কৃষকের কাছে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি এনসিপি নেতাদের!

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ০১ ১০:৪৩:২৩
কৃষকের কাছে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি এনসিপি নেতাদের!

কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার ষোলনল ইউনিয়নের এক কৃষকের অভিযোগ ঘিরে ফের আলোচনায় এসেছে ছাত্রনেতাদের চাঁদাবাজির অভিযোগ। গোমতী নদীর চর থেকে বালু সরানোকে কেন্দ্র করে "বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন" এবং "জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি)" বুড়িচং উপজেলা শাখার দুই নেতার বিরুদ্ধে সরাসরি চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলেছেন কৃষক শফিকুর রহমান শিমুল।

“আমার দেশ” প্রতিনিধির হাতে পৌঁছানো একটি ভিডিওতে কৃষক শফিক অভিযোগ করেন, ইউনিয়নের কৃষিজমি থেকে চাষাবাদের উপযোগী করতে বালুর স্তর সরানোর সময় স্থানীয় ছাত্রনেতা নিহাদ সিদ্দিকী ও কামরুজ্জামান পিয়াস ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। এমনকি বালু কাটার শ্রমিকদের ওপর হামলার অভিযোগও তুলেছেন তিনি।

নিহাদ সিদ্দিকী হলেন ভরাসার গ্রামের বাসিন্দা এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য এটিএম সিদ্দিকুর রহমানের ছেলে। অপরদিকে কামরুজ্জামান পিয়াস, বুড়িচং গ্রামের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলমের সন্তান এবং নিজেকে আন্দোলনের “সমন্বয়ক” হিসেবে পরিচয় দেন।

অভিযোগকারী কৃষক জানান, ২০২৪ সালের ভয়াবহ বন্যার পর চরাঞ্চলের ফসলি জমির ওপর পুরু বালুর স্তর পড়ে যায়। স্থানীয় প্রশাসনের মৌখিক অনুমতি নিয়ে কৃষকরা চাষের উপযোগী করতে সেই বালু সরানোর কাজ শুরু করেন। তিনি বলেন, “আমরা বালু কেটে পাশে রাখছি যাতে চাষ করা যায়। কিন্তু কয়েকজন ব্যক্তি এসে দাবি করছে, এখান থেকে মাটি কাটতে হলে চাঁদা দিতে হবে।”

তাঁর ভাষ্য, “নিহাদ বলেছে, ইউনিয়নের মাটির দায়িত্বে সে আছে। আর কামরুজ্জামান এসেই বলেছে, প্রতি ট্রাক বালুর জন্য ২০০ টাকা দিতে হবে। আমরা কৃষকরা চাঁদা দেব নাকি জমিতে কাজ করব?”

সূত্র বলছে, স্থানীয় একটি সমঝোতা বৈঠক হয় বিএনপির ষোলনল ইউনিয়ন সভাপতি সালেহ আহমেদের মধ্যস্থতায়। বৈঠকে ২৫ হাজার টাকা চাঁদা নির্ধারণ করা হলেও কৃষক শফিকুর তাতে রাজি হননি। বৈঠকটি হয় নিহাদ সিদ্দিকীর ভাই কামরুলের ওষুধের দোকানে।

অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সমন্বয়ক নিহাদ সিদ্দিকী নিজেকে “মাটিকাটা কমিটির” নেতা দাবি করে বলেন, “বুড়িচং উপজেলার সাবেক ইউএনও সাহিদা আক্তার ইউনিয়নভিত্তিক মাটিকাটা কমিটি করে দিয়েছিলেন। আমি ওই কমিটির দায়িত্বে ছিলাম। যেসব জায়গায় অবৈধ মাটি কাটতো, আমরা ইউএনও অফিসে জানাতাম। আমি কখনো চাঁদা দাবি করিনি।”

অন্যদিকে কামরুজ্জামান পিয়াস জানান, “আমি চাঁদা চাইনি। শফিকের সঙ্গে অন্য একটি বিষয়ে কথা বলেছিলাম। তারা অবৈধভাবে মাটি কাটছে।”

তবে স্থানীয় এক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সমন্বয়ক বলেন, “তারা প্রশাসনের লোকজনের সঙ্গে ছবি তুলে তা দেখিয়ে কৃষকদের ভয় দেখায়। তাদের একটা চাঁদাবাজ সিন্ডিকেট আছে। নিহাদ ও পিয়াস দুজনই তার সদস্য।”

জেলার ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক সাকিব হোসেন জানান, “বিষয়টি আমি জানতাম না। কারো কাছেই চাঁদা চাওয়া ঠিক নয়। আমি এ বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছি।”

এদিকে, সহকারী কমিশনার (ভূমি) সোনিয়া হক বলেন, “চরের বালু কাটার জন্য আমাদের পক্ষ থেকে কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি। পানি উন্নয়ন বোর্ড দিয়ে থাকলে সেটা তাদের বিষয়।”

বুড়িচং থানার ওসি মো. আজিজুল হক বলেন, “এই বিষয়ে এখনো কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। লিখিত অভিযোগ পেলে আমরা অবশ্যই তদন্ত করব।”

সামগ্রিকভাবে এই ঘটনাটি শুধু স্থানীয় পর্যায়ে নয়, বরং কৃষি, প্রশাসন ও ছাত্র রাজনীতির ত্রিমুখী সম্পর্ক এবং ক্ষমতার অপব্যবহার নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তোলে। মাঠপর্যায়ে কৃষকের দুর্দশা এবং অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে কেউ যদি চাঁদাবাজি করে থাকে, তবে তা নিন্দনীয় এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি রাখে।

-রাফসান, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ