প্রতিদিন ভোরে যে দোয়া পড়তেন বিশ্বনবী (সা.)

ধর্ম ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ২২ ০৮:৪৭:১৫
প্রতিদিন ভোরে যে দোয়া পড়তেন বিশ্বনবী (সা.)

মানবজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নবিজি হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন এক পরিপূর্ণ আদর্শ ও অনুসরণযোগ্য দিকনির্দেশনা। তিনি কেবল নীতির কথা বলেননি, বরং তা বাস্তবে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বাস্তবায়ন করে দেখিয়েছেন। তাঁর প্রতিটি দোয়া, প্রতিটি কর্ম এবং প্রতিটি অভ্যাস ছিল মানবজাতির কল্যাণে নিবেদিত। এর একটি অনন্য দৃষ্টান্ত হলো ফজরের নামাজের পরপর পড়া একটি সংক্ষিপ্ত কিন্তু গভীর অর্থবহ দোয়া, যা তিনি প্রতিদিন পড়তেন এবং উম্মতকেও তা শেখাতেন।

তিন চাওয়ার এক দোয়া: জ্ঞান, রিজিক ও আমলহাদিসে এসেছে, হজরত উম্মু সালামাহ (রাঃ) বর্ণনা করেন নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজরের নামাজ শেষে সালাম ফিরিয়ে বলতেন:

اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ عِلْمًا نَافِعًا وَرِزْقًا طَيِّبًا وَعَمَلاً مُتَقَبَّلاً

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা ইলমান নাফিআ ওয়া রিযকান তায়্যিবা ওয়া আমালান মুতাকাব্বিলা।

অর্থ: “হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে উপকারী জ্ঞান প্রার্থনা করছি, পবিত্র হালাল রিজিক কামনা করছি এবং কবুলযোগ্য আমলের তাওফিক কামনা করছি।”(সূত্র: ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমাদ)

এই সংক্ষিপ্ত দোয়া তিনটি মৌলিক চাহিদার জন্য একসাথে আল্লাহর নিকট আবেদন করে উপকারী জ্ঞান, হালাল রিজিক এবং কবুলযোগ্য আমল। যা একজন মুমিনের জীবনের সারসংক্ষেপ হিসেবেই বিবেচিত হতে পারে।

নবিজির এ অভ্যাস শুধু একটি আমল নয়, বরং তা মুমিনের দিনের সূচনায় আত্মশুদ্ধি ও জীবনের উদ্দেশ্য নির্ধারণের এক অনন্য পন্থা। দিনের শুরুতেই এই দোয়ায় নিজেদেরকে আল্লাহর কাছে সমর্পণ করে নেওয়া জীবনের প্রতিটি কাজে বরকত ও দিকনির্দেশনার আশ্রয় নেওয়ার নামান্তর।

ধর্মতাত্ত্বিক বিশ্লেষকদের মতে, এই দোয়া শুধু রিচুয়াল নয় বরং এর ভেতরে রয়েছে একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনদর্শন। যেখানে জ্ঞান মানে কেবল তথ্য নয়, বরং এমন জ্ঞান যা হৃদয়কে জাগ্রত করে, রিজিক মানে কেবল খাদ্য নয়, বরং এমন জীবিকা যা পবিত্রতা ও ন্যায়পরায়ণতায় ভরপুর। এবং আমল মানে শুধু কাজ নয়, বরং এমন কাজ যা আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে এবং সঠিক নিয়তে সম্পাদিত।

এই দোয়া নবিজির একান্ত ব্যক্তিগত আমল হলেও, হাদিসে তা উম্মতের জন্য উপদেশরূপে বিবৃত হয়েছে। এটি নির্দেশ করে, প্রত্যেক মুমিন যেন দিনের সূচনায় এই দোয়ার মাধ্যমে নিজের জীবনকে সঠিক অভিমুখে পরিচালিত করে। আধুনিক সময়ের অনিশ্চয়তা, নৈতিক সংকট ও জীবনযাত্রার বিশৃঙ্খলায় এই দোয়া একজন মুমিনের জন্য হয়ে উঠতে পারে এক আলোকবর্তিকা।

বর্তমান সময়ের জীবনে যেখানে হারাম উপার্জনের পথ সহজ, অথচ হালাল রিজিক সংগ্রামসাধ্য সেখানে এই দোয়া মানুষকে মনে করিয়ে দেয় জীবিকা শুধু অর্থ উপার্জন নয়, বরং আত্মার পবিত্রতার সাথেও সম্পর্কযুক্ত।

তেমনি উপকারী জ্ঞান মানে কেবল ডিগ্রি বা সার্টিফিকেট নয়, বরং এমন জ্ঞান যা নৈতিকতা, মানবতা ও আল্লাহভীতির সাথে যুক্ত। এই দোয়া সেই উচ্চতর উপলব্ধির প্রতিফলন।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতিটি দোয়া আমাদের জীবনের জন্য আলোর দিশা। ফজরের পরের এই সংক্ষিপ্ত দোয়াটি শুধু উচ্চারণের জন্য নয়, বরং হৃদয়ের গভীরে উপলব্ধি করার মতো এক অনন্ত আবেদন। এটি আত্মার জাগরণ, জীবনের গন্তব্য নির্ধারণ, এবং আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণের এক অতুলনীয় আমল।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে এ দোয়ার গভীর তাৎপর্য উপলব্ধি করে নিয়মিত পড়ার তাওফিক দিন। হালাল রিজিক, উপকারী জ্ঞান ও কবুলযোগ্য আমল যেন আমাদের জীবনের প্রতিদিনের অন্বেষা হয় এই হোক আমাদের প্রার্থনা।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

একজন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ, সামাজিক ব্যবসার পথপ্রদর্শক এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণের নেতৃত্বদানকারী রাষ্ট্রনায়ক—এই তিনটি পরিচয়ই এখন সমভাবে প্রযোজ্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের... বিস্তারিত