হালদায় ডিম ছেড়েছে মা মাছ: আহরনে ব্যাস্ত জেলেরা

চট্টগ্রামের হালদা নদীতে আবারও শুরু হয়েছে প্রকৃতির দুর্লভ এক উপহার—কার্পজাতীয় মা মাছের (রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালিবাউশ) ডিম ছাড়া। গতকাল বৃহস্পতিবার (২৭ মে) রাত আনুমানিক ২টার দিকে নদীর অন্তত ৮ থেকে ১০টি স্থানে একযোগে ডিম ছাড়ে মা মাছগুলো। প্রতি বছরই এই সময়টায় হালদায় মৎস্যপ্রেমী ও গবেষকরা উন্মুখ হয়ে থাকেন এই ঘটনাটির জন্য, কারণ দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র হিসেবে হালদার এই দৃশ্য সত্যিই বিরল।
রাতে শত শত নৌকা নিয়ে নদীতে নামেন ডিম সংগ্রহকারীরা। প্রত্যেকটি নৌকা থেকে গড়ে ২ থেকে ৫ বালতি করে ডিম সংগ্রহ হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। কেউ কেউ ৫ থেকে ৭ বালতি ডিমও সংগ্রহ করেছেন। হাটহাজারীর মাদার্শা গ্রামের সংগ্রহকারী মুহাম্মদ শফি জানান, তিনি নিজেই আটটি নৌকা ব্যবহার করে মোট ১৩ বালতি ডিম সংগ্রহ করেছেন। রাউজানের গড়দোয়ারা গ্রামের প্রবীণ সংগ্রহকারী মো. কামাল জানান, তার দল ১৩টি নৌকায় মিলে ৩৫ বালতি ডিম সংগ্রহ করেছে। এসব ডিম এস হ্যাচারিতে সংরক্ষণ করা হচ্ছে এবং পরবর্তী সময়ে রেণু উৎপাদনে ব্যবহৃত হবে।
তবে এবারের ডিম সংগ্রহে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে নদীর উচ্চ পানি। নদীর পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ৫ থেকে ৭ ফুট বেশি হওয়ায় ডিম সংগ্রহে ব্যাঘাত ঘটেছে বলে জানিয়েছেন অনেক সংগ্রহকারী। রাউজানের সংগ্রহকারী রোশাঙ্গীর আলম বলেন, রাতের সেই মুহূর্তে প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ নৌকা নদীতে অপেক্ষায় ছিল। ডিম ছাড়ার পর সবার মধ্যে ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ, কিন্তু পানির উচ্চতা সংগ্রহকে কিছুটা কঠিন করে তোলে।
রাউজান উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মুহাম্মদ আলমগীর হোসেন জানান, এখন পর্যন্ত যেসব নৌকা ডিম সংগ্রহ করেছে, তাদের মধ্যে অনেকেই ৫ থেকে ৭ বালতি করে ডিম পেয়েছে। এসব ডিম সংরক্ষণের জন্য চারটি সরকারি হ্যাচারি ও শতাধিক মাটির কুয়া প্রস্তুত রাখা হয়েছিল। মার্চ-এপ্রিল থেকেই প্রজনন মৌসুম শুরু হওয়ায় বজ্রপাত ও ভারী বৃষ্টির মতো প্রাকৃতিক উপাদান ডিম ছাড়ার পরিবেশ তৈরি করে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও হালদা গবেষক মনজুরুল কিবরিয়া জানান, এবার প্রায় ৩৫০ থেকে ৪০০টি নৌকায় ৬০০ জনের মতো ডিম সংগ্রহ করেছেন। তবে নদীর পানির উচ্চতা এখন বিপৎসীমার কাছাকাছি, ফলে অনেক সংগ্রহকারী সমস্যায় পড়েছেন।
প্রতিবছরের মতো এবারও হালদা নদীর ডিম সংগ্রহ নিয়ে রয়েছে পরিসংখ্যানগত আগ্রহ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিসার্চ অ্যান্ড ল্যাবরেটরি এবং মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে হালদা নদী থেকে ১,৬৬০ কেজি মাছের নিষিক্ত ডিম সংগ্রহ করা হয়েছে। এর আগের বছর ২০২৩ সালে সংগ্রহ হয়েছিল ১৪,৬৬৪ কেজি, ২০২২ সালে ৭,২০০ কেজি, এবং ২০২১ সালে ৮,৫০০ কেজি। তবে ২০২০ সালে এই নদী থেকে সংগ্রহ করা হয়েছিল সর্বোচ্চ ২৫,৫০০ কেজি ডিম, যা গত ১৪ বছরের মধ্যে রেকর্ড পরিমাণ।
হালদা নদীর এই অনন্য প্রজনন প্রক্রিয়া শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, বরং দক্ষিণ এশিয়ার প্রাকৃতিক সম্পদের দৃষ্টিকোণ থেকেও এক ব্যতিক্রমী উদাহরণ। এবার যে ডিম সংগ্রহ হয়েছে, তার সঠিক পরিমাণ, হ্যাচিং হার এবং রেণু উৎপাদনের হিসাব আসন্ন দিনগুলোতে স্পষ্ট হবে।
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে চার্জ দাখিল, বিটিভিতে সরাসরি সম্প্রচার
- চীন না ভারত? উন্নয়ন না আনুগত্য? বুলেট ট্রেন বলছে স্পষ্ট জবাব
- অবশেষে বিসিবি সভাপতি ফারুককে নিয়ে মুখ খুললেন আসিফ
- হালদা নদীতে ডিম ছাড়ল রুই জাতীয় মা মাছ, সংগ্রহ প্রায় ১৪ হাজার কেজি নিষিক্ত ডিম
- শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান: রাষ্ট্র নির্মাণের এক উজ্জ্বল প্রতিমূর্তি
- ঈদের দিন বৃষ্টি হবে কি?
- জবি’র সাবেক অধ্যাপক আনোয়ার বেগম হত্যাচেষ্টা মামলায় সুত্রাপুরে আটক
- নতুন বিসিবি সভাপতিবুলবুলের কাছে আশরাফুলের চাওয়া
- চট্টগ্রাম বন্দরে নতুন ভোর: দক্ষিণ এশিয়ার তেলের ‘রাজসিংহাসন’ দখলের পথে বাংলাদেশ?
- ধ্বংস থেকে নেতৃত্ব: ৫ আগস্ট থেকে যেভাবে শুরু হলো অর্থনীতির পুনর্জাগরণ
- সোনাক্ষীর ‘নিকিতা রায়’-এর মুক্তি পেছাল, ঘোষণা দিলেন নতুন তারিখ
- দেশের ৬ জেলায় ৮০ কিলোমিটার বেগে ঝড়-বৃষ্টির শঙ্কা, নদীবন্দরে ২ নম্বর সতর্কতা
- তারকা পরিচিতি: রক্ষাকবচ না কি সমাজবিমুখ অব্যাহতি?
- সড়ক দুর্ঘটনায় সেনা কর্মকর্তা নিহত
- ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ৪০৫ কোটি টাকার লোকসান