মাস্কের নতুন রাজনৈতিক দল নিয়ে মুখ খুললেন ট্রাম্প

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ০৭ ১০:০৯:০৩
মাস্কের নতুন রাজনৈতিক দল নিয়ে মুখ খুললেন ট্রাম্প

বর্তমান বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনকুবের ও প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্ক নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন, যার নাম ‘আমেরিকা পার্টি’। যুক্তরাষ্ট্রের প্রচলিত দুই-দলের (রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট) বাইরে গিয়ে নতুন রাজনৈতিক বিকল্প তৈরির লক্ষ্যেই তার এই উদ্যোগ। তবে মাস্কের এমন পদক্ষেপকে একেবারেই ‘হাস্যকর’, ‘উদ্ধত’ এবং ‘বোকামি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি মনে করেন, এই উদ্যোগ শুধু বিভ্রান্তিই সৃষ্টি করবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক কাঠামোর সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রোববার (৬ জুলাই) ‘এয়ার ফোর্স ওয়ানে’ ওঠার আগে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, “তৃতীয় কোনো রাজনৈতিক দল গঠন করাটা একেবারেই হাস্যকর। আমেরিকায় দুই-দলের যে রাজনৈতিক কাঠামো, তা বহু বছর ধরেই আছে এবং জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে আসছে। নতুন দল আনার চেষ্টা শুধুই বিভ্রান্তি সৃষ্টি করবে।” ট্রাম্পের এমন মন্তব্যে স্পষ্ট হয়েছে, মাস্কের রাজনৈতিক আগ্রাসনকে তিনি হুমকি হিসেবেই দেখছেন।

এক সময় মাস্ক ও ট্রাম্প রাজনৈতিকভাবে ঘনিষ্ঠ ছিলেন। ট্রাম্প প্রশাসনে ইলন মাস্ককে 'ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি' (DoGE)-এর প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল, যার মূল কাজ ছিল সরকারি ব্যয় হ্রাস ও প্রশাসনিক দক্ষতা বৃদ্ধি। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বাজেট পরিকল্পনা, জলবায়ু নীতি এবং পরিবহন সংক্রান্ত নানা ইস্যুতে তাদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়। মাস্ক ট্রাম্পের নতুন বাজেট পরিকল্পনার কড়া সমালোচনা করেন, বিশেষ করে ইভি (ইলেকট্রিক ভেহিকল) খাতে কর-ছাড় বাতিল নিয়ে। মাস্কের ইভি বাধ্যতামূলক করার নীতিকে ট্রাম্প সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং বলেন, “আমি প্রথম থেকেই মাস্কের বৈদ্যুতিক গাড়ি বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাবের বিরোধিতা করে এসেছি। নতুন আইনে মানুষ নিজের ইচ্ছামতো গ্যাসচালিত, হাইব্রিড কিংবা ভবিষ্যতের প্রযুক্তিনির্ভর গাড়ি কিনতে পারবেন—ইভি বাধ্যতামূলক নয়।”

ট্রাম্প আরও বলেন, “দুঃখজনকভাবে ইলন মাস্ক এখন যেন রেললাইনের বাইরে চলে যাওয়া একটি ট্রেন দুর্ঘটনার মতো— পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছেন।” এ মন্তব্য ট্রাম্প তার নিজস্ব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ পোস্ট করেন। এতে রাজনৈতিক ভাঙনের রূপ আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

ইলন মাস্ক এখনো ‘আমেরিকা পার্টি’-র পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা বা রাজনৈতিক অবস্থান প্রকাশ না করলেও ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো জানিয়েছে, দলটি হবে 'নৈতিক বাস্তববাদ', 'উদ্ভাবনী সরকার' ও ‘যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যত রাজনীতিতে প্রথাগত কাঠামোর বাইরে বিকল্প কণ্ঠস্বর’ তৈরি করার লক্ষ্যে গঠিত। মাস্ক নিজেও এক্স (পূর্বে টুইটার)-এ লিখেছেন, “জনগণের প্রয়োজন এমন এক রাজনৈতিক শক্তি, যা অতীত নয়, ভবিষ্যতের কথা বলে।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে তৃতীয় একটি দল গঠন করা কঠিন এবং ব্যয়বহুল। রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট দলের শক্তিশালী ভিত্তি ও নির্বাচনী ব্যবস্থার কাঠামো এমন যে সেখানে নতুন দল টিকিয়ে রাখা প্রায় অসম্ভব। তারপরও মাস্কের মতো উচ্চপ্রভাবশালী একজন ব্যক্তি যখন সরাসরি রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন, তখন সেটিকে উপেক্ষা করা যায় না।

২০২8 সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে মাস্কের নতুন দল গঠন ইতোমধ্যে বড় আলোচনার জন্ম দিয়েছে। যদি তিনি নিজেই প্রার্থী হন অথবা কোনো প্রার্থীকে সমর্থন করেন, তবে রিপাবলিকান ভোটব্যাংকে ভাঙন সৃষ্টি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মাস্কের এই পদক্ষেপ মার্কিন রাজনীতিতে কতটা প্রভাব ফেলবে, তা এখনো অনিশ্চিত হলেও তার ঘোষণার মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক বিকল্প তৈরির নতুন এক আলোচনা শুরু হয়েছে।

-ইসরাত, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ