গণঅভ্যুত্থান নয়, ‘জুলাই দাঙ্গা’ বললেন জয়

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ০১ ১১:০০:৫৯
গণঅভ্যুত্থান নয়, ‘জুলাই দাঙ্গা’ বললেন জয়

২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্ট মাসে সংঘটিত ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক গণআন্দোলনকে “জুলাই দাঙ্গা” হিসেবে চিহ্নিত করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি দীর্ঘ পোস্ট দিয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। মঙ্গলবার (১ জুলাই) দেওয়া এই পোস্টে তিনি ওই সময়কার গণঅভ্যুত্থানকে বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম কালো অধ্যায় বলে উল্লেখ করেছেন এবং এর পেছনে বিদেশি রাষ্ট্রের অর্থায়ন, উগ্রবাদী গোষ্ঠীর মদদ ও ভুল তথ্যের ভিত্তিতে জনগণের বিভ্রান্তিকে দায়ী করেছেন।

জয় লিখেছেন, “২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত ‘জুলাই দাঙ্গা’ ছিল স্মরণকালের সবচেয়ে অন্ধকারময় অধ্যায়। এই দাঙ্গা কোনো আকস্মিক ঘটনা ছিল না। বরং এটি ছিল একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র, যেখানে কিছু দেশি-বিদেশি স্বার্থান্বেষী মহল, উগ্রবাদী শক্তি এবং বিভ্রান্ত পেশাজীবীদের সম্পৃক্ততা ছিল। কেউ জেনে-শুনে, কেউ আবার না বুঝে এ ষড়যন্ত্রের অংশ হয়েছিলেন।”

তিনি বলেন, অনেকেই সেই সময় ভুল তথ্য, গুজব ও উদ্দেশ্যমূলক প্রচারণার ফাঁদে পড়ে নিজেদের অজান্তেই এই ষড়যন্ত্রে জড়িয়ে পড়েন। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে, মাত্র দশ মাসের মধ্যেই অনেকেই অনুতপ্ত হয়েছেন, নিজেদের অবস্থান ও সিদ্ধান্তের পরিণতি উপলব্ধি করেছেন। জয় দাবি করেন, “আজ আমরা যারা সামাজিক মাধ্যমে, গণমাধ্যমে বা ব্যক্তিগত পর্যায়ে হতাশা, অনুশোচনা ও ভুল স্বীকার করতে দেখছি— তাদের প্রতি আমাদের কোনো ক্ষোভ নেই, নেই প্রতিশোধের মনোভাবও।”

তিনি আরও বলেন, “ভুল বোঝাকে দুর্বলতা মনে করার কিছু নেই, বরং ভুল বুঝে তা স্বীকার করাই সাহসিকতার প্রকৃত প্রকাশ।” তিনি উল্লেখ করেন, আওয়ামী লীগ এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতি প্রতিহিংসা নয়, বরং ক্ষমা, সহমর্মিতা ও ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে এগিয়ে চলার নাম।

জয় তার পোস্টে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক আহ্বানও জানান। তিনি লেখেন, “আপনারা যারা ভুল করেছেন, এখন যদি সত্যিই উপলব্ধি করেন, তাহলে আসুন দেশের স্বার্থে আমরা আবার এক হই। স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের পক্ষে, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় একসঙ্গে কাজ করি। দল-মত-পেশা ভুলে আজ সময় দেশের পাশে দাঁড়ানোর। দেরিতে হলেও আপনাদের বোধোদয়ের জন্য ধন্যবাদ।”

এই পোস্টে সজীব ওয়াজেদ স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে তিনি ভুল করা মানুষদের প্রতি ক্ষমাশীল দৃষ্টিভঙ্গি রাখতে চান এবং তাদের আবারও গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পোস্ট আওয়ামী লীগের কৌশলগত পুনর্মিলন প্রচেষ্টার অংশ হতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে রাজপথে থাকা এবং গত বছরের জনপ্রিয় গণআন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী পেশাজীবী, শিক্ষক ও ছাত্র সমাজের একটি অংশ বর্তমানে নানাভাবে নিপীড়নের মুখে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে জয় একদিকে সেই অনুতপ্ত অংশকে নিজেদের দিকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন, অন্যদিকে আওয়ামী লীগের প্রতিশ্রুত “ক্ষমাশীল রাজনীতি”র ভাবমূর্তি সামনে আনতে চাইছেন।

তবে সমালোচকরা মনে করছেন, “জুলাই দাঙ্গা” বলেই আন্দোলনটিকে সংজ্ঞায়িত করার এই প্রচেষ্টা আসলে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদের ইতিহাসকে বিকৃত করার এক ধরণের রাজনৈতিক পুনর্লিখন। তারা বলছেন, একটি জনপ্রিয় গণঅভ্যুত্থানকে ‘উগ্রবাদী ষড়যন্ত্র’ বলে দাগিয়ে দেয়ার মাধ্যমে সরকার পতনের আন্দোলনের নৈতিকতা ও জনভিত্তিকে খাটো করার অপচেষ্টা করা হচ্ছে।

সামগ্রিকভাবে, সজীব ওয়াজেদ জয়ের এই পোস্ট দেশের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি করেছে। ক্ষমতাচ্যুত সরকার দলীয় মহলে এটি আত্মবিশ্লেষণ ও পুনঃআহ্বানের ভাষ্য হিসেবে দেখা হলেও, বিরোধী পক্ষের কাছে এটি একটি সচেতন জনআন্দোলনকে ‘দাঙ্গা’ তকমা দিয়ে খাটো করার কৌশল হিসেবেই বিবেচিত হচ্ছে। তবে এটুকু নিশ্চিত জয়ের পোস্ট নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ তৈরিতে ও অস্থির পরিস্থিতির ব্যাখ্যা ঘুরিয়ে দিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

-শরিফুল, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ