তিন মাসে ১.১৮ লাখ কোটি টাকার মূলধন ঘাটতি, দেউলিয়াত্বের পথে ২০ ব্যাংক

অর্থনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ২১ ১৪:৪৭:৫০
তিন মাসে ১.১৮ লাখ কোটি টাকার মূলধন ঘাটতি, দেউলিয়াত্বের পথে ২০ ব্যাংক

সত্য নিউজ: বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে বিপর্যয়কর চিত্র উঠে এসেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে। মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে দেশের ২০টি সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংকে মূলধন ঘাটতির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৮ হাজার ৫৩৪ কোটি টাকা, যা দেশের আর্থিক খাতের জন্য এক বড় ধরনের হুমকি। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর শেষে এসব ব্যাংকের মোট মূলধন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার ৭৮৯ কোটি টাকা, যেখানে আগের প্রান্তিক অর্থাৎ ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর শেষে ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৫৩ হাজার ২৫৩ কোটি টাকা। যদিও কিছু ব্যাংকে উদ্বৃত্ত রয়েছে, তবুও সার্বিকভাবে ব্যাংক খাতের মূলধন ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৭ হাজার ৬৪৭ কোটি টাকায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ঘাটতিতে শীর্ষে রয়েছে জনতা ব্যাংক, যার মূলধন ঘাটতির পরিমাণ ৫২ হাজার ৮৯১ কোটি টাকা। এরপর রয়েছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক (১৮,১৯৯ কোটি), ইউনিয়ন ব্যাংক (১৫,৬৯০ কোটি), ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক (১৩,৯৯১ কোটি), ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ (১২,৮৮৫ কোটি), সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক (১১,৭০৯ কোটি), আইএফআইসি ব্যাংক (৯,০২৯ কোটি), ন্যাশনাল ব্যাংক (৭,৭৯৯ কোটি), রূপালী ব্যাংক (৫,১৯২ কোটি) এবং পদ্মা ব্যাংক (৪,৯৮৫ কোটি)। বাকি ব্যাংকগুলোর মধ্যেও কয়েকশ থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকার ঘাটতি রয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, এ সংকটের মূল কারণ গত ১৫ বছরে সরকারের প্রশ্রয়ে পরিচালিত ঋণ বিতরণে ব্যাপক লুটপাট। এখন সেই লুটের চিত্রই ধীরে ধীরে প্রকাশ পাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা, যেখানে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে এ পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে প্রায় ২ লাখ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ বেড়েছে। একই সময় ঋণ অবলোপনের (লিখে ফেলা) পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮১ হাজার ৫৭৮ কোটি টাকা এবং পুনঃতফসিল করা ঋণ ৩ লাখ ৪৫ হাজার ১২২ কোটি টাকা।

এমন পরিস্থিতিতে ব্যাংক খাতের ঝুঁকিভিত্তিক মূলধনের অনুপাত বা সিআরএআর কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৩.০৮ শতাংশ, যেখানে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড ব্যাসেল-৩ অনুসারে প্রয়োজন অন্তত ১০ শতাংশ। এটি ব্যাংকিং খাতের ভঙ্গুর অবস্থার একটি বড় প্রমাণ। মূলধনের ঘাটতির কারণে এসব ব্যাংক লভ্যাংশ দিতে পারবে না, গ্রাহকদের আস্থা হারাবে, এমনকি বিদেশি ব্যাংকগুলোর সঙ্গে লেনদেনেও সমস্যায় পড়বে।

গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুরুল আমিন বলেন, উচ্চ খেলাপি ঋণের কারণে অনেক ব্যাংক প্রয়োজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণ করতে পারছে না, যা তাদের মূলধন ঘাটতিকে আরও তীব্র করেছে। তিনি সতর্ক করে বলেন, মূলধন ঘাটতির কারণে এসব ব্যাংকের সুনাম ও আন্তর্জাতিক ক্রেডিট রেটিং ক্ষতিগ্রস্ত হবে, ফলে এলসি খোলার সময় অতিরিক্ত মার্জিন গুনতে হতে পারে। অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ বলেন, গত ১৫ বছরে পতিত সরকার দেশের আর্থিক খাতে যে অরাজকতা সৃষ্টি করেছে তা ভয়াবহ, যার ফলে বর্তমানে প্রায় অর্ধেক ব্যাংকের অবস্থা শোচনীয়। এমনকি অনেক ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়মিত বেতন-ভাতাও দিতে পারছে না, এবং আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতেও হিমশিম খাচ্ছে।

এই ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে জরুরি ভিত্তিতে ঋণ আদায়ের হার বাড়ানো, নতুন ব্যবসায়িক উদ্যোগে মনোযোগ দেওয়া, ব্যাংক একীভূতকরণ অথবা লাইসেন্স বাতিলসহ শক্তিশালী সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন বিশ্লেষকরা। না হলে দেশের আর্থিক খাত আরও গভীর সংকটে নিমজ্জিত হবে।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে, এবং এই পরিবর্তনটির মূল কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ।... বিস্তারিত