ট্রাম্প প্রশাসনের নাগরিকত্ব বাতিলের হুমকি: বিতর্কে জোহরান মামদানি ও ইলন মাস্ক

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ০৩ ২০:২০:৩৪
ট্রাম্প প্রশাসনের নাগরিকত্ব বাতিলের হুমকি: বিতর্কে জোহরান মামদানি ও ইলন মাস্ক

যুক্তরাষ্ট্রে ন্যাচারালাইজেশনের মাধ্যমে নাগরিকত্ব পাওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল। নিউইয়র্ক সিটির ডেমোক্র্যাট মেয়র প্রার্থী জোহরান মামদানি এবং ধনকুবের উদ্যোক্তা ইলন মাস্ক—এই দুজনকে কেন্দ্র করেই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক ও আইনি বিতর্ক।

ট্রাম্প প্রশাসনের কয়েকজন কর্মকর্তা জোহরানের নাগরিকত্ব বাতিল (ডিন্যাচারালাইজেশন) নিয়ে মন্তব্য করলেও, মাস্কের বিরুদ্ধে ‘ব্যবসা গুটিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় ফেরত যাওয়ার’ কথাও বলেছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট।

কারা এই জোহরান ও মাস্ক?

জোহরান মামদানি ২০১৮ সালে ন্যাচারালাইজেশনের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব লাভ করেন। জন্ম উগান্ডার কাম্পালায়, ভারতীয় বংশোদ্ভূত পরিবারে। বর্তমানে নিউইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক দলের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

অন্যদিকে, ইলন মাস্কের জন্ম দক্ষিণ আফ্রিকার প্রিটোরিয়ায়। ২০০২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব লাভ করেন। তিনি টেসলা, স্পেসএক্স এবং এক্স (পূর্বতন টুইটার)-এর মালিক।

জোহরানকে বিতাড়নের দাবি কোথা থেকে?

টেনেসির রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান অ্যান্ডি ওগলস অভিযোগ করেছেন, জোহরান সন্ত্রাসবাদে দণ্ডিতদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন এবং তা নাগরিকত্ব গ্রহণের সময় গোপন করেছেন। তিনি অ্যাটর্নি জেনারেল প্যাম বন্ডিকে লেখা এক চিঠিতে তদন্ত শুরুর আহ্বান জানিয়েছেন।

চিঠিতে বলা হয়, ‘জোহরান মামদানি একজন ইহুদিবিরোধী, সমাজতান্ত্রিক ও কমিউনিস্ট। তিনি নিউইয়র্ককে ধ্বংস করবেন—তাই তাঁকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়ন করা প্রয়োজন।’

তবে এ দাবির পেছনে উপস্থাপিত তথ্যগুলো প্রশ্নবিদ্ধ এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

মাস্ক বনাম ট্রাম্প: সম্পর্কের অবনতি

এক সময় ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ ছিলেন ইলন মাস্ক। এমনকি তাঁর নির্বাচনী প্রচারেও অর্থ সহায়তা করেছিলেন। তবে সাম্প্রতিক ‘বিগ বিউটিফুল বিল’ নামের একটি আইনপ্রস্তাবকে কেন্দ্র করে দুজনের সম্পর্কে টানাপোড়েন তৈরি হয়েছে।

ওই বিল অনুযায়ী, ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে বৈদ্যুতিক গাড়ি কেনায় করছাড় সুবিধা বাতিল হতে যাচ্ছে—যা সরাসরি টেসলার মতো কোম্পানিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

মাস্ক সামাজিক মাধ্যমে এই বিলের বিরোধিতা করে বলেছেন, এতে সাধারণ গ্রাহক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তিনি এমনকি একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের হুমকিও দিয়েছেন।

নাগরিকত্ব বাতিলের আইনগত ভিত্তি কী?

যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী, ন্যাচারালাইজেশন প্রক্রিয়ায় প্রতারণা বা গুরুতর তথ্য গোপন ছাড়া কারও নাগরিকত্ব বাতিল করা সম্ভব নয়। দেশদ্রোহিতা, যুদ্ধাপরাধ, সন্ত্রাসবাদে অংশগ্রহণ, বা বিদেশি সামরিক বাহিনীতে যোগদান—এই ধরনের অপরাধ প্রমাণিত হলে কেবল ডিন্যাচারালাইজেশন হতে পারে।

নেভাডা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক মাইকেল কেগান বলেন, “মাস্ক বা মামদানির বিরুদ্ধে কোনো গুরুতর অপরাধের প্রমাণ না থাকায় এই হুমকি রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এটি দায়িত্বহীন বক্তব্য।”

জোহরানের প্রতিক্রিয়া

এক বিবৃতিতে জোহরান বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট আমাকে গ্রেপ্তার, নাগরিকত্ব বাতিল, বন্দী করে দেশ থেকে বিতাড়নের হুমকি দিয়েছেন। আমার কোনো আইন লঙ্ঘনের কারণে নয়, বরং আমি আইসিইকে (ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট) আতঙ্ক ছড়াতে বাধা দেওয়ার কথা বলেছি বলেই এমন হুমকি দেওয়া হচ্ছে।”

তিনি আরও বলেন, “যখন রিপাবলিকানরা সামাজিক নিরাপত্তা ধ্বংস করতে চায়, তখন এরিক অ্যাডামসের মতো ডেমোক্রেট নেতারা ট্রাম্পের সুরে সুর মিলিয়ে চলেছেন। ভোটাররা এই বিভাজন ও ঘৃণার রাজনীতিকে নাকচ করে দেবে।”

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ