রেমিট্যান্স রেকর্ড

মে মাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রবাসী আয়, শীর্ষে সৌদি আরব, সেরা দশে কোন কোন দেশ? 

অর্থনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ০৯ ১২:৪৫:০০
মে মাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রবাসী আয়, শীর্ষে সৌদি আরব, সেরা দশে কোন কোন দেশ? 

বাংলাদেশে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্সের প্রবাহ চলতি বছর আবারও গতি পেয়েছে। বিদায়ী মে মাসে রেকর্ড পরিমাণ অর্থ পাঠানো হয়েছে, যা দেশের ইতিহাসে এক মাসে প্রাপ্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মে মাসে প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছেন ২৯৬ কোটি ৯৫ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার। এর আগের মাস এপ্রিলেও রেমিট্যান্স প্রবাহ ছিল চাঙা (২৭৫ কোটি ১৯ লাখ ৪০ হাজার ডলার)। তবে চলতি বছরের মার্চ মাসে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছিল, যার পরিমাণ ছিল ৩২৯ কোটি ৫৬ লাখ ৩০ হাজার ডলার—যা দেশের ইতিহাসে এক মাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স রেকর্ড।

মে মাসে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে সৌদি আরব থেকে। দেশটি থেকে এসেছে ৫৩ কোটি ৩৩ লাখ ৬০ হাজার ডলার, যা আগের মাসের মতোই শীর্ষ অবস্থান নিশ্চিত করেছে। অথচ জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত এই স্থানটি দখলে রেখেছিল যুক্তরাষ্ট্র। সৌদি আরবের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে—৩৫ কোটি ১৪ লাখ ৮০ হাজার ডলার। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাজ্য, যেখান থেকে মে মাসে এসেছে ৩৪ কোটি ৬৮ লাখ ৭০ হাজার ডলার।

শীর্ষ দশ রেমিট্যান্স-প্রেরণকারী দেশের মধ্যে রয়েছে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া (৩৪ কোটি ৪ লাখ ২০ হাজার ডলার), যুক্তরাষ্ট্র (২২ কোটি ৩৬ লাখ ৪০ হাজার ডলার), ওমান (১৮ কোটি ১৩ লাখ ৯০ হাজার ডলার), ইতালি (১৫ কোটি ৮৮ লাখ ৮০ হাজার ডলার), কুয়েত (১৪ কোটি ২ লাখ ২০ হাজার ডলার), কাতার (১৩ কোটি ৬৪ লাখ ৮০ হাজার ডলার) এবং সিঙ্গাপুর (১০ কোটি ৯০ লাখ ৫০ হাজার ডলার)। এই দেশগুলো থেকেই মে মাসে এসেছে দেশের মোট রেমিট্যান্স আয়ের বৃহৎ অংশ।

তবে শুধু শীর্ষ দশ দেশেই সীমাবদ্ধ নয়, আরও অনেক দেশ থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ এসেছে। বাহরাইন থেকে এসেছে ৮ কোটি ৫১ লাখ ডলার, দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ৭ কোটি ৫৮ লাখ, দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ৩ কোটি ৩২ লাখ, ফ্রান্স থেকে ৩ কোটি ১৪ লাখ, কানাডা থেকে ২ কোটি ১ লাখ ৮০ হাজার, অস্ট্রেলিয়া থেকে ১ কোটি ৮৭ লাখ ৫০ হাজার, জর্ডান থেকে ১ কোটি ৮৬ লাখ, গ্রিস থেকে ১ কোটি ৪৭ লাখ ১০ হাজার, মরিশাস থেকে ১ কোটি ৪১ লাখ ৯০ হাজার, জার্মানি থেকে ১ কোটি ৩৯ লাখ ৯০ হাজার, স্পেন থেকে ১ কোটি ৩৩ লাখ এবং মালদ্বীপ থেকে এসেছে ১ কোটি ২৬ লাখ ২০ হাজার ডলার।

অন্যদিকে পর্তুগাল থেকে এসেছে ৮৪ লাখ ৬০ হাজার, লেবানন থেকে ৮৩ কোটি ২০ লাখ টাকা সমপরিমাণ অর্থ, ব্রুনাই থেকে ৮১ লাখ ৫০ হাজার, জাপান থেকে ৭০ লাখ ১০ হাজার, ইরাক থেকে ৬৬ লাখ ৩০ হাজার, পোল্যান্ড থেকে ৬৩ লাখ ৭০ হাজার, সুইডেন থেকে ৫২ লাখ ১০ হাজার এবং ফিনল্যান্ড থেকে এসেছে ৩৩ লাখ ৪০ হাজার ডলার। অন্যান্য দেশ মিলিয়ে মে মাসে বাংলাদেশে এসেছে আরও ৪ কোটি ২৪ লাখ ৫০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ঈদুল আজহা ঘিরে পরিবার-পরিজনের কাছে অর্থ পাঠানোর প্রবণতা, হুন্ডির বিরুদ্ধে নজরদারি, এবং ব্যাংকিং চ্যানেলে লেনদেনের ক্ষেত্রে সরকারের প্রণোদনা ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে সহায়ক হয়েছে। পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক দেশগুলোতে শ্রমবাজার কিছুটা সক্রিয় থাকাও একটি বড় কারণ হিসেবে ধরা হচ্ছে।

সবমিলিয়ে মে মাসের রেমিট্যান্স প্রবাহ বাংলাদেশ অর্থনীতির জন্য একটি আশাব্যঞ্জক দিক নির্দেশনা তৈরি করেছে। তবে মার্চ মাসের মতো সর্বোচ্চ রেকর্ড ছাড়িয়ে যেতে না পারলেও ধারাবাহিকতা ধরে রাখা এবং নতুন বাজারে বৈধ রেমিট্যান্সের উৎস বাড়ানো এখন সময়ের দাবি। প্রবাসীদের সম্মান ও শ্রমের মূল্যায়ন নিশ্চিত করতে সরকার ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব আরও জোরদার হওয়া প্রয়োজন।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

একজন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ, সামাজিক ব্যবসার পথপ্রদর্শক এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণের নেতৃত্বদানকারী রাষ্ট্রনায়ক—এই তিনটি পরিচয়ই এখন সমভাবে প্রযোজ্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের... বিস্তারিত