বয়স বাড়লেও তারুণ্য থাকবে অটুট, যদি পাতে থাকে এই শীতের সবজি!

আজকাল অল্প বয়স থেকেই নানা ধরনের দীর্ঘমেয়াদী বা ক্রনিক রোগের ঝুঁকি বাড়ছে। এসব রোগ প্রতিরোধ করার জন্য সঠিক খাদ্যাভ্যাসের দিকে মনোযোগ দেওয়া অত্যন্ত জরুরি। আমাদের হাতের কাছেই এমন কিছু সহজলভ্য খাবার রয়েছে, যা নিয়মিত খেলে শরীর সুস্থ ও প্রাণবন্ত থাকে। এর মধ্যে মিষ্টি আলু বা রঙিন আলু অন্যতম।
গবেষণায় দেখা গেছে, মিষ্টি আলু খাওয়ার পরও রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ করে বেড়ে যায় না। এর প্রধান কারণ হলো এতে থাকা প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বা আঁশ। এই ফাইবার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং শরীরে গ্লুকোজের মাত্রা স্থিতিশীল রাখে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিয়মিত মিষ্টি আলু খেলে তা কোলেস্টেরল কমাতেও সাহায্য করে, যার ফলে হার্টও সুস্থ থাকে।
ফাইবার সমৃদ্ধ এই সবজিটি হজম হয় ধীরে ধীরে। এর ফলে এটি দীর্ঘ সময় পেট ভরা রাখে এবং অপ্রয়োজনীয় বা ঘনঘন ক্ষুধা লাগার প্রবণতা কমায়। একারণে, যারা ওজন কমানোর চেষ্টা করছেন, তাদের জন্য মিষ্টি আলু একটি চমৎকার খাবার হতে পারে। ফাইবার বেশি থাকার কারণে এটি কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা সমাধানেও বেশ কার্যকরী।
মিষ্টি আলুতে থাকা বিটা ক্যারোটিন নামক উপাদান শরীরে যাওয়ার পর তা ভিটামিন এ-তে রূপান্তরিত হয়। এই ভিটামিন এ চোখ এবং ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এছাড়া, মিষ্টি আলুতে থাকা পটাশিয়াম স্নায়ুতন্ত্রকে সঠিকভাবে কাজ করতে সাহায্য করে এবং কিডনির স্বাস্থ্য ভালো রাখতেও ভূমিকা রাখে।
এই রঙিন আলুতে আরও রয়েছে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট, ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম। এই উপাদানগুলো হাড় মজবুত করতে এবং শরীরের সামগ্রিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কার্যকরভাবে কাজ করে।
শীতের এই মৌসুমে নিয়মিত এই রঙিন সবজিটি খাদ্যতালিকায় রাখলে তা শুধু খাবারের স্বাদই বাড়াবে না, স্বাস্থ্যেরও ব্যাপক উন্নতি ঘটাবে। এটি সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু—দুটোই অর্জনে সহায়তা করতে পারে।
শীতে সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে সেরা ৫ টিপস
শীতের আগমনে প্রকৃতিতে যেমন বদল আসে, তেমনি মানবদেহেও হানা দেয় সর্দি, কাশি, ফ্লু এবং ত্বকের শুষ্কতা। এই সময় কেবল বাইরে থেকে গরম পোশাক পরে শরীর রক্ষা করা সম্ভব নয়; বরং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি বাড়াতে প্রয়োজন সঠিক খাদ্যাভ্যাস। স্বাস্থ্যবিষয়ক বিখ্যাত ওয়েবসাইট 'টপ টেন হোম রেমেডি' শীতকালীন অসুস্থতা মোকাবিলায় পাঁচটি অত্যন্ত পুষ্টিকর খাবারের কথা গুরুত্ব দিয়ে উল্লেখ করেছে।
এই তালিকায় প্রথমেই রয়েছে রসালো ফল কমলা। ভিটামিন সি ও শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর এই সাইট্রাস ফলটি সর্দি-কাশির বিরুদ্ধে প্রাকৃতিকভাবে লড়াই করে এবং শীতের রুক্ষ ত্বকে জৌলুস ফিরিয়ে আনে। ফুসফুসের সুরক্ষায় গাজর একটি অপরিহার্য সবজি। এতে থাকা বিটা ক্যারোটিন শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ কমিয়ে শরীরকে ভেতর থেকে মজবুত করে। এছাড়া প্রোটিনের আদর্শ উৎস ডিম প্রতিদিনের তালিকায় রাখা জরুরি। এতে থাকা নয়টি প্রয়োজনীয় অ্যামাইনো অ্যাসিড এবং জিংক শরীরকে বিভিন্ন সংক্রমণের বিরুদ্ধে শক্তিশালী ঢাল হিসেবে কাজ করে।
শীতের সকাল বা বিকেলে এক কাপ গরম আদা চা কেবল প্রশান্তিই দেয় না, বরং আদায় থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে শরীরকে উষ্ণ রাখে। এটি ফ্লু ও খুসখুসে কাশির জন্য মহৌষধ হিসেবে কাজ করে। তালিকায় শেষ পুষ্টিকর উপাদানটি হলো কাঠবাদাম। ক্ষতিকর ফ্রি র্যাডিকেলের হাত থেকে কোষকে রক্ষা করতে এবং শরীরের সামগ্রিক শক্তি বাড়াতে নিয়মিত অল্প পরিমাণে কাঠবাদাম খাওয়া শীতকালে অত্যন্ত ফলদায়ক। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পাঁচটি খাবার সঠিক পরিমাণে গ্রহণ করলে শীতের আমেজ উপভোগ করা যাবে একদম সুস্থ থেকে।
প্রাকৃতিক উপায়ে ওজন বাড়ানোর সেরা খাবার
অনেক মানুষের ক্ষেত্রেই ওজন কম থাকা একটি বাস্তব সমস্যা, যা শারীরিক দুর্বলতা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া এবং কর্মক্ষমতা হ্রাসের কারণ হতে পারে। চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদদের মতে, স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়িয়ে ওজন বাড়াতে হলে ক্যালোরি-সমৃদ্ধ কিন্তু প্রাকৃতিক ও পুষ্টিকর খাবার বেছে নেওয়াই সবচেয়ে নিরাপদ উপায়। এই ক্ষেত্রে কিছু নির্দিষ্ট ফল ও সবজি অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
কেন ফল ও সবজি ওজন বাড়াতে সহায়ক
ফল ও সবজিতে থাকা প্রাকৃতিক শর্করা, জটিল কার্বোহাইড্রেট, স্বাস্থ্যকর ফ্যাট এবং ভিটামিন–মিনারেল শরীরকে অতিরিক্ত শক্তি জোগায়। নিয়মিত ও পরিমিত পরিমাণে এগুলো গ্রহণ করলে শরীর ধীরে ধীরে অতিরিক্ত ক্যালোরি সঞ্চয় করতে পারে, যা ওজন বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়। তবে এগুলো অবশ্যই সুষম খাদ্যাভ্যাসের অংশ হিসেবে গ্রহণ করা জরুরি।
যেসব ফল স্বাস্থ্যকরভাবে ওজন বাড়াতে সাহায্য করে
কলা
কলায় রয়েছে প্রচুর কার্বোহাইড্রেট ও ক্যালোরি, যা শরীরে দ্রুত শক্তি জোগায়। নিয়মিত কলা খেলে শরীরের শক্তির চাহিদা পূরণ হয় এবং ওজন বৃদ্ধির প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়।
অ্যাভোকাডো
অ্যাভোকাডোকে ওজন বাড়ানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকর ফলগুলোর একটি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এতে প্রচুর পরিমাণে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট ও ক্যালোরি রয়েছে, যা হৃদযন্ত্রের জন্যও উপকারী।
আম
মিষ্টি স্বাদ ও উচ্চ ক্যালোরির কারণে আম ওজন বাড়াতে সহায়ক। এতে প্রাকৃতিক শর্করা থাকায় এটি শরীরের শক্তি ও ওজন দুটোই বাড়াতে পারে।
কাঁঠাল
কাঁঠালে রয়েছে প্রচুর শর্করা ও ক্যালোরি। নিয়মিত পরিমিত পরিমাণে খেলে এটি ওজন বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
শুকনো ফল
খেজুর, কিশমিশ, এপ্রিকট, আলুবোখারা ইত্যাদি শুকনো ফলে ক্যালোরি ও পুষ্টিগুণ ঘন আকারে থাকে। অল্প পরিমাণেই এগুলো শরীরে বেশি শক্তি যোগাতে সক্ষম, যা ওজন বাড়াতে সহায়ক।
ডালিম
ডালিমে প্রাকৃতিক শর্করা ও ক্যালোরির পাশাপাশি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা শরীরকে সুস্থ রেখে ওজন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
ওজন বাড়াতে সহায়ক স্টার্চি সবজি
শুধু ফলই নয়, কিছু সবজিও ওজন বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, বিশেষ করে যেগুলোতে শর্করা ও কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ বেশি।
আলু ও মিষ্টি আলু
এই দুটি সবজিতে উচ্চমাত্রার কার্বোহাইড্রেট ও ক্যালোরি রয়েছে, যা স্বাস্থ্যসম্মতভাবে ওজন বাড়াতে সাহায্য করে।
কচু (লতি ও মুখি)
কচু জাতীয় সবজিতে শর্করা, ফাইবার ও কার্বোহাইড্রেট বেশি থাকায় নিয়মিত খেলে ওজন বাড়তে পারে।
ভুট্টা
ভুট্টা ক্যালোরি ও শর্করায় সমৃদ্ধ, যা শক্তি জোগানোর পাশাপাশি ওজন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
মটরশুঁটি
মটরশুঁটিতে প্রোটিন ও সামান্য ফ্যাট থাকে, যা পেশি গঠনের পাশাপাশি ওজন বাড়াতে সাহায্য করে।
অ্যাভোকাডো (সবজি হিসেবেও ব্যবহৃত)
ফ্যাট ও ক্যালোরিতে ভরপুর হওয়ায় এটি ওজন বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত উপযোগী।
সতর্কতা ও পুষ্টিবিদদের পরামর্শ
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ওজন বাড়ানোর ক্ষেত্রে শুধু খাবারের ধরন নয়, রান্নার পদ্ধতি ও পরিমাণও গুরুত্বপূর্ণ। অতিরিক্ত তেল-মশলা ব্যবহার বা অতিরিক্ত খাওয়া স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াতে পারে। তাই ফল ও সবজি পরিমিত পরিমাণে, নিয়মিত এবং সুষম খাদ্যতালিকার অংশ হিসেবে গ্রহণ করাই সর্বোত্তম উপায়।
ফুলকপি খাওয়ার যত উপকারিতা
শীতকাল এলেই বাজার ভরে ওঠে নানান পুষ্টিকর সবজিতে, যার মধ্যে ফুলকপি অন্যতম জনপ্রিয় ও স্বাস্থ্যকর একটি নাম। দেখতে সাধারণ হলেও পুষ্টিগুণের দিক থেকে ফুলকপি সত্যিকারের একটি সুপারফুড। এতে রয়েছে ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, ভিটামিন বি৬, ফোলেট, ফাইবার, পটাশিয়াম এবং শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীরের নানা গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমে সহায়ক ভূমিকা রাখে।
ফুলকপির সবচেয়ে বড় উপকারিতা হলো হজমশক্তি বাড়ানো। এতে থাকা উচ্চমাত্রার খাদ্যআঁশ অন্ত্রের কার্যক্ষমতা উন্নত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সাহায্য করে। যারা নিয়মিত হজমজনিত সমস্যায় ভোগেন, তাদের খাদ্যতালিকায় ফুলকপি রাখা বিশেষভাবে উপকারী হতে পারে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও ফুলকপির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরকে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সক্ষম করে তোলে। শীতকালে সর্দি-কাশি বা মৌসুমি অসুখ এড়াতে নিয়মিত ফুলকপি খাওয়া উপকারী।
হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষায় ফুলকপিতে থাকা ভিটামিন কে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই ভিটামিন হাড়ের ঘনত্ব বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং বয়সজনিত হাড় ক্ষয়ের ঝুঁকি কমায়। বিশেষ করে বয়স্ক মানুষ ও নারীদের জন্য এটি অত্যন্ত উপকারী।
হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখার ক্ষেত্রেও ফুলকপি কার্যকর। এতে থাকা ফাইবার ও প্রদাহনাশক উপাদান শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সহায়তা করে, ফলে হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি হ্রাস পায়। নিয়মিত সবজি গ্রহণের অংশ হিসেবে ফুলকপি হার্টের জন্য নিরাপদ খাদ্য।
ক্যান্সার প্রতিরোধে ফুলকপির বিশেষ ভূমিকার কথাও উল্লেখযোগ্য। এতে থাকা সালফোরাফেন ও গ্লুকোসিনোলেট নামক প্রাকৃতিক যৌগ ক্যান্সার কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি প্রতিহত করতে সহায়তা করে বলে গবেষণায় জানা গেছে। বিশেষ করে স্তন, কোলন ও প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে ফুলকপি উপকারী হতে পারে।
যারা ওজন কমাতে চান, তাদের জন্য ফুলকপি আদর্শ একটি খাদ্য। এতে ক্যালোরি কম কিন্তু ফাইবার বেশি, ফলে এটি দীর্ঘ সময় পেট ভরা রাখে এবং অপ্রয়োজনীয় খাওয়ার প্রবণতা কমায়। ডায়েট মেনে চলার সময় ভাত বা কার্বোহাইড্রেটের বিকল্প হিসেবেও ফুলকপি ব্যবহার করা যায়।
চোখের স্বাস্থ্য সুরক্ষায়ও ফুলকপির অবদান রয়েছে। সালফোরাফেন চোখের রেটিনা ও কোষকে অক্সিডেটিভ ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে, যা ছানি ও বয়সজনিত দৃষ্টিশক্তি হ্রাসের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ফুলকপি নিরাপদ একটি সবজি। এর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম এবং ফাইবার বেশি হওয়ায় এটি রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ বাড়তে দেয় না। পাশাপাশি এটি ইনসুলিন সংবেদনশীলতা উন্নত করতেও সহায়ক।
ফুসফুসের স্বাস্থ্য রক্ষায়ও ফুলকপি ভূমিকা রাখে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও প্রদাহনাশক উপাদান ফুসফুসের কোষকে সুরক্ষা দেয় এবং ডায়াবেটিসজনিত রক্তনালীর ক্ষতি কমাতে সাহায্য করে।
তবে সব ভালো জিনিসের মতো ফুলকপিও পরিমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত। অতিরিক্ত ফুলকপি খেলে কিছু মানুষের গ্যাস, পেট ফাঁপা বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই ভারসাম্য বজায় রেখে রান্না করে বা সেদ্ধ করে খাওয়াই সবচেয়ে নিরাপদ।
সব মিলিয়ে বলা যায়, সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী এই সবজিটি নিয়মিত খাদ্যতালিকায় রাখলে শরীর পায় বহুমুখী সুরক্ষা। শীতের এই সময়ে ফুলকপি হতে পারে সুস্থ থাকার একটি প্রাকৃতিক ও কার্যকর উপায়।
দাঁত সাদা করার ঘরোয়া টোটকা কি বিপদ ডেকে আনছে: যা বলছেন চিকিৎসকরা
হাসিমুখের সৌন্দর্য ধরে রাখতে সুস্থ দাঁতের বিকল্প নেই। তবে আধুনিক জীবনযাত্রায় দাঁতের নানা জটিলতা, বিশেষ করে এনামেল ক্ষয়ের সমস্যা এক ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, দাঁতের উপরিভাগের এই শক্ত প্রতিরক্ষা স্তর বা এনামেল একবার নষ্ট হয়ে গেলে তা আর প্রাকৃতিকভাবে ফিরে আসে না। অবাক করার বিষয় হলো, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাইরের কোনো আঘাত নয় বরং আমাদের দৈনন্দিন কিছু অবহেলিত অভ্যাসই নীরবে দাঁত নষ্ট করে দিচ্ছে।
দাঁতের ক্ষতির অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে অতিরিক্ত জোরে ব্রাশ করার ভুল প্রবণতাকে চিহ্নিত করেছেন দন্তচিকিৎসকরা। অনেকের মধ্যে এমন একটি ধারণা প্রচলিত যে, জোরে ঘষলে দাঁত বেশি সাদা ও পরিষ্কার হবে। বাস্তবে শক্ত ব্রাশ ব্যবহার বা অতিরিক্ত চাপ দিয়ে ব্রাশ করলে দাঁতের এনামেল ক্রমশ পাতলা হতে থাকে। এর ফলে দাঁত অতিসংবেদনশীল হয়ে পড়ে এবং ঠান্ডা বা গরম খাবারে শিরশিরানি অনুভব হয়। চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী, সর্বদা নরম ব্রাশ ব্যবহার করা এবং বৃত্তাকার গতিতে আলতোভাবে ব্রাশ করা উচিত।
খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনও দাঁতের স্বাস্থ্যের ওপর বড় ধরণের প্রভাব ফেলছে। বর্তমানে ফিজি ড্রিংকস, এনার্জি ড্রিংক এবং অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবারের আধিক্য দাঁতের এনামেলকে সরাসরি আক্রমণ করে। এসব পানীয়তে থাকা অ্যাসিড দাঁতের খনিজ উপাদানগুলোকে গলিয়ে ফেলে। এছাড়া পর্যাপ্ত পানি পান না করার ফলে মুখগহ্বর শুষ্ক হয়ে গেলে লালা নিঃসরণ কমে যায়। লালা মূলত দাঁতের জন্য একটি প্রাকৃতিক সুরক্ষা কবচ হিসেবে কাজ করে যা ক্ষতিকারক অ্যাসিডের প্রভাব প্রশমিত করে। তাই দাঁত সুস্থ রাখতে চিনিযুক্ত খাবারের বদলে প্রচুর পানি পান করা অত্যন্ত জরুরি।
সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত তথাকথিত ‘ঘরোয়া পদ্ধতিতে দাঁত সাদা করা’র কৌশলগুলো নিয়েও সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা। লেবুর রস বা বেকিং সোডা ব্যবহার করে সাময়িকভাবে দাঁত ঝকঝকে মনে হলেও, এগুলো দীর্ঘমেয়াদে এনামেলের অপূরণীয় ক্ষতি সাধন করে। দীর্ঘস্থায়ী ও উজ্জ্বল হাসির জন্য ঘরোয়া টোটকার পরিবর্তে নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া এবং সঠিক মুখগহ্বর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাই একমাত্র পথ। সচেতনতাই পারে আপনার অমূল্য দাঁতকে অকাল ক্ষয় থেকে রক্ষা করতে।
প্রতিদিনের প্লেটেই লুকিয়ে আছে সুস্থ ভবিষ্যৎ
আধুনিক ব্যস্ত জীবনে সুস্থ থাকা এখন আর কেবল ব্যায়ামের ওপর নির্ভরশীল নয়; বরং প্রতিদিন আমরা কী খাচ্ছি, কখন খাচ্ছি এবং কীভাবে খাচ্ছি এই তিনটি বিষয়ই আমাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের মূল নিয়ামক হয়ে উঠেছে। অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস, অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার, চিনি ও পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেটের আধিক্য রক্তে শর্করার ভারসাম্য নষ্ট করে, শক্তি কমায় এবং দীর্ঘমেয়াদে ডায়াবেটিস, হৃদ্রোগ ও স্থূলতার ঝুঁকি বাড়ায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সুস্থ জীবনযাপনের জন্য কঠোর ডায়েট নয়, বরং সচেতন ও টেকসই খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলাই সবচেয়ে কার্যকর কৌশল।
সকালের খাবারকে দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাবার বলা হয়। শুধুমাত্র রুটি, সিরিয়াল বা ফল দিয়ে দিন শুরু করলে দ্রুত রক্তে শর্করা বাড়ে এবং অল্প সময়ের মধ্যেই ক্লান্তি ও ক্ষুধা ফিরে আসে। তাই সকালের খাবারে প্রোটিন যুক্ত করা অত্যন্ত জরুরি। ডিম, দই, ডাল, বাদাম বা বীজের সঙ্গে শাকসবজি বা গোটা শস্য যুক্ত হলে হজম ধীর হয়, শক্তি দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং মনোযোগ বাড়ে।
প্রতিটি খাবারে ভারসাম্য কেন জরুরি
একটি স্বাস্থ্যকর খাবার মানে শুধু কম খাওয়া নয়, বরং সঠিক অনুপাতে খাওয়া। কার্বোহাইড্রেট শক্তির উৎস হলেও একে একা খেলে রক্তে গ্লুকোজ দ্রুত বাড়ে। প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর চর্বি এবং ফাইবারের সঙ্গে কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ করলে এই শোষণ ধীর হয়।
- কার্বোহাইড্রেট: শক্তির জন্য
- প্রোটিন: পেশি ও হরমোনের ভারসাম্যের জন্য
- স্বাস্থ্যকর চর্বি: দীর্ঘ সময় পেট ভরা রাখতে
- ফাইবার: রক্তে চিনির ওঠানামা কমাতে
ফাইবার: নীরব স্বাস্থ্যরক্ষক
ফাইবার বা আঁশ হজম প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। এটি খাবারের পর রক্তে শর্করার তীব্র বৃদ্ধি রোধ করে এবং দীর্ঘসময় তৃপ্তি দেয়। শাকসবজি, ফলের খোসা, ডাল, লেবু ও গোটা শস্য নিয়মিত খাদ্যতালিকায় রাখলে কোষ্ঠকাঠিন্য, স্থূলতা ও হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমে।
খাবার বাদ দেওয়া নয়, সময় মেনে খাওয়া জরুরি
অনেকেই ওজন কমানোর আশায় খাবার বাদ দেন। কিন্তু এতে উল্টো ফল হয়—রক্তে শর্করা কমে গিয়ে পরে অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা বাড়ে। নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে অল্প অল্প করে খেলে গ্লুকোজের ভারসাম্য বজায় থাকে, হঠাৎ ক্ষুধা কমে এবং সারাদিন শক্তি নিয়ন্ত্রিত থাকে।
খাবারের মাঝে কী খাবেন
বিস্কুট, চিপস বা মিষ্টি জাতীয় খাবার রক্তে শর্করার দ্রুত ওঠানামার কারণ হয়। এর পরিবর্তে প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার যেমন বাদাম, বীজ, সেদ্ধ ডিম, দই বা ভাজা ডাল বেছে নিলে শক্তি স্থির থাকে এবং অপ্রয়োজনীয় স্ন্যাকিং কমে।
পানি ও সচেতন খাওয়ার অভ্যাস
অনেক সময় আমরা তৃষ্ণাকে ক্ষুধা ভেবে ফেলি। পর্যাপ্ত পানি পান হজম, ত্বক ও শক্তির জন্য অপরিহার্য। পাশাপাশি ধীরে ধীরে খাবার খাওয়া, ভালো করে চিবানো এবং খাবারের সময় মোবাইল বা টিভি এড়িয়ে চলা তৃপ্তি বাড়ায় ও অতিরিক্ত খাওয়া কমায়।
ঘরোয়া খাবার ও কম প্রক্রিয়াজাত খাদ্য
বাড়িতে রান্না করা খাবারে লবণ, চিনি ও তেলের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে। অতিপ্রক্রিয়াজাত খাবার কমালে প্রদাহ, হরমোনের অস্থিরতা ও দীর্ঘমেয়াদি রোগের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে।
সুস্থ থাকার জন্য একদিনে সব বদলে ফেলার প্রয়োজন নেই। ছোট ছোট পরিবর্তন সকালে প্রোটিন যোগ করা, ফাইবার বাড়ানো, সময়মতো খাওয়া ও পানি পান এই অভ্যাসগুলোই ধীরে ধীরে শরীর ও মনকে সুস্থতার পথে এগিয়ে নেয়। খাদ্য যখন জীবনধারার অংশ হয়ে ওঠে, তখন সুস্থতা আর লক্ষ্য নয় বরং স্বাভাবিক বাস্তবতা হয়ে দাঁড়ায়।
ডায়াবেটিস ওঠানামা ঠেকাতে কী খাবেন প্রতিদিন
রক্তে শর্করার ভারসাম্য বজায় রাখা বর্তমানে শুধু ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য নয়, বরং সুস্থ জীবনযাপনের জন্য সবার ক্ষেত্রেই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে। অনেক পরিবারেই দেখা যায়, ঘুমানোর আগে কিংবা খাবারের পর কেউ না কেউ গ্লুকোমিটার হাতে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা পরীক্ষা করছেন। ক্লান্তি, হঠাৎ ক্ষুধা, মনোভাবের অস্বাভাবিক পরিবর্তন কিংবা অকারণ মানসিক চাপ এসবই অনেক সময় রক্তে শর্করার ওঠানামার নীরব সংকেত হতে পারে, এমনকি যাদের ডায়াবেটিস নেই তাদের ক্ষেত্রেও।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবারের পর শরীরে দ্রুত শক্তি কমে যাওয়া এবং অস্বাভাবিক ক্ষুধা অনুভব হওয়া মূলত রক্তে গ্লুকোজের দ্রুত বৃদ্ধি ও পতনের ফল। তবে আশার কথা হলো প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাসে কিছু সচেতন পরিবর্তন আনলেই রক্তে শর্করার এই অস্থিরতা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
১. শুধু কার্বোহাইড্রেট নয়, প্রোটিন দিয়ে দিন শুরু করুন
সকালের নাস্তায় কেবল টোস্ট, সিরিয়াল বা ফল খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বেড়ে আবার দ্রুত নেমে যেতে পারে। প্রোটিন যুক্ত করলে হজমের গতি ধীর হয় এবং শক্তি দীর্ঘস্থায়ী হয়। সকালের খাবারে ডিম ও সবজি, দইয়ের সঙ্গে বাদাম বা বীজ, কিংবা ডাল, বিনস ও গোটা শস্য অন্তর্ভুক্ত করলে রক্তে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
২. প্রতিটি খাবারে পুষ্টির ভারসাম্য বজায় রাখুন
কার্বোহাইড্রেট একাই খেলে রক্তে শর্করার আকস্মিক স্পাইক দেখা দেয়। প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর চর্বি ও ফাইবারের সঙ্গে কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ করলে গ্লুকোজ ধীরে ধীরে রক্তে প্রবেশ করে। শক্তির জন্য কার্বোহাইড্রেট, ইনসুলিন নিঃসরণ স্থিতিশীল রাখতে প্রোটিন, দীর্ঘ সময় তৃপ্তির জন্য স্বাস্থ্যকর চর্বি এবং চিনির শোষণ কমাতে ফাইবার—এই চারটির সমন্বয়ই আদর্শ খাবারের ভিত্তি।
৩. খাবার এড়িয়ে না গিয়ে নির্দিষ্ট বিরতিতে খান
অনেকে ওজন কমানোর আশায় কিংবা ব্যস্ততার কারণে খাবার বাদ দেন, যা রক্তে শর্করার ভারসাম্য নষ্ট করে। দীর্ঘ সময় না খেলে গ্লুকোজের মাত্রা হঠাৎ কমে যায় এবং পরে অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়। নিয়মিত বিরতিতে খাওয়ার অভ্যাস রক্তে শর্করা স্থিতিশীল রাখে এবং সারাদিন শক্তির সুষম সরবরাহ নিশ্চিত করে।
৪. নাস্তার সময় প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার বেছে নিন
খাবারের ফাঁকে বিস্কুট, কেক বা মিষ্টিজাতীয় খাবার রক্তে শর্করার দ্রুত বৃদ্ধি ঘটায়। এর পরিবর্তে প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার যেমন বাদাম, বীজ, সেদ্ধ ডিম, দই বা ভাজা ডাল গ্রহণ করলে দীর্ঘ সময় পেট ভরা থাকে এবং হঠাৎ ক্ষুধা কমে।
৫. প্রতিটি খাবারে ফাইবার বাড়ান
আঁশ বা ফাইবার রক্তে চিনির শোষণ ধীর করে এবং খাবারের পর গ্লুকোজের তীব্র ওঠানামা প্রতিরোধে সহায়তা করে। পাশাপাশি এটি দীর্ঘ সময় তৃপ্তি দেয়। শাকসবজি, খোসাসহ ফল, লেবু জাতীয় খাবার এবং গোটা শস্য ফাইবারের উৎকৃষ্ট উৎস, যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা রাখে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ওষুধের পাশাপাশি নিয়মিত ও সুষম খাদ্যাভ্যাসই রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ার। ছোট ছোট অভ্যাসগত পরিবর্তন দীর্ঘমেয়াদে বড় স্বাস্থ্যগত সুফল এনে দিতে পারে।
শীতে সুস্থ থাকতে কেন দিন শুরু করবেন গরম পানি দিয়ে
শীতের হাড়কাঁপানো ঠান্ডায় শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। অতিরিক্ত ঠান্ডার কারণে তাপমাত্রা কমে গিয়ে হাইপোথার্মিয়া হওয়ার ঝুঁকি থাকে, এমনকি অনেকের হাতের আঙুল নীল হয়ে যেতে পারে। চিকিৎসকদের মতে, এ ধরনের শারীরিক জটিলতা এড়াতে নিয়মিত কুসুম কুসুম গরম পানি পান করা অত্যন্ত জরুরি। এটি কেবল শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখে না, বরং শীতকালীন ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে হওয়া সর্দি, কাশি ও গলাব্যথা কমাতেও দারুণ স্বস্তি দেয়।
কুসুম গরম পানির বহুমুখী উপকারিতার মধ্যে হজমপ্রক্রিয়া উন্নত করা অন্যতম। শীতকালে সাধারণত মানুষের হজমশক্তি কিছুটা কমে যায়, যা পেট ফাঁপা ও অ্যাসিডিটির মতো সমস্যা তৈরি করে। সকালে খালি পেটে হালকা গরম পানি পান করলে বিপাকক্রিয়া বা মেটাবলিজম বৃদ্ধি পায়, যা ওজন কমাতে এবং বাড়তি ক্যালরি পোড়াতে সাহায্য করে। এছাড়া এটি শরীরের ভেতরে জমে থাকা বিষাক্ত টক্সিন বের করে দিয়ে লিভার ও কিডনিকে সতেজ রাখে এবং রক্ত সঞ্চালনের গতি বাড়ায়।
দাঁত ও মাড়ির সুরক্ষায়ও গরম পানির ভূমিকা অতুলনীয়। শীতের ঠান্ডা পানিতে অনেকের দাঁতে শিরশিরানি বা ব্যথা বাড়ে, যা কুসুম গরম পানি দিয়ে কুলি করলে সহজেই উপশম হয়। পাশাপাশি এটি সাইনাস ও নাক বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো অস্বস্তি দূর করে শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় পর্যাপ্ত পরিমাণে কুসুম গরম পানি রাখলে শরীর যেমন হাইড্রেটেড থাকে, তেমনি ত্বকের রুক্ষতা দূর হয়ে উজ্জ্বলতা বাড়ে।
আঙুল ফোটানোর শব্দ নিয়ে কয়েক দশকের ভুল ভাঙল আধুনিক গবেষণায়
আঙুল ফোটানোর অভ্যাসে হাড় মোটা হয়ে যাওয়া বা ভবিষ্যতে আর্থ্রাইটিস হওয়ার যে ভয় আমাদের দেখানো হয়, তা আসলে বৈজ্ঞানিক ভিত্তিহীন। বিজ্ঞানীরা গবেষণার মাধ্যমে দেখিয়েছেন যে, আঙুল বা পায়ের পাতা ফোটানোর সময় যে শব্দ তৈরি হয়, তা হাড়ের ঘর্ষণ বা তরুণাস্থির কোনো ক্ষতি থেকে হয় না। ২০১৫ সালে এমআরআই ইমেজিং ব্যবহার করে করা এক গবেষণায় দেখা যায়, হাড়ের সন্ধিস্থল টানা বা প্রসারিত করলে সেখানে চাপ হঠাৎ কমে যায়।
আমাদের হাড়ের জোড়ায় সিনোভিয়াল ফ্লুইড নামে এক ধরণের পিচ্ছিল তরল থাকে। হাড়ের ফাঁকা জায়গা হঠাৎ বেড়ে গেলে সেখানে গ্যাসের একটি শূন্যস্থান বা বুদবুদ তৈরি হয়, যাকে বিজ্ঞানের ভাষায় ‘ট্রাইবোনিউক্লিয়েশন’ বলা হয়। এই বুদবুদ তৈরি হওয়ার মুহূর্তেই সেই পরিচিত ‘ফটফট’ শব্দ শোনা যায়। গবেষকরা একে অনেকটা ভ্যাকুয়াম বা শূন্যস্থান তৈরির সঙ্গে তুলনা করেছেন।
আঙুল ফোটালে বাতের ব্যথা হয়—এই ধারণাকে ভুল প্রমাণ করতে বিজ্ঞানী ডোনাল্ড উঙ্গার এক অনন্য পরীক্ষা চালিয়েছেন। তিনি টানা ৫০ বছর তাঁর বাঁ হাতের আঙুল দিনে দুবার করে ফোটালেও ডান হাতের আঙুল কখনোই ফোটাননি। দীর্ঘ পাঁচ দশক পর তিনি প্রমাণ করেন যে, দুই হাতের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই এবং কোনো হাতেই আর্থ্রাইটিসের লক্ষণ পাওয়া যায়নি। এই গবেষণার জন্য তিনি ২০০৯ সালে চিকিৎসাবিজ্ঞানে আইজি নোবেল পুরস্কারও লাভ করেন। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই অভ্যাস অনেকের কাছে বিরক্তিকর মনে হতে পারে, তবে এটি হাড়ের কোনো ক্ষতির ইঙ্গিত দেয় না।
শীতের সুপারফুড মূলার অজানা উপকারিতা
শীত মৌসুম মানেই টাটকা শাকসবজি, আর এই তালিকায় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি সবজি হলো মূলা। ঝাঁঝালো স্বাদ ও পানিসমৃদ্ধ এই মূলজাতীয় সবজিটি শুধু রান্নার স্বাদ বাড়ায় না, বরং মানবদেহে বহুমুখী স্বাস্থ্য উপকারও এনে দেয়। খাদ্যতালিকায় নিয়মিত মূলা যুক্ত করলে ডায়াবেটিস থেকে শুরু করে হৃদ্স্বাস্থ্য, হজম ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতায় ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে সাম্প্রতিক গবেষণাগুলো ইঙ্গিত দিচ্ছে।
মূলা কেন এত উপকারী
মূলা (বৈজ্ঞানিক নাম Raphanus sativus) সরিষা পরিবারভুক্ত একটি সবজি। সাধারণত লালচে খোসা ও ভেতরে সাদা অংশবিশিষ্ট এই সবজিটি বাজারে বেশি দেখা যায়। এতে রয়েছে আঁশ, ভিটামিন, খনিজ ও শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা দেহকে ফ্রি র্যাডিক্যালের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করে।
১. ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক
গবেষণায় দেখা গেছে, মূলায় থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও উদ্ভিজ্জ সক্রিয় উপাদান রক্তে শর্করার ভারসাম্য বজায় রাখতে ভূমিকা রাখে। এটি অন্ত্রে গ্লুকোজ শোষণের হার কমাতে সাহায্য করে এবং শক্তি বিপাক প্রক্রিয়া উন্নত করে। ফলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি হ্রাস পেতে পারে।
২. লিভার সুস্থ রাখতে কার্যকর
প্রাণীভিত্তিক গবেষণায় প্রমাণ মিলেছে, মূলায় থাকা গ্লুকোসিনোলেট ও আইসোথায়োসায়ানেট নামের যৌগ লিভারের কোষকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে পারে। এছাড়া মূলার লাল রঙের জন্য দায়ী অ্যান্থোসায়ানিন এবং কোএনজাইম কিউ১০ লিভারের কার্যকারিতা উন্নত করতে সহায়ক।
৩. ক্যানসার প্রতিরোধে সম্ভাবনাময় খাদ্য
মূলার ঝাঁঝালো স্বাদের পেছনে থাকা কিছু প্রাকৃতিক রাসায়নিক উপাদান ক্যানসার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, বিশেষ করে স্তন ও প্রোস্টেট ক্যানসারের ক্ষেত্রে মূলার বীজে থাকা সালফোরাফেন কোষের ক্ষতিকর বৃদ্ধি দমন করতে সক্ষম হতে পারে।
৪. ছত্রাক সংক্রমণ প্রতিরোধে ভূমিকা
ল্যাবরেটরি পর্যায়ের গবেষণায় মূলার নির্যাস Candida albicans নামক ছত্রাকের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। যদিও এটি মানবদেহে সরাসরি প্রয়োগযোগ্য কিনা, তা নিশ্চিত করতে আরও গবেষণা প্রয়োজন, তবু ফলাফল আশাব্যঞ্জক।
৫. হৃদ্স্বাস্থ্য ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক
মূলার পাতায় থাকা কিছু নির্যাস রক্তচাপ ও হৃদস্পন্দন কমাতে ভূমিকা রাখতে পারে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। বিশেষ কিছু জাতের মূলায় থাকা ট্রিগোনেলিন নামের উদ্ভিজ্জ উপাদান রক্তনালির স্বাস্থ্য রক্ষায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
৬. হজমশক্তি ও অন্ত্রের সুস্থতায় উপকারী
প্রাচীনকাল থেকেই পেটের সমস্যা ও কোষ্ঠকাঠিন্য নিরসনে মূলার ব্যবহার প্রচলিত। আধুনিক গবেষণায় দেখা গেছে, মূলার পলিস্যাকারাইড উপাদান প্রিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে, যা উপকারী ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি বাড়ায় এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্য উন্নত করে।
৭. রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি
মূলার নির্যাস শরীরের প্রতিরক্ষা কোষ যেমন টি-সেল, বি-সেল ও ইমিউনোগ্লোবুলিনের কার্যকারিতা বাড়াতে পারে। ফলে শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণসহ নানা রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী হয়।
৮. ত্বকের যত্নে প্রাকৃতিক সমাধান
মূলায় থাকা পলিফেনল ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি ও দূষণের প্রভাব থেকে রক্ষা করে। এসব উপাদান ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে, বার্ধক্যের লক্ষণ কমাতে এবং প্রদাহ প্রতিরোধে সহায়ক।
পুষ্টিগুণে ভরপুর মূলা
ইউএসডিএ অনুযায়ী, আধা কাপ কাঁচা কাটা মূলায় থাকে মাত্র ৯ ক্যালরি। এতে রয়েছে পর্যাপ্ত পানি, আঁশ, ভিটামিন সি, পটাশিয়াম ও ক্যালসিয়াম। কম ক্যালরির হওয়ায় এটি ডায়েট অনুসরণকারীদের জন্যও উপযোগী।
কীভাবে খাবেন মূলা
মূলা কাঁচা সালাদে, রান্নায়, ভাজি, স্যুপ কিংবা আচার হিসেবেও খাওয়া যায়। অনেকেই মূলার শাক ফেলে দিলেও গবেষণায় দেখা গেছে, এর পাতা অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্যে বিশেষ উপকারী।
সতর্কতা ও সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
- সরিষা পরিবারভুক্ত সবজিতে যাদের অ্যালার্জি আছে, তাদের ক্ষেত্রে মূলা সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে
- অতিরিক্ত কাঁচা মূলা খেলে কিছু মানুষের থাইরয়েড কার্যক্রমে প্রভাব পড়তে পারে
- গর্ভবতী নারীদের কাঁচা মূলা বা কাঁচা অঙ্কুর খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত, কারণ এতে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে
পাঠকের মতামত:
- আয়ের দৌড়ে শীর্ষ নেতাদের পেছনে ফেললেন নুর, হলফনামায় নতুন চমক
- কেন ১ জানুয়ারি নতুন বছর? জানুন এর পেছনের রোমাঞ্চকর ইতিহাস
- প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে পাকিস্তান ও নেপালের প্রতিনিধিদের সাক্ষাৎ
- হাড়কাঁপানো শীতের ইতিহাস, দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কবে কত ছিল?
- ভারসাম্য হারাচ্ছে জলবায়ু তবে কি ধেয়ে আসছে পরবর্তী তুষারযুগ?
- শীতে সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে সেরা ৫ টিপস
- বছর শেষে স্বর্ণের দামে বড় ধস, কাল থেকে কার্যকর নতুন রেট
- ঠাকুরগাঁওয়ে ফখরুলের সম্পদের পাহাড়? হলফনামায় মিলল বড় তথ্য
- টাঙ্গাইলে খোলস পাল্টে ভোটের মাঠে আওয়ামী লীগের তিন নেতা
- খালেদা জিয়ার মৃত্যুর দায় থেকে হাসিনা মুক্তি পাবেন না: নজরুল
- কবে পর্যাপ্ত সূর্যের আলো পাওয়া যাবে, জানাল আবহাওয়া অধিদপ্তর
- দেশজুড়ে খালেদা জিয়ার গায়িবানা জানাজা
- কেন তিনি ‘আপসহীন’? খালেদা জিয়ার জীবনের অজানা অধ্যায়
- জনসেবা ত্যাগ ও সংগ্রামের এক অবিস্মরণীয় ইতিহাস রেখে গেলেন তিনি
- নগরকান্দায় এলজিইডি প্রকৌশলীর ঘুষের ভিডিও ভাইরাল
- জানুয়ারি–জুন: ২০২৬ সালের ক্রীড়া সূচি
- কত টাকার মালিক হাসনাত? সম্পদের হিসাব প্রকাশ
- প্রাকৃতিক উপায়ে ওজন বাড়ানোর সেরা খাবার
- মৃত্যুর পর মানবদেহে কী ঘটে, জানাচ্ছে বিজ্ঞান
- জাতীয় পতাকায় মোড়ানো কফিন: মানিক মিয়ার পথে বেগম জিয়া
- ২০২৬ শিক্ষাবর্ষে কলেজে দীর্ঘ ছুটির নতুন সূচি
- মালয়েশিয়ায় বিদেশি কর্মীর ব্যাপক চাহিদা: নতুন আবেদনের সময় জানুন
- পুঁজিবাজারে তিন প্রতিষ্ঠানের রেটিং আপডেট
- মাতৃতুল্য অভিভাবক: ক্রীড়াঙ্গনে খালেদা জিয়ার না বলা সব গল্প
- বিনিয়োগকারীদের জন্য জরুরি বার্তা: আজ ডিএসই বন্ধ
- যুদ্ধের দাবদাহ ও ক্ষমতার রদবদল: ২০২৫ সালের আলোচিত সব ঘটনা
- জাতি এক মহান অভিভাবককে হারাল: প্রধান উপদেষ্টা
- ৩১ ডিসেম্বরের হালনাগাদ বৈদেশিক মুদ্রার দর
- হাড়কাঁপানো ঠান্ডায় রেকর্ড গড়ল গোপালগঞ্জ
- সোনার বাজারে সুখবর! কমল দাম যত
- প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার নতুন তারিখ জানুন
- শেষবারের মতো একনজর দেখার জন্য তারেক রহমানের বাসায় নেতাকর্মীদের ভিড়
- ফুলকপি খাওয়ার যত উপকারিতা
- ২০২৬ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের আশঙ্কা
- জানাজার নিয়ত, দোয়া ও তাকবির: সহজ নির্দেশনা
- জানাজার নিয়ত, দোয়া ও তাকবির: সহজ নির্দেশনা
- জনসমুদ্রে পরিণত সংসদ ভবন,চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি
- আজ ঢাকার যেসব রাস্তা এড়িয়ে চলবেন
- আজ ৩১ ডিসেম্বরের নামাজের সময়সূচি
- জানাজায় নারীদের অংশগ্রহণ নিয়ে বিশেষ ঘোষণা
- জেনে নিন আজকের আবহাওয়ার হালচাল
- আজ দিনভর গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকবে যেসব এলাকায়
- টিভির পর্দায় আজকের সব খেলার সূচি
- কুয়াশা না কি বৃষ্টির ঝাপটা? রাজশাহীতে শীতের কামড়ে ঘরবন্দি লাখো মানুষ
- খালেদা জিয়াকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে আজ ঢাকায় আসছেন যেসব দেশের মন্ত্রী
- বাদ জোহর স্বামীর কবরের পাশেই শায়িত হচ্ছেন খালেদা জিয়া
- স্ট্রোক হওয়ার কয়েক দিন আগেই পাওয়া যায় সিগন্যাল: ৫টি লক্ষণ চিনুন
- প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত: নতুন সম্ভাব্য তারিখ জানাল অধিদপ্তর
- খালেদা জিয়া শুধু দলের নয় বরং পুরো দেশের নেতা: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
- মেঘ আর কুয়াশায় ঢাকা সূর্য: কবে দেখা দেবে সোনালী রোদ জানাল অধিদপ্তর
- আজ ঢাবির ভর্তি যুদ্ধ: আছে এমআইএসটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ খবর
- আজকের স্বর্ণের দাম: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫
- আজ থেকে কার্যকর স্বর্ণের নতুন মূল্য
- পাঁচ ব্যাংকের আমানতকারীদের জন্য বড় সুখবর
- আজ থেকে শুরু বিপিএলের দ্বাদশ আসর, জানুন পূর্ণাঙ্গ সময়সূচী
- সাধারণের নাগালের বাইরে সোনার বাজার: মধ্যবিত্তের সোনা কেনার স্বপ্ন কি তবে শেষ
- আজকের স্বর্ণের দাম: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫
- ঢাকা-১৫ জামায়াত আমিরের বিপক্ষে নামলেন যে বিএনপি প্রার্থী
- বাবার কবরের সামনে দাঁড়িয়ে নীরবে কেঁদেছেন তারেক রহমান
- এমবিবিএস-বিডিএস ভর্তি পিছাল, নতুন তারিখ ঘোষণা
- ২০২৬ সালে স্কুলে ছুটি কমলো ১২ দিন, দেখে নিন তালিকা
- ই-রিটার্ন দাখিলে আর বাধা নেই: বড় সুখবর দিল রাজস্ব বোর্ড আজ
- ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে অষ্টম শ্রেণির বৃত্তি পরীক্ষা: আজই দেখে নিন রুটিন
- হাড়কাঁপানো শীত ও ঘন কুয়াশা থেকে মুক্তি কবে? যা জানাল আবহাওয়া অফিস
- জামায়াত-চরমোনাই দ্বিমুখী লড়াই: সংকটে ইসলামী জোট








