৬ দিনে রেমিট্যান্সে রেকর্ড গতি!

অর্থনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ০৭ ১৯:১০:৫৭
৬ দিনে রেমিট্যান্সে রেকর্ড গতি!

চলতি অর্থবছরের সূচনালগ্নেই প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স প্রবাহে এক দৃশ্যমান ইতিবাচক গতি লক্ষ করা যাচ্ছে, যা দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে নতুন আশাবাদের ইঙ্গিত দিচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জুলাই মাসের প্রথম ছয় দিনে (১-৬ জুলাই) দেশে মোট ৪২৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে।

এই অঙ্কটি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১৫.৩৪ শতাংশ বেশি। ২০২৪ সালের ১-৬ জুলাই দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ৩৭১ মিলিয়ন ডলার। সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো, কেবল ৩ থেকে ৬ জুলাই এই তিন দিনেই এসেছে ২২২ মিলিয়ন ডলার, যা রেমিট্যান্স প্রবাহে গতি এবং ঘনত্ব দুটিই নির্দেশ করে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই প্রবৃদ্ধির পেছনে রয়েছে কয়েকটি সমন্বিত কারণ। সর্বপ্রথম, হুন্ডি চক্র বা অনানুষ্ঠানিক পথে অর্থ পাঠানো রোধে সরকারের কড়া নজরদারি এবং অর্থনৈতিক গোয়েন্দা কার্যক্রম সম্প্রসারিত হওয়ায় প্রবাসীরা এখন ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার করতে আগ্রহী হচ্ছেন।

দ্বিতীয়ত, ব্যাংকিং মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠালে সরকার প্রদত্ত ২.৫ শতাংশ নগদ প্রণোদনার সুবিধা এখন বাস্তব অর্থনৈতিক সুফল হিসেবে কাজ করছে। অনেক প্রবাসী এখন বৈধপথে টাকা পাঠিয়ে সেই বাড়তি সুবিধা গ্রহণ করছেন, যা আগে হুন্ডি ব্যবস্থার কারণে বঞ্চিত হতেন।

তৃতীয়ত, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন গন্তব্যে বাংলাদেশি শ্রমিকদের কর্মসংস্থান পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্থিতিশীল ও বিস্তৃত হচ্ছে। করোনাপরবর্তী শ্রমবাজারে বাংলাদেশিদের চাহিদা বেড়েছে, যার ফলে রেমিট্যান্সের প্রবাহে কাঠামোগত উন্নয়ন ঘটছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, “বর্তমানে প্রবাসীরা বৈধপথে অর্থ পাঠাতে আগ্রহী হচ্ছেন। ঈদ-পরবর্তী সময়ে এই প্রবাহ আরও বেগবান হয়েছে, যা রিজার্ভ বৃদ্ধিতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।”

রেমিট্যান্স বাংলাদেশের বৈদেশিক আয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎসগুলোর একটি। এটি শুধু আমদানি ব্যয় সামলাতে নয়, দেশের সার্বিক আর্থিক ভারসাম্য বজায় রাখতেও বড় ভূমিকা রাখে।

অর্থনীতিবিদদের মতে, জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে এই প্রবৃদ্ধি পুরো অর্থবছরের জন্য একটি শুভ সূচনা হিসেবে ধরা যেতে পারে। কারণ চলতি অর্থবছরের শুরুতেই যদি রেমিট্যান্স প্রবাহে এমন গতি বজায় থাকে, তবে বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা অর্জন তুলনামূলক সহজ হবে এবং মুদ্রা বাজারে চাপ হ্রাস পাবে।

তারা আরও বলেন, রেমিট্যান্স প্রবাহ কেবল পরিসংখ্যানগত অগ্রগতি নয় এটি জনগণের মধ্যে সরকারের প্রতি আস্থারও প্রতিফলন। বৈদেশিক আয়ের ধারাবাহিক ও বৈধ প্রবাহ সরকারকে রাজস্ব ও মুদ্রানীতি পরিকল্পনায় আরও শক্ত ভিত্তি তৈরি করতে সাহায্য করবে।

অতএব, প্রবাসীদের এই আস্থা ধরে রাখতে সরকার ও ব্যাংকিং খাতের দায়িত্ব আরও বাড়ছে। প্রণোদনার নিয়মাবলি আরও সরল, জবাবদিহিমূলক ও প্রবাসীবান্ধব করতে পারলে ভবিষ্যতে রেমিট্যান্স প্রবাহ আরও বাড়বে বলে আশা করা যায়।

এই ইতিবাচক সূচনার মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হচ্ছে দেশের অর্থনীতির অন্যতম স্তম্ভ হিসেবে প্রবাসী আয় এখনও শক্তভাবে দাঁড়িয়ে আছে এবং সঠিক নীতি ও তদারকির মাধ্যমে তা আরও বেগবান করা সম্ভব।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ