জানুন কসর নামাজের ইসলামিক বিধান

ধর্ম ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ২৮ ১০:৩৯:১৩
জানুন কসর নামাজের ইসলামিক বিধান

ইসলাম ধর্মে নামাজ মুসলমানদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতগুলোর একটি। এই ফরজ ইবাদত সময়, অবস্থা ও পরিবেশ অনুযায়ী বিভিন্নভাবে পালন করার সুযোগ দিয়েছে ইসলাম। এর একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ হলো সফরের সময় নামাজ আদায়ের বিধান। শরিয়তের পরিভাষায়, কেউ তার বসবাসস্থল থেকে ৪৮ মাইল বা ৭৮ কিলোমিটার দূরত্বে যাওয়ার নিয়তে নিজ শহর বা এলাকা থেকে বের হলে, তাকে মুসাফির গণ্য করা হয়। সফরের পরিমাণ দূরত্ব পাড়ি দেওয়ার আগেই, শুধু নিয়তের ভিত্তিতেই একজন ব্যক্তি মুসাফির হিসেবে বিবেচিত হন।

মুসাফিরের জন্য নামাজে কসর করা ওয়াজিব। অর্থাৎ, জোহর, আসর এবং ইশার চার রাকাত ফরজ নামাজ দুই রাকাত করে পড়তে হয়। অনেকের ধারণা, এই কসর ঐচ্ছিক, তবে তা ভুল। কসর না করে পূর্ণ নামাজ পড়লে তা শরিয়ত পরিপন্থী হবে। সহিহ মুসলিম শরিফে বর্ণিত হাদিসে সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, আল্লাহ তাআলা আমাদের নবির (সা.) মাধ্যমে মুকিম অবস্থায় চার রাকাত এবং সফরের সময় দুই রাকাত ফরজ করেছেন।

তবে অনেক সময় মুসাফির ব্যক্তি ভুল করে চার রাকাত নামাজ পড়ে ফেলেন। এমন ক্ষেত্রে শরিয়তের দৃষ্টিতে তার প্রথম দুই রাকাত ফরজ এবং শেষ দুই রাকাত নফল হিসেবে গণ্য হবে—যদি তিনি দ্বিতীয় রাকাতের পর বৈঠক করেছেন। ভুলের কথা মনে পড়লে সাহু সিজদা দিতে হবে। আর যদি বৈঠক না করেন এবং চার রাকাতই একসাথে আদায় করেন, তাহলে তার ফরজ নামাজ বাতিল হয়ে যাবে এবং পুরো নামাজ নফল হয়ে যাবে। এ ক্ষেত্রে ফরজ নামাজ পুনরায় পড়া ফরজ হবে।

মুসাফির ব্যক্তি যদি কোনো মসজিদে গিয়ে এমন একজন ইমামের পেছনে নামাজ আদায় করেন যিনি মুকিম, তাহলে তাকে ইমামের মতোই চার রাকাত পূর্ণ করতে হবে। হাদিসে এসেছে, মুসাফির মুকিমদের সঙ্গে জামাতে শরিক হলে, সে তাদের মতোই পূর্ণ নামাজ আদায় করবে। এমনকি যদি সে ইমামের সঙ্গে এক বা দুই রাকাত পায় (মাসবুক হয়), তবুও তাকে পূর্ণ চার রাকাতই আদায় করতে হবে।

মাগরিব এবং ফজরের ফরজ নামাজে কসর করার কোনো সুযোগ নেই। সফর অবস্থায় এই দুটি নামাজ যথাক্রমে তিন ও দুই রাকাতই আদায় করতে হয়। ফরজ নামাজ ছাড়া অন্য নফল কিংবা সুন্নাতে মুআক্কাদা নামাজগুলো সফরে ছেঁড়ে দেওয়া জায়েয, তবে সময় ও সুযোগ থাকলে তা আদায় করাই উত্তম। বিতর নামাজ তিন রাকাতই পড়তে হবে।

সফরের সময় শরিয়তের বিধান মেনে সঠিকভাবে নামাজ আদায় করা মুসলমানের জন্য অপরিহার্য। ইচ্ছামতো নয়, বরং কোরআন ও হাদিসভিত্তিক নিয়ম অনুযায়ী চললেই সফরের ইবাদতও গ্রহণযোগ্য হবে এবং তা পরিপূর্ণভাবে পালনের মাধ্যমে একজন মুমিন আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভে ধন্য হতে পারবেন।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ