ভারতে তৃণমূলের মুসলিম এমপি বাদ, ঐক্যের কূটনীতি প্রশ্নে

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ১৯ ১৬:০৪:০৪
ভারতে তৃণমূলের মুসলিম এমপি বাদ, ঐক্যের কূটনীতি প্রশ্নে

সত্য নিউজ: ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের পাকিস্তানবিরোধী কূটনৈতিক প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে গঠিত বহুদলীয় সংসদীয় প্রতিনিধিদল থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের (টিএমসি) মুসলিম সংসদ সদস্য ইউসুফ পাঠানকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার ঘটনায় রাজনৈতিক অঙ্গনে বিতর্কের ঝড় উঠেছে। দলীয় মত উপেক্ষা করে কেন্দ্রীয় সরকারের একতরফা সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তীব্র আপত্তি জানিয়েছে তৃণমূল, বিষয়টি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার বিপরীত বলেও অভিযোগ তুলেছে দলটি।

হিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোমবার (১৯ মে) ইউসুফ পাঠান নিজে আনুষ্ঠানিকভাবে এই আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিত্ব থেকে নাম প্রত্যাহার করেন। তাঁর অন্তর্ভুক্তি ছিল ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান ও সিঙ্গাপুরে যাওয়ার নির্ধারিত প্রতিনিধি দলের অন্তর্গত, যার নেতৃত্বে রয়েছেন বিজেপির সঞ্জয় ঝা।

একতরফা সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ তৃণমূল, ঐক্যের বার্তা দুর্বল?

তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে বলা হয়েছে, প্রতিনিধি মনোনয়নের ক্ষেত্রে দলগুলোর সঙ্গে কোনো পূর্বপরামর্শ না করে কেন্দ্র যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা অগণতান্ত্রিক। দলের একজন সিনিয়র নেতা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, "বিদেশনীতি কেন্দ্রের একক অধিকার হলেও, দলের প্রতিনিধিত্ব কে করবেন, তা দলই ঠিক করবে। কেন্দ্রের রাজনৈতিক সুবিধা অর্জনের জন্য বিরোধীদের ব্যবহার অনুচিত।"

এই ঘটনার প্রেক্ষিতে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ইউসুফ পাঠানের নাম প্রত্যাহারের তাৎপর্য বহুমাত্রিক। একজন মুসলিম সংসদ সদস্য হিসেবে তাঁর অংশগ্রহণের মাধ্যমে ভারত চেয়েছিল আন্তর্জাতিক মহলে ‘জাতিগত ও ধর্মীয় ঐক্য’-র বার্তা দিতে এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সম্মিলিত অবস্থান তুলে ধরতে। কিন্তু বিরোধীদের মত উপেক্ষা করে এমন কৌশল গ্রহণ শেষ পর্যন্ত কূটনৈতিক প্রচেষ্টার গ্রহণযোগ্যতা ও স্বচ্ছতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে।

বিরোধী দলগুলোর ধারাবাহিক আপত্তি: কংগ্রেসও বাদ যায়নি

তৃণমূল কংগ্রেসের আগে কংগ্রেসও একই অভিযোগ তোলে। দলটি দাবি করে, তাদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই শশী থারুরকে প্রতিনিধি হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে, যা দলীয় পছন্দকে পাশ কাটানোর শামিল। এই অভিযোগগুলো ক্রমেই ভারতের ‘ওয়ান মিশন, ওয়ান মেসেজ, ওয়ান ভারত’ কৌশলের অন্তর্গত বহুদলীয় প্রচেষ্টাকে বিতর্কিত করে তুলছে।

কূটনৈতিক অভিযান: রাজনৈতিক কৌশল না ন্যায্য লড়াই?

পেহেলগামে প্রাণঘাতী জঙ্গি হামলার পর ‘অপারেশন সিঁদুর’-এ ভারতের জবাবকে আন্তর্জাতিক মহলে বৈধতা দিতে এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রচার জোরদার করতে গঠিত হয়েছে এই ৭টি প্রতিনিধিদল, যাদের ৩০টিরও বেশি দেশে পাঠানো হবে। সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কাতারসহ গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে এসব প্রতিনিধি দল কাজ করবে।

তবে, বিরোধীদের আপত্তি ও প্রত্যাহারের ঘটনায় স্পষ্ট হয়ে উঠছে, এমন উদ্যোগ শুধু পররাষ্ট্রনীতি নয়, বরং অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক স্বার্থেও ব্যবহৃত হচ্ছে যা ঐক্যের বার্তা দুর্বল করে দিতে পারে।

ঐক্যের প্রচেষ্টা না কি বিভাজনের কূটনীতি?

ভারতের এই বহুদলীয় কূটনৈতিক উদ্যোগ আন্তর্জাতিক মহলে একটি শক্তিশালী বার্তা দেওয়ার লক্ষ্যে গৃহীত হলেও, অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক মতানৈক্য এবং প্রতিনিধিত্বে পক্ষপাতের অভিযোগ পুরো প্রচেষ্টাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। যে সময়ে ঐক্য প্রয়োজন, সেই সময়ে দলীয় মত উপেক্ষা করে নেওয়া সিদ্ধান্ত রাজনৈতিকভাবে ব্যুমেরাং হতে পারে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এখন প্রশ্ন উঠছে, ভারতের পররাষ্ট্রনীতিতে সত্যিকারের বহুদলীয় অংশগ্রহণ কতটা বাস্তব, আর কতটা প্রতীকী?

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে, এবং এই পরিবর্তনটির মূল কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ।... বিস্তারিত