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে সেখানে এগিয়ে যান এবং পরে বুঝতে পারেন নিহত ব্যক্তি নজরুল ইসলাম। খবর ছড়িয়ে পড়লে নিহতের পরিবার ও স্থানীয়রা ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। তার ছোট ভাই নাজিরুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, নজরুলের ব্যবসার কারণে অনলাইন জুয়াড়ি ও হ্যাকার চক্রের সঙ্গে তার দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব চলছিল। এসব চক্র অবৈধভাবে বিকাশ থেকে টাকা উত্তোলনের চেষ্টা করত, কিন্তু নজরুল তা বরাবরই প্রত্যাখ্যান করতেন। এ কারণে তারা নজরুলকে বিভিন্ন সময় হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছিল। নাজিরুলের দাবি, শনিবার রাতে দোকান থেকে ফেরার পথে ওই চক্রের সদস্যরাই তার ভাইকে গলা কেটে হত্যা করেছে। তিনি আরও বলেন, এলাকায় যেসব অনলাইন জুয়াড়ি ও হ্যাকার সক্রিয় রয়েছে, তাদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার করতে পারলেই হত্যার প্রকৃত রহস্য বেরিয়ে আসবে।

নাকাই ইউনিয়ন শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি আশরাফুল ইসলাম বলেন, নজরুল ইসলাম ছিলেন সংগঠনের একজন নিবেদিতপ্রাণ ও পরিশ্রমী কর্মী। তিনি শুধু সংগঠনের কাজে সক্রিয় ছিলেন না, বরং সমাজের সাধারণ মানুষের সঙ্গেও নিবিড়ভাবে যুক্ত ছিলেন। তার হত্যাকাণ্ডে সংগঠন ও এলাকাবাসীর জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি হলো। আশরাফুল এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন।

গোবিন্দগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বুলবুল ইসলাম জানান, মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য গাইবান্ধা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। হত্যার পেছনের কারণ উদঘাটন এবং হত্যাকারীদের গ্রেফতারে পুলিশ মাঠে কাজ করছে।

একজন রাজনৈতিক কর্মী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ডে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয়দের অনেকের মতে, অনলাইন জুয়া ও হ্যাকিং চক্র দীর্ঘদিন ধরেই এলাকায় সক্রিয়, কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যকর পদক্ষেপ না থাকায় তারা ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। নজরুল ইসলামের মৃত্যু সেই অপরাধী নেটওয়ার্কের ভয়াবহতারই প্রতিফলন। এখন এলাকার সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা, দ্রুত তদন্ত শেষ করে হত্যাকারীদের শনাক্ত করা হবে এবং আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হবে, যাতে ভবিষ্যতে আর কেউ এভাবে প্রাণ হারাতে না হয়।

-রফিক


জুলাই সনদ বাস্তবায়ন না হলে রাজপথে নামব: আখতার হোসেন

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ১৬ ২১:২৫:৩৬
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন না হলে রাজপথে নামব: আখতার হোসেন
ছবি: সংগৃহীত

টেবিলের আলোচনায় নতুন সংবিধান প্রণয়ন না হলে রাজপথে নামতে দেরি করবেন না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন। শনিবার (১৬ আগস্ট) রাজধানীর বাংলামোটরে দলের অস্থায়ী কার্যালয়ে ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণপরিষদ নির্বাচন’ শীর্ষক আলোচনাসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই মন্তব্য করেন।

আখতার হোসেন বলেন, জুলাই সনদকে কাগুজে বাঘ হিসেবে দেখতে চায় না এনসিপি। বর্তমান সরকারের সময়েই এর বাস্তবায়ন চান তারা। তিনি মনে করেন, লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্কের ভিত্তিতে অন্তর্বর্তী সরকারকেই সংস্কার শুরু করতে হবে এবং পরবর্তী সরকার এসে তা সম্পন্ন করবে।

এনসিপির সদস্যসচিব বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন অনেক বিষয়ে একমত হলেও তা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ম্রিয়মাণ। তিনি মনে করেন, কমিশন একটি বা দুটি দলের সঙ্গে আলোচনা করে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারে না, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসা উচিত। তিনি আরও বলেন, জুলাই ঘোষণাও অপূর্ণাঙ্গ, কারণ এতে সংস্কার করা সংবিধানের আলোকে নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে, গণপরিষদ নির্বাচনের দাবি পাশ কাটিয়ে যাওয়া হয়েছে।

আখতার হোসেন জোর দিয়ে বলেন, দেশের মানুষ নতুন সংবিধান চায়। যদি টেবিলের আলোচনায় নতুন সংবিধানের বিষয়ে কোনো অগ্রগতি না হয়, তবে তারা রাজপথে নামতে দেরি করবেন না। তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি পুরনো নিয়ম ভেঙে গণপরিষদ নির্বাচনের দাবিতে এক হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, নির্বাচন যেকোনো সময় হতে পারে, তবে তা পুরনো ব্যবস্থা টিকিয়ে রেখে নয়, নতুন ব্যবস্থায় হতে হবে।

আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, যুগ্ম সদস্যসচিব জহিরুল ইসলাম মুসা, আরিফ সোহেল প্রমুখ।


সরকারকে লন্ডনে ‘বিক্রি করে’ দেওয়া হয়েছে:হাসনাত আব্দুল্লাহ

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ১৬ ২১:১৭:৩৯
সরকারকে লন্ডনে ‘বিক্রি করে’ দেওয়া হয়েছে:হাসনাত আব্দুল্লাহ
বাংলামোটরে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণপরিষদ নির্বাচন শীর্ষক এক আলোচনা সভায় হাসনাত আব্দুল্লাহ। ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারপ্রধানের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি দাবি করেছেন, গণঅভ্যুত্থানের পর সরকারপ্রধান লন্ডনে গিয়ে একটি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে ‘সিজদা’ করে এসেছেন এবং সেদিনই সরকারকে সেখানে ‘বিক্রি করে’ দেওয়া হয়েছে। শনিবার (১৬ আগস্ট) ঢাকার বাংলামোটরে ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণপরিষদ নির্বাচন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এই মন্তব্য করেন।

হাসনাত আব্দুল্লাহ অভিযোগ করেন, বর্তমান মিডিয়া বেশিরভাগই কোনো না কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে কাজ করছে। তিনি প্রশাসনের পক্ষপাতদুষ্টতার অভিযোগ তুলে বলেন, এখন সচিবালয়ের কর্মকর্তারা অফিস শেষ হওয়ার আগেই গুলশান বা পল্টনের দিকে রওনা হন, যা আগে ধানমন্ডি ৩২ বা গুলিস্তানে দেখা যেত। জাতীয়তাবাদী রাজনীতিতে এনসিপির প্রতি বৈরিতা থাকলেও তা রাজনৈতিক বাস্তবতায় কোনো প্রভাব ফেলবে না বলে তিনি মনে করেন।

দুর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে হাসনাত আব্দুল্লাহ চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বলেন, যদি কেউ প্রমাণ দিতে পারে যে তারা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অর্থ নিয়েছেন, তবে তিনি ও তার সহকর্মীরা রাজনীতি ছেড়ে দেবেন। নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এনসিপি নির্বাচন পেছানোর পক্ষে নয়, তবে নির্বাচনের নিয়ম (‘রুলস অব দ্য গেম’) বদলাতে হবে এবং নির্বাচন গণপরিষদ নির্বাচন হতে হবে।

হাসনাত আব্দুল্লাহ পুরোনো সংবিধানকে ‘ফ্যাসিবাদের পাঠ্যবই’ আখ্যায়িত করে একটি নতুন সংবিধানের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, তাদের দলকে আসন দিয়ে কেনা যাবে না এবং তারা বিক্রি হন না।


নির্বাচনের বিরুদ্ধে যারা, তারা জনগণের শত্রু: সালাহউদ্দিন আহমেদ

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ১৬ ১৯:৪৪:০৬
নির্বাচনের বিরুদ্ধে যারা, তারা জনগণের শত্রু: সালাহউদ্দিন আহমেদ
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় নির্বাচন নিয়ে যারা শঙ্কা প্রকাশ করছে, তারা গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তি নয়— এমন মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, যারা নির্বাচনের বিপক্ষে বক্তব্য দেবে, বাংলাদেশের জনগণ তাদের রুখে দেবে।

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য ঐক্যবদ্ধ ও সংকল্পবদ্ধ। যারা বিভিন্ন ‘কু-যুক্তি’ দিয়ে গণতন্ত্রের এই যাত্রাপথকে বাধাগ্রস্ত করতে চাইবে, জনগণ তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে। তিনি আরও বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, আশা করি- বাংলাদেশের জনগণ ভবিষ্যতে গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথে যেকোনো রকমের বাধাকে অতিক্রম করতে সংকল্পবদ্ধ।”

শনিবার (১৬ আগস্ট) রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দোয়া মাহফিলে সালাহউদ্দিন আহমেদ এসব কথা বলেন। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ৮১তম জন্মদিন উপলক্ষে এই কর্মসূচির আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী যুবদল।

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “যারা নির্বাচনের বিষয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছে, তারা গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তি নয়। তারা সম্ভবত নির্বাচনকে বিলম্বিত বা বানচাল করতে চাইছে।” তিনি রাজনৈতিক দল ও শক্তিগুলোর প্রতি আহ্বান জানান, তারা যেন ফ্যাসিবাদবিরোধী গণতান্ত্রিক সংগ্রামে যেভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলেন, সেভাবেই আগামী নির্বাচনের জন্য সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে ঐক্যবদ্ধ থাকেন।

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বেগম খালেদা জিয়া গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করতে করতে আজও বাংলাদেশের মানুষের জন্য আলোর দিশারি হয়ে আছেন। তিনি নির্দেশনা দিয়েছিলেন আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ঐকমত্যের ভিত্তিতে গণতন্ত্রের উত্তরণের পথকে সহজ করতে।

তিনি বলেন, “আমরা জাতীয় ঐকমত্যের মধ্য দিয়ে একটি সুষ্ঠু, সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য অপেক্ষমাণ।” যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন এর সঞ্চালনায় এই অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সাইফুল আলম নীরব, রেজাউল কবির পল, বেলাল হোসেন তারেকসহ প্রমুখ।


শ্রীকৃষ্ণের বাণী থেকে প্রেরণা: জন্মাষ্টমীতে তারেক রহমানের রাজনৈতিক বার্তা

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ১৬ ০৯:৫১:৫৭
শ্রীকৃষ্ণের বাণী থেকে প্রেরণা: জন্মাষ্টমীতে তারেক রহমানের রাজনৈতিক বার্তা
ছবি: সংগৃহীত

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘বাংলাদেশে সব ধর্মের মানুষ যুগ যুগ ধরে সৌহার্দ ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে বসবাস করে আসছে। বিএনপি সেই বন্ধন অটুট রাখতে দৃঢ় অঙ্গীকারবদ্ধ।’ হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্মাষ্টমী উপলক্ষে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বাণীতে তিনি এই অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

বাণীতে তারেক রহমান হিন্দু ধর্মাবলম্বী ভাই-বোনদের আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানিয়ে তাদের অব্যাহত কল্যাণ, সমৃদ্ধি ও শান্তি কামনা করেন। তিনি বলেন, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ পৃথিবীতে একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে জন্মগ্রহণ করে দুষ্টদের বধ করে পৃথিবী পাপমুক্ত করেছিলেন। তিনি অন্যায়, অনাচার ও দুঃশাসন দমন করে সমাজে ন্যায় ও সত্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

তারেক রহমান বলেন, শ্রীকৃষ্ণের এই বাণী থেকে অত্যাচারীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধের শিক্ষা লাভ করা যায়। তিনি আরও বলেন, ধর্মীয় সহিষ্ণুতা বাংলাদেশের সংস্কৃতির একটি অংশ, এবং এদেশের মানুষ কখনোই ঔদার্য ও অন্য ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা হারায়নি।


৮১ বছরে বেগম খালেদা জিয়া: গণতন্ত্রের আপোষহীন কণ্ঠস্বর ও রাজনৈতিক উত্তরাধিকার

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ১৫ ২১:৩০:৫১
৮১ বছরে বেগম খালেদা জিয়া: গণতন্ত্রের আপোষহীন কণ্ঠস্বর ও রাজনৈতিক উত্তরাধিকার

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এমন কিছু নাম আছে যাদের জীবন ও কর্ম দেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে আছে। বেগম খালেদা জিয়া সেই তালিকার শীর্ষে। আজ তাঁর ৮১তম জন্মদিন। চার দশকের বেশি সময় ধরে তিনি ক্ষমতা, বিরোধিতা, আন্দোলন, কারাবাস এবং গৃহবন্দিত্বের ভেতর দিয়ে গেছেন। প্রতিটি অধ্যায় তাঁকে যেমন দৃঢ় করেছে, তেমনি রাজনৈতিক বিরোধিতার কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।

১৯৮১ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর বিএনপির নেতৃত্বে আসেন খালেদা জিয়া। তখন তিনি রাজনীতিতে নতুন ছিলেন, কিন্তু সেনাশাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিরুদ্ধে তিনি দ্রুত বিরোধী শক্তির অন্যতম প্রধান মুখে পরিণত হন। ১৯৮০-এর দশকে তাঁর নেতৃত্বে বিএনপি স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় থাকে এবং ১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থানে বিরাট ভূমিকা রাখে, যা শেষ পর্যন্ত এরশাদের পতন ঘটায়। তাঁর নেতৃত্বের বৈশিষ্ট্য ছিল আপোষহীনতা, সরাসরি আন্দোলনে অংশগ্রহণ এবং বিরোধী শিবিরকে ঐক্যবদ্ধ করার ক্ষমতা।

১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিএনপি জয়লাভ করলে তিনি বাংলাদেশের প্রথম গনতান্ত্রীকভাবে জনগনের ভোটে নির্বাচিত নারী প্রধানমন্ত্রী হন। দীর্ঘ ১৬ বছরের রাষ্ট্রপতি শাসনের অবসান ঘটিয়ে সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা ছিল তাঁর সরকারের সবচেয়ে বড় অর্জন। সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর হাতে নির্বাহী ক্ষমতা ফিরিয়ে দিয়ে জনগণের প্রত্যক্ষ প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়। তাঁর প্রথম মেয়াদে প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক ও বিনামূল্যে চালু, নারীশিক্ষায় বিশেষ প্রণোদনা, ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমে সহায়তা এবং গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণের মতো উদ্যোগগুলো দীর্ঘমেয়াদে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। একই সঙ্গে, তিনি সার্কসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সক্রিয় ছিলেন এবং বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের নীতি গ্রহণ করেন। যদিও ১৯৯৪ সালে রাজনৈতিক অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়, তিনি ১৯৯৬ সালে বিরোধী দলের দাবিতে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন, যা শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের এক নতুন সংস্কৃতি গড়ে দেয়।

২০০১ সালে বিপুল বিজয়ে ক্ষমতায় ফিরে খালেদা জিয়ার সরকার অবকাঠামো উন্নয়ন, বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি, কৃষি উৎপাদন সম্প্রসারণ এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাতে প্রাথমিক অগ্রগতি সাধন করে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ৯/১১-পরবর্তী সময়ে চরমপন্থা ও জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় তাঁর দৃঢ় অবস্থান প্রশংসিত হয়। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রাখা, দারিদ্র্য হ্রাস এবং গ্রামীণ উন্নয়ন তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদের সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হয়। ২০০৬ সালে মেয়াদ শেষে তিনি সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।

২০০৭ সালের জানুয়ারিতে রাজনৈতিক অচলাবস্থার প্রেক্ষাপটে সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসে। দুর্নীতির অভিযোগে ৩ সেপ্টেম্বর ২০০৭ খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করা হয়। “মাইনাস টু” পরিকল্পনার আওতায় তাঁকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়, কারণ কারাগার থেকেও তিনি দলের নেতৃত্বে অবিচল থাকেন। প্রায় এক বছর কারাবাস শেষে তিনি মুক্তি পান।

২০০৯ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর রাজনৈতিক বিরোধিতা দমনে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ছিল ঢাকার সেনানিবাসে অবস্থিত শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্মৃতি বিজরিত বাড়ি থেকে খালেদা জিয়াকে উচ্ছেদ। এটি ছিল শুধু তাঁর ব্যক্তিগত বাসস্থান নয়, বরং একটি ঐতিহাসিক ও পারিবারিক স্মৃতিচিহ্ন। উচ্ছেদের পরপরই বাড়িটি ভেঙে ফেলা হয়, যা বিএনপি সমর্থকদের কাছে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও শহীদের স্মৃতি মুছে ফেলার প্রচেষ্টা হিসেবে ধরা পড়ে।

২০১১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল হওয়ার পর ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দেন খালেদা জিয়া। তাঁর নেতৃত্বে বিএনপি ৭ দফা প্রস্তাব দেয়, যার মধ্যে ছিল নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন, নির্বাচনকালীন সংসদ ভেঙে দেওয়া, সেনা মোতায়েন, রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা। কিন্তু এসব প্রস্তাব সরকার প্রত্যাখ্যান করে এবং একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর আন্দোলন দমনে সরকারের দমননীতি তীব্র হয়। খালেদা জিয়া বারবার গৃহবন্দী হন, দলের বহু নেতা-কর্মী গ্রেফতার হন, এবং বিএনপির রাজনৈতিক কার্যক্রম সীমিত হয়ে পড়ে।

২০১৮ সালে বহুল আলোচিত জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে দণ্ডিত করে কারাগারে পাঠানো হয়। বিএনপি এবং আন্তর্জাতিক মহল এই মামলাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে আখ্যা দেয়। কারাগারে থাকাকালীন তাঁর স্বাস্থ্য দ্রুত অবনতি ঘটে। তিনি গুরুতর আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি জটিলতা এবং অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হন। উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার অনুরোধ করা হলেও সরকার তা অনুমোদন করে না। সীমিত চিকিৎসাসুবিধায় তিনি হাসপাতালে থাকেন, যা দেশ-বিদেশে সমালোচিত হয়। ২০২০ সালের মার্চে করোনা মহামারির সময় মানবিক বিবেচনায় দণ্ড স্থগিত করে মুক্তি দেওয়া হলেও শর্ত ছিল তিনি বাসায় থাকবেন এবং বিদেশে যেতে পারবেন না। কার্যত গুলশানের বাসায় তিনি দীর্ঘ গৃহবন্দী জীবন কাটান, যা তাঁর রাজনৈতিক সক্রিয়তাকে স্থবির করে দেয়।

খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক দর্শনের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল জনগণের ক্ষমতায়ন ও জবাবদিহিমূলক শাসন। তাঁর প্রস্তাবিত ধারণাগুলো ২০২৩ সালে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ৩১ দফা রাষ্ট্রসংস্কার রূপরেখা হিসেবে প্রকাশ করেন। এতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহাল, দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদসীমা, অনুচ্ছেদ ৭০ সংস্কার, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং প্রশাসনিক সংস্কারের প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত ছিল। মূলত এই প্রস্তাবই পরবর্তীতে জনমনে রাষ্ট্রসংস্কার আকাঙ্খার সৃষ্টি করে।

২০২৪ সালে রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে খালেদা জিয়ার কারামুক্তি ঘটে। দীর্ঘ কারাবাস ও গৃহবন্দী জীবনের পর জনতার উদ্দেশ্যে ভাষণে তিনি বলেন, “আমরা যে সংগ্রাম করেছি, তা প্রতিহিংসার জন্য নয়। এটি একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ার জন্য, যেখানে গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে।” এই বক্তব্যে তাঁর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও ক্ষমতার রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে জনগণের স্বার্থে কাজ করার অঙ্গীকার ফুটে ওঠে।

৮১ বছরে বেগম খালেদা জিয়ার জীবন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক অনন্য অধ্যায়। তিনি সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আপোষহীন লড়াই করেছেন, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছেন, জাতীয় উন্নয়নে অবদান রেখেছেন এবং রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে বছরের পর বছর কারাবাস ও গৃহবন্দী জীবন কাটিয়েছেন। আজ তাঁর জন্মদিনে তাঁকে শুধু বিএনপির নেতা হিসেবে নয়, বরং গণতন্ত্রের প্রতীক, নারীর সাহসিকতার মডেল এবং রাজনৈতিক দৃঢ়তার উদাহরণ হিসেবে স্মরণ করা হচ্ছে। তাঁর সংগ্রাম ও ত্যাগ প্রমাণ করে, প্রতিকূলতার মুখেও ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ানো সম্ভব, যদি নেতৃত্বে থাকে অদম্য সাহস, দৃঢ় বিশ্বাস এবং জনগণের প্রতি অবিচল দায়বদ্ধতা।


‘জাতির পিতা’ নয়, মুজিববাদ ফ্যাসিবাদ: নাহিদ ইসলাম

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ১৫ ১৮:১৯:০৬
‘জাতির পিতা’ নয়, মুজিববাদ ফ্যাসিবাদ: নাহিদ ইসলাম
ছবিঃ সংগৃহীত

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, তাদের সংগ্রাম কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে নয়, বরং ফ্যাসিস্ট আদর্শ ও শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে। শুক্রবার (১৫ আগস্ট) বিকেলে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত এক পোস্টে তিনি এই মন্তব্য করেন।

নাহিদ ইসলাম লিখেছেন, বাংলাদেশ কোনো ব্যক্তির সম্পত্তি নয়, এটি জনগণের রাষ্ট্র। শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘জাতির জনক’ হিসেবে স্বীকৃতি না দেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, স্বাধীনতা অর্জনে মুজিবুর রহমানের ভূমিকা ও ত্যাগকে স্বীকার করলেও, তার শাসনামলে সংঘটিত জাতীয় ট্র্যাজেডিও সমানভাবে স্মরণ করা জরুরি। তার ভাষায়, মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ভারতের একটি কার্যত উপনিবেশে পরিণত হয়েছিল; ১৯৭২ সালে জনগণের ওপর জনবিরোধী সংবিধান চাপিয়ে দেওয়া হয়, যা লুটপাট, রাজনৈতিক হত্যা, একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠা ও একনায়কতন্ত্রের ভিত্তি স্থাপন করে।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্ট রাজনীতির আড়ালে ‘মুজিব পূজা’ ও ‘মুক্তিযুদ্ধ পূজা’ আসলে রাজনৈতিক মূর্তি পূজার একটি রূপ, যা জনগণের ওপর দমন-পীড়ন চালায়, রাষ্ট্রের সম্পদ লুট করে এবং নাগরিকদের শ্রেণিভুক্ত করে। নাহিদ ইসলামের মতে, এটি গণতন্ত্রের ছদ্মবেশে আধুনিক জমিদারির উদাহরণ ছাড়া আর কিছু নয়। মুক্তিযুদ্ধ ছিল সবার সংগ্রাম, কিন্তু কয়েক দশক ধরে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশকে নিজেদের পৈতৃক সম্পত্তি হিসেবে ব্যবহার করেছে এবং মুজিবুর রহমানের নামকে দুর্নীতি ও দমননীতির ন্যায্যতা দেওয়ার হাতিয়ার বানিয়েছে।

২০২৪ সালের জনগণের বিদ্রোহ প্রসঙ্গে নাহিদ ইসলাম বলেন, এই গণআন্দোলনই দেশের জমিদারি ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে। ভবিষ্যতে আর কোনো ব্যক্তি, পরিবার বা মতাদর্শ যেন নাগরিকদের অধিকার কেড়ে নিতে বা বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদ চাপিয়ে দিতে না পারে, সেটিই এখন প্রধান লক্ষ্য। তার ভাষায়, ‘জাতির পিতা’ শিরোনাম কোনো ইতিহাস নয়, বরং এটি বৈষম্য ও রাষ্ট্রের একচেটিয়া শাসনের একটি প্রতীক। বাংলাদেশ সকল নাগরিকের, এখানে কোনো ব্যক্তির জন্ম বা রাজনৈতিক উত্তরাধিকারের কারণে মালিকানা দাবি করার সুযোগ নেই।

নাহিদ ইসলাম তার পোস্টে ‘মুজিববাদ’কে একটি ফ্যাসিস্ট মতাদর্শ হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, এর মাধ্যমে গুম, হত্যা, ধর্ষণ, মানবাধিকার লঙ্ঘন, রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাট করে বিদেশে পাচার, ইসলামোফোবিয়া, সাম্প্রদায়িকতা, সংখ্যালঘুদের ভূমি দখল এবং জাতীয় সার্বভৌমত্ব বিক্রির মতো কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। তার দাবি, ১৬ বছর ধরে মুজিবকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে এবং মূর্তি ও প্রতীকীর আড়ালে অপহরণ, গণহত্যা, হত্যা ও লুটপাটের সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

তিনি সতর্ক করে বলেন, মুজিববাদ একটি জীবন্ত বিপদ, যা রাজনৈতিক, আদর্শিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিরোধের মাধ্যমে পরাজিত করতে হবে। নাহিদ ইসলামের মতে, তাদের সংগ্রাম একটি সমঅধিকারভিত্তিক গণপ্রজাতন্ত্র গড়ার জন্য, যেখানে কোনো দল, বংশ বা নেতা জনগণের উপরে অবস্থান করবে না।

-রফিক


শেখ মুজিবুর রহমানের ৫০তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ 

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ১৫ ১৪:২২:০৬
শেখ মুজিবুর রহমানের ৫০তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ 

আজ ১৫ আগস্ট, বাংলাদেশের ১ম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের ৫০তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৭৫ সালের এই দিনে মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তাদের একাংশের নেতৃত্বে সংঘটিত অভ্যুত্থানে সপরিবারে নিহত হন তিনি। ওই দিনের হত্যাযজ্ঞে তার নিকটাত্মীয়সহ মোট ২৬ জন প্রাণ হারান। বিদেশে অবস্থান করায় তার দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা, প্রাণে বেঁচে যান।

১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধ শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বেই সংঘটিত হয়। তবে পুরো মুক্তিযুদ্ধকাল তিনি পশ্চিম পাকিস্তানে বন্দি ছিলেন। মুক্তির পর ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরে তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

তবে স্বাধীনতার মাত্র তিন বছর পর, ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি তিনি দেশের সব রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করে বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল) প্রতিষ্ঠা করেন। এর মাধ্যমে বহুদলীয় গণতন্ত্রের ধারা বন্ধ হয়ে যায় এবং অতীত জীবনে গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রামকারী এই নেতা নিজেকে কার্যত আজীবনের জন্য রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, একদলীয় শাসনব্যবস্থা, সীমাহীন দুর্নীতি এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি ১৫ আগস্টের ঘটনার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এমনকি শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হওয়ার পর দেশের কোথাও তাৎক্ষণিক কোনো গণবিক্ষোভ বা প্রতিবাদ দেখা যায়নি, যা সে সময়ের রাজনৈতিক পরিস্থিতির জটিলতাকে স্পষ্ট করে। তবে স্বাধীনতা সংগ্রামে তাঁর সীমাহীন ত্যাগ ও বলিষ্ঠ্য নেতৃত্ব, বাংলাদেশের অভ্যূদয়ের ইতিহাসে তাকে অমর করে রাখবে।

পাঠকের মতামত:

১৪ আগস্ট সেরা দশ লেনদেনকারী শেয়ার

১৪ আগস্ট সেরা দশ লেনদেনকারী শেয়ার

সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনের তালিকায় শীর্ষস্থান দখল করেছে ওরিয়ন ইনফিউশন... বিস্তারিত