নির্বাচনে পিআর পদ্ধতি নিয়ে জামায়াতের মন্তব্য

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ০৪ ১৩:১২:৩৪
নির্বাচনে পিআর পদ্ধতি নিয়ে জামায়াতের মন্তব্য

ব্যালটের মাধ্যমে একক কর্তৃত্বের অবসান ঘটিয়ে জনগণের প্রকৃত রায় প্রতিফলনের লক্ষ্যে প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন (পিআর) পদ্ধতিকে সর্বোত্তম সমাধান হিসেবে তুলে ধরেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলের সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, পিআর পদ্ধতিতে ভোট ডাকাতির সুযোগ নেই, একদলীয় কর্তৃত্ববাদ প্রতিষ্ঠিত হয় না এবং এতে জনগণের ভোটের প্রকৃত মূল্যায়ন সম্ভব হয়।

বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) রাতে রাজধানীর কাকরাইলের ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ঢাকা মহানগরী উত্তর ও দক্ষিণ শাখার সাংগঠনিক থানা ও বিভাগীয় দায়িত্বশীল সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

অধ্যাপক পরওয়ার বলেন, স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরেও মানুষকে তার সাংবিধানিক অধিকার আদায়ের জন্য রাস্তায় নামতে হচ্ছে যার মূল কারণ একদলীয় শাসন ব্যবস্থার ফ্যাসিবাদী পরিণতি। তিনি বলেন, “এই ব্যবস্থা রাষ্ট্রকে জনগণের শত্রুতে পরিণত করে। অথচ পিআর পদ্ধতির নির্বাচনে এমন বিকৃতি সম্ভব নয়। তাই আমরা এই পদ্ধতির পক্ষেই অবস্থান নিয়েছি।”

তিনি বলেন, ‘২৪-এর ছাত্র-জনতা একক কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে বুক পেতে দিয়েছে, তাদের আত্মত্যাগ রাষ্ট্রকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করেছে।’ দুই সহস্রাধিক ছাত্র-জনতা জীবন দিয়েছেন, পঞ্চাশ হাজারের বেশি আহত ও পঙ্গু হয়েছেন—এই ত্যাগ জাতির ইতিহাসে অবিস্মরণীয় বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

পরওয়ার আরও বলেন, “যে বৈষম্যের বিরুদ্ধে তারা লড়েছেন, সেই বৈষম্য যদি পুনরায় মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে, তাহলে রাষ্ট্রকে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে। বৈষম্যের মূল উৎপত্তি হচ্ছে একক কর্তৃত্ব।” জামায়াত রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে একটি বৈষম্যহীন কল্যাণরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করবে—যে রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখেছিলেন স্বাধীনতার শহীদরা, বলেন তিনি।

তিনি জুলাইয়ে আত্মত্যাগকারী শহীদদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদান এবং তাদের প্রতি সংঘটিত গণহত্যার বিচার নিশ্চিত করার আহ্বান জানান। পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

সম্মেলনের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, “আন্দোলনের মাধ্যমে জনগণের মাঝে যে গণচেতনা সৃষ্টি হয়েছে, তা ধরে রাখতে হবে। এ চেতনা জাতিকে মুক্তি দেবে ফ্যাসিবাদ ও দুঃশাসন থেকে।”

জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, “জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবারকে যথাযথ সম্মান দিতে হবে। আহত ও পঙ্গুত্ব বরণকারীদের পুনর্বাসনের জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।”

ইসলামী ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেন, “জুলাইয়ের প্রেরণা ছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে এবং ন্যায়ের পক্ষে। নতুন করে যে ঘাটতি বা বিচ্যুতি দেখা দিচ্ছে, তা জনগণের ঐক্য ও প্রত্যয়ের মাধ্যমে অচিরেই কেটে যাবে।”

সম্মেলনের পরিচালনায় ছিলেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ডা. শফিকুল ইসলাম মাসুদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আতিকুর রহমান প্রমুখ।

এছাড়া সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় ও মহানগর পর্যায়ের বিভিন্ন দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ, থানা ও বিভাগীয় শাখার প্রতিনিধিগণ, ইসলামী ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় ও শাখা নেতারা, এবং সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা।

-রাফসান, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ