পিরোজপুরে মহারাজ সিন্ডিকেটের সদস্য ইউনুস ব্রাদার্সের ৮৩৬ কোটি টাকার কাজ; কেমন করে সম্ভব?

সারাদেশ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ১৯ ১৬:২৮:৫৬
পিরোজপুরে মহারাজ সিন্ডিকেটের সদস্য ইউনুস ব্রাদার্সের ৮৩৬ কোটি টাকার কাজ; কেমন করে সম্ভব?

সত্য নিউজ:চট্টগ্রামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মোহাম্মদ ইউনুস অ্যান্ড ব্রাদার্স আবারও দুর্নীতির অভিযোগে আলোচনায় এসেছে। বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বিপুলসংখ্যক প্রকল্প পাওয়ার পাশাপাশি, কাজ না করেই বিল উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাত্র আট মাসের মধ্যে এলজিইডি, সওজ, পাউবোসহ একাধিক সরকারি দপ্তর থেকে ইউনুস অ্যান্ড ব্রাদার্স পেয়েছে মোট ২৮০টি প্রকল্প, যার আর্থিক মূল্য ৮৩৬ কোটি টাকা।

প্রতিষ্ঠানটির অতীত ঘাঁটলে উঠে আসে বিস্তৃত রাজনৈতিক সিন্ডিকেটে যুক্ত থাকার ইতিহাস। সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পিরোজপুরের সাবেক সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন মহারাজের সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য ছিল ইউনুস ব্রাদার্স। ক্ষমতার পরিবর্তনে মহারাজ পালিয়ে গেলেও ইউনুস ব্রাদার্সের প্রভাব ও প্রকল্পপ্রাপ্তি কমেনি বরং বেড়েছে। সংশ্লিষ্টরা দাবি করছেন, বিতর্কিত ঠিকাদার জি কে শামীমের চেয়েও ‘ধূর্ত’ কৌশলে টিকে রয়েছে ইউনুস ব্রাদার্স। শামীম গ্রেপ্তার হলেও ইউনুস ব্রাদার্সের কর্ণধাররা বিভিন্ন সরকারের আমলে কার্যত ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে গেছেন।

সরকারি নথিপত্র বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০২৩ সালের ৫ আগস্ট থেকে ২০২৪ সালের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ইউনুস অ্যান্ড ব্রাদার্স সরকারিভাবে অভাবনীয় সংখ্যক প্রকল্প পেয়েছে, যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রকল্প এসেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (LGED) থেকে। এলজিইডি থেকে প্রতিষ্ঠানটি পেয়েছে ১৭৩টি প্রকল্প, যার সম্মিলিত দর ৬০৩ কোটি ১৭ লাখ টাকা। এছাড়া, সড়ক ও জনপথ বিভাগ (RHD) থেকে ৮১টি প্রকল্প, যার মোট মূল্য ৩৭ কোটি ৯৮ লাখ টাকা, এবং বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (BWDB) থেকে ১৫টি প্রকল্প পেয়েছে, যার মূল্য ১৭৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা

বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (BADC) থেকে তারা পেয়েছে ৬টি প্রকল্প, যার মূল্য ৯০ লাখ ৭৯ হাজার টাকা। আরও রয়েছে গণপূর্ত বিভাগ, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর (EED), খাদ্য অধিদপ্তর এবং রুরাল ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কো-অপারেটিভ বিভাগের ৫টি প্রকল্প, যেগুলোর আর্থিক মূল্য আলাদা আলাদা। এই সবকটি প্রকল্প মিলিয়ে আট মাসে ইউনুস অ্যান্ড ব্রাদার্সের মোট প্রকল্প সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৮০টি এবং মোট দর প্রায় ৮৩৬ কোটি টাকা।

সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, মাত্র একদিনেই—২০২৪ সালের ২৯ এপ্রিল, প্রতিষ্ঠানটি সওজ ও পাউবো থেকে ১১টি প্রকল্প লাভ করে, যার বেশিরভাগই সিরাজগঞ্জ জেলায় অবস্থিত।

অভিযোগ রয়েছে, ইউনুস ব্রাদার্স নিজেরা প্রকল্প বাস্তবায়ন করে না বরং এগুলো সাব-ঠিকাদারদের কাছে বিক্রি করে দেয়। দেশজুড়ে এদের একটি শক্তিশালী ‘সাব-ঠিকাদার নেটওয়ার্ক’ রয়েছে, যারা নির্ধারিত কমিশনে দরপত্রে অংশ নেয় ইউনুস ব্রাদার্সের লাইসেন্স ব্যবহার করে। ফলে কাজের গুণগত মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। প্রকৌশলীদের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে নিম্নমানের কাজও পাস করানো হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এমনকি একটি প্রতিষ্ঠান এত অল্প সময়ে এত প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে সক্ষম কি না, তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।

সম্প্রতি পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের একটি তদন্তে উঠে এসেছে, এলজিইডির পিরোজপুর নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে ১৭টি প্রকল্পের আওতায় কাজ না করেই ১ হাজার ৬৪৭ কোটি টাকা বিল উত্তোলন করা হয়েছে। এ প্রকল্পগুলোতে সরাসরি যুক্ত ছিল মহিউদ্দিন মহারাজের সিন্ডিকেট, যার অন্যতম সদস্য ছিল ইউনুস ব্রাদার্স। একা প্রতিষ্ঠানটি ২০২০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে এলজিইডি পিরোজপুর কার্যালয় থেকে পেয়েছে প্রায় ৯৭ কোটি টাকার প্রকল্প। এর মধ্যে প্রমাণ মিলেছে, কাজ না করেই ৩৮ কোটি টাকার বিল উত্তোলনের।

এই প্রসঙ্গে ইউনুস ব্রাদার্সের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ ইমরান হোসেন জানান, প্রতিষ্ঠানটি সব নিয়ম মেনেই কাজ করে। তাদের ৫০ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে এবং তারা কখনও প্রকল্প বিক্রি করে না। তার ভাষায়, "একটি মহল অপপ্রচার চালাচ্ছে আমাদের বিরুদ্ধে।" তবে তিনি এও বলেন, “২৮০টি কাজ পাওয়া আমাদের ক্যাপাসিটি ও ক্যাপাবিলিটির প্রমাণ।”

অন্যদিকে এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী মো. আব্দুর রশীদ মিয়া জানান, ইজিপি টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অনিয়মের সুযোগ নেই। তবে অনিয়মের অভিযোগ এলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। পিরোজপুরের ঘটনার জন্য দুদক মামলা করেছে এবং সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে। ইউনুস ব্রাদার্সের বিরুদ্ধেও অভিযোগ প্রমাণিত হলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

একজন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ, সামাজিক ব্যবসার পথপ্রদর্শক এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণের নেতৃত্বদানকারী রাষ্ট্রনায়ক—এই তিনটি পরিচয়ই এখন সমভাবে প্রযোজ্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের... বিস্তারিত