নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে যা হবে জাতির জন্য ঐতিহাসিক মুহূর্ত ড ইউনূস

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, বাংলাদেশ এখন নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে, যা জাতির জন্য এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত হয়ে উঠবে। তিনি উল্লেখ করেন, তরুণ-নেতৃত্বাধীন আন্দোলনের ফলাফল হিসেবে দেশটি এক ঐতিহাসিক রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
বুধবার ১২ নভেম্বর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় কানাডীয় সাত সদস্যের একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তিনি এ কথা বলেন। প্রতিনিধিদলটির নেতৃত্ব দেন সিনেটর সালমা আতাউল্লাহজান।
প্রধান উপদেষ্টা প্রতিনিধিদলকে দেশের চলমান সংস্কার প্রক্রিয়া ও আসন্ন ফেব্রুয়ারির নির্বাচন প্রস্তুতি সম্পর্কে অবহিত করেন। সাক্ষাৎকালে উভয়পক্ষ দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সহযোগিতা জোরদার করা এবং রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় সম্ভাব্য পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করেন।
ডক্টর ইউনূস রোহিঙ্গা সংকটের আট বছর পেরিয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গ তুলে বলেন
"তাদের নিজ দেশে প্রত্যাবর্তনই একমাত্র টেকসই সমাধান—এর কোনো বিকল্প নেই। প্রায় বারো লাখ মানুষ এখানে বসবাস করছে। হাজার হাজার শিশু জন্ম নিচ্ছে, বড় হচ্ছে—কিন্তু তারা জানে না তাদের নাগরিকত্ব কী, ভবিষ্যৎ কী। তারা হতাশ ও ক্ষুব্ধ। এখন আন্তর্জাতিক সহায়তা কমে যাওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠছে।"
সিনেটর সালমা আতাউল্লাহজান জানান, তিনি রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে বক্তব্য দেবেন এবং এ বিষয়ে কানাডার অব্যাহত অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি ডক্টর ইউনূসকে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে তাঁর অব্যাহত প্রচেষ্টার জন্য ধন্যবাদ জানান।
প্রতিনিধিদলের সদস্য সামির জুবেরি, যিনি পররাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সদস্যও, তিনি জানান কানাডা বাংলাদেশসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক বহুমুখী করার চেষ্টা করছে।
সামির জুবেরি বলেন, "আমরা বাণিজ্যের বৈচিত্র্য আনতে কাজ করছি। বাংলাদেশ ও কানাডার মধ্যে গভীর মানবিক সম্পর্ক রয়েছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি এশিয়া সফরে গিয়েছিলেন—বাণিজ্যিক অংশীদারত্ব সম্প্রসারণ ও বৈচিত্র্য আনার লক্ষ্য নিয়ে।"
সাক্ষাৎকালে উভয়পক্ষ পোশাক, কৃষি ও অন্যান্য সম্ভাবনাময় খাতে বাণিজ্য সুযোগ এবং বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান রপ্তানি শিল্পে কানাডার বিনিয়োগ সম্প্রসারণের সম্ভাবনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
প্রতিনিধিদলে আরও উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য সালমা জাহিদ, সামির জুবেরি, মাহমুদা খান, মাসুম মাহবুব, আহমদ আতিয়া এবং উসামা খান। সাক্ষাৎকালে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান ও এসডিজিবিষয়ক সিনিয়র সচিব লামিয়া মোরশেদও উপস্থিত ছিলেন।
গণমাধ্যমে যারা আগুন দেয় তারা সরকারেরও প্রতিপক্ষ: তথ্য উপদেষ্টা
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে আজ ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টারের (বিজেসি) ষষ্ঠ সম্প্রচার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান গত ১৮ ডিসেম্বরের ঘটনাকে ন্যাক্কারজনক হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, সংবাদপত্রের নীতির সাথে মতভেদ থাকলে বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতিবাদ হতে পারে, এমনকি চাইলে নতুন পত্রিকাও খোলা যেতে পারে, কিন্তু কার্যালয়ে হামলা ও অগ্নিসংযোগ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। যারা এই ভয় দেখানোর রাজনীতি করে, তারা মূলত সরকার ও গণমাধ্যম—উভয়েরই অভিন্ন প্রতিপক্ষ।
রিজওয়ানা হাসান জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, নিউ এজ এবং যমুনা টিভিসহ একাধিক সংবাদমাধ্যমের সাহসিকতাপূর্ণ ভূমিকার প্রশংসা করেন। তিনি স্বীকার করেন যে, হামলা ঠেকাতে প্রশাসনের যতটুকু 'প্রো-অ্যাকটিভ' বা অগ্রণী ভূমিকা পালনের প্রয়োজন ছিল, সেখানে কিছুটা ঘাটতি ছিল। তবে সরকার এই ক্ষতির গুরুত্ব বুঝতে পারছে এবং দোষীদের আইনের আওতায় আনতে বদ্ধপরিকর। এছাড়া তিনি আগামী দেড় মাসের মধ্যে সম্প্রচার কমিশন ও প্রেস কমিশন অধ্যাদেশ জারি করার মাধ্যমে সাংবাদিকদের পেশাগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত সম্পাদক পরিষদের সভাপতি ও নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীর সরকারের কড়া সমালোচনা করেন। তিনি অভিযোগ তোলেন যে, প্রশাসনের কোনো একটি অংশ রহস্যজনকভাবে প্রথম আলো, ডেইলি স্টার ও ছায়ানট ভবনে হামলা ও লুটপাটের ঘটনা ঘটতে দিয়েছে। ১৮ ডিসেম্বরের সেই রাতে ঘটনাস্থলে গিয়ে তিনিও হেনস্তার শিকার হয়েছিলেন। সম্মেলনে উপস্থিত অন্যান্য জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও সম্পাদকরা এই ঘটনাকে বাংলাদেশের সংবাদপত্রের ইতিহাসের একটি ‘কালো দিন’ হিসেবে উল্লেখ করে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
সম্মেলনের আলোচনায় গণমাধ্যমকর্মীরা জানান যে, স্বাধীন সাংবাদিকতা বিপন্ন হলে গণতন্ত্রও ঝুঁকির মুখে পড়বে। সারা হোসেন, কামাল আহমেদ এবং ইলিয়াস হোসেনের মতো বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ গণমাধ্যমের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারকে আরও কঠোর হওয়ার পরামর্শ দেন। সব শেষে তথ্য উপদেষ্টা আশ্বস্ত করেন যে, তথ্য কমিশনের চেয়ারম্যান ও কমিশনার নিয়োগের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা হচ্ছে যাতে তথ্য প্রবাহ আরও স্বচ্ছ হয়। গণমাধ্যম এবং সরকার একে অপরের হাত ধরে কাজ করলে যেকোনো অপশক্তিকে রুখে দেওয়া সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।
৬ মাসের পরিকল্পনা ও এক মিনিটের অপারেশন: হাদি হত্যার নতুন রহস্য
রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স-কালভার্ট রোডে গত ১২ ডিসেম্বর প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করে হত্যা করা হয় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদিকে। এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তে নেমে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) জানতে পেরেছে, এই মিশনের মূল হোতা ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ গত জুলাই মাসেই সিঙ্গাপুরে গিয়ে পলাতক কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে গোপন বৈঠক করেছিলেন। নিজেকে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচয় দিয়ে তিনি সিঙ্গাপুরে প্রবেশ করেন এবং মালয়েশিয়া সীমান্তে গিয়ে কিলিং মিশনের চূড়ান্ত পরিকল্পনা ও অর্থের জোগান নিশ্চিত করেন। ২৬ জুলাই দেশে ফেরার পর থেকেই তিনি উপযুক্ত সময়ের অপেক্ষায় ছিলেন।
তদন্তে আরও উঠে এসেছে যে, হত্যাকাণ্ডের আগে ফয়সাল তাঁর স্ত্রী সাহেদা পারভীনকে একটি ব্যাংক হিসাবে ৩০ লাখ টাকা জমা রাখার কথা জানান এবং ইঙ্গিত দেন যে ভবিষ্যতে তাঁকে দেশ ছাড়তে হতে পারে। এমনকি হত্যার আগের রাতে সাভারের মধুমতি মডেল টাউনে প্রেমিকা মারিয়া আক্তারের সঙ্গে সময় কাটানোর সময় ফয়সাল দাম্ভিকতার সঙ্গে বলেছিলেন, ‘আগামীকাল এমন কিছু হবে যা পুরো দেশ কাঁপিয়ে দেবে।’ যদিও মারিয়া দাবি করেছেন, তিনি বড় কোনো অপরাধের কথা জানতেন না। হত্যার পর ফয়সাল ও মোটরসাইকেল চালক আলমগীরকে হালুয়াঘাট সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে যেতে সহায়তা করেন ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক কাউন্সিলর তাইজুল ইসলাম চৌধুরী বাপ্পী।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন যে, ফয়সালের বিদেশ ভ্রমণ এবং সীমান্তের দালাল ফিলিপ স্নালের সম্পৃক্ততা নিবিড়ভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ইতিমধ্যে র্যাব ও ডিবি অভিযান চালিয়ে এই ঘটনায় ১১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। তদন্তকারীদের ধারণা, হাদিকে রাজনৈতিক ময়দান থেকে সরিয়ে দিতেই এই সুপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর ১৮ ডিসেম্বর সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এবং তাঁকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে দাফন করা হয়।
অন্যদিকে, ওসমান হাদি হত্যার বিচারের দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছে ইনকিলাব মঞ্চ। গতকাল জুমার নামাজের পর আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে শাহবাগ মোড়কে ‘শহীদ ওসমান হাদি চত্বর’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। সংগঠনের সদস্য সচিব আবদুল্লাহ আল জাবের সাফ জানিয়েছেন যে, প্রকৃত খুনি ও নেপথ্যের কুশীলবদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের রাজপথের আন্দোলন থামবে না। বর্তমানে এই মামলাটি গোয়েন্দা পুলিশের নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছে এবং জড়িত অন্যদের ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে।
এনআইডি পেতে তারেক রহমানের হাতে সময় মাত্র ২৪ ঘণ্টা
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং তাঁর কন্যা ব্যারিস্টার জাইমা রহমান বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার যাবতীয় দাপ্তরিক কাজ আজ শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) সম্পন্ন করেছেন। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ জানিয়েছেন যে তাঁদের ভোটার করার বিষয়টি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য আগামীকাল রোববার (২৮ ডিসেম্বর) কমিশনের নিয়মিত বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে। বর্তমানে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়ে যাওয়ায় নতুন করে ভোটার করার ক্ষেত্রে কমিশনের বিশেষ অনুমোদনের প্রয়োজন পড়ে, যা এই বৈঠকের মাধ্যমে সম্পন্ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আজ দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (ইটিআই) ভবনে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে তারেক রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত হন। সেখানে এনআইডি উইংয়ের ডিজি এ এস এম হুমায়ুন কবীরের উপস্থিতিতে তাঁরা নিজেদের আঙুলের ছাপ, চোখের মণির (আইরিশ) প্রতিচ্ছবি এবং অন্যান্য বায়োমেট্রিক তথ্য প্রদান করেন। এনআইডি উইংয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে তথ্য সংগ্রহের পর ডেটাবেজে এনআইডি নম্বর জেনারেট হতে সর্বোচ্চ ২৪ ঘণ্টা সময় লাগতে পারে। অর্থাৎ, আগামীকাল বিকেলের মধ্যেই তারেক রহমানের হাতে তাঁর জাতীয় পরিচয়পত্র পৌঁছে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ইসি সচিব আখতার আহমেদ আরও জানান যে ভোটার তালিকা আইন ২০০৯-এর ১৫ ধারা অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন যেকোনো প্রাপ্তবয়স্ক যোগ্য নাগরিককে যেকোনো সময় ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষমতা রাখে। সেই আইনি কাঠামোর আওতায় গুলশান এলাকার ভোটার হিসেবে তারেক রহমান ও জাইমা রহমানের আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। উল্লেখ্য যে দীর্ঘ ১৭ বছর প্রবাসে থাকায় তাঁরা ছবিসহ ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারেননি। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য ভোটার হওয়া একটি বাধ্যতামূলক শর্ত, যা পূরণের লক্ষ্যেই এই তড়িঘড়ি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময় ২৯ ডিসেম্বর হওয়ায় তারেক রহমানের হাতে সময় অত্যন্ত কম। তবে নির্বাচন কমিশনের নমনীয় মনোভাব এবং দ্রুত কাজের গতির কারণে মনে করা হচ্ছে যে তিনি সময়মতোই তাঁর মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারবেন। ইতিমধ্যে বগুড়া-৬ আসন থেকে তাঁর জন্য দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করা হয়েছে। তারেক রহমান ও জাইমা রহমানের এই ভোটার হওয়ার মধ্য দিয়ে জিয়া পরিবারের উত্তরসূরিদের প্রত্যক্ষ নির্বাচনী রাজনীতিতে ফেরার পথ সুগম হলো, যা দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন এক উদ্দীপনার সৃষ্টি করেছে।
ঢাকার আকাশ যেন কুয়াশার গোলকধাঁধা: দিক হারিয়ে ৩ দেশে নামল ৮ বিমান
রাজধানী ঢাকা আজ ভোরে এক অভূতপূর্ব ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়েছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিয়মিত ফ্লাইট অপারেশনে। শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) সকালে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে রানওয়েতে দৃশ্যমানতা বা ভিজিবিলিটি অত্যন্ত কমে যাওয়ায় নিরাপত্তার স্বার্থে ৮টি আন্তর্জাতিক ফ্লাইটকে ঢাকায় নামতে দেওয়া সম্ভব হয়নি। এর মধ্যে ৪টি ফ্লাইটকে ভারতের কলকাতা বিমানবন্দরে, ৩টি ফ্লাইটকে চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দরে এবং ১টি ফ্লাইটকে থাইল্যান্ডের ব্যাংকক বিমানবন্দরে ডাইভার্ট বা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বিমানবন্দর সূত্র জানায় যে কুয়াশার তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে পাইলটদের জন্য রানওয়ে শনাক্ত করা অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। ডাইভার্ট হওয়া ফ্লাইটের যাত্রীদের সাময়িক অসুবিধা দূর করতে সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইনসগুলো খাবার ও প্রয়োজনীয় হোটেল সুবিধা নিশ্চিত করছে। আবহাওয়া স্বাভাবিক হওয়ার সাথে সাথেই এই ফ্লাইটগুলো পুনরায় ঢাকায় ফিরিয়ে আনা হবে বলে কর্তৃপক্ষ আশ্বস্ত করেছে। মধ্যরাত থেকে দুপুর পর্যন্ত কুয়াশার এই অবস্থান আকাশপথের পাশাপাশি নৌ ও সড়ক যোগাযোগকেও আজ ধীরগতির করে দিয়েছে।
একই দিনে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা যশোরে শীতের এক ভয়ংকর রূপ দেখা গেছে। আজ সকালে যশোরে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এটি গত ১৪ বছরের মধ্যে যশোরে রেকর্ডকৃত সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। হাড়কাঁপানো এই ঠান্ডা আর উত্তরের হিমেল বাতাসের কারণে চুয়াডাঙ্গা, পাবনা ও নীলফামারীসহ সাতটি জেলায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। ঘন কুয়াশার কারণে সূর্যের উত্তাপ পৌঁছাতে না পারায় দিনের বেলাতেও মানুষের শরীরে কনকনে শীত অনুভূত হচ্ছে।
আবহাওয়াবিদদের মতে, বঙ্গোপসাগর থেকে আসা জলীয় বাষ্প ও উত্তরের শীতল বায়ুর সংমিশ্রণে এই ঘন কুয়াশা তৈরি হয়েছে। আগামী অন্তত পাঁচ দিন কুয়াশার এই প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে এবং জানুয়ারির শুরুতে শীতের প্রকোপ আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। যশোরে ১৪ বছর পর এমন তীব্র শীত পড়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ ও গবাদিপশু। শীতবস্ত্রের অভাবে ছিন্নমূল মানুষদের কষ্ট এখন চরমে। সংশ্লিষ্ট প্রশাসন থেকে বিমান ও নৌ চলাচলকারী সংস্থাগুলোকে ফগ লাইট ব্যবহার এবং বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
উত্তরের হিমেল হাওয়ায় কাঁপছে দেশ: আসছে আরও তীব্র শৈত্যপ্রবাহ
পৌষের প্রথম পক্ষ শেষ হওয়ার আগেই শীতের তীব্রতায় জবুথবু হয়ে পড়েছে দেশ। আজ শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) সকালে খুলনার যশোরে চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। ঘন কুয়াশা আর উত্তরের হিমেল হাওয়ায় দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম ও উত্তরাঞ্চলের জনজীবন লণ্ডভণ্ড হয়ে পড়েছে। কুয়াশার কারণে দৃষ্টিসীমা কমে আসায় গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে চাঁদপুরের হাইমচর সংলগ্ন মেঘনা নদীতে দুটি যাত্রীবাহী লঞ্চের মুখোমুখি সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও অন্তত ২০ জন যাত্রী, যাদের কয়েকজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, বর্তমানে দেশের সাতটি জেলার ওপর দিয়ে মৌসুমের প্রথম মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। জেলাগুলো হলো—যশোর, চুয়াডাঙ্গা, গোপালগঞ্জ, রাজশাহী, পাবনা, সিরাজগঞ্জ ও নীলফামারী। আজ সকালে চুয়াডাঙ্গায় ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি এবং গোপালগঞ্জে ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এদিকে রাজধানী ঢাকাতেও শীতের দাপট বেড়েছে; গতকাল শুক্রবার মৌসুমের সর্বনিম্ন ১৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি রেকর্ড করা হলেও আজ কুয়াশার কারণে ঠান্ডার অনুভূতি আরও তীব্র হয়েছে। ৯৫ শতাংশ বাতাসের আর্দ্রতা নিয়ে রাজধানীসহ সারা দেশে কুয়াশা দুপুর পর্যন্ত স্থায়ী হচ্ছে।
আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক জানিয়েছেন যে উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের প্রভাবে শীতের এই দাপট আরও কয়েক দিন অব্যাহত থাকতে পারে। জানুয়ারির শুরু থেকে সারা দেশে এক বা একাধিক তীব্র শৈত্যপ্রবাহের আশঙ্কা রয়েছে। ঘন কুয়াশার কারণে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ও আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে ফেরি চলাচল কয়েক ঘণ্টা বন্ধ রাখতে হচ্ছে। সড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে ধীরগতিতে যানবাহন চলাচলের পরামর্শ দিয়েছে হাইওয়ে পুলিশ। উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে হিমালয় থেকে আসা কনকনে বাতাসের কারণে ছিন্নমূল মানুষ ও শিশুদের কষ্ট চরমে পৌঁছেছে।
শীতের এই আকস্মিক প্রকোপে বিশেষ করে নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষ এবং নদী অববাহিকার বাসিন্দারা অসহায় হয়ে পড়েছেন। পর্যাপ্ত শীতবস্ত্রের অভাবে গ্রামগুলোতে অনেকেই আগুনের কুণ্ডলী জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। আবহাওয়া অধিদপ্তর সতর্ক করেছে যে আগামী ৫ দিন তাপমাত্রা আরও হ্রাস পেতে পারে এবং কুয়াশা দুপুর পর্যন্ত স্থায়ী হয়ে সূর্যের আলোকে বাধাগ্রস্ত করবে। এই অবস্থায় নদী পথে চলাচলকারী নৌযানগুলোকে ফগ লাইট ব্যবহার এবং বাড়তি সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডে তিন আসামি আদালতে সব সত্য ফাঁস করলেন
রাজধানীর পল্টনে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরীফ ওসমান বিন হাদিকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় আটক হওয়া প্রধান আসামির স্ত্রী ও তাঁর সহযোগীরা আদালতে দোষ স্বীকার করেছেন। বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় ৯ দিনের দীর্ঘ রিমান্ড শেষে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হলে তাঁরা স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে সম্মত হন। এই মামলার প্রধান আসামি ফয়সাল করিম মাসুদ রাহুল দাউদের স্ত্রী সাহেদা পারভীন সামিয়া, শ্যালক ওয়াহিদ আহমেদ এবং দাউদের বান্ধবী মারিয়া আক্তার লিমা এই তিনজনের জবানবন্দি পৃথকভাবে রেকর্ড করেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত।
জবানবন্দি রেকর্ড করার প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আমিনুল ইসলাম জুনায়েদ এবং কামাল উদ্দীন। জবানবন্দি শেষে আসামিদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। আজ বৃহস্পতিবার পল্টন থানার আদালত সাধারণ নিবন্ধন শাখার পুলিশের উপ-পরিদর্শক রোকনুজ্জামান বিষয়টি সংবাদমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন। এর আগে গত ১২ ডিসেম্বর জুমার নামাজের পর পল্টন বক্স কালভার্ট রোড দিয়ে যাওয়ার সময় মোটরবাইকে আসা দুষ্কৃতিকারীরা ওসমান হাদিকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। ওই ঘটনায় গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল এবং পরে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে গত ১৮ ডিসেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
মামলার তদন্তকারী সংস্থা ডিবি পুলিশ জানিয়েছে যে জবানবন্দিতে আসামিরা হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা ও নেপথ্যের কারণ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করেছেন। ১৪ ডিসেম্বর ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আব্দুল্লাহ আল জাবেরের করা হত্যাচেষ্টা মামলাটি ওসমান হাদির মৃত্যুর পর এখন হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়েছে। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন যে জুমার নামাজের পর প্রচারণার কাজ শেষ করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে যাওয়ার পথে তাঁকে অনুসরণ করে ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে রাহুল দাউদ এই হামলা চালায়। ঘটনার পরপরই আসামিরা পালিয়ে গেলেও সিসিটিভি ফুটেজ ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় তাঁদের গ্রেফতার করা হয়।
আসামিরা দফায় দফায় রিমান্ডে থাকলেও শেষ পর্যন্ত আদালতের কাছে হত্যার উদ্দেশ্যে অস্ত্র ব্যবহারের কথা স্বীকার করেছেন। বিশেষ করে রাহুল দাউদের বান্ধবী মারিয়া আক্তার লিমার জবানবন্দিতে এই ষড়যন্ত্রের আরও গভীর কিছু তথ্য বেরিয়ে এসেছে বলে জানা গেছে। পুলিশ এখন পলাতক থাকা প্রধান আসামি রাহুল দাউদ ও তাঁর সহযোগীদের গ্রেফতার করতে অভিযান অব্যাহত রেখেছে। ইনকিলাব মঞ্চের এই তরুণ নেতার মৃত্যুতে রাজনৈতিক অঙ্গনে যে শোকের ছায়া নেমে এসেছিল, আসামিদের এই স্বীকারোক্তির পর মামলার বিচারে তা বড় ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা।
নিকোটিন পাউচ ও ই-সিগারেটের দিন শেষ আসছে নতুন আইন
বাংলাদেশে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ক্রমবর্ধমান ভেপিং ও ই-সিগারেটের আসক্তি বন্ধে এবং তামাকজনিত অসংক্রামক রোগের বিস্তার রোধে ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ এর খসড়া অনুমোদন করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। বুধবার অনুষ্ঠিত বৈঠকে জনস্বার্থকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে এই কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। নতুন এই অধ্যাদেশের ফলে এখন থেকে দেশে সব ধরনের ই-সিগারেট, ভ্যাপ এবং উত্তপ্ত তামাকজাত পণ্যের ব্যবহার, উৎপাদন ও বিপণন আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। পাশাপাশি তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেটে বিদ্যমান ৫০ শতাংশ সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার পরিবর্তে এখন থেকে ৭৫ শতাংশ এলাকা জুড়ে সতর্কবাণী মুদ্রণ করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
তথ্যবিবরণী অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রতি বছর তামাকজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে ১ লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষ মৃত্যুবরণ করেন। এই বিশাল মৃত্যুঝুঁকি মোকাবিলায় ২০০৫ সালের বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটিকে আরও যুগোপযোগী ও শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। নতুন সংশোধনীতে তামাকজাত দ্রব্যের সংজ্ঞায় ‘নিকোটিন পাউচ’ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া ইন্টারনেটসহ যেকোনো প্রচারমাধ্যমে তামাকের বিজ্ঞাপন এবং খুচরা বিক্রয়কেন্দ্রে তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেট সাজিয়ে রাখা বা প্রদর্শন করার ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। তামাকবিরোধী সংগঠনগুলো দীর্ঘদিন ধরে এই পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে আসছিল যা তরুণদের তামাকের প্রতি আকর্ষণ কমাতে সহায়ক হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
নতুন এই অধ্যাদেশে পাবলিক প্লেস এবং পাবলিক পরিবহনের সংজ্ঞাকে আরও বিস্তৃত করা হয়েছে যাতে সাধারণ মানুষ পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতি থেকে রক্ষা পায়। আগে বিভিন্ন স্থানে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত এলাকা (ডিএসএ) রাখার সুযোগ থাকলেও এখন থেকে তা সরকারের কঠোর নির্দেশনার শর্তাধীন করা হয়েছে। তামাক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো রাজস্ব হারানোর অজুহাত দেখিয়ে এই আইনের বিরোধিতা করলেও সরকার জনস্বাস্থ্যের গুরুত্ব বিবেচনা করে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। উল্লেখ্য যে গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তামাক খাত থেকে প্রায় ৪০ হাজার ৪১১ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হলেও তামাকজনিত রোগের চিকিৎসায় রাষ্ট্রের এর চেয়েও বড় অংকের অর্থ ব্যয় হয় বলে বিশেষজ্ঞদের মত।
অধ্যাদেশটি চূড়ান্তভাবে জারির লক্ষ্যে বর্তমানে লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগে ভেটিংয়ের জন্য পাঠানো হয়েছে। তামাকের প্রচার ও প্রসারের পথ স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে বিক্রয়কেন্দ্রে তামাকজাত দ্রব্য প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা হয়েছে যা তামাক নিয়ন্ত্রণে একটি বড় সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে। গত বছরের ডিসেম্বরে আইনটি পর্যালোচনার জন্য গঠিত বিশেষ কমিটির দীর্ঘ কার্যক্রম শেষে এই যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত কার্যকর হতে যাচ্ছে। সরকারের এই পদক্ষেপের ফলে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যমাত্রা অর্জন আরও সহজ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
যিশু খ্রিষ্টের মানবমুক্তির বার্তা সবার অনুপ্রেরণা: উপদেষ্টা ড. ইউনূস
নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নে দেশপ্রেম ও মানবতার মহান আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীসহ দেশের প্রতিটি নাগরিককে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ২৫ ডিসেম্বর ‘বড়দিন’ উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে তিনি উল্লেখ করেন যে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ধর্ম, বর্ণ ও সম্প্রদায় নির্বিশেষে সবার জন্য একটি বৈষম্যহীন, ন্যায়ভিত্তিক এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের বৃহত্তম এই ধর্মীয় উৎসব উপলক্ষে তিনি দেশ বিদেশের সকল অনুসারীদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।
প্রধান উপদেষ্টা তাঁর বাণীতে যিশু খ্রিষ্টের জীবন ও দর্শনের কথা স্মরণ করে বলেন যে মহান এই পুরুষ পৃথিবীতে শান্তি, ন্যায় এবং মানবমুক্তির বার্তা নিয়ে এসেছিলেন। মানবজাতিকে সত্য ও কল্যাণের পথে পরিচালিত করাই ছিল তাঁর জীবনের মূল লক্ষ্য। ড. ইউনূস উল্লেখ করেন যে যিশু খ্রিষ্ট আমৃত্যু বিপন্ন ও অবহেলিত মানুষের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন এবং ক্ষমা ও ভালোবাসার যে মহিমা তিনি প্রচার করেছেন তা আজও বিশ্ববাসীর জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। তাঁর মহৎ চারিত্রিক গুণাবলি ধারণ করেই সুন্দর সমাজ গড়া সম্ভব বলে তিনি মন্তব্য করেন।
অধ্যাপক ইউনূস দৃঢ়তার সাথে বলেন যে বাংলাদেশ দীর্ঘকাল ধরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য উদাহরণ হয়ে রয়েছে। আবহমানকাল ধরে এদেশের মানুষ একে অপরের ধর্ম ও সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করছে। তিনি প্রত্যাশা করেন যে যথাযথ মর্যাদা ও উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে বড়দিন উদযাপন এই সম্প্রীতির বন্ধনকে ভবিষ্যতে আরও সুদৃঢ় করবে। বাণীর শেষ অংশে তিনি খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীসহ দেশের সকল মানুষের উত্তরোত্তর শান্তি, সমৃদ্ধি ও সার্বিক কল্যাণ কামনা করেন।
বর্তমানে দেশে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং নতুন প্রশাসনিক সংস্কারের যে প্রক্রিয়া চলছে সেখানে সকল সম্প্রদায়ের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ জরুরি বলে মনে করেন প্রধান উপদেষ্টা। বড়দিনের এই আনন্দ উৎসব যেন সকল ভেদাভেদ ভুলে মানুষকে এক সুতোয় বাঁধতে পারে সেই আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনে যানজট এড়াতে যেসব রাস্তা পরিহার করবেন
দীর্ঘ ১৬ বছর পর দেশে ফিরছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তাঁর এই ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তনকে কেন্দ্র করে রাজধানীজুড়ে বিশেষ ট্রাফিক ও নিরাপত্তা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলীর সই করা এক গণবিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে যে বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) দুপুর ১১টা ৫৫ মিনিটে লন্ডন থেকে আসা একটি বিশেষ ফ্লাইটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবেন তিনি। বিমানবন্দর থেকে পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে (৩০০ ফিট) এবং এভারকেয়ার হাসপাতাল হয়ে তিনি গুলশানের বাসভবনে পৌঁছাবেন। এই দীর্ঘ পথে ব্যাপক জনসমাগম ও যানজটের আশঙ্কা থেকে বৃহস্পতিবার ভোর ৪টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় বড় ধরণের পরিবর্তন আনা হয়েছে।
ডিএমপির নির্দেশনায় জানানো হয়েছে যে মহাখালী থেকে আব্দুল্লাহপুর এবং কুড়িল থেকে মস্তুল পর্যন্ত পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে সাধারণ যানবাহনের জন্য এড়িয়ে চলাই শ্রেয়। উত্তরা ও মিরপুর এলাকার যাত্রীদের এয়ারপোর্ট সড়ক পরিহার করে বিকল্প পথ ব্যবহারের অনুরোধ জানানো হয়েছে। গুলশান, বাড্ডা ও প্রগতি সরণি এলাকার যাত্রীরা কাকলী ও কামাল আতাতুর্ক সড়কের পরিবর্তে গুলশান–১, পুলিশ প্লাজা ও মহাখালী রুট ব্যবহার করতে পারবেন। এছাড়া মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইলগামী বাসগুলোকে মিরপুর–গাবতলী সড়ক ব্যবহারের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কাঞ্চন ব্রিজ হয়ে আসা যানবাহনগুলো বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ভেতর দিয়ে মাদানী অ্যাভিনিউ হয়ে চলাচল করতে পারবে।
অভ্যর্থনায় আসা নেতাকর্মীদের জন্য বিশেষ সতর্কবার্তা জারি করেছে পুলিশ। জানানো হয়েছে যে কেউ কোনো ধরণের ব্যাগ, লাঠি বা সন্দেহজনক বস্তু বহন করতে পারবেন না। তারেক রহমানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কোনো মোটরসাইকেল বা বহিরাগত গাড়ি তাঁর ব্যক্তিগত গাড়িবহরে যুক্ত হতে পারবে না। গুলশান ও বনানী থেকে এয়ারপোর্ট অভিমুখে মোটরসাইকেল চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়া বিদেশগামী যাত্রী এবং হজযাত্রীদের যানজট এড়াতে পর্যাপ্ত সময় হাতে রেখে বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে ডিএমপি। মিরপুর ও উত্তরা এলাকার যাত্রীদের জন্য মেট্রোরেলকে সবচেয়ে সুবিধাজনক বিকল্প হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে অ্যাম্বুলেন্স ও ফায়ার সার্ভিসের মতো জরুরি সেবার গাড়িগুলো এই নির্দেশনার আওতামুক্ত থাকবে।
নেতাকর্মীদের ব্যক্তিগত গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য টঙ্গী ইজতেমা মাঠ, পূর্বাচল নীলা মার্কেট, বাণিজ্য মেলা মাঠ, আগারগাঁও পুরাতন বাণিজ্য মেলা মাঠ এবং মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে ডিএমপি। কমিশনার স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন যে ট্রাফিক আইন ও এই বিশেষ নির্দেশনা অমান্য করলে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তারেক রহমানের এই প্রত্যাবর্তনকে ঘিরে রাজধানীতে এক ধরণের উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করলেও জানমালের নিরাপত্তা এবং ট্রাফিক শৃঙ্খলা বজায় রাখাকেই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে প্রশাসন।
পাঠকের মতামত:
- ব্যক্তিগত দায় বনাম প্রাতিষ্ঠানিক দায়: দায়মুক্তির এক রাজনৈতিক সংস্কৃতি
- ৯ কোটির মুস্তাফিজকে নিয়ে বিপাকে শাহরুখের দল: উত্তপ্ত মধ্যপ্রদেশ
- স্ট্রেস থেকে উচ্চ রক্তচাপ: হার্ট অ্যাটাক রুখতে মেনে চলুন ৫ নিয়ম
- বিদেশের মাটিতে বিনামূল্যে উচ্চশিক্ষা: ২০২৬ সালের জন্য সেরা স্কলারশিপ
- এনসিপি কি দুই ভাগ হচ্ছে: জামায়াত জোট ঠেকাতে ৩০ নেতার কঠোর বার্তা
- গোপালগঞ্জের নৌকার ১৭ মাঝি এখন ধানের শীষের সারথি
- ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে অষ্টম শ্রেণির বৃত্তি পরীক্ষা: আজই দেখে নিন রুটিন
- কেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন তাসনিম জারা: নিজেই জানালেন নেপথ্য কারণ
- চট্টগ্রামের ৩ আসনে বিএনপির চূড়ান্ত চমক
- গণমাধ্যমে যারা আগুন দেয় তারা সরকারেরও প্রতিপক্ষ: তথ্য উপদেষ্টা
- ৬ মাসের পরিকল্পনা ও এক মিনিটের অপারেশন: হাদি হত্যার নতুন রহস্য
- পাঁচ ব্যাংকের আমানতকারীদের জন্য বড় সুখবর
- এনআইডি পেতে তারেক রহমানের হাতে সময় মাত্র ২৪ ঘণ্টা
- গণঅধিকার পরিষদ ছেড়ে বিএনপিতে রাশেদ খাঁনের নাটকীয় যোগদান
- আবহাওয়া অফিসের স্বস্তির বার্তা: সন্ধ্যার পূর্বাভাসে মিলল নতুন সংকেত
- সংসদ নির্বাচনে লড়তে আর বাধা নেই তারেক রহমানের
- বিপিএলের মাঠেই ঢাকা ক্যাপিটালসের সহকারী কোচের মৃত্যু
- অজান্তেই পিত্তথলিতে পাথর জমাচ্ছে আপনার এই ৫টি ভুল অভ্যাস
- শীতে বাড়ছে মাইগ্রেনের তীব্র যন্ত্রণা: বাঁচার উপায় জানালেন চিকিৎসকরা
- জোটের গলার কাঁটা দুই সাবেক উপদেষ্টা: জামায়াত-এনসিপি দরকষাকষিতে নতুন মোড়
- হাদির কবর জিয়ারতে তারেক রহমান
- ঢাকার আকাশ যেন কুয়াশার গোলকধাঁধা: দিক হারিয়ে ৩ দেশে নামল ৮ বিমান
- আন্তর্জাতিক বাজারেও ধুরন্ধর ম্যাজিক: ভারতীয় সিনেমার নতুন ইতিহাস আজ
- প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় ১৪৪ ধারা: কেন্দ্রে প্রবেশের নতুন নিয়ম
- টাকার স্তূপে ঢাকা পড়েছে মেঝে: পাগলা মসজিদের দানবাক্সে অলৌকিক সাড়া
- বিপিএলসহ টিভিতে আজ যত খেলা: জেনে নিন দেখার সময়সূচি
- আজকের স্বর্ণের দাম: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫
- আজ ২৭ ডিসেম্বরের নামাজের সময়সূচি
- রাজধানীতে আজ কোথায় কী: জেনে নিন আজকের ব্যস্ত সূচি
- কক্সবাজারে সেন্টমার্টিনগামী জাহাজে ভয়াবহ আগুন
- উত্তরের হিমেল হাওয়ায় কাঁপছে দেশ: আসছে আরও তীব্র শৈত্যপ্রবাহ
- জামায়াত-চরমোনাই দ্বিমুখী লড়াই: সংকটে ইসলামী জোট
- ১৭ বছর পর স্বদেশে তারেক, নির্বাচনী বৈতরণি পার হতে বিএনপির নতুন ছক
- ঢাবি ও এমআইএসটি পরীক্ষা একই দিনে: পরীক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা আজ
- আজ ৯ ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন থাকবে যেসব এলাকাই
- গুলিস্তানের খদ্দর বাজারে আগুন, গোডাউন জ্বলছে
- শিবিরে ক্ষমতার হস্তান্তর, নেতৃত্বে সাদ্দাম–সিবগা
- বাবার কবরের সামনে দাঁড়িয়ে নীরবে কেঁদেছেন তারেক রহমান
- গাছ কাটলে গাছের কি সত্যিই ব্যথা লাগে? বিজ্ঞান কী বলে
- নারীরা কি মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়তে পারবেন?
- গিলগামেশ থেকে মিস্ত্রাল: সাহিত্যের হাজার বছরের যাত্রা
- ইসলাম কী বলে থার্টি ফার্স্ট নাইট নিয়ে
- এবার ‘হাঁস’ প্রতীক নিয়ে ভোটের ময়দানে রুমিন ফারহানা
- ইমামের কাছাকাছি বসার সওয়াব এবং জুমার দিনের বিশেষ আদবসমূহ
- ফোনের স্ক্রিনে বন্দি শৈশব: ১০ হাজার শিশুর ওপর গবেষণায় ভয়ংকর তথ্য
- নাইজেরিয়ায় ট্রাম্পের নির্দেশে মার্কিন বিমান হামলা
- বাংলাদেশি টাকায় আজকের মুদ্রা বিনিময় হার
- আজ থেকে কার্যকর স্বর্ণের নতুন মূল্য
- ফ্যামিলি কার্ড থেকে বেকার ভাতা: তারেক রহমানের রূপরেখায় যা আছে
- টানা চার দিন সূর্যের দেখা নেই: হিমেল বাতাসে কাঁপছে ভূরুঙ্গামারী
- আজ ঢাবির ভর্তি যুদ্ধ: আছে এমআইএসটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ খবর
- রেকর্ড দামে স্বর্ণ: আজ থেকে কার্যকর হচ্ছে বাজুসের নতুন মূল্য
- আজকের স্বর্ণের দাম: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫
- নারী-সঙ্গীর হাতে পুরুষের যৌনাঙ্গ ছিন্নকরণ: বাংলাদেশে অবহেলিত এক সহিংসতার সংকট
- আজ থেকে কার্যকর স্বর্ণের নতুন মূল্য
- আজ টানা ১০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকবে না যেসব এলাকায়
- বাবার কবরের সামনে দাঁড়িয়ে নীরবে কেঁদেছেন তারেক রহমান
- স্বর্ণের বাজারে আগুন: আজ ইতিহাসের দামী সোনা কিনবেন ক্রেতারা
- বাংলা দখল করতে এলে দিল্লি কেড়ে নেব: মমতা
- আজ থেকে শুরু বিপিএলের দ্বাদশ আসর, জানুন পূর্ণাঙ্গ সময়সূচী
- জামায়াত-চরমোনাই দ্বিমুখী লড়াই: সংকটে ইসলামী জোট
- নির্বাচন ও রমজানের কবলে ২০২৬ সালের এসএসসি পরীক্ষা: নতুন তারিখ কবে?
- আজ ৯ ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন থাকবে যেসব এলাকাই
- আজ কোন খেলা কখন? জেনে নিন সময়সূচি
- ডলারের দামে ফের পরিবর্তন: জেনে নিন আজকের সর্বশেষ টাকার রেট








