Banner

বিস্ময়কর সাফল্য: ত্বকের কোষ থেকে তৈরি হলো মানুষের ভ্রূণ!

প্রযুক্তি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ অক্টোবর ০২ ১৫:৩০:১০
বিস্ময়কর সাফল্য: ত্বকের কোষ থেকে তৈরি হলো মানুষের ভ্রূণ!
ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন বিজ্ঞানীরা প্রথমবারের মতো মানুষের ত্বকের কোষ থেকে নেওয়া ডিএনএ ব্যবহার করে এবং পরে তা শুক্রাণুর সঙ্গে নিষিক্ত করে প্রাথমিক স্তরের মানব ভ্রূণ তৈরি করেছেন। বিশেষজ্ঞরা এই পদ্ধতিকে একটি উল্লেখযোগ্য বৈজ্ঞানিক সাফল্য হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এই যুগান্তকারী প্রযুক্তি বয়সজনিত বা রোগজনিত বন্ধ্যাত্ব কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করতে পারে। এমনকি ভবিষ্যতে এই পদ্ধতির মাধ্যমে সমলিঙ্গ দম্পতিরাও জিনগতভাবে সম্পর্কিত সন্তান পেতে পারবেন।

এই পদ্ধতিটির এখনও ব্যাপক পরিমার্জন প্রয়োজন, যা শেষ হতে অন্তত এক দশক সময় লাগতে পারে। এরপরই কোনো বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসা কেন্দ্র এটি ব্যবহারের কথা ভাবতে পারবে।

মাইটো-মিওসিস: অসম্ভবকে সম্ভব করার কৌশল

ওরেগন হেলথ অ্যান্ড সায়েন্স ইউনিভার্সিটির গবেষক দল যে পদ্ধতি ব্যবহার করেছে, তাতে তারা ত্বকের কোষ থেকে নিউক্লিয়াস বের করে আনেন। এরপর এই নিউক্লিয়াসটি এমন একটি দাতা ডিম্বাণুর মধ্যে স্থাপন করা হয়, যার নিজস্ব জিনগত নির্দেশনা (ডিএনএ) আগেই অপসারণ করা হয়েছে। এটি অনেকটা ১৯৯৬ সালে ক্লোন করা ‘ডলি ভেড়ি’ তৈরির পদ্ধতির মতো।

সাধারণত, নিষিক্তকরণের জন্য ডিম্বাণুতে ২৩টি ক্রোমোজোম প্রয়োজন। কিন্তু ত্বকের কোষ থেকে পাওয়া ডিম্বাণুতে থাকে ৪৬টি ক্রোমোজোম। তাই পরবর্তী ধাপে গবেষকরা ডিম্বাণুকে তার ক্রোমোজোমের অর্ধেক ফেলে দিতে রাজি করান। এই প্রক্রিয়াটিকে গবেষকরা নাম দিয়েছেন ‘মাইটো-মিওসিস’—যা দুটি কোষ বিভাজন পদ্ধতি—মাইটোসিস ও মিওসিস—এর সংমিশ্রণ।

আশা ও চ্যালেঞ্জ

সাফল্য: ন্যাচার কমিউনিকেশনস জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় দেখা গেছে, এই নতুন পদ্ধতিতে মোট ৮২টি কার্যকরী ডিম্বাণু তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। এর মধ্যে কিছু ভ্রূণ উন্নয়নের প্রাথমিক স্তরে পৌঁছেছিল, তবে কোনো ভ্রূণই ছয় দিন পর আর বিকাশ লাভ করতে পারেনি।

সমস্যা: এই পদ্ধতির সাফল্যের হার খুব কম (প্রায় ৯%)। এছাড়া ডিম্বাণু যে ক্রোমোজোমগুলো ফেলে দেয়, তা এলোমেলোভাবে বেছে নেয়। স্বাস্থ্যকর ভ্রূণ নিশ্চিত করতে এই সমস্যা সমাধান করা জরুরি।

ওরেগন হেলথ অ্যান্ড সায়েন্স ইউনিভার্সিটির পরিচালক প্রফেসর শোখরাত মিতালিপভ বলেন, “আমরা এমন কিছু অর্জন করেছি যা আগে অসম্ভব মনে করা হতো।” তিনি মনে করেন, ভবিষ্যতে এটিই একমাত্র পথ, কারণ দিন দিন আরও বেশি রোগী সন্তান ধারণে ব্যর্থ হচ্ছেন।

প্রজনন ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত

এই প্রযুক্তি এমন দম্পতিদের জন্য আশা তৈরি করবে, যারা আইভিএফ (ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন) ব্যবহার করতে পারছেন না, কারণ তাদের কাছে ব্যবহারযোগ্য শুক্রাণু বা ডিম্বাণু নেই। এটি প্রবীণ নারী, পর্যাপ্ত শুক্রাণু উৎপাদন করতে না পারা পুরুষ কিংবা ক্যান্সারের চিকিৎসার কারণে বন্ধ্যাত্বের শিকার হওয়া রোগীদের সাহায্য করতে পারে।

সমলিঙ্গ দম্পতি: এই পদ্ধতিতে একজনের ত্বকের কোষ থেকে ডিম্বাণু তৈরি করে অন্যজনের শুক্রাণু দিয়ে নিষিক্ত করা সম্ভব। ফলে সমলিঙ্গ দম্পতিরাও এমন সন্তান পেতে পারবেন, যারা উভয় পিতামাতার জিনগতভাবে সম্পর্কিত হবে।

বিশেষজ্ঞের মত: প্রফেসর রজার স্টারমি বলেছেন, “এ ধরনের গবেষণা জনসাধারণের সঙ্গে নতুন প্রজনন গবেষণার অগ্রগতির বিষয়ে খোলামেলা সংলাপ চালানোর গুরুত্বকে জোরদার করে।” তিনি দৃঢ় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তাও তুলে ধরেন।

সূত্র: বিবিস


ভারসাম্য হারাচ্ছে জলবায়ু তবে কি ধেয়ে আসছে পরবর্তী তুষারযুগ?

প্রযুক্তি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ ডিসেম্বর ৩১ ২১:০৮:০০
ভারসাম্য হারাচ্ছে জলবায়ু তবে কি ধেয়ে আসছে পরবর্তী তুষারযুগ?
ছবি : সংগৃহীত

বৈশ্বিক উষ্ণায়ন এবং তুষারযুগ— আপাতদৃষ্টিতে দুটি বিপরীতধর্মী বিষয় মনে হলেও বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এরা আসলে একটি নিবিড় চক্রে আবদ্ধ। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের এক সাম্প্রতিক গবেষণায় দাবি করা হয়েছে যে, উষ্ণায়ন যে হারে বাড়ছে, তা পরবর্তী তুষারযুগকে সময়ের আগেই টেনে আনতে পারে। প্রখ্যাত ‘সায়েন্স’ জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণাপত্রটি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রচলিত ধারণাকে এক প্রকার চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে।

বিজ্ঞানীদের মতে, পৃথিবীর জলবায়ু নিয়ন্ত্রণের অন্যতম প্রাকৃতিক ব্যবস্থা হলো শিলাক্ষয় বা পাথরের ক্ষয়। সাধারণত বাতাসের কার্বন ডাই অক্সাইড জলীয় বাষ্পের সঙ্গে মিশে বৃষ্টির মাধ্যমে ভূপৃষ্ঠে নেমে আসে। এই অ্যাসিডিক জল যখন সিলিকেট পাথরের উপর পড়ে, তখন এক রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে এবং পাথর ক্ষয়ে যায়। এই ক্ষয়ে যাওয়া পাথরের সঙ্গে কার্বন গিয়ে মেশে সমুদ্রে, যা পরে চুনাপাথর হিসেবে সমুদ্রগর্ভে জমা হয়। এই প্রক্রিয়ায় বায়ুমণ্ডল থেকে প্রচুর কার্বন ডাই অক্সাইড অপসারিত হয়, যা পৃথিবীকে শীতল করতে সহায়তা করে।

গবেষকদলের প্রধান অ্যান্ডি রিজওয়েল জানিয়েছেন, পৃথিবী যত উষ্ণ হবে, পাথরের ক্ষয় তত দ্রুত ঘটবে। এর ফলে বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন অপসারিত হয়ে সমুদ্রগর্ভে জমা হওয়ার গতি বেড়ে যাবে। এক পর্যায়ে এটি অক্সিজেনের মাত্রা কমিয়ে দিতে পারে এবং কার্বন চক্রকে এমনভাবে প্রভাবিত করতে পারে যে পৃথিবী স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি শীতল হয়ে যাবে। অর্থাৎ, যে উষ্ণায়নকে আমরা এখন বিপদ ভাবছি, সেটিই প্রকৃতিকে এমনভাবে উসকে দিতে পারে যে বিশ্ব আবার বরফে ঢাকা এক তুষারযুগের দিকে ধাবিত হবে।

এর আগেও পৃথিবীতে একাধিক তুষারযুগ এসেছে, যার অনেকগুলোই ছিল অত্যন্ত তীব্র। সেই চরম শীতলতা কেন এসেছিল, তার উত্তর খুঁজতে গিয়েই বিজ্ঞানীরা এই স্বয়ংক্রিয় শীতলকরণ প্রক্রিয়ার কথা জানতে পারেন। গবেষকরা সতর্ক করে জানিয়েছেন যে, উষ্ণায়নকে নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে এই প্রাকৃতিক চক্রটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে এবং মানবসভ্যতা এক নতুন মহাহিমযুগের অনিশ্চয়তার মুখে পড়তে পারে।


মৃত্যুর পর মানবদেহে কী ঘটে, জানাচ্ছে বিজ্ঞান

প্রযুক্তি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ ডিসেম্বর ৩১ ১২:১৪:৪২
মৃত্যুর পর মানবদেহে কী ঘটে, জানাচ্ছে বিজ্ঞান
ছবি: সংগৃহীত

পৃথিবীতে জন্ম যেমন অবধারিত, তেমনি মৃত্যুও অমোঘ সত্য। কিন্তু মৃত্যু ঘটার পর মানবদেহে ঠিক কী ধরনের শারীরিক ও জৈবিক পরিবর্তন শুরু হয়, সে বিষয়ে সাধারণ মানুষের জানাশোনা খুবই সীমিত। আধুনিক ফরেনসিক বিজ্ঞান ও জীববিজ্ঞানের আলোকে জানা যায়, মৃত্যুর পরপরই মানবদেহে একের পর এক নাটকীয় ও জটিল প্রক্রিয়া শুরু হয়, যা শেষ পর্যন্ত দেহকে কঙ্কালে রূপান্তরিত করে।

মৃত্যুর মাত্র ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যেই শরীরে প্রথম দৃশ্যমান পরিবর্তন দেখা দেয়, যাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় প্যালর মর্টিস। এ সময় দেহের ত্বক ধীরে ধীরে ফ্যাকাশে হয়ে ওঠে। কারণ, হৃদস্পন্দন বন্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রক্ত চলাচল থেমে যায় এবং দেহের সূক্ষ্ম রক্তনালি বা ক্যাপিলারিগুলোতে আর রক্ত প্রবাহিত হয় না। এই প্রক্রিয়া সবার ক্ষেত্রেই একই হলেও গাঢ় ত্বকের মানুষের ক্ষেত্রে এটি তুলনামূলক কম চোখে পড়ে।

মৃত্যুর পর শরীরের তাপমাত্রা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। সাধারণভাবে প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ০.৮৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস (বা ১.৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট) হারে দেহ ঠান্ডা হয়। তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো, শরীর ঠান্ডা হয়ে গেলেও এর ভেতরে তখনও অসংখ্য অণুজীব সক্রিয় থাকে। বিজ্ঞানীরা মৃতদেহকে অনেক সময় একটি ক্ষুদ্র বাস্তুতন্ত্রের সঙ্গে তুলনা করেন।

মৃত্যুর কিছুক্ষণের মধ্যেই শুরু হয় অটোলাইসিস নামের একটি প্রক্রিয়া, যার অর্থ নিজেকে নিজেই হজম করা। অক্সিজেনের অভাবে কোষগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে এবং কোষের ভেতরে থাকা এনজাইমগুলো কোষের ঝিল্লি ভেঙে ফেলতে শুরু করে। ফলে কোষ ধ্বংস হয় এবং রক্তনালির ভেতর থেকে রক্তকণিকা বেরিয়ে আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে।

এই রক্ত জমে যাওয়ার ফলে ত্বকের নিচে বেগুনি-নীলচে বা লালচে দাগ তৈরি হয়, যাকে বলা হয় লিভর মর্টিস। যদিও এই প্রক্রিয়া মৃত্যুর প্রায় এক ঘণ্টার মধ্যেই শুরু হয়, সাধারণত কয়েক ঘণ্টা না পেরোলে তা স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান হয় না।

মৃত্যুর দুই থেকে ছয় ঘণ্টার মধ্যে দেহে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ঘটে, যাকে বলা হয় রিগর মর্টিস। জীবিত অবস্থায় পেশির ভেতরে থাকা অ্যাকটিন ও মায়োসিন নামের প্রোটিন একে অপরের সঙ্গে যুক্ত ও বিচ্ছিন্ন হয়ে পেশির সংকোচন-প্রসারণ ঘটায়। কিন্তু মৃত্যুর পর রাসায়নিক বন্ধন তৈরি হয়ে যায়, যা পেশিকে স্থায়ীভাবে সংকুচিত করে ফেলে।

এর ফলে শরীর শক্ত হয়ে যায় এবং নড়াচড়া কঠিন হয়ে পড়ে। ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ ও মরচুয়ারি কর্মীদের জন্য এই সময় মৃতদেহ নিয়ে কাজ করা তুলনামূলক কঠিন হয়ে ওঠে।

মানবদেহে বিপুল পরিমাণ ব্যাকটেরিয়া বাস করে, যেগুলো জীবিত অবস্থায় মূলত অন্ত্রের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা তাদের অন্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গে ছড়াতে বাধা দেয়। কিন্তু মৃত্যুর পর সেই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আর সক্রিয় থাকে না।

ফলে ব্যাকটেরিয়াগুলো প্রথমে অন্ত্র ও আশপাশের টিস্যু হজম করতে শুরু করে। ধীরে ধীরে তারা রক্তনালির মাধ্যমে হৃদযন্ত্র, যকৃত এবং মস্তিষ্কে পৌঁছে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, মৃত্যুর প্রায় ৫৮ ঘণ্টার মধ্যে ব্যাকটেরিয়া শরীরের প্রধান অঙ্গগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে।

এই পর্যায়কে বলা হয় পিউট্রিফ্যাকশন বা পচন। ব্যাকটেরিয়া ও পোকামাকড়ের লার্ভা শরীরের কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ও অন্যান্য যৌগ ভেঙে গ্যাস তৈরি করে। এসব গ্যাস পেট ফাঁপিয়ে তোলে এবং একপর্যায়ে ত্বক ফেটে যেতে পারে। তখন আরও পোকামাকড় মৃতদেহে আকৃষ্ট হয়।

পচনের গতি নির্ভর করে মৃত্যুর কারণ, পরিবেশের তাপমাত্রা, আর্দ্রতা এমনকি মৃতের পোশাকের ধরনেও।

এই স্বাভাবিক পচন প্রক্রিয়া ধীর করার জন্য মানুষ যুগে যুগে নানা উপায় আবিষ্কার করেছে। অতীতে ভিনেগার, মধু, মদ বা ব্র্যান্ডির মতো উপাদান ব্যবহার করে মৃতদেহ সংরক্ষণ করা হতো।

আধুনিক যুগে বহুল ব্যবহৃত পদ্ধতি হলো এম্বালমিং। এতে দেহের শিরা থেকে রক্ত বের করে ফরমালডিহাইডভিত্তিক সংরক্ষণকারী তরল ধমনীতে প্রবেশ করানো হয়। শরীরের গহ্বর থেকেও তরল অপসারণ করে সংরক্ষণকারী পদার্থ দেওয়া হয়।

সূত্র: ব্রিটানিকা


ফুরিয়ে আসছে ২৪ ঘণ্টার দিন, ঘড়ির কাঁটায় যোগ হচ্ছে নতুন সময়

প্রযুক্তি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ ডিসেম্বর ৩০ ২০:৪৭:৩৩
ফুরিয়ে আসছে ২৪ ঘণ্টার দিন, ঘড়ির কাঁটায় যোগ হচ্ছে নতুন সময়
ছবি : সংগৃহীত

ভূগোলের পাঠ্যবইয়ে আমরা পড়েছি পৃথিবী তার নিজের অক্ষের চারপাশে একবার ঘুরে আসতে সময় নেয় ২৪ ঘণ্টা। কিন্তু বিজ্ঞানের আধুনিক ও সূক্ষ্ম গবেষণা বলছে, এই হিসাব চিরস্থায়ী নয়। মহাকাশে পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ চাঁদের প্রভাবে পৃথিবীর আহ্নিক গতি ক্রমশ মন্থর হয়ে পড়ছে। বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন, এই ঘূর্ণন গতি কমে যাওয়ার ফলে ভবিষ্যতে ঘড়ির কাঁটা আর ২৪ ঘণ্টায় সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং একটি দিন হতে পারে ২৫ ঘণ্টার।

দীর্ঘদিন ধরে পৃথিবীর আবর্তন প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করে মিউনিখের টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি (TUM) এবং উইসকনসিন-ম্যাডিসন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা জানিয়েছেন, পৃথিবীর এই গতি কমে যাওয়ার নেপথ্যে মূল ভূমিকা পালন করছে চাঁদ। চাঁদের মহাকর্ষীয় শক্তির টানে পৃথিবীতে যে জোয়ার-ভাটা হয়, তা কেবল সমুদ্রের জলরাশিকেই প্রভাবিত করে না বরং পৃথিবীর ঘূর্ণন গতির ওপর অনেকটা ‘ব্রেক’-এর মতো কাজ করে। চাঁদের আকর্ষণে সমুদ্রের বিশাল জলরাশি যখন ফুলে ওঠে, তখন সমুদ্রের তলদেশে এক ধরণের প্রচণ্ড ঘর্ষণ তৈরি হয়। এই ঘর্ষণই পৃথিবীর নিজের অক্ষের চারদিকে ঘোরার গতিকে প্রতি শতাব্দীতে প্রায় ১.৭ থেকে ২.৩ মিলি সেকেন্ড করে কমিয়ে দিচ্ছে।

বিজ্ঞানীদের মতে, এই প্রক্রিয়ায় পৃথিবী ও চাঁদের মধ্যে শক্তির এক ধরণের আদান-প্রদান চলে, যার ফলে চাঁদ নিজেও প্রতি বছর প্রায় ৩.৮ সেন্টিমিটার করে পৃথিবী থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। গবেষক স্টিফেন মায়ার্স এই প্রক্রিয়াকে একজন ‘ফিগার স্কেটার’-এর সাথে তুলনা করেছেন, যিনি হাত প্রসারিত করলে তাঁর ঘোরার গতি কমে যায়। ঠিক তেমনি চাঁদ দূরে সরে যাওয়ায় পৃথিবীর ঘূর্ণন গতিও কমে আসছে। যদিও এই মন্থর হওয়ার প্রক্রিয়াটি সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনে ধরা পড়ে না, তবে কয়েক কোটি বছরের ব্যবধানে এটি বিশাল পরিবর্তন আনবে।

গবেষণায় দেখা গেছে, আজ থেকে প্রায় ১৪০ কোটি বছর আগে পৃথিবীতে একদিনের স্থায়িত্ব ছিল মাত্র ১৮ ঘণ্টা। সেই সময় চাঁদ পৃথিবীর অনেক কাছে ছিল। বর্তমান গতিতে যদি পৃথিবীর আবর্তন মন্থর হতে থাকে, তবে পূর্ণ ২৫ ঘণ্টার দিন পেতে মানবসভ্যতাকে আরও প্রায় ২০ কোটি (২০০ মিলিয়ন) বছর অপেক্ষা করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তন এবং মেরু অঞ্চলের বরফ গলে যাওয়াও পৃথিবীর এই গতির ওপর সামান্য প্রভাব ফেলছে বলে সাম্প্রতিক কিছু গবেষণায় উঠে এসেছে। মহাকাশ গবেষকদের কাছে এই সামান্য চ্যুতি মেলাতে বর্তমানে মাঝেমধ্যেই ‘লিপ সেকেন্ড’ ব্যবহার করা হয়। পৃথিবীর এই মন্থর হয়ে যাওয়া কোনো আকস্মিক ঘটনা নয়, বরং মহাজাগতিক এক দীর্ঘস্থায়ী বিবর্তনের অংশ যা ভবিষ্যতের সময় গণনা পদ্ধতিকে পুরোপুরি বদলে দিতে পারে।


পৃথিবী থেকে সাহায্য ছাড়াই মঙ্গলে থাকা সম্ভব: বিজ্ঞানীদের অবিশ্বাস্য দাবি

প্রযুক্তি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ ডিসেম্বর ২৮ ২১:৩২:২৫
পৃথিবী থেকে সাহায্য ছাড়াই মঙ্গলে থাকা সম্ভব: বিজ্ঞানীদের অবিশ্বাস্য দাবি
ছবি : সংগৃহীত

মহাকাশ বিজ্ঞানের ইতিহাসে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। মঙ্গলের রুক্ষ ধূসর মাটির নিচে এবার বিশাল বরফের স্তরের সন্ধান পেয়েছেন গবেষকরা, যা ভবিষ্যতে মানুষের মঙ্গলে বসবাসের স্বপ্নকে এক ধাক্কায় অনেকটা বাস্তবে রূপান্তর করেছে। বিজ্ঞানীরা লাল গ্রহের ‘অ্যামাজোনিস প্লানিশিয়া’ নামক একটি অঞ্চলকে মানব অভিযানের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত অবতরণস্থল হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। সায়েন্স ডেইলির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, এই এলাকাটি গ্রহের মধ্য-অক্ষাংশে অবস্থিত হওয়ার কারণে এখানে পর্যাপ্ত সূর্যালোক এবং নিরাপদ সমতল ভূমি পাওয়া যায়।

সবচেয়ে বিস্ময়কর তথ্য হলো, এই অঞ্চলের মাটির মাত্র এক মিটারেরও কম গভীরে জমাটবদ্ধ বরফের স্তরের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। গবেষক এরিকা লুজ্জি এবং জিয়াকোমো নোদজুমির মতে, এই বরফই হবে মঙ্গলে মানুষের টিকে থাকার মূল চাবিকাঠি। কারণ সেখান থেকে পানীয় জল পাওয়ার পাশাপাশি ‘ইন-সিটু রিসোর্স ইউটিলাইজেশন’ প্রযুক্তির মাধ্যমে শ্বাস নেওয়ার অক্সিজেন এবং রকেটের জ্বালানি তৈরি করা সম্ভব হবে। পৃথিবী থেকে মঙ্গলে জরুরি সাহায্য পৌঁছাতে যেখানে মাসের পর মাস সময় লাগে, সেখানে এই স্থানীয় সম্পদ ব্যবহার করেই মহাকাশচারীরা মাসের পর মাস টিকে থাকতে পারবেন।

বিজ্ঞানীরা আরও মনে করছেন, এই প্রাচীন বরফের স্তরের নিচে মঙ্গলের বিলুপ্ত প্রাণের রাসায়নিক চিহ্ন বা ‘বায়োমার্কার’ লুক্কায়িত থাকতে পারে। সমতল ভূমি হওয়ায় নভোযান অবতরণের জন্য এটি যেমন নিরাপদ, তেমনি পর্যাপ্ত সৌরশক্তি ব্যবহারের সুযোগ থাকায় এই অঞ্চলটিকেই পৃথিবীর বিকল্প হিসেবে বেছে নেওয়ার কথা ভাবছে ইতালিয়ান স্পেস এজেন্সি ও মিসিসিপি মিনারেল রিসোর্সেস ইনস্টিটিউট। এই আবিষ্কারের ফলে মঙ্গলে মানব কলোনি গড়ার লক্ষ্য এখন আর কেবল সায়েন্স ফিকশনের গল্পে সীমাবদ্ধ থাকছে না।


১৩ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরের আদি নক্ষত্র এবং মহাবিশ্বের শৈশব দেখছে নাসা

প্রযুক্তি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ ডিসেম্বর ২৫ ২১:০৭:২৬
১৩ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরের আদি নক্ষত্র এবং মহাবিশ্বের শৈশব দেখছে নাসা
ছবি : সংগৃহীত

মহাবিশ্বের সৃষ্টির সূচনাপর্ব কেমন ছিল তা নিয়ে বিজ্ঞানীদের কৌতূহলের শেষ নেই। সেই কৌতূহল নিরসনে এবার এক অভাবনীয় মাইলফলক স্পর্শ করেছে নাসার জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন যে তাঁরা মহাবিশ্বের একদম শুরুর দিকের বা প্রথম প্রজন্মের নক্ষত্রগুলোর প্রমাণ পেয়েছেন যারা ‘পপুলেশন থ্রি’ বা ‘পপ থ্রি’ নামে পরিচিত। পৃথিবী থেকে প্রায় ১৩ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত ‘এলএপিওয়ান-বি’ নামক একটি গ্যালাক্সিতে এই আদি নক্ষত্রগুলোর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া গেছে। সম্প্রতি দ্য অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল লেটারসে এই সংক্রান্ত একটি চাঞ্চল্যকর গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে।

জ্যোতির্বিজ্ঞানী এলি বিসবালের নেতৃত্বে একদল গবেষক জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের শক্তিশালী ইনফ্রারেড স্পেকট্রাম বিশ্লেষণ করে এই প্রাচীন নক্ষত্রগুলোর সন্ধান পেয়েছেন। এই নক্ষত্রগুলো অত্যন্ত উত্তপ্ত এবং এগুলো থেকে তীব্র অতিবেগুনি রশ্মি নির্গত হচ্ছে যা ভরের দিক থেকে আমাদের সূর্যের চেয়ে প্রায় ১০০ গুণ বড় হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে যে ‘এলএপিওয়ান-বি’ গ্যালাক্সিটি আদি নক্ষত্র গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় তাত্ত্বিক শর্তগুলো পূরণ করে। বিশেষ করে এই পরিবেশে হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম ছাড়া অন্য কোনো ধাতব পদার্থের উপস্থিতি প্রায় নেই বললেই চলে যা আদি মহাবিশ্বের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য।

এলি বিসবাল এই আবিষ্কারকে বিজ্ঞানের ইতিহাসের এক যুগান্তকারী মুহূর্ত হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি জানান যে মহাকর্ষীয় লেন্সিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রাপ্ত ১০০ গুণ বিবর্ধন এবং জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের অসামান্য সংবেদনশীলতা না থাকলে এই আদিম নক্ষত্রগুলোকে খুঁজে পাওয়া প্রায় অসম্ভব ছিল। প্রচলিত তত্ত্ব অনুযায়ী মহাবিশ্বের শুরুতে হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম যখন ডার্ক ম্যাটারের সাথে মিলিত হয়েছিল তখনই এই বিশালাকার নক্ষত্রগুলোর জন্ম হয়। ধারণা করা হয় যে এই নক্ষত্রগুলো আমাদের সূর্যের চেয়ে কয়েক লক্ষ গুণ বেশি ভারী এবং কয়েকশ কোটি গুণ বেশি উজ্জ্বল হতে পারে।

বিজ্ঞানীদের মতে এই প্রথম প্রজন্মের নক্ষত্রগুলোই সম্ভবত পরবর্তী বিশাল গ্যালাক্সিগুলোর মূল ভিত্তি হিসেবে কাজ করেছে। বর্তমানে গবেষকরা পপুলেশন থ্রি থেকে পরবর্তী প্রজন্মের নক্ষত্র বা পপুলেশন টু-তে পরিবর্তনের প্রক্রিয়াটি আরও গভীরভাবে বোঝার চেষ্টা করছেন। মহাকাশ বিজ্ঞানের ইতিহাসে এই আবিষ্কার কেবল শুরু মাত্র এবং সামনের দিনগুলোতে মহাকর্ষীয় লেন্সিং পদ্ধতি ব্যবহার করে মহাবিশ্বের প্রথম দিকের আরও অনেক রহস্যময় জগত ও নক্ষত্ররাজির সন্ধান পাওয়া সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে।


ভারতের 'বাহুবলী' রকেটের কাঁধে চড়ে মহাকাশ জয়

প্রযুক্তি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ ডিসেম্বর ২৪ ২০:৫৪:৩৩
ভারতের 'বাহুবলী' রকেটের কাঁধে চড়ে মহাকাশ জয়
ইতিহাসে সবচেয়ে ভারী স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ দেখলো বিশ্ব (সংগৃহীত ছবি)

ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো) বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) সকালে তাদের সবচেয়ে ভারী এবং শক্তিশালী রকেট এলভিএম৩-এম৬ (LVM3-M6) ব্যবহার করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি যোগাযোগ উপগ্রহ সফলভাবে উৎক্ষেপণ করেছে। ৬ হাজার ১০০ কেজি ওজনের এই 'ব্লুবার্ড ব্লক-২' উপগ্রহটি ভারতের মাটি থেকে উৎক্ষেপিত এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ভারী পেলোড। অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটা থেকে সকাল ৮টা ৫৫ মিনিটে রকেটটি পাড়ি দেয় এবং উৎক্ষেপণের ১৫ মিনিটের মধ্যেই উপগ্রহটিকে নির্দিষ্ট কক্ষপথে স্থাপন করে। ভারতের এই সাফল্যকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মহাকাশ খাতে একটি "গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি" এবং "গর্বের মাইলফলক" হিসেবে অভিহিত করেছেন।

মার্কিন সংস্থা এএসটি স্পেস মোবাইলের তৈরি এই উপগ্রহটি সরাসরি স্মার্টফোনে ৪জি এবং ৫জি ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দিতে সক্ষম। এর বিশেষত্ব হলো, কোনো মোবাইল টাওয়ার ছাড়াই এটি সরাসরি ফোনে নেটওয়ার্ক প্রদান করবে। ইসরোর এই মিশনটি বাণিজ্যিক মহাকাশ বাজারে ভারতের ক্রমবর্ধমান সক্ষমতাকে আবারও বিশ্ব দরবারে প্রমাণ করল। প্রধানমন্ত্রী মোদি বিজ্ঞানীদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন যে, এই সাফল্য গগনযানের মতো ভবিষ্যৎ মহাকাশ অভিযানের ভিতকে আরও শক্তিশালী করেছে। এই উৎক্ষেপণের মাধ্যমে ইসরো তার পূর্ববর্তী ৪ হাজার ৪১০ কেজির উপগ্রহ উৎক্ষেপণের রেকর্ডটিও ভেঙে ফেলেছে।

মহাকাশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, এলভিএম৩ রকেটের এই নির্ভরযোগ্যতা ভারতকে বৈশ্বিক বাণিজ্যিক উৎক্ষেপণ বাজারে বড় অংশীদার হতে সাহায্য করবে। যেখানে মার্কিন এবং ইউরোপীয় সংস্থাগুলোর উৎক্ষেপণ খরচ অনেক বেশি, সেখানে ইসরো অত্যন্ত সাশ্রয়ী মূল্যে ভারী উপগ্রহ মহাকাশে পাঠিয়ে বিশ্বজুড়ে নজর কেড়েছে। এটি ছিল এলভিএম৩ রকেটের ষষ্ঠ সফল অপারেশনাল ফ্লাইট। এই রকেটটি এর আগে চন্দ্রযান-৩ এবং ওয়ানওয়েবের মতো গুরুত্বপূর্ণ মিশনগুলোতেও সফলতার পরিচয় দিয়েছিল। ভারতের এই ক্রমবর্ধমান মহাকাশ শক্তি ২০৪০ সালের মধ্যে চাঁদে ভারতীয় নভোচারী পাঠানোর লক্ষ্যকেও আরও ত্বরান্বিত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সূত্র: এনডিটিভি


হীরার বৃষ্টি এবং হিলিয়ামের মেঘে ঢাকা রহস্যময় এক নতুন গ্রহ  

প্রযুক্তি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ ডিসেম্বর ২৪ ১২:০২:১৩
হীরার বৃষ্টি এবং হিলিয়ামের মেঘে ঢাকা রহস্যময় এক নতুন গ্রহ  
ছবি : সংগৃহীত

সৌরজগতের বাইরে অসীম মহাকাশে বিজ্ঞানীদের নতুন আবিষ্কার পিএসআর জে২৩২২-২৬৫০বি নামক একটি গ্রহ যা সাধারণ গ্রহের চিরাচরিত গোল আকৃতিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে। জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের সাম্প্রতিক পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে যে এই গ্রহটি মূলত লেবু বা আমেরিকান ফুটবলের মতো লম্বাটে ও ডিম্বাকার। মহাকাশ গবেষকদের মতে এটি এখন পর্যন্ত দেখা সবচেয়ে অস্বাভাবিক বহিঃগ্রহগুলোর মধ্যে একটি। গ্রহটি একটি মৃত নক্ষত্র বা পালসারকে কেন্দ্র করে ঘুরছে যা ক্রমাগত শক্তিশালী বিকিরণ ছুড়ে দিয়ে তার চারপাশের পরিবেশকে চরম প্রতিকূল করে তোলে। বিজ্ঞানের ভাষায় এই ধরণের ব্যবস্থাকে 'ব্ল্যাক উইডো পালসার সিস্টেম' বলা হয়।

এই গ্রহের বায়ুমণ্ডল আরও বড় বিস্ময় হয়ে ধরা দিয়েছে বিজ্ঞানীদের কাছে। এখানে পানি বা মিথেনের মতো পরিচিত উপাদানের কোনো অস্তিত্ব নেই। পরিবর্তে এই গ্রহের বায়ুমণ্ডল গঠিত হয়েছে হিলিয়াম এবং বিশুদ্ধ কার্বন দিয়ে। বিজ্ঞানীদের ধারণা এই ঘনীভূত কার্বন কণা জমে সেখানে কালচে মেঘের সৃষ্টি হয় যেখান থেকে গ্রহের বুকে হীরার মতো ক্ষুদ্র কণা ঝরে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এমন বিশুদ্ধ কার্বনভিত্তিক বায়ুমণ্ডল এর আগে মহাবিশ্বের আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি যা এই আবিষ্কারকে জ্যোতির্বিজ্ঞানের ইতিহাসে এক অনন্য মর্যাদা দিয়েছে।

গ্রহটি তার কেন্দ্রীয় পালসার নক্ষত্র থেকে মাত্র ১৬ লাখ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থান করছে যা মহাজাগতিক হিসেবে অত্যন্ত কাছাকাছি। এই তীব্র সান্নিধ্যের কারণেই গ্রহটি মাত্র ৮ ঘণ্টায় একবার তার কক্ষপথ ঘুরে আসে অর্থাৎ সেখানে একদিনের চেয়েও কম সময়ে এক বছর পূর্ণ হয়। পালসারের প্রচণ্ড মাধ্যাকর্ষণ শক্তির চাপে গ্রহটির আকৃতি চ্যাপ্টা এবং লম্বাটে হয়ে গেছে। গ্রহটি 'টাইডালি লকড' অবস্থায় থাকায় এর একটি পাশ সবসময় নক্ষত্রের দিকে মুখ করে থাকে যেখানে তাপমাত্রা প্রায় ৩ হাজার ৭০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত পৌঁছায়। অন্য পাশটি তুলনামূলক শীতল হলেও সেখানে তাপমাত্রা ১ হাজার ২০০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের নিচে নামে না।

গবেষকরা বলছেন যে কীভাবে একটি গ্রহ এমন চরম পরিবেশে টিকে আছে এবং এর বিশুদ্ধ কার্বনভিত্তিক বায়ুমণ্ডল কীভাবে তৈরি হলো তা এখনো বড় রহস্য। এই আবিষ্কার মহাজাগতিক রসায়ন এবং গ্রহের গঠন সম্পর্কে প্রচলিত অনেক ধারণাকে বদলে দিতে পারে। নক্ষত্রের চরম বিকিরণ সত্ত্বেও কীভাবে একটি গ্রহ হীরা ঝরা বায়ুমণ্ডল ধরে রাখতে পারে তা নিয়ে আরও গভীর গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। এই ধরণের রহস্যময় গ্রহের সন্ধান ভবিষ্যতে মহাবিশ্বের আরও অনেক অজানা দুয়ার খুলে দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।


হ্যাকারদের নতুন ফাঁদ: যে নম্বর থেকে কল এলেই আপনি বিপদে পড়বেন

প্রযুক্তি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ ডিসেম্বর ২২ ১৮:১৭:২৫
হ্যাকারদের নতুন ফাঁদ: যে নম্বর থেকে কল এলেই আপনি বিপদে পড়বেন
ছবি : সংগৃহীত

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ‘২৫০ কোটি জিমেইল অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়েছে’ সংক্রান্ত খবরটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং গুজব বলে নিশ্চিত করেছে গুগল কর্তৃপক্ষ। প্রযুক্তি জায়ান্টটি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে যে জিমেইল বা গুগল ক্লাউডের কোনো সার্ভার হ্যাক হয়নি এবং ব্যবহারকারীদের তথ্য সম্পূর্ণ অক্ষত রয়েছে। তবে তারা একটি গুরুতর বিষয়ে সতর্ক করেছে যে যদিও বড় কোনো ডেটা ব্রিচ ঘটেনি কিন্তু ব্যক্তিগত পর্যায়ে হ্যাকাররা জিমেইল ব্যবহারকারীদের লক্ষ্যবস্তু করার হার আশঙ্কাজনকভাবে বাড়িয়ে দিয়েছে। এর মধ্যে অননুমোদিত লগইন প্রচেষ্টা এবং ফোন কলের মাধ্যমে প্রতারণার হার সবচেয়ে বেশি।

হ্যাকাররা এখন অত্যন্ত আধুনিক ও সূক্ষ্ম পদ্ধতিতে জিমেইল ব্যবহারকারীদের ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করছে। বিশেষ করে গুগলের অফিশিয়াল সাপোর্ট নম্বর ‘+১ ৬৫০-২৫৩-০০০০’ স্পুফিং বা নকল করে ফোন কল আসার ঘটনা বাড়ছে। এই প্রক্রিয়ায় কলদাতার ক্যালিফোর্নিয়ান উচ্চারণে সাবলীল ইংরেজিতে নিজেকে গুগলের কর্মী পরিচয় দিয়ে দাবি করে যে ব্যবহারকারীর অ্যাকাউন্টে সন্দেহজনক কার্যক্রম ধরা পড়েছে। এরপর নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে ধাপে ধাপে পাসওয়ার্ড পরিবর্তন বা বিশেষ লিঙ্কে ক্লিক করতে প্রলুব্ধ করা হয়। গুগল স্পষ্টভাবে জানিয়েছে যে তারা কখনোই কোনো ব্যবহারকারীকে ফোন করে পাসওয়ার্ড রিসেট করতে বা অ্যাকাউন্টের সমস্যা সমাধান করতে বলে না।

সাইবার নিরাপত্তা সংস্থা প্রোটনের দেওয়া সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে যে এই ধরণের ফোন কল মূলত ‘সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং’ আক্রমণের একটি অংশ। হ্যাকাররা এমনভাবে কথা বলে যেন ব্যবহারকারী আতঙ্কিত হয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেন এবং অজান্তেই নিজের অ্যাকাউন্টের নিয়ন্ত্রণ হ্যাকারদের হাতে তুলে দেন। রেডিটসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন যে প্রতারকদের কথার ধরন এতটাই বিশ্বাসযোগ্য যে অনেক কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন মানুষও বিভ্রান্ত হয়ে পড়ছেন। বিশেষ করে যারা সরাসরি গুগল অ্যাপের নোটিফিকেশন বা সিকিউরিটি অ্যালার্টে অভ্যস্ত তাদের জন্য এই ধরণের ফোন কল একটি নতুন ধরণের ঝুঁকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সাইবার বিশেষজ্ঞরা বেশ কিছু জরুরি পরামর্শ দিয়েছেন। প্রথমত কোনো অপরিচিত কল বা বার্তার অনুরোধে পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করা যাবে না। অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তা যাচাই করতে সরাসরি ‘সিকিউরিটি’ সেকশনে গিয়ে ‘রিভিউ সিকিউরিটি অ্যাক্টিভিটি’ চেক করতে হবে। দ্বিতীয়ত সাধারণ এসএমএস-ভিত্তিক টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন (2FA) এখন আর যথেষ্ট নিরাপদ নয়। এর পরিবর্তে গুগল অথেন্টিকেটর অ্যাপ বা হার্ডওয়্যার সিকিউরিটি কি ব্যবহার করা অনেক বেশি নিরাপদ। সম্ভব হলে ‘পাসকি’ (Passkey) সক্রিয় করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা যা হ্যাকারদের পক্ষে অ্যাকাউন্ট দখল করা প্রায় অসম্ভব করে তোলে। শক্তিশালী ও অনন্য পাসওয়ার্ড ব্যবহার এবং নিয়মিত সিকিউরিটি চেকআপ জিমেইল অ্যাকাউন্টকে নিরাপদ রাখার অন্যতম প্রধান হাতিয়ার।

সূত্র : ফোর্বস ও সংবাদ প্রতিদিন


তরঙ্গের প্রকারভেদ ও বৈজ্ঞানিক আচরণে সহজ ব্যাখ্যা

প্রযুক্তি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ ডিসেম্বর ২১ ০৯:১৫:৩৬
তরঙ্গের প্রকারভেদ ও বৈজ্ঞানিক আচরণে সহজ ব্যাখ্যা
ছবি: সংগৃহীত

পদার্থবিজ্ঞানে তরঙ্গ (Wave) বলতে বোঝায় এমন একটি সুশৃঙ্খল প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে কোনো অস্থিরতা বা কম্পন এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে পানির ওপর ভেসে চলা ঢেউ সবচেয়ে পরিচিত উদাহরণ হলেও শব্দ, আলো এমনকি অণু ও উপ-অণুর আচরণেও তরঙ্গের বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। জ্যোতির্বিদ্যার শুরু হয়েছিল দৃশ্যমান আলোর মাধ্যমে, পরে ধীরে ধীরে তড়িৎচৌম্বকীয় বর্ণালির সব অংশেই তরঙ্গের ব্যবহার বিস্তৃত হয়েছে।

সহজ ভাষায়, একটি তরঙ্গে নির্দিষ্ট সময় পরপর কম্পন ঘটে, যার একটি নির্দিষ্ট কম্পাঙ্ক ও তরঙ্গদৈর্ঘ্য থাকে। শব্দের মতো যান্ত্রিক তরঙ্গ চলাচলের জন্য মাধ্যমের প্রয়োজন হলেও আলো বা তড়িৎচৌম্বকীয় তরঙ্গ শূন্যস্থানেও চলতে পারে। তরঙ্গের বিস্তার অনেকটাই নির্ভর করে যে মাধ্যমে তা চলাচল করছে তার ভৌত বৈশিষ্ট্যের ওপর।

তরঙ্গের প্রকারভেদ ও গঠনগত বৈশিষ্ট্য

তরঙ্গ মূলত দুই ধরনের হয় অনুদৈর্ঘ্য (Longitudinal) এবং অনুপ্রস্থ (Transverse)। পানির ঢেউ অনুপ্রস্থ তরঙ্গের উদাহরণ, যেখানে পৃষ্ঠ উপরে-নিচে ওঠানামা করে। অপরদিকে শব্দ তরঙ্গ অনুদৈর্ঘ্য প্রকৃতির, যেখানে মাধ্যমের কণাগুলো পর্যায়ক্রমে সংকোচন ও প্রসারণের মধ্য দিয়ে যায়।

অনুপ্রস্থ তরঙ্গের সর্বোচ্চ বিন্দুকে বলা হয় শিখর (Crest) এবং সর্বনিম্ন বিন্দুকে খাত (Trough)। আর অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গে সংকোচন ও প্রসারণ এই শিখর ও খাতের সমতুল্য। এক শিখর থেকে পরবর্তী শিখরের দূরত্বই হলো তরঙ্গদৈর্ঘ্য, আর তরঙ্গের উচ্চতাকে বলা হয় প্রশস্ততা (Amplitude)। নির্দিষ্ট সময়ে কতটি কম্পন ঘটে, সেটিই কম্পাঙ্ক (Frequency)। তরঙ্গের বেগ নির্ণয় করা যায় তরঙ্গদৈর্ঘ্য ও কম্পাঙ্কের গুণফল দিয়ে।

তরঙ্গের বিস্তার ও শক্তি

তরঙ্গ অত্যন্ত ক্ষুদ্র কম্পনের মাধ্যমেও বহু দূর পর্যন্ত শক্তি বহন করতে পারে। উদাহরণ হিসেবে বজ্রপাতের শব্দ কয়েক কিলোমিটার দূর থেকেও শোনা যায়, যদিও বাতাসে সেই কম্পন খুব সামান্য। অর্থাৎ, তরঙ্গের শক্তি অনেক দূর ছড়িয়ে পড়লেও মাধ্যমের কণাগুলোর প্রকৃত স্থানান্তর খুবই সীমিত থাকে।

তরঙ্গের আচরণ: প্রতিফলন, প্রতিসরণ ও ব্যতিচার

তরঙ্গ চলার পথে নানা ধরনের আচরণ প্রদর্শন করে। প্রতিফলনে (Reflection) তরঙ্গ কোনো বাধায় আঘাত পেয়ে ফিরে আসে এবং আপতন কোণ ও প্রতিফলন কোণ সমান হয়। প্রতিসরণে (Refraction) তরঙ্গ ভিন্ন মাধ্যমে প্রবেশ করলে তার গতি পরিবর্তিত হয় এবং সে কারণে দিকও বাঁক নেয়। শব্দ ও আলোর ক্ষেত্রে এই ঘটনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

অন্যদিকে, ব্যতিচার (Diffraction) ঘটে যখন তরঙ্গ কোনো ক্ষুদ্র বাধা বা ছোট ছিদ্র অতিক্রম করে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এই কারণে শব্দ দেয়ালের আড়ালেও শোনা যায় এবং আলো সরু ফাঁক দিয়ে প্রবেশ করেও বিস্তৃত হতে পারে।

তরঙ্গের হস্তক্ষেপ ও ডপলার প্রভাব

যখন দুটি বা ততোধিক তরঙ্গ একত্রিত হয়, তখন তারা একে অপরকে শক্তিশালী বা দুর্বল করতে পারে একে বলা হয় হস্তক্ষেপ (Interference)। একই দশায় থাকা তরঙ্গ একত্রে মিলিত হলে শক্তি বাড়ে, আর বিপরীত দশায় মিলিত হলে একে অপরকে বাতিল করে দিতে পারে।

তরঙ্গ উৎস বা পর্যবেক্ষক চলমান হলে তরঙ্গের কম্পাঙ্ক পরিবর্তিত হয়, যা পরিচিত ডপলার প্রভাব (Doppler Effect) নামে। দৈনন্দিন জীবনে চলন্ত গাড়ির হর্নের শব্দ কাছাকাছি আসলে তীক্ষ্ণ শোনায় এবং দূরে গেলে ভারী শোনায় এটি ডপলার প্রভাবের সহজ উদাহরণ। জ্যোতির্বিজ্ঞানে এই প্রভাবের মাধ্যমেই মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।

স্থির তরঙ্গ ও অনুনাদ

যখন তরঙ্গ কোনো সীমাবদ্ধ স্থানে চলাচল করে এবং প্রতিফলন ও হস্তক্ষেপের ফলে নির্দিষ্ট বিন্যাস তৈরি হয়, তখন স্থির তরঙ্গ (Standing Wave) গঠিত হয়। এতে কিছু বিন্দুতে কোনো কম্পন থাকে না, যেগুলোকে বলা হয় নোড (Node)। আর যেখানে কম্পন সর্বাধিক, সেগুলোকে বলা হয় অ্যান্টিনোড (Antinode)। স্থির তরঙ্গের এই বৈশিষ্ট্য বাদ্যযন্ত্র, শব্দ প্রকৌশল এবং আধুনিক প্রযুক্তিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

সূত্র: ব্রিটানিকা

পাঠকের মতামত:

ব্যক্তিগত দায় বনাম প্রাতিষ্ঠানিক দায়: দায়মুক্তির এক রাজনৈতিক সংস্কৃতি

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের ঘটনা কাগজে পড়লে প্রথমে মনে হয় এটা যেন কোনো যুদ্ধের খবর। এক তরুণকে বিদ্যুতের খুঁটিতে বেঁধে হাত–পা প্রায়... বিস্তারিত