অ্যান্টিট্রাস্ট চাপে আবারও আদালতে গুগল

প্রযুক্তি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ২২ ১২:৩৯:৫৫
অ্যান্টিট্রাস্ট চাপে আবারও আদালতে গুগল
ছবিঃ সংগৃহীত

বিশ্বের শীর্ষ সার্চ ইঞ্জিন গুগল আবারও মার্কিন আদালতে নতুন পরীক্ষার মুখে। সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ (ডিওজে) এক বিচারকের কাছে গুগলের বিজ্ঞাপন প্রযুক্তি ব্যবসা (Ad Tech Business) ভেঙে দেওয়ার নির্দেশ দিতে আবেদন করেছে। এটি চলতি বছরে গুগলের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় বড় অ্যান্টিট্রাস্ট চ্যালেঞ্জ। এর আগে চলতি মাসের শুরুর দিকে ক্যালিফোর্নিয়ার এক বিচারক গুগলের সাম্রাজ্য ভাগ করার আরেকটি সরকারি দাবিকে খারিজ করে দেন।

নতুন মামলাটি গুগলের বিজ্ঞাপন প্রযুক্তি ব্যবস্থাকে কেন্দ্র করে। এটি এমন এক "স্ট্যাক" বা টুলসেট যার মাধ্যমে ওয়েবসাইট মালিকরা বিজ্ঞাপন বিক্রি করে এবং বিজ্ঞাপনদাতারা সেগুলো কিনে। চলতি বছরের শুরুর দিকে ফেডারেল বিচারক লিওনি ব্রিঙ্কেমা রায় দিয়েছিলেন যে গুগল এই বাজারে বেআইনিভাবে একচেটিয়া দখল বজায় রেখেছে। এখন আদালত ঠিক করবে, গুগলকে কী ধরনের শাস্তি বা কাঠামোগত পরিবর্তন মেনে নিতে হবে তাদের একচেটিয়া অবস্থান ভাঙতে।

সরকারি আইনজীবীরা আদালতে বলবেন, গুগলকে বিজ্ঞাপন প্রকাশক (Ad Publisher) এবং এক্সচেঞ্জ পরিচালনার ব্যবসা থেকে আলাদা করতে হবে। পাশাপাশি, গুগলকে অন্তত ১০ বছর বিজ্ঞাপন এক্সচেঞ্জ পরিচালনা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিতে হবে। তবে গুগল বলছে, এই দাবিগুলো আদালতের পূর্ববর্তী রায়ের সীমা ছাড়িয়ে গেছে, প্রযুক্তিগতভাবে জটিল এবং ছোট ব্যবসার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

গুগলের ভাইস প্রেসিডেন্ট (রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স) লি-অ্যান মুলহল্যান্ড বলেন, “শুরু থেকেই আমরা বলছি যে ডিওজে ডিজিটাল বিজ্ঞাপন কিভাবে কাজ করে তা ভুলভাবে ব্যাখ্যা করছে এবং উপেক্ষা করছে যে এই বাজারে এখন অনেক প্রতিযোগী এবং নতুন খেলোয়াড় এসেছে।”

এদিকে ইউরোপীয় কমিশন সম্প্রতি গুগলকে ২.৯৫ বিলিয়ন ইউরো (৩.৪৭ বিলিয়ন ডলার) জরিমানা করেছে বিজ্ঞাপন বাজারে একচেটিয়া দখলের অভিযোগে। তবে ব্রাসেলস গুগলের কিছু আচরণগত পরিবর্তনের নির্দেশ দিয়ে পূর্ণাঙ্গ বিভাজনের পথে না হাঁটায় সমালোচনা হয়েছে।

এই মামলার "রেমেডি ফেজ" বা প্রতিকারমূলক ধাপ চলবে প্রায় এক সপ্তাহ। এরপর কয়েক সপ্তাহের মধ্যে চূড়ান্ত যুক্তিতর্ক শুনবে আদালত।

এটি এমন এক সময়ে শুরু হচ্ছে যখন আরেকটি মামলায় যুক্তরাষ্ট্র সরকার গুগলের ক্রোম ব্রাউজার বিক্রির দাবি জানিয়েছিল, কিন্তু আদালত সেটি খারিজ করে দেয়—যা গুগলের জন্য বড় জয় হিসেবে দেখা হয়। ঐ মামলায় গুগলকে তার প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে তথ্য ভাগ করে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলেও ব্যবসা বিভাজনের প্রয়োজন হয়নি।

গুগলের মূল কোম্পানি অ্যালফাবেটের শেয়ার মূল্য ওই রায়ের পর ২০ শতাংশের বেশি বেড়ে গেছে। বিচারক ব্রিঙ্কেমা জানিয়েছেন, তিনি সার্চ-সংক্রান্ত মামলার ফলাফল খতিয়ে দেখেই এই মামলায় নিজের সিদ্ধান্ত নেবেন।

এগুলো যুক্তরাষ্ট্রে বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে সরকারের চলমান ব্যাপক অ্যান্টিট্রাস্ট অভিযানের অংশ। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে গুগলসহ শীর্ষ পাঁচ প্রযুক্তি জায়ান্টের বিরুদ্ধে একাধিক অ্যান্টিট্রাস্ট মামলা চলছে।

-এস এম শাহিদ


তরঙ্গের প্রকারভেদ ও বৈজ্ঞানিক আচরণে সহজ ব্যাখ্যা

প্রযুক্তি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ ডিসেম্বর ২১ ০৯:১৫:৩৬
তরঙ্গের প্রকারভেদ ও বৈজ্ঞানিক আচরণে সহজ ব্যাখ্যা
ছবি: সংগৃহীত

পদার্থবিজ্ঞানে তরঙ্গ (Wave) বলতে বোঝায় এমন একটি সুশৃঙ্খল প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে কোনো অস্থিরতা বা কম্পন এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে পানির ওপর ভেসে চলা ঢেউ সবচেয়ে পরিচিত উদাহরণ হলেও শব্দ, আলো এমনকি অণু ও উপ-অণুর আচরণেও তরঙ্গের বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। জ্যোতির্বিদ্যার শুরু হয়েছিল দৃশ্যমান আলোর মাধ্যমে, পরে ধীরে ধীরে তড়িৎচৌম্বকীয় বর্ণালির সব অংশেই তরঙ্গের ব্যবহার বিস্তৃত হয়েছে।

সহজ ভাষায়, একটি তরঙ্গে নির্দিষ্ট সময় পরপর কম্পন ঘটে, যার একটি নির্দিষ্ট কম্পাঙ্ক ও তরঙ্গদৈর্ঘ্য থাকে। শব্দের মতো যান্ত্রিক তরঙ্গ চলাচলের জন্য মাধ্যমের প্রয়োজন হলেও আলো বা তড়িৎচৌম্বকীয় তরঙ্গ শূন্যস্থানেও চলতে পারে। তরঙ্গের বিস্তার অনেকটাই নির্ভর করে যে মাধ্যমে তা চলাচল করছে তার ভৌত বৈশিষ্ট্যের ওপর।

তরঙ্গের প্রকারভেদ ও গঠনগত বৈশিষ্ট্য

তরঙ্গ মূলত দুই ধরনের হয় অনুদৈর্ঘ্য (Longitudinal) এবং অনুপ্রস্থ (Transverse)। পানির ঢেউ অনুপ্রস্থ তরঙ্গের উদাহরণ, যেখানে পৃষ্ঠ উপরে-নিচে ওঠানামা করে। অপরদিকে শব্দ তরঙ্গ অনুদৈর্ঘ্য প্রকৃতির, যেখানে মাধ্যমের কণাগুলো পর্যায়ক্রমে সংকোচন ও প্রসারণের মধ্য দিয়ে যায়।

অনুপ্রস্থ তরঙ্গের সর্বোচ্চ বিন্দুকে বলা হয় শিখর (Crest) এবং সর্বনিম্ন বিন্দুকে খাত (Trough)। আর অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গে সংকোচন ও প্রসারণ এই শিখর ও খাতের সমতুল্য। এক শিখর থেকে পরবর্তী শিখরের দূরত্বই হলো তরঙ্গদৈর্ঘ্য, আর তরঙ্গের উচ্চতাকে বলা হয় প্রশস্ততা (Amplitude)। নির্দিষ্ট সময়ে কতটি কম্পন ঘটে, সেটিই কম্পাঙ্ক (Frequency)। তরঙ্গের বেগ নির্ণয় করা যায় তরঙ্গদৈর্ঘ্য ও কম্পাঙ্কের গুণফল দিয়ে।

তরঙ্গের বিস্তার ও শক্তি

তরঙ্গ অত্যন্ত ক্ষুদ্র কম্পনের মাধ্যমেও বহু দূর পর্যন্ত শক্তি বহন করতে পারে। উদাহরণ হিসেবে বজ্রপাতের শব্দ কয়েক কিলোমিটার দূর থেকেও শোনা যায়, যদিও বাতাসে সেই কম্পন খুব সামান্য। অর্থাৎ, তরঙ্গের শক্তি অনেক দূর ছড়িয়ে পড়লেও মাধ্যমের কণাগুলোর প্রকৃত স্থানান্তর খুবই সীমিত থাকে।

তরঙ্গের আচরণ: প্রতিফলন, প্রতিসরণ ও ব্যতিচার

তরঙ্গ চলার পথে নানা ধরনের আচরণ প্রদর্শন করে। প্রতিফলনে (Reflection) তরঙ্গ কোনো বাধায় আঘাত পেয়ে ফিরে আসে এবং আপতন কোণ ও প্রতিফলন কোণ সমান হয়। প্রতিসরণে (Refraction) তরঙ্গ ভিন্ন মাধ্যমে প্রবেশ করলে তার গতি পরিবর্তিত হয় এবং সে কারণে দিকও বাঁক নেয়। শব্দ ও আলোর ক্ষেত্রে এই ঘটনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

অন্যদিকে, ব্যতিচার (Diffraction) ঘটে যখন তরঙ্গ কোনো ক্ষুদ্র বাধা বা ছোট ছিদ্র অতিক্রম করে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এই কারণে শব্দ দেয়ালের আড়ালেও শোনা যায় এবং আলো সরু ফাঁক দিয়ে প্রবেশ করেও বিস্তৃত হতে পারে।

তরঙ্গের হস্তক্ষেপ ও ডপলার প্রভাব

যখন দুটি বা ততোধিক তরঙ্গ একত্রিত হয়, তখন তারা একে অপরকে শক্তিশালী বা দুর্বল করতে পারে একে বলা হয় হস্তক্ষেপ (Interference)। একই দশায় থাকা তরঙ্গ একত্রে মিলিত হলে শক্তি বাড়ে, আর বিপরীত দশায় মিলিত হলে একে অপরকে বাতিল করে দিতে পারে।

তরঙ্গ উৎস বা পর্যবেক্ষক চলমান হলে তরঙ্গের কম্পাঙ্ক পরিবর্তিত হয়, যা পরিচিত ডপলার প্রভাব (Doppler Effect) নামে। দৈনন্দিন জীবনে চলন্ত গাড়ির হর্নের শব্দ কাছাকাছি আসলে তীক্ষ্ণ শোনায় এবং দূরে গেলে ভারী শোনায় এটি ডপলার প্রভাবের সহজ উদাহরণ। জ্যোতির্বিজ্ঞানে এই প্রভাবের মাধ্যমেই মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।

স্থির তরঙ্গ ও অনুনাদ

যখন তরঙ্গ কোনো সীমাবদ্ধ স্থানে চলাচল করে এবং প্রতিফলন ও হস্তক্ষেপের ফলে নির্দিষ্ট বিন্যাস তৈরি হয়, তখন স্থির তরঙ্গ (Standing Wave) গঠিত হয়। এতে কিছু বিন্দুতে কোনো কম্পন থাকে না, যেগুলোকে বলা হয় নোড (Node)। আর যেখানে কম্পন সর্বাধিক, সেগুলোকে বলা হয় অ্যান্টিনোড (Antinode)। স্থির তরঙ্গের এই বৈশিষ্ট্য বাদ্যযন্ত্র, শব্দ প্রকৌশল এবং আধুনিক প্রযুক্তিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

সূত্র: ব্রিটানিকা


গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভ: মহাকাশ গবেষণায় নতুন যুগের সূচনা

প্রযুক্তি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ ডিসেম্বর ২১ ০৮:৩৭:৪০
গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভ: মহাকাশ গবেষণায় নতুন যুগের সূচনা
ছবি: সংগৃহীত

মানবসভ্যতা মহাবিশ্ব সম্পর্কে যা কিছু জানে, তার প্রায় সবই এসেছে তড়িৎচৌম্বক বিকিরণ বা আলোর মাধ্যমে। দৃশ্যমান আলো দিয়ে শুরু হওয়া জ্যোতির্বিদ্যা ধীরে ধীরে গামা রশ্মি থেকে শুরু করে রেডিও তরঙ্গ পর্যন্ত পুরো তড়িৎচৌম্বক বর্ণালিকে কাজে লাগিয়েছে। এই বিস্তৃত পর্যবেক্ষণের ফলে বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন বিস্ময়কর সব মহাজাগতিক রহস্য। তবে এখন সেই আলোকনির্ভর পর্যবেক্ষণের বাইরে গিয়ে জন্ম নিয়েছে এক বিপ্লবী ধারা গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভ জ্যোতির্বিদ্যা, যেখানে দেখা হয় আলো নয়, বরং স্থান-কাল বা স্পেসটাইমের কম্পন।

এই নতুন ধারার সঙ্গে এসেছে সম্পূর্ণ নতুন ধরনের পর্যবেক্ষণাগার লেজার ইন্টারফেরোমিটার গ্র্যাভিটেশনাল-ওয়েভ অবজারভেটরি (LIGO)। এটি আলো নয়, বরং মহাবিশ্বের গভীরতম স্তরে সংঘটিত মহাকর্ষীয় আলোড়ন শনাক্ত করে।

গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভ কীভাবে সৃষ্টি হয়

আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব অনুযায়ী, মহাকর্ষ কোনো অদৃশ্য শক্তি নয় যা দূর থেকে টানে। বরং এটি হলো স্থান-কাল বেঁকে যাওয়ার ফল। যখন কোনো অত্যন্ত ভারী বস্তু দ্রুতগতিতে নড়াচড়া করে বা ত্বরণপ্রাপ্ত হয়, তখন আশপাশের স্থান-কাল বিকৃত হয় এবং সেই বিকৃতি আলোর গতিতে ছড়িয়ে পড়ে। এই ছড়িয়ে পড়া বিকৃতিই হলো গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভ স্থান-কালের মধ্যে সৃষ্ট তরঙ্গ।

কোন বস্তু থেকে আসে এই তরঙ্গ

গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভ তৈরি করতে হলে প্রয়োজন হয় অসাধারণ ভারী বস্তুর। এর প্রথম বাস্তব প্রমাণ পাওয়া যায় একটি বাইনারি পালসার পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে, যেখানে দুটি নিউট্রন তারকা একে অপরকে কেন্দ্র করে ঘুরছিল। প্রতিটি তারকার ভর সূর্যের প্রায় সমান হলেও তাদের কক্ষপথ ধীরে ধীরে সংকুচিত হচ্ছিল। এই শক্তি ক্ষয় হচ্ছিল ঠিক সেই পরিমাণে, যা তত্ত্ব অনুযায়ী গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভ হিসেবে নির্গত হওয়ার কথা। এর মাধ্যমে প্রথমবারের মতো এই তরঙ্গের অস্তিত্ব নিশ্চিত হয়।

কেন এটি শনাক্ত করা এত কঠিন

গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভ যখন কোনো অঞ্চল দিয়ে যায়, তখন এটি দুটি বিন্দুর মধ্যকার দূরত্ব অতি সামান্য পরিবর্তন করে। এই পরিবর্তনের মাত্রা এত ক্ষুদ্র যে LIGO-কে মাপতে হয় প্রায় ১০⁻¹⁹ মিটার দূরত্ব যা একটি প্রোটনের ব্যাসার্ধের তুলনায় প্রায় দশ হাজার গুণ ছোট। এমন সূক্ষ্ম পরিবর্তন শনাক্ত করা আধুনিক বিজ্ঞানের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলোর একটি।

LIGO কীভাবে এই অসম্ভব কাজটি করে

LIGO মূলত একটি বিশাল লেজার ইন্টারফেরোমিটার। এতে দুটি দীর্ঘ ভ্যাকুয়াম পাইপ রয়েছে, প্রতিটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৪ কিলোমিটার, যা L-আকৃতিতে বসানো। একটি লেজার রশ্মি দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে এই দুই পথে যায়, প্রতিফলিত হয়ে ফিরে এসে আবার একত্রিত হয়। সাধারণ অবস্থায় দুটি রশ্মি একে অপরকে বাতিল করে দেয়। কিন্তু যদি কোনো গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভ অতিক্রম করে, তাহলে এক বাহু সামান্য বড় হয় এবং অন্যটি ছোট ফলে আলো আর পুরোপুরি বাতিল হয় না। এই সূক্ষ্ম পার্থক্যই সংকেত হিসেবে ধরা পড়ে।

এই সংবেদনশীলতা বাড়াতে লেজার রশ্মিকে একবার নয়, প্রায় ৪০০ বার প্রতিফলিত করা হয়, ফলে কার্যকর দূরত্ব দাঁড়ায় প্রায় ১,৬০০ কিলোমিটার।

অতিসংবেদনশীল যন্ত্র, অতিরিক্ত সতর্কতা

LIGO এতটাই সংবেদনশীল যে আশপাশের গাড়ির গতি পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। এখানকার গতি সীমা ঘণ্টায় মাত্র ১৬ কিলোমিটার। এমনকি ভূমিকম্পের ক্ষুদ্র কম্পন বা পৃথিবীর মহাকর্ষক্ষেত্রের সামান্য পরিবর্তনও যন্ত্রে প্রভাব ফেলতে পারে। তাই LIGO-এর আয়নাগুলো ৪০ কেজি ওজনের এবং বিশেষ সিলিকা ফাইবারে ঝুলিয়ে রাখা হয়।

ভুল সংকেত এড়াতে যুক্তরাষ্ট্রে দুটি পৃথক LIGO কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে একটি লুইজিয়ানার লিভিংস্টনে এবং অন্যটি ওয়াশিংটনের হ্যানফোর্ডে। প্রকৃত গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভ হলে উভয় কেন্দ্রেই একসঙ্গে সংকেত ধরা পড়ে।

মহাবিশ্ব দেখার এক নতুন জানালা

গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভ জ্যোতির্বিদ্যা আমাদের এমন সব ঘটনা দেখার সুযোগ দিচ্ছে, যা আলো দিয়ে কখনোই ধরা পড়ত না। যেমন দূরবর্তী গ্যালাক্সিতে লক্ষ লক্ষ সূর্যের ভরের ব্ল্যাকহোলের সংঘর্ষ, বা সামান্য বিকৃত আকৃতির নিউট্রন তারকার অভ্যন্তরীণ গঠন। ইতিহাস বলছে, প্রতিবার মানুষ মহাবিশ্ব দেখার নতুন পদ্ধতি পেয়েছে, তখনই এসেছে অপ্রত্যাশিত আবিষ্কার। এই নতুন জ্যোতির্বিদ্যাও সম্ভবত এমন সব রহস্য উন্মোচন করবে, যা আমরা এখনো কল্পনাও করিনি।

সূত্র: ব্রিটানিকা


হঠাৎ কেন বন্ধ হয়ে যায় ফেসবুক অ্যাকাউন্ট? জানুন সমাধান

প্রযুক্তি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ ডিসেম্বর ২১ ০৭:৪৬:৩৩
হঠাৎ কেন বন্ধ হয়ে যায় ফেসবুক অ্যাকাউন্ট? জানুন সমাধান
ছবি: সংগৃহীত

হঠাৎ ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ডিজেবল হয়ে যাওয়ার ঘটনা এখন আর বিরল নয়। কোনো পূর্ব সতর্কতা ছাড়াই লগইন করতে গিয়ে অনেক ব্যবহারকারী দেখতে পান—তাদের আইডি সাময়িক বা স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এতে ব্যক্তিগত যোগাযোগ, ছবি, স্মৃতি, ব্যবসায়িক পেজ বা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হারানোর শঙ্কা তৈরি হয়। তবে বাস্তবতা হলো, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ফেসবুক নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম ভাঙার কারণেই অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে থাকে।

ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হঠাৎ বন্ধ হওয়ার প্রধান কারণ

ফেসবুকের নিজস্ব Community Standards এবং Account Integrity Policy রয়েছে। এগুলোর কোনোটি লঙ্ঘিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

১. ভুয়া নাম বা অন্যের পরিচয়ে অ্যাকাউন্ট চালানো

ফেসবুক চায় ব্যবহারকারীরা বাস্তব নাম ও পরিচয় ব্যবহার করুক। সেলিব্রিটি, রাজনৈতিক ব্যক্তি বা অন্য কারো নাম-ছবি ব্যবহার করলে অভিযোগের ভিত্তিতে অ্যাকাউন্ট দ্রুত বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

২. বিভ্রান্তিকর বা অবাস্তব নাম ব্যবহার

অদ্ভুত শব্দ, উপাধি, প্রতীক বা অতিরিক্ত চিহ্নযুক্ত নাম ব্যবহার করলে ফেসবুক তা সন্দেহজনক হিসেবে চিহ্নিত করে।

৩. বারবার কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড ভঙ্গ

ঘৃণামূলক বক্তব্য, সহিংস কনটেন্ট, উসকানিমূলক পোস্ট, ভুয়া তথ্য ছড়ানো বা আত্মহানিসংক্রান্ত বিষয় পোস্ট করলে প্রথমে সতর্কতা, পরে নিষেধাজ্ঞা এবং শেষ পর্যন্ত অ্যাকাউন্ট ডিজেবল হতে পারে।

৪. আপত্তিকর মন্তব্য ও অনলাইন হেনস্থা

নিয়মিত গালাগালি, ব্যক্তিগত আক্রমণ বা সাইবার বুলিংয়ের অভিযোগ পেলে ফেসবুক কঠোর ব্যবস্থা নেয়।

৫. বয়স সংক্রান্ত নীতিমালা লঙ্ঘন

১৩ বছরের কম বয়সী ব্যবহারকারীদের ফেসবুক ব্যবহারের অনুমতি নেই। বয়স ভুয়া প্রমাণিত হলে রিভিউ ছাড়াই আইডি বন্ধ করা হয়।

৬. অ্যাকাউন্ট হ্যাক হওয়া

অ্যাকাউন্ট হ্যাক হলে অপরিচিত কেউ নিয়ম ভেঙে পোস্ট বা স্প্যাম কার্যক্রম চালাতে পারে। এতে ব্যবহারকারীর অজান্তেই আইডি ডিজেবল হয়ে যেতে পারে।

৭. সন্দেহজনক লিংক বা থার্ড-পার্টি অ্যাপ ব্যবহার

অপরিচিত অ্যাপ বা লিংকে ক্লিক করে অনুমতি দিলে অ্যাকাউন্ট ঝুঁকিতে পড়ে।

ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বন্ধ হলে কী করবেন

অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে গেলে আতঙ্কিত না হয়ে কিছু ধাপে এগোলে পুনরুদ্ধারের সুযোগ থাকে।

প্রথমত, ফেসবুকের Appeal বা Review Request অপশন ব্যবহার করে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আবেদন করুন।

দ্বিতীয়ত, পরিচয় যাচাইয়ের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র বা পাসপোর্ট আপলোড করতে হতে পারে।

তৃতীয়ত, যদি হ্যাকের কারণে আইডি বন্ধ হয়, তাহলে Hacked Account Recovery ফর্ম পূরণ করুন।

চতুর্থত, একাধিক আবেদন না করে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করুন। অতিরিক্ত আবেদন অনেক সময় ক্ষতিকর হয়।

ভবিষ্যতে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট সুরক্ষিত রাখার উপায়

  • ফেসবুক নিরাপদ রাখতে কিছু অভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি।
  • আসল নাম ও সঠিক তথ্য ব্যবহার করুন
  • টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন চালু রাখুন
  • সন্দেহজনক লিংক ও অ্যাপ এড়িয়ে চলুন
  • নিয়মিত Community Standards অনুসরণ করুন
  • উত্তেজনাপূর্ণ বা আক্রমণাত্মক মন্তব্য থেকে বিরত থাকুন

কেন সচেতনতা জরুরি

ফেসবুক এখন শুধু সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম নয়; এটি ব্যবসা, সংবাদ, আন্দোলন ও ব্যক্তিগত পরিচয়ের বড় একটি প্ল্যাটফর্ম। একটি অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে যাওয়া মানে অনেকের জন্য পেশাগত ও সামাজিক ক্ষতি। তাই নিয়ম মেনে, সচেতনভাবে ব্যবহার করাই একমাত্র নিরাপদ পথ।

সতর্ক থাকলে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ডিজেবল হওয়া অনেকাংশেই এড়ানো সম্ভব।


ভাষার দেয়াল ভাঙল গুগল: হেডফোনে সরাসরি শোনা যাবে ৭০ ভাষা

প্রযুক্তি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ ডিসেম্বর ২০ ২১:০৫:১৪
ভাষার দেয়াল ভাঙল গুগল: হেডফোনে সরাসরি শোনা যাবে ৭০ ভাষা
ছবি : সংগৃহীত

প্রযুক্তি বিশ্বে ভাষাগত যোগাযোগের দূরত্ব ঘুচিয়ে দিতে গুগল ট্রান্সলেটে একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন নিয়ে এসেছে গুগল। প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে নতুন এই আপডেটের মাধ্যমে এখন যেকোনো সাধারণ হেডফোনই হয়ে উঠবে রিয়েল টাইম বা তাৎক্ষণিক অনুবাদের একটি শক্তিশালী মাধ্যম। ব্যবহারকারীরা এখন সরাসরি তাদের ব্যবহৃত হেডফোনের মাধ্যমেই লাইভ অডিও অনুবাদ শুনতে পারবেন যা আন্তর্জাতিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

গত বৃহস্পতিবার বেটা সংস্করণে চালু হওয়া এই বিশেষ ফিচারটি ব্যবহারের জন্য আপাতত একটি উপযোগী অ্যান্ড্রয়েড ফোন এবং গুগল ট্রান্সলেট অ্যাপের প্রয়োজন হবে। এই প্রযুক্তির আওতায় ৭০টিরও বেশি ভাষায় নির্বিঘ্নে অডিও অনুবাদ পাওয়া সম্ভব। গুগল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে তাদের নিজস্ব কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা টুল ‘জেমিনি’ ব্যবহার করে অনুবাদের মানকে আরও সূক্ষ্ম ও উন্নত করা হয়েছে। বিশেষ করে বিভিন্ন ভাষার বাগধারা, প্রবাদ প্রবচন, স্থানীয় অভিব্যক্তি ও স্ল্যাংয়ের মতো জটিল বাক্যাংশগুলো সঠিকভাবে অনুবাদ করতে জেমিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

গুগলের সার্চ ভার্টিক্যালস বিভাগের প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্টের ভাইস প্রেসিডেন্ট রোজ ইয়াও জানিয়েছেন যে আগে এই বিশেষ লাইভ অনুবাদ সুবিধা কেবল পিক্সেল বাডস ব্যবহারকারীদের জন্য সীমিত থাকলেও এখন এটি সাধারণ হেডফোন ব্যবহারকারীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। তিনি আরও জানান যে বিদেশের মাটিতে ভাষণ বা বক্তৃতা শোনা অথবা ভিন্ন ভাষার টেলিভিশন অনুষ্ঠান ও অনলাইন কনটেন্ট দেখার সময় কেবল হেডফোন লাগিয়ে অ্যাপের লাইভ ট্রান্সলেট অপশনে ট্যাপ করলেই পছন্দের ভাষায় রিয়েল টাইম অনুবাদ শোনা যাবে। এটি পর্যটক ও শিক্ষার্থীদের জন্য অত্যন্ত কার্যকর হবে বলে মনে করছেন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা।

বর্তমানে প্রাথমিক পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো ও ভারতে এই বেটা সংস্করণটি চালু করা হয়েছে। তবে গুগল আশ্বস্ত করেছে যে ২০২৬ সালের মধ্যে আইওএস বা আইফোন ব্যবহারকারীদের জন্য এবং বিশ্বের আরও অনেক দেশে এই সুবিধা সম্প্রসারণ করার পরিকল্পনা রয়েছে। পাশাপাশি ব্যবহারকারীদের ভাষা শেখার অগ্রগতি পর্যবেক্ষণের জন্য ‘স্ট্রিক ট্র্যাকিং’ ও উন্নত ফিডব্যাক ব্যবস্থাও যুক্ত করা হচ্ছে যা গুগল ট্রান্সলেট অ্যাপকে কেবল একটি অনুবাদ টুল নয় বরং একটি পূর্ণাঙ্গ ভাষা শেখার প্ল্যাটফর্ম হিসেবে গড়ে তুলবে।


২০৩৫ সালে চাঁদে ফুটবল ম্যাচ? বিজ্ঞানীদের অবিশ্বাস্য দাবি

প্রযুক্তি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ ডিসেম্বর ২০ ১১:৩৬:০৪
২০৩৫ সালে চাঁদে ফুটবল ম্যাচ? বিজ্ঞানীদের অবিশ্বাস্য দাবি
ছবি : সংগৃহীত

শুনতে কল্পবিজ্ঞানের গল্পের মতো মনে হলেও বিজ্ঞানীদের দাবি অনুযায়ী আগামী ২০৩৫ সালের মধ্যেই চাঁদের পৃষ্ঠে মানুষের প্রথম ফুটবল ম্যাচ আয়োজন করা সম্ভব হতে পারে। ইন্সটিটিউশন অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি বা আইইটির গবেষকরা মহাকাশে ফুটবলের এই রোমাঞ্চকর ভবিষ্যতের কথা জানিয়েছেন। তবে পৃথিবীর জনপ্রিয় এই খেলাটি যখন চাঁদের ধূসর পৃষ্ঠে পৌঁছাবে তখন এর রূপ ধরনে আসবে আমূল পরিবর্তন। পৃথিবীর চিরচেনা সবুজ মাঠের বদলে চাঁদের প্রতিকূল পরিবেশে ফুটবল খেলাটি হবে সম্পূর্ণ ভিন্ন অভিজ্ঞতার।

চাঁদের ফুটবল ম্যাচের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে সেখানকার মহাকর্ষ বল যা পৃথিবীর তুলনায় মাত্র ছয় ভাগের এক ভাগ। এখানে বায়ুমণ্ডল বা বাতাসের কোনো বাধা না থাকায় বলের আচরণ হবে অদ্ভুত। একজন খেলোয়াড় স্বাভাবিক শক্তিতে লাথি দিলেই বল পৃথিবীর চেয়ে অন্তত ছয় গুণ বেশি দূরত্ব অতিক্রম করবে। এই সমস্যা সমাধানে বিজ্ঞানীরা মাঠের আকার আট গুণ ছোট করার প্রস্তাব দিয়েছেন। এছাড়া শারীরিক সক্ষমতা ও ক্লান্তি বিবেচনায় ৯০ মিনিটের দীর্ঘ লড়াইয়ের বদলে খেলাটি হবে চারটি কোয়ার্টারে। খেলোয়াড়দের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে এটি হবে সম্পূর্ণ স্পর্শহীন বা ‘নো কন্টাক্ট’ একটি খেলা এবং গোল পোস্টের সীমানা নির্ধারণে চারপাশ থেকে নেট ব্যবহার করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।

ফুটবল খেলায় ব্যবহৃত সরঞ্জামেও আসবে আমূল পরিবর্তন। চাঁদে বাতাসের চাপ না থাকায় সাধারণ বায়ুপূর্ণ বল সেখানে কাজ করবে না। তার বদলে বিজ্ঞানীরা বিশেষ ধরনের ফোম দিয়ে তৈরি দেড় গুণ বড় আকারের বল ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন। চাঁদের তীব্র সূর্যরশ্মি ও গ্লেয়ার এড়ানোর জন্য বলের রং হবে সাদা-কালো যাতে মহাকাশচারীরা তা স্পষ্ট দেখতে পান। আর ফুটবল ভক্তদের জন্য মজার খবর হলো চাঁদের মাঠে সম্ভবত জটিল ‘অফসাইড’ নিয়মটি থাকছে না।

খেলোয়াড়দের পোশাক বা জার্সিতেও থাকবে আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়া। সাধারণ জার্সি পরে চাঁদে খেলা অসম্ভব হওয়ায় খেলোয়াড়দের পরতে হবে নমনীয় অথচ বায়ুরোধী বিশেষ প্রেসার স্যুট। এই স্যুটের ভেতরে অত্যাধুনিক হিটিং এবং কুলিং সিস্টেম থাকবে যা শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করবে এবং ঘাম শুষে নেবে। প্রতিটি হেলমেটের ভেতরে থাকবে বিশেষ যোগাযোগ ব্যবস্থা যার মাধ্যমে সতীর্থ ও রেফারির সঙ্গে কথা বলা যাবে। আইইটির ফিউচারিস্ট ব্রায়ান ডেভিড জনসন মনে করেন আসন্ন চন্দ্র মিশনের পর চাঁদে মানুষের বসতি স্থাপন সময়ের ব্যাপার মাত্র আর তখনই মানুষের বিনোদনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠবে এই মহাকাশ ফুটবল।

সূত্র: বিবিসি


বদলে গেল ইতিহাস: পৃথিবীতে প্রাণের জন্ম নিয়ে বিজ্ঞানীদের নতুন দাবি

প্রযুক্তি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ ডিসেম্বর ১৯ ০৯:৪৯:৩২
বদলে গেল ইতিহাস: পৃথিবীতে প্রাণের জন্ম নিয়ে বিজ্ঞানীদের নতুন দাবি
ছবি : সংগৃহীত

পৃথিবীর বুকে প্রাণের উদ্ভব ঠিক কবে হয়েছিল, তা নিয়ে দীর্ঘদিনের প্রচলিত ধারণা পাল্টে দিয়েছে নতুন এক বৈজ্ঞানিক গবেষণা। এতদিন মনে করা হতো পৃথিবী সৃষ্টির অনেক পরে প্রাণের সঞ্চার হয়েছে, কিন্তু বিজ্ঞানীরা এখন দাবি করছেন যে আমাদের ভাবনারও অনেক আগে—পৃথিবী সৃষ্টির মাত্র ৪০ কোটি বছর পরেই—প্রাণের স্পন্দন শুরু হয়েছিল। সাম্প্রতিক এই গবেষণায় উঠে এসেছে ‘লাস্ট ইউনিভার্সাল কমন অ্যানসেস্টর’ বা সংক্ষেপে ‘লুকা’র নাম, যাকে বর্তমান বিশ্বের সব প্রাণের আদিমতম পূর্বপুরুষ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। বিশালাকায় নীল তিমি থেকে শুরু করে মানুষ পর্যন্ত সবার মূলেই রয়েছে এই এককোষী অণুজীব।

ব্রিটেনের ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের নেতৃত্বে পরিচালিত এবং ‘নেচার ইকোলজি অ্যান্ড ইভোলিউশন’ জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণায় বলা হয়েছে, আজ থেকে প্রায় ৪২০ কোটি বছর আগেই ‘লুকা’ পৃথিবীর বুকে অস্তিত্বশীল ছিল। পৃথিবীর বয়স আনুমানিক ৪৬০ কোটি বছর। আগে বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল ৪০০ কোটি বছর আগে প্রাণের জন্ম হয়। কিন্তু নতুন এই তথ্য প্রাণের সময়কালকে অন্তত ২০ কোটি বছর এগিয়ে এনেছে। এত প্রাচীন সময়ের কোনো জীবাশ্ম বা ফসিল পাওয়া অসম্ভব। তাই বিজ্ঞানীরা আণুবীক্ষণিক ফাইলোজেনেটিক্স কৌশল এবং বিবর্তনের জটিল গাণিতিক মডেল ব্যবহার করে বর্তমান প্রাণীদের জিনের বিশ্লেষণ ঘটিয়ে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন।

রহস্যময় এই ‘লুকা’ ছিল মূলত একটি সরল এককোষী অণুজীব বা প্রোক্যারিওট। তবে গঠন সরল হলেও এর মধ্যে এক ধরনের আদিম রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার উপস্থিতি লক্ষ্য করেছেন গবেষকরা, যা বেশ চমকপ্রদ। আরও আশ্চর্যের বিষয় হলো, সে সময় লুকা একাই পৃথিবীতে ছিল না। বিজ্ঞানীদের অনুমান, লুকার বর্জ্যের ওপর নির্ভর করে বেঁচে থাকত এমন আরও কিছু অণুজীব তখন বিদ্যমান ছিল। এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে, সৃষ্টির একদম শুরুর দিকেই পৃথিবীতে একটি প্রাথমিক বাস্তুতন্ত্র গড়ে উঠেছিল। ক্যামব্রিয়ান বিস্ফোরণের কয়েকশ কোটি বছর আগেই যে প্রাণ তার ডালপালা মেলতে শুরু করেছিল, এই আবিষ্কার তা নতুন করে প্রমাণ করল।


মহাবিশ্বের ‘ডাইনোসর’ নক্ষত্রের খোঁজ পেল জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ

প্রযুক্তি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ ডিসেম্বর ১৮ ১২:০০:৫৫
মহাবিশ্বের ‘ডাইনোসর’ নক্ষত্রের খোঁজ পেল জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ
ছবি : সংগৃহীত

মহাবিশ্বের একেবারে শুরুর দিকে এমন কিছু নক্ষত্রের অস্তিত্ব ছিল যা বর্তমানের নক্ষত্রগুলোর তুলনায় ছিল অকল্পনীয় রকমের বিশাল ও শক্তিশালী। জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি এমনই কিছু ‘মহাজাগতিক দৈত্যের’ সন্ধান পেয়েছেন। গবেষকরা আকৃতি ও প্রকৃতির বিশালতার কারণে এই আদিম নক্ষত্রগুলোকে পৃথিবীর ডাইনোসরের সঙ্গে তুলনা করছেন। গবেষণায় দেখা গেছে, এই নক্ষত্রগুলোর ভর ছিল সূর্যের তুলনায় এক হাজার থেকে দশ হাজার গুণ বেশি, যা আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের ধারণাকেও পাল্টে দিচ্ছে।

এসব নক্ষত্রের জীবনকাল ছিল মহাজাগতিক সময়ের হিসেবে খুবই সংক্ষিপ্ত। গবেষকদের মতে, এগুলো মাত্র দুই লাখ পঞ্চাশ হাজার বছরের মতো টিকে থাকত। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো, মৃত্যুর সময় এই নক্ষত্রগুলোতে সাধারণ নক্ষত্রের মতো কোনো সুপারনোভা বা বিস্ফোরণ ঘটত না। বরং বিশাল ভরের কারণে নিজস্ব অভিকর্ষজ বলের প্রভাবে এগুলো সরাসরি ব্ল্যাক হোলে রূপান্তরিত হতো। পৃথিবী থেকে প্রায় ১২.৭ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত GS 3073 নামের একটি গ্যালাক্সি থেকে এই যুগান্তকারী তথ্য পাওয়া গেছে। এর অর্থ হলো, বিজ্ঞানীরা বিগ ব্যাং বা মহাবিস্ফোরণের মাত্র ১.১ বিলিয়ন বছর পরের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেছেন।

জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের মাধ্যমে ওই গ্যালাক্সির রাসায়নিক বিশ্লেষণ করতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা এক অদ্ভুত অসামঞ্জস্য খুঁজে পান। সেখানে অক্সিজেনের তুলনায় নাইট্রোজেনের পরিমাণ ছিল অস্বাভাবিকভাবে বেশি। সাধারণ নক্ষত্র বা পরিচিত কোনো নক্ষত্র-বিস্ফোরণের মাধ্যমে এই রাসায়নিক ভারসাম্যহীনতার ব্যাখ্যা দেওয়া সম্ভব ছিল না। পরে কম্পিউটার মডেল ব্যবহার করে গবেষকরা নিশ্চিত হন যে, সূর্যের চেয়ে হাজার গুণ ভারী নক্ষত্রের ভেতরে চলা বিশেষ পারমাণবিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই কেবল এত বিপুল পরিমাণ নাইট্রোজেন তৈরি হওয়া সম্ভব।

এই গবেষণাটি মহাবিশ্বের সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল বা অতিভরের কৃষ্ণগহ্বরগুলো কীভাবে এত দ্রুত তৈরি হয়েছিল, সেই রহস্য উন্মোচনে নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। গবেষকদের ধারণা, আদিম যুগের এই বিশাল নক্ষত্রগুলো সরাসরি ব্ল্যাক হোলে পরিণত হতো এবং পরবর্তীতে এসব ব্ল্যাক হোল একে অপরের সঙ্গে মিশে গিয়ে দ্রুততম সময়ে গ্যালাক্সির কেন্দ্রে থাকা সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোলগুলো তৈরি করত। GS 3073 গ্যালাক্সির কেন্দ্রে থাকা বিশাল ব্ল্যাক হোলটিও সম্ভবত এভাবেই গঠিত হয়েছে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।


ভিডিও এডিটিং এখন আরও সহজ: অ্যাডোবির ফায়ারফ্লাই নতুন রূপে

প্রযুক্তি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ ডিসেম্বর ১৭ ১১:১৫:০৬
ভিডিও এডিটিং এখন আরও সহজ: অ্যাডোবির ফায়ারফ্লাই নতুন রূপে
ছবি : সংগৃহীত

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তির জগতে বড় ধরনের চমক নিয়ে এল অ্যাডোবি। তাদের জনপ্রিয় ভিডিও টুল ফায়ারফ্লাইয়ে যুক্ত হয়েছে এক নতুন আপডেট। এখন থেকে ব্যবহারকারীরা কেবল টেক্সট বা লেখা কমান্ড দিয়েই ভিডিওর নির্দিষ্ট অংশে পরিবর্তন আনতে পারবেন।

সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, ছোট কোনো পরিবর্তনের জন্য এখন আর পুরো ভিডিও নতুন করে তৈরি করার প্রয়োজন হবে না। প্রযুক্তিবিষয়ক সংবাদমাধ্যম টেকক্রাঞ্চ জানিয়েছে, আগের সংস্করণের সেই বড় সীমাবদ্ধতা এবার দূর করা হয়েছে।

নতুন এই এডিটরের মাধ্যমে ভিডিওর রং পরিবর্তন, ক্যামেরা অ্যাঙ্গেল ঠিক করা কিংবা ভিডিওর ভেতরের কোনো নির্দিষ্ট বস্তু বদলে ফেলার মতো জটিল কাজগুলো এখন মুহূর্তেই করা সম্ভব। ভিডিও নির্মাতাদের কাজ সহজ করতে এতে একটি টাইমলাইন সুবিধাও যুক্ত করা হয়েছে।

এই টাইমলাইনের সাহায্যে ভিডিওর ফ্রেম, অডিওসহ বিভিন্ন কারিগরি দিক আলাদাভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। গত অক্টোবরে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হওয়া এই এডিটরটি এখন সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছে অ্যাডোবি।

শুধু নিজেদের প্রযুক্তি নয়, ফায়ারফ্লাইয়ে অন্য প্রতিষ্ঠানের শক্তিশালী কিছু এআই মডেলও যুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ছবি তৈরির জন্য রয়েছে ‘ফ্লাক্স.২’ এবং ভিডিওর মান বাড়িয়ে ১০৮০পি বা ৪কে রেজল্যুশনে রূপান্তর করার জন্য যুক্ত হয়েছে ‘অ্যাস্ট্রা’ মডেল।

এছড়াও ফায়ারফ্লাই ভিডিও টুলে ক্যামেরার মুভমেন্ট বা নড়াচড়া আরও উন্নত ও মসৃণ করার সুবিধা যোগ হয়েছে। অ্যাডোবি আশা করছে, যুগান্তকারী এই আপডেট ভিডিও নির্মাতাদের সময় বাঁচাবে এবং কাজের গতি বহু গুণ বাড়িয়ে দেবে।


ডায়মন্ড অ্যানভিল সেলে জানা গেল পৃথিবীর জন্মরহস্য

প্রযুক্তি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ ডিসেম্বর ১৬ ২১:২৭:২১
ডায়মন্ড অ্যানভিল সেলে জানা গেল পৃথিবীর জন্মরহস্য
ছবি : সংগৃহীত

পৃথিবীর গভীরতম স্তরে বিদ্যমান খনিজ ‘ব্রিজম্যানাইট’ সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের দীর্ঘদিনের ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে এবং নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে যে এই খনিজটি আগের ধারণার চেয়ে ৫ থেকে ১০০ গুণ বেশি পানি ধারণ করে রেখেছিল। ১২ ডিসেম্বর বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞান সাময়িকী ‘সায়েন্স’-এ প্রকাশিত এই চাঞ্চল্যকর গবেষণায় দাবি করা হয়েছে যে এই আবিষ্কার পৃথিবীতে পানি কীভাবে টিকে ছিল এবং গ্রহটি কীভাবে বসবাসের উপযোগী হয়ে উঠল সেই ধারণায় আমূল পরিবর্তন আনছে। চীনের গুয়াংঝু ইনস্টিটিউট অব জিওকেমিস্ট্রির গবেষক ওয়েনহুয়া লু ও অধ্যাপক দু ঝিশুয়ের নেতৃত্বে পরিচালিত এই গবেষণাটি পৃথিবীর জন্মলগ্নের রহস্য উন্মোচনে এক নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে যেখানে বলা হয়েছে প্রায় ৪৬০ কোটি বছর আগে পৃথিবী সৃষ্টির শুরুতে যখন গ্রহটির পৃষ্ঠ গলিত ম্যাগমা বা আগুনের সাগরে ঢাকা ছিল তখনও উচ্চ তাপমাত্রায় তৈরি হওয়া ব্রিজম্যানাইট তার ভেতরে বিপুল পরিমাণ পানি আটকে রাখতে সক্ষম হয়েছিল।

গবেষণাগারে এই তত্ত্ব যাচাই করতে বিজ্ঞানীরা ‘ডায়মন্ড অ্যানভিল সেল’ নামক বিশেষ যন্ত্র ব্যবহার করে লেজারের সাহায্যে ৪ হাজার ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রা ও প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করেন এবং অবাক হয়ে লক্ষ্য করেন যে এত চরম তাপমাত্রায় ব্রিজম্যানাইটের আণবিক গঠন এমনভাবে পরিবর্তিত হয় যাতে পানির অণু সহজেই তার ভেতরে প্রবেশ করতে পারে। পূর্ববর্তী গবেষণায় ধারণা করা হতো যে এই খনিজে পানির পরিমাণ ছিল প্রতি মিলিয়নে ২২০ ভাগের কম কিন্তু নতুন ফলাফলে দেখা গেছে পৃথিবীর নিচের ম্যান্টলে বা লোয়ার ম্যান্টলে জমে থাকা পানির পরিমাণ বর্তমান পৃথিবীর সব মহাসাগরের মোট পানির ০.০৮ থেকে ১ গুণ পর্যন্ত হতে পারে। গবেষকরা মনে করছেন এই গভীর পানিই পৃথিবীর ভূ-অভ্যন্তরের চলাচল সহজ করেছিল এবং শিলাকে নরম করে গলনাঙ্ক কমানোর পাশাপাশি প্লেট টেকটনিকস বা ভূত্বকের প্লেটের চলাচল সক্রিয় রাখতে মূল ভূমিকা পালন করেছিল। দীর্ঘ সময়ের পরিক্রমায় এই আবদ্ধ পানিই আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের মাধ্যমে ভূপৃষ্ঠে উঠে এসে বায়ুমন্ডল ও আজকের বিশাল মহাসাগর গঠনে সহায়তা করেছে যা পৃথিবীকে প্রাণের জন্য বাসযোগ্য করে তোলার ক্ষেত্রে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

পাঠকের মতামত:

ন্যায়ভিত্তিক ও মানবিক সমাজ গড়তে হলে রাষ্ট্রকে অবশ্যই তার সামাজিক ও নৈতিক দায়বদ্ধতা পুনরুদ্ধার করতে হবে

ন্যায়ভিত্তিক ও মানবিক সমাজ গড়তে হলে রাষ্ট্রকে অবশ্যই তার সামাজিক ও নৈতিক দায়বদ্ধতা পুনরুদ্ধার করতে হবে

রাষ্ট্রের ধারণাটি একসময় কেবল প্রশাসনিক ক্ষমতা, আইনের শাসন এবং নিরাপত্তা প্রদানের সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল। কিন্তু আধুনিক বিশ্বে রাষ্ট্রের ভূমিকা এখন... বিস্তারিত