তিন মাসে ১.১৮ লাখ কোটি টাকার মূলধন ঘাটতি, দেউলিয়াত্বের পথে ২০ ব্যাংক

অর্থনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ২১ ১৪:৪৭:৫০
তিন মাসে ১.১৮ লাখ কোটি টাকার মূলধন ঘাটতি, দেউলিয়াত্বের পথে ২০ ব্যাংক

সত্য নিউজ: বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে বিপর্যয়কর চিত্র উঠে এসেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে। মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে দেশের ২০টি সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংকে মূলধন ঘাটতির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৮ হাজার ৫৩৪ কোটি টাকা, যা দেশের আর্থিক খাতের জন্য এক বড় ধরনের হুমকি। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর শেষে এসব ব্যাংকের মোট মূলধন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার ৭৮৯ কোটি টাকা, যেখানে আগের প্রান্তিক অর্থাৎ ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর শেষে ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৫৩ হাজার ২৫৩ কোটি টাকা। যদিও কিছু ব্যাংকে উদ্বৃত্ত রয়েছে, তবুও সার্বিকভাবে ব্যাংক খাতের মূলধন ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৭ হাজার ৬৪৭ কোটি টাকায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ঘাটতিতে শীর্ষে রয়েছে জনতা ব্যাংক, যার মূলধন ঘাটতির পরিমাণ ৫২ হাজার ৮৯১ কোটি টাকা। এরপর রয়েছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক (১৮,১৯৯ কোটি), ইউনিয়ন ব্যাংক (১৫,৬৯০ কোটি), ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক (১৩,৯৯১ কোটি), ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ (১২,৮৮৫ কোটি), সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক (১১,৭০৯ কোটি), আইএফআইসি ব্যাংক (৯,০২৯ কোটি), ন্যাশনাল ব্যাংক (৭,৭৯৯ কোটি), রূপালী ব্যাংক (৫,১৯২ কোটি) এবং পদ্মা ব্যাংক (৪,৯৮৫ কোটি)। বাকি ব্যাংকগুলোর মধ্যেও কয়েকশ থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকার ঘাটতি রয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, এ সংকটের মূল কারণ গত ১৫ বছরে সরকারের প্রশ্রয়ে পরিচালিত ঋণ বিতরণে ব্যাপক লুটপাট। এখন সেই লুটের চিত্রই ধীরে ধীরে প্রকাশ পাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা, যেখানে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে এ পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে প্রায় ২ লাখ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ বেড়েছে। একই সময় ঋণ অবলোপনের (লিখে ফেলা) পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮১ হাজার ৫৭৮ কোটি টাকা এবং পুনঃতফসিল করা ঋণ ৩ লাখ ৪৫ হাজার ১২২ কোটি টাকা।

এমন পরিস্থিতিতে ব্যাংক খাতের ঝুঁকিভিত্তিক মূলধনের অনুপাত বা সিআরএআর কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৩.০৮ শতাংশ, যেখানে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড ব্যাসেল-৩ অনুসারে প্রয়োজন অন্তত ১০ শতাংশ। এটি ব্যাংকিং খাতের ভঙ্গুর অবস্থার একটি বড় প্রমাণ। মূলধনের ঘাটতির কারণে এসব ব্যাংক লভ্যাংশ দিতে পারবে না, গ্রাহকদের আস্থা হারাবে, এমনকি বিদেশি ব্যাংকগুলোর সঙ্গে লেনদেনেও সমস্যায় পড়বে।

গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুরুল আমিন বলেন, উচ্চ খেলাপি ঋণের কারণে অনেক ব্যাংক প্রয়োজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণ করতে পারছে না, যা তাদের মূলধন ঘাটতিকে আরও তীব্র করেছে। তিনি সতর্ক করে বলেন, মূলধন ঘাটতির কারণে এসব ব্যাংকের সুনাম ও আন্তর্জাতিক ক্রেডিট রেটিং ক্ষতিগ্রস্ত হবে, ফলে এলসি খোলার সময় অতিরিক্ত মার্জিন গুনতে হতে পারে। অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ বলেন, গত ১৫ বছরে পতিত সরকার দেশের আর্থিক খাতে যে অরাজকতা সৃষ্টি করেছে তা ভয়াবহ, যার ফলে বর্তমানে প্রায় অর্ধেক ব্যাংকের অবস্থা শোচনীয়। এমনকি অনেক ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়মিত বেতন-ভাতাও দিতে পারছে না, এবং আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতেও হিমশিম খাচ্ছে।

এই ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে জরুরি ভিত্তিতে ঋণ আদায়ের হার বাড়ানো, নতুন ব্যবসায়িক উদ্যোগে মনোযোগ দেওয়া, ব্যাংক একীভূতকরণ অথবা লাইসেন্স বাতিলসহ শক্তিশালী সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন বিশ্লেষকরা। না হলে দেশের আর্থিক খাত আরও গভীর সংকটে নিমজ্জিত হবে।


যত টাকায় সিঙ্গাপুর থেকে এক কার্গো এলএনজি আসছে

অর্থনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ১৬ ১৪:১০:৫৫
যত টাকায় সিঙ্গাপুর থেকে এক কার্গো এলএনজি আসছে
ছবি: সংগৃহীত

দেশে জ্বালানি সরবরাহ নির্বিঘ্ন রাখতে সরকার নতুন করে সিঙ্গাপুর থেকে আরও একটি তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) কার্গো আমদানির অনুমোদন দিয়েছে। এই কার্গো আমদানিতে ব্যয় হবে ৪৯৯ কোটি ১৬ লাখ ৭৫ হাজার ৬৭৩ টাকা। এর আগে গত ৯ সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুর থেকে আরও দুটি কার্গো আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল, যার মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৮৫ কোটি ৬১ লাখ ৮৩০ টাকা।

মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে নতুন এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে এবং পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা, ২০০৮ অনুসরণ করে আন্তর্জাতিক কোটেশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এই কার্গোটি আগামী ২৫ থেকে ২৬ নভেম্বরের মধ্যে ৪৭তম কার্গো হিসেবে দেশে আসবে।

নতুন এই কার্গোটি সিঙ্গাপুরের মেসার্স আরামকো ট্রেডিং থেকে কেনা হবে। প্রতিটি এমএমবিটিইউ এলএনজির মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১১ দশমিক ৮৮ ডলার, আর মোট ব্যয় হবে ৪৯৯ কোটি টাকার বেশি। এর আগে অনুমোদিত দুটি কার্গোর একটি আনা হবে আরামকো ট্রেডিং থেকে, যেখানে প্রতি এমএমবিটিইউর দাম ধরা হয়েছে ১১ দশমিক ৮৫ ডলার।

এই চুক্তির আওতায় ৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ আমদানিতে ব্যয় হবে প্রায় ৪৯৭ কোটি ৯০ লাখ টাকা। অন্য কার্গোটি আমদানির জন্য সিঙ্গাপুরের গানভর সিঙ্গাপুর প্রাইভেট লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে, যেখানে প্রতি এমএমবিটিইউর দাম ধরা হয়েছে ১১ দশমিক ৯৭ ডলার এবং মোট ব্যয় হবে ৫০২ কোটি ৯৪ লাখ টাকার বেশি।

-রফিক


উদ্যোক্তা সৃষ্টির আর্থিক কাঠামো গড়ে তোলার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের

অর্থনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ১৪ ১৬:১৭:২৭
উদ্যোক্তা সৃষ্টির আর্থিক কাঠামো গড়ে তোলার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের
ছবিঃ বি এস এস

প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস আজ বলেছেন, দেশের আর্থিক কাঠামো এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে যাতে প্রত্যেকে উদ্যোক্তা হওয়ার সুযোগ পায়—শুধু চাকরির প্রত্যাশী হয়ে না থাকে।

রবিবার রাজধানীর মোহাম্মদপুরের খিলজি রোডে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) নতুন ভবন ‘ভবন-২’ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, “মানুষ চাকরি করার জন্য জন্মায়নি, মানুষ জন্মায় উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য। তাই আমাদের আর্থিক ব্যবস্থা এমন হতে হবে যেখানে প্রত্যেকে উদ্যোক্তা হওয়ার সুযোগ পাবে।”

ড. ইউনূস বলেন, আজকের প্রজন্ম বিশেষ করে গ্রামের তরুণ-তরুণীরা অনেক বেশি সচেতন, তথ্যসমৃদ্ধ ও কল্পনাশীল। তাই এমন আর্থিক ও সামাজিক পরিবেশ তৈরি করতে হবে যেখানে তারা নিজেদের উদ্যোগ শুরু করতে পারে—ব্যক্তিগতভাবে বা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে।

তিনি আরও বলেন, “আমরা যদি এমন কাঠামো তৈরি করতে পারি যেখানে মানুষ ইচ্ছা করলে নিজের উদ্যোগ শুরু করতে পারে, এমনকি বিনিয়োগকারী হিসেবেও যুক্ত হতে পারে, তবে পরিবর্তন সম্ভব।”

প্রধান উপদেষ্টা বিশ্বাস করেন, এমন পরিবেশে প্রত্যেকে চাইলে সংগঠিতভাবে বা ব্যক্তিগতভাবে উদ্যোক্তা হিসেবে এগিয়ে যেতে পারবে। তারা স্থানীয়ভাবে উদ্যোগ শুরু করতে পারে, বিনিয়োগ সংগ্রহ করতে পারে এবং নিজেদের এলাকায় কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে।

তিনি বলেন, “আমরা এগিয়ে যেতে চাই। পরীক্ষামূলকভাবে দেখতে চাই কোনটা ভালো, কোনটা খারাপ। ইতোমধ্যেই লাখো উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে, যাদের মধ্যে অনেকে মেয়ে-ছেলেদের নিয়ে দল গঠন করে কাজ করছে। এ অভিজ্ঞতা ব্যবহার করে এ ধারা আরও প্রসারিত করা সম্ভব।”

-সুত্রঃ বি এস এস


ঢাকায় মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি দল, শুল্ক কমানোতে নতুন আশার আলো

অর্থনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ১৪ ১০:২৮:২৮
ঢাকায় মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি দল, শুল্ক কমানোতে নতুন আশার আলো
ছবিঃ সংগৃহীত

বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করতে আজ ঢাকা পৌঁছাবে মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি দলের তিন সদস্যের একটি উচ্চপর্যায়ের দল। দুই দিনের এ সফরে তারা বাংলাদেশের প্রস্তাবিত শুল্ক হ্রাস নিয়ে চূড়ান্ত আলোচনায় বসবে। ঢাকা চায় বিদ্যমান ২০ শতাংশ প্রতিশোধমূলক শুল্ক কমিয়ে ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হোক।

এ সম্পর্কিত একটি পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্য চুক্তির খসড়া ইতিমধ্যে প্রস্তুত হয়েছে। আজ ও কাল ঢাকায় অনুষ্ঠিত আলোচনায় প্রয়োজনীয় সমন্বয় ও সংশোধনী আনা হবে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি ব্রেনডান লিঞ্চের নেতৃত্বে দলটি আজ দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবে।

দুই দিনের সফরে ব্রেনডান লিঞ্চ অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুস, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন ও পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আলম সিয়ামের সঙ্গেও বৈঠক করবেন।

গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর প্রতিশোধমূলক শুল্ক ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ ঘোষণা করেছিলেন। তবে বাংলাদেশের দাবি, এ শুল্ক আরও কমানো হলে রপ্তানি প্রবাহে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে নতুন গতি সঞ্চার হবে।

বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান ইতিপূর্বে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আরও শুল্কছাড়ের দাবি জানাচ্ছে এবং এ বিষয়ে আশাবাদী।

বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, “এই সফরে মূলত শুল্ক হ্রাস সংক্রান্ত খসড়া চুক্তি নিয়েই আলোচনা হবে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে ওয়াশিংটনের ইউএসটিআর কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ। প্রয়োজনে আমরা যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে আরও আলোচনায় অংশ নিতে প্রস্তুত।”

সরকারি কর্মকর্তারা মনে করছেন, শুল্ক আরও কমানো গেলে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানি প্রতিযোগিতামূলক হবে এবং পোশাকসহ বিভিন্ন খাতে বড় ধরনের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত হবে।

মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি কার্যালয়ের (USTR) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের পণ্য ও সেবার মোট বাণিজ্য দাঁড়ায় প্রায় ১২.৪ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ৩ শতাংশ বেশি।

-হাসানুজ্জামান


শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে অর্থ পাচারের অভিযোগে নতুন করে আলোড়ন

অর্থনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ১৩ ১৪:৫৩:২৭
শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে অর্থ পাচারের অভিযোগে নতুন করে আলোড়ন
ছবিঃ বি এস এস

যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রভাবশালী দৈনিক ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস সম্প্রতি প্রকাশিত ডকুমেন্টারি “Bangladesh’s Missing Billions, Stolen in Plain Sight”-এ দাবি করা হয়েছে, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে প্রায় ২৩৪ বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এ ডকুমেন্টারিতে বলা হয়, বাণিজ্যে অতিরিক্ত বা কম ইনভয়েস তৈরি, হুন্ডি-হাওলা প্রক্রিয়া এবং যুক্তরাজ্যে সম্পত্তি ক্রয়সহ বিভিন্ন মাধ্যমে এই বিপুল অর্থ বিদেশে পাচার হয়েছে।

ডকুমেন্টারির শুরুতেই শেখ হাসিনার নাটকীয় ক্ষমতাচ্যুতির প্রসঙ্গ তুলে ধরা হয়। এতে ছাত্রনেত্রী রাফিয়া রেহনুমা হৃদি, রেজওয়ান আহমেদ রিফাদ, এফটির দক্ষিণ এশিয়া ব্যুরো প্রধান জন রিড, কমোডিটি সংবাদদাতা সুসানাহ সাভেজ, স্পটলাইট অন করাপশন–এর ডেপুটি ডিরেক্টর হেলেন টেইলরসহ একাধিক রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞদের সাক্ষাৎকার অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

ডকুমেন্টারিতে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয় যে, লন্ডন বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থের অন্যতম প্রধান গন্তব্যে পরিণত হয়েছে। যুক্তরাজ্যের বিশাল আর্থিক খাত ও আকর্ষণীয় সম্পত্তি বাজার এ পাচারের জন্য সুবিধাজনক পরিবেশ তৈরি করেছে।

এতে বলা হয়, শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে, যার মধ্যে এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের নামও রয়েছে, অবকাঠামো প্রকল্প থেকে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে তদন্ত চলছে। এছাড়া সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী এবং এস আলম গ্রুপ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলমকেও বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগে নাম উল্লেখ করা হয়।

জন রিড ডকুমেন্টারিতে জানান, ব্যাংক পরিচালকরা কখনো কখনো অস্ত্রের মুখে শেয়ার হস্তান্তরে বাধ্য হয়েছেন। অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মুশতাক খান বলেন, “এ ধরনের ঘটনা সিনেমার গল্পকেও হার মানায়। আমি ব্যক্তিগতভাবে কয়েকজনকে চিনি যারা ‘হল অব মিররস’ নামে কুখ্যাত একটি কারাগারে বন্দি ছিলেন।”

ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদক সুসানাহ সাভেজ মন্তব্য করেন, “এ ধরনের দুর্নীতি ও রাষ্ট্রীয় লুটপাটকে আমরা দূরের সমস্যা ভাবতে পারি, কিন্তু আসলে এটি একটি বৈশ্বিক সমস্যা এবং যুক্তরাজ্যও এর কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে।”

অর্থ ফেরত আনা যে অত্যন্ত জটিল প্রক্রিয়া, তাও ডকুমেন্টারিতে উঠে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্পদ উদ্ধারের টাস্কফোর্সের উপদেষ্টা ইফতি ইসলাম এটিকে ইতিহাসের অন্যতম জটিল প্রক্রিয়া হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

ডকুমেন্টারিতে অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুস বলেন, “সব টাকা ফেরত আনা সম্ভব নাও হতে পারে, কিন্তু আমরা যা পারি তার প্রমাণ খুঁজে বের করে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে ফেরত আনার চেষ্টা করব। এটি সম্ভবত বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অর্থপাচারের ঘটনা।”

তবে প্রশ্ন থেকে গেছে—যেসব ব্যবসায়ী ও গোষ্ঠী এই অর্থ বিদেশে সরিয়ে নিয়েছে, তারা ভবিষ্যত সরকারেও প্রভাব খাটাতে পারবে কিনা। জন রিড সতর্ক করে বলেন, “বাংলাদেশের বিপ্লব একটি টার্নিং পয়েন্ট হলেও দেশ আবারও একক রাজনৈতিক আধিপত্যের দিকে ফিরতে পারে।”

ডকুমেন্টারির শেষে রাফিয়া রেহনুমা হৃদি বলেন, “আমাদের সবচেয়ে বড় ভয় হলো, আমরা হয়তো আমাদের শহিদদের কাছে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে পারব না।”

-হাসানুজ্জামান


বাজার ব্যবস্থাপনায় টেকসই সরবরাহই স্থিতিশীলতার মূলমন্ত্র: শেখ বশির উদ্দিন

অর্থনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ১৩ ১৪:৪৪:৪০
বাজার ব্যবস্থাপনায় টেকসই সরবরাহই স্থিতিশীলতার মূলমন্ত্র: শেখ বশির উদ্দিন
ছবিঃ বি এস এস

বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন বলেছেন, বাজার ব্যবস্থাপনাকে স্থিতিশীল রাখতে পণ্যের অবিচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। সরকারের সমন্বিত প্রচেষ্টার ফলেই গত রমজানে সরবরাহ চেইন স্থিতিশীল ছিল এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম সাধারণ মানুষের নাগালে রাখা সম্ভব হয়েছে।

গতকাল নগরীর রেডিসন ব্লু হোটেলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যুরো অব বিজনেস রিসার্চ আয়োজিত দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলন ‘ফিউচার অব বিজনেস: ইনোভেশন, টেকনোলজি অ্যান্ড সাস্টেইনেবল ডেভেলপমেন্ট’-এর সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।

বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, দেশের উৎপাদন খাতে কাঁচামালের ঘাটতি রয়েছে। এ ঘাটতি পূরণে কৃষি-ভিত্তিক জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

গণ-অভ্যুত্থানের পর বাজার ব্যবস্থাপনা স্বাভাবিক করা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল উল্লেখ করে শেখ বশির উদ্দিন বলেন, “তৎকালীন সময়ে অনেক সিন্ডিকেট সদস্য বিদেশে পালিয়ে যায়। তবে যৌথ প্রচেষ্টার মাধ্যমেই আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছি।”

তিনি আরও বলেন, ভবিষ্যৎ সরকারগুলো যদি সমন্বিত প্রয়াস ও গণতান্ত্রিক উপায়ে বাজার ব্যবস্থাপনা পরিচালনা করে এবং নিরপেক্ষ সংস্কার কার্যকর করতে পারে, তবে বাজার ব্যবস্থাপনা আরও শক্তিশালী হবে এবং সম্পদের ন্যায্য বণ্টন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

সমাপনী অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইয়াহিয়া আখতার, উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তৈয়্যুব চৌধুরী, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আয়ুব ইসলাম এবং সোনালী ব্যাংক পিএলসির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।

পরে বাণিজ্য উপদেষ্টা ব্যবসা ও বাণিজ্য খাতে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে ক্রেস্ট প্রদান করেন।

-সুত্রঃ বি এস এস


আজকের মুদ্রা বিনিময় হারের বিশ্লেষণ

অর্থনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ১৩ ১৩:০১:২৮
আজকের মুদ্রা বিনিময় হারের বিশ্লেষণ
ছবিঃ সংগৃহীত

আজকের প্রকাশিত তথ্য থেকে স্পষ্ট যে বাংলাদেশের টাকা ক্রমশ আন্তর্জাতিক বাজারে চাপের মুখে পড়ছে। মার্কিন ডলার ১২১.৭৭ টাকা, ব্রিটিশ পাউন্ড ১৬৪.৬৫ টাকা এবং ইউরো ১৪২.৪৪ টাকা এই তিনটি প্রধান মুদ্রার ঊর্ধ্বগতি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক বাস্তবতার পাশাপাশি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতির সংকটকে তুলে ধরছে।

ডলারের চাপ ও আমদানি খাতের ঝুঁকি

টাকার বিপরীতে ডলারের মূল্যবৃদ্ধি সরাসরি আমদানিনির্ভর অর্থনীতির ওপর প্রভাব ফেলছে। জ্বালানি, খাদ্যশস্য, শিল্প কাঁচামাল—সব ক্ষেত্রেই আমদানির খরচ বাড়ছে। এর ফলে ভোক্তা পর্যায়ে মুদ্রাস্ফীতির চাপ আরও তীব্র হতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ সংকট ও ডলারের চাহিদা বৃদ্ধিই মূলত এ অবস্থার জন্য দায়ী।

প্রবাসী আয়ের সুযোগ

অন্যদিকে, প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য পরিস্থিতি তুলনামূলকভাবে ইতিবাচক। মধ্যপ্রাচ্যের মুদ্রাগুলোর মধ্যে কুয়েতি দিনার ৩৯৮.৫৫ টাকা, বাহরাইন দিনার ৩২৩.৮৫ টাকা, এবং ওমানি রিয়াল ৩১৬.৩৩ টাকাতে পৌঁছেছে। এ উচ্চমান প্রবাসী আয়ের প্রকৃত মূল্য বাড়িয়ে তুলবে। অর্থাৎ, প্রবাসীরা একই পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠিয়েও দেশে তাদের পরিবারকে আগের তুলনায় বেশি টাকা দিতে পারবেন।

আঞ্চলিক মুদ্রা ও সীমান্ত বাণিজ্যের প্রভাব

ভারতীয় রুপি (INR) আজ ১.৩৮ টাকা, যা টাকার তুলনায় তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল থাকলেও, সীমান্ত বাণিজ্যে এর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। চীনা রেন্মিন্বি (CNY) ১৭.০৯ টাকাতে দাঁড়ানো বাংলাদেশের চীনের ওপর আমদানিনির্ভরতার প্রেক্ষিতে খরচ বাড়াবে। অন্যদিকে দক্ষিণ কোরিয়ান ওয়ন (KRW) এবং জাপানি ইয়েন (JPY)-এর দুর্বল অবস্থান বাংলাদেশের জন্য তেমন কোনো তাৎক্ষণিক সুবিধা আনছে না, কারণ বাংলাদেশ এসব দেশে তুলনামূলকভাবে কম রপ্তানি করে।

উন্নত দেশগুলোর মুদ্রা ও বৈশ্বিক বাণিজ্য

কানাডিয়ান ডলার (CAD) ৮৭.৭৮ টাকা এবং অস্ট্রেলিয়ান ডলার (AUD) ৮০.৪৯ টাকাতে অবস্থান করছে। এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ক্রমশ বাড়ছে, ফলে এই মুদ্রার ওঠানামা ভবিষ্যতে রপ্তানি প্রতিযোগিতায় প্রভাব ফেলতে পারে।

নীতি-নির্ধারণের প্রয়োজনীয়তা

আজকের হার শুধু মুদ্রার মান নয়, বরং বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্তর্নিহিত চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনাও প্রতিফলিত করছে। একদিকে রিজার্ভ সংকট ও আমদানি খরচ বৃদ্ধি অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিকে সংকটে ফেলছে, অন্যদিকে প্রবাসী আয়ের প্রবাহ কিছুটা ভারসাম্য আনছে। নীতিনির্ধারকদের এখন জরুরি ভিত্তিতে

  • মুদ্রা স্থিতিশীল করতে সুদ ও বৈদেশিক মুদ্রা নীতি সামঞ্জস্য করা,
  • রপ্তানি বৈচিত্র্য ও প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা,
  • অবৈধ হুন্ডি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স বাড়ানো।

১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫-এর হার বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বাংলাদেশি টাকা বৈশ্বিক মুদ্রাবাজারে দুর্বল হয়ে পড়ছে। ডলার, পাউন্ড ও ইউরোর শক্তিশালী অবস্থান বাংলাদেশের আমদানি-নির্ভর অর্থনীতির জন্য বড় ঝুঁকি তৈরি করছে, যদিও প্রবাসী আয় আংশিক স্বস্তি দিচ্ছে। সামগ্রিকভাবে, অর্থনীতি এখন এক সঙ্কট–সুযোগের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে, যেখানে সঠিক নীতি গ্রহণই ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে।


বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগে রেকর্ড প্রবৃদ্ধি

অর্থনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ১৩ ০৭:৫০:৪৪
বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগে রেকর্ড প্রবৃদ্ধি
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগ গত এক বছরে প্রায় ৩০০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। শুক্রবার রাজধানীর আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) শুরু হওয়া দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী “বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ ইন বাংলাদেশ এক্সিবিশন ২০২৫”–এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ তথ্য তুলে ধরেন। প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে বাংলাদেশে চীনা দূতাবাস ও চায়নিজ এন্টারপ্রাইজেস অ্যাসোসিয়েশন ইন বাংলাদেশ (সিইএবি)। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. সবুর হোসেনসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা।

উদ্বোধনী বক্তব্যে বাণিজ্য উপদেষ্টা জানান, বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগে যে প্রবৃদ্ধি ঘটেছে তা অর্থনীতির জন্য আশাব্যঞ্জক। তিনি বলেন, এ ধরনের প্রদর্শনী শুধু উদ্ভাবন ও অংশীদারিত্বের প্রতিফলন নয়, বরং এটি উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করবে, যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে আরও গতিশীল করবে। একই সঙ্গে তিনি সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তাঁর মতে, বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা এখন প্রায় গণহত্যার রূপ নিয়েছে। প্রতিবছর অসংখ্য মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে এবং নিম্নমানের বাণিজ্যিক যানবাহন জনগণকে চরম ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য তিনি চীনের সহযোগিতা কামনা করেন এবং প্রস্তাব দেন, চীনা কোম্পানিগুলো যদি বাংলাদেশে মানসম্পন্ন যানবাহন উৎপাদন করে তবে সড়ক খাতের আমূল উন্নয়ন সম্ভব হবে।

শেখ বশিরউদ্দীন বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতির প্রসঙ্গও উল্লেখ করেন। তিনি জানান, বাংলাদেশ প্রতিবছর প্রায় ২২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য চীন থেকে আমদানি করে, অথচ রপ্তানির পরিমাণ তুলনামূলকভাবে অনেক কম। চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন রপ্তানি খাতে বৈচিত্র্য আনার জন্য উদ্যোগ নিয়েছেন, তবে আরও কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন বলে তিনি মন্তব্য করেন। এ ছাড়া তিনি বাংলাদেশের বর্তমান অর্ধ-ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিকে দ্রুত এক ট্রিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্যকে সামনে রেখে নীতি ও সহযোগিতামূলক কর্মসূচি গ্রহণের ওপর গুরুত্ব দেন।

চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, চীন-সমর্থিত অবকাঠামো প্রকল্পগুলো বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ইতোমধ্যে রূপান্তরমূলক ভূমিকা রাখছে। পদ্মা রেল লিংক ও কর্ণফুলী টানেলের মতো প্রকল্পগুলো জাতীয় যোগাযোগব্যবস্থাকে আধুনিক করেছে, শিল্প প্রবৃদ্ধি বাড়িয়েছে এবং আঞ্চলিক বাণিজ্যপথ সম্প্রসারণে সহায়ক হয়েছে।

এবারের প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছে ৪০টি প্রতিষ্ঠান। সেখানে ৮০টি বুথ রয়েছে, যার মধ্যে ৩২টি চীনা প্রতিষ্ঠানের। অবকাঠামো, প্রযুক্তি, জ্বালানি, স্বাস্থ্য, কৃষি, পরিবহণ, লজিস্টিকস ও উৎপাদন খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের পণ্য ও সেবা প্রদর্শন করছে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত প্রদর্শনী সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

-রাফসান


দুর্বল পাঁচ ব্যাংক একীভূতকরণ, উদ্যোক্তাদের সব শেয়ার বাজেয়াপ্ত

অর্থনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ১২ ১১:০০:০১
দুর্বল পাঁচ ব্যাংক একীভূতকরণ, উদ্যোক্তাদের সব শেয়ার বাজেয়াপ্ত
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে নজিরবিহীন সংস্কার উদ্যোগ হিসেবে পাঁচটি দুর্বল ইসলামী ব্যাংককে একীভূত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উদ্যোক্তাদের মালিকানাধীন সব শেয়ার বাজেয়াপ্ত করা হবে এবং এর বিপরীতে কোনো ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না। কারণ এই ব্যাংকগুলোর নিট সম্পদ বর্তমানে ঋণাত্মক অবস্থায় রয়েছে। নতুনভাবে গঠিত ব্যাংক শতভাগ সরকারি মালিকানায় পরিচালিত হবে এবং এর জন্য নতুন পরিচালনা পর্ষদ ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হবে।

একীভূত হওয়ার তালিকায় রয়েছে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এসআইবিএল), ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক এবং এক্সিম ব্যাংক। এর মধ্যে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক দীর্ঘদিন ধরে এস আলম গ্রুপের মালিকানায় ছিল। তবে বাকি চারটি ব্যাংক ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে যায়। নিয়ন্ত্রণে যাওয়ার পর এসব ব্যাংকে শুরু হয় ব্যাপক অনিয়ম ও লুটপাট, যার বড় অংশ পাচার হয়ে যায় বিদেশে। ফলস্বরূপ ব্যাংকগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে এবং গ্রাহকদের আমানত ফেরত দিতে ব্যর্থ হয়।

পরিস্থিতি সামাল দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক দীর্ঘদিন ধরে নীতি সহায়তা দিয়ে আসছিল এবং ব্যাংকগুলোর জন্য গ্যারান্টি দিয়েছিল। তবুও ব্যাংকগুলো স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরতে পারেনি। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ ব্যাংক একীভূতকরণের সিদ্ধান্ত নেয় এবং সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠকে প্রস্তাব অনুমোদন পেয়েছে। এখন এটি ওয়ার্কিং কমিটির আসন্ন বৈঠকে চূড়ান্ত করা হবে এবং পরে বাস্তবায়নের কাজ শুরু হবে।

নতুন ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকার থেকে আসবে ২০ হাজার কোটি টাকা, আমানত বিমা তহবিল থেকে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে আসবে ৩ হাজার কোটি টাকা। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিজস্ব তহবিল থেকে কোনো অর্থ দেওয়া হবে না। নতুন ব্যাংক কার্যক্রম শুরু করার পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণ সরবরাহ ও নীতি সহায়তা প্রদান করবে।

একীভূত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পাঁচ ব্যাংকের সব সম্পদ ও দায় নতুন ব্যাংকের নামে হস্তান্তর করা হবে। বর্তমানে এই ব্যাংকগুলোর রয়েছে ৭৬০টি শাখা ও ৬৯৮টি উপশাখা। অনেক এলাকায় একাধিক শাখা থাকায় সেগুলোকে পুনর্বিন্যাস করা হবে। সুবিধাজনক শাখা রাখা হবে এবং বাকি শাখাগুলো অন্য এলাকায় স্থানান্তর করা হবে যাতে ব্যাংকটির কার্যক্রম লাভজনক হয়। একইভাবে, কাছাকাছি অবস্থিত শাখাগুলো সমন্বয় করে কার্যকর অবস্থানে আনা হবে।

বর্তমানে পাঁচ ব্যাংকের পাঁচজন সিইও আছেন। তবে নতুন ব্যাংকে থাকবেন একজন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, যিনি নতুনভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত হবেন। বিদ্যমান কোনো এমডি ওই পদে যেতে পারবেন না। তবে নিচের স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছাঁটাই করা হবে না, প্রয়োজনে তাদের পদ বা কর্মস্থলে পরিবর্তন আনা হতে পারে।

উদ্যোক্তাদের সব শেয়ার বাজেয়াপ্ত করা হবে, কারণ ব্যাংকগুলোর নিট সম্পদ ঋণাত্মক এবং শেয়ারের বিপরীতে কোনো সম্পদ অবশিষ্ট নেই। বরং তারা লোকসানে রয়েছে। তাই উদ্যোক্তারা কোনো ক্ষতিপূরণ পাবেন না। তবে সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের আংশিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া হতে পারে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক তথ্য সংগ্রহ করছে।

অন্যদিকে, আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেওয়ার বিষয়ে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে সাময়িক মোরাটোরিয়াম আরোপ হতে পারে, যার ফলে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য আমানতকারীরা নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে অর্থ তুলতে পারবেন। তবে এটি সাময়িক ব্যবস্থা। কারণ সরকারি মালিকানায় নতুন ব্যাংক গঠনের পর গ্রাহকদের আস্থা বাড়বে এবং নতুন আমানতের প্রবাহ বৃদ্ধি পাবে। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে নতুন ব্যাংকে আমানত রাখতে উৎসাহিত করা হবে যাতে দ্রুত তারল্য সংকট কেটে যায়।

প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারীদের ক্ষেত্রেও সমাধান রাখা হয়েছে। যেসব প্রাতিষ্ঠানিক গ্রাহকের বিপুল অঙ্কের অর্থ ফেরত দেওয়া যাচ্ছে না, তাদের নতুন ব্যাংকের শেয়ার প্রদান করা হবে। যেহেতু ব্যাংকটি সরকারি মালিকানায় থাকবে, তাই তারা এ শেয়ার নিতে আগ্রহী হবেন বলে ধারণা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

-রাফসান


ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে ঝড়ের উত্থান: ২৮২ শেয়ার দাম বাড়ল, লেনদেনে রেকর্ড ৭৭৮ কোটি টাকা! 

অর্থনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ১২ ০০:০২:৫৮
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে ঝড়ের উত্থান: ২৮২ শেয়ার দাম বাড়ল, লেনদেনে রেকর্ড ৭৭৮ কোটি টাকা! 

বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন ছিল প্রাণবন্ত ও ইতিবাচক ধারায়। মোট ৪০১টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ২৮২টির দর বেড়েছে, ৫৪টির কমেছে এবং ৬৫টি অপরিবর্তিত থেকেছে। মোট লেনদেনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭৭৮.৩ কোটি টাকা। এদিন মোট ট্রেড হয়েছে ২,০৮,৪০১টি এবং প্রায় ২৩.৩৭ কোটি শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দিন শেষে ডিএসই–এর মোট বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৭২.৪৬ লাখ কোটি টাকা।

সেক্টরভিত্তিক পারফরম্যান্সে ব্যাংকিং খাত ছিল সবচেয়ে শক্তিশালী। বিশেষ করে ব্র্যাক ব্যাংক ব্লক মার্কেটে এককভাবে প্রায় ৫৬৯.৮৪ কোটি টাকার লেনদেন করেছে, যা পুরো বাজারে শীর্ষ অবস্থান দখল করেছে। প্রাইম ব্যাংকও প্রায় ৫৯.৮৪ কোটি টাকার লেনদেন করেছে। এসব তথ্য থেকে স্পষ্ট যে ব্যাংকিং সেক্টরের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। শিল্প ও উৎপাদন খাতেও বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ লক্ষ্য করা গেছে। KBPPWBIL প্রায় ৮২.৪১ কোটি টাকার লেনদেন করেছে, পাশাপাশি Orion Infusion ও Meghna Cement–এর মতো কোম্পানিও স্থিতিশীল লেনদেন বজায় রেখেছে।

খাদ্য ও ভোক্তা পণ্য খাতে Lovello এবং Fine Foods শেয়ার বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ কাড়তে সক্ষম হয়েছে। অন্যদিকে, টেলিকম খাতেও ভালো সাড়া পাওয়া গেছে। গ্রামীণফোন (GP) ব্লক ট্রেডে ৭.৫৫ কোটি টাকার লেনদেন করেছে, যা টেলিকম সেক্টরের স্থিতিশীলতা ও দীর্ঘমেয়াদি ডিভিডেন্ড সম্ভাবনার প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে।

আজকের বাজারে বিশেষভাবে বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টি কাড়তে সক্ষম হয়েছে কয়েকটি কোম্পানি। এর মধ্যে ব্র্যাক ব্যাংক, KBPPWBIL, প্রাইম ব্যাংক, Orion Infusion এবং গ্রামীণফোন শীর্ষে রয়েছে। এগুলোই মূলত আজকের বাজারকে প্রাণবন্ত করেছে এবং উচ্চ লেনদেনে অবদান রেখেছে।

ভবিষ্যতের বাজার প্রবণতা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ব্যাংক ও আর্থিক খাত সামনের দিনগুলোতে বাজার চালিত করার সক্ষমতা রাখে। পাশাপাশি ফার্মাসিউটিক্যালস ও সিমেন্ট খাতে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়ছে। খাদ্য ও টেলিকম খাতও দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীল রিটার্নের জন্য সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তবে জেড–ক্যাটাগরির শেয়ারগুলোতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন, কারণ সেখানে অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে।

সর্বোপরি, আজকের লেনদেন বিনিয়োগকারীদের জন্য ইতিবাচক ইঙ্গিত বহন করছে। আস্থা ফিরে আসার পাশাপাশি তারল্যের প্রবাহ বাড়ছে, যা আগামীতে বাজারকে আরও সক্রিয় করে তুলতে পারে। ব্যাংক, ফার্মাসিউটিক্যালস, সিমেন্ট এবং টেলিকম খাত ভবিষ্যতের জন্য বিনিয়োগকারীদের প্রধান আগ্রহের জায়গা হয়ে উঠবে বলে ধারণা করা যায়। তবে স্বল্পমেয়াদি বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় সতর্ক থাকা জরুরি।

পাঠকের মতামত: