চট্টগ্রাম সার্কিট হাউস মাঠ উন্মুক্ত রাখার দাবি মেয়র ও স্থানীয় বাসিন্দাদের

সারাদেশ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ২২ ১৭:২৬:০৪
চট্টগ্রাম সার্কিট হাউস মাঠ উন্মুক্ত রাখার দাবি মেয়র ও স্থানীয় বাসিন্দাদের

সত্য নিউজ: চট্টগ্রাম নগরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উন্মুক্ত স্থান সার্কিট হাউস মাঠকে স্থায়ীভাবে মুক্তাঙ্গন ঘোষণার দাবিতে মানববন্ধন করেছে পরিবেশবাদী ও নগর উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট নাগরিক সমাজ। আজ বৃহস্পতিবার (২১ মে) সকালে নগরের কাজীর দেউড়িতে আয়োজিত এই কর্মসূচিতে বক্তারা মাঠে কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণের বিরোধিতা করে এটিকে জনগণের জন্য উন্মুক্ত রাখার জোর দাবি জানান।

পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরাম ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) যৌথভাবে এই মানববন্ধনের আয়োজন করে। মানববন্ধনে অংশ নেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন, শিক্ষাবিদ, নগর পরিকল্পনাবিদ, সাংবাদিক, পরিবেশকর্মী ও লেখকসহ বিভিন্ন পেশার সচেতন নাগরিকেরা।

মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, “চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মহাপরিকল্পনাতেও সার্কিট হাউস মাঠ একটি সবুজ উন্মুক্ত স্থান হিসেবে চিহ্নিত। অথচ এখানে হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।” তিনি জানান, মাঠটি রক্ষায় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে চিঠি দিয়েছেন, কিন্তু এখনো কোনো সাড়া মেলেনি। মেয়র সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “কালুরঘাটে আমার ৯ একর জমি আছে। সেখানে হাসপাতাল করুন, এই জায়গা আমাকে দিন—আমি এখানে সবুজ পার্ক করব।”

মানববন্ধনে সাংবাদিক ও কবি আবুল মোমেন বলেন, “চট্টগ্রামে একসময় ছয়টি খেলার মাঠ ছিল, এখন তা নেই। সার্কিট হাউস মাঠ শুধু ইতিহাস নয়, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ল্যান্ডস্কেপ, যা ব্রিটিশ আমলের একটি স্থাপনার সামনের উন্মুক্ত জায়গা। এখানে কোনো স্থাপনা হতেই পারে না।”

পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সাধারণ সম্পাদক স্থপতি জেরিনা হোসেন বলেন, “উদ্যান কোনো বিলাসিতা নয়, এটি নাগরিক জীবনের অপরিহার্য অংশ। শিশু, বৃদ্ধসহ সব নাগরিকের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য উন্মুক্ত স্থান থাকা আবশ্যক।”

উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ১৯৯২ সালে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে জায়গাটি ইজারা নিয়ে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে শিশুপার্ক গড়ে তোলে। পরে ইজারা নবায়ন করে ২০২০ সালে পুনরায় চুক্তি করে। কিন্তু ২০২৩ সালের অক্টোবরে পার্কটি উচ্ছেদ করা হয়। এরপর থেকে এই মাঠে নতুন স্থাপনা গড়ে তোলার পরিকল্পনার বিরুদ্ধে নগরবাসীর মধ্যে উদ্বেগ দেখা দেয়।

বক্তারা বলেন, চট্টগ্রাম দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী হলেও এখানে মানসম্পন্ন কোনো উদ্যান নেই। এ পরিস্থিতি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ভয়াবহ বার্তা বহন করে। সার্কিট হাউস মাঠ রক্ষা করতে না পারলে তা শুধু একটি খোলা জায়গা হারানোই নয়, বরং নগরের পরিবেশ ও ইতিহাসকেও ক্ষতিগ্রস্ত করা হবে।

মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক মুহাম্মদ সিকান্দার খান। এ ছাড়া বক্তব্য দেন শিক্ষাবিদ শফিক হায়দার, গবেষক মনজুরুল কিবরীয়াসহ আরও অনেকে।

সবার একটাই দাবি—চট্টগ্রামবাসীর ঐতিহ্যবাহী সার্কিট হাউস মাঠকে মুক্তাঙ্গন হিসেবে ঘোষণা করে স্থায়ীভাবে জনগণের কাছে উন্মুক্ত রাখা হোক।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ