ঢাকায় আশুরার তাজিয়া মিছিল শুরু, নিরাপত্তায় চূড়ান্ত প্রস্তুতি

ধর্ম ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ০৬ ১১:৫৪:৫১
ঢাকায় আশুরার তাজিয়া মিছিল শুরু, নিরাপত্তায় চূড়ান্ত প্রস্তুতি

পবিত্র আশুরা উপলক্ষে ঢাকায় শিয়া সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী তাজিয়া মিছিল শুরু হয়েছে রবিবার (৬ জুলাই) সকালে। রাজধানীর পুরান ঢাকার ৪০০ বছরের ঐতিহাসিক হোসনি দালান ইমামবাড়া থেকে সকাল ১০টায় এই শোকাবহ মিছিলটি আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। মহররম মাসের ১০ তারিখ ইসলামি ইতিহাসে এক শোকাত্মক দিন হিসেবে বিবেচিত, কেননা এই দিনেই কারবালার প্রান্তরে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রিয় দৌহিত্র ইমাম হুসাইন (রা.) ও তাঁর সাথীরা অন্যায় ও স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে শহিদ হন। শিয়া সম্প্রদায় এই দিনটি প্রতিবছর গভীর শ্রদ্ধা, শোক ও আত্মত্যাগের প্রতীক হিসেবে স্মরণ করে থাকে।

এবারের তাজিয়া মিছিলটি হোসনি দালান থেকে শুরু হয়ে আজিমপুর, নীলক্ষেত, নিউ মার্কেট, সায়েন্স ল্যাব হয়ে ধানমন্ডি পৌঁছে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। সকাল থেকেই হাজারো মানুষ হোসনি দালান এলাকায় জড়ো হন। অংশগ্রহণকারীদের বেশিরভাগই ছিলেন কালো পোশাকে, যা আশুরার শোক প্রকাশের আন্তর্জাতিক প্রতীক। তাঁদের হাতে ছিল প্রতীকী ছুরি, আলাম (ধর্মীয় পতাকা), নিশান, বেস্তা (লাঠি), বইলালাম (ধর্মীয় প্রতীক)—এসবই কারবালার শোকগাথা ও ধর্মীয় অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ। মিছিল চলাকালে তাঁরা “ইয়া হোসাইন” ধ্বনি দিয়ে শোক প্রকাশ করেন এবং নিজ দেহে আঘাত করে বা মাতম করে কষ্ট ও বেদনার বহিঃপ্রকাশ ঘটান।

ঢাকা মহানগর পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলো মিছিলের আগে থেকেই সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে ছিল। পুরো রুটজুড়ে তৈরি করা হয় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তাবলয়। মিছিলের অগ্রভাগ, মধ্যভাগ ও শেষ প্রান্তে মোতায়েন করা হয়েছে বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য। সঙ্গেই রয়েছেন র‍্যাব, সোয়াট, ফায়ার সার্ভিস, সেনাবাহিনীর সদস্য এবং সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে ব্যবহার করা হচ্ছে অত্যাধুনিক ড্রোন এবং সিসিটিভি ক্যামেরা।

যেসব সড়ক দিয়ে মিছিলটি অগ্রসর হচ্ছে, সেসব স্থানে যান চলাচল নিয়ন্ত্রিত রাখা হয়েছে। ট্রাফিক পুলিশ যানবাহন নিয়ন্ত্রণ ও বিকল্প পথ ব্যবস্থাপনায় সক্রিয় রয়েছে। তল্লাশি চৌকিতে সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের ব্যাগ বা সঙ্গে রাখা সামগ্রী পরীক্ষা করা হচ্ছে। নিষিদ্ধ করা হয়েছে কোনো ধরনের ধারালো অস্ত্র, মুখোশ, মুখ ঢাকা পোশাক বা বিস্ফোরকজাতীয় দ্রব্য বহন।

মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে আয়োজক কমিটি পূর্ব থেকেই অংশগ্রহণকারীদের জন্য নির্দেশনা জারি করেছিল, যাতে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য নষ্ট না হয়। বিভিন্ন স্থান থেকে আগত শিয়া সম্প্রদায়ের মানুষ ছাড়াও বিদেশি পর্যবেক্ষকরাও মিছিলে অংশ নিয়েছেন বা মিছিল পর্যবেক্ষণ করেছেন।

ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব ছাড়াও এই মিছিল শোক ও প্রতিবাদের এক প্রতীকী ভাষা কারবালার ঘটনাকে কেন্দ্র করে। ইমাম হোসাইনের (রা.) আত্মত্যাগ ন্যায়, সাহস, মানবাধিকার ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের আদর্শ হিসেবে মুসলিম সমাজে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। তাই এই মিছিল শুধুমাত্র ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং তা একটি নৈতিক বার্তা বহন করে: সত্যের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান, অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রাম।

ঢাকায় আয়োজিত আশুরার তাজিয়া মিছিল দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় শোকানুষ্ঠান হিসেবে পরিচিত। এবারের আয়োজন শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হওয়ায় প্রশাসন ও আয়োজক পক্ষ সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তারা আশা করছেন, ভবিষ্যতেও এই ঐতিহ্যিক ও ধর্মীয় শোকমিছিল সুশৃঙ্খল ও নিরাপদ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হতে পারবে এটি হবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির একটি শক্তিশালী উদাহরণ।

-ইসরাত, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ