ভারত বনাম ইংল্যান্ড

অধিনায়ক গিলের ব্যাটে চাপ সামলে ভারতের প্রতিরোধ

খেলা ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ০৩ ১১:৪৫:১১
অধিনায়ক গিলের ব্যাটে চাপ সামলে ভারতের প্রতিরোধ

এজবাস্টনের মাঠে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম দিনে ভারতীয় ব্যাটিং লাইনআপের নেতৃত্বে ছিলেন অধিনায়ক শুভমান গিল। ধারাবাহিকতা ধরে রেখে পরপর দুই ম্যাচে শতক হাঁকানো গিল অপরাজিত ১১৪ রানে দিন শেষ করেন। তার এই ইনিংস ভারতের প্রথম ইনিংসে ৩১০ রানের চমৎকার ভিত্তি গড়ে দেয়। সহ-অবদান রাখেন যশস্বী জয়সওয়াল, যিনি খেলেন চোখধাঁধানো ৮৭ রানের ইনিংস।

ভারতের স্কোর যখন ২১১-৫, তখন হঠাৎ করে দুটি উইকেট পড়ে যাওয়ায় ইনিংসে ধস নামার শঙ্কা দেখা দেয়। তবে সেখান থেকে গিলকে সঙ্গে নিয়ে রাবীন্দ্র জাদেজা (অপরাজিত ৪১) গড়েন ৯৯ রানের অনবদ্য জুটি, যা ভারতকে আবারো স্বস্তির জায়গায় ফিরিয়ে আনে।

তবে প্রথম টেস্টের অভিজ্ঞতা থেকেই গিল জানেন, ব্যক্তিগত শতক দলের জয়ের নিশ্চয়তা নয়। হেডিংলিতে প্রথম টেস্টে ভারতের পাঁচজন ব্যাটার শতক করেছিলেন, তবুও ৬০ হাজার টেস্ট ম্যাচের ইতিহাসে বিরলভাবে সেই ম্যাচ হেরে যায় দলটি। মাত্র ৭ রানে ৪১ ও ৬ রানে ৩১ রানের দুটি ব্যাটিং বিপর্যয় ভারতকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দেয়। ইংল্যান্ড ৩৭১ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে মাত্র পাঁচ উইকেট হারিয়েই জয় তুলে নেয় এবং পাঁচ ম্যাচ সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।

রোহিত শর্মার হঠাৎ অবসরের পর ভারতের নেতৃত্বে আসা ২৫ বছর বয়সী গিল ব্যাট হাতে যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, তা প্রশংসাযোগ্য। দিনের খেলা শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে জয়সওয়াল বলেন, "অধিনায়ক হিসেবে এবং একজন ব্যাটসম্যান হিসেবে গিল অসাধারণ খেলছে। ওর ব্যাটিং দেখে অনুপ্রাণিত হতে হয়, এবং সে খুব পরিষ্কারভাবে জানে কী করতে চায়। দলও তার নেতৃত্বে আত্মবিশ্বাসী।"

দিনের শুরুতে টস জিতে ইংল্যান্ডের অধিনায়ক বেন স্টোকস আবারও ফিল্ডিং বেছে নেন। এর আগে ২০২২ সালে এজবাস্টনেই ভারতকে হারাতে গিয়ে চতুর্থ ইনিংসে ইংল্যান্ড ৩৭৮ রানের লক্ষ্য তাড়া করে ইতিহাস গড়েছিল।

প্রথম ঘণ্টায় ইংলিশ বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে ভারত ছিল কিছুটা চাপে—১৩ ওভারে মাত্র ৩৭ রানেই থেমে যায় স্কোর। ক্রিস ওকস (২১ ওভারে ২-৫৯) ও ব্রাইডন কারস (১৬ ওভারে ১-৪৯) ভারতীয় ব্যাটারদের বেঁধে রাখেন। কেএল রাহুল, যিনি হেডিংলিতে শতক করেছিলেন, এদিন ছিলেন ছন্দহীন। ২৬ বলে মাত্র ২ রান করে ওকসের বলে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরেন।

তবে জয়সওয়াল তার স্বভাবসুলভ আগ্রাসী মেজাজে ৫৯ বলে ফিফটি পূর্ণ করেন, যার ৪০ রানই আসে চারের মার থেকে। স্টোকসের একটি ঢিলেঢালা ডেলিভারিতে পেছনে ক্যাচ দিয়ে জয়সওয়াল ফিরলে, ভারতের স্কোর দাঁড়ায় ১৬১-৩। এরপর ক্রিজে আসেন ঋষভ পন্ত। হেডিংলিতে ঐতিহাসিক ডাবল সেঞ্চুরি করে নজির গড়ার পর এদিন কিছুটা ধীরগতিতে শুরু করেন তিনি। তবে শোয়েব বশিরকে ছক্কায় ওড়ানোর পর পরের বলেই লং অনে ক্যাচ তুলে দিয়ে ২৫ রানে ফেরেন পন্ত।

নতুন বল নেওয়ার আগেই গিল তার ইনিংসের শতক পূর্ণ করেন জো রুটকে পরপর দুটি চার মেরে। তার এই শতক ছিল ১৯৯ বলে, ১১টি চারে সাজানো।

ভারত দলে তিনটি পরিবর্তন আনে, যার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো জাসপ্রিত বুমরাহকে বিশ্রাম দেওয়া। সিরিজের শুরুতেই জানানো হয়েছিল, ইনজুরি থেকে ফেরা এই তারকা পেসার পাঁচটির মধ্যে মাত্র তিনটি টেস্ট খেলবেন। তার জায়গায় খেলানো হয়েছে আকাশ দীপকে, যিনি অভিষেক ম্যাচেই কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি।

তৃতীয় টেস্ট শুরু হবে মাত্র চার দিন পর লর্ডসে। ফলে গিল ও তার দল চাইছে এজবাস্টনে একটি শক্ত ভিত তৈরি করতে, যার উপর দাঁড়িয়ে তারা সিরিজে সমতা ফেরাতে পারবে। প্রথম দিনের শেষে তাদের স্কোর ৩১০-৫—এটি নিঃসন্দেহে সেই লক্ষ্যের দিকেই বড় পদক্ষেপ।

-আলমগীর হোসেন, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ