বলিউড

‘কাঁটা লাগা’ থেকে কালচেতনায় অমর: শেফালি জারিওয়ালার চলে যাওয়া এক ঝলমলে যুগের অবসান

বিনোদন ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ০১ ১১:২৮:৩৮
‘কাঁটা লাগা’ থেকে কালচেতনায় অমর: শেফালি জারিওয়ালার চলে যাওয়া এক ঝলমলে যুগের অবসান

বলিউডের রঙিন দুনিয়ায় হঠাৎ করেই নেমে এলো শোকের ছায়া। ২৭ জুন প্রয়াত হলেন জনপ্রিয় মডেল ও রিয়েলিটি শো তারকা শেফালি জারিওয়ালা—যিনি পরিচিত ছিলেন পুরো দেশের ‘কাঁটা লাগা গার্ল’ হিসেবে। তাঁর অকাল প্রয়াণ শুধু ইন্ডাস্ট্রিকে নয়, ভেঙে দিয়েছে সেই প্রজন্মের হৃদয়, যারা ২০০০-এর দশকের শুরুর দিকের পপ সংস্কৃতিকে দেখেছে তাঁর চোখ দিয়ে।

‘কাঁটা লাগা’ গানটির ভিডিও নির্মাতা পরিচালকদ্বয় বিনয় সাপরু ও রাধিকা রাও একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেন, “সে আমাদের পরিবারেরই অংশ ছিল। আমরা তাকে ১৯ বছর বয়সে খুঁজে পেয়েছিলাম, গড়ে তুলেছিলাম, এবং শেষদিন পর্যন্ত ওর সঙ্গে আমাদের সংযোগ ছিল গভীর। আজ প্রতিটি সংবাদমাধ্যমে, প্রতিটি টিভি স্ক্রিনে, কাঁটা লাগা গার্ল, কাঁটা লাগা গার্ল... সবখানেই শুধু শেফালির নাম। আমাদের স্মৃতির বন্যায় তলিয়ে যাচ্ছে মন।”

তাঁর মৃত্যু সংবাদ প্রথমে পরিচালকদ্বয় পান অভিনেত্রী দিভ্যা খোসলা’র কাছ থেকে—রাত ১:৩০ মিনিটে এক ফোনকলের মাধ্যমে।

এক ‘ডেস্টিনির চাইল্ড’-এর গল্প

“আমরা ‘ডিজে ডল’ অ্যালবামের জন্য খুঁজছিলাম এক পুতুল-সুলভ মেয়ে। সেই খোঁজে, একদিন বান্দ্রার লিংকিং রোডে হঠাৎ চোখে পড়ে ওর ওপর—চোখেমুখে স্বপ্ন, চেহারায় উদ্যম। বাকিটা ইতিহাস,” বলেন বিনয় সাপরু।

তিন মাসের কঠোর রিহার্সাল, স্টাইলিং, নির্দেশনা আর অভ্যন্তরীণ প্রস্তুতির পর জন্ম নেয় ভারতীয় পপ কালচারের অন্যতম আইকনিক মুহূর্ত—‘কাঁটা লাগা’। গানটি মুক্তির সঙ্গে সঙ্গেই শেফালি হয়ে উঠেছিলেন ভারতের হৃদয়স্পর্শী যুব আইকন। মুম্বাই টাইমসের কভারে ছাপা হয় শেফালির ছবি, আর তিনি নিজে আনন্দে সেই পত্রিকার দশ কপি নিয়ে ছুটে আসেন পরিচালকদের অফিসে। “‌দেখুন স্যার, আমি কাভারে!”—সেই উচ্ছ্বাস আজও কানে বাজে, বলেন রাধিকা রাও।

ঈশ্বরভক্ত এক আনন্দময় আত্মা

শেফালি শুধুই একজন শিল্পী ছিলেন না; তিনি ছিলেন গণেশ ঠাকুরের ভক্ত, বাড়িতে রাখতেন নবরাত্রির দেবী মূর্তি, পূজা করতেন, নিমন্ত্রণ জানাতেন আপনজনদের। জীবনের প্রতি তাঁর ছিল গভীর ভালোবাসা।

“তাঁর মৃত্যুকে কেউ যেন শোবিজের অন্ধকার দিক দিয়ে না দেখে,” বলেন বিনয়। “শেফালি ছিল এক তাজা প্রাণ, সদা আশাবাদী। প্রতিবার দেখা হলে ওকে ঝকঝকে পোশাকে, হাসিমুখে পাওয়া যেত। এমন এক মানুষ কখনোই জীবনের শিকার হয়ে ওঠে না—বরং জীবনকে আলিঙ্গন করে, চুম্বন করে।”

কাঁটা লাগা: এক ঐতিহাসিক সৃষ্টির নেপথ্য

লতা মঙ্গেশকরের কণ্ঠে মূল ‘কাঁটা লাগা’ গানের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখেই করা হয়েছিল গানটির আধুনিক রিমিক্স। “আমরা কেবল বাদ্যযন্ত্রে আধুনিকতা এনেছিলাম, কিন্তু লতা দিদির কণ্ঠে হাত দিইনি। আমাদের স্পষ্ট নির্দেশ ছিল—ঈশ্বরের কণ্ঠে যেন ন্যূনতম পরিবর্তন না আসে।”

শেফালির জীবনে ‘কাঁটা লাগা’ এতটাই প্রভাব ফেলেছিল যে, পরবর্তী সময়ে অন্য কাজ করলেও মানুষ তাঁকে ‘কাঁটা লাগা গার্ল’ হিসেবেই মনে রেখেছে। পরিচালকদ্বয়ের মতে, “এই এক গানেই সে যা অর্জন করেছে, তা বহু শিল্পীর আজীবনের পরিশ্রমের সমতুল্য।”

স্বপ্ন নিয়ে এলেন, স্মৃতি রেখে গেলেন

যদিও শেফালি বলিউডে আর তেমন বড় ব্রেক পাননি, তবুও তিনি নিজেকে খুশি রাখতেন। “সে সবসময় নিজের অবস্থানে সুখী ছিল। দেশ–বিদেশে শো করত, পরিবারকে সময় দিত। মৃত্যু এসেছে অকালেই, কিন্তু তাঁর জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত ছিল স্বপ্নময়।”

পরিচালকদ্বয়ের ভাষায়, “শেফালি ছিল ভাগ্যের রাজকন্যা—Destiny’s child। ওর মতো আত্মপ্রত্যয়ী, জীবনভরা মানুষকে হারানো এক অপূরণীয় ক্ষতি।”

-শারনিন সুলতানা, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ