আধুনিক বিজ্ঞান ও কোরআনের আলোকে জিন: রহস্যময় অস্তিত্বের এক নতুন দিগন্ত!

এই পৃথিবীতে আল্লাহর অসংখ্য সৃষ্টি রয়েছে। এদের মধ্যে মানুষ শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হলেও, এমন অনেক সৃষ্টি আছে যাদের অস্তিত্ব আমাদের কাছে রহস্যময়। জিন জাতি তাদেরই এক উদাহরণ। ইসলামী বিশ্বাস অনুযায়ী, জিন হলো আগুনের শিখা থেকে সৃষ্ট এক অদৃশ্য সত্তা, যাদের খালি চোখে দেখা যায় না। দীর্ঘকাল ধরে, এক শ্রেণীর মানুষ যারা যুক্তি ও বিজ্ঞান দিয়ে সবকিছু বিশ্লেষণ করতে চান, তারা জিনদের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তবে, কোরআনের আয়াত ও আধুনিক বিজ্ঞানের বিভিন্ন তত্ত্ব এখন জিনদের রহস্যময় অস্তিত্বের নতুন এক ব্যাখ্যা দিচ্ছে।
জিন: কোরআনের বর্ণনা ও তাদের প্রকৃতি
ইসলাম ধর্মের মূল গ্রন্থ কোরআনে জিনদের সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, "আমি জ্বীন ও মানুষকে কেবলমাত্র আমার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছি"। মানুষের মতোই জিনদেরও নিজস্ব জীবনধারা, পরিবার ও সমাজ রয়েছে, তবে তারা ভিন্নভাবে সৃষ্ট। কোরআনে বলা হয়েছে, "এবং আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি মাটি থেকে এবং জিনকে সৃষ্টি করেছি আগুনের বিষাক্ত শিখা থেকে"। আরবি 'জিন' শব্দের অর্থ গুপ্ত বা অদৃশ্য।
আধুনিক বিজ্ঞানের তত্ত্ব ও জিনদের অস্তিত্ব
১. অ্যান্টিম্যাটার থিওরি:
পার্টিকেল ফিজিক্স অনুযায়ী, পৃথিবীতে যেমন বস্তু রয়েছে, তেমনি প্রতিবস্তু বা অ্যান্টিম্যাটারও থাকতে পারে। পদার্থের কণা যেমন পদার্থ তৈরি করে, তেমনি প্রতি-কণা দিয়ে প্রতিপদার্থ গঠিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, একটি প্রতি ইলেকট্রন ও একটি প্রতি প্রোটন মিলিত হয়ে একটি প্রতি হাইড্রোজেন পরমাণু তৈরি করে। এই প্রতিপদার্থগুলো অদৃশ্য এবং এদের গতি কোনো যন্ত্র দ্বারা পর্যবেক্ষণ করা যায় না, কিন্তু বিজ্ঞান এদের অস্তিত্বকে অস্বীকার করতে পারে না। এই তত্ত্ব অনুযায়ী, পৃথিবীর প্রায় ৮০০ কোটি মানুষের বিপরীতে যদি ৮০০ কোটি প্রতি-মানুষ থাকে, তাহলে তাদের জিন হিসেবে আখ্যায়িত করা কি ভুল হবে?
২. কোয়ান্টাম সুপারপোজিশন ও কোয়ান্টাম টানেলিং:
কোয়ান্টাম স্তরে বস্তুর আচরণ অদ্ভুতভাবে পরিবর্তিত হয়। একটি কণা একইসাথে একাধিক অবস্থানে থাকতে পারে, যাকে সুপারপোজিশন বলে। এছাড়াও, কোয়ান্টাম টানেলিং তত্ত্ব অনুযায়ী কণাগুলো যেকোনো প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করতে সক্ষম। এর অর্থ হলো, কোনো কিছু অদৃশ্য বা আমাদের চোখে ধরা না পড়লেও তার অস্তিত্ব ঠিকই রয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, "নিঃসন্দেহে আল্লাহ শ্রবণকারী এবং সকল বিষয়ে জানেন যা তোমরা জানো না"। কোরআনের এই আয়াত কোয়ান্টাম তত্ত্বের অদৃশ্য বিশ্ব বা প্যারালাল রিয়ালিটির বাস্তব প্রতিফলন ঘটায়। এই তত্ত্বগুলো থেকে বোঝা যায়, মানুষের পাশাপাশি জিন জাতীয় সত্তাও সহাবস্থান করতে পারে এবং তারা বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করতে সক্ষম।
৩. প্যারালাল ইউনিভার্স থিওরি:
এই তত্ত্বটি এমন একটি ধারণা যা নিয়ে বিজ্ঞানীরা বর্তমানে গবেষণা করছেন। এটি হলো সমান্তরাল মহাবিশ্ব, যেখানে আমাদের মহাবিশ্বের বাইরে আরেকটি বিশ্ব একই সময়ে বিভিন্ন অবস্থানে আলাদা আলাদা নিয়মে চলতে পারে। এই ধারণা আল্লাহ তাআলা আজ থেকে প্রায় দেড় হাজার বছর আগে কোরআনে দিয়ে রেখেছেন। কোরআনে বলা হয়েছে, "আল্লাহ সাত আসমান এবং অনুরূপভাবে সাত জমিন সৃষ্টি করেছেন। এসবের মধ্যে তার আদেশ অবতীর্ণ হয় যাতে তোমরা জানতে পারো আল্লাহ সর্বশক্তিমান এবং সবকিছু তার জ্ঞানের মধ্যে"। কোরআনের এই ধরনের সৃষ্টির বিবরণ আধুনিক বিজ্ঞান এখন 'মাল্টি' বা 'অনন্ত মহাবিশ্ব' নামে অভিহিত করছে। যদি আমাদের জগতের মতো আরেকটি জগত থাকে, তাহলে সেখানে জিন জাতির বসবাস করাটা খুব অযৌক্তিক নয়।
জিনদের বিভিন্ন রূপ:
জিনদের একেবারেই দেখা যায় না, এমনটা নয়। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে জিনদের আকৃতি বিষয়ক যেসব বর্ণনা এসেছে, তা মৌলিকভাবে তিন প্রকার:
অদৃশ্যমান ও আকৃতিবিহীন: এদের শুধু শারীরিক উপস্থিতি টের পাওয়া যায় এবং এরা আকাশে উড়তে পারে।
দৃশ্যমান (মানুষের মতো): এরা মানুষের মতো আকার ধারণ করে মানুষের সাথেই বসবাস করে, কিন্তু আপনি নিজেও জানবেন না যে আপনার পাশের লোকটি জিন।
দৃশ্যমান (বিকৃত রূপ): এরা কুকুর, বিড়াল, সাপ ইত্যাদি বিকৃত রূপ ধারণ করে সমাজে চলাফেরা করে।
আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের এই তত্ত্বগুলো জিন জাতির অস্তিত্ব অস্বীকারের পথ অনেকটাই বন্ধ করে দিয়েছে। বরং, পদার্থবিজ্ঞান সম্পর্কে মানুষের জ্ঞান যত বৃদ্ধি পাচ্ছে, জিনের অস্তিত্বের পক্ষে যুক্তি ততই জোরালো হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা হয়তো এর নাম দিয়েছেন এলিয়েন, তবে এলিয়েন নিয়েও ইসলামের ব্যাখ্যা রয়েছে।
/আশিক
সূর্যও যেখানে বামন: মহাবিশ্বের দানব নক্ষত্রদের সামনে আমাদের অস্তিত্ব কতটুকু?
এক মহাজাগতিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে, আমাদের পরিচিত এই পৃথিবী, তার সমস্ত অহংকার, ব্যস্ততা আর সংঘাতসহ, কেবলই এক ক্ষুদ্র নীল বিন্দু। শত শত কোটি কিলোমিটার দূর থেকে তোলা এক ছবিতে আমাদের এই গ্রহকে একটি বিবর্ণ নীল বিন্দু ছাড়া আর কিছুই মনে হয় না। এই ছবিটিই মহাবিশ্বের বিশালতার সাপেক্ষে আমাদের অস্তিত্বকে নতুন করে ভাবতে শেখায়। প্রশ্ন জাগে, এই অসীম মহাবিশ্বের আয়তন ঠিক কতটুকু? আর এর মাঝে আমাদের অবস্থান কোথায়?
আমাদের সৌর ঠিকানা থেকে নক্ষত্রের দুনিয়ায়
আমরা জানি আমাদের পৃথিবী নামক গ্রহটি প্রায় ৫১ কোটি বর্গ কিলোমিটারের এক বিশাল গোলক। কিন্তু এই বিশালতা সৌরজগতের কাছে কিছুই নয়। সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘূর্ণায়মান গ্রহ, উপগ্রহ আর লক্ষ কোটি গ্রহাণু নিয়ে আমাদের সৌরজগত গঠিত। তবে আমাদের সূর্যও কিন্তু মহাবিশ্বের কোটি কোটি নক্ষত্রের ভিড়ে সাধারণ একটি নক্ষত্র মাত্র।
রাতের আকাশে আমরা যে তারাদের মিটিমিটি করে জ্বলতে দেখি, তাদের অনেকেই আমাদের সূর্যের চেয়ে হাজার হাজার গুণ বড়। উদাহরণস্বরূপ, কালপুরুষ নক্ষত্রমণ্ডলের রিগেল নামক নীল অতিদানব নক্ষত্রটি আমাদের সূর্যের চেয়ে ৭৯ গুণ বড়। একই নক্ষত্রমণ্ডলের বেটেলজিউস নামক আরেকটি লাল দানব নক্ষত্র সূর্যের চেয়ে প্রায় ৭৬৪ গুণ বিশাল। যদি বেটেলজিউসকে আমাদের সূর্যের জায়গায় স্থাপন করা হতো, তবে তা মঙ্গল গ্রহের কক্ষপথকেও ছাড়িয়ে যেত। এইতারতম্য আমাদের সূর্যের বিশালতা সম্পর্কে ধারণাকে মুহূর্তেই ম্লান করে দেয়।
আলোর গতিতেও যা পাড়ি দেওয়া দুঃসাধ্য
মহাকাশের বিশালতা কেবল আকারে নয়, দূরত্বেও অকল্পনীয়। আমাদের সূর্যের সবচেয়ে কাছের প্রতিবেশী নক্ষত্র প্রক্সিমা সেন্টোরি। এর দূরত্ব প্রায় ৪.২ আলোকবর্ষ, অর্থাৎ আলো প্রতি সেকেন্ডে তিন লক্ষ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে গেলেও সেখানে পৌঁছাতে ৪.২ বছর সময় লাগবে। বর্তমানে মানুষের তৈরি সবচেয়ে দ্রুতগতির মহাকাশযান পার্কার সোলার প্রোব, যা প্রতি সেকেন্ডে ১৯২.২ কিলোমিটার বেগে চলে, তারও এই দূরত্ব অতিক্রম করতে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার বছর লেগে যাবে। এই পরিসংখ্যান মহাবিশ্বের দুটি প্রতিবেশী নক্ষেত্রের মধ্যকার শূন্যতার বিশালতাকেই তুলে ধরে।
আমাদের ছায়াপথ: এক মহাজাগতিক শহর
আমাদের সূর্য এবং তার প্রতিবেশীসহ প্রায় ৮০ কোটি নক্ষত্র যে বিশাল সর্পিল কাঠামোতে অবস্থান করছে, তার নাম অরিয়ন-সিগনাস আর্ম। এটি আমাদের গ্যালাক্সি বা ছায়াপথ ‘মিল্কিওয়ে’-এর একটি ক্ষুদ্র বাহু মাত্র। মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি নিজেই প্রায় ১ লক্ষ আলোকবর্ষ প্রশস্ত এবং এতে রয়েছে প্রায় ২০ হাজার কোটি থেকে ৪০ হাজার কোটি নক্ষত্র। এই ছায়াপথ যেন এক মহাজাগতিক শহর, যেখানে প্রতিটি নক্ষত্র একটি বাড়ির মতো এবং আমরা সেই শহরের এক কোণায় বসবাস করছি।
ছায়াপথের বাইরেও অসীম জগৎ
আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিও মহাবিশ্বে একা নয়। এর নিকটতম প্রতিবেশী গ্যালাক্সি হলো অ্যান্ড্রোমিডা, যা আমাদের থেকে প্রায় ২৬.৫ লক্ষ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত এবং এতে রয়েছে প্রায় এক ট্রিলিয়ন বা এক লক্ষ কোটি নক্ষত্র। আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞান বলছে, মহাবিশ্বে এমন গ্যালাক্সির সংখ্যা প্রায় দুই লক্ষ কোটিরও বেশি।
এই অকল্পনীয় বিশালতা, এই সুশৃঙ্খল বিন্যাস আর নিখুঁত কার্যকারিতা একথাই প্রমাণ করে যে এই মহাবিশ্ব কোনো আকস্মিক বিস্ফোরণের ফল নয়। এর পেছনে রয়েছে এক মহান কারিগরের সুনিপুণ পরিকল্পনা। প্রতিটি নক্ষত্র, প্রতিটি গ্যালাক্সি এক অদৃশ্য নিয়মের শৃঙ্খলে বাঁধা। এই বিশালতার সামনে দাঁড়িয়ে মানুষ হিসেবে আমাদের ক্ষুদ্রতা এবং এই মহাজাগতিক ঐকতানের পেছনের পরম শক্তিকে উপলব্ধি করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না।
/আশিক
সভ্যতার সঙ্গমস্থল আফগানিস্তান: ইতিহাস, সংগ্রাম ও পুনর্জাগরণের এক দীর্ঘ যাত্রা
আফগানিস্তান—এক নাম, যেখানে ইতিহাস, ধর্ম, সংস্কৃতি ও রাজনীতির সংঘর্ষ এক জটিল সিম্ফনিতে গেঁথে আছে। একদিকে এটি এশিয়ার হৃদয়ে অবস্থিত সভ্যতার সংযোগস্থল, অন্যদিকে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এটি যুদ্ধ, বিদেশি আগ্রাসন ও অভ্যন্তরীণ সংঘাতের কেন্দ্রবিন্দু। ভৌগোলিক অবস্থান এটিকে যেমন বাণিজ্য ও সংস্কৃতির কেন্দ্র বানিয়েছে, তেমনি করেছে এক অস্থির রাজনৈতিক ল্যান্ডস্কেপের প্রতীক।
ভৌগলিক অবস্থান:
আফগানিস্তান (আনুষ্ঠানিক নাম: Islamic Emirate of Afghanistan) দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার মিলনবিন্দুতে অবস্থিত একটি স্থলবেষ্টিত দেশ। এর পূর্ব ও দক্ষিণে পাকিস্তান, পশ্চিমে ইরান, উত্তরে তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান ও তাজিকিস্তান এবং উত্তর–পূর্ব কোণে চীনের সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে। আয়তন প্রায় ৬,৫২,০০০ বর্গকিলোমিটার, যার অধিকাংশ অংশজুড়ে বিস্তৃত হিন্দুকুশ পর্বতমালা।
ছবি:মানচিত্রে আফগানিস্তান
দেশটির ভূপ্রকৃতি কঠিন ও শুষ্ক, পাহাড়, উপত্যকা ও মরুভূমি মিলিয়ে এক বৈচিত্র্যময় ভূদৃশ্য তৈরি করেছে। খাইবার পাস ও সালাং পাস শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার সংযোগপথ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। আফগানিস্তানের জলবায়ু প্রধানত শুষ্ক; গ্রীষ্মে গরম ও শীতকালে হিমশীতল। আমু দরিয়া, হেলমান্দ ও কাবুল নদী কৃষিকাজের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জলসম্পদ।
ইতিহাস
আফগানিস্তানের ইতিহাস মানবসভ্যতার প্রাচীন অধ্যায় পর্যন্ত প্রসারিত। প্রাগৈতিহাসিক যুগে মানব বসতির প্রমাণ পাওয়া যায়, আর খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে এটি ছিল আকেমেনীয় পারস্য সাম্রাজ্যের অংশ। পরে আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট এর অভিযান, কুশান সাম্রাজ্য, গজনবী ও গুরিদ রাজবংশ, এবং ইসলামী যুগে বহু রাজবংশের উত্থান-পতন এই ভূখণ্ডকে বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার দিয়েছে (Dupree, 1973)।
১৯শ শতকে এটি ছিল তথাকথিত “গ্রেট গেম”–এর কেন্দ্র—ব্রিটিশ ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে এক ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতা। দীর্ঘ প্রতিরোধের পর ১৯১৯ সালের তৃতীয় অ্যাংলো–আফগান যুদ্ধ স্বাধীনতা এনে দেয় রাজা আমানুল্লাহ খান–এর নেতৃত্বে। রাজতন্ত্র টিকে ছিল ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত, এরপর শুরু হয় এক অস্থির রাজনৈতিক অধ্যায়—সোভিয়েত আগ্রাসন (১৯৭৯–৮৯), গৃহযুদ্ধ, তালেবান শাসন (১৯৯৬–২০০১), এবং মার্কিন নেতৃত্বাধীন দখল (২০০১–২০২১)। অবশেষে আগস্ট ২০২১–এ মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পর তালেবান পুনরায় ক্ষমতায় ফিরে আসে, প্রতিষ্ঠিত হয় Islamic Emirate of Afghanistan।
শাসনব্যবস্থা
আফগানিস্তানের শাসন কাঠামো ইতিহাস জুড়ে বারবার পরিবর্তিত হয়েছে—রাজতন্ত্র, প্রজাতন্ত্র, সমাজতান্ত্রিক শাসন থেকে শুরু করে ইসলামী আমিরাত পর্যন্ত। বর্তমানে দেশটি তালেবানদের অধীনে একটি ধর্মভিত্তিক আমিরাত, যেখানে শাসনের মূল ভিত্তি হলো শরিয়াহ আইন। সর্বোচ্চ ক্ষমতা আমির আল মুমিনিন (Hibatullah Akhundzada)–এর হাতে কেন্দ্রীভূত।
সংবিধান, সংসদ বা নির্বাচনী কাঠামো অনুপস্থিত; সিদ্ধান্ত আসে ধর্মীয় নেতৃত্বের পরামর্শ ও ফতোয়ার ভিত্তিতে। প্রশাসনিকভাবে দেশটি প্রদেশ ও জেলায় বিভক্ত, যেখানে গভর্নর ও আলেম কাউন্সিল দায়িত্ব পালন করে। তবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির অভাব ও অভ্যন্তরীণ বৈচিত্র্যের কারণে শাসনব্যবস্থা কার্যকারিতা অর্জন করতে পারছে না।
সংস্কৃতি
আফগান সংস্কৃতি মধ্য এশিয়া, পারস্য, ভারত ও আরব সভ্যতার সংমিশ্রণ। দেশটির প্রধান জাতিগোষ্ঠী হলো পশতুন, তাজিক, হাজারাস ও উজবেক। প্রত্যেকের নিজস্ব ভাষা, পোশাক, সংগীত ও আচার-অনুষ্ঠান আফগান পরিচয়ের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
কবিতা ও মৌখিক কাহিনিচর্চা আফগান সংস্কৃতির প্রাণ। জালালউদ্দিন রুমি ও আবদুল কাদির বেদিলের মতো কবিরা এখানকার সাহিত্যঐতিহ্যের গর্ব। সংগীতে রুবাব, তবলা ও দোলক ব্যবহৃত হয়, আর আফগান কার্পেট ও সূচিশিল্প আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাত। আতিথেয়তা (melmastia) ও সম্মানবোধ (nang) পশতুন সমাজে সামাজিক মূল্যবোধের কেন্দ্র।
ধর্ম
জনসংখ্যার প্রায় ৯৯ শতাংশ মুসলিম; এর মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ সুন্নি (হানাফি) ও ১০ শতাংশ শিয়া (প্রধানত হাজারা সম্প্রদায়)। ইসলাম আফগান সমাজের আইনি, শিক্ষাগত ও পারিবারিক কাঠামোর ভিত্তি।
ইসলাম আগমনের আগে এই ভূখণ্ডে বৌদ্ধ, জরাথুস্ত্রী ও হিন্দুধর্মের চিহ্ন পাওয়া যায়। বামিয়ান বুদ্ধ মূর্তি, যদিও ২০০১ সালে ধ্বংস করা হয়, এই প্রাচীন ঐতিহ্যের সাক্ষ্য। আজকের আফগানিস্তানে ধর্মীয় রক্ষণশীলতা প্রবল, বিশেষত নারীর শিক্ষা ও সামাজিক অংশগ্রহণ সীমিত।
রাজনীতি
আধুনিক আফগানিস্তানের রাজনীতি মূলত অনিশ্চয়তা ও সংঘর্ষের ইতিহাস। ২০০৪–২০২১ সাল পর্যন্ত Islamic Republic of Afghanistan ছিল একটি নির্বাচিত সরকারব্যবস্থা, কিন্তু দুর্নীতি ও বৈদেশিক নির্ভরতা এর স্থায়িত্ব নষ্ট করে। ২০২১ সালে তালেবানের পুনরাগমনের পর দেশটি আবারও একক দলীয় ইসলামী শাসনে ফিরে যায়।
ছবি- তালেবান শাসনের তৃতীয় বর্ষ উদযাপন
রাজনৈতিক বহুত্ববাদ বা বিরোধী দলের কার্যকারিতা নেই। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের স্বীকৃতির অভাবে কূটনৈতিক বিচ্ছিন্নতা গভীর হয়েছে, যা অর্থনীতি ও মানবাধিকার পরিস্থিতিকে আরও সংকটে ফেলেছে।
অর্থনীতি
আফগানিস্তানের বর্তমান অর্থনৈতিক গতিশীলতা এক জটিল বৈপরীত্যের মধ্যে অবস্থান করছে। ২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা, বৈদেশিক সহায়তা বন্ধ হওয়া এবং ব্যাংকিং ব্যবস্থার স্থবিরতায় অর্থনীতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশটি আঞ্চলিক বাণিজ্য, সীমিত কর আদায় এবং খনিজ সম্পদ উত্তোলন থেকে কিছুটা স্থিতিশীলতা খুঁজছে। কৃষি ও ক্ষুদ্র ব্যবসা এখনো জনজীবনের প্রধান অবলম্বন। তবে বেকারত্ব, মুদ্রাস্ফীতি, খাদ্যনিরাপত্তা সংকট এবং নারীর কর্মসংস্থান নিষেধাজ্ঞা দীর্ঘমেয়াদে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারকে বাধাগ্রস্ত করছে। আন্তর্জাতিক বাজারে আফগানিস্তানের লিথিয়াম ও খনিজ সম্পদের সম্ভাবনা অর্থনীতিতে নতুন দিগন্ত খুলতে পারে, যদি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও বৈদেশিক বিনিয়োগের পরিবেশ নিশ্চিত করা যায়।
প্রাকৃতিক সম্পদ
আফগানিস্তান বিশ্বের অন্যতম খনিজসম্পদে সমৃদ্ধ দেশ। এতে রয়েছে বিপুল পরিমাণ লিথিয়াম, তামা, লোহা, সোনা, কোবাল্ট ও রেয়ার আর্থ এলিমেন্টস—যার সম্ভাব্য বাজারমূল্য প্রায় ১ ট্রিলিয়ন ডলার (USGS, 2010)। এই সম্পদ বিশ্বব্যাপী নবায়নযোগ্য শক্তি খাতে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
কৃষিই দেশের মূল পেশা; জনগণের প্রায় ৬০% কৃষিকাজে নিয়োজিত। প্রধান ফসল গম, বাদাম, আঙুর, ডালিম ও আফিম। দীর্ঘ যুদ্ধ, খরা ও অবকাঠামোগত দুর্বলতা কৃষি উৎপাদন বাধাগ্রস্ত করেছে।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও ঐতিহ্য
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে আফগানিস্তান অপূর্ব। হিন্দুকুশ ও পামির পর্বতমালার তুষারাচ্ছন্ন চূড়া, বামিয়ানের বন্দে আমির হ্রদসমূহ, এবং দূরবর্তী ওয়াখান করিডর—সবই মনোমুগ্ধকর দৃশ্যপটে ভরপুর।
ছবি:বন্দে আমির হ্রদ
সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের দিক থেকেও দেশটি অনন্য। হেরাত, বালখ ও কান্দাহার ইতিহাসে জ্ঞানের ও বাণিজ্যের কেন্দ্র ছিল। জামের মিনার (UNESCO বিশ্ব ঐতিহ্য) মধ্যযুগীয় ইসলামি স্থাপত্যের এক অমূল্য নিদর্শন। বামিয়ানের মূর্তিগুলির ধ্বংসাবশেষ আজও স্মরণ করিয়ে দেয়, কেমনভাবে ইতিহাস ও বিশ্বাসের সংঘাত এক জাতির স্মৃতিকে রূপান্তরিত করেছে।
ছবি:জামের মিনার
আন্তর্জাতিক সদস্যপদ
২০২১ সালের আগে আফগানিস্তান জাতিসংঘ (UN), ইসলামিক কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (OIC), দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (SAARC) ও ইকোনমিক কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (ECO)-এর সদস্য ছিল।
বর্তমানে তালেবান সরকার আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নয়, ফলে কূটনৈতিক প্রতিনিধিত্ব নিয়ে দ্বৈততা তৈরি হয়েছে। বেশিরভাগ আন্তর্জাতিক সংস্থায় পূর্বতন সরকারের প্রতিনিধিরাই আনুষ্ঠানিকভাবে আফগানিস্তানের আসন ধরে রেখেছে। তবুও চীন, রাশিয়া, পাকিস্তান ও ইরানের মতো আঞ্চলিক শক্তিগুলো কৌশলগত কারণে তালেবান সরকারের সঙ্গে সীমিত যোগাযোগ বজায় রেখেছে।
চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা
আফগানিস্তানের প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো—দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের পরিণতি, অর্থনৈতিক মন্দা, খাদ্যসংকট, ও মানবাধিকার লঙ্ঘন। বিশেষত নারীর শিক্ষা নিষিদ্ধ, কর্মসংস্থান সীমিত, এবং গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণাধীন—যা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির পথে বড় বাধা।
তবু সম্ভাবনাও অমলিন। ভৌগোলিক অবস্থান আফগানিস্তানকে এশিয়ার বাণিজ্য ও শক্তি সংযোগের কেন্দ্র করতে পারে। TAPI গ্যাস পাইপলাইন ও CASA–1000 বিদ্যুৎ প্রকল্প দেশটিকে আঞ্চলিক সহযোগিতার সেতুতে পরিণত করতে পারে। তবে এর জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসন ও নারীর শিক্ষা ও অধিকারের নিশ্চয়তা।
আফগানিস্তান ইতিহাসের এক বিস্ময়কর প্যারাডক্স—অসীম সম্পদ ও গৌরবময় ঐতিহ্যের দেশ, অথচ অনন্ত সংঘর্ষ ও অনিশ্চয়তার আবাস। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এই ভূমি যেমন সাম্রাজ্যের কবরস্থান, তেমনি সভ্যতার জন্মভূমি। আফগান জনগণের সহনশীলতা, কবিত্ব ও সাহস এই দেশকে এখনও টিকিয়ে রেখেছে।
যদি আফগানিস্তান একদিন ধর্ম ও স্বাধীনতা, ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মধ্যে সামঞ্জস্য খুঁজে পায়, তবে এটি আবারও হয়ে উঠতে পারে সেই ঐতিহাসিক ভূমি—যেখানে সভ্যতাগুলো মিলিত হয়, ধ্বংস নয়।
তথ্যসূত্র:
Dupree, L. (1973). Afghanistan. Princeton University Press.
U.S. Geological Survey (USGS). (2010). Afghanistan Nonfuel Mineral Resources Map.
Barfield, T. (2010). Afghanistan: A Cultural and Political History. Princeton University Press.
Rashid, A. (2021). Taliban: Militant Islam, Oil and Fundamentalism in Central Asia (3rd ed.). Yale University Press.
Rubin, B. R. (2013). Afghanistan from the Cold War through the War on Terror. Oxford University Press.
United Nations Development Programme (UNDP). (2023). Afghanistan: Socioeconomic Outlook 2023.
World Bank. (2024). Afghanistan Development Update: Challenges and Prospects.
রবার্ট ওপেনহাইমার: যে বিজ্ঞানীর হাতে তৈরি হয়েছিল মানব ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বোমা!
জে. রবার্ট ওপেনহাইমার – বিংশ শতাব্দীর এক বিতর্কিত এবং অসাধারণ প্রতিভার নাম, যিনি মানব ইতিহাসের গতিপথ বদলে দিয়েছিলেন পারমাণবিক বোমা আবিষ্কারের মাধ্যমে। তাকে প্রায়শই "পারমাণবিক বোমার জনক" হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এই মানুষটির জীবন কেবল বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবন নয়, বরং নৈতিক সংঘাত, রাজনৈতিক চাপ এবং এক গভীর ব্যক্তিগত যন্ত্রণার গল্প।
প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষাজীবন:
১৯০৪ সালে নিউইয়র্কের এক ধনী ইহুদি পরিবারে জন্ম নেওয়া জুলিয়াস রবার্ট ওপেনহাইমার ছোটবেলা থেকেই ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর তিনি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় এবং জার্মানির গটিংজেন বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন। গটিংজেনে তিনি ম্যাক্স বর্নের অধীনে কোয়ান্টাম ফিজিক্সে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ওপেনহাইমার দ্রুতই তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের একজন উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন এবং ১৯৩০-এর দশকে বার্কলেতে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় এবং ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে শিক্ষকতা শুরু করেন। তার লেকচার এবং গবেষণার গভীরতা তাকে অনেক ছাত্রের কাছে প্রিয় করে তোলে।
ম্যানহাটন প্রজেক্ট এবং পারমাণবিক বোমার জন্ম:
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে, নাৎসি জার্মানির পারমাণবিক বোমা তৈরির আশঙ্কায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র "ম্যানহাটন প্রজেক্ট" নামে এক গোপন প্রকল্প শুরু করে। ১৯৪২ সালে, মাত্র ৩৮ বছর বয়সে, ওপেনহাইমারকে এই বিশাল প্রকল্পের নিউ মেক্সিকোর লস অ্যালামোস ল্যাবরেটরির পরিচালক হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। তার কাজ ছিল বিশ্বের সেরা পদার্থবিজ্ঞানী, রসায়নবিদ এবং প্রকৌশলীদের একত্রিত করে একটি পারমাণবিক বোমা তৈরি করা।
মাত্র তিন বছরের মধ্যে, তার নেতৃত্বে বিজ্ঞানীরা অসম্ভবকে সম্ভব করে তোলেন। ১৯৪৫ সালের ১৬ই জুলাই নিউ মেক্সিকোর আলামোগোর্ডোর কাছে "ট্রিনিটি টেস্ট"-এ মানব ইতিহাসের প্রথম পারমাণবিক বোমা সফলভাবে বিস্ফোরিত হয়। এই মুহূর্তের সাক্ষী হয়ে ওপেনহাইমার ভগবদ গীতার একটি শ্লোক উদ্ধৃত করেন: "আমিই মৃত্যু, আমিই বিশ্ব ধ্বংসকারী।" এই বিস্ফোরণের ভয়াবহতা তাকে গভীরভাবে নাড়া দেয়।
নৈতিক দ্বিধা এবং রাজনৈতিক পরিণতি:
বোমা তৈরির পর, ১৯৪৫ সালের ৬ই আগস্ট জাপানের হিরোশিমা এবং ৯ই আগস্ট নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করা হয়, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটায়। কিন্তু এর ভয়াবহ ধ্বংসলীলা ওপেনহাইমারকে নৈতিকভাবে বিচলিত করে তোলে। তিনি পরবর্তীতে পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার রোধের জন্য জোর চেষ্টা চালান এবং হাইড্রোজেন বোমা তৈরির বিরোধিতা করেন।
তার এই অবস্থান মার্কিন সরকারের কাছে অপ্রত্যাশিত ছিল। ১৯৫০-এর দশকের শীতল যুদ্ধের সময়ে, মার্কিন সেনেটর জোসেফ ম্যাকার্থির নেতৃত্বে 'কমিউনিস্ট বিরোধী অভিযান' চরমে পৌঁছায়। ওপেনহাইমারের অতীত বামপন্থী সংযোগ এবং হাইড্রোজেন বোমা তৈরির বিরোধিতা তাকে সন্দেহের তালিকায় ফেলে দেয়। ১৯৫৪ সালে, একটি বিতর্কিত শুনানিতে তার নিরাপত্তা অনুমোদন (security clearance) বাতিল করা হয়, যা তার কর্মজীবনের জন্য এক বিরাট আঘাত ছিল। তাকে সরকারী পদ থেকে অপসারণ করা হয় এবং তার খ্যাতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
শেষ জীবন এবং পুনর্বাসন:
অপমানিত হলেও, ওপেনহাইমার প্রিন্সটনের ইনস্টিটিউট ফর অ্যাডভান্সড স্টাডির পরিচালক হিসেবে তার কাজ চালিয়ে যান এবং তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানে গবেষণা অব্যাহত রাখেন। ১৯৬০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে তার প্রতি জনসমর্থন বাড়তে থাকে এবং তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলোর ভিত্তি নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। ১৯৬৩ সালে, প্রেসিডেন্ট জন এফ. কেনেডির নির্দেশে তাকে 'এনরিকো ফার্মি অ্যাওয়ার্ড' প্রদান করা হয়, যা ছিল এক প্রকার প্রতীকী পুনর্বাসন।
১৯৬৭ সালে ওপেনহাইমার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর কয়েক দশক পর, ২০২২ সালে মার্কিন জ্বালানি বিভাগ আনুষ্ঠানিকভাবে ওপেনহাইমারের ১৯৫৪ সালের নিরাপত্তা অনুমোদন বাতিল করার সিদ্ধান্তকে "ত্রুটিপূর্ণ" বলে ঘোষণা করে এবং তার সম্মান পুনরুদ্ধার করে।
রবার্ট ওপেনহাইমারের জীবন মানব ইতিহাসে বিজ্ঞান, ক্ষমতা এবং নৈতিকতার জটিল interplay-এর এক শক্তিশালী উদাহরণ। তার আবিষ্কার যেমন যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটিয়েছিল, তেমনই মানবতাকে এক নতুন এবং ভয়াবহ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এসেছিল, যার ভার তাকে আমৃত্যু বহন করতে হয়েছে।
লিওনার্দো দা ভিঞ্চি – এক কিংবদন্তি যিনি ৫০০ বছর আগেই ভবিষ্যতের পথ এঁকে রেখেছিলেন!
আর্ট গ্যালারির নিস্তব্ধতা ভেঙে যখন মোনালিসার সেই রহস্যময় হাসি চোখে পড়ে, তখন কি কেউ ভাবে এই হাসির স্রষ্টা ছিলেন এমন এক মানুষ, যিনি ৫০০ বছর আগেও হেঁটেছিলেন ভবিষ্যতের পথে? তিনি ছিলেন লিওনার্দো দা ভিঞ্চি – শুধু একজন শিল্পী নন, একাধারে বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী, শারীরতত্ত্ববিদ, সঙ্গীতজ্ঞ এবং উদ্ভাবক। তার জীবন ছিল কৌতূহল, অদম্য অনুসন্ধিৎসা আর সীমাহীন সৃজনশীলতার এক মহাকাব্য।
এক 'বাস্টার্ড' সন্তানের শৈশব ও প্রকৃতির শিক্ষাগুরু:
১৪৫২ সালের ১৫ এপ্রিল ইতালির ভিঞ্চি শহরের কাছে অ্যানচিয়ানো গ্রামে এক অখ্যাত কৃষক নারীর গর্ভে জন্ম নেন লিওনার্দো। তার বাবা ছিলেন পিয়েরো ফ্রান্সেস্কো দা ভিঞ্চি নামের একজন ধনী নোটারি, এবং মা ছিলেন ক্যাটারিনা নামের এক সাধারণ কৃষক নারী। যেহেতু তার বাবা-মা বিবাহিত ছিলেন না, তাই লিওনার্দোকে 'বাস্টার্ড' (অবৈধ সন্তান) হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। দুর্ভাগ্যবশত, তার ঠাকুরমাও জন্মের পরপরই মারা যান, ফলে লিওনার্দোকে শৈশবে অনেক একাকীত্ব নিয়ে বড় হতে হয়। স্কুলের গতানুগতিক শিক্ষা তার জীবনে তেমন প্রভাব ফেলেনি, কারণ তার শিক্ষক ছিলেন প্রকৃতি নিজেই। ঘন্টার পর ঘন্টা তিনি পাহাড়, নদী, গাছপালা, পাথর আর পাখির ওড়াওড়ি পর্যবেক্ষণ করতেন। এই গভীর পর্যবেক্ষণই তার শিল্প ও বিজ্ঞানের মূল ভিত্তি তৈরি করে দেয়।
ভেরোচ্চিওর কর্মশালায় শিল্পের হাতেখড়ি:
মাত্র ১৪ বছর বয়সে লিওনার্দোকে ফ্লোরেন্সের বিখ্যাত শিল্পী আন্দ্রেয়া দেল ভেরোচ্চিওর কর্মশালায় পাঠানো হয়। এখানে তিনি শুধু চিত্রাঙ্কন নয়, ভাস্কর্য, মেটালওয়ার্ক, ইঞ্জিনিয়ারিং, রসায়ন এবং অন্যান্য কলাকৌশলও শেখেন। ভেরোচ্চিও ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী এবং তার ছাত্র লিওনার্দোও তার পদাঙ্ক অনুসরণ করেন। খুব দ্রুতই লিওনার্দো তার গুরুর চেয়েও দক্ষ হয়ে ওঠেন। কথিত আছে, ভেরোচ্চিওর আঁকা 'ব্যাপটিজম অফ ক্রাইস্ট' ছবিতে লিওনার্দো একটি দেবদূত এঁকেছিলেন যা এতটাই নিখুঁত ছিল যে ভেরোচ্চিও নিজেই লিওনার্দোর প্রতিভা দেখে মুগ্ধ হয়ে নিজের হাতে আর কখনো রঙ-তুলি তোলেননি।
শিল্প ও বিজ্ঞানের সেতুবন্ধন:
লিওনার্দো দা ভিঞ্চির কাছে শিল্প ও বিজ্ঞান ছিল একই মুদ্রার দুটি পিঠ। তিনি জানতেন, সৌন্দর্যকে সঠিকভাবে ফুটিয়ে তুলতে হলে তার ভেতরের গঠনকেও বুঝতে হবে। মানবদেহ, পাখিদের উড্ডয়ন, উদ্ভিদের বৃদ্ধি - সবকিছুর পেছনের বিজ্ঞানকে তিনি তার শিল্পকর্মে নিয়ে আসতেন। তার বিখ্যাত 'দ্য লাস্ট সাপার' এবং 'মোনালিসা' ছবিতে তিনি মানুষের আবেগ ও মনস্তত্ত্বকে এমনভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন যা আজও বিস্ময়কর। তার আঁকা 'ভিট্রুভিয়ান ম্যান' মানবদেহের নিখুঁত অনুপাত এবং মহাবিশ্বের সাথে মানুষের সম্পর্ককে প্রতীকীভাবে তুলে ধরে।
ভবিষ্যৎ দ্রষ্টা ও উদ্ভাবক:
লিওনার্দো দা ভিঞ্চি শুধু তার সময়ের শিল্পী ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন স্বপ্নদর্শী উদ্ভাবক, যিনি ৫০০ বছর আগেই ভবিষ্যতের প্রযুক্তি কল্পনা করেছিলেন। তার নোটবুকগুলোতে পাওয়া যায় হেলিকপ্টার, ট্যাঙ্ক, সাবমেরিন, প্যারাসুট এবং উড়ন্ত জাহাজের অসংখ্য বিস্তারিত নকশা। তিনি হাইড্রোলিক পাম্পের মতো প্রযুক্তি ব্যবহার করে একটি শহরের জলপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ এবং জলবিদ্যুৎ ব্যবহার করে শহর আলোকিত করার ধারণাও দিয়েছিলেন। এই সবকিছুই প্রমাণ করে, তিনি ছিলেন তার সময়ের থেকে অনেক এগিয়ে।
জীবনের শেষ অধ্যায় ও অমর কীর্তি:
জীবনের শেষ তিন বছর লিওনার্দো ফ্রান্সের রাজা প্রথম ফ্রান্সিসের আমন্ত্রণে ফ্রান্সে কাটান। সেখানেই ১৫১৯ সালের ২ মে, ৬৭ বছর বয়সে এই মহান শিল্পী ও বিজ্ঞানী শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। রাজা ফ্রান্সিস তাকে 'আমার পিতা' বলে সম্বোধন করতেন এবং বলেছিলেন, "লিওনার্দো ছিলেন এমন একজন ব্যক্তি যিনি ঈশ্বরকে শিল্প ও প্রকৃতির গভীরে খুঁজে পেয়েছিলেন।" লিওনার্দো দা ভিঞ্চি ছিলেন একজন সত্যিকারের রেনেসাঁস মানব, যিনি তার প্রতিভা এবং অদম্য কৌতূহল দিয়ে মানবজাতির জ্ঞান ও সৃজনশীলতার সীমা প্রসারিত করেছিলেন। তার কাজ আজও বিশ্বজুড়ে মানুষকে অনুপ্রাণিত করে এবং প্রমাণ করে যে একটি অসীম কৌতূহলী মন কতটা কিছু অর্জন করতে পারে।
ওসামা বিন লাদেন: সৌদি ধনকুবেরের ছেলে যেভাবে হয়ে উঠলো আমেরিকার আতঙ্ক!
সৌদি আরবের এক ধনী ব্যবসায়ীর ছেলে হয়েও ওসামা বিন লাদেন বেছে নিয়েছিলেন এক ভিন্ন পথ, যা তাকে ইতিহাসের সবচেয়ে আলোচিত ও ঘৃণিত ব্যক্তিতে পরিণত করে। ১৯৫৭ সালে রিয়াদে জন্ম নেওয়া লাদেন বিলাসবহুল জীবনযাপনের পরিবর্তে অল্প বয়স থেকেই ধর্মীয় আদর্শের প্রতি আকৃষ্ট হন।
তার জীবনের মোড় ঘুরে যায় ১৯৮০-এর দশকে সোভিয়েত-আফগান যুদ্ধের সময়। তিনি আফগানিস্তানে গিয়ে নিজের পারিবারিক অর্থ ও প্রভাব ব্যবহার করে সোভিয়েতদের বিরুদ্ধে লড়াইরত মুজাহিদীনদের সহায়তা করতে শুরু করেন। সেখানে শুধু অর্থ দিয়েই নয়, নিজে সরাসরি যুদ্ধে অংশ নিয়ে তিনি মুজাহিদীনদের মধ্যে নেতা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।
যুদ্ধ শেষে ১৯৮৮ সালে তিনি গড়ে তোলেন ‘আল-কায়দা’ নামক সংগঠন, যার মূল উদ্দেশ্য ছিল মুসলিম বিশ্ব থেকে পশ্চিমা, বিশেষ করে মার্কিন সামরিক প্রভাব দূর করা। ধীরে ধীরে এই সংগঠনটি একটি আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কে পরিণত হয় এবং ১৯৯৮ সালে কেনিয়া ও তানজানিয়ায় মার্কিন দূতাবাসে হামলা এবং ২০০০ সালে যুদ্ধজাহাজ ইউএসএস কোলে হামলার মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে পরিচিতি পায়।
তবে বিশ্বকে সবচেয়ে বড় ধাক্কা দেয় ২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে ভয়াবহ বিমান হামলা। এই হামলার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে লাদেনের নাম উঠে আসার পর আমেরিকা তাকে বিশ্বের এক নম্বর শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করে এবং ‘ওয়ার অন টেরর’ বা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে।
এরপর শুরু হয় ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘ এবং ব্যয়বহুল manhunt। প্রায় এক দশক ধরে সিআইএ এবং এফবিআই-এর মতো সংস্থাগুলো তাকে খুঁজে বেড়ায়। অবশেষে, তার এক বিশ্বস্ত বার্তাবাহকের সূত্র ধরে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদ শহরের একটি সুরক্ষিত কম্পাউন্ডে তার সন্ধান মেলে।
২০১১ সালের ১লা মে, মার্কিন নেভি সিলের একটি বিশেষ দল ‘অপারেশন নেপচুন স্পিয়ার’ নামক এক গোপন অভিযানে সেই বাড়িতে হানা দেয় এবং ৪০ মিনিটের শ্বাসরুদ্ধকর লড়াইয়ের পর ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা করে। তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে আমেরিকার দীর্ঘ ১০ বছরের অনুসন্ধানের অবসান ঘটে।
দাজ্জালের আগমন এবং ইহুদিদের তৃতীয় মন্দির প্রতিষ্ঠা: নেপথ্যে সেই ‘লাল গরু’র রহস্য
পবিত্র জেরুজালেম শহরের আল-আকসা মসজিদ, মুসলিম, খ্রিস্টান এবং ইহুদি - এই তিন ধর্মের মানুষের কাছেই এক পবিত্র স্থান। কিন্তু এই মসজিদকে ঘিরেই চলছে এক চাঞ্চল্যকর ও বিতর্কিত পরিকল্পনা। ইহুদিরা বিশ্বাস করে, আল-আকসা মসজিদ ভেঙে তারা তাদের তৃতীয় ইহুদি মন্দির প্রতিষ্ঠা করবে, যা তাদের কাছে 'টেম্পল মাউন্ট' নামে পরিচিত। আর এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠা এবং কথিত 'মসীহ'-এর আগমনের জন্য তাদের প্রয়োজন এক বিশেষ বৈশিষ্ট্যের 'লাল গরু' কুরবানি। এই লাল গরুই কীভাবে দাজ্জালের আবির্ভাব ঘটাতে পারে, সেই বিষয়েই এই প্রতিবেদন।
ইহুদিদের তৃতীয় মন্দিরের স্বপ্ন ও আল-আকসার বিপদ:
ইহুদিরা বিশ্বাস করে, তাদের প্রথম ও দ্বিতীয় ইহুদি মন্দির ঠিক এই টেম্পল মাউন্টের উপরই নির্মিত হয়েছিল, যা পরবর্তীতে ধ্বংস হয়ে যায়। তাদের সকল ইহুদি বিশ্বাসী মনে করে, তাদের তৃতীয় মন্দিরও ঠিক এই জায়গাতেই নির্মিত হবে। এই মন্দির নির্মাণের মাধ্যমেই তাদের কাছে 'মসীহ'-এর আগমন ঘটবে, যাকে তারা দাজ্জাল বলে মনে করে।
জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অনুযায়ী, আল-আকসা মসজিদে শুধু মুসলিমদেরই প্রার্থনার অধিকার রয়েছে। কিন্তু ইসরাইল সরকার আল-আকসার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকে মুসলিমদের নামাজ আদায়ে বাধা দেওয়া হচ্ছে এবং ইহুদিদেরকে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তায় সেখানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। তাদের প্রথম লক্ষ্য হলো আল-আকসা মসজিদ ধ্বংস করা।
সেই দুর্লভ লাল গরুর অনুসন্ধান:
ইহুদি ধর্মমতে, তাদের পবিত্র হওয়ার জন্য এমন একটি নিখুঁত লাল গরু উৎসর্গ করতে হবে যা খুবই দুর্লভ। এই গরুর কোনো সাদা বা কালো পশম থাকতে পারবে না এবং এটি সম্পূর্ণ লাল বকনা বাছুর হতে হবে। পবিত্র কোরআনের সূরা বাকারার ৬৭ থেকে ৭৩ নম্বর আয়াতেও বনি ইসরাইলদের এই গরু সংক্রান্ত ঘটনার বর্ণনা করা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবে এমন দুর্লভ গরু খুঁজে পাওয়া কঠিন।
তবে, ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের একটি খামারে এই ধরনের পাঁচটি বাছুরের সন্ধান পাওয়া যায়। ইসরাইলের 'টেম্পল ইনস্টিটিউট' প্রায় ৫ লক্ষ ডলার খরচ করে এই বাছুরগুলোকে ইসরাইলে নিয়ে যায়। বাইবেলের বর্ণনা অনুযায়ী, বাছুরের বয়স তিন বছর না হওয়া পর্যন্ত কুরবানি করা যাবে না।
কুরবানি ও মন্দিরের পথ:
ইহুদি ধর্মমতে, এই লাল গরু কুরবানির জন্য বিশেষ কিছু নিয়ম আছে। সাধারণ কোনো ধর্মযাজক এটি কুরবানি করতে পারবে না, বরং হারুন (আঃ)-এর বংশোদ্ভূত একজন পুরোহিতই এর জন্য উপযুক্ত হবেন। টেম্পল ইনস্টিটিউট ইতিমধ্যেই এমন নয়জন পুরোহিতকে বাছাই করে রেখেছে। গরু কুরবানি করার স্থানও নির্দিষ্ট করা আছে – টেম্পল মাউন্টের পূর্ব দিকে 'মাউন্ট অলিভ'-এর এমন একটি জায়গা, যেখান থেকে পুরোহিত কুরবানি করার সময় আল-আকসা মসজিদ খালি চোখে সরাসরি দেখতে পারে।
লাল গরুটি কুরবানির পর একে পুড়িয়ে ছাই বানানো হবে। সেই ছাই পানির সাথে মিশিয়ে ইহুদিদের পবিত্র করার কাজে ব্যবহার করা হবে। এই পবিত্রকরণের কাজটি সম্পূর্ণ হওয়ার পরই ইসরাইলের ইহুদিরা ঈশ্বরের কাছ থেকে তৃতীয় মন্দির নির্মাণের অনুমতি পাবে।
ইহুদি ও খ্রিস্টানদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা:
পশ্চিমা ইভাঞ্জেলিক্যাল খ্রিস্টানরাও চায় আল-আকসা মসজিদ ভেঙে সেখানে ইহুদি মন্দির তৈরি হোক। কারণ তারা বিশ্বাস করে, যীশু খ্রিস্টের (ঈসা আঃ) পুনারায় আবির্ভাবের একটি পূর্বশর্ত হলো জেরুজালেমে ইহুদি মন্দির প্রতিষ্ঠা। 'ক্রাই ফর জায়ন' এবং 'টেম্পল মাউন্ট ইনস্টিটিউট' এর মতো সংগঠনগুলো এই লক্ষ্যে একসাথে কাজ করছে। যদিও ইহুদি ও খ্রিস্টানদের 'মসীহ' সম্পর্কে ধারণা সম্পূর্ণ ভিন্ন (ইহুদিরা যাকে 'দাজ্জাল' বলে মনে করে, খ্রিস্টানরা তাকেই 'ঈসা আঃ' হিসেবে বোঝে), তাদের প্রাথমিক লক্ষ্য মুসলিমদের পবিত্র মসজিদ আল-আকসা ধ্বংস করা। এই কারণেই তারা একে অপরকে সাহায্য করছে।
আল-আকসা মসজিদের নিচের প্রত্নতাত্ত্বিক খনন কাজ, যা মসজিদের ভিত্তি দুর্বল করে দিচ্ছে, এবং এই লাল গরুর আগমন - সবই এক সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অংশ। এই ঘটনাগুলো মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে এবং ভবিষ্যতে এর কী প্রভাব হবে, তা নিয়ে চলছে বিশ্বজুড়ে জল্পনা।
পিরামিডের আসল রহস্য কি টেসলা জানতেন? এক হারানো প্রযুক্তির বিস্ময়কর কাহিনী

মোঃ আশিকুজ্জামান
প্রাচীন মিশরের পিরামিড, যা সহস্রাব্দ ধরে মানবজাতির কাছে এক বিস্ময়। এটি কি কেবলই ফারাওদের সমাধি? নাকি এর পেছনে লুকিয়ে আছে আরও গভীর কোনো বৈজ্ঞানিক রহস্য, যা যুগ যুগ ধরে অমীমাংসিত? প্রখ্যাত উদ্ভাবক নিকোলা টেসলা বিশ্বাস করতেন, গিজার সুবিশাল পিরামিডগুলো আসলে ছিল এক বিশাল 'ওয়্যারলেস পাওয়ার প্ল্যান্ট' বা বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। তার এই যুগান্তকারী ধারণা এবং এর পেছনের যুক্তি নিয়ে এই বিশেষ প্রতিবেদন।
পিরামিড: শুধু সমাধি নয়, এক প্রযুক্তিগত বিস্ময়?
পিরামিডগুলোকে সাধারণত ফারাওদের সমাধিস্থল হিসেবে দেখা হলেও, আজ পর্যন্ত কোনো পিরামিডের ভেতর থেকে মমি পাওয়া যায়নি। এই বিষয়টিই প্রশ্ন তোলে যে, এত বিশাল স্থাপনা নির্মাণের মূল উদ্দেশ্য কী ছিল। মিশরের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ গিজার গ্রেট পিরামিডের ভেতর থেকে ৩০ ফুট লম্বা এবং ৬ ফুট চওড়া একটি সিল গালা করা 'সিক্রেট করিডোর' আবিষ্কার করে, যা এর রহস্যকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এর আগেও ২০১৭ সালে ৯৮ ফুট দীর্ঘ আরেকটি রহস্যময় করিডোর আবিষ্কৃত হয়েছিল।
নিকোলা টেসলার চাঞ্চল্যকর তত্ত্ব: পিরামিড একটি পাওয়ার প্ল্যান্ট!
ইতিহাসের অন্যতম দূরদর্শী উদ্ভাবক নিকোলা টেসলা তার জীবনের একটি বড় অংশ ওয়্যারলেস বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে গবেষণা করেছেন। ১৯০৫ সালে তিনি "The Art of Transmitting Electrical Energy Through the Natural Medium" নামে একটি পেটেন্ট ফাইল করেন। এই পেটেন্টের ধারণার উপর ভিত্তি করেই তিনি ওয়ারডেনক্লিফ টাওয়ার (Wardenclyffe Tower) প্রকল্প শুরু করেন, যার লক্ষ্য ছিল পৃথিবীর কম্পন ব্যবহার করে শক্তি উৎপাদন করে তা বিনামূল্যে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া।
টেসলার মতে, পিরামিডগুলো একই ধারণায় নির্মিত হয়েছিল। তার প্রমাণের স্বপক্ষে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ হলো:
গ্রানাইট ও কোয়ার্টজের ব্যবহার: পিরামিডের ইন্টারনাল চেম্বারগুলো, বিশেষ করে কিংস চেম্বার এবং কুইনস চেম্বার, মূলত 'রোজ গ্রানাইট' দিয়ে তৈরি। এই গ্রানাইটের ৮৫% শতাংশই কোয়ার্টজ (Quartz)।
পাইজোইলেকট্রিসিটি (Piezoelectricity): কোয়ার্টজ যখন সংকুচিত বা চালিত হয়, তখন তা এক ধরনের চার্জ তৈরি করে যাকে 'পাইজোইলেকট্রিসিটি' বলে। আধুনিক টিভি, ঘড়ি, জিপিএস সহ বহু যন্ত্রে এই প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়।
রাসায়নিক বিক্রিয়া ও হাইড্রোজেন গ্যাস:পিরামিডের কুইনস চেম্বার একটি রাসায়নিক চুল্লি হিসেবে ব্যবহৃত হতো, যেখানে হাইড্রোজেনের মতো গ্যাস তৈরি হতো। উত্তর খাত থেকে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড এবং দক্ষিণ খাত থেকে হাইড্রেটেড জিঙ্ক ক্লোরাইড একত্রিত হয়ে হাইড্রোজেন তৈরি করত। এই হাইড্রোজেন গ্যাস গ্রানাইটের উপর চাপ সৃষ্টি করে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করত।
টেসলার স্বপ্ন ও মর্গানের হস্তক্ষেপ:
টেসলার ওয়ারডেনক্লিফ টাওয়ার প্রকল্প ছিল একটি বিশাল ব্যয়বহুল উদ্যোগ। বন্ধু জে.পি. মর্গান শুরুতে অর্থায়ন করলেও, টেসলার আসল উদ্দেশ্য, অর্থাৎ বিনামূল্যে ওয়্যারলেস বিদ্যুৎ বিতরণের পরিকল্পনা জানার পর তিনি অর্থায়ন বন্ধ করে দেন। মর্গান, যিনি জেনারেল ইলেকট্রিক এবং অন্যান্য বিদ্যুৎ-সংশ্লিষ্ট ব্যবসার মালিক ছিলেন, বুঝতে পারছিলেন যে টেসলার এই আবিষ্কার তার সব ব্যবসা বন্ধ করে দেবে। এর ফলে টেসলার প্রকল্প অসমাপ্ত থেকে যায় এবং তিনি একরকম একঘরে হয়ে পড়েন।
অমীমাংসিত প্রশ্নাবলী:
১৯৪৩ সালে টেসলার মৃত্যুর সাথে সাথে তার এই যুগান্তকারী আবিষ্কারের সব তথ্য কালের গর্ভে হারিয়ে যায়। পিরামিডের গায়ে দেখা যাওয়া বিস্ফোরণ এবং রাসায়নিক উপাদানের দাগ, পাথরের ফাটল এবং ভিতরের চেম্বারগুলোর অদ্ভুত নির্মাণশৈলী আজও বহু প্রশ্ন সৃষ্টি করে:
পিরামিডগুলো কি সত্যিই প্রাচীনকালে শক্তি উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হতো?
যদি হতো, তাহলে কে বা কারা এই প্রযুক্তি ব্যবহার করতে চেয়েছিল এবং কেন?
কেন হুট করে এই প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে গেল?
এই প্রশ্নগুলোর উত্তর আজও অজানা, কিন্তু পিরামিড এবং নিকোলা টেসলার এই সংযোগ মানব সভ্যতার প্রাচীন জ্ঞান ও প্রযুক্তির এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে।
কেন ফেরাউনরা নিজেদের শরীর মমি করে রাখত? এক ঐশ্বরিক ক্ষমতার লড়াইয়ের ইতিহাস
প্রাচীন মিশর, পৃথিবীর প্রথম দিকের এক মহাপ্রতাপশালী সভ্যতা, যা প্রায় ৫,০০০ বছর ধরে বিশ্বকে শাসন করেছে। এই সাম্রাজ্যের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল ফেরাউনরা, যারা নিজেদেরকে কেবল শাসক নয়, বরং দেবতাতুল্য মনে করত। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তার ওফাতের পূর্বেই ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে মুসলমানরা একদিন মিশর জয় করবে। এই প্রতিবেদনটি ফেরাউনদের ক্ষমতার উৎস, তাদের ধর্মবিশ্বাস এবং হযরত ইউসুফ (আঃ) ও হযরত মূসা (আঃ)-এর মাধ্যমে মিশরের ইতিহাসে ঘটে যাওয়া ঐশ্বরিক পরিবর্তনের এক বিস্তারিত চিত্র তুলে ধরছে।
নীল নদের আশীর্বাদ ও ফেরাউনদের উত্থান:
প্রায় ৫,০০০ বছর আগে, পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ ছিল পানি। যার কাছে যত বেশি পানি ছিল, সে তত বেশি ক্ষমতাশালী ছিল। আর বিশ্বের বৃহত্তম নদী নীল নদ মিশরের বুকে প্রবাহিত হওয়ায়, এটি হয়ে ওঠে পৃথিবীর অন্যতম সম্পদশালী ও শক্তিশালী অঞ্চল। কিং নরমাল নামক একজন শাসক পুরো মিশরকে একত্রিত করে পৃথিবীর প্রথম শক্তিশালী সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তী ১,০০০ বছর ধরে মিশরই ছিল বিশ্বের একচ্ছত্র পরাশক্তি।
দেবত্বের দাবি ও মমি তৈরির রহস্য:
১,০০০ বছর ধরে রাজত্ব করার পর ফেরাউনরা নিজেদেরকে এতটাই ক্ষমতাশালী ভাবতে শুরু করে যে, তারা নিজেদেরকে 'খোদা' বা দেবতা হিসেবে দাবি করে। তারা এমন একটি ধর্ম প্রতিষ্ঠা করে যেখানে প্রজাদের একমাত্র কাজ ছিল ফেরাউনের দাসত্ব করা, কারণ একমাত্র তাহলেই তারা জান্নাতে যেতে পারবে বলে বিশ্বাস করানো হতো।
পরে এই ধারণায় পরিবর্তন আসে—সব ফেরাউন নয়, বরং যাদের দেহ মৃত্যুর পরেও অক্ষত থাকবে, তারাই খোদা। এই বিশ্বাস থেকেই 'মমি' তৈরির ধারণা আসে। ফেরাউনদের মৃত্যুর পর তাদের রক্ত বের করে, মস্তিষ্ক টেনে বের করে এবং শরীরের সব অঙ্গ (শুধু হার্ট ছাড়া) অপসারণ করে এক বিশেষ প্রক্রিয়ায় মমিতে পরিণত করা হতো। ৪০ দিন ধরে লবণ মেশানো পানিতে রাখার পর তাদের দেহ তেল ও মধু দিয়ে পটি বেঁধে একটি মূল্যবান কফিনে রেখে দাফন করা হতো। কফিনে তাদের দেহ, খাবার, সোনা এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, তাদের হার্ট রাখা হতো।
পিরামিডের বিস্ময় ও অর্থনৈতিক পতন:
মমি তৈরির পর ফেরাউনরা নিজেদের মমিগুলোর উপর বিশাল বিশাল পিরামিড তৈরি করা শুরু করে। প্রতিটি ফেরাউন চাইত তার পিরামিড পূর্বসূরীদের চেয়ে বড় হোক। ফেরাউন খুফুর তৈরি 'গ্রেট পিরামিড' ৩৫০০ বছর ধরে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু স্থাপনা ছিল। এটি এতটাই বিশাল যে, ১২টি বুর্জ খলিফাও এর ওজনের সমান হবে না এবং এর ভেতরে ২,০০০ ট্রাক পার্ক করা সম্ভব। তবে এই পিরামিামিডগুলো তৈরি করতে বিপুল অর্থ খরচ হওয়ায় মিশরের অর্থনীতি দুর্বল হতে শুরু করে।
হযরত ইউসুফ (আঃ) ও ইসরাঈলীদের আগমন:
মিশরের অর্থনীতি যখন দুর্বল হয়ে যাচ্ছিল, ঠিক তখনই হযরত ইউসুফ (আঃ) একজন দাস হিসেবে মিশরের বাজারে বিক্রি হন। তার অসাধারণ জ্ঞান ও প্রজ্ঞার কারণে তিনি মিশরের প্রধানমন্ত্রীর পদে উন্নীত হন। হযরত ইউসুফ (আঃ) বাদশাহর সাথে মিলে মিশরের অর্থনীতিকে পুনরায় শক্তিশালী করেন। তার মৃত্যুর পর, তার বংশধর 'বনি ইসরাঈল'রা মিশরেই বসবাস করতে থাকে এবং একসময় তারা মিশরের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী গোত্রে পরিণত হয়।
হযরত মূসা (আঃ) ও ফেরাউনদের চূড়ান্ত ধ্বংস:
মিশরে এক নতুন ফেরাউনের আগমন ঘটে, যিনি বনি ইসরাঈলদের উপর কঠোর অত্যাচার শুরু করেন। এই সময় হযরত মূসা (আঃ)-এর জন্ম হয়। ফেরাউন ভবিষ্যদ্বাণী শুনেছিল যে বনি ইসরাঈলের এক শিশু তার রাজত্ব শেষ করবে, তাই সে সব পুত্রশিশুকে হত্যার নির্দেশ দেয়। কিন্তু ঐশ্বরিক কৌশলে হযরত মূসা (আঃ) ফেরাউনের ঘরেই বড় হন।
নবী হওয়ার পর হযরত মূসা (আঃ) ফেরাউনের কাছে বনি ইসরাঈলদের মুক্তির দাবি জানান। অনেক অলৌকিক ঘটনার পর ফেরাউন তাদের যেতে দিলেও, পরে সে তার সিদ্ধান্ত ভেঙে বনি ইসরাঈলদের ধাওয়া করে। আল্লাহ তাআলা হযরত মূসা (আঃ) ও বনি ইসরাঈলদের রক্ষা করেন এবং ফেরাউন ও তার বিশাল বাহিনীকে নীল নদে ডুবিয়ে ধ্বংস করে দেন। এই ঘটনা মিশরের ৩,০০০ বছরের ফেরাউনদের শাসনের অবসান ঘটায় এবং তাদের দেবত্বের অহংকার চূর্ণ করে। এরপর মিশর তার পরাশক্তির মর্যাদা হারায় এবং বিভিন্ন সাম্রাজ্যের অধীনে চলে আসে।
অর্ধেক মানবী, অর্ধেক জিন? কুরআনে বর্ণিত রাণী বিলকিসের রহস্য
ইতিহাসের পাতায় এমন কিছু চরিত্র আছে যাদের গল্প যুগে যুগে মানুষকে মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখে। এমনই একজন রহস্যময়ী রমনী হলেন রাণী বিলকিস, যিনি এক বিশাল সাম্রাজ্য শাসন করতেন। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত এই উপাখ্যানটি রাণী বিলকিসের ক্ষমতা, নবী সুলাইমানের (আঃ) জ্ঞান ও অলৌকিক শক্তির এক অসাধারণ দৃষ্টান্ত। এই কাহিনী একটি ছোট্ট পাখির মাধ্যমে শুরু হয়ে মানবজাতির বিশ্বাস ও ক্ষমতার ধারণাকে নতুন মাত্রা দেয়।
হুদহুদ পাখির দুঃসাহসিক সংবাদ এবং রাণী বিলকিসের রাজত্ব:
নবী সুলাইমানের সেনাবাহিনী ছিল অনন্য, যেখানে মানুষ, জিন, পাখি এমনকি বাতাসও তার ইশারায় কাজ করত। হুদহুদ নামক একটি ছোট্ট পাখি ছিল এই সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান। একদিন হুদহুদ সাবা রাজ্য থেকে এক চাঞ্চল্যকর খবর নিয়ে আসে। সে জানায়, সে এমন এক রাণীকে দেখেছে যিনি এক বিশাল সিংহাসনে বসে আছেন এবং তার প্রজারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে সূর্যের উপাসনা করে।
নবী সুলাইমানের চিঠি ও রাণীর কৌশল:
নবী সুলাইমান হুদহুদের মাধ্যমে রাণী বিলকিসের কাছে একটি চিঠি পাঠান, যেখানে তাকে এক আল্লাহর প্রতি ঈমান আনতে এবং আত্মসমর্পণ করতে আমন্ত্রণ জানানো হয়। চিঠিটি অলৌকিকভাবে রাণীর বিছানায় আবির্ভূত হলে রাণী বিস্মিত ও চিন্তিত হয়ে পড়েন। তিনি তার উপদেষ্টাদের সাথে পরামর্শ করে সুলাইমানের শক্তি যাচাই করতে এবং তার মনোভাব বোঝার জন্য মূল্যবান উপহারসহ একটি দূতদল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন।
অলৌকিক ক্ষমতার প্রদর্শন ও সিংহাসনের রহস্য:
নবী সুলাইমান দূতেরা আসার আগেই হুদহুদের মাধ্যমে রানীর পরিকল্পনা জেনে যান। তিনি দূতদের স্বাগত জানানোর জন্য তার সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত করতে নির্দেশ দেন এবং তাদের দেখানোর চেষ্টা করেন যে তার শক্তি কতটা অপ্রতিরোধ্য । সুলাইমান দূতদের উপহার প্রত্যাখ্যান করে জানান, তিনি কেবল রাণীর আত্মসমর্পণ চান।
এরপর, নবী সুলাইমান তার পরিষদবর্গকে জিজ্ঞাসা করেন, কে রাণীর সিংহাসন তার এখানে নিয়ে আসতে পারবে। একজন আলেম, যিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ জ্ঞানপ্রাপ্ত ছিলেন, তিনি চোখের পলক ফেলার আগেই বিলকিসের বিশাল সিংহাসনটি সুলাইমানের সামনে এনে হাজির করেন। সিংহাসনটি দেখে রাণী হতবাক হয়ে যান এবং বুঝতে পারেন এটি অলৌকিক ক্ষমতা ছাড়া সম্ভব নয়।
স্বচ্ছ কাঁচের প্রাসাদ ও রাণীর আসল পরিচয়:
নবী সুলাইমান রাণী বিলকিসের জন্য এক বিশেষ কাঁচের প্রাসাদ নির্মাণ করান, যা পানির উপর ভাসমান বলে মনে হতো এবং যার প্রবেশপথের মেঝে ছিল স্বচ্ছ কাঁচের তৈরি। এই কাঁচের মেঝে ছিল রাণী বিলকিসের আসল পরিচয় যাচাই করার একটি পরীক্ষা। কারণ, গুঞ্জন ছিল যে রাণী বিলকিস অর্ধেক মানুষ এবং অর্ধেক জিন, আর অধিকাংশ জিনের পায়ে লোম থাকে। যখন রাণী বিলকিস সেই কাঁচের মেঝের উপর দিয়ে হাঁটতে গিয়ে তার পোশাক তুলে ধরেন, তখন তার পা দৃশ্যমান হয় এবং সুলাইমান নিশ্চিত হন যে তিনি একজন সাধারণ মানুষ।
রাণী বিলকিসের ইসলাম গ্রহণ:
রাণী বিলকিস নবী সুলাইমানের অলৌকিক ক্ষমতা ও যুক্তিবাদী কথায় প্রভাবিত হন। তিনি উপলব্ধি করেন যে, সূর্য পূজা মূর্খতা ছাড়া আর কিছুই নয় এবং তার জাতির বিশ্বাস কতটা দুর্বল ছিল । পরিশেষে, তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন এবং তার প্রজারাও তাকে অনুসরণ করে । এভাবেই হুদহুদ পাখির একটি ছোট সংবাদের মাধ্যমে শুরু হওয়া এক অভিযান মানবজাতির জন্য জ্ঞান ও বিশ্বাসের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে।
পাঠকের মতামত:
- আধুনিক বিজ্ঞান ও কোরআনের আলোকে জিন: রহস্যময় অস্তিত্বের এক নতুন দিগন্ত!
- ‘শাপলা’ প্রতীক না দেওয়া নিয়ে নির্বাচন কমিশনকে সারজিস আলমের হুঁশিয়ারি
- প্রবাসী আয়ে বড় চমক: সেপ্টেম্বরের রেমিট্যান্স নিয়ে এল সুখবর
- ঐকমত্য থাকলেও সংকট: বিএনপি-জামায়াতের দ্বন্দ্ব সনদ বাস্তবায়নে বাধা?
- সূর্যও যেখানে বামন: মহাবিশ্বের দানব নক্ষত্রদের সামনে আমাদের অস্তিত্ব কতটুকু?
- থাইরয়েডের সঙ্গে হতাশা: মানসিক স্বাস্থ্যের এই গোপন সংযোগটি জানুন
- মুক্তা থেকে রিয়েল এস্টেট: যেভাবে ৫০ বছরে মরুভূমিকে সম্পদে পরিণত করলো দুবাই
- সংসদ নির্বাচনের দিনই জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোট হতে পারে: সালাহউদ্দিন আহমদ
- ডেঙ্গু পরিস্থিতি চরম আকার ধারণ করল, একদিনের চিত্রে উদ্বেগ
- সভ্যতার সঙ্গমস্থল আফগানিস্তান: ইতিহাস, সংগ্রাম ও পুনর্জাগরণের এক দীর্ঘ যাত্রা
- রবার্ট ওপেনহাইমার: যে বিজ্ঞানীর হাতে তৈরি হয়েছিল মানব ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বোমা!
- ব্রণ চেপে ফাটানো: হতে পারে যে ভয়াবহ রোগ, সতর্ক করলেন বিশেষজ্ঞরা
- ‘পশুর মতো আচরণ’: ইসরায়েলে গ্রেটা থুনবার্গসহ কর্মীদের ভয়াবহ নির্যাতনের অভিযোগ
- আগামী ২৪ ঘণ্টায় ৩ বিভাগে অতি ভারী বৃষ্টির শঙ্কা
- মার্কিন প্রস্তাব নিয়ে উত্তাল তেল আবিব: জিম্মি মুক্তির দাবিতে হাজারো ইসরায়েলি, পাশে ট্রাম্প
- কোরআন অবমাননা: নর্থ সাউথ থেকে শিক্ষার্থী অপূর্ব পাল স্থায়ীভাবে বহিষ্কার
- আফগানিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করার লক্ষ্য, আজ রাতে মাঠে নামছে বাংলাদেশ
- বিটকয়েন ইতিহাসে: মূল্য বাড়ার নতুন রেকর্ড গড়ল ক্রিপ্টোকারেন্সি
- সপ্তাহের প্রথম দিনে বাজারে প্রাণ ফিরছে ডিএসইতে
- ডিএসইতে রবিবার লেনদেন শেষে টপ লুজার তালিকা প্রকাশ
- ডিএসইতে রবিবার লেনদেন শেষে টপ গেইনার তালিকা প্রকাশ
- ‘জীবন্ত’ কম্পিউটার তৈরির পথে বিজ্ঞানীরা, ডেটা সেন্টারে আসছে নতুন বিপ্লব
- ত্বককে বিষমুক্ত রাখতে চান? জেনে নিন ৫টি সহজ ঘরোয়া পদ্ধতি
- একটানা চিয়া সিড খাচ্ছেন?অতিরিক্ত খেলে যে ৪টি স্বাস্থ্যঝুঁকি ডেকে আনতে পারে
- লিওনার্দো দা ভিঞ্চি – এক কিংবদন্তি যিনি ৫০০ বছর আগেই ভবিষ্যতের পথ এঁকে রেখেছিলেন!
- সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য সুখবর: নতুন বেতন কাঠামোয় বেতন বাড়ছে দ্বিগুণ
- ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা তুঙ্গে: পাক প্রতিরক্ষামন্ত্রীর তীব্র হুমকি
- কোথায় আটকানো হবে, বলা কঠিন—শহিদুল আলম
- স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা: ‘ফ্যাসিবাদী চক্রের সাম্প্রদায়িক ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করা হয়েছে’
- জুলাই সনদ বাস্তবায়নে ঐকমত্য না হলে বিকল্প প্রস্তাব দেবে কমিশন
- ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার জন্য আগামীকালের ইবাদতের পূর্ণাঙ্গ সময়সূচী
- ভবিষ্যতে তাদের গলায় গামছা দেব: দেশে ফিরেই নুরের হুঁশিয়ারি
- ওসামা বিন লাদেন: সৌদি ধনকুবেরের ছেলে যেভাবে হয়ে উঠলো আমেরিকার আতঙ্ক!
- ব্যাংকিং খাতে দক্ষ এমডি পাওয়া এখন বড় চ্যালেঞ্জ: গভর্নর আহসান এইচ মনসুর
- ফ্যাটি লিভার ডিজিজ এখন শিশু-কিশোরদেরও ঝুঁকি, নীরব ঘাতক থেকে বাঁচার উপায়
- ট্রফি বিতর্কের কেন্দ্রে থাকা মহসিন নকভি পাচ্ছেন পাকিস্তানের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা
- কুমিরকে সর্দির ভয় দেখাবেন না: বাঞ্ছারামপুরে পীর সাহেব চরমোনাই
- ইলিশ আহরণ বন্ধে ৯ জেলায় মোতায়েন নৌবাহিনীর ১৭ যুদ্ধজাহাজ
- প্রেমিকা নাকি ষড়যন্ত্র? আদনানের 'অন্ধকার জগৎ' নিয়ে স্ত্রীর পোস্টের পর নাটকীয় ইউ-টার্ন!
- ১৯৭৪ সালের ১ টাকা এখনকার কত টাকার সমান?
- দাজ্জালের আগমন এবং ইহুদিদের তৃতীয় মন্দির প্রতিষ্ঠা: নেপথ্যে সেই ‘লাল গরু’র রহস্য
- প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসকে হত্যার হুমকি
- মোস্তফা সরয়ার ফারুকী: ‘আমি মুক্তি পাব এই কঠিন দায়িত্ব থেকে’
- ‘বোমাবর্ষণ বন্ধের’ ট্রাম্পের আহ্বান উপেক্ষা করে গাজায় ইসরায়েলের তীব্র হামলা
- আফ্রিকার হৃদয়ে পাথরের রাজ্য: জিম্বাবুয়ের প্রকৃতি, সংস্কৃতি ও আত্মার গল্প
- দেশের ১৭ অঞ্চলে রাত ১টা পর্যন্ত ঝড়-বজ্রবৃষ্টির পূর্বাভাস
- চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তিতে ড. ইউনূসের বার্তা
- পিরামিডের আসল রহস্য কি টেসলা জানতেন? এক হারানো প্রযুক্তির বিস্ময়কর কাহিনী
- ঘর পরিষ্কারে বেকিং সোডার ম্যাজিক! জেনে নিন ৩টি অসাধারণ ব্যবহার
- আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ডেই পিআরের বাতাস বইছে: সালাহউদ্দিন আহমদ
- বার্লিন সম্মেলন ১৮৮৪–৮৫: আফ্রিকা বিভাজনের রাজনীতি, অর্থনীতি ও উত্তরাধিকার
- রসুনের গোপন শক্তি: এক কোয়া কি সত্যিই শরীরকে বদলে দিতে পারে?
- সর্ব রোগের ঔষধ কালিজিরা’র আদ্যপ্রান্ত: ঐতিহ্য, বিজ্ঞান, ব্যবহার ও সতর্কতা
- ম্যালেরিয়া: কারণ, লক্ষণ, ঝুঁকি, প্রতিরোধ ও চিকিৎসা
- স্মার্টফোন থেকে ডিলিট হওয়া ছবি ফিরে পাওয়ার ৩টি সহজ উপায়
- খাগড়াছড়ি-গুইমারায় সহিংসতা: সেনাবাহিনীর বিস্তারিত বিবৃতি প্রকাশ
- মেথি কি সত্যিই ‘সুপারফুড’? বিজ্ঞান, উপকার, ঝুঁকি ও খাওয়ার সেরা সময়
- ডিএসইতে মঙ্গলবার লেনদেন শেষে টপ লুজার তালিকা প্রকাশ
- ডিএসইতে সোমবার লেনদেন শেষে টপ গেইনার তালিকা প্রকাশ
- শ্বাসরুদ্ধকর জয়: শেষ মুহূর্তের নাটকীয়তায় আফগানিস্তানকে হারিয়ে সিরিজ নিশ্চিত করল বাংলাদেশ
- ডিএসইতে সোমবার লেনদেন শেষে টপ লুজার তালিকা প্রকাশ
- বিয়ে করতে গিয়ে বিপত্তি: ‘প্রথম স্ত্রীর’ হাতে আটক ছাত্রলীগ নেতা
- যে সাগরে কেউ ডুবে না, কেন সেখানে লুকিয়ে আছে এক অভিশপ্ত ইতিহাস?
- বলিউডের শক্তিশালী কণ্ঠস্বর: নারী অধিকার ও পরিবেশ রক্ষায় সোচ্চার তারকারা
- ডিএসইতে মঙ্গলবার লেনদেন শেষে টপ গেইনার তালিকা প্রকাশ