ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি কি ধ্বংস, নাকি সাময়িক স্থবিরতা? যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল হামলার পর নতুন বাস্তবতা

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ০৩ ১১:৫৯:২০
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি কি ধ্বংস, নাকি সাময়িক স্থবিরতা? যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল হামলার পর নতুন বাস্তবতা

২০ জুন ২০২৫—ইরানের কোম শহরের উপকণ্ঠে অবস্থিত ভূগর্ভস্থ ফর্দো পারমাণবিক স্থাপনার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিস্ময়কর ও প্রযুক্তিগতভাবে জটিল বিমান হামলা শুরু হয়। এই অভিযানের কয়েকদিন পর স্যাটেলাইট ইমেজে ফর্দোর অবকাঠামোতে কিছু ক্ষয়ক্ষতির আভাস মিললেও পুরো চিত্র রয়ে গেছে অস্পষ্ট।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, “ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে।” তবে পেন্টাগনের মুখপাত্র শন পারনেল পরবর্তীতে জানান, গোয়েন্দা বিশ্লেষণ বলছে, “আমরা অন্তত এক থেকে দুই বছরের জন্য তাদের কর্মসূচি দুর্বল করে দিয়েছি।” যদিও বাস্তবতা কতটা ভিন্ন তা নিয়ে আন্তর্জাতিক পরিসরে চলছে বিতর্ক।

আক্রমণের সময়কাল ও পটভূমি

এই হামলা ছিল ইসরায়েল-ইরান সংঘাতের ধারাবাহিকতায় একটি মার্কিন পদক্ষেপ, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের পক্ষে সরাসরি হস্তক্ষেপ করে। ২১ জুন বি-২ স্টিলথ বোমারু বিমানের সাহায্যে ফর্দোসহ আরও দুটি পারমাণবিক স্থাপনায় চালানো হয় হামলা।

এর জবাবে ইরান কাতারে অবস্থিত একটি মার্কিন ঘাঁটিতে পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়, যদিও কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। ট্রাম্প প্রশাসন এরপর যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেয়।

ট্রাম্প বনাম গোয়েন্দা মূল্যায়ন: প্রচারণা নাকি তথ্য?

যেখানে ট্রাম্প দাবি করে আসছেন "সম্পূর্ণ ধ্বংস", সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের নিজের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর পূর্ববর্তী মূল্যায়নে বলা হয়, ইরানের মূল পরমাণু উপাদান ও সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম মজুত অনেকটাই অক্ষত রয়েছে। কেবল কর্মসূচির অগ্রগতি কিছুটা বিলম্বিত হয়েছে।

আইএইএর (IAEA) প্রধান রাফায়েল গ্রোসি সতর্ক করে বলেছেন, ইউরেনিয়াম সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত কিছু কনটেইনার ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকতে পারে। তবে তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা বৃদ্ধি নিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোর কোনো উদ্বেগপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়নি।

আন্তর্জাতিক নজরদারির বাইরে ইরান?

এই হামলার পর ইরান পার্লামেন্টে একটি আইন পাস করে, যেখানে বলা হয়, আইএইএ হামলার বিরুদ্ধে অবস্থান না নেওয়ায় তাদের সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিত করা হবে। এর ফলে, ফর্দোর মতো স্থাপনা এখন আর আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণের আওতায় নেই। এটি ভবিষ্যতের জন্য এক গুরুতর নিরাপত্তা শঙ্কা তৈরি করেছে।

ইসরায়েলি দাবি বনাম ইরানি প্রতিক্রিয়া

ইসরায়েল বলছে, “আমরা ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা ধ্বংস করেছি।” কিন্তু ইরান বলছে, তাদের পরমাণু কর্মসূচি, সরকার ও ক্ষেপণাস্ত্র শক্তি অক্ষত রয়েছে। সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি বলছেন, ট্রাম্প “অতিরঞ্জন” করছেন।

বেসামরিক ক্ষয়ক্ষতি ও যুদ্ধের পরিণতি

এই সংঘাতে ইসরায়েলি হামলায় শত শত ইরানি নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে ছিলেন শীর্ষ পারমাণবিক বিজ্ঞানী, সামরিক কর্মকর্তা ও তাঁদের পরিবার। একইভাবে ইরানের পাল্টা হামলায় ইসরায়েলে নিহত হয়েছেন অন্তত ২৯ জন।

পারমাণবিক সংকট নাকি কূটনৈতিক নাটক?

সাম্প্রতিক ইতিহাসে এটি সবচেয়ে ভয়াবহ পারমাণবিক-সম্পর্কিত সামরিক সংঘাত হলেও, দুই পক্ষই নিজেদের বিজয় দাবি করছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পরিস্থিতি মধ্যপ্রাচ্যে নতুন উত্তেজনার সূচনা করলেও, পরমাণু অস্ত্রবিষয়ক আন্তর্জাতিক কাঠামোর জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হয়ে উঠেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের এই হামলা কি পারমাণবিক যুদ্ধ ঠেকানোর উদ্যোগ, নাকি এক কৌশলগত আগ্রাসন? ইরান কি সত্যিই দুর্বল হয়েছে, নাকি কেবল পর্দার আড়ালে নিজেদের শক্তি পুনর্গঠনের প্রক্রিয়ায় আছে? এই প্রশ্নগুলো আগামী দিনগুলোতে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নতুন জটিলতা ও কূটনৈতিক টানাপোড়েন সৃষ্টি করবে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ