নেতানিয়াহুর টার্গেট এবার ইরাক

জাতিসংঘের ৮০তম সাধারণ অধিবেশনে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তার ভাষণের শুরুতেই ইরান ও আঞ্চলিক প্রতিরোধ আন্দোলনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন। একইসঙ্গে তিনি ইরাকি প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে সরাসরি হামলার হুমকি দেন এবং প্রকাশ্যে তাদের লক্ষ্যবস্তু করার ঘোষণা করেন।
এই হুমকিকে ইরাকের সার্বভৌমত্বের স্পষ্ট লঙ্ঘন হিসেবে দেখছে বাগদাদ। ইরাকের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফুয়াদ হুসেইন সতর্ক করে বলেছেন, “ইরাকের যে কোনো নাগরিকের ওপর হামলা গোটা জাতির ওপর আক্রমণ হিসেবে বিবেচিত হবে।”
ইসরায়েলের সুদূরপ্রসারী ও ‘ডেভিড করিডোর’ পরিকল্পনা
বিশ্লেষক মোহাম্মদ বাঘের হেইদারি জানান, নেতানিয়াহুর এই বক্তব্য নতুন নয়। ইসরায়েলের ইরাক সংক্রান্ত নীতির দুটি দিক রয়েছে—আঞ্চলিক এবং অভ্যন্তরীণ।
আঞ্চলিক লক্ষ্য: ইসরায়েল গোটা অঞ্চলজুড়ে প্রভাব বিস্তার করতে ‘গ্রেটার মিডল ইস্ট’ প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং কথিত ‘ডেভিড করিডোর’ গঠনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এই করিডোর সিরিয়ার একটি বড় অংশ থেকে শুরু করে ইরাকের এরবিল ও সুলাইমানিয়া হয়ে পশ্চিমাঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত।
সামরিক ফ্রন্ট: হেইদারি ব্যাখ্যা করেন, ইসরায়েল আগেই ঘোষণা করেছিল যে তারা সাতটি ফ্রন্টে সামরিকভাবে সক্রিয় হবে। এর মধ্যে গাজা, পশ্চিম তীর, লেবানন, সিরিয়া, ইয়েমেন ও ইরানসহ ছয়টিতে ইতোমধ্যেই অভিযান চালিয়েছে। একমাত্র বাকি ছিল ইরাক, যেটিতে ঢোকার ঘোষণা তারা আগেই দিয়েছিল।
ইরাকের স্থিতিশীলতা নষ্টের চেষ্টা
বিশ্লেষকদের মতে, নেতানিয়াহুর এই হুমকি ইরাকের আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে বিঘ্নিত করার কৌশল হিসেবেও আসতে পারে। কারণ, সমন্বয় ফ্রেমওয়ার্ক জোট নির্বাচনে জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি, যা ইসরায়েলের জন্য অস্বস্তিকর। যদি নির্বাচন ব্যাহত হয়, বর্তমান সরকার সীমিত ক্ষমতাসম্পন্ন অন্তর্বর্তী সরকারে পরিণত হবে, যা দেশে নতুন অস্থিতিশীলতার জন্ম দেবে।
এক বছর আগে ইরাকি প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শিয়া আল-সুদানির একটি সমঝোতা হয়েছিল। গাজায় ইসরায়েলি হামলার সময় এই গোষ্ঠীগুলো ‘ইসলামিক রেজিস্ট্যান্স অব ইরাক’ নামে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ড্রোন ও মিসাইল দিয়ে ইসরায়েলকে লক্ষ্যবস্তু করেছিল। বিশ্লেষকদের মতে, এই হুমকিতে ইরাকি প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলো বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে, এমন সম্ভাবনা কম।
পারমাণবিক শক্তি হবে সীমাহীন: কিম জং উনের নতুন নির্দেশে কাঁপছে বিশ্ব
বিশ্ব রাজনীতির উত্তপ্ত মঞ্চে দাঁড়িয়ে উত্তর কোরিয়ার একনায়ক কিম জং উন আবারও তাঁর সমর শক্তির জানান দিলেন। রোববার (২৮ ডিসেম্বর) পিয়ংইয়ংয়ের কাছে সুনান এলাকা থেকে দীর্ঘপাল্লার কৌশলগত ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের একটি বড় ধরণের পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ সরাসরি তদারকি করেন তিনি। উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা কেসিএনএ জানিয়েছে, কিম জং উন কেবল এই পরীক্ষার সাফল্য দেখে সন্তোষ প্রকাশই করেননি, বরং দেশের পারমাণবিক যুদ্ধক্ষমতাকে ‘সীমাহীন ও ধারাবাহিকভাবে’ বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন। ক্ষেপণাস্ত্রগুলো কোরীয় উপদ্বীপের পশ্চিম দিকের সমুদ্রপথ ধরে উড়ে গিয়ে নিখুঁতভাবে নির্ধারিত লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে।
কিম জং উন স্পষ্ট করে জানিয়েছেন যে, বর্তমান আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক প্রতিরোধক্ষমতা নিয়মিত পরীক্ষা করা একটি ‘দায়িত্বশীল পদক্ষেপ’। তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব রক্ষায় এবং পারমাণবিক যুদ্ধশক্তি আরও শক্তিশালী করতে সব ধরণের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। এই ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার পাশাপাশি কিম একটি নির্মাণাধীন পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিনও পরিদর্শন করেন। দক্ষিণ কোরিয়ার পারমাণবিক সাবমেরিন তৈরির পরিকল্পনাকে উত্তর কোরিয়ার নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি উল্লেখ করে তিনি জানান, সিউলের প্রতিটি পদক্ষেপের দাঁতভাঙা জবাব দেওয়া হবে।
দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনী ইয়োনহাপ সংবাদ সংস্থাকে জানিয়েছে, পিয়ংইয়ংয়ের এই তৎপরতা অত্যন্ত উদ্বেগের। তারা সতর্ক করেছে যে, নতুন বছরের শুরুতে ক্ষমতাসীন ওয়ার্কার্স পার্টির গুরুত্বপূর্ণ কংগ্রেসের আগে উত্তর কোরিয়া আরও বড় ধরণের উস্কানিমূলক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালাতে পারে। বিশ্লেষকদের মতে, আগামী পাঁচ বছরের উন্নয়ন পরিকল্পনা ও প্রতিরক্ষা কৌশল নির্ধারণের আগে কিম জং উনের এই কঠোর অবস্থান আদতে আন্তর্জাতিক মহলে নিজের অবস্থান আরও দৃঢ় করার একটি প্রয়াস।
তথ্যসূত্র : আলজাজিরা।
সিরিয়ার সার্বভৌমত্বে ইসরায়েলের বড় আঘাত
সিরিয়ার উত্তর কুনেইত্রা প্রদেশের তারাঞ্জা গ্রামে ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর অনুপ্রবেশের ফলে ওই অঞ্চলের পরিস্থিতি এখন অগ্নিগর্ভ। সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম সানার প্রতিবেদন অনুযায়ী, শনিবার ছয়টি উন্নত সামরিক যান নিয়ে গঠিত একটি ইসরায়েলি ইউনিট তুলুল আল-হুমর অঞ্চল দিয়ে সিরিয়ার অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। এই সামরিক বহরটি বেইত জন্ন ও হাদার এলাকার মধ্যবর্তী পথ অতিক্রম করে সরাসরি তারাঞ্জা গ্রামে ঢুকে পড়ে এবং সেখান থেকে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ জাবাথা আল-খাশাব শহরের উপকণ্ঠের দিকে অগ্রসর হতে থাকে।
তদন্তকারী সূত্র ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ইসরায়েলি বাহিনী জাবাথা আল-খাশাবের দক্ষিণ প্রান্তে একটি উঁচু টিলায় অবস্থান নিয়েছে, যেখান থেকে পুরো শহরটির ওপর নজরদারি চালানো সম্ভব। এই অনুপ্রবেশের সময় আকাশজুড়ে ইসরায়েলি ড্রোনের কড়া নজরদারি লক্ষ্য করা গেছে। পরবর্তীতে ইসরায়েলি বাহিনী উফানিয়া গ্রামের দিকে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করে। এর মাত্র একদিন আগেই দক্ষিণ কুনেইত্রার পূর্ব তেল আল-আহমার এলাকায় তিনটি ভারী গোলা এবং মাঝারি পাল্লার মেশিনগান থেকে গুলিবর্ষণ করে ইসরায়েলি সেনারা, যা এই আগ্রাসনের পূর্বপ্রস্তুতি ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, ১৯৭৪ সালের ডিসএঙ্গেজমেন্ট এগ্রিমেন্ট বা অনাক্রমণ চুক্তি লঙ্ঘন করে ইসরায়েল ধারাবাহিকভাবে সিরিয়ার ভূখণ্ডে তাদের নিয়ন্ত্রণ বাড়ানোর চেষ্টা করছে। বিশেষ করে ২০২৪ সালের শেষে বাশার আল-আসাদ সরকারের পতনের পর থেকে সিরিয়ায় ইসরায়েলি হস্তক্ষেপ কয়েক গুণ বেড়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ইসরায়েলি বাহিনী প্রতিদিন সিরিয়ার ভেতরে ঢুকে ঘরবাড়ি তল্লাশি করছে এবং বুলডোজার দিয়ে জমি দখল করে নতুন নতুন চেকপোস্ট বসাচ্ছে। এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কুনেইত্রার বিভিন্ন শহরে স্থানীয়রা বিক্ষোভ করলেও ইসরায়েলি বাহিনী তাদের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখেছে।
সিরিয়ার নতুন প্রশাসন এই অনুপ্রবেশকে দেশের সার্বভৌমত্বের ওপর নগ্ন হস্তক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে নালিশ জানিয়েছে। অন্যদিকে, ইসরায়েলের পক্ষ থেকে এই অভিযানকে 'নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ' ও 'ইরান সমর্থিত গোষ্ঠীর তৎপরতা বন্ধের' অজুহাত দেওয়া হলেও সাধারণ মানুষের জানমালের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে। কুনেইত্রার এই অস্থিতিশীলতা পুরো অঞ্চলে একটি বড় ধরনের সশস্ত্র সংঘাতের সূত্রপাত ঘটাতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
নাইজেরিয়ায় ট্রাম্পের নির্দেশে মার্কিন বিমান হামলা
নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর ক্রমবর্ধমান সহিংসতার প্রেক্ষাপটে দেশটিতে বড় ধরনের বিমান হামলা চালিয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনী। নাইজেরিয়া সরকারের সরাসরি অনুরোধে এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে এই অভিযান পরিচালিত হয়। নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যালে’ দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প জানান যে কমান্ডার ইন চিফ হিসেবে তাঁর আদেশে নাইজেরিয়ায় আইএস সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে এই ‘শক্তিশালী ও প্রাণঘাতী’ হামলা চালানো হয়েছে। ট্রাম্পের দাবি, এই জঙ্গিরা নিরীহ মানুষ, বিশেষ করে খ্রিষ্টানদের লক্ষ্য করে এমন ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছিল যা আধুনিক ইতিহাসে বিরল।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর আফ্রিকা কমান্ড (আফ্রিকম) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে যে নাইজেরিয়ার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পূর্ণ সমন্বয়ের মাধ্যমে সকোতো অঙ্গরাজ্যে আইএসের একাধিক ঘাঁটিতে এই হামলা চালানো হয়। পেন্টাগন থেকে প্রকাশিত একটি ভিডিওতে দেখা গেছে যে একটি মার্কিন যুদ্ধজাহাজ থেকে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ এই অভিযানের সফলতায় নাইজেরিয়া সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে এক্সে লিখেছেন— ‘আরও আসছে’। বিশ্লেষকরা মনে করছেন যে গত অক্টোবরে খ্রিষ্টানদের নিরাপত্তা নিয়ে ট্রাম্প যে সামরিক হস্তক্ষেপের হুমকি দিয়েছিলেন, এটি তারই চূড়ান্ত বাস্তবায়ন।
নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান নিরাপত্তা সহযোগিতার অংশ হিসেবে এই নির্ভুল বিমান হামলা চালানো হয়েছে। এতে গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়ের মাধ্যমে জঙ্গি গোষ্ঠীর অবস্থান শনাক্ত করা সম্ভব হয়। তবে নাইজেরিয়া সরকারের পক্ষ থেকে কিছুটা ভিন্ন সুরও পাওয়া গেছে। তারা জানিয়েছে যে দেশটিতে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো মুসলিম ও খ্রিষ্টান—উভয় সম্প্রদায়কেই সমানভাবে লক্ষ্যবস্তু করে। শুধুমাত্র একটি বিশেষ ধর্মের ওপর জোর দেওয়া হলে দেশের জটিল নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হতে পারে বলে তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।
আফ্রিকার এই জনবহুল দেশটির উত্তরাঞ্চল দীর্ঘকাল ধরে ইসলামপন্থী বিদ্রোহীদের অস্থিরতায় ভুগছে। হামলার দিনই নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের একটি মসজিদে আত্মঘাতী বোমা হামলায় পাঁচজন নিহত এবং ৩৫ জন আহত হয়েছেন। এই অস্থিতিশীলতার মধ্যেই প্রেসিডেন্ট বোলা টিনুবু বড়দিনের বার্তায় সব ধর্মের মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সিরিয়ার পর নাইজেরিয়ায় আইএসের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের এই বড় ধরনের সামরিক পদক্ষেপ ইঙ্গিত দিচ্ছে যে ট্রাম্প প্রশাসন বিশ্বজুড়ে জঙ্গি দমনে আগের চেয়েও অনেক বেশি আক্রমণাত্মক নীতি গ্রহণ করছে।
পুতিনের মৃত্যু নিয়ে জেলেনস্কির বিস্ফোরক উক্তি
পবিত্র বড়দিনের উৎসবের আবহেও থামেনি ইউক্রেন-রাশিয়া রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। বড়দিন উপলক্ষে দেশবাসীর উদ্দেশে দেওয়া এক বিশেষ শুভেচ্ছা বার্তায় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সরাসরি নাম উচ্চারণ না করে তাঁর চরম পরিণতি বা মৃত্যু কামনা করেছেন। জেলেনস্কি তাঁর বার্তায় বলেন যে ইউক্রেনীয়দের জন্য রাশিয়া অবর্ণনীয় দুর্ভোগ বয়ে আনলেও তাঁরা ইউক্রেনীয়দের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ—পরস্পরের প্রতি বিশ্বাস এবং ঐক্য কেড়ে নিতে পারেনি। তিনি দাবি করেন যে রাশিয়া ভূমি দখল করতে পারলেও ইউক্রেনীয়দের মন ও সাহস জয় করতে ব্যর্থ হয়েছে।
জেলেনস্কি তাঁর বক্তব্যে এক গভীর আক্ষেপ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন যে আজ প্রতিটি ইউক্রেনীয় নাগরিকের মনে একটিই স্বপ্ন এবং একটিই অভিন্ন প্রত্যাশা তা হলো— ‘তাঁর (পুতিনের) ধ্বংস বা মৃত্যু হোক’। বড়দিনের ঠিক আগ মুহূর্তে ইউক্রেনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে রাশিয়া ব্যাপক মিসাইল ও ড্রোন হামলা চালায়। এতে অন্তত তিনজন বেসামরিক নাগরিক প্রাণ হারান এবং ইউক্রেনের বিশাল একটি অংশ বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে অন্ধকারে ডুবে যায়। উৎসবের দিনে এমন নৃশংস হামলার কঠোর নিন্দা জানিয়ে জেলেনস্কি রাশিয়াকে ‘ধর্মহীন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
রুশ বাহিনীর এই সাম্প্রতিক হামলার চিত্র তুলে ধরে ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট বলেন যে বড়দিনের আগের সন্ধ্যায় রাশিয়া আবারও বিশ্ববাসীর কাছে নিজেদের প্রকৃত স্বরূপ উন্মোচন করেছে। রুশ সেনারা শত শত শহীদ ড্রোন, ব্যালিস্টিক মিসাইল এবং ভয়ংকর কিনঝাল মিসাইল দিয়ে হামলা চালিয়েছে। ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি পুতিনের নির্দেশে শুরু হওয়া এই পূর্ণমাত্রার সামরিক অভিযানের প্রায় তিন বছর পূর্ণ হতে চলেছে। এই দীর্ঘ সময়ে ইউক্রেনের প্রায় ২০ শতাংশ অঞ্চল দখল করে নিয়েছে রুশ বাহিনী, তবে জেলেনস্কি তাঁর বার্তায় জয়ী হওয়ার দৃঢ় সংকল্প পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
বিশ্লেষকদের মতে জেলেনস্কির এই সরাসরি ‘ধ্বংস’ কামনার সুর ইঙ্গিত দিচ্ছে যে যুদ্ধ এখন এক চরম সন্ধিক্ষণে পৌঁছেছে যেখানে সমঝোতার পথ ক্রমেই সংকুচিত হচ্ছে। রাশিয়ার ক্রমাগত বিমান হামলার মুখেও ইউক্রেনীয়দের প্রতিরোধের শক্তিই এখন কিয়েভের একমাত্র ভরসা। জেলেনস্কি বিশ্বাস করেন যে আকাশপথে বোমা হামলা চালিয়ে ঘরবাড়ি ধ্বংস করা গেলেও ইউক্রেনের স্বাধীনতার চেতনাকে দমানো অসম্ভব। বড়দিনের এই বার্তা কেবল একটি আনুষ্ঠানিক শুভেচ্ছা নয় বরং বিশ্বমঞ্চে পুতিন প্রশাসনের বিরুদ্ধে এক তীব্র কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রতিবাদ হিসেবেও দেখা হচ্ছে।
তথ্যসূত্র: এনডিটিভি
নাইজেরিয়ায় রক্তাক্ত মাগরিব: নামাজের সিজদায় থাকা অবস্থায় বিস্ফোরণ
নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় বর্নো প্রদেশের রাজধানী মাইদুগুরিতে মাগরিবের নামাজের সময় এক আত্মঘাতী বা আইইডি (ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) হামলায় অন্তত সাতজন মুসল্লি নিহত হয়েছেন। বুধবার সন্ধ্যায় গাম্বোরু মার্কেট এলাকার একটি মসজিদে এই বিস্ফোরণ ঘটে। প্রাদেশিক পুলিশের মুখপাত্র নাহুম দাসো জানিয়েছেন যে ভয়াবহ এই বিস্ফোরণে ঘটনাস্থলেই বেশ কয়েকজন প্রাণ হারান এবং অন্তত ৩৫ জন গুরুতর আহত হয়েছেন। আহতদের স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে যাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।
হামলার প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় মিলিশিয়া নেতারা জানিয়েছেন যে বিস্ফোরণের সময় মসজিদটি মুসল্লিতে কানায় কানায় পূর্ণ ছিল। মাওলানা আবুনা ইউসুফ নামক এক ইমাম এএফপিকে জানিয়েছেন যে নিহতের সংখ্যা আটজনে পৌঁছাতে পারে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও চিত্রে দেখা গেছে যে বিস্ফোরণের পরপরই মার্কেট এলাকায় ব্যাপক ধুলোবালি ও ধোঁয়া ওড়ছে এবং আতঙ্কিত মানুষজন প্রাণভয়ে দিকবিদিক ছুটোছুটি করছেন। হামলার পরপরই পুলিশের বোমা নিষ্ক্রিয়কারী একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে এলাকাটি ঘিরে ফেলে এবং তল্লাশি শুরু করে।
মাইদুগুরি শহরটি প্রায় দুই দশক ধরে কুখ্যাত জঙ্গি সংগঠন বোকো হারাম এবং আইএস পশ্চিম আফ্রিকা প্রদেশের (আইএসডব্লিউএপি) প্রধান লক্ষ্যবস্তু হিসেবে পরিচিত। ২০০৯ সালে এই অঞ্চলে ইসলামি খিলাফত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বোকো হারামের সশস্ত্র অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ৪০ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন এবং ২০ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। যদিও ২০২১ সালের পর থেকে মাইদুগুরি শহরটি তুলনামূলক শান্ত ছিল তবে গত রাতের এই হামলা ফের বড় ধরণের জঙ্গি তৎপরতার ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করছেন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা।
এখন পর্যন্ত কোনো জঙ্গি গোষ্ঠী এই ন্যাক্কারজনক হামলার দায় স্বীকার করেনি। তবে বর্নো প্রদেশে জনাকীর্ণ স্থানে এ ধরণের হামলার ধরণটি মূলত বোকো হারামের চিরচেনা কৌশল। জাতিসংঘের হিসেবে গত ১৫ বছরে এই সহিংসতা নাইজেরিয়ার সীমানা ছাড়িয়ে পার্শ্ববর্তী নাইজার, চাদ ও ক্যামেরুনেও ছড়িয়ে পড়েছে। দীর্ঘ সামরিক অভিযানের পরও এসব সশস্ত্র গোষ্ঠী জনবহুল এলাকাগুলোতে প্রাণঘাতী হামলা চালানোর সক্ষমতা ধরে রাখায় সাধারণ মানুষের মধ্যে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ পুরো এলাকা জুড়ে কড়া নিরাপত্তা জারি করেছে এবং হামলাকারীদের শনাক্ত করতে তদন্ত শুরু করেছে।
ইমরান খানের দলের সাথে শর্তসাপেক্ষ সংলাপে রাজি শাহবাজ শরিফ
পাকিস্তানের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অস্থিরতা নিরসনে এক বড় পদক্ষেপ হিসেবে বিরোধী দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ বা পিটিআই-এর সাথে আলোচনার আহ্বান গ্রহণ করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) রাজধানী ইসলামাবাদে ফেডারেল মন্ত্রিসভার এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বক্তব্য দেওয়ার সময় তিনি এই ঘোষণা দেন। তবে এই সংলাপের জন্য তিনি পিটিআই-এর সামনে বিশেষ শর্ত জুড়ে দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন যে বিরোধী দল যদি দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতায় সত্যিকার অর্থে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয় এবং সংলাপে আন্তরিক থাকে তবেই সরকার আলোচনায় বসতে প্রস্তুত রয়েছে।
মন্ত্রিসভার বৈঠকে শাহবাজ শরিফ স্পষ্ট করে বলেন যে তিনি ব্যক্তিগতভাবে বা সরকারের পক্ষ থেকে বিরোধীদের সাথে আলোচনা এগিয়ে নিতে চান। এর আগেও তিনি একাধিকবার ইমরান খানের দলের প্রতি আলোচনার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। তবে এবার তিনি কড়া সতর্কবার্তা দিয়ে উল্লেখ করেছেন যে সংলাপের নামে কোনো ধরণের অবৈধ দাবি কিংবা সরকারকে ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা কোনোভাবেই গ্রহণ করা হবে না। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন যে এই সংলাপ সফল হলে পাকিস্তানে গত কয়েক বছর ধরে চলা চরম উত্তেজনা প্রশমিত হতে পারে এবং আইনের শাসন ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ পুনরুদ্ধারে সহায়ক হতে পারে।
বৈঠকে কেবল রাজনীতি নয় বরং দেশের ভঙ্গুর অর্থনীতি পুনর্গঠনেও দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন পাক প্রধানমন্ত্রী। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে অর্থনৈতিক সংস্কারের জন্য নেওয়া প্রতিটি ইতিবাচক উদ্যোগকে তিনি স্বাগত জানাবেন তবে তা অবশ্যই জাতীয় স্বার্থে হতে হবে। সংস্কারের অংশ হিসেবে পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্স বা পিআইএ-এর বেসরকারিকরণ প্রক্রিয়া শুরুকে তিনি এক ঐতিহাসিক ধাপ হিসেবে অভিহিত করেন। এই প্রক্রিয়ায় শতভাগ স্বচ্ছতা বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়ে শাহবাজ শরিফ জানান যে সর্বোচ্চ দরদাতাকেই সফল ঘোষণা করা হবে যাতে জনগণের অর্থের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত হয়।
বর্তমানে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে পিটিআই এবং সরকারের মধ্যে যে স্নায়ুযুদ্ধ চলছে তা নিরসনে এই সংলাপের প্রস্তাবকে একটি ইতিবাচক মোড় হিসেবে দেখছে আন্তর্জাতিক মহল। শাহবাজ শরিফ পুনরায় স্মরণ করিয়ে দেন যে দেশের উন্নয়ন এবং স্থিতিশীলতার স্বার্থে সরকার আলোচনার পথ সবসময় খোলা রেখেছে। এখন বল মূলত পিটিআই-এর কোর্টে যে তারা শাহবাজের শর্ত মেনে সংলাপে ফিরবে কি না। যদি দুই পক্ষ একটি সাধারণ ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারে তবে পাকিস্তানের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ত্বরান্বিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তুরস্কে বিমান বিধ্বস্তে লিবিয়ার সেনাপ্রধান নিহত
লিবিয়ার সেনাপ্রধান মুহাম্মদ আলী আহমেদ আল-হাদ্দাদ তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারার কাছে এক ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার রাতে আঙ্কারার এসেনবোগা বিমানবন্দর থেকে লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলির উদ্দেশে উড্ডয়নের অল্প সময়ের মধ্যেই তাকে বহনকারী প্রাইভেট জেটটি বিধ্বস্ত হয়। এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় সেনাপ্রধান আল-হাদ্দাদসহ আরও চারজন উচ্চপদস্থ লিবীয় সামরিক কর্মকর্তা এবং তিনজন ক্রু সদস্য প্রাণ হারিয়েছেন। লিবিয়ার জাতিসংঘ-স্বীকৃত সরকারের প্রধানমন্ত্রী আব্দুল হামিদ দবেইবা এই মৃত্যুকে ‘দেশ ও সেনাবাহিনীর জন্য এক মহাবিপর্যয়’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
তুরস্কের সরকারি সূত্রগুলো জানিয়েছে যে দ্যাসো ফ্যালকন-৫০ মডেলের ওই বিমানটি উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পর বৈদ্যুতিক ত্রুটির সম্মুখীন হয়। পাইলট জরুরি অবতরণের অনুরোধ জানালেও আঙ্কারার হায়মানা জেলার কেসিককাভাক গ্রামের কাছে পৌঁছানোর পর রাডার থেকে বিমানটি অদৃশ্য হয়ে যায়। লিবিয়ার সেনাপ্রধান আঙ্কারায় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত দ্বিপাক্ষিক বৈঠক শেষে দেশে ফিরছিলেন। উদ্ধারকারীরা রাজধানী আঙ্কারা থেকে প্রায় ৭৪ কিলোমিটার দূরে বিমানটির ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পান। তুরস্কের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে উড্ডয়নের প্রায় ৪২ মিনিটের মাথায় নিয়ন্ত্রণকক্ষের সাথে বিমানটির যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল।
নিহত সামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন লিবীয় স্থলবাহিনীর প্রধান আল-ফিতুরি ঘারিবিল এবং সেনাপ্রধানের উপদেষ্টা মুহাম্মদ আল-আসাওই দিয়াব। আল-হাদ্দাদ ২০১১ সালে মুয়াম্মার গাদ্দাফি বিরোধী আন্দোলনে অন্যতম প্রধান সেনাপতির ভূমিকা পালন করেছিলেন এবং ২০২০ সাল থেকে দেশটির সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। বিভক্ত লিবিয়ায় জাতীয় ঐক্য ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টায় তার ছিল ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা। তার এই আকস্মিক মৃত্যু লিবিয়ার বর্তমান অস্থিতিশীল রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এক বিশাল শূন্যতা তৈরি করেছে।
প্রাথমিক তদন্ত শেষে তুরস্কের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে দুর্ঘটনায় নাশকতার কোনো প্রমাণ মেলেনি এবং কারিগরি ত্রুটির কারণেই এই বিপর্যয় ঘটেছে বলে তারা ধারণা করছেন। আঙ্কারার প্রধান প্রসিকিউটর কার্যালয় ইতোমধ্যে আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু করেছে এবং লিবিয়া থেকেও একটি প্রতিনিধি দল এই তদন্তে যোগ দিতে আঙ্কারায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে। লিবিয়া সরকার এই বীর সেনানায়কের স্মরণে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে এবং সকল সরকারি প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তুরস্কের সাথে লিবিয়ার সামরিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক যখন আরও গভীর হচ্ছিল ঠিক সেই মুহূর্তে এই দুর্ঘটনাটি দুই দেশের সামরিক সহযোগিতায় একটি বড় আঘাত হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ব্রিটেনে গ্রেপ্তার হলেন গ্রেটা থুনবার্গ
বিশ্বখ্যাত জলবায়ু আন্দোলনকর্মী গ্রেটা থুনবার্গকে লন্ডনে ফিলিস্তিনপন্থী এক বিক্ষোভ থেকে গ্রেপ্তার করেছে ব্রিটিশ পুলিশ। মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) লন্ডনের রাস্তায় ফিলিস্তিনের সমর্থনে একটি প্ল্যাকার্ড ধরে রাখার সময় তাকে আটক করা হয়। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে যে ব্রিটেনের বিতর্কিত সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অধীনে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই ঘটনার পর যুক্তরাজ্যে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং বিক্ষোভের অধিকার নিয়ে নতুন করে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। থুনবার্গের গ্রেপ্তারের খবরটি ছড়িয়ে পড়তেই মানবাধিকার সংগঠনগুলো ব্রিটিশ সরকারের কঠোর সমালোচনা শুরু করেছে।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রচারণাকারী গোষ্ঠী ‘ডিফেন্ড আওয়ার জুরিস’ জানিয়েছে যে থুনবার্গ এমন একটি প্ল্যাকার্ড বহন করছিলেন যা ‘প্যালেস্টাইন অ্যাকশন’ নামক সংগঠনের বন্দি সদস্যদের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করে। উল্লেখ্য যে ব্রিটিশ সরকার এই সংগঠনটিকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। গ্রেটা থুনবার্গের হাতে থাকা সেই প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল যে তিনি প্যালেস্টাইন অ্যাকশন বন্দিদের সমর্থন করেন এবং যেকোনো ধরণের গণহত্যার বিরোধিতা করেন। সিটি অব লন্ডন পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে নিষিদ্ধ সংগঠনের পক্ষে প্রতীকী সামগ্রী প্রদর্শনের অভিযোগে তাকে সন্ত্রাসবাদ আইন ২০০০-এর ধারা ১৩ অনুযায়ী গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ঘটনার বিস্তারিত বিবরণে জানা যায় যে বিক্ষোভকারীরা একটি বীমা প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় লক্ষ্য করে এই কর্মসূচি পালন করছিল। বিক্ষোভকারীদের দাবি অনুযায়ী ওই বীমা প্রতিষ্ঠানটি ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা সংস্থা ‘এলবিট সিস্টেমস’-এর ব্রিটিশ শাখাকে বিভিন্ন সেবা প্রদান করে থাকে। বিক্ষোভের একপর্যায়ে দুজন ব্যক্তি ওই ভবনের দেওয়ালে লাল রঙ নিক্ষেপ করেন যাদের পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে আটক করে। এর কিছুক্ষণ পরেই ২২ বছর বয়সী গ্রেটা থুনবার্গ সেখানে উপস্থিত হয়ে তার সংহতি প্রকাশ করেন এবং নিষিদ্ধ সংগঠনের সমর্থনে বার্তা সংবলিত প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন শুরু করলে তাকেও পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়।
গ্রেটা থুনবার্গের এই গ্রেপ্তার আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। পরিবেশ আন্দোলনের পরিচিত এই মুখ গত কয়েক বছর ধরেই বিভিন্ন বৈশ্বিক ইস্যুতে সরব ভূমিকা পালন করে আসছেন। তবে এবার সরাসরি সন্ত্রাসবিরোধী আইনে তাকে অভিযুক্ত করায় ব্রিটিশ পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সমালোচকরা মনে করছেন যে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের ওপর সন্ত্রাসবাদের তকমা লাগিয়ে সরকার কণ্ঠরোধের চেষ্টা করছে। অন্যদিকে ব্রিটিশ পুলিশের দাবি তারা কেবল দেশের প্রচলিত আইন এবং অপারেশনাল শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে এই পদক্ষেপ নিয়েছে। বর্তমানে গ্রেটা থুনবার্গকে লন্ডনের একটি থানায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে।
দিল্লি ও কলকাতায় উত্তাল বাংলাদেশ মিশন
ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি এবং পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতায় অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনে উগ্র বিক্ষোভকারীরা নিরাপত্তা ব্যারিকেড ভেঙে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা চালিয়েছে। মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে কয়েক শ মানুষ জড়ো হয়ে উত্তেজিত স্লোগান দিতে শুরু করে। তারা পুলিশের তৈরি করা অন্তত দুটি নিরাপত্তা ব্যারিকেড ভেঙে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। প্রায় একই সময়ে কলকাতায় অবস্থিত বাংলাদেশ উপহাইকমিশনের সামনেও অনুরূপ উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। সেখানেও বিক্ষোভকারীরা ব্যারিকেড উপড়ে ফেলে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা চালায় যা সামলাতে কলকাতা পুলিশকে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়েছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর কথিত হামলা ও নির্যাতনের প্রতিবাদে হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠী বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি) এবং বজরং দল এই বিক্ষোভের ডাক দেয়। ময়মনসিংহে দিপু চন্দ্র দাস নামক এক যুবকের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভকারীরা গেরুয়া পতাকা হাতে নিয়ে উস্কানিমূলক স্লোগান দেয়। নয়াদিল্লিতে হাইকমিশনের নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুলিশ ও আধা-সামরিক বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করে তিন স্তরের নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হলেও উত্তেজিত জনতা তা ভেঙে ফেলার চেষ্টা করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন যে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের সাথে বিক্ষোভকারীদের ধস্তাধস্তি হয়েছে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে আটক করেছে।
মিশনগুলোতে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত হামলার চেষ্টার প্রতিবাদে এবং বাংলাদেশি কূটনীতিকদের নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়ে আজ মঙ্গলবার সকালেই ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে তলব করেছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে প্রণয় ভার্মা পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আলম সিয়ামের দপ্তরে হাজির হন। অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত এই বৈঠকে দিল্লি ও কলকাতাসহ ভারতের অন্যান্য স্থানে থাকা বাংলাদেশি মিশনগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য দিল্লির প্রতি কড়া আহ্বান জানানো হয়। উল্লেখ্য যে গত মাত্র ১০ দিনের ব্যবধানে এটি ভারতীয় হাইকমিশনারকে দ্বিতীয়বারের মতো তলবের ঘটনা যা দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের বর্তমান টানাপোড়েনকে আরও স্পষ্ট করে তুলেছে।
এর আগে গত সোমবার পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির নেতা শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে কলকাতায় বাংলাদেশবিরোধী একটি বড় ধরণের বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। এরপর থেকেই ভারতের বিভিন্ন স্থানে বাংলাদেশি মিশনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দেয়। গত ১৪ ডিসেম্বরও প্রণয় ভার্মাকে তলব করে ভারত থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উস্কানিমূলক বক্তব্যের বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়েছিল ঢাকা। বর্তমান পরিস্থিতিতে দিল্লির বাংলাদেশ মিশনে হামলার এই চেষ্টা দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর নতুন করে ছায়া ফেলেছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে যে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী ভিয়েনা কনভেনশন মেনে কূটনীতিক ও মিশনগুলোর পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ভারতের দায়িত্ব।
পাঠকের মতামত:
- ২৯ ডিসেম্বরের শেয়ারবাজারের পূর্ণাঙ্গ বিশ্লেষণ
- ২৯ ডিসেম্বর ডিএসইতে শীর্ষ ১০ দরহারানো শেয়ার
- বাজারে উত্থান: সেরা ১০ শেয়ারের তালিকা
- সাইবেরিয়ান বিড়াল জেবু ও তারেক রহমান পরিবারের গল্প
- ঢাকা-১৫ জামায়াত আমিরের বিপক্ষে নামলেন যে বিএনপি প্রার্থী
- এমবিবিএস-বিডিএস ভর্তি পিছাল, নতুন তারিখ ঘোষণা
- শীতের সুপারফুড মূলার অজানা উপকারিতা
- রাতে ঘুমানোর আগে শক্তিশালী আমল জেনে নিন
- ২০২৬ শিক্ষাবর্ষে ঈদের ছুটি থাকবে যতদিন
- গাজর খেলেই সুস্থতা, জানুন ৫টি বৈজ্ঞানিক উপকারিতা
- একদিনেই রেকর্ড, দেশে সর্বোচ্চ দামে স্বর্ণ বিক্রি
- শেয়ারবাজারে মার্জিন সুবিধা পাচ্ছে কোন কোম্পানিগুলো
- ডায়েট না কি চিকিৎসা: কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার গোপন টিপস
- ডিএসই মধ্যাহ্ন বাজারে শীর্ষ ২০ শেয়ারের চিত্র
- শীতে দীর্ঘমেয়াদী কাশি এড়াতে জাদুকরী ৪ টিপস
- হাসনাত আবদুল্লাহর জন্য মাঠ ছাড়লেন জামায়াত নেতা
- ডিএসই পরিদর্শন যে পাঁচ কোম্পানির কারখানা বন্ধ
- আল-হাজ টেক্সটাইলসের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রান্তিক প্রকাশ
- ডক্টর ডুম বনাম এক্স-মেন: ফাঁস হওয়া টিজারে মার্ভেলের সবচেয়ে বড় ধামাকা
- আল-হাজ টেক্সটাইলসের লভ্যাংশ ঘোষণা, জানুন রেকর্ড তারিখ
- মিউচুয়াল ফান্ডে ডিসকাউন্ট, কোনগুলো এগিয়ে
- বছরের শেষ প্রান্তে শেয়ারবাজারে অনিশ্চয়তা
- হাড়কাঁপানো শীত ও ঘন কুয়াশা থেকে মুক্তি কবে? যা জানাল আবহাওয়া অফিস
- গত ৪৮ ঘণ্টার সর্বনিম্ন তাপমাত্রার রেকর্ড ভাঙল যশোর
- এনসিপি প্রধানের জন্য মাঠ খালি করল জামায়াত
- অপরাধী পালানো রুখতে সীমান্তে লাল সতর্কতা: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
- সাধারণের নাগালের বাইরে সোনার বাজার: মধ্যবিত্তের সোনা কেনার স্বপ্ন কি তবে শেষ
- পারমাণবিক শক্তি হবে সীমাহীন: কিম জং উনের নতুন নির্দেশে কাঁপছে বিশ্ব
- কেন আর সিনেমায় দেখা যাবে না বিজয়কে: বিদায়বেলায় বড় রহস্য ফাঁস
- ঘরের বাইরে যাওয়ার আগে জেনে নিন আজকের আবহাওয়ার হালচাল
- সোমবারের ঢাকা: যেসব কর্মসূচির কারণে অচল হতে পারে রাজপথ
- রিজার্ভ বাড়লেও কেন কাটছে না মানুষের দুর্ভোগ: অর্থনীতির আসল চিত্র ফাঁস
- এক নজরে টিভিতে আজকের খেলা: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫
- নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন এনসিপি নেত্রী
- আজ ২৯ ডিসেম্বরের নামাজের সময়সূচি
- দুই মেরুতে বিভক্ত বাংলাদেশ: ২৯ বনাম ১০ দলের লড়াইয়ে কার পাল্লা ভারী
- একই দলে রোনালদো ও মেসি: অবিশ্বাস্য খবরের আসল রহস্য ফাঁস
- পৃথিবী থেকে সাহায্য ছাড়াই মঙ্গলে থাকা সম্ভব: বিজ্ঞানীদের অবিশ্বাস্য দাবি
- শীতে ত্বক উজ্জ্বল করার জাদুকরী ৩ উপায়
- চক্রান্তকারীদের ফাঁদে পা দেবেন না :আলেমদের সামনে কেন এমন বললেন ফখরুল
- কেন জামায়াতের হাত ধরল এনসিপি: সংবাদ সম্মেলনে জানালেন নাহিদ
- নৈতিকতা বিক্রি করে রাজনীতি করব না: এনসিপি নেত্রী
- প্রবাসীদের অবিশ্বাস্য সাড়ায় রেমিট্যান্সের বন্যায় ভাসছে দেশ
- ভারতে সংখ্যালঘু নির্যাতনে ঢাকার কড়া প্রতিবাদ
- লড়াইয়ের আগেই ময়দান ছাড়লেন আন্দালিভ পার্থ
- আত্মসমর্পণ করে জামিন নিলেন এনসিপি নেতা আখতার
- শাহবাগে ইনকিলাব মঞ্চের হুংকার: অন্তর্বর্তী সরকারকে চরম হুঁশিয়ারি
- নির্বাচনের আগে নয়া মেরুকরণ: জামায়াতের জোটের পরিধি বেড়ে হলো ১০
- ২০২৬ সালে স্কুলে ছুটি কমলো ১২ দিন, দেখে নিন তালিকা
- কোরআন ও সুন্নাহই হবে আইনের ভিত্তি: মির্জা ফখরুল
- আজ ঢাবির ভর্তি যুদ্ধ: আছে এমআইএসটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ খবর
- আজকের স্বর্ণের দাম: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫
- নারী-সঙ্গীর হাতে পুরুষের যৌনাঙ্গ ছিন্নকরণ: বাংলাদেশে অবহেলিত এক সহিংসতার সংকট
- আজ থেকে কার্যকর স্বর্ণের নতুন মূল্য
- আজ টানা ১০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকবে না যেসব এলাকায়
- পাঁচ ব্যাংকের আমানতকারীদের জন্য বড় সুখবর
- আজকের স্বর্ণের দাম: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫
- স্বর্ণের বাজারে আগুন: আজ ইতিহাসের দামী সোনা কিনবেন ক্রেতারা
- বাবার কবরের সামনে দাঁড়িয়ে নীরবে কেঁদেছেন তারেক রহমান
- আজ থেকে শুরু বিপিএলের দ্বাদশ আসর, জানুন পূর্ণাঙ্গ সময়সূচী
- বাংলা দখল করতে এলে দিল্লি কেড়ে নেব: মমতা
- জামায়াত-চরমোনাই দ্বিমুখী লড়াই: সংকটে ইসলামী জোট
- আজ ৯ ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন থাকবে যেসব এলাকাই
- ২০২৬ সালে স্কুলে ছুটি কমলো ১২ দিন, দেখে নিন তালিকা
- নির্বাচন ও রমজানের কবলে ২০২৬ সালের এসএসসি পরীক্ষা: নতুন তারিখ কবে?








