৫ আগস্ট ২০২৫, বাংলাদেশি টাকায় আজকের আন্তর্জাতিক মুদ্রার রেট

আজ ৫ আগস্ট ২০২৫, দেশের ব্যাংকিং খাতে প্রকাশিত হয়েছে বৈদেশিক মুদ্রার সর্বশেষ বিনিময় হার। আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক বাজারের পরিবর্তন এবং বৈশ্বিক মুদ্রানীতির চাপে মার্কিন ডলার, ইউরো, ব্রিটিশ পাউন্ডসহ বেশ কয়েকটি প্রধান মুদ্রার মান বাংলাদেশের টাকার বিপরীতে উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে গেছে। এই উত্থান শুধু আমদানিনির্ভর পণ্যের দামে প্রভাব ফেলবে না, বরং প্রবাসী আয়, বৈদেশিক ঋণ ও বিনিয়োগ হিসাবেও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
বর্তমানে বিভিন্ন দেশের মুদ্রার বিপরীতে বাংলাদেশি টাকার বিনিময় হার নিচের মতো নির্ধারিত হয়েছে:
মার্কিন ডলার (USD): ১২১.৪২ টাকা
ব্রিটিশ পাউন্ড (GBP): ১৬২.৩১ টাকা
ইউরো (EUR): ১৪০.৩০ টাকা
কুয়েতি দিনার (KWD): ৩৯৭.৪০ টাকা
ওমানি রিয়াল (OMR): ৩১৫.৩৮ টাকা
বাহরাইনি দিনার (BHD): ৩২২.২২ টাকা
সংযুক্ত আরব আমিরাতের দিরহাম (AED): ৩৩.০৭ টাকা
সৌদি রিয়াল (SAR): ৩২.৩৮ টাকা
কাতারি রিয়াল (QAR): ৩৩.২৮ টাকা
মালয়েশিয়ান রিংগিত (MYR): ২৮.৬৭ টাকা
সিঙ্গাপুর ডলার (SGD): ৯৪.৩২ টাকা
ব্রুনাই ডলার (BND): ৯৪.৩০ টাকা
কানাডিয়ান ডলার (CAD): ৮৭.৯৫ টাকা
অস্ট্রেলিয়ান ডলার (AUD): ৭৮.৫৫ টাকা
চাইনিজ ইউয়ান (CNY): ১৬.৪৭ টাকা
জাপানি ইয়েন (JPY): ০.৭৬ টাকা
দক্ষিণ কোরিয়ান ওন (KRW): ০.০৯ টাকা
ইরাকি দিনার (IQD): ০.০৯ টাকা
লিবিয়ান দিনার (LYD): ২২.২৭ টাকা
মালদ্বীপীয় রুপি (MVR): ৭.৮৩ টাকা
দক্ষিণ আফ্রিকান র্যান্ড (ZAR): ৬.৭২ টাকা
তুর্কি লিরা (TRY): ২.৯৮ টাকা
ভারতীয় রুপি (INR): ১.৩৮ টাকা
এই হারের পরিবর্তন প্রতিনিয়তই ঘটে এবং তা নির্ভর করে বৈশ্বিক বাজারের চাহিদা, বৈদেশিক বাণিজ্য ভারসাম্য, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা এবং প্রবাসী আয়ের প্রবাহের ওপর।
রপ্তানি আয়ে বড় ধস; যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কে চাপে পোশাক শিল্প
চলতি অর্থবছরের তৃতীয় মাস অর্থাৎ অক্টোবরে সামগ্রিক রপ্তানি আয়ে পতন অব্যাহত রয়েছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে বাংলাদেশ থেকে ৩৮২ কোটি ৩৮ লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩০ কোটি ৬৮ লাখ ৯০ হাজার ডলার বা ৭.৪৩ শতাংশ কম। দেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাকের রপ্তানিও এই সময়ে কমেছে ৮.৩৯ শতাংশ।
সোমবার রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) এই তথ্য প্রকাশ করেছে।
টানা তিন মাস রপ্তানি কমার হার
চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই রপ্তানি খাতে নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। সেপ্টেম্বরে রপ্তানি কমার হার ছিল ৪ দশমিক ৬১ শতাংশ। আর আগস্টে রপ্তানি কমেছিল ২ দশমিক ৯৩ শতাংশ। তবে গত বছরের জুলাইয়ের তুলনায় চলতি বছরের জুলাইয়ে রপ্তানি খাতে ২৪ দশমিক ৯০ শতাংশ বড় প্রবৃদ্ধি হয়েছিল।
এই এক মাসের বড় প্রবৃদ্ধির প্রভাবে চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাস শেষে (জুলাই-অক্টোবর) সামগ্রিক রপ্তানি খাতে ২ দশমিক ২২ শতাংশের একটি ক্ষীণ প্রবৃদ্ধির ধারা দেখাচ্ছে। যা অর্থবছরের শুরুতে প্রায় ২৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও চার মাস পর এসে তা মাত্র ২ দশমিক ২২ শতাংশে ঠেকেছে।
তৈরি পোশাক খাতে তীব্র পতন
দেশের মোট রপ্তানির ৮০ শতাংশের বেশি আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। টানা তিন মাস ধরে তৈরি পোশাকের রপ্তানি কমলেও অর্থবছরের শুরুটা হয়েছিল দুর্দান্ত। গত জুলাইয়ে ৩৯৬ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল সাড়ে ২৪ শতাংশ। পরের মাসে এই রপ্তানি কমে পৌনে ৫ শতাংশ হয় এবং সেপ্টেম্বরে কমেছিল প্রায় সাড়ে ৫ শতাংশ। গত মাসে, অর্থাৎ অক্টোবরে রপ্তানি হয়েছে মাত্র ৩০২ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক, যা গত বছরের অক্টোবরের তুলনায় ৮ শতাংশ কম।
ইপিবি’র তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে ১ হাজার ২৯৯ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১ দশমিক ৪০ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের প্রথম চার মাসে রপ্তানি হয়েছিল ১ হাজার ২৮১ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক।
রপ্তানি কমার নেপথ্যে একাধিক কারণ
তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল রপ্তানি কমে যাওয়ার কারণগুলো বিশ্লেষণ করেছেন। তিনি বলেন, তৈরি পোশাকের প্রধান দুই বাজার ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানি কমেছে, যার সরাসরি প্রভাব পড়েছে সামগ্রিক রপ্তানিতে।
তিনি উল্লেখ করেন, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের ওপর শুল্ক বসানোর ফলেই রপ্তানি কমেছে। শুল্ক বাড়ানোর ঘোষণার ফলে সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারা সতর্কতা হিসেবে বেশি বেশি তৈরি পোশাক সংগ্রহ করে রেখেছিল। এর ফলে এখন তারা কম পোশাক আমদানি করছে।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্ক বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে বাংলাদেশের বড় বাজার ইউরোপে চীন বেশি মনোযোগ দিয়েছে। এতে ইউরোপের বাজারে চীনের রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়া ইউরোপে বাড়তি মূল্যস্ফীতির কারণে ক্রেতারা তাদের ক্রয় কমিয়েছে। মহিউদ্দিন রুবেল যোগ করেন, এসবের সম্মিলিত প্রভাব পড়েছে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে।
অন্যান্য প্রধান খাতের চিত্র
দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পণ্য রপ্তানি খাত চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত ইতিবাচক ধারায় আছে। জুলাই থেকে অক্টোবর সময়ে এই খাত থেকে ৪১ কোটি ৩৫ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১২ শতাংশ বেশি।
তবে পণ্য রপ্তানিতে তৃতীয় শীর্ষ খাত কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে নিম্নমুখী প্রবণতা দেখিয়েছে। এই সময়ে ৪৮ কোটি ৫৪ লাখ ডলারের কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১.৭২ শতাংশ কম। শুধু গত মাস, অর্থাৎ অক্টোবরে, ১০ কোটি ২২ লাখ ডলারের কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা ৯.৫৭ শতাংশ কম।
বাজারে স্বর্ণের পুনরায় উত্থান, দাম ছুঁতে পারে ৪,০০০ ডলার
আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম আবারও বাড়তে শুরু করেছে। মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) দিনের শুরুতে সামান্য পতনের পর বাজারের সক্রিয়তা বাড়ায় স্পট এবং ফিউচার উভয় ধরনের স্বর্ণের দাম পুনরায় উত্থান লক্ষ্য করেছে। তবে সাম্প্রতিক ঊর্ধ্বগতির পরও স্বর্ণের দাম এখনও সর্বকালের সর্বোচ্চ রেকর্ড স্পর্শ করেনি এবং বাজার সামগ্রিকভাবে এখনও নিম্নমুখী ধারা থেকে পুরোপুরি বেরোতে পারেনি।
দিনের মধ্যভাগে স্পট গোল্ডের দাম আউন্সপ্রতি ৩,৯৯৬.৬৮ ডলারে পৌঁছায়, যা সেশনের শুরুতে ০.৯ শতাংশ কমেছিল। পাশাপাশি, ডিসেম্বরের সরবরাহযোগ্য মার্কিন স্বর্ণ ফিউচারের দাম আউন্সপ্রতি ৪,০০৭.৭০ ডলার হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছে। সুইসকোট ব্যাংকের স্বাধীন বিশ্লেষক কার্লো আলবার্তো ডি কাসা জানিয়েছেন, স্বর্ণের দাম বর্তমানে প্রায় ৪,০০০ ডলারের কাছাকাছি অবস্থানে রয়েছে। তিনি আরও বলেন, আগামী কয়েক সপ্তাহে বাজারের চিত্র বোঝা গুরুত্বপূর্ণ হবে কতটা বৃদ্ধি সম্ভব এবং কোনো বড় সংশোধন আসছে কি না তা তখনই স্পষ্ট হবে।
কার্লো আলবার্তো ডি কাসা আরও বলেন, বর্তমানে আমরা মার্কিন ডলারের দৃঢ় অবস্থান লক্ষ্য করছি। ডিসেম্বরে সুদের হার কমানোর আশা ধীরে ধীরে কমছে, এবং বেড়ে যাওয়া ইল্ড স্বর্ণের দামের ওপর চাপ ফেলছে। বিনিয়োগকারীরা মার্কিন অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ সূচকের দিকে নজর দিচ্ছেন, যা সুদের হার নির্ধারণে মূল ভূমিকা পালন করবে।
গত তিন মাসে ডলারের মান শীর্ষ পর্যায়ে উঠেছে। ফেডের মধ্যে সুদের হার কমানোর বিষয়ে ভিন্নমত থাকায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। কে-সিএম ট্রেডের প্রধান বিশ্লেষক টিম ওয়াটারার বলেন, মার্কিন ডলারের দৃঢ় অবস্থান এখন স্বর্ণের বৃদ্ধির পথে প্রধান প্রতিবন্ধকতা। বিনিয়োগকারীরা বছরের শেষের দিকে আরেকটি সুদের হার হ্রাসের সম্ভাবনা পুনর্মূল্যায়ন করছেন।
গত সপ্তাহে ফেড এই বছরের মধ্যে দ্বিতীয়বার সুদের হার হ্রাস করেছে। তবে ফেডের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল বলেছেন, এখনই আরেকটি সুদের হার কমানো নিশ্চিত নয়। বর্তমানে বিনিয়োগকারীরা ডিসেম্বর মাসে সুদের হার কমার সম্ভাবনা ৬৫ শতাংশ হিসেবে দেখছেন, যা পাওয়েলের বক্তব্যের আগে ৯০ শতাংশের বেশি ছিল।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শক্তিশালী ডলার, বেড়ে যাওয়া ইল্ড এবং ফেডের অনিশ্চয়তা স্বর্ণের বাজারকে অত্যন্ত সংবেদনশীল করে তুলেছে। সামনের কয়েক সপ্তাহে মার্কিন অর্থনৈতিক সূচক এবং ফেডের নীতি স্বর্ণের দামের ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।
নির্বাচিত সরকারের অভাবে ব্যবসা-বাণিজ্যে অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত
ব্যবসায়ীদের মতে, দেশের ব্যবসা পরিবেশের উন্নতি এবং অর্থনীতির গতিশীলতা আনতে নির্বাচিত সরকারের প্রয়োজন। তারা মনে করছেন, শ্রম আইন সংশোধন, শ্রমিক সংগঠন গঠনসহ গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব আগামী নির্বাচিত সরকারের হাতে থাকা উচিত। এছাড়াও, জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ পিছিয়ে দেওয়ার জন্য সরকারের পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে।
সোমবার দুপুরে গুলশানের একটি হোটেলে ইংরেজি দৈনিক ফিন্যানশিয়াল এক্সপ্রেস আয়োজিত অর্থনৈতিক সংস্কার বিষয়ক সেমিনারে ব্যবসায়ীরা এ উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
সেমিনারের প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয় সংক্রান্ত বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী। ফিন্যানশিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ সভাপতিত্ব করেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আনোয়ার হোসেন এবং রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হাসান আরিফ। বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ী নেতারা সেমিনারে তাদের সমস্যার কথা তুলে ধরেন।
প্রধান অতিথি লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, "দায়িত্ব নেওয়ার সময় ব্যবসা পরিবেশ প্রায় ৯৯ শতাংশ খারাপ ছিল। এখন সম্ভবত এটি ৯৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ধীরে ধীরে এটি ৯০ শতাংশে উন্নত হবে। তবে দ্রুত উন্নতি না হওয়ার কারণ নিয়ে আলোচনা প্রয়োজন। বর্তমান সরকার এনবিআরের সিঙ্গেল উইন্ডো ব্যবস্থা চালু করেছে। এর ফলে দুই মাসে প্রায় ১২ লাখ সরাসরি সাক্ষাৎ কমেছে, অর্থাৎ ১২ লাখ বার কাগজপত্র এনবিআরে আনা হয়নি।" তিনি বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক তথ্যের উল্লেখও করেন।
বাংলাদেশ থাই চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি শামস মাহমুদ বলেন, "শ্রম আইন এবং শ্রমিক সংগঠন সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত এখন কেন নেওয়া হচ্ছে? নির্বাচিত সরকার তিন মাসের মধ্যে দায়িত্ব নেবে, সেক্ষেত্রে এ ধরনের সিদ্ধান্ত তাদের হাতে থাকা উচিত। আমরা অর্থনৈতিক সংস্কারের কথা বলছি, কিন্তু কোনো মুক্তবাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) বা অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) কার্যকর হচ্ছে না।"
নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, "বর্তমান ব্যবসা পরিস্থিতিতে এলডিসি উত্তরণের উপযুক্ত সময় নয়। ইতিমধ্যেই ১৬টি ব্যবসায়ী সংগঠন সরকারের কাছে আবেদন করেছে যাতে জাতিসংঘ বাংলাদেশির পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে এবং এলডিসি উত্তরণ পিছিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করে।"
ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, "এখন আমাদের নির্বাচিত সরকার দরকার। আগামী ১০–১৫ বছর জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার না থাকলে অনেক সমস্যা সমাধান হবে না।"
সিরামিকশিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সিরামিক ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএমইএ) সভাপতি মইনুল ইসলাম বলেন, "সুশাসন ছাড়া কোনো দেশের ব্যবসা বা অর্থনীতি এগোবে না। ক্রেতারা আতঙ্কিত, পণ্য কিনতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে একমাত্র সমাধান নির্বাচন।"
সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন বিজিএমইএর সিনিয়র সহসভাপতি ইনামুল হক খান, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) চেয়ারম্যান শরীফ জহীর, বাংলাদেশ অ্যাগ্রো কেমিক্যাল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কে এস এম মোস্তাফিজুর রহমান, মিডল্যান্ড ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আহসান-উজ জামান এবং আকিজ বশির গ্রুপের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা মোহাম্মদ খোরশেদ আলম।
বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল বলেন, "বিদেশি বিনিয়োগের আগ্রহ বাড়ছে, কিন্তু দেশের অবকাঠামো দুর্বল। বিমানবন্দর আগুনে পুড়ে গেলে বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ মনে করবে না।"
ইউসিবির চেয়ারম্যান শরীফ জহীর বলেন, "ব্যাংক খাতের বর্তমান অবস্থা যদি না বদলায়, তবে খাতটি দুই বছরের বেশি টিকে থাকতে পারত না। খেলাপি ঋণের মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যবস্থা না নিলে প্রকৃত ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।"
-শরিফুল
বাণিজ্য ঘাটতি মোকাবিলায় নতুন উদ্যোগ: প্রতি টন ৩০২ ডলারে মার্কিন গম
বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে স্বাক্ষরিত দ্বিপাক্ষিক চুক্তির (জি-টু-জি চুক্তি নং-১) অধীনে দ্বিতীয় চালানে ৬০ হাজার ৮০২ মেট্রিক টন গম নিয়ে এমভি স্পার এরিস নামের একটি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছেছে। সোমবার (৩ নভেম্বর) ভোর ৪টায় জাহাজটি যুক্তরাষ্ট্রের করপাস ক্রিস্টি বন্দর থেকে এই বিশাল পরিমাণ গম নিয়ে কুতুবদিয়ায় নোঙর করে।
জি-টু-জি চুক্তির অধীনে আমদানি
এই চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ মোট ৪ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন গম আমদানি করবে। এমভি স্পার এরিস জাহাজটি এই চুক্তির দ্বিতীয় চালান বহন করে এনেছে। এর আগে, প্রথম চালান হিসেবে এমভি নোর্স স্ট্রাইড নামের একটি জাহাজ ৫৬ হাজার ৯৫৯ মেট্রিক টন গম নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙর করেছিল, যার মাধ্যমে আমদানি কার্যক্রম শুরু হয়।
বন্দরে নোঙরের পরপরই এমভি স্পার এরিস জাহাজে রক্ষিত গমের গুণগত মান পরীক্ষার কার্যক্রম ইতোমধ্যে শুরু করা হয়েছে। নমুনা পরীক্ষার কাজ শেষ হওয়ার পর পরই দ্রুততম সময়ের মধ্যে গম খালাসের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। উল্লেখ্য, এই পুরো কার্যক্রমটি গত ২৫ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের (MOU) আলোকে শুরু হওয়ার বিষয়টি তথ্য বিবরণীতে জানানো হয়েছিল।
বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর কৌশল
সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়া, ইউক্রেন ও ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে গম আমদানি করা হলেও, এবার যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম আমদানির এই সিদ্ধান্তটি কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। মূলত, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর প্রেক্ষাপটে এই দেশটি থেকে গম আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ইউএস হুইট অ্যাসোসিয়েশনের অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান এগ্রোক্রপ ইন্টারন্যাশনাল-এর কাছ থেকে জি-টু-জি বা সরাসরি সরকার-থেকে-সরকার পদ্ধতিতে এই গম ক্রয় করা হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী, প্রতি টন গমের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০২ মার্কিন ডলার। এই ক্রয় প্রক্রিয়াটি ২৩ জুলাই ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির অনুমোদনের পর শুরু হয়, যেখানে মোট ২ লাখ ২০ হাজার টন গম আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছিল।
১২১তম ১০০ টাকা প্রাইজবন্ড ড্র, প্রথম পুরস্কার ৬ লাখ টাকা
বাংলাদেশ প্রাইজবন্ডের ১০০ টাকা মূল্যমানের ১২১তম ড্র সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়েছে। ড্রয়ে প্রথম পুরস্কার হিসেবে ৬ লাখ টাকা পেয়েছে নম্বর ০১০৮৩৩১। দ্বিতীয় পুরস্কার ৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা পাওয়া নম্বর হলো ০১৫৬৮৯৭। এছাড়া তৃতীয় পুরস্কার হিসেবে ১ লাখ টাকা করে দুটি নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে—০০৫৬৩৬২ ও ০৪৫৩৬৬৮। চতুর্থ পুরস্কার ৫০ হাজার টাকার জন্য নির্বাচিত নম্বর হলো ০৯১২৪৪৪ ও ০৯৮৩৫৭২।
রোববার (২ নভেম্বর) ঢাকার বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে এই ড্র অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংক, সঞ্চয় অধিদপ্তর এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
ড্রে পঞ্চম পুরস্কারের জন্য ১০ হাজার টাকার ৪০টি নম্বর ঘোষণা করা হয়েছে। সেগুলো হলো:০০১৩৩৮৬, ০০১৪৯৯২, ০০২৮১৮৩, ০০৫৩২২৬, ০১১৯০৬৯, ০১৬৮৮৭৩, ০২৪৪০৭৪, ০২৫৭৫৯৪, ০২৬৫৯৩৮, ০২৯২৯৪১, ০২৯৬৪২৯, ০৩২৭৯১০, ০৩৪০৪০৭, ০৩৪৯৩১৫, ০৩৫৫২০৬, ০৩৬৭৫২৯, ০৩৬৯১১৭, ০৪১৭৭২৮, ০৪২৫৬৮৩, ০৫০১০৪৩, ০৫১৫৫৪২, ০৫৪৯৫২১, ০৫৬৫৯৩৬, ০৬০২২৬৫, ০৬২০২৫৯, ০৬২৪৭১৮, ০৬৭৪৩৪৪, ০৭১২৭৪০, ০৭৫৯০৫৯, ০৭৬৯৩৯২, ০৭৮২৭২৮, ০৭৯১৪২৮, ০৭৯৯৭৩২, ০৮২১৬৭৭, ০৮৬৫১২২, ০৯০৩৩৯২, ০৯০৪৩৫২, ০৯২২১৮০, ০৯৩৬৬১৭, ০৯৮৫৯৫২।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, মোট ৩,৮১৮টি প্রাইজবন্ডের মধ্যে ৪৬টি টিকিট পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত হয়েছে। সঞ্চয় অধিদপ্তরের নিয়ম অনুযায়ী, ড্রয়ের ৬০ দিনের মধ্যে বিজয়ীরা তাদের পুরস্কার দাবি করতে পারবেন। উল্লেখ্য, নির্ধারিত সময়সীমার পর প্রাইজবন্ডের দাবিগুলি গ্রহণযোগ্য হবে না।
২০২৩ সালে প্রবর্তিত সংশোধিত নীতিমালার অধীনে, প্রাইজবন্ডের পুরস্কারের অর্থের ওপর ২০ শতাংশ কর প্রযোজ্য।
বেসরকারি ব্যাংক ঘিরে প্রবাসী রেমিট্যান্সের মূল প্রবাহ
অক্টোবর মাসে প্রবাসী বাংলাদেশিরা দেশে পাঠিয়েছেন মোট ২৫৬ কোটি ৩৪ লাখ ৮০ হাজার ডলার, যা বর্তমান বিনিময় হার ১২২ টাকা প্রতি ডলার ধরে ৩১,২৭৩ কোটি ৪৮ লাখ টাকার সমতুল্য। এটি দৈনিক গড়ে প্রায় ৮ কোটি ২৬ লাখ ডলার বা প্রায় ১,০০৮ কোটি টাকার প্রবাসী আয় হিসেবে গণনা করা যায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, এই মাসে সরকারি, বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকের মিলিতভাবে ৭টি ব্যাংকের মাধ্যমে কোনো রেমিট্যান্স আসেনি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে বলা হয়েছে, অক্টোবরের মোট রেমিট্যান্সের মধ্যে রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকগুলো মাধ্যমে এসেছে ৪৭ কোটি ৭৪ লাখ ৭০ হাজার ডলার। বিশেষায়িত ব্যাংক হিসেবে কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ২৪ কোটি ২ লাখ ৫০ হাজার ডলার। বেসরকারি ব্যাংকগুলো মাধ্যমে এসেছে সর্বাধিক ১৮৩ কোটি ৮৬ লাখ ৭০ হাজার ডলার। এছাড়া, বিদেশি ব্যাংকগুলো মাধ্যমে এসেছে ৭৭ লাখ ডলারের বেশি।
এই তথ্য থেকে স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে যে, প্রবাসী বাংলাদেশিদের অর্থ পাঠানোর মূল ধারা বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে প্রবাহিত হচ্ছে। একই সঙ্গে কিছু ব্যাংক কোনো রেমিট্যান্স গ্রহণ করতে না পারা বা শূন্য থাকতে থাকা প্রভাবকে কেন্দ্র করে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান দেখা দিতে পারে।
প্রবাসী আয় দেশের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ বাড়ানো, অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা ও বৈদেশিক লগ্নি বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অক্টোবর মাসের এই পরিসংখ্যান অর্থনীতিবিদদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
ডলারের যুগের অবসান? পাঁচ শতাব্দীর আর্থিক ইতিহাসে পুনরাবৃত্ত পতনের ছন্দ
কল্পনা করুন, সময়টা ১৯৪৪ সাল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ তখনও শেষ হয়নি। ৪৪টি মিত্র দেশের প্রতিনিধিরা সমবেত হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ হ্যাম্পশায়ারের পাহাড়ি শহর ব্রেটন উডসের মনোরম মাউন্ট ওয়াশিংটন হোটেলে। সেই বৈঠকে তাঁরা এমন এক সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন, যা পরবর্তী আশি বছরের জন্য পৃথিবীর অর্থনীতির ভাগ্য নির্ধারণ করবে। সভাকক্ষের ভেতরে ইতিহাস যেন থমকে আছে। ব্রিটেন, যে দেশ একসময় পৃথিবীর আর্থিক হৃদস্পন্দন ছিল, এখন প্রায় নিঃস্ব। তার জাতীয় ঋণ জিডিপির ২৪৯ শতাংশে পৌঁছেছে। পরপর দুটি বিশ্বযুদ্ধের ধাক্কায় সাম্রাজ্যটির অর্থনীতি প্রায় মুমূর্ষু অবস্থায়। যে দেশ শতাব্দীর পর শতাব্দী সমুদ্রপথ শাসন করেছিল, তার রিজার্ভ শেষ, ব্যাংক শূন্য এবং জনগণ ক্লান্ত। সেই মুহূর্তে উপস্থিত সবাই বুঝেছিল, এক যুগের অবসান ঘনিয়ে এসেছে।
তখন ঘটে ইতিহাসে বিরল এক ঘটনা। বিশ্বের রিজার্ভ মুদ্রার মুকুট এক সাম্রাজ্য থেকে অন্য সাম্রাজ্যের হাতে হস্তান্তরিত হয়। ব্রিটিশ পাউন্ড, যা দুই শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে বিশ্ব বাণিজ্যের মেরুদণ্ড ছিল, হারায় তার মর্যাদা। সেই শূন্যস্থান পূরণ করে মার্কিন ডলার। তবে এটি কেবল আর্থিক হস্তান্তর নয়। এটি ছিল মানবসভ্যতার আর্থিক ইতিহাসে বারবার পুনরাবৃত্ত এক চক্রের ধারাবাহিকতা। এই চক্রের চারটি ধাপ উত্থান, শিখর, অতিবিস্তার এবং পতন যুগে যুগে সাম্রাজ্য থেকে সাম্রাজ্যে পুনরাবৃত্ত হয়েছে। ইতিহাসে পর্তুগাল, স্পেন, নেদারল্যান্ডস এবং ব্রিটেন সবাই এই একই ধাপের মধ্য দিয়ে গেছে। আজ মার্কিন ডলার সেইসব পূর্বসূরির মতোই একই সতর্ক সংকেত দেখাতে শুরু করেছে।
এই চক্রটি বুঝতে হলে ফিরে যেতে হবে অতীতে, প্রায় ছয় শতাব্দী পেছনে, ইউরোপের পশ্চিম উপকূলে, পর্তুগালের উত্থানের কাহিনিতে।
পর্তুগালের রিয়াল ও আবিষ্কারের যুগ
১৪৫০ সালের দিকে পর্তুগিজ রিয়াল হয়ে ওঠে বিশ্বের প্রথম প্রকৃত রিজার্ভ মুদ্রা। পরবর্তী আশি বছর পর্তুগাল ছিল বৈশ্বিক বাণিজ্যের অবিসংবাদিত নেতা। তাদের সাফল্যের রহস্য ছিল নৌচালনা ও বৈদেশিক বাণিজ্যে উদ্ভাবন। ১৪৫৩ সালে অটোমান সাম্রাজ্যের হাতে কনস্টান্টিনোপলের পতনের পর প্রাচীন মশলার বাণিজ্যপথ বন্ধ হয়ে যায়। ইউরোপীয় বণিকদের জন্য এটি ছিল এক বিশাল ধাক্কা, কিন্তু পর্তুগাল খুঁজে পেল নতুন পথ। তারা আফ্রিকার দক্ষিণ প্রান্ত ঘুরে সমুদ্রপথে এশিয়ায় পৌঁছে দেয় বাণিজ্যের নতুন দ্বার, শুরু হয় আবিষ্কারের যুগ।
লিসবন তখন হয়ে ওঠে বিশ্বের বাণিজ্যকেন্দ্র। পর্তুগিজ রিয়াল ইউরোপ থেকে এশিয়া পর্যন্ত গৃহীত হতে শুরু করে। সাম্রাজ্য ছড়িয়ে পড়ে আফ্রিকা, ভারত, মালয়েশিয়া, জাপান এবং চীনের ম্যাকাও পর্যন্ত। কিন্তু ইতিহাসের চিরন্তন নিয়ম অনুযায়ী সাফল্যই হয়ে ওঠে পতনের সূচনা। চারটি মহাদেশে সামরিক ঘাঁটি রক্ষা করতে করতে তাদের ভাণ্ডার ফুরিয়ে যায়। প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তি ডাচ, ফরাসি ও ব্রিটিশরা ক্রমে শক্তিশালী হয়ে ওঠে। ১৫৩০-এর দশকে রাজপরিবারে উত্তরাধিকার সংকট সৃষ্টি হলে দেশটি অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে। শেষ পর্যন্ত ১৫৮০ সালে স্পেনের হাতে পর্তুগাল আত্মসমর্পণ করে, গঠিত হয় আইবেরিয়ান ইউনিয়ন। প্রায় আশি বছরের আধিপত্যের পর ইতিহাসের মঞ্চ থেকে হারিয়ে যায় পর্তুগালের রিয়াল। তার জায়গা নেয় স্প্যানিশ রূপা।
স্প্যানিশ রূপার সাম্রাজ্য
স্পেনের উত্থান শুরু হয় আন্দিজ পর্বতমালার কোলে বলিভিয়ার পোটোসি নামের এক পাহাড়ে বিশ্বের সবচেয়ে সমৃদ্ধ রূপার খনি আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে। ১৫৪৫ সালে আবিষ্কৃত এই খনি ১৫৭৫ থেকে ১৬৩৫ সালের মধ্যে উৎপাদন করেছিল বিশ্বের প্রায় অর্ধেক রূপা। এই রূপা দিয়ে তৈরি হয় বিখ্যাত “পিস অফ এইট”, যা বিশ্বের প্রথম বৈশ্বিক মুদ্রা হিসেবে পরিচিত হয়। এই স্প্যানিশ ডলার এতটাই নির্ভরযোগ্য ছিল যে ১৮৫৭ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে বৈধ মুদ্রা হিসেবে প্রচলিত ছিল।
স্পেনের আধিপত্য স্থায়ী হয় প্রায় ১১০ বছর। কিন্তু অতিবিস্তার ও ঋণের বোঝা তাদের পতন ডেকে আনে। রাজা চার্লস প্রথম রেখে যান ৩৬ মিলিয়ন ডুকাট ঋণ এবং প্রতি বছর এক মিলিয়ন ডুকাটের ঘাটতি। তাঁর পুত্র ফিলিপ দ্বিতীয় এই বোঝা সামলাতে গিয়ে চারবার দেউলিয়া ঘোষণা করেন ১৫৫৭, ১৫৬০, ১৫৭৫ এবং ১৫৯৬ সালে। রূপার অবিরাম প্রবাহ দেশে সৃষ্টি করে ভয়াবহ মুদ্রাস্ফীতি। ফিলিপ দ্বিতীয়ের রাজত্বকালে পণ্যের দাম চারগুণ বেড়ে যায়। ফিলিপ তৃতীয়ের আমলে রূপার সরবরাহ অর্ধেকে নেমে আসতেই অর্থনীতি ধসে পড়ে এবং ১৬০৭ সালে আবার দেউলিয়াত্ব ঘোষণা করতে হয়। ১৬৪১ সালে আইবেরিয়ান ইউনিয়ন ভেঙে যায়। স্পেনের রূপার রাজত্বের অবসান ঘটে এবং আর্থিক শক্তির মঞ্চে উঠে আসে ডাচ প্রজাতন্ত্র।
নেদারল্যান্ডসের সোনালি যুগ
১৭ শতকে নেদারল্যান্ডস হয়ে ওঠে বিশ্বের আর্থিক রাজধানী। আমস্টারডাম তখন বাণিজ্যের নতুন কেন্দ্র এবং ডাচ গিল্ডার ইউরোপের কার্যত রিজার্ভ মুদ্রা। আমস্টারডাম ব্যাংক প্রবর্তন করে আন্তর্জাতিক অর্থপ্রদানের আধুনিক ও নির্ভরযোগ্য ব্যবস্থা। ডাচ বণিকেরা প্রথম গঠন করে শেয়ারবাজার, সামুদ্রিক বীমা এবং শেয়ার কোম্পানির ধারণা।
১৬৪২ থেকে ১৭২০ পর্যন্ত, প্রায় আট দশক ধরে, বিশ্বের এক তৃতীয়াংশ বাণিজ্য সম্পন্ন হতো ডাচ মুদ্রায়। কিন্তু একই চক্র পুনরায় দেখা দেয়। চতুর্থ ইংরেজ-ডাচ যুদ্ধের (১৭৮০ থেকে ১৭৮৪) ফলে দেশটি দেউলিয়া হয়ে পড়ে। বিশাল ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভেঙে যায়। এই শূন্যস্থান পূরণ করে ব্রিটেন, যে তখন শিল্পবিপ্লবের মাধ্যমে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছিল।
ব্রিটিশ পাউন্ড ও শিল্পবিপ্লবের শতাব্দী
দুই শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে ব্রিটিশ পাউন্ড ছিল বৈশ্বিক বাণিজ্যের প্রধান মুদ্রা। শিল্পবিপ্লব, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি ও উপনিবেশ সাম্রাজ্যের শক্তিতে ব্রিটেন গড়ে তোলে পৃথিবীর বৃহত্তম অর্থনীতি। ১৮১৬ সালের গ্রেট রিকয়েনেজের পর স্বর্ণমান প্রতিষ্ঠিত হয়, যা পাউন্ডকে বিশ্বের সবচেয়ে স্থিতিশীল মুদ্রায় পরিণত করে। ১৯২২ সালের মধ্যে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য শাসন করত বিশ্বের এক চতুর্থাংশ ভূমি ও এক পঞ্চমাংশ জনসংখ্যা, প্রায় ৪৫৮ মিলিয়ন মানুষ।
তবে দীর্ঘস্থায়ী এই আধিপত্যের অবসান ঘটাতে শুরু করে দুটি বিশ্বযুদ্ধ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ঋণ বেড়ে যায় ৬৫০ মিলিয়ন পাউন্ড থেকে ৭ বিলিয়নে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে সরকারি ঋণ দাঁড়ায় জিডিপির ২৭০ শতাংশে। ব্রিটেন যুদ্ধ জিতলেও হারায় তার আর্থিক নেতৃত্ব।
ব্রেটন উডস ও ডলারের যুগ
১৯৪৪ সালের জুলাই মাসে ৭০০ প্রতিনিধি জড়ো হন ব্রেটন উডসে। লক্ষ্য ছিল যুদ্ধবিধ্বস্ত বিশ্ব অর্থনীতির পুনর্গঠন। সেই সম্মেলন থেকেই জন্ম নেয় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF) এবং বিশ্বব্যাংক (World Bank)। চুক্তি অনুযায়ী সব বড় মুদ্রা বাঁধা হয় মার্কিন ডলারের সঙ্গে, আর ডলার বাঁধা হয় স্বর্ণে প্রতি আউন্স ৩৫ ডলার দরে। এই মুহূর্তেই ব্রিটিশ পাউন্ডের যুগের সমাপ্তি ঘটে এবং সূচনা হয় আমেরিকান যুগের।
এরপরের পঁচিশ বছর ডলার রাজত্ব করে নিরঙ্কুশভাবে। ১৯৭১ সালে প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন ডলারের স্বর্ণ-রূপান্তরযোগ্যতা স্থগিত করেন এবং স্বর্ণমান বিলুপ্ত হয়। তবু ডলার ধসে পড়েনি। বরং খুঁজে নেয় নতুন ভিত্তি, তেল।
১৯৭৩ সালের ওপেক তেল সংকটের পর যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরবের সঙ্গে এক কৌশলগত চুক্তি করে। মার্কিন সামরিক সুরক্ষার বিনিময়ে সৌদি তেল বিক্রি হবে কেবল ডলারে। ১৯৭৫ সালের মধ্যে সব ওপেক সদস্য এই চুক্তি মেনে নেয়। জন্ম নেয় পেট্রো-ডলার ব্যবস্থা। তেল ছিল সবার প্রয়োজন, তাই ডলারও হয়ে ওঠে সবার প্রয়োজন। এই কৃত্রিম চাহিদা যুক্তরাষ্ট্রকে এমন বিশাল ঘাটতি বহনের সুযোগ দেয় যা অন্য কোনো দেশের পক্ষে অসম্ভব ছিল।
২০০০ সালের দিকে বিশ্বের বৈদেশিক রিজার্ভের ৭০ শতাংশ ছিল ডলারে। কিন্তু ২০২৪ সালে তা কমে দাঁড়ায় ৫৭ দশমিক ৮ শতাংশে। ২০০৮ সালের আর্থিক সংকটের সময় বিদেশি বিনিয়োগকারীরা মার্কিন ট্রেজারির অর্ধেকেরও বেশি ধারণ করত, অথচ ২০২৫ সালে তা নেমে আসে মাত্র ৩০ শতাংশে।
ডি-ডলারাইজেশনের দ্রুত অগ্রযাত্রা
একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বী জোট ব্রিকস, যার সদস্য ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা, সম্প্রতি যুক্ত করেছে মিশর, ইথিওপিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ইরান এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতকে। তারা গড়ে তুলছে ব্রিকস ব্রিজ, একটি পেমেন্ট নেটওয়ার্ক যা সেন্ট্রাল ব্যাংকের ডিজিটাল মুদ্রার মাধ্যমে লেনদেন করবে, ডলার ছাড়াই। ২০২৫ সাল নাগাদ এই জোট ও তাদের ১৩টি অংশীদার দেশ এই উদ্যোগে যুক্ত হচ্ছে।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি নিজেই ঋণে ডুবে আছে। ২০২৫ সালের মার্চে মার্কিন সরকারের মোট ঋণ দাঁড়ায় ৩৬ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন ডলারে, যা জিডিপির ১২৪ শতাংশ। এটি সেই একই সূচক যা ইতিহাসে প্রতিটি সাম্রাজ্যের পতনের আগে দেখা গেছে, অতিরিক্ত ঋণ, সামরিক অতিবিস্তার এবং উৎপাদনশীলতার পতন।
ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি
পর্তুগাল, স্পেন, নেদারল্যান্ডস এবং ব্রিটেন সবাই একই পথে হেঁটেছে। তাদের রিজার্ভ মুদ্রার আয়ু ছিল ৭৮ থেকে ২২০ বছর পর্যন্ত, গড়ে প্রায় ৯৫। মার্কিন ডলার এখন ৮১ বছরে পা দিয়েছে। ইতিহাসের চক্র আবার ঘুরে দাঁড়াচ্ছে।
প্রত্যেক রিজার্ভ মুদ্রার চারটি ধাপ থাকে। প্রথম ধাপ উত্থান, যখন একটি দেশ বাণিজ্য, অর্থনীতি বা সামরিক শক্তিতে উদ্ভাবনের মাধ্যমে নেতৃত্ব গড়ে তোলে। পর্তুগাল নৌচালনায় বিপ্লব ঘটায়, স্পেন রূপার জোগান নিয়ন্ত্রণ করে, ডাচরা আধুনিক অর্থব্যবস্থা তৈরি করে, ব্রিটেন শিল্পবিপ্লব ঘটায় এবং যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ-পরবর্তী শিল্পশক্তিতে উত্থান ঘটায়। দ্বিতীয় ধাপ শিখর, যখন সেই মুদ্রা হয়ে ওঠে বৈশ্বিক মানদণ্ড এবং বিশ্বের ৬০ শতাংশ বাণিজ্য এতে পরিচালিত হয়। তৃতীয় ধাপ অতিবিস্তার, যেখানে সামরিক ব্যয়, ঋণ এবং উৎপাদনশীলতার পতন দেখা দেয়। পর্তুগাল চার মহাদেশে সামরিক বোঝা বইতে পারেনি, স্পেন বারবার দেউলিয়া হয়েছে, ডাচরা ব্রিটেনের সঙ্গে যুদ্ধ করে নিঃশেষ হয়েছে, ব্রিটেনের ঋণ পৌঁছেছিল জিডিপির ২৭০ শতাংশে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ঋণ ১২৪ শতাংশ এবং মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ ব্যয় আট ট্রিলিয়ন ডলার। শেষ ধাপ পতন, যখন আস্থা হারিয়ে যায় এবং বৈশ্বিক ক্ষমতার কেন্দ্র সরে যায় অন্যত্র।
পরবর্তী বিশ্বব্যবস্থা: একমেরু না বহুমেরু
স্পেনের হাতে পতনের পর পর্তুগাল আর কখনো মাথা তুলতে পারেনি। স্পেন শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ধুঁকেছে, নেদারল্যান্ডস ধনী থেকেও আঞ্চলিক শক্তিতে সীমিত হয়েছে, আর ব্রিটেনের সাম্রাজ্য ১৯৪৫-এর পর গলে গেছে। ১৯৫০-এর দশকে এখনও বিশ্বের ৫৫ শতাংশ রিজার্ভ ছিল স্টার্লিংয়ে, কিন্তু দুই দশকের মধ্যেই তা অর্ধেকে নেমে আসে। ব্রিটিশ শতাব্দী শেষ, শুরু হয় আমেরিকান শতাব্দী।
তবে এমন পরিবর্তন একদিনে ঘটে না। ব্রিটেনের পতন ছিল ধীর, যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিকভাবে তাকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল বহু আগেই, যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে ডলার পাউন্ডকে প্রতিস্থাপন করে পরে। আজ একই ধীর রূপান্তর সম্ভবত আবার ঘটছে, এইবার চীনের দিকে, কিংবা একাধিক শক্তির সম্মিলিত নেতৃত্বে নতুন এক বহুমেরু বিশ্বব্যবস্থার দিকে।
ইতিহাসে রিজার্ভ মুদ্রার গড় আয়ু প্রায় ৯৫ বছর। মার্কিন ডলার সেই সীমার কাছাকাছি এসে পৌঁছেছে। বৈশ্বিক রিজার্ভে ডলারের অংশীদারিত্ব কমছে, বিদেশি ট্রেজারি বিনিয়োগ হ্রাস পাচ্ছে, ব্রিকস বিকল্প গড়ে তুলছে, পেট্রো-ডলার ব্যবস্থা দুর্বল হচ্ছে এবং যুক্তরাষ্ট্র ১৩০ দেশে ৯০০ সামরিক ঘাঁটি ধরে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে। এই চিত্র যেন ইতিহাসেরই পুনরাবৃত্তি, একই ছন্দে, নতুন মুখে।
তবে প্রশ্ন রয়ে গেছে, এই পরিবর্তন কত দ্রুত ঘটবে এবং পরবর্তী আর্থিক যুগের নেতৃত্ব নেবে কে। এটি কি হবে ব্রিটেনের মতো ধীর অবসান, নাকি নেদারল্যান্ডসের মতো আকস্মিক পতন। একটি একক শক্তি কি আবার বিশ্ব অর্থনীতির শীর্ষে উঠবে, নাকি ভবিষ্যৎ হবে বহুমেরু, যেখানে কয়েকটি রিজার্ভ মুদ্রা ভাগাভাগি করবে বৈশ্বিক প্রভাব।
ইতিহাস কখনো ঠিক একরকম পুনরাবৃত্তি হয় না, কিন্তু তার ছন্দ ফিরে আসে। আর যদি সেই ছন্দ এবারও সত্য প্রমাণিত হয়, তবে পৃথিবী এখন দাঁড়িয়ে আছে এক ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে, ডলারের আধিপত্যের শেষ অধ্যায়ের দ্বারপ্রান্তে।
জ্বালানি বাজারে পরিবর্তন ও বৈশ্বিক প্রভাব প্রকাশ
বিশ্বব্যাপী জ্বালানি বাজারে চলমান পরিবর্তন এবং এর প্রভাব নিয়ে বিশ্বব্যাংক সম্প্রতি একটি বিশদ বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৬ সালে অপরিশোধিত তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৬০ ডলারে নেমে আসার সম্ভাবনা রয়েছে, যা বর্তমানে ৬৮ ডলারে বিক্রি হচ্ছে। তেলের মূল্যে এ পতন বিশেষভাবে কৃষি ও খাদ্য খাতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। বিশ্ববাজারে জিনিসপত্রের দাম আনুমানিক ৭ শতাংশ পর্যন্ত কমতে পারে। মূলত চীনে তেলের চাহিদা স্থিতিশীল থাকায় বৈশ্বিকভাবে তেলের বাজারে অস্থিরতা সীমিত থাকবে।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৬ সালে বিশ্বব্যাপী পণ্যের দাম হবে গত ৬ বছরে সর্বনিম্ন স্তরে, যা ক্রমাগত চতুর্থ বছর পতনের ইঙ্গিত বহন করছে। এর পেছনে দুর্বল বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, তেলের উদ্বৃত্ত এবং নীতিগত অনিশ্চয়তা মূল ভূমিকা রাখছে। ২০২৫ এবং ২০২৬ সালে পণ্যের দাম উভয় বছর প্রায় ৭ শতাংশ কমবে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে।
বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, জ্বালানি তেলের দাম বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ২০২৫ সালে তেলের দাম আগের বছরের তুলনায় ১২ শতাংশ এবং ২০২৬ সালে আরও ১০ শতাংশ কমবে। ২০২৭ সালে আবার দাম প্রায় ৬ শতাংশ বাড়তে পারে। তেলের চাহিদার ধীরগতি এবং সরবরাহ বৃদ্ধির কারণে ২০২৫ সালের শুরু থেকেই পণ্যের দাম কমতে শুরু করেছে। বিশেষভাবে, চীনে তেলের ব্যবহার স্থবির হওয়ায় এবং বৈদ্যুতিক ও হাইব্রিড যানবাহনের বিক্রয় বৃদ্ধির কারণে তেলের চাহিদা ধীরে ধীরে কমছে।
জ্বালানি খাতের দামের পতনের ফলে বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতি হ্রাস পাচ্ছে। চাল ও গমের দাম কমার কারণে কিছু উন্নয়নশীল দেশে খাদ্য আরও সাশ্রয়ী হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ইন্দ্রমিত গিল মন্তব্য করেছেন, “তেলের দাম কমার ফলে ভোক্তা-মূল্য মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করেছে। তবে এই স্বস্তি স্থায়ী হবে না। সরকারের উচিত তাদের আর্থিক খাতকে আরও সুশৃঙ্খল করা এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগকে ত্বরান্বিত করা।”
খাদ্য ও কৃষি খাতে ২০২৫ সালে দাম আনুমানিক ৬.১ শতাংশ কমবে এবং ২০২৬ সালে আরও ০.৩ শতাংশ হ্রাস হবে। সয়াবিনের দাম ২০২৫ সালে কমছে, তবে আগামী দুই বছরে স্থিতিশীল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কফি ও কোকোর দামও ২০২৬ সালে কমতে পারে, কিন্তু সার বাজারে ২০২৫ সালে প্রায় ২১ শতাংশ বৃদ্ধি হবে, যা মূলত বাণিজ্য বিধিনিষেধের কারণে। এটি কৃষকদের লাভের মার্জিন ক্ষতিগ্রস্ত করবে এবং ভবিষ্যতের ফসল উৎপাদনের উপর উদ্বেগ বাড়াবে।
মূল্যবান ধাতুর বাজারেও বৈশ্বিক প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ২০২৫ সালে সোনার দাম রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছাবে, যা নিরাপদ সম্পদ হিসেবে চাহিদা বৃদ্ধির কারণে। বছরের শেষে সোনার দাম ৪২ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে এবং ২০২৬ সালে আরও ৫ শতাংশ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ২০২৫ সালে রূপার দামও গড়ে ৩৪ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে এবং ২০২৬ সালে আরও ৮ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে।
বিশ্বব্যাংক আরও উল্লেখ করেছে, দীর্ঘমেয়াদি বাণিজ্য উত্তেজনা ও নীতিগত অনিশ্চয়তার কারণে বিশ্বব্যাপী প্রবৃদ্ধি কম থাকলে পণ্যের দাম প্রত্যাশার চেয়ে বেশি হ্রাস পেতে পারে। অতিরিক্ত তেল উৎপাদন এবং বৈদ্যুতিক যানবাহনের বৃদ্ধি ভবিষ্যতে তেলের চাহিদা আরও হ্রাস করতে পারে। বিপরীতে, ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং সংঘাত তেলের দাম বাড়াতে পারে এবং নিরাপদ সম্পদ হিসেবে সোনা ও রূপার চাহিদা বৃদ্ধি করতে পারে।
এছাড়া, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) সম্প্রসারণ এবং বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চাহিদা বৃদ্ধির কারণে শক্তি ও বেসধাতুর দাম, যেমন অ্যালুমিনিয়াম ও তামা, বৃদ্ধি পেতে পারে। বিশ্বব্যাংকের উপ-প্রধান অর্থনীতিবিদ আয়হান কোস বলেছেন, “তেলের দাম কমার ফলে উন্নয়নশীল অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান বাড়ানোর জন্য একটি সময়োপযোগী সুযোগ তৈরি হয়। ব্যয়বহুল জ্বালানি ভর্তুকি সঠিকভাবে ব্যবহার করলে এটি মানবসম্পদ ও অবকাঠামো উন্নয়নে বিনিয়োগ হিসেবে কাজে লাগতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদে উৎপাদনশীলতা বাড়াবে।”
-শরিফুল
বাংলাদেশে স্বর্ণের দাম আবারও বাড়ল, বাজুসের নতুন ঘোষণা
দেশের স্বর্ণবাজারে আবারও দেখা দিয়েছে মূল্যবৃদ্ধি। বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) শনিবার (১ নভেম্বর) রাতে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জানিয়েছে, রবিবার (২ নভেম্বর) থেকে নতুন দাম কার্যকর হচ্ছে। প্রতি ভরিতে স্বর্ণের দাম ১,৬৮০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। বাজুস জানিয়েছে, স্থানীয় বাজারে বিশুদ্ধ স্বর্ণের (তেজাবি) মূল্য বৃদ্ধির কারণে এই সমন্বয় করা হয়েছে।
নতুন দাম অনুযায়ী প্রতি ভরির স্বর্ণের মূল্য নির্ধারিত হয়েছে:
- ২২ ক্যারেট: ২,০১,৭৭৬ টাকা
 - ২১ ক্যারেট: ১,৯২,৫৯৬ টাকা
 - ১৮ ক্যারেট: ১,৬৫,০৮১ টাকা
 - সনাতন পদ্ধতি (পুরনো ভরিতে): ১,৩৭,১৮০ টাকা
 
বাজুস আরও জানিয়েছে, স্বর্ণের বিক্রয়মূল্যের সঙ্গে ৫% সরকারি ভ্যাট এবং ৬% ন্যূনতম মজুরি যোগ করতে হবে। তবে, গহনার ডিজাইন ও মান অনুসারে এই মজুরি ভিন্ন হতে পারে, যা খুচরা বিক্রেতার discretion অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়।
স্থানীয় স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম বৃদ্ধি এবং দেশের ভেতরের চাহিদার চাপই এ মূল্যস্ফীতির মূল কারণ। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভবিষ্যতে গ্লোবাল মার্কেটে স্বর্ণের মূল্য যদি ওঠানামা করে, তবে দেশের বাজারেও দাম আরও সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে বৃদ্ধি বা হ্রাস পেতে পারে।
পাঠকের মতামত:
- দুই বন্ধুর ক্ষমতার লড়াইয়ে রক্তগঙ্গা সুদানে: লাশের গন্ধে ভারী বাতাস, দেড় কোটি মানুষ ঘরছাড়া
 - বিচার বিভাগে বড় পরিবর্তন: ২৬৭ জনকে জেলা জজ পদে পদোন্নতি
 - রোজ এক কোয়া কাঁচা রসুন: এক মাস পর শরীরে দেখা যায় ৪টি আশ্চর্য পরিবর্তন
 - কারা পাবেন বিনা হিসাবে জান্নাত? হাদিসের আলোকে জানুন সৌভাগ্যবানদের বিশেষ গুণাবলী
 - শততম টেস্টের হাতছানি মুশফিকের: আয়ারল্যান্ড সিরিজের দল ঘোষণা করল বিসিবি
 - ক্ষমতায় গেলে জনগণ বুঝবে কত ধানে কত চাল, বিএনপিকে হুঁশিয়ারি ফয়জুল করীমের
 - জুলাইয়ে হামলায় জড়িত ৪০৩ ছাত্রলীগ নেতাকে শোকজ নোটিশ দিল ঢাবি
 - রপ্তানি আয়ে বড় ধস; যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কে চাপে পোশাক শিল্প
 - 'জয় বাংলা' বলে মনোনয়ন হারালেন বিএনপি প্রার্থী কামাল জামান
 - খুলনার ৫টি আসনে বিএনপির প্রার্থী যারা
 - বিরাট কোহলির রেকর্ড ছাড়িয়ে ওয়ানডেতে নজির গড়লেন যিনি
 - আপনার সুরক্ষা এখন ক্রোমের হাতে: অনিরাপদ ওয়েবসাইটে ঢুকতে দেবে না নতুন ফিচার
 - বাজারে স্বর্ণের পুনরায় উত্থান, দাম ছুঁতে পারে ৪,০০০ ডলার
 - চেঙ্গিস খানের অজানা গল্প: এক গরীব বালক যেভাবে পৃথিবীর ৪০% মানুষের যমদূত হয়ে উঠেছিল!
 - ৩০০ আসন থেকে সরে এলো এনসিপি; সম্মান জানাল খালেদা জিয়ার আসনকে
 - কালাত জেলায় অভিযান: পাক-বাহিনীর গুলিতে নিহত 'ভারতীয় প্রক্সি বাহিনীর' ৪ সদস্য
 - সুস্থ ও সতেজ থাকতে জিমে যাওয়ার প্রয়োজন নেই: ঘরে বসেই করুন এই ৫টি সহজ ব্যায়াম
 - 'শাপলা কলি' প্রতীকে নিবন্ধন: নির্বাচন কমিশনের তালিকায় জাতীয় নাগরিক পার্টি
 - আইনজীবীর দাবি: অহেতুক হয়রানি করতেই কোমলমতি বর্ষাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ
 - উপকূলীয় জেলায় ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ের আশঙ্কা, বন্দরে ৩ নম্বর সতর্কসংকেত
 - জাতীয় নির্বাচনে চূড়ান্ত নিবন্ধন পেল ৩ দল
 - আবু সাঈদ হত্যা মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ আবার পেছাল
 - ০৪ নভেম্বর ডিএসই লেনদেনের সারসংক্ষেপ
 - ০৪ নভেম্বর ডিএসই লেনদেনে শীর্ষ লুজার তালিকা প্রকাশ
 - ০৪ নভেম্বর ডিএসই লেনদেনে শীর্ষ গেইনার তালিকা প্রকাশ
 - বুক জ্বালা কমাতে ওষুধ নয়, ভরসা রাখুন প্রাকৃতিক পানীয়ে; জেনে নিন ৪টি কার্যকর উপায়
 - নির্বাচনে মনোনয়নের পর মির্জা ফখরুল দিলেন 'শেষ নির্বাচনের' বার্তা
 - নির্বাচনে 'না ভোট' বিধান যুক্ত করে আরপিও সংশোধন অধ্যাদেশ জারি
 - ১৫ বছরের সরকারি বন্ড কুপন পেমেন্টের জন্য রেকর্ড ডেট নির্ধারিত
 - ৫ ও ৬ নভেম্বর বন্ধ থাকবে ২ বছরের সরকারি ট্রেজারি বন্ড
 - রেকর্ড ডেট ঘিরে দুই দিন লেনদেন বন্ধ থাকবে
 - ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড এর ক্রেডিট রেটিং প্রকাশ
 - নির্বাচনে পুলিশি পক্ষপাতিত্ব বরদাস্ত নয়: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার হুঁশিয়ারি
 - ফ্যাসিস্ট খুনি' শেখ হাসিনার বিচারের রায় আসছে: তথ্য উপদেষ্টার ঘোষণা
 - বাংলাদেশকে আল্টিমেটাম: ১১ নভেম্বর থেকে বিদ্যুৎ বন্ধের হুমকি আদানি পাওয়ারের
 - পানি ও খাদ্য নিরাপত্তা: ভবিষ্যতের সম্ভাব্য যুদ্ধের কারণ
 - বিশ্বের শ্রেষ্ঠ আকাশচুম্বী ভবনের খেতাব মালয়েশিয়ায় যে টাওয়ারের
 - ডিএসই-সিএসইতে সকালের লেনদেনের মধ্যে সূচক বৃদ্ধি
 - আজকের নামাজের সময়সূচি: ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার জন্য
 - বিএনপির ৬৩ খালি আসনে যারা পেতে পারেন প্রাধান্য
 - নির্বাচনি অনিয়মের ক্ষেত্রে ইসিকে ব্যাপক ক্ষমতা প্রদান
 - বিনিয়োগকারীদের জন্য ডেব্ট মার্কেটের বর্তমান অবস্থা প্রকাশ
 - মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক বন্ডের নতুন কুপন সময়সীমা ঘোষণা
 - মনোনয়ন ‘অন হোল্ড’; তালিকা থেকে বাদ পড়া নিয়ে মুখ খুললেন ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা
 - ভোটার প্রতি নির্বাচন খরচ যত টাকায় সীমাবদ্ধ
 - প্রতীক বদল বন্ধ: বিএনপি-র দাবির বিপক্ষে সরকারের অধ্যাদেশ
 - ডিভিডেন্ড ঘোষণা করল সানলাইফ ইনস্যুরেন্স
 - খামেনি যুক্তরাষ্ট্রকে দিলেন কড়া শর্তাবলী
 - রিয়াল বনাম লিভারপুল: চ্যাম্পিয়নস লিগে হাইভোল্টেজ লড়াই আজ যখন
 - আজ মঙ্গলবার ঢাকার কোথায় দোকানপাট ও মার্কেট বন্ধ থাকবে
 
- ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক সংলাপ: জ্ঞানচর্চায় উপনিবেশের ছায়া কাটাতে আহ্বান বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানীর
 - রাজনীতি, নির্বাসন ও নৈতিকতা: শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকার দক্ষিণ এশিয়ার বাস্তবতাকে কোথায় নিচ্ছে
 - ধ্বংসস্তূপ থেকে মহাশক্তি: চীনের পুনর্জন্মের বিস্ময়গাঁথা
 - চঞ্চল চৌধুরীর সঙ্গে আবারও পর্দায় পূজা চেরি
 - IFIC ব্যাংকের Q3 আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ
 - পূবালী ব্যাংকের Q3 আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ
 - ইতিহাসের পাতায় আজ: ৩০ অক্টোবর - বিজয়, বিপ্লব আর বেদনার দিন
 - ০৩ নভেম্বর ডিএসই লেনদেনে শীর্ষ গেইনার তালিকা প্রকাশ
 - শেয়ারবাজারে শীর্ষ বিশ শেয়ারের তালিকা প্রকাশ
 - ২৯ অক্টোবর ডিএসই লেনদেনের সারসংক্ষেপ
 - GSP ফাইন্যান্স এর Q3 আর্থিক ফলাফল প্রকাশ
 - রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স এর Q3 আর্থিক ফলাফল প্রকাশ
 - ১২১তম ১০০ টাকা প্রাইজবন্ড ড্র, প্রথম পুরস্কার ৬ লাখ টাকা
 - ০৩ নভেম্বর ডিএসই লেনদেনে শীর্ষ লুজার তালিকা প্রকাশ
 - গ্রিন সিগন্যাল কী পেল মান্না, নুর, পার্থসহ ১২ জোটনেতা
 
								
                          







