বেইজিংয়ে চীন-পাক-আফগান বৈঠক, যা থাকছে আলোচনায়

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ২২ ১২:২৭:০৮
বেইজিংয়ে চীন-পাক-আফগান বৈঠক, যা থাকছে আলোচনায়

চীন, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও অনানুষ্ঠানিক ত্রিপাক্ষিক পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক ২১ মে চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই বৈঠকে অংশগ্রহণ করে তিন দেশের প্রতিনিধিরা পারস্পরিক কল্যাণ, আঞ্চলিক নিরাপত্তা, উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক সংযুক্তিকে কেন্দ্র করে সহযোগিতা জোরদারের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

অংশগ্রহণকারীরা ও বৈঠকের নেতৃত্ব

বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন চীনা কমিউনিস্ট পার্টির রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। পাকিস্তানের পক্ষ থেকে অংশ নেন দেশটির উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ ইসহাক দার এবং আফগানিস্তানের পক্ষ থেকে অংশ নেন তালেবান সরকারের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাওলাভি আমির খান মুত্তাকি।

আলোচনার মূল অগ্রাধিকার ও সিদ্ধান্তসমূহ

১. পারস্পরিক আস্থা ও শুভ প্রতিবেশিত্ব

চীন দুই প্রতিবেশী দেশের সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা ও মর্যাদা রক্ষার প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে। তারা বলেছে, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের নিজস্ব বাস্তবতা অনুসারে উন্নয়নকেন্দ্রিক পথ অনুসরণের অধিকার রয়েছে এবং চীন তাতে পাশে থাকবে।

২. সংলাপ কাঠামোর সক্রিয়তা

চীন-আফগানিস্তান-পাকিস্তান পররাষ্ট্রমন্ত্রী সংলাপ কাঠামোকে আরও কার্যকর করতে এর ষষ্ঠ দফা বৈঠক কাবুলে আয়োজনের ইচ্ছা প্রকাশ করা হয়। এই সংলাপকে একটি টেকসই ত্রিপাক্ষিক প্ল্যাটফর্মে পরিণত করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।

৩. আন্তঃরাষ্ট্রীয় কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনর্গঠন

আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদারের আগ্রহের কথা পুনরায় জানানো হয়। চীন এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে দ্বিপাক্ষিক টানাপোড়েন কমাতে মধ্যস্থতার ভূমিকা পালনের আগ্রহ প্রকাশ করে।

৪. বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (BRI) সম্প্রসারণ

বৈঠকে চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর (CPEC) সম্প্রসারণ করে সেটিকে আফগানিস্তান পর্যন্ত বিস্তৃত করার প্রস্তাব গুরুত্বের সঙ্গে গৃহীত হয়। এতে আফগানিস্তানকে বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগের (BRI) মূলধারায় সম্পৃক্ত করার সুযোগ সৃষ্টি হবে। আঞ্চলিক সংযুক্তি ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

৫. বাস্তবভিত্তিক সহযোগিতা

আফগানিস্তানের পুনর্গঠন, অবকাঠামো উন্নয়ন, কৃষি ও মানবসম্পদ উন্নয়নসহ বিভিন্ন খাতে চীন ও পাকিস্তানের পক্ষ থেকে প্রযুক্তিগত ও অর্থনৈতিক সহায়তা প্রদানের ঘোষণা আসে। একইসঙ্গে, সীমান্ত বাণিজ্য ও বহুপাক্ষিক বাণিজ্যিক নেটওয়ার্ক গঠনের ওপর জোর দেওয়া হয়।

৬. সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় যৌথ অবস্থান

তিন দেশই সন্ত্রাসবাদ, চরমপন্থা ও বৈদেশিক হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করে। তারা সিদ্ধান্ত নেয়, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও গোয়েন্দা সহযোগিতা জোরদার করা হবে। সীমান্ত নিরাপত্তা, তথ্য বিনিময় এবং ট্রান্সন্যাশনাল অপরাধ দমনে একটি সম্মিলিত কাঠামো গড়ে তোলা হবে।

৭. আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা

বৈঠকে বারবার জোর দেওয়া হয় আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষার ওপর। বলা হয়, এসব দেশের জনগণের উন্নয়ন, নিরাপত্তা ও ভবিষ্যতের জন্য একটি সহায়ক পরিবেশ তৈরির প্রাথমিক শর্ত হচ্ছে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান।

বৈঠকের গুরুত্ব ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

এই ত্রিপাক্ষিক বৈঠক মূলত দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ায় চীনের ভূরাজনৈতিক কৌশল, বিশেষ করে BRI ও CPEC সম্প্রসারণের অংশ। একইসঙ্গে, তালেবান নিয়ন্ত্রিত আফগানিস্তানকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অন্তর্ভুক্ত করতে চীনের কৌশলগত আগ্রহও এতে প্রতিফলিত হয়েছে। পাকিস্তানের ভূরাজনৈতিক অবস্থান ও চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এই অংশীদারিত্বকে আরও দৃঢ় করতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে।

বিশ্লেষকদের মতে, আফগানিস্তানের স্থিতিশীলতা দক্ষিণ এশিয়া ও চীনের নিরাপত্তার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। এই বৈঠক তারই একটি কৌশলগত পদক্ষেপ, যা কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং নিরাপত্তা দিক থেকে তিন দেশের মধ্যে গভীর বোঝাপড়ার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

প্রেস সচিবের বক্তব্যে বাকস্বাধীনতা, মব কালচার ও সাংবাদিকতার দ্বন্দ্ব: পাঠবিশ্লেষণ

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেস সচিব শফিকুল আলম সম্প্রতি এক দীর্ঘ বক্তব্যে দেশের সাংবাদিকতা, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং সরকারের অবস্থান নিয়ে বিস্তারিত... বিস্তারিত