'ভাড়াটে টোকাই' দিয়ে চলে দল? আওয়ামী লীগ নিয়ে প্রেস সচিবের ফেসবুক পোস্ট

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ১৫ ১১:৪২:৫১
'ভাড়াটে টোকাই' দিয়ে চলে দল? আওয়ামী লীগ নিয়ে প্রেস সচিবের ফেসবুক পোস্ট
ছবিঃ সংগৃহীত

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এখন একটি ফেসবুক-নির্ভর প্রতিবাদী দলে পরিণত হয়েছে, যাদের মাঠে প্রকৃত সাংগঠনিক শক্তি খুবই কম। শনিবার সকালে তিনি নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক পোস্টে এই মন্তব্য করেন।

ওই পোস্টে তিনি লেখেন, সাম্প্রতিক তিনটি ঘটনা ফেব্রুয়ারির নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হবে বলে তার বিশ্বাসকে আরও শক্তিশালী করেছে। তিনি এমনও মনে করেন যে, এই নির্বাচন সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

শফিকুল আলম তার প্রথম যুক্তি হিসেবে বিএনপির মনোনয়ন প্রক্রিয়ার কথা উল্লেখ করেন। তিনি লেখেন, বিএনপির সংসদীয় প্রার্থীদের তালিকা ঘোষণা শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে। যদিও একটি ব্যাপক আশঙ্কা ছিল যে, তালিকা ঘোষণার পর দলে বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে। অনেকের ধারণা ছিল, শত শত বিদ্রোহী প্রার্থী দলের এই সিদ্ধান্ত মেনে নেবেন না এবং তারা বিক্ষোভে নামতে পারেন। এমনকি, আনুষ্ঠানিকভাবে মনোনীত প্রার্থীদের সমর্থকদের সাথে তাদের সংঘর্ষও হতে পারে।

কিন্তু প্রেস সচিবের মতে, এক-দুটি ছোট ঘটনা ছাড়া পুরো প্রক্রিয়াটি আশ্চর্যজনকভাবে শান্ত ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। তিনি মনে করেন, এটি প্রমাণ করে যে বিএনপি নেতৃত্ব যথেষ্ট প্রস্তুতি নিয়ে এবং পরিকল্পনা করেই এগিয়েছে। মনোনয়নের এই ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা ইঙ্গিত দেয় যে, নির্বাচনী প্রচারণা বা নির্বাচনের সময় দলের ভেতরে বড় ধরনের সংঘর্ষের সম্ভাবনা খুবই কম।

দ্বিতীয় যুক্তিতে শফিকুল আলম আওয়ামী লীগের সক্ষমতা নিয়ে পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন। তিনি লেখেন, তিনি আওয়ামী লীগের সক্ষমতার একটি স্পষ্ট সীমা দেখতে পাচ্ছেন, যা তার মতে 'বেশ ছোট'। তিনি উল্লেখ করেন, আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছে যে তাদের একটি বিস্তৃত তৃণমূল নেটওয়ার্ক রয়েছে, যা যেকোনো নির্বাচন ব্যাহত করার মতো শক্তিশালী। কিন্তু তার মতে, গত কয়েক দিনের ঘটনাপ্রবাহ প্রমাণ করে দিয়েছে যে দলটির বাস্তব সংগঠিত শক্তি আসলে কতটা সীমিত।

শফিকুল আলম মনে করেন, দলটি এখন 'ভাড়াটে টোকাই-ধরনের' ক্ষুদ্র দুষ্কৃতকারী গোষ্ঠীর ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে, যারা শুধু ফাঁকা বাসে আগুন দেওয়া, ৩০ সেকেন্ডের 'ঝটিকা মিছিল' করা, কিংবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে 'এআই শাটডাউন'-এর মতো প্রচারণা চালাতে পারে।

তিনি আরও যোগ করেন, "প্রকৃত অর্থে, যার (আওয়ামী লীগের) মাঠে প্রকৃত সাংগঠনিক শক্তি খুব কম।" শফিকুল আলম তার দীর্ঘদিনের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে বলেন, দলটির তৃণমূল কাঠামো হয় ভেঙে পড়েছে অথবা প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বারা নিমজ্জিত হয়েছে। এই বাস্তবতা বিবেচনা করে, তিনি আসন্ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষে কোনো অস্থিরতা বা বিঘ্ন সৃষ্টি করার সম্ভাবনা 'অত্যন্ত ক্ষীণ' বলে মনে করেন।

সবশেষে, তৃতীয় যুক্তি হিসেবে প্রেস সচিব পুলিশ, নিরাপত্তা বাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসনের প্রস্তুতির কথা উল্লেখ করেন। তিনি লেখেন, সাম্প্রতিক সময়ের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির স্থিতিশীলতা দেখেই বোঝা যায় যে, পুলিশ, নিরাপত্তা বাহিনী এবং স্থানীয় প্রশাসন (ডিসি, এসপি, ইউএনও, ওসি) এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী ও সংগঠিত।

শফিকুল আলম জানান, সবচেয়ে দক্ষ ও সক্ষম কর্মকর্তাদের নির্বাচন প্রক্রিয়া তদারকির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি দৃঢ় বিশ্বাস প্রকাশ করে বলেন, "আমার দৃঢ় বিশ্বাস, তারা জাতির প্রত্যাশিত শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খল নির্বাচন সম্পন্ন করতে সক্ষম হবে।"


অস্বাস্থ্যকর বায়ুতে ঢাকা আবারও শীর্ষের কাতারে

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ১৫ ১১:১৫:১৭
অস্বাস্থ্যকর বায়ুতে ঢাকা আবারও শীর্ষের কাতারে
ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বজুড়ে দ্রুতগতিতে বাড়তে থাকা বায়ুদূষণের বিস্তার থেকে রেহাই পাচ্ছে না বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। বহু বছর ধরেই মেগাসিটিটি বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত নগরগুলোর মধ্যে একটি হিসেবে চিহ্নিত।

সাম্প্রতিক সময়ে বায়ুমান কিছুটা উন্নতি দেখা গেলেও গত দুই দিন ধরে ঢাকার আকাশে আবারও ঘনিয়ে এসেছে দূষণের স্তর। শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আন্তর্জাতিক বায়ুমান পর্যবেক্ষণ সংস্থা আইকিউএয়ারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১৭৯ একিউআই স্কোর নিয়ে বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় ঢাকার অবস্থান চতুর্থ।

‘অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ এই মাত্রা নাগরিকদের শ্বাসতন্ত্র, চোখ ও হৃদ্‌যন্ত্রের ওপর তাৎক্ষণিক এবং দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে। একই সময়ে ৫১১ স্কোর নিয়ে শীর্ষ দূষিত শহরের তালিকায় রয়েছে ভারতের রাজধানী দিল্লি, যা ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ মাত্রার বায়ুদূষণ নির্দেশ করে। দ্বিতীয় স্থানে পাকিস্তানের লাহোর (২৭৪), তৃতীয় স্থানে ভারতের কলকাতা (১৯৯) এবং পঞ্চমে ইরাকের বাগদাদ (১৭৫)। একিউআই স্কোর ১৫১ থেকে ২০০ ‘অস্বাস্থ্যকর’, ২০১–৩০০ ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ এবং ৩০১-এর ওপরে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ যা সরাসরি জনস্বাস্থ্যের ওপর গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা শিশু, প্রবীণ, শ্বাসতন্ত্রের রোগী এবং দৈনিক বাইরে কাজ করা জনগোষ্ঠীকে এই পরিস্থিতিতে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিচ্ছেন। দ্রুত নগরায়ণ, যানবাহনের নির্গমন, নির্মাণকাজের ধুলা এবং শিল্পকারখানার অনিয়ন্ত্রিত কার্যক্রম এই বহুমুখী কারণগুলো প্রতিদিন ঢাকার বায়ুমানকে আরও সংকটগ্রস্ত করে তুলছে। ফলে দূষণ কমাতে সমন্বিত নীতিমালা, কঠোর নিয়ন্ত্রণ এবং টেকসই নগর ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয়তা এখন আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।


নির্বাচনী ট্রেন্ড শুরু ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন নিয়ে সব সংশয় কাটল

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ১৫ ০৯:০৪:২৭
নির্বাচনী ট্রেন্ড শুরু ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন নিয়ে সব সংশয় কাটল
ছবিঃ সংগৃহীত

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূসের ভাষণের মাধ্যমে দেশের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিদ্যমান সংশয় অনেকটা কেটে গেছে। জুলাই সনদের গেজেট প্রকাশিত হওয়া এবং নির্বাচনের দিনেই গণভোট অনুষ্ঠানের বিষয়টি চূড়ান্ত হওয়ায় আপাতদৃষ্টিতে নির্বাচন নিয়ে আর কোনো ধোঁয়াশা নেই। সবকিছু মিলে দেশবাসীর সামনে এখন শুধুই নির্বাচন। রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারাও একমত হয়েছেন যে দেশ ও জাতি এখন 'নির্বাচনি ট্রেনে' উঠেছে।

ধোঁয়াশা কাটল ঘোষণা চূড়ান্ত

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূসের ভাষণের মাধ্যমে নির্বাচনের সব ধোঁয়াশা কেটে গেছে। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য তাদের সরাসরি ভোটে জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্র প্রস্তুত হতে যাচ্ছে।

সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান পরিষ্কার ভাষায় বলেছেন, ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচন ছাড়া অন্য কিছুতে জনমানুষের আগ্রহ নেই। অন্তর্বর্তী সরকার দেশে আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করেছে।

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, "জাতি এখন নির্বাচনি ট্রেনে উঠে গেছে। ইনশাআল্লাহ ফেব্রুয়ারিতেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নিয়ে আর কোনো সংশয় নেই।"

দলগুলোর নির্বাচনি প্রস্তুতি

প্রতিটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলকে এখন জনগণের মুখোমুখি হওয়ার প্রস্তুতি নিতে হবে। সারা দেশে নির্বাচনি ঢেউ শুরু হয়েছে।

ইতিমধ্যে ঘোষিত বিএনপির ২৩৭ জন প্রার্থী তাঁদের নির্বাচনি এলাকায় মাঠে নেমে গেছেন এবং ভোটারদের মন জয় করতে চষে বেড়াচ্ছেন। বাকি ৬৩টি আসনে প্রার্থী চূড়ান্তের বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। জোটের শরিক ও সমমনাদের সঙ্গে আসন সমঝোতার প্রক্রিয়াও শেষের পথে।

জামায়াতে ইসলামী আগে থেকেই মাঠে আছে। নানা ইস্যু নিয়ে মাঠ গরমের চেষ্টা করলেও ভিতরে ভিতরে নির্বাচনি প্রস্তুতির কাজ শুরু করেছে এই ইসলামি দলটি।

জাতীয় নাগরিক পার্টিও (এনসিপি) বিভিন্ন এলাকায় তাদের দলীয় মনোনয়ন দেওয়া শুরু করেছে। ইতোমধ্যেই দলীয় প্রধান নাহিদ ইসলামসহ শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন নেতার মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হয়েছে।

অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতারাও তাঁদের স্ব-স্ব জোট থেকে নিজেদের মনোনয়ন চূড়ান্ত করার পথে এবং অনেকে নির্বাচনি মাঠে নেমে গেছেন।

নেতাদের প্রতিক্রিয়া

অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান (বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা) বলেন, "রাজনৈতিক দল এবং দেশের জনগণ এখন নির্বাচনমুখী। তারা এখন নির্বাচন ছাড়া অন্য কিছু নিয়ে চিন্তা করছে না। বিগত আঠারোটি বছর মানুষ তাদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত ছিল। মানুষ এখন ফ্যাসিস্টমুক্ত বাংলাদেশে স্বস্তিতে নিঃশ্বাস নিতে পারছে। তারা জাতীয় নির্বাচনে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিতে উদগ্রীব হয়ে আছে।"

মাহমুদুর রহমান মান্না (নাগরিক ঐক্যের সভাপতি) বলেন, "জাতীয় নির্বাচন নিয়ে মেঘ অনেকাংশেই কেটে গেছে। আমরা বিএনপির সঙ্গে যৌথভাবে নির্বাচন করছি। জোট আমাকে বগুড়া-২ এলাকার প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছে। বগুড়ার উন্নয়নে এলাকার কৃতী সন্তান তারেক রহমানের হাত ধরে কাজ করে যাব।"

সাইফুল হক (বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক) বলেন, জাতীয় নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা অনেকাংশেই কেটে গেছে। তবে ষড়যন্ত্র এখনো থামেনি, এ ব্যাপারে সবাইকে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে।

জোনায়েদ সাকি (গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী) বলেন, "জাতীয় নির্বাচন ফেব্রুয়ারির মধ্যেই হতে হবে। যারা নির্বাচন, সংস্কার, বিচারের পথরেখাকে ভূলুণ্ঠিত করতে চান, তারা বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে যাবেন।"

নুরুল হক নুর (গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি) বলেন, "জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট নিয়ে সব সংশয় কেটে গেছে। একই দিনে নির্বাচন ও গণভোট আয়োজনই সঠিক সিদ্ধান্ত। তাই ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন প্রশ্নে সব দলকে এক থাকা জরুরি।"


শীতের তীব্রতা বাড়লেও উষ্ণ হলো মন পর্যটন আর অতিথি পাখির ভিড়ে মুখর এখন বাংলাদেশ

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ১৫ ০৮:৫০:১৬
শীতের তীব্রতা বাড়লেও উষ্ণ হলো মন পর্যটন আর অতিথি পাখির ভিড়ে মুখর এখন বাংলাদেশ
প্রকৃতিতে এখন হেমন্তকাল, টের পাওয়া যাচ্ছে শীতের আমেজ। বিশেষ করে গ্রামবাংলার এই শুষ্ক প্রকৃতি, ভোর ও সন্ধ্যায় নেমে আসা হালকা কুয়াশা জানান দিচ্ছে শীত আসছে। ছবিটি রাজধানীর অদূরে কেরানীগঞ্জের কলাতিয়া গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আব্দুল গনি

বাতাসে এখন হিম হিম স্পর্শ। শিশির ভেজা ঘাসের ডগায় মুক্তোর দানা। সন্ধ্যা-সকাল কুয়াশার চাদর মুড়ে দিচ্ছে চারপাশ। প্রকৃতির শীতল পরশ নিয়ে আসছে শীত। পৌষ-মাঘ শীতকাল হলেও অগ্রহায়ণ বা হেমন্ত হলো শীতের মোহনা। এই সময় রিক্ত প্রকৃতিকে আমরা নতুন করে আবিষ্কার করি। দিনের সূর্য ঢেলে দেয় মায়াবি রোদ, আর রাতের আকাশে থাকে বুকভরা রূপালি তারাখচিত শুভ্রতা।

শীতের আগমনী বার্তা ও গ্রামীণ উৎসব

ষড়ঋতুর বাংলাদেশে শীত পঞ্চম ঋতু। শরতের স্নিগ্ধতা পেরিয়ে আসে হেমন্ত, আর এই নবান্নের ঋতুর হাত ধরেই আসে শীতকাল। খালবিল থেকে বর্ষার জল শুকাতে শুরু করেছে। গ্রামাঞ্চলে শুরু হয় মাছ ধরার উৎসব।

মাঠে মাঠে সোনালি ধান গোলায় ভরার উৎসবে মেতে থাকা মানুষের শরীরে লাগে শীতের কাঁপন। নতুন ধানের পিঠা-পায়েস, খেজুরের মিষ্টি রস আর পাটালি গুড় এই ঋতুর অনিবার্য অংশ। লেপ-কম্বলের উত্তাপ, কুয়াশাঢাকা ভোরে আনন্দ-কষ্টের মিশেল নিয়ে শীতকাল আমাদের জীবনে উপস্থিত হয়।

খেজুরের রসে পাটকাঠি ডুবিয়ে গ্রামের ছেলেমেয়েদের চুকচুক করে রস খাওয়ার সেই দৃশ্য আজও বদলায়নি।

জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্ভোগ

সামপ্রতিক বছরগুলোতে পঞ্জিকার অনুশাসন মানছে না প্রকৃতি। গ্রিনহাউজ এফেক্টের কারণে শীত-গ্রীষ্মকে আলাদা করে চেনা কঠিন হয়ে উঠছে। শীত জেঁকে বসতে না বসতেই বসন্ত এসে প্রকৃতিকে অধিকার করে নিচ্ছে। তবে শীতের প্রচণ্ড দাপট কখনো কখনো আমাদের জীবনকে আড়ষ্ট করে তুললেও বাড়িয়ে দেয় মনের সজিবতা।

শীতের সময় তুমুল শৈত্যপ্রবাহ মানুষের জীবনে বয়ে আনে দুর্ভোগ। মাঘ মাসের তীব্র শীতের দিনগুলোতে তাপমাত্রা অস্বাভাবিক হারে কমে যায়। এ সময় উত্তরাঞ্চলসহ কয়েকটি জেলায় তীব্র শৈত্যপ্রবাহ দেখা যায়, যার ফলে খেটে খাওয়া মানুষের জীবনে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ নেমে আসে।

শীতের তীব্রতা থেকে বাঁচার জন্য মানুষজন গরম পোশাক পরিধান করলেও দরিদ্র মানুষের জীবনে শীত আসে অভিশাপ হয়ে। শীত নিবারণের জন্য তাদের তেমন গরম পোশাক থাকে না।

সাহিত্যে শীতের প্রভাব

বাংলা কবিতায় শীত প্রবেশ করেছে মধ্যযুগে বিশেষ করে মঙ্গলকাব্যে নায়িকার কষ্টের বর্ণনায়। আধুনিক কবিরাও শীতকালের বন্দনা করেছেন।

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন 'শীতের হাওয়া হঠাত্ ছুটে এলো...'। জসীম উদ্দীনের 'রাখাল ছেলে' কবিতায় শীতকে আমরা পাই আমাদের একান্ত নিজস্ব ঋতুরূপে।

প্রকৃতির কবি জীবনানন্দ দাশের কবিতায় ঘুরে ঘুরে আসে 'পউষের ভেজা ভোর', 'ঝরিছে শিশির' এবং 'পউষের শেষরাতে নিমপেঁচাটি'।

পিঠা-পুলি ও শাকসবজির প্রাচুর্য

বাঙালির শখের পিঠা-পুলি শুধু স্বাদে নয়, সংস্কৃতিরও ধারক। শীতকালে পাটিসাপটা, দুধকলি, ভাপা, চিতই, নকশীপিঠাসহ নানা ধরনের পিঠা খাওয়ার ধুম পড়ে যায়। খেজুরের রস, পাটালি গুড়, মোয়া, মুড়কি ছিল এক সময়ের অনিবার্য পদ।

শীতকাল মানেই গ্রামের জমিতে শীতকালীন শাক-সবজির প্রাচুর্য। এ সময় বাজার ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা, শিম, টম্যাটো, পালং শাক, লাল শাকসহ নানা জাতের টাটকা শাকসবজিতে ভরপুর থাকে।

বেড়ানো ও পরিযায়ী পাখির ভিড়

প্রকৃতিতে শীতের আগমনী বার্তার সঙ্গে সঙ্গে দেশের পর্যটন এলাকাগুলো মুখরিত হয়ে ওঠে। পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার, সেন্ট মার্টিন, কুয়াকাটা, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানের মতো পর্যটনস্পটগুলো এই মৌসুমে মুখর থাকে।

এছাড়াও উত্তর গোলার্ধের বরফে আচ্ছাদিত দেশসমূহ থেকে অতিথি পাখির আনাগোনায় মুখরিত হয়ে ওঠে বাংলার নদনদী, হাওর, ঝিল ও চরাঞ্চল। এদের মধ্যে নীলশির, লালশির, কালো হাঁসসহ প্রায় ১৫০ প্রজাতির পাখি রয়েছে।

শীতে রোগ-বালাইয়ের প্রকোপ

শীতকাল উপভোগ্য হলেও এই মৌসুমটাতে নানা রোগব্যাধির প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। ঠান্ডাজনিত সমস্যা যেমন সর্দি-কাশি, গলায় খুশখুশ ভাব, ভাইরাসজনিত জ্বরসহ ত্বকের রোগ একজিমা, চুলকানি ও স্ক্যাবিসের মতো চর্মরোগ দেখা দেয়।

সূত্র:ইত্তেফাক


আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না: প্রধান উপদেষ্টা ড ইউনূস

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ১৪ ১৪:৪৩:৫৪
আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না: প্রধান উপদেষ্টা ড ইউনূস
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে ব্রিটিশ মন্ত্রী জেনি চ্যাপম্যান। ছবি: ফেসবুক

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অধীনে কার্যক্রম স্থগিত থাকার কারণে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না।

বৃহস্পতিবার ১৩ নভেম্বর যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন মন্ত্রী ব্যারোনেস জেনি চ্যাপম্যানের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ মন্তব্য করেন। শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।

আওয়ামী লীগের নির্বাচন প্রসঙ্গ

প্রধান উপদেষ্টা ডক্টর ইউনূস জানান, কার্যক্রম স্থগিত হওয়ার পর নির্বাচন কমিশন আওয়ামী লীগকে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের তালিকা থেকেও বাদ দিয়েছে।

তিনি বলেন, আগের ১৬ বছরের 'দুঃশাসনের' সময় যে তিনটি বিকৃত নির্বাচনে অসংখ্য তরুণ ভোট দিতে পারেননি, এবার ১০ লাখ নতুন ভোটার প্রথমবার ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।

ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে উল্লেখ করে ডক্টর ইউনূস বলেন, নির্বাচন হবে অন্তর্ভুক্তিমূলক, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক; ভোটার উপস্থিতিও হবে ব্যাপক।

জুলাই সনদ ও রোহিঙ্গা সংকট

জুলাই সনদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি বাংলাদেশের জন্য 'এক নতুন সূচনা', যা গত বছরের জুলাই–আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া লাখো মানুষের আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত করবে।

রোহিঙ্গা সংকটের প্রসঙ্গে ডক্টর ইউনূস জানান, 'শিবিরের যুবকেরা আশাহীন হয়ে বড় হচ্ছে—রাগান্বিত এবং হতাশ। তাদের জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করা জরুরি।' তিনি বলেন, সরকার বৈধ চ্যানেলে বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়াতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

যুক্তরাজ্য মন্ত্রীর মন্তব্য ও দ্বিপাক্ষিক আলোচনা

বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে ব্রিটিশ মন্ত্রী জেনি চ্যাপম্যান প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বের প্রশংসা করেন এবং জুলাই সনদকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক সংলাপের গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি অবৈধ অভিবাসন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে নিরাপদ ও বৈধ অভিবাসন প্রক্রিয়ায় জোর দেওয়ার আহ্বান জানান।

বৈঠকে নির্বাচন ছাড়াও বাণিজ্য সম্প্রসারণ, অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ, রোহিঙ্গা সংকট এবং বিমান ও সামুদ্রিক খাতে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে সহযোগিতা জোরদার করার বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।

ইউনূস জানান, উপকূলীয় ও সামুদ্রিক গবেষণার জন্য বাংলাদেশ একটি ব্রিটিশ গবেষণা জাহাজ কিনছে। ব্রিটিশ মন্ত্রী জানান, এয়ারবাস ইন্টারন্যাশনালের প্রধান শিগগিরই বাংলাদেশ সফর করবেন।

বৈঠকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ডক্টর খলিলুর রহমান, এসডিজি কো-অর্ডিনেটর লামিয়া মোর্শেদ এবং ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক উপস্থিত ছিলেন।


আলী রীয়াজকে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী নিয়োগ: জুলাই সনদ বাস্তবায়নে নতুন সমীকরণ? 

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ১৩ ১৯:০০:৩২
আলী রীয়াজকে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী নিয়োগ: জুলাই সনদ বাস্তবায়নে নতুন সমীকরণ? 
অধ্যাপক আলী রীয়াজ

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের বিশেষ সহকারী হিসেবে নিয়োগ পেলেন সদ্য মেয়াদ শেষ হওয়া জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। বৃহস্পতিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি হওয়া প্রজ্ঞাপনে তাঁর নিয়োগের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়। মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদের সই করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে যে, বিশেষ সহকারীর দায়িত্ব পালনকালে আলী রীয়াজ উপদেষ্টার পদমর্যাদা, বেতন কাঠামো ও অন্যান্য সুবিধা ভোগ করবেন।

অধ্যাপক আলী রীয়াজের নিয়োগকে রাজনৈতিক মহল অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের বিশিষ্ট অধ্যাপক হিসেবে তিনি দীর্ঘদিন আন্তর্জাতিক রাজনীতি, গণতন্ত্র, রাষ্ট্রব্যবস্থা ও সুশাসন নিয়ে গবেষণার সাথে সম্পৃক্ত। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের সংবিধান সংস্কার কমিশন (National Reform Commission) এর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অসংখ্য সংলাপ, সনদপ্রণয়ন প্রক্রিয়া এবং জটিল মতভেদ নিরসনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। পরে তাঁকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি করা হয়, যেখানে তিনি জুলাই সনদ বাস্তবায়ন, গণভোট প্রক্রিয়া এবং রাজনৈতিক আস্থা পুনর্গঠনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।

৩১ অক্টোবর জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর নতুন রাজনৈতিক কাঠামো নির্মাণ, সংস্কার বাস্তবায়নের রোডম্যাপ এবং জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজন নিয়ে তীব্র রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে অধ্যাপক আলী রীয়াজকে বিশেষ সহকারী হিসেবে নিয়োগ বিশেষ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, চলমান রাজনৈতিক ধাঁধা, সংস্কারকেন্দ্রিক মতভেদ এবং জুলাই সনদের ভবিষ্যৎ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় প্রধান উপদেষ্টার অত্যন্ত কাছের একজন মস্তিষ্ক হিসেবে আলী রীয়াজকে এগিয়ে আনা একটি কৌশলগত পদক্ষেপ।

এ নিয়োগে স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন, গণভোটের কাঠামো, দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ গঠন এবং সংবিধান সংস্কার পরিষদ নিয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রধান উপদেষ্টা একটি অভিজ্ঞ, গবেষণা-নির্ভর এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নীতি–বিশ্লেষকের ওপর নির্ভর করতে চাইছেন। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তাঁর দীর্ঘ সংলাপ-অভিজ্ঞতা প্রধান উপদেষ্টার সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক হবে বলেই মনে করছে বিভিন্ন মহল।

অধ্যাপক আলী রীয়াজের নতুন ভূমিকা অন্তর্বর্তী সরকারের নীতি–চিন্তা কোন দিকে যাচ্ছে, জুলাই সনদের কোন অংশ কীভাবে বাস্তবায়িত হবে, এবং গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন একই দিনে আয়োজনের পরিকল্পনা কতটা বাস্তবসম্মত—এসব প্রশ্নের কেন্দ্রবিন্দুতেও তাঁকে নিয়ে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাঁর নেতৃত্বে রাজনৈতিক সংস্কার প্রক্রিয়া আরও বেগবান ও পদ্ধতিগত হতে পারে, এমন প্রত্যাশাও রয়েছে বিশ্লেষকদের একটি অংশের।

এদিকে রাজনৈতিক দলগুলোর অনেকেই নতুন এই নিয়োগকে সরকার–দল সম্পর্ক মেরামত, আস্থার সংকট কাটানো এবং জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছেন। অন্যদিকে সমালোচকরা বলছেন, রাজনৈতিক মেরুকরণের এই সময়টিতে সংলাপ-অভিজ্ঞ ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন একজন নীতি–বিশ্লেষককে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত করা সরকারের জন্য প্রয়োজনীয় ছিল।

অন্তর্বর্তী সরকারের রোডম্যাপ, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন, গণভোটের সম্ভাব্য তারিখ এবং সার্বিক রাজনৈতিক সংকটের সমাধানে এই নিয়োগ কী প্রভাব ফেলবে, এখন সেদিকেই নজর রাজনৈতিক মহলের।


অধ্যাপক আলী রীয়াজ প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী উপদেষ্টার পদমর্যাদা পেলেন

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ১৩ ১৮:৪৭:১৪
অধ্যাপক আলী রীয়াজ প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী উপদেষ্টার পদমর্যাদা পেলেন
ছবিঃ সংগৃহীত

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজকে উপদেষ্টা পদমর্যাদায় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। বৃহস্পতিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব ডক্টর শেখ আব্দুর রশীদের সই করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস অধ্যাপক আলী রীয়াজকে তাঁর বিশেষ সহকারী হিসেবে নিয়োগদান করেছেন।

বিশেষ সহকারী পদে অধিষ্ঠিত থাকাকালীন আলী রীয়াজ উপদেষ্টার পদমর্যাদা, বেতন-ভাতাদি ও আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্য হবেন।

আলী রীয়াজের পূর্বের ভূমিকা

অধ্যাপক আলী রীয়াজ পূর্বেও রাষ্ট্র সংস্কার প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।

তিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান পদে দায়িত্ব পান।

এরপর গত ফেব্রুয়ারিতে তাঁকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি করা হয়।


জুলাই সনদের গণভোট: ‘হ্যাঁ’ জিতলে কী হবে? জেনে নিন ৪টি পরিবর্তনের অঙ্গীকার

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ১৩ ১৮:৩৫:১০
জুলাই সনদের গণভোট: ‘হ্যাঁ’ জিতলে কী হবে? জেনে নিন ৪টি পরিবর্তনের অঙ্গীকার
ছবিঃ সংগৃহীত

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের জন্য গণভোটের দিন জনগণ ‘হ্যাঁ’ অথবা ‘না’ ভোট দেবে যে চারটি প্রশ্নের ভিত্তিতে, তা জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণের সময় তিনি এ বিষয়ে কথা বলেন।

গণভোটের প্রশ্ন ও শর্তাবলী

ড. ইউনূস বলেন, জুলাই সনদের আলোকে গণভোটের ব্যালটে উপস্থাপনীয় প্রশ্নও নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রশ্নটি হবে এরকম— “আপনি কি জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫ এবং জুলাই জাতীয় সনদে লিপিবদ্ধ সংবিধান সংস্কার সম্পর্কিত নিম্নলিখিত প্রস্তাবগুলোর প্রতি আপনার সম্মতি জ্ঞাপন করছেন?”

গণভোটের দিন এই চারটি বিষয়ের ওপর একটিমাত্র প্রশ্নে জনগণ তাদের মতামত জানাবেন:

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান

নির্বাচনকালীন সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান জুলাই সনদে বর্ণিত প্রক্রিয়ার আলোকে গঠন করা হবে।

দুই কক্ষ বিশিষ্ট সংসদ

আগামী সংসদ হবে দুই কক্ষ বিশিষ্ট। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে ১০০ জন সদস্য বিশিষ্ট একটি উচ্চকক্ষ গঠিত হবে এবং সংবিধান সংশোধন করতে হলে উচ্চকক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের অনুমোদন দরকার হবে।

সংস্কারের বাধ্যবাধকতা

সংসদে নারীর প্রতিনিধি বৃদ্ধি, বিরোধী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার ও সংসদীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচন, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সীমিতকরণ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধি, মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও স্থানীয় সরকারসহ বিভিন্ন বিষয়ে যে ৩০টি প্রস্তাবে জুলাই জাতীয় সনদে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য হয়েছে—সেগুলো বাস্তবায়নে আগামী নির্বাচনে বিজয়ী দলগুলো বাধ্য থাকবে।

অন্যান্য সংস্কার

জুলাই সনদে বর্ণিত অন্যান্য সংস্কার রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রুতি অনুসারে বাস্তবায়ন করা হবে।

সংবিধান সংস্কার পরিষদ

ড. ইউনূস বলেন, গণভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট ‘হ্যাঁ’ সূচক হলে আগামী সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত প্রতিনিধি নিয়ে একটি সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠিত হবে। এই প্রতিনিধিগণ একইসঙ্গে জাতীয় সংসদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।

তিনি আরও বলেন, পরিষদ তার প্রথম অধিবেশন শুরুর তারিখ হতে ১৮০ কার্যদিবসের মধ্যে সংবিধান সংস্কার করবে।

উচ্চকক্ষ সংবিধান সংস্কার সম্পন্ন হবার পর ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে সংসদ নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যানুপাতে উচ্চকক্ষ গঠন করা হবে। এর মেয়াদ হবে নিম্নকক্ষের শেষ কার্যদিবস পর্যন্ত।


জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও গনভোট প্রশ্নে জাতির উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টার পূর্ণাঙ্গ ভাষণ

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ১৩ ১৫:৫১:৫৩
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও গনভোট প্রশ্নে জাতির উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টার পূর্ণাঙ্গ ভাষণ

প্রিয় দেশবাসী, শিশু, কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী, ছাত্র-ছাত্রী, নারী-পুরুষ, নবীন-প্রবীণ সবাইকে আমার সালাম জানাচ্ছি।

আসসালামু আলাইকুম।

গত বছর আগস্ট মাসে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শক্তিবলে আমরা অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করেছিলাম। এরপর আমরা এখন আমাদের মেয়াদে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে উপনীত হয়েছি।

আমাদের সরকারের ওপর ন্যস্ত দায়িত্ব ছিল মূলত তিনটি। হত্যাকাণ্ডের বিচার করা, একটি জবাবদিহিমূলক ও কার্যকর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় উত্তরণের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কারের আয়োজন করা এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা।

আমরা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকালে তৎকালীন ফ্যাসিস্ট সরকারের নির্দেশে সংগঠিত হত্যাকাণ্ডের বিচারকাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। এই বিচারের উদ্দেশ্যে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাদের প্রথম রায় শীঘ্রই দিতে যাচ্ছে।ট্রাইব্যুনালে আরও কয়েকটি মামলার বিচার চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। সাধারণ ফৌজদারি আদালতগুলোতেও জুলাই হত্যাকাণ্ড সম্পর্কিত কিছু বিচারকাজ শুরু হয়েছে। আমরা একইসাথে দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো গুমের মতো নৃশংস অপরাধের বিচারকাজ শুরু করেছি।

আমি আনন্দের সঙ্গে আপনাদের জানাতে চাই যে সংস্কারের ক্ষেত্রেও আমরা ব্যাপক অগ্রগতি অর্জন করেছি। অন্তর্বর্তী সরকার নিজ উদ্যোগে বা বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবের ভিত্তিতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের কাজ সম্পন্ন করেছে। কিছু প্রস্তাবিত সংস্কারের কাজ এখনও চলমান আছে। অধ্যাদেশের মাধ্যমে বা বিদ্যমান আইন সংশোধন করে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, বিচার ব্যবস্থাপনা, আর্থিক খাতে স্বচ্ছতা, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি, ডিজিটালাইজেশন সম্প্রসারণ ও দুর্নীতি প্রতিরোধে বিভিন্ন সংস্কার সম্পন্ন করা হয়েছে। ভবিষ্যতে সুশাসনের জন্য এসব সংস্কার বড় ভূমিকা রাখবে বলে আমরা মনে করি। আশা করি, আগামী নির্বাচিত সরকার সংসদে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এসব সংস্কার গ্রহণ করবে।

আমাদের আরেকটি গুরুদায়িত্ব হচ্ছে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান। আমি ঘোষণা করেছি যে আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই নির্বাচন উৎসবমুখর, অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের জন্য আমরা সব প্রস্তুতি গ্রহণ করছি।

আমাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব আমরা সঠিকভাবে পালন করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি।

প্রিয় দেশবাসী,রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কারের প্রস্তাব তৈরির লক্ষ্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন নিরলসভাবে গত প্রায় নয় মাস ধরে কাজ করেছে। এসময় কমিশন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দীর্ঘ আলাপ-আলোচনা করেছে। অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে ধৈর্য্যসহকারে রাজনৈতিক দলগুলো কমিশন কর্তৃক উত্থাপিত বিভিন্ন সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেছেন। মতের পার্থক্য থাকলেও তা কমিয়ে আনার চেষ্টা করেছেন। অনেক বিষয়েই ঐকমত্যে আসতে পেরেছেন। দেশবাসী সরাসরি সম্প্রচারের মাধ্যমে এই পুরো কার্যক্রম দেখতে পেরেছেন। এটি বাংলাদেশের রাজনীতির ক্ষেত্রে তো বটেই, পৃথিবীর অনেক দেশের জন্য এক অভূতপূর্ব ঘটনা। এটি ভবিষ্যৎ রাজনীতির জন্যও আশাব্যঞ্জক। আমি ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের এবং রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃবৃন্দকে গণতান্ত্রিক চর্চার এই আসাধারণ আয়োজনকে সফল করার জন্য আবারও আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

ঐকমত্য কমিশনের প্রণীত জুলাই সনদে সংবিধান বিষয়ক ৩০টি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার প্রস্তাবে রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে ঐকমত্য তৈরি হয়েছে। এটি একটি ঐতিহাসিক অর্জন। কিছু প্রস্তাবে সামান্য ভিন্নমত আছে। বাকি অল্প কিছু প্রস্তাবে আপাতদৃষ্টে মনে হয় অনেক দূরত্ব আছে, যা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে খতিয়ে দেখলে দেখা যায় যে, এসব প্রস্তাবগুলোর ক্ষেত্রেও আসলে মতভিন্নতা খুব গভীর নয়। কেউ সংস্কারটা সংবিধানে করতে চেয়েছেন, কেউ আইনের মাধ্যমে করতে চেয়েছেন। কিন্তু সংস্কারের প্রয়োজনীতা, নীতি ও লক্ষ্য নিয়ে কারো মধ্যে মতভেদ নেই। কাজেই রাজনৈতিক দলগুলোর প্রকাশ্য বক্তব্য যতখানি পরস্পরবিরোধী অবস্থান আছে বলে মনে হয়, জুলাই সনদ সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করলে ততখানি মত পার্থক্য দেখা যায় না। এটি আমাদের অনন্য অর্জন। এতে জাতি এগিয়ে যেতে সাহসী হবে।

এসব বিবেচনায় রেখে এবং রাজনৈতিক দলগুলো কর্তৃক স্বাক্ষরিত জুলাই সনদকে মূল দলিল হিসেবে ধরে নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার আজকের উপদেষ্টামণ্ডলীর সভায় জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫ অনুমোদন করেছে। এটি বিরাট খবর। প্রয়োজনীয় স্বাক্ষর শেষে এটি ইতোমধ্যে গেজেট নোটিফিকেশন করার পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এই আদেশে আমরা গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিধান গ্রহণ করেছি। এর মধ্যে রয়েছে সনদের সংবিধান বিষয়ক সংস্কার প্রস্তাবণার ওপর গণভোট অনুষ্ঠান এবং পরবর্তী সময়ে সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠনের সিদ্ধান্ত।

আমরা সকল বিষয় বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনই গণভোটের আয়োজন করা হবে। অর্থাৎ জাতীয় নির্বাচনের মতো গণভোটও ফেব্রুয়ারির প্রথমার্থে একইদিনে অনুষ্ঠিত হবে। এতে সংস্কারের লক্ষ্য কোনোভাবে বাধাগ্রস্ত হবে না। নির্বাচন আরও উৎসবমুখর ও সাশ্রয়ী হবে। গণভোট অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে উপযুক্ত সময়ে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করা হবে।

জুলাই সনদের আলোকে আমরা গণভোটের ব্যালটে উপস্থাপনীয় প্রশ্নও নির্ধারণ করেছি।আমি প্রশ্নটি এখন আপনাদের সামনে পাঠ করে শোনাচ্ছি। প্রশ্নটি হবে এরকম:“আপনি কি জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫ এবং জুলাই জাতীয় সনদে লিপিবদ্ধ সংবিধান সংস্কার সম্পর্কিত নিম্নলিখিত প্রস্তাবগুলোর প্রতি আপনার সম্মতি জ্ঞাপন করছেন?”

ক) নির্বাচনকালীন সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান জুলাই সনদে বর্ণিত প্রক্রিয়ার আলোকে গঠন করা হবে।

খ) আগামী সংসদ হবে দুই কক্ষ বিশিষ্ট। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে ১০০ জন সদস্য বিশিষ্ট একটি উচ্চকক্ষ গঠিত হবে এবং সংবিধান সংশোধন করতে হলে উচ্চকক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের অনুমোদন দরকার হবে।

গ) সংসদে নারীর প্রতিনিধি বৃদ্ধি, বিরোধী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার ও সংসদীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচন, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সীমিতকরণ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধি, মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও স্থানীয় সরকার-সহ বিভিন্ন বিষয়ে যে ৩০টি প্রস্তাবে জুলাই জাতীয় সনদে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যমত হয়েছে সেগুলো বাস্তবায়নে আগামী নির্বাচনে বিজয়ী দলগুলো বাধ্য থাকবে।

ঘ) জুলাই সনদে বর্ণিত অন্যান্য সংস্কার রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রুতি অনুসারে বাস্তবায়ন করা হবে।”

গণভোটের দিন এই চারটি বিষয়ের ওপর একটিমাত্র প্রশ্নে আপনি ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ ভোট দিয়ে আপনার মতামত জানাবেন।

গণভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট ‘হ্যাঁ’ সূচক হলে আগামী সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত প্রতিনিধি নিয়ে একটি সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠিত হবে। এই প্রতিনিধিগণ একইসাথে জাতীয় সংসদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। পরিষদ তার প্রথম অধিবেশন শুরুর তারিখ হতে ১৮০ কার্যদিবসের মধ্যে সংবিধান সংস্কার করবে। সংবিধান সংস্কার সম্পন্ন হবার পর ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে সংসদ নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যানুপাতে উচ্চকক্ষ গঠন করা হবে। এর মেয়াদ হবে নিম্নকক্ষের শেষ কার্যদিবস পর্যন্ত।

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের অঙ্গীকারনামা অনুসারে সংবিধানে জুলাই জাতীয় সনদ অন্তর্ভুক্ত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এটিও আজকে অনুমোদিত আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রিয় দেশবাসী,অভ্যুত্থানের পর দায়িত্ব গ্রহণ করে অর্থনীতিকে গভীর গহ্বর থেকে উদ্ধার করা ছিল আমাদের জন্য একটি বিরাট চ্যালেঞ্জ। গত ১৫ মাসে আমরা সেই চ্যালেঞ্জ উৎরাতে সক্ষম হয়েছি। রপ্তানি, বৈদেশিক বিনিয়োগ ও রিজার্ভসহ অর্থনীতির সবগুলো সূচকে দেশ ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে। লুট হয়ে যাওয়া ব্যাংকিং খাত ইতোমধ্যে ঘুরে দাঁড়িয়েছে, মানুষের আস্থা ফিরে এসেছে। ব্যাংকিং খাতকে আরও শক্তিশালী করতে নানামুখী পদক্ষেপ চলমান রয়েছে।

অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন দেশের বৈদেশিক বিনিয়োগ হ্রাস পেলেও বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী প্রথম বছরে বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ অর্থাৎ এফডিআই ১৯ দশমিক ১৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি বৈশ্বিক প্রবণতার বিপরীতে এক অনন্য অর্থনৈতিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

আগামী সপ্তাহে ডেনমার্কভিত্তিক মায়ার্স্ক গ্রুপের মালিকানাধীন এপিএম টার্মিনালস বি.ভি.-এর সঙ্গে লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল প্রকল্পে ৩০ বছরের কনসেশন চুক্তি স্বাক্ষর হতে যাচ্ছে। এই চুক্তির আওতায় ইউরোপীয় এই কোম্পানি ৫৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে। এটি এযাবৎকালে বাংলাদেশে ইউরোপের সর্বোচ্চ একক বিনিয়োগ। লালদিয়া হবে দেশের প্রথম বিশ্বমানের গ্রিন পোর্ট।

প্রিয় দেশবাসী,প্রায় দেড় যুগ ধরে আমাদের জনগণ ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত ছিলেন। তাঁরা আজ আসন্ন নির্বাচনে তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করার জন্য উন্মুখ হয়ে আছেন। আগামী ফেব্রুয়ারিতে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে অভ্যুত্থানের স্বপক্ষের রাজনৈতিক দলগুলিকে অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। তা না হলে জাতি এক মহাবিপদের সম্মুখীন হবে। এ সম্পর্কে আমি আগেও একাধিকবার আমার আশঙ্কা প্রকাশ করেছি।ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ২০২৪-এর জুলাইয়ে মৃত্যুর মুখোমুখি শির উঁচু করে দাঁড়িয়ে দেশবাসী যে ঐক্য গড়ে তুলেছিল, আমরা জীবিতরা যেন অল্পস্বল্প ভিন্নমত ও লঘু বিবাদে জড়িয়ে তার মর্যাদা ক্ষুন্ন না করি।

১৩৩ শিশু, শত শত তরুণ-তরুণী, নারী-পুরুষের মৃত্যু, হাজার হাজার মানুষের অঙ্গহানির যে আত্মত্যাগ সেটিকে আমাদের সম্মান জানাতেই হবে।

দেশের আপামর জনগণ সামান্য যা চায় তা হচ্ছে, এই অগুনিত হতাহতের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আমরা সবাই যেন ভিন্নমতের প্রতি সহিষ্ণুতা দেখাই। দলীয় স্বার্থ অতিক্রম করে, সম্মিলিত আকাঙ্ক্ষা ও জাতীয় চাওয়াকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরি। তাই আমি আশা করি আমাদের এই সিদ্ধান্ত জাতির বৃহত্তর স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলো মেনে নেবে। একটি উৎসবমুখর জাতীয় নির্বাচনের দিকে জাতি এগিয়ে যাবে। এর মাধ্যমে আমরা নতুন বাংলাদেশে প্রবেশ করব।

আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়ার দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছালাম।মহান আল্লাহ আমাদের সহায় হোন। আমাদের আশা মহান আল্লাহ পূরণ করুন।

আল্লাহ হাফেজ।সবাইকে ধন্যবাদ।


নির্বাচনের দিনই গণভোট: গণভোটের প্রশ্নে যা থাকছে

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ১৩ ১৫:১৬:১৯
নির্বাচনের দিনই গণভোট: গণভোটের প্রশ্নে যা থাকছে
ছবি: সংগৃহীত

জাতির উদ্দেশে বৃহস্পতিবার বিকেল আড়াইটায় দেওয়া ঐতিহাসিক ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ঘোষণা করেছেনআসন্ন জাতীয় নির্বাচনের দিনই দেশজুড়ে গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। জুলাই সনদের আলোকে প্রস্তাবিত চারটি মৌলিক বিষয়ে জনগণের মতামত জানতে ব্যালটে থাকবে একটিমাত্র প্রশ্ন, যেখানে ভোটাররা ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ দিয়ে সিদ্ধান্ত জানাবেন। গণভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠ ‘হ্যাঁ’ ভোট পেলে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত হবে একটি সংবিধান সংস্কার পরিষদ, যারা ১৮০ কার্যদিবসের মধ্যে জাতীয় সংবিধানে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনবে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, জুলাই সনদে যে কাঠামোগত রাজনৈতিক সংস্কারের নকশা উপস্থাপিত হয়েছে, গণভোটের মাধ্যমে জনগণ সম্মতি দিলে সেই ভিত্তিতেই ভবিষ্যতের রাষ্ট্রব্যবস্থা পুনর্গঠন করা হবে। তিনি জানান, গণভোটের ব্যালটে উপস্থাপনযোগ্য চারটি মূল বিষয়ের সারমর্ম হলো-

১. নির্বাচনকালীন সরকারের কাঠামো

তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান জুলাই সনদের প্রক্রিয়া অনুযায়ী গঠিত হবে। লক্ষ্য নির্বাচনকে পুরোপুরি নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতার আওতায় আনা।

২. দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ

আগামী সংসদ দুই কক্ষ বিশিষ্ট হবে।

  • ১০০ সদস্যের একটি উচ্চকক্ষ গঠিত হবে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে।
  • সংবিধান সংশোধনে এই উচ্চকক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্মতি বাধ্যতামূলক হবে।এটি ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষায় নতুন রাজনৈতিক স্থাপত্যের ইঙ্গিত দেয়।

৩. জুলাই সনদের ৩০ দফা রাজনৈতিক সংস্কার বাধ্যতামূলক বাস্তবায়ন

নারী প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধি, বিরোধী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার ও কমিটির সভাপতি নির্বাচন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যকাল সীমাবদ্ধকরণ, রাষ্ট্রপতির কিছু ক্ষমতা পুনঃনির্ধারণ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, স্থানীয় সরকার শক্তিশালীকরণসহ বিস্তৃত সংস্কারসমূহ বাস্তবায়ন করতে নির্বাচনে বিজয়ী দলগুলো আইনি বাধ্যবাধকতার আওতায় থাকবে।

৪. জুলাই সনদের অন্যান্য সংস্কারসমূহ বাস্তবায়ন

রাজনৈতিক দলগুলোর অঙ্গীকার অনুযায়ী জুলাই সনদে উল্লেখিত বাকি সংস্কারসমূহ ধাপে ধাপে বাস্তবায়নের নির্দেশনা থাকবে।

প্রধান উপদেষ্টা আরও জানান, গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ভোট বিজয়ী হলে নতুন নির্বাচিত সংসদ সদস্যরাই সংবিধান সংস্কার পরিষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। প্রথম অধিবেশন শুরু হওয়ার পর ১৮০ কার্যদিবসের মধ্যেই তারা সংবিধান পুনঃগঠনের কাজ সম্পন্ন করবেন।

পাঠকের মতামত:

ন্যায়ভিত্তিক ও মানবিক সমাজ গড়তে হলে রাষ্ট্রকে অবশ্যই তার সামাজিক ও নৈতিক দায়বদ্ধতা পুনরুদ্ধার করতে হবে

ন্যায়ভিত্তিক ও মানবিক সমাজ গড়তে হলে রাষ্ট্রকে অবশ্যই তার সামাজিক ও নৈতিক দায়বদ্ধতা পুনরুদ্ধার করতে হবে

রাষ্ট্রের ধারণাটি একসময় কেবল প্রশাসনিক ক্ষমতা, আইনের শাসন এবং নিরাপত্তা প্রদানের সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল। কিন্তু আধুনিক বিশ্বে রাষ্ট্রের ভূমিকা এখন... বিস্তারিত

উড়ন্ত সরীসৃপের খাদ্যাভ্যাস নিয়ে ধারণা বদল ৩২০টি ফাইটোলিথ পেলেন গবেষকরা

উড়ন্ত সরীসৃপের খাদ্যাভ্যাস নিয়ে ধারণা বদল ৩২০টি ফাইটোলিথ পেলেন গবেষকরা

ডাইনোসরের যুগে আকাশে রাজত্ব করত বিশাল আকৃতির উড়ন্ত সরীসৃপ 'টেরাসর'। এই রহস্যময় প্রাণীদের বিভিন্ন প্রজাতি আবিষ্কৃত হলেও তাদের খাদ্যাভ্যাস নিয়ে... বিস্তারিত