“শপথ করেছি, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র হতে দেব না”-নেতানিয়াহুর হুঙ্কার

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ০৮ ১১:২৮:১৭
“শপথ করেছি, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র হতে দেব না”-নেতানিয়াহুর হুঙ্কার

ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু আবারও সরাসরি নাকচ করে দিয়েছেন ফিলিস্তিনের স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের যে কোনো সম্ভাবনা। স্থানীয় সময় সোমবার (৭ জুলাই) ওয়াশিংটনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে হোয়াইট হাউসে বৈঠককালে তিনি বলেন, ফিলিস্তিনিরা নিজেদের শাসন করতে পারবে ঠিকই, তবে সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকার তাদের হাতে কখনোই থাকবে না। এর মধ্য দিয়ে তিনি কার্যত ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনাকে চূড়ান্তভাবে অস্বীকার করলেন।

আলজাজিরার বরাতে জানা যায়, ওই বৈঠকে গাজা পরিস্থিতি, যুদ্ধবিরতি, এবং হামাসের হাতে আটক ইসরাইলি জিম্মিদের মুক্তি নিয়ে আলোচনা হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও আলোচনার নির্দিষ্ট অগ্রগতি প্রকাশ করা হয়নি, তবে নেতানিয়াহুর বক্তব্য স্পষ্টভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের সম্ভাবনার ওপর গাঢ় অন্ধকার ফেলেছে।

নেতানিয়াহু বলেন, “ফিলিস্তিনিদের নিজেদের শাসন করার অধিকার থাকা উচিত। তবে এমন কোনো ক্ষমতা তাদের হাতে থাকা চলবে না, যা আমাদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে। সার্বভৌম নিরাপত্তার অধিকার চিরকাল ইসরাইলের হাতেই থাকবে।”

তিনি আরও বলেন, “যারা ইসরাইলকে ধ্বংস করতে চায় না, তাদের সঙ্গে আমরা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান চাই। কিন্তু সেই শান্তি হতে হবে এমন কাঠামোর মধ্যে, যেখানে নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তা সম্পূর্ণরূপে আমাদের হাতে থাকবে।”

তার এ বক্তব্যে আবারও প্রতিফলিত হলো দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা একক দৃষ্টিভঙ্গি যেখানে ফিলিস্তিনকে একটি পূর্ণাঙ্গ স্বাধীন রাষ্ট্র নয়, বরং সীমিত স্বায়ত্তশাসনের মধ্যে আটকে রাখার কৌশল স্পষ্ট।

নেতানিয়াহু সাফ জানিয়ে দেন, “অনেকে বলবে এটা তো পূর্ণ রাষ্ট্র নয়, এটা রাষ্ট্রই নয়। আমরা এসব বিতর্কে যাব না। আমরা শপথ করেছি, আর কখনোই এমন কিছু হতে দেব না যা আমাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি তৈরি করে। আর ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন সেই হুমকির কেন্দ্রবিন্দু।”

অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো প্রতিশ্রুতি দেননি। ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি শুধু বলেন, “আমি জানি না।” তার এই মন্তব্য থেকেই বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকেও ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের বিষয়ে আগ্রহের ঘাটতি রয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্যে একটি দীর্ঘস্থায়ী দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের সম্ভাবনা আরো অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ল। যদিও আন্তর্জাতিক মহল বহু বছর ধরে এই সমাধানকেই গাজা ও পশ্চিম তীর সংকটের টেকসই উপায় হিসেবে দেখে এসেছে, ইসরাইলের বর্তমান সরকারের অবস্থান তা পুরোপুরি উল্টো।

বিশ্লেষকদের মতে, নেতানিয়াহুর এই ঘরানার কূটনীতি ইসরাইলি অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে জনপ্রিয়তা পেতে পারে ঠিকই, কিন্তু এতে করে দীর্ঘ মেয়াদে অঞ্চলটিতে সহিংসতা ও অনিশ্চয়তা আরও বাড়বে। একই সঙ্গে, ফিলিস্তিনের জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও বারবার প্রশ্নবিদ্ধ হতে থাকবে।

এই অবস্থান যদি অব্যাহত থাকে, তবে ভবিষ্যতে মধ্যপ্রাচ্যে যে কোনো শান্তিচুক্তি বা সমঝোতা নতুন করে গুরুতর চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে নেতানিয়াহুর বক্তব্য নিয়ে সমালোচনার ঝড় শুরু হয়েছে। তবে ইসরাইলি সরকারের পক্ষ থেকে তাতে কোনো প্রতিক্রিয়া এখনো আসেনি।

-ইসরাত, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

জামালপুরে প্রতিদিন মিলবে ৫০ লাখ ঘনফুট গ্যাস

জামালপুরে প্রতিদিন মিলবে ৫০ লাখ ঘনফুট গ্যাস

জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলায় গ্যাস অনুসন্ধান কূপ 'জামালপুর-১'-এ বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনযোগ্য গ্যাসের উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড... বিস্তারিত