অভ্যাস গঠনে সাফল্যের চাবিকাঠি: ‘কখন, কোথায়, কীভাবে’ পরিকল্পনা করুন

জীবনযাপন ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ০৪ ১৩:১৬:৪২
অভ্যাস গঠনে সাফল্যের চাবিকাঠি: ‘কখন, কোথায়, কীভাবে’ পরিকল্পনা করুন
ছবি: সংগৃহীত

জীবনে একসাথে একাধিক পরিবর্তন আনা অনেকেরই আকাঙ্ক্ষা। কেউ লেখালেখিতে সফলতা বাড়াতে চান, কেউ শরীরচর্চায় উন্নতি করতে, আবার কেউ নিয়মিত মননশীলতা অনুশীলন করতে আগ্রহী। কিন্তু বাস্তবতা হলো, সৎ প্রচেষ্টা সত্ত্বেও বেশিরভাগ মানুষ পুরনো অভ্যাসে ফিরে যান। স্থায়ী জীবনযাত্রার পরিবর্তন করা অত্যন্ত কঠিন।

সম্প্রতি মনস্তাত্ত্বিক গবেষণায় কিছু নতুন তথ্য সামনে এসেছে, যা হয়তো এই কঠিন কাজটিকে সহজ করতে পারে। গবেষণাগুলো থেকে বোঝা যায়, বহু ক্ষেত্রেই সফলতা পেতে যে পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয়, তা কিছুটা বিপরীতমুখী হতে পারে।

গবেষণায় দেখা গেছে, নতুন অভ্যাস গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো পরিকল্পনা করা। যখন, কোথায় এবং কীভাবে আপনি একটি অভ্যাস করবেন সেই বিষয়গুলো স্পষ্টভাবে পরিকল্পনা করলে সফল হওয়ার সম্ভাবনা দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ পর্যন্ত বাড়ে। উদাহরণস্বরূপ, “আগামী সপ্তাহে আমি সোমবার সকাল ৭টায় পার্কে ২০ মিনিট দৌড়াব” এইরকম স্পষ্ট পরিকল্পনা থাকলে অভ্যাস গড়ার ক্ষেত্রে অনেক বেশি সফলতা পাওয়া যায়। মনস্তাত্ত্বিকরা এই পরিকল্পনাকে ‘ইমপ্লিমেন্টেশন ইন্টেনশন’ বা ‘বাস্তবায়ন অভিপ্রায়’ বলে ডাকে।

কিন্তু এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার আছে। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, একসাথে একাধিক অভ্যাস গড়ার চেষ্টা করলে পরিকল্পনার এই সুফল মিলবে না। বরং একসঙ্গে অনেক লক্ষ্য নির্ধারণ করলে কম মানুষই সেগুলো সফলভাবে অনুসরণ করতে পারে। তাই একসঙ্গে একাধিক পরিবর্তনের চেয়ে একবারে একটি অভ্যাসের ওপর মনোযোগ দেওয়া উচিত।

নতুন অভ্যাস শুরু করার সময় তা মনে রাখা খুবই কঠিন হয়, কারণ আমাদের মস্তিষ্ক সেই নতুন কাজটিকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রহণ করেনি। অনেক অনুশীলনের পর ধীরে ধীরে সেই অভ্যাস স্বাভাবিক হয়ে ওঠে, মস্তিষ্কের জন্য অচেতন বা স্বয়ংক্রিয় কাজ হিসেবে গড়ে উঠে। এই প্রক্রিয়াকে মনোবিজ্ঞানীরা ‘অটোমেটিসিটি’ বলে।

গবেষণা অনুযায়ী, কোনো একটি অভ্যাসকে পুরোপুরি স্বয়ংক্রিয় করতে গড়ে ৬৬ দিন সময় লাগে। তবে এটা একটি গড় সংখ্যা, কারণ সময়কাল নির্ভর করে অভ্যাসের ধরণ, পরিবেশ, ব্যক্তিগত প্রবণতা ইত্যাদির ওপর। মূল কথা হলো, অভ্যাস গড়তে ধৈর্য এবং পুনরাবৃত্তি অপরিহার্য।

যখন আপনি একটি অভ্যাসে পুরোপুরি পারদর্শী হয়ে উঠবেন, সেটি মস্তিষ্কের একটি স্বয়ংক্রিয় অংশে পরিণত হবে এবং সেই অভ্যাসের জন্য অতিরিক্ত চিন্তা বা মনোযোগ দিতে হবে না। তখন আপনি আপনার জীবনযাত্রার অন্য ক্ষেত্রেও নতুন অভ্যাস গড়ে তোলার জন্য শক্তি ও মনোযোগ দিতে পারবেন।

অর্থাৎ, জীবন বদলাতে চাইলে একসঙ্গে সবকিছু পরিবর্তনের চেষ্টা না করে, বরং একটি অভ্যাসকে সঠিকভাবে গড়ে তোলা এবং সেটিকে স্বয়ংক্রিয় করে তোলাই শ্রেয়। এরপর ধীরে ধীরে পরবর্তী অভ্যাসে মনোযোগ দিন। এই পদ্ধতিই দীর্ঘমেয়াদে টেকসই পরিবর্তনের পথপ্রদর্শক।

সারসংক্ষেপে বলা যায়, আপনার জীবনের একাধিক ক্ষেত্র উন্নত করার জন্য প্রথম ধাপ হলো – একটি নির্দিষ্ট অভ্যাসের জন্য পরিকল্পনা করা এবং সেটিকে অন্তত দুই থেকে তিন মাস সময় দিয়ে পুরোপুরি অভ্যাসে পরিণত করা। এর পরেই অন্য অভ্যাস নিয়ে কাজ শুরু করা। এই ভাবেই আপনি দীর্ঘমেয়াদে আপনার জীবনকে সামগ্রিকভাবে বদলাতে পারবেন।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ