যুক্তরাষ্ট্রের ঋণ ৩৬ ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

সত্য নিউজ:
বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে বিপুল ঋণের ভারে জর্জরিত। জাতীয় ঋণের পরিমাণ ৩৬.২ ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে, যা দেশটির মোট জিডিপির (GDP) প্রায় ১২২ শতাংশ। এই ঋণের মালিকানা ও এর পরিণাম নিয়ে বাড়ছে উদ্বেগ—বিশেষত সাধারণ জনগণ ও বৈশ্বিক অর্থনীতি কীভাবে এতে প্রভাবিত হচ্ছে তা নিয়ে চলছে তীব্র আলোচনা।
সম্প্রতি, যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের একটি গুরুত্বপূর্ণ কমিটি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত নতুন কর ছাড় বিল অনুমোদন করেছে, যা চলতি সপ্তাহেই প্রতিনিধি পরিষদে পাস হতে পারে। এই বিলে ট্রাম্প প্রশাসনের ২০১৭ সালের কর হ্রাস নীতিকে আরও সম্প্রসারিত করার প্রস্তাব রয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এটি কার্যকর হলে আগামীতে যুক্তরাষ্ট্রের ঋণে অতিরিক্ত ৫ ট্রিলিয়ন ডলার যোগ হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের ঋণ কী এবং কীভাবে এটি বাড়ছে?
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ঋণ বলতে বোঝানো হয়—সরকার যেসব অর্থ দেশি ও বিদেশি ঋণদাতাদের কাছ থেকে ধার করেছে তার মোট পরিমাণ। বর্তমানে এই ঋণের পরিমাণ ৩৬.২ ট্রিলিয়ন ডলার, যা দেশের বার্ষিক অর্থনৈতিক উৎপাদনের চেয়েও বেশি। এই ঋণ প্রতি তিন মাসে গড়ে ১ ট্রিলিয়ন ডলার করে বাড়ছে। কোভিড-১৯ মহামারির সময় এই ঋণের অনুপাত সর্বোচ্চ ১৩৩ শতাংশে পৌঁছায়।
ঋণসীমা (Debt Ceiling): কেন বাড়ানো হয় বারবার?
যুক্তরাষ্ট্রের সরকার যখন আয় অপেক্ষা বেশি ব্যয় করে, তখন ঘাটতি তৈরি হয়। এই ঘাটতি পূরণ করতে সরকারকে নতুন ঋণ নিতে হয়। কিন্তু এই ঋণ একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে রাখতে কংগ্রেস একটি ঋণসীমা নির্ধারণ করে দেয়। ঋণসীমা ছাড়িয়ে গেলে, নতুন ঋণ গ্রহণ করতে হলে কংগ্রেসকে সেই সীমা বাড়াতে বা স্থগিত করতে হয়।
উল্লেখযোগ্যভাবে, ১৯৬০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ৭৮ বার যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ঋণসীমা বাড়িয়েছে বা সংশোধন করেছে।
ট্রেজারি বিল, নোট ও বন্ড: যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে ঋণ নেয়?
যুক্তরাষ্ট্র সরকার অর্থ সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন ধরনের সরকারি ঋণপত্র ইস্যু করে। এগুলোর মূল উদ্দেশ্য হলো—সরকারি ব্যয় মেটাতে বাজার থেকে ঋণ তোলা।
১. ট্রেজারি বিল (T-bills): স্বল্পমেয়াদি (১ বছরের কম) ঋণপত্র।
২. ট্রেজারি নোট (T-notes): মাঝারি মেয়াদি (২-১০ বছর) ঋণপত্র।
৩. ট্রেজারি বন্ড (T-bonds): দীর্ঘমেয়াদি (২০-৩০ বছর) ঋণপত্র।
এই ঋণপত্রগুলো নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে সুদসহ পরিশোধযোগ্য। এগুলো কিনে ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও বিদেশি সরকারগুলো যুক্তরাষ্ট্রকে ঋণ দেয়।
এই বিপুল ঋণের মালিক কারা?
যুক্তরাষ্ট্রের ৩৬.২ ট্রিলিয়ন ডলারের জাতীয় ঋণের বড় একটি অংশই দেশটির অভ্যন্তরীণ খাত থেকে গৃহীত। মোট ঋণের প্রায় ৭৫ শতাংশ- অর্থাৎ প্রায় ২৭.২ ট্রিলিয়ন ডলার- মার্কিন অভ্যন্তরীণ প্রতিষ্ঠান, সংস্থা ও নাগরিকদের কাছে ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ব্যক্তি পর্যায়ের বিনিয়োগকারী, মিউচুয়াল ফান্ড, পেনশন তহবিল এবং অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো একত্রে ধারণ করছে প্রায় ১৫.১৬ ট্রিলিয়ন ডলার, যা মোট ঋণের ৪২ শতাংশ। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি সংস্থা ও ট্রাস্ট, যেমন সোশ্যাল সিকিউরিটি ট্রাস্ট ফান্ড, ধারণ করছে ৭.৩৬ ট্রিলিয়ন ডলার বা ২০ শতাংশ। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক—ফেডারেল রিজার্ভ—ধারণ করছে ৪.৬৩ ট্রিলিয়ন ডলার, যা মোট ঋণের ১৩ শতাংশ।বিশ্বখ্যাত বিনিয়োগকারী ওয়ারেন বাফেট এবং তার কোম্পানি বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ে এই তালিকায় উল্লেখযোগ্য, কারণ তারা বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় ব্যক্তিগত ট্রেজারি বন্ড ধারক, যার মালিকানায় রয়েছে ৩১৪ বিলিয়ন ডলারের সরকারি সিকিউরিটিজ।
অন্যদিকে, জাতীয় ঋণের অবশিষ্ট ২৫ শতাংশ বা প্রায় ৯.০৫ ট্রিলিয়ন ডলার রয়েছে বিদেশি দেশ ও বিনিয়োগকারীদের হাতে। এদের মধ্যে শীর্ষ ঋণদাতা দেশ জাপান, যাদের অধীনে রয়েছে প্রায় ১.১৩ ট্রিলিয়ন ডলার মূল্যের মার্কিন ট্রেজারি সিকিউরিটি। এরপর রয়েছে যুক্তরাজ্য (৭৭৯.৩ বিলিয়ন ডলার), চীন (৭৬৫.৪ বিলিয়ন ডলার), কেম্যান দ্বীপপুঞ্জ (৪৫৫.৩ বিলিয়ন ডলার), এবং কানাডা (৪২৬.২ বিলিয়ন ডলার)।উল্লেখযোগ্যভাবে, কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক উত্তেজনার সময় জাপান ও চীন বহুবার ইঙ্গিত দিয়েছে যে, তারা মার্কিন ট্রেজারি হোল্ডিংসকে বাণিজ্য আলোচনার টুল বা চাপ প্রয়োগের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। এটি মার্কিন সরকারের জন্য একটি কৌশলগত চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে, কারণ তাদের বৈদেশিক ঋণের একটি বড় অংশ এই দুই অর্থনৈতিক শক্তির হাতে।
এই ঋণের সাধারণ মানুষের ওপর প্রভাব কী?
জাতীয় ঋণের এই বিশাল পরিমাণ সরাসরি কিংবা পরোক্ষভাবে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের জীবনযাত্রায় প্রভাব ফেলতে পারে।
সুদ পরিশোধে বড় ব্যয়: সরকারকে বিশাল পরিমাণ সুদ পরিশোধ করতে হয়, যার ফলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামোসহ অন্যান্য খাতে ব্যয় কমে যেতে পারে।
করের হার বাড়ার আশঙ্কা: সরকারি ব্যয় মেটাতে কর বাড়ানোর প্রয়োজন হতে পারে, যা নাগরিকদের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়িয়ে তোলে।
সুদহার বৃদ্ধি: ঋণের চাহিদা বাড়লে বাজারে সুদের হারও বাড়ে, যার ফলে গৃহঋণ, গাড়ি ঋণ ও ক্রেডিট কার্ডের সুদ বেড়ে যেতে পারে।
মূল্যস্ফীতি ও মুদ্রানীতির চ্যালেঞ্জ: কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণের ভার সামলাতে গিয়ে মুদ্রানীতিতে কঠোরতা আনতে পারে, যা ব্যবসা ও বিনিয়োগের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
ঋণের ভার সামলাতে করণীয় কী?
যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান ঋণের পরিস্থিতি শুধু দেশটির অভ্যন্তরীণ নীতির জন্য নয়, বরং বৈশ্বিক অর্থনীতির জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। অভ্যন্তরীণ বাজেট ঘাটতি, রাজনৈতিক অচলাবস্থা, এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্পর্ক- সবকিছু মিলিয়ে এই ঋণের বোঝা একটি জটিল অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জে রূপ নিয়েছে।
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- জবির লিফটে প্রাণঝুঁকি, ছাত্রী অচেতন হয়ে হাসপাতালে
- শেয়ারবাজারে গেম্বলারদের দৌরাত্ম্য: আস্থা ফেরাতে চাই কঠোর শাস্তি ও কাঠামোগত সংস্কার
- জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ঈদের দীর্ঘ ছুটি, চালু থাকবে জরুরি সেবা
- বাংলাদেশে সেনা-সরকার উত্তেজনা ও ‘কু’ এর গুঞ্জন: নেপথ্যে কি?
- জবির জকসু নির্বাচনের গঠনতন্ত্র ও নির্বাচনের রূপরেখা প্রকাশ
- নতুন রাজনৈতিক সমীকরণে কারা টিকে থাকবে, কারা হারিয়ে যাবে?
- সেনাপ্রধানের বক্তব্য, জুলকারনাইন তাতে যা বললেন!
- গাজায় ইসরায়েলের নতুন হামলা বন্ধ না হলে নিষেধাজ্ঞার হুঁশিয়ারি যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও কানাডার
- নাহিদের স্পষ্ট বার্তা: এনসিপিতে নেই দুই উপদেষ্টা আসিফ ও মাহফুজ
- তারকা পরিচিতি: রক্ষাকবচ না কি সমাজবিমুখ অব্যাহতি?
- বাংলাদেশে আন্তর্বর্তী সরকারের পদক্ষেপে মৌলিক অধিকার হুমকিতে
- বিএনপির সালাউদ্দিনকে নিয়ে কি লিখলেন প্রেস সচিব শফিকুল?
- দারুননাজাত: নৈতিকতার আলোকবর্তিকা
- ইউজিসি-ম্যাকগিল পিএইচডি স্কলারশিপ: শুধুমাত্রবাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য
- ডিপ্লোমেটিক শেকআপ: জসীম উদ্দিন দূতাবাসে , সচিব হচ্ছেন নজরুল