এবার চট্টগ্রাম বন্দরের দায়িত্বে বাংলাদেশ নৌবাহিনী

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ০২ ১৭:০৪:৩৫
এবার চট্টগ্রাম বন্দরের দায়িত্বে বাংলাদেশ নৌবাহিনী

চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে আগামী ছয় মাসের জন্য দায়িত্ব দেওয়ার সুপারিশ করেছে সরকার। দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত এই বন্দরের কার্যক্রম আরও গতিশীল ও নিরাপদ করতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট মহল।

বুধবার (২ জুলাই) সচিবালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান বিষয়ক উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি জানান, মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এনসিটি পরিচালনার দায়িত্বে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে (CPA) পূর্ণ কর্তৃত্ব প্রদান করা হয়েছে। সেই কর্তৃত্বের অধীনে কর্তৃপক্ষ উপযুক্ত অপারেটর নিয়োগ করবে। সরকার এ পর্যায়ে বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে ওই দায়িত্ব পালনের জন্য ‘উপযুক্ত’ হিসেবে বিবেচনা করছে।

উপদেষ্টা আশ্বস্ত করেন, এ সিদ্ধান্তের ফলে এনসিটি টার্মিনালে কর্মরত কোনো শ্রমিক বা কর্মচারীর চাকরিতে কোনো ধরনের বিরূপ প্রভাব পড়বে না। চাকরি ও দায়িত্ব বহাল থাকবে আগের মতোই। বরং প্রয়োজনে বাংলাদেশ নৌবাহিনী অতীতে যেসব অপারেটর এই টার্মিনাল পরিচালনা করেছে, তাদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে সহযোগিতা নিতে পারবে।

সরকারি পর্যায়ে এই পদক্ষেপ নেওয়া হলেও, এনসিটির ভবিষ্যৎ ব্যবস্থাপনা ও দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন অপারেটর নিয়োগের প্রাথমিক আলোচনা ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। উপদেষ্টা জানান, বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ বন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ডিপি ওয়ার্ল্ড (Dubai Port World)-এর সঙ্গে এনসিটি পরিচালনা নিয়ে প্রাথমিকভাবে আলোচনা চলছে। তবে তিনি সাফ জানিয়ে দেন, এখনো কোনো ধরনের চুক্তি সম্পাদন হয়নি।

এই বিষয়ে ব্রিগেডিয়ার (অব.) ড. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে কোনো বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে এখনো পর্যন্ত কোনো চুক্তি হয়নি। দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে এমন কিছু করার প্রশ্নই আসে না। বর্তমান সরকার কখনোই দেশবিরোধী কোনো চুক্তিতে যাবে না। জনগণকে আমরা এ বিষয়ে সম্পূর্ণ আশ্বস্ত করছি।”

তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা অনুযায়ী বিশ্বের উন্নত দেশের বহু সমুদ্রবন্দর আজ ডিপি ওয়ার্ল্ড, AD Ports-এর মতো বৈশ্বিক অপারেটরদের অধীনে চুক্তিভিত্তিকভাবে সফলভাবে পরিচালিত হচ্ছে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশও একটি চুক্তির মাধ্যমে নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য অপারেশন পরিচালনার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মডেল অনুসরণ করতে পারে। তবে মালিকানা ও নীতিগত কর্তৃত্ব থাকবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের হাতেই।

সরকারের ভাষ্যমতে, এই ধরনের উদ্যোগ নেওয়ার মূল কারণ হলো—চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি, কার্যক্রমের দক্ষতা বাড়ানো এবং আন্তর্জাতিক মানের লজিস্টিক সেবা নিশ্চিত করা। যদি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত অপারেটর নিয়োগ করা যায়, তাহলে পণ্য খালাসের গতি বাড়বে, বড় বড় আন্তর্জাতিক জাহাজ বন্দরে ভিড়তে পারবে, জাহাজ ভাড়া কমে আসবে এবং নতুন নতুন নৌরুট তৈরি হবে।

বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে প্রতিদিন গড়ে চার থেকে পাঁচ হাজার টিইইউএস (TEUs) কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করা হয়। নতুন ব্যবস্থাপনা চালু হলে এই সংখ্যা ছয় হাজারে উন্নীত হতে পারে বলে আশা করছে সরকার। অর্থাৎ বার্ষিক কন্টেইনার হ্যান্ডলিং সক্ষমতা ১৫ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে।

সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টা এ-ও নিশ্চিত করেন যে, এনসিটির এ পরিবর্তনের ফলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিদ্যমান অন্য কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের (যেমন সাইফ পাওয়ারটেক) চুক্তিতে কোনো পরিবর্তন আসবে না। পূর্বের মতোই সব চুক্তি বহাল থাকবে।

সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস. এম. মনিরুজ্জামানও উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, “চট্টগ্রাম বন্দরকে আন্তর্জাতিকমানের একটি বাণিজ্যিক হাবে রূপান্তর করতে আমরা ইতোমধ্যে বহুমুখী পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। বর্তমান কাঠামোতে শুধু আধুনিক প্রযুক্তি নয়, অপারেটর ব্যবস্থাপনাতেও পরিবর্তন আনা দরকার।”

উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বন্দর দেশের মোট আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের প্রায় ৯০ শতাংশের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। ফলে এর কার্যক্রমে সামান্য পরিবর্তনও দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।

এই বাস্তবতা মাথায় রেখে সরকার বন্দর পরিচালনায় স্বচ্ছতা, দক্ষতা এবং আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা তৈরির লক্ষ্যে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছে বলে জানান উপদেষ্টা।

-ইসরাত, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ