যুক্তরাষ্ট্র হামলা করলে মার্কিন ঘাঁটিতে একযোগে আঘাত: ইরানের হুঁশিয়ারি

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ১২ ১৩:৩২:৩৯
যুক্তরাষ্ট্র হামলা করলে মার্কিন ঘাঁটিতে একযোগে আঘাত: ইরানের হুঁশিয়ারি

তেহরানের পরমাণু কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ওয়াশিংটন সামরিক আগ্রাসনের পথে হাঁটলে তার ভয়াবহ পরিণতির জন্য প্রস্তুত থাকতে যুক্তরাষ্ট্রকে হুঁশিয়ার করে দিয়েছে ইরান। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আজিজ নাসিরজাদেহ এক কঠোর বক্তব্যে বলেন, ইরানের ওপর হামলার চেষ্টা চালালে মধ্যপ্রাচ্যের প্রতিটি মার্কিন ঘাঁটি হবে তাদের পাল্টা আঘাতের লক্ষ্যবস্তু।

তিনি বলেন, “আমাদের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা এখন এমন অবস্থানে পৌঁছেছে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ চাপিয়ে দিতে চাইলে তাদের ক্ষয়ক্ষতি আমাদের চেয়ে অনেক বেশি হবে। মার্কিন ঘাঁটিগুলো আমাদের ক্ষেপণাস্ত্রের আওতায় রয়েছে, এবং প্রয়োজন হলে একযোগে সেখানে হামলা চালাতে আমরা প্রস্তুত।”

এ মন্তব্যের প্রেক্ষাপট তৈরি হয় মার্কিন কংগ্রেসে ইউএস সেন্ট্রাল কমান্ডের প্রধান জেনারেল মাইকেল কুরিল্লার দেওয়া এক বক্তব্যকে ঘিরে। সেখানে তিনি বলেন, ইরান যদি পরমাণু কর্মসূচি চালিয়ে যেতে চায় এবং কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়, তাহলে সামরিক বিকল্পও বিবেচনায় রয়েছে ওয়াশিংটনের।

নাসিরজাদেহ এর জবাবে বলেন, “গত কয়েক বছরে ইরান তার সামরিক বাহিনীর প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি ও অস্ত্রভাণ্ডারে বড় রকমের অগ্রগতি করেছে। সম্ভাব্য যেকোনো সংঘাত মোকাবিলায় আমাদের বাহিনী সম্পূর্ণ প্রস্তুত এবং সজ্জিত।”

উল্লেখ্য, ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে গত এক দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্বের মধ্যে তীব্র উদ্বেগ বিরাজ করছে। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, ইরান শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক শক্তির আড়ালে গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে ২০১৫ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার নেতৃত্বে ‘জয়েন্ট কমপ্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন’ (জেসিপিওএ) নামক একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যার মাধ্যমে ইরানকে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধিকরণ সীমিত করতে রাজি করানো হয়েছিল।

তবে, ২০১৭ সালে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় এসে যুক্তরাষ্ট্রকে ঐ চুক্তি থেকে একতরফাভাবে প্রত্যাহার করে নেন, ফলে চুক্তিটি কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়ে। এরপর থেকেই ইরান আবার পরমাণু কর্মসূচি জোরদার করতে থাকে।

২০২৫ সালের শুরুর দিকে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (IAEA) জানায়, ইরান ইতোমধ্যে ৬০ শতাংশ মাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম মজুত করেছে। এই ইউরেনিয়াম ৯০ শতাংশে উন্নীত করা হলে তা সহজেই পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে ব্যবহৃত হতে পারে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে সংস্থাটি।

এ পরিস্থিতিতে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে উত্তেজনা প্রশমনে ওমানের মধ্যস্থতায় কিছু সংলাপ শুরু হলেও, তা এখনো স্থায়ী সমাধানে পৌঁছায়নি।

ইরান স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে কূটনীতি ব্যর্থ হলে তারা শুধু আত্মরক্ষা নয়, আগ্রাসনের জবাবে পাল্টা হামলারও প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় এই সংকট নতুন করে অস্থিরতা বাড়াতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা।

-রফিক, নিজস্ব প্রতিবেদক

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

একজন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ, সামাজিক ব্যবসার পথপ্রদর্শক এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণের নেতৃত্বদানকারী রাষ্ট্রনায়ক—এই তিনটি পরিচয়ই এখন সমভাবে প্রযোজ্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের... বিস্তারিত