জান্নাতুল ফেরদাউস পেতে চাই এই ৭টি অভ্যাস

ধর্ম ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ৩১ ১৮:২৫:৩৮
জান্নাতুল ফেরদাউস পেতে চাই এই ৭টি অভ্যাস
ছবি: সংগৃহীত

জান্নাতুল ফেরদাউস- এটি সেই চূড়ান্ত পুরস্কার, যা একজন মুসলিমের জীবনের সর্বোচ্চ স্বপ্ন। অনন্ত সুখ-শান্তি, আল্লাহর সান্নিধ্য ও চিরস্থায়ী নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি যেখানে রয়েছে, সেটাই জান্নাতুল ফেরদাউস। কিন্তু কে সেখানে প্রবেশাধিকার পাবে? কে হবে তার যোগ্য বাসিন্দা? এই প্রশ্নের জবাবে খোদ মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনের সূরা আল-মুমিনুনে জান্নাতুল ফেরদাউসপ্রাপ্ত ঈমানদারদের সাতটি অনন্য গুণাবলি বর্ণনা করেছেন, যা একজন মানুষকে কেবল জান্নাতের পথেই নয়, বরং জান্নাতুল ফেরদাউসের উত্তরাধিকারী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। এই গুণাবলির আলোকে আমরা নিজের অবস্থান মূল্যায়ন করতে পারি আমি কি সেই পথেই আছি, নাকি বিপরীত দিকে হাঁটছি?

১. নামাজে বিনয় ও খুশুখুযু

আল্লাহর বর্ণনায় প্রথম গুণ হলো- নামাজে বিনয় ও মনোযোগ অবলম্বন করা। রুকু-সিজদা সহ প্রতিটি রুকন ধীরস্থিরভাবে আদায় করা, তাড়াহুড়ো না করে আত্মস্থ হয়ে নামাজে মনোযোগ ধরে রাখা। এমন নামাজ, যা অন্তরকে পরিবর্তন করে, আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে এবং আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা বাড়ায়।

২. অনর্থক বিষয় এড়িয়ে চলা

দ্বিতীয় গুণটি হলো- অর্থহীন বিষয়বস্তু থেকে বিরত থাকা। শুধু গীবত, চোগলখোরি কিংবা অপসংস্কৃতিই নয়, বরং এমন সব কাজ যেগুলোর কোনো আখিরাতভিত্তিক ফায়দা নেই তা যত বিনোদনমূলক হোক না কেন তা থেকে নিজেকে দূরে রাখাই একজন ঈমানদারের পরিচয়। সময় নষ্ট করে এমন কার্যকলাপ যেমন কার্টুন, গেম, অশ্লীল কনটেন্ট, গান, ফ্রি-মিক্সিং নাটক ও সিনেমা এসবই ধীরে ধীরে অন্তরকে ম্লান করে দেয়, যা জান্নাত থেকে দূরে ঠেলে দেয়।

৩. যাকাত প্রদান করা

তৃতীয় গুণ হলো- নিজের ওপর ফরজ যাকাত সম্পর্কে সচেতনতা এবং যথাযথভাবে তা আদায় করা। অর্থনৈতিকভাবে আল্লাহর নির্ধারিত সিস্টেম অনুযায়ী দারিদ্র্য দূরীকরণে অংশগ্রহণ করাই কেবল নয়, এটি হলো নিজের ধন-সম্পদের পবিত্রতা রক্ষা করা এবং সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতার প্রকাশ।

৪. চরিত্র সংরক্ষণ

চতুর্থ গুণ হলো- যৌন অঙ্গ ও চরিত্রের হেফাজত। আজকের সমাজে যেখানে হারাম সম্পর্ক, পরকীয়া, পর্নোগ্রাফি, মাস্টারবেশন ইত্যাদি ব্যাপকভাবে বিস্তৃত, সেখানে নিজেকে পবিত্র রাখা এক বিরল গুণ। আল্লাহর প্রতি ভয় এবং নিজ আত্মার মর্যাদা রক্ষা এটি জান্নাতের প্রকৃত দাবিদারদের পরিচায়ক।

৫. আমানতের হেফাজত

পঞ্চম গুণ হলো- যে কোনো ধরণের আমানতের সঠিকভাবে রক্ষা করা। তা হতে পারে কারো গোপন কথা, সম্পদ কিংবা দায়িত্ব। একজন জান্নাতপ্রত্যাশীর উচিত হলো মানুষের বিশ্বাস অটুট রাখা এবং অন্যের অধিকার বা গোপনীয়তাকে সম্মান করা।

৬. ওয়াদা পূরণ করা

ষষ্ঠ গুণটি হলো- ওয়াদা রক্ষা করা। আল্লাহ ও মানুষের সঙ্গে করা সব প্রতিশ্রুতি ও চুক্তি সময়মতো ও যথাযথভাবে পালন করা একজন সৎ মুমিনের অন্যতম গুণ। কথা দিয়ে কথা না রাখা, চুক্তিভঙ্গ করা কিংবা প্রতারণা ইসলামের দৃষ্টিতে বড় গুনাহ এবং জান্নাত থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণ।

৭. নামাজে নিয়মিততা ও যত্ন

সপ্তম গুণ হলো নামাজে যত্নবান থাকা। শুধু নিয়মিত নয়, বরং সময়মতো, নিষ্ঠার সঙ্গে, সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে নামাজ আদায় করা। তারা নামাজের ওয়াক্তের প্রতি সচেতন থাকে, আলসেমি বা ব্যস্ততার কারণে নামাজকে বিলম্বিত করে না এবং নামাজের মাসআলা-মাসায়েল জানার জন্য প্রয়োজন হলে বিজ্ঞ আলেমের শরণাপন্ন হতে দ্বিধাবোধ করে না।

আল্লাহ তায়ালা সূরা আল-মুমিনুনে উল্লেখিত এই সাতটি গুণধারীদের সম্পর্কে বলেন—“তাদের জন্য রয়েছে জান্নাতুল ফেরদাউস, যেখানে তারা চিরকাল থাকবে।” (সূরা আল-মুমিনুন, আয়াত ১–৫, ৮–১১) এই আয়াত আমাদের জানিয়ে দেয়, জান্নাতুল ফেরদাউস কেবল দোয়ায় অর্জনযোগ্য নয়; এটি গড়ে তুলতে হয় নিজেকে আমল ও চরিত্রের মাধ্যমে। কেবল মুখে জান্নাত চেয়ে কাজ না করে, সে অনুযায়ী জীবনকে ঢেলে সাজাতে হবে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ