যে জন্য ক্ষতিকর প্রক্রিয়াজাত খাবারের অতিরিক্ত লবণ!

জীবনযাপন ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ১৭ ১০:০৯:১৩
যে জন্য ক্ষতিকর প্রক্রিয়াজাত খাবারের অতিরিক্ত লবণ!

সত্য নিউজ: বাংলাদেশে প্রতিদিনের খাবারে লবণের পরিমাণ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত সীমার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ, যার মারাত্মক প্রভাব পড়ছে দেশের জনস্বাস্থ্যের ওপর। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, অতিরিক্ত লবণ গ্রহণের কারণে প্রতিবছর প্রায় ২৫ হাজার মানুষ মারা যাচ্ছেন উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, স্ট্রোক ও কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে।

ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের প্রাপ্তবয়স্করা প্রতিদিন গড়ে ৯ গ্রাম লবণ গ্রহণ করছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) সুপারিশ অনুযায়ী, একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির দিনে সর্বোচ্চ ৫ গ্রাম লবণ গ্রহণই স্বাস্থ্যসম্মত।

গবেষণায় উঠে এসেছে যে, প্রক্রিয়াজাত ও রেস্তোরাঁর খাবার, এমনকি স্বাদে নোনতা না হলেও, লবণের গোপন উৎস। এগুলো নীরব ঘাতক হিসেবে কাজ করছে—বাড়িয়ে তুলছে অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি।

নীতিনির্ধারণে গতি নেই

সভায় বক্তারা জানান, যদিও বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ মোড়কীকরণ আইন অনুযায়ী লবণ, চিনি ও চর্বির পরিমাণ উল্লেখ বাধ্যতামূলক করেছে, বাস্তবে বেশিরভাগ কোম্পানি তা মানছে না বা লেবেল এমনভাবে দিচ্ছে যা সাধারণ মানুষের বোধগম্য নয়। ফ্রন্ট-অফ-প্যাক লেবেলিং ব্যবস্থা চালুর মাধ্যমে ভোক্তাকে পণ্যের সোডিয়াম মাত্রা সম্পর্কে সহজে সচেতন করার দাবি উঠেছে।

শিক্ষা ও সচেতনতায় ঘাটতি

অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী বলেন, “লবণের ক্ষতিকর প্রভাব জাতীয় পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি, যাতে ছোট বয়স থেকেই শিশুদের মধ্যে স্বাস্থ্যবান্ধব খাদ্যাভ্যাস গড়ে ওঠে।”

সরকারের অবস্থান ও অগ্রগতি

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির পরিচালক জানান, সরকার ইতোমধ্যে জাতীয় লবণ গ্রহণ হ্রাস কৌশল প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে এবং তা দ্রুত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করছে। সরকারের যুগ্ম সচিব ডা. শিব্বির আহমেদ ওসমানী বলেন, “খাদ্যভ্যাসে পরিবর্তন ছাড়া জনস্বাস্থ্য রক্ষা সম্ভব নয়। এর জন্য দরকার জনসচেতনতা, নিয়ন্ত্রণ এবং সরকার ও শিল্পখাতের যৌথ উদ্যোগ।”

বিশ্লেষণ:

বাংলাদেশে খাদ্যশিল্পের অনিয়ন্ত্রিত প্রবৃদ্ধি এবং বিজ্ঞাপননির্ভর বিপণন ব্যবস্থায় প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের চাহিদা বাড়ছে। জনসাধারণের পুষ্টি-সচেতনতার অভাব ও লেবেল না পড়ার অভ্যাস স্বাস্থ্যঝুঁকিকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। নীতিমালার বাস্তবায়নে দুর্বলতা, শিল্প খাতের অনীহা এবং সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতায় এই সংকট আরও গভীর হচ্ছে।

অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ একটি নীরব জনস্বাস্থ্য সংকট। এর প্রতিকারে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজন বাস্তবভিত্তিক জাতীয় কৌশল, খাদ্য লেবেলিংয়ে স্বচ্ছতা ও বাধ্যবাধকতা, স্বাস্থ্যশিক্ষা ও জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি, সরকার ও খাদ্যশিল্পের সমন্বিত প্রয়াস

জনস্বাস্থ্যের জন্য এখনই জরুরি পদক্ষেপ না নিলে এই ‘নোনতা বিপদ’ আগামীতে আরও ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

একজন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ, সামাজিক ব্যবসার পথপ্রদর্শক এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণের নেতৃত্বদানকারী রাষ্ট্রনায়ক—এই তিনটি পরিচয়ই এখন সমভাবে প্রযোজ্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের... বিস্তারিত