৩৬ ট্রাক আটকা, পোশাক রপ্তানিতে নতুন বাধা

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ১৮ ১৯:০১:২২
৩৬ ট্রাক আটকা, পোশাক রপ্তানিতে নতুন বাধা

ভারতের হঠাৎ এক ঘোষণায় স্থলপথে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করায় যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরে আজ রোববার সকাল থেকে ৩৬টি রপ্তানিমুখী ট্রাক আটকে গেছে। ঢাকার মৌসুমী গার্মেন্টস ও স্কয়ার ফ্যাশনসহ একাধিক প্রতিষ্ঠানের পণ্যবোঝাই এসব ট্রাক ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে প্রবেশ করতে না পেরে বন্দরের ভেতরেই অবস্থান করছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার রাতে একটি প্রজ্ঞাপনে জানায়, এখন থেকে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, ফলের রস, কোমল পানীয়, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা ও আসবাবপত্রের মতো কিছু নির্দিষ্ট পণ্য শুধু সমুদ্রপথে আমদানি করা যাবে। পশ্চিমবঙ্গের পেট্রাপোল, চ্যাংড়াবান্দা, ফুলবাড়ী ও ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর (আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা, মিজোরাম) স্থল কাস্টমস স্টেশন ব্যবহার করে এসব পণ্য আর প্রবেশ করানো যাবে না।

রপ্তানির পথে বাধা: বাড়তি খরচ, দীর্ঘ সময়

বেনাপোল দিয়ে প্রতিদিন ২০-২৫টি ট্রাক তৈরি পোশাক ভারতে পাঠানো হতো। এসব পোশাক কম দামের এবং সময়সীমা নির্ধারিত চুক্তির আওতায় ছিল। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এখন এসব পোশাক চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে পাঠাতে গেলে খরচ দ্বিগুণ এবং সময় তিনগুণ হয়ে যাবে, যা ক্রয়াদেশ বাতিলের ঝুঁকি বাড়াবে।

ঢাকার জেকে এন্টারপ্রাইজের মালিক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “বেনাপোল দিয়ে এক ট্রাক পণ্য পাঠাতে যেখানে ৬ লাখ টাকা খরচ হয় এবং ২-৩ দিনের মধ্যে গন্তব্যে পৌঁছে যায়, সেখানে চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে যেতে খরচ হবে প্রায় ১২ লাখ টাকা এবং সময় লাগবে ২০-২৫ দিন। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বিশেষ করে ছোট উদ্যোক্তারা।”

রপ্তানিকারকদের অনিশ্চয়তা ও ক্ষোভ

যদিও অনেক প্রতিষ্ঠান এই ট্রাকগুলো বেনাপোল থেকে ফিরিয়ে নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের দিকে নেয়ার পরিকল্পনা করছে, তবে তাৎক্ষণিক রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন ব্যবসায়ীরা। কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বলছে, স্থলপথের মতো দ্রুত ও কম খরচে পণ্য পাঠানোর সুযোগ বন্ধ হয়ে গেলে ভারতমুখী রপ্তানিতে আগ্রহ হারাবে অনেকেই।

সোহান ট্রেড সেন্টারের সত্ত্বাধিকারী আহসান হাবিব বলেন, “ভারতের এই সিদ্ধান্ত বেনাপোলের সঙ্গে সম্পৃক্ত হাজারো সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট, ট্রান্সপোর্ট শ্রমিক ও ব্যবসায়ীকে সরাসরি প্রভাবিত করবে। বন্দরটি কার্যত অচল হয়ে পড়বে।”

বন্দর কার্যক্রমেও স্থবিরতা

আজ সকাল ৯টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত বেনাপোল কাস্টমস হাউসে কলমবিরতি কর্মসূচি চলায় নতুন কোনো রপ্তানি চালানে অনুমোদনও দেওয়া হয়নি। এর মধ্যেই ভারত নতুন নিষেধাজ্ঞার চিঠি পাঠায়, যা কার্যত তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হয়ে যায়।

বেনাপোল কাস্টমস হাউসের অতিরিক্ত কমিশনার শরিফ হাসান বলেন, “ভারতের চিঠির আলোকে স্থলপথে তৈরি পোশাক রপ্তানি সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে। দুপুর ১টা পর্যন্ত ৩৬টি ট্রাক বন্দরের ভেতরে অপেক্ষমাণ ছিল।”

প্রভাব পড়তে পারে সামগ্রিক রপ্তানিতে

বাংলাদেশ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভারতে প্রায় ১৫৭ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে, যার মধ্যে তৈরি পোশাক, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য ও প্লাস্টিক পণ্যের অংশ উল্লেখযোগ্য। ব্যবসায়ী নেতারা আশঙ্কা করছেন, এই ধরনের হঠাৎ নীতিগত পরিবর্তনে রপ্তানির ধারা ব্যাহত হবে, যা ইতিমধ্যে সংকটকালীন বৈদেশিক মুদ্রা আয়েও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞা শুধু বাণিজ্যিক বাধা নয়, এটি বাংলাদেশের রপ্তানিনির্ভর খাতের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এখন প্রয়োজন কূটনৈতিক পর্যায়ে দ্রুত হস্তক্ষেপ এবং বিকল্প রপ্তানি চ্যানেল নিশ্চিত করা, যাতে ক্ষতির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে, এবং এই পরিবর্তনটির মূল কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ।... বিস্তারিত