জনস্বাস্থ্য নীতি

ফ্রান্সের পার্ক ও সৈকতে ধূমপানে নিষেধাজ্ঞা: শিশুদের সুরক্ষায় কড়া পদক্ষেপ

স্বাস্থ্য ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ২৯ ১০:৩৭:০৮
ফ্রান্সের পার্ক ও সৈকতে ধূমপানে নিষেধাজ্ঞা: শিশুদের সুরক্ষায় কড়া পদক্ষেপ

ফ্রান্সে রোববার থেকে কার্যকর হচ্ছে একটি নতুন আইন, যার অধীনে দেশের সমুদ্রসৈকত, পাবলিক পার্ক, বাসস্টপ এবং স্কুল, সুইমিং পুল ও গ্রন্থাগারের আশপাশের এলাকায় ধূমপান সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। শিশুদের প্যাসিভ স্মোকিং বা পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

নতুন নিয়ম অনুযায়ী, স্কুল, গ্রন্থাগার, সুইমিং পুলসহ শিশুদের জন্য সংবেদনশীল এলাকাগুলোর ১০ মিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে ধূমপান করা যাবে না। তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এসব এলাকার নির্ধারিত দূরত্ব ও নিষিদ্ধকরণের চিহ্ন সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই ঘোষণা করা হবে।

রাষ্ট্রীয় সরকারি গেজেটে শনিবার এই আদেশ প্রকাশের পরপরই তা পরদিন রোববার থেকে কার্যকর হয়, যদিও পূর্ব ঘোষণামতে এটি কার্যকর হওয়ার কথা ছিল মঙ্গলবার। উল্লেখ্য, এই সিদ্ধান্ত এসেছে ঠিক এক সপ্তাহ আগে, যখন ফ্রান্সে স্কুল ছুটি শুরু হচ্ছে—একটি কৌশলগত সময়সীমা, যাতে শিশুদের অবকাশকালীন সময়ে ধূমপানের ক্ষতি থেকে রক্ষা করা যায়।

তবে বার ও রেস্তোরাঁর টেরেসগুলোতে ধূমপানের অনুমতি অব্যাহত থাকায় এবং ই-সিগারেটকে আইনের আওতায় না আনার কারণে অনেক ধূমপানবিরোধী কর্মী অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।

ফ্রান্সের জাতীয় ধূমপানবিরোধী কমিটির সভাপতি ও শ্বাসরোগ বিশেষজ্ঞ ইভ মার্টিনে বলেন, “আইনটি সঠিক পথে এক ধাপ, তবে এখনো তা পর্যাপ্ত নয়। শিশুদের কথা বলা হলেও তারা তো রেস্তোরাঁর টেরেসেও যায়।” তিনি আরও বলেন, “স্বাস্থ্যবান্ধব নীতির জন্য নিয়মটি হতে হবে পরিষ্কার: কোনো ধরনের তামাক বা নিকোটিনজাত পণ্য জনসমক্ষে গ্রহণ করা যাবে না।”

ফ্রান্সের হোটেল ও রেস্তোরাঁ মালিকদের সংগঠনের নেতারা অবশ্য টেরেসে ধূমপান নিষিদ্ধে আপত্তি জানিয়েছেন। তাদের মতে, এটি সমস্যার স্থানান্তর ঘটাবে, সমাধান নয়। কেউ কেউ এটিকে ‘সহাবস্থানের শেষ আশ্রয়স্থল’ বলেও অভিহিত করেছেন।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ক্যাথরিন ভাত্রাঁ বলেন, “তামাকের কোনো স্থান নেই শিশুদের আশেপাশে। পার্ক, সৈকত, স্কুল—এসব খেলার, শেখার এবং নিশ্বাস নেওয়ার জায়গা। ধূমপানের নয়।” তিনি আরও জানান, এই উদ্যোগ ২০৩২ সালের মধ্যে একটি ধূমপানমুক্ত প্রজন্ম গড়ে তোলার রোডম্যাপের অংশ।

ফ্রান্সে বর্তমানে ধূমপানের হার কমছে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ১৮ থেকে ৭৫ বছর বয়সী প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে দৈনিক ধূমপানকারীর হার ছিল ২৫ শতাংশের নিচে, যা ২০০০ সালের পর সর্বনিম্ন। তবুও, বছরে প্রায় ৭৫,০০০ মানুষ ধূমপানজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করে, এবং এর আর্থিক ক্ষতি বছরে ১৫৬ বিলিয়ন ইউরো—যার মধ্যে রয়েছে চিকিৎসা ব্যয়, উৎপাদনশীলতার ক্ষয়, আইনি ব্যয় ও জীবনমানের অবনতি।

এক সাম্প্রতিক জনমত জরিপে দেখা গেছে, ৬২ শতাংশ ফরাসি নাগরিক জনসমক্ষে ধূমপান নিষিদ্ধ করার পক্ষে।

নতুন আইন অমান্যকারীদের জন্য ১৩৫ ইউরো (প্রায় ১৬০ ডলার) জরিমানার বিধান রয়েছে, যা সর্বোচ্চ ৭০০ ইউরো পর্যন্ত হতে পারে। তবে, শুরুর দিকে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য একটি গ্রেস পিরিয়ড থাকবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

-আলমগীর হোসেন, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ