মানিকগঞ্জে চার আ.লীগ নেতা গ্রেফতার, ঘেরাও থানার দরজা!

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ০৮ ১১:১১:৩৭
মানিকগঞ্জে চার আ.লীগ নেতা গ্রেফতার, ঘেরাও থানার দরজা!

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের চার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারের পর স্থানীয়দের বিক্ষোভ ও থানায় ঘেরাওয়ের ঘটনায় উপজেলা জুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ মোতায়েনসহ অতিরিক্ত সতর্ক অবস্থান নেয় প্রশাসন।

পুলিশ জানায়, গ্রেফতারকৃতরা হলেন সাটুরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোশাররফ হোসেন বাকা (৪৬), উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল খালেক (৪৫), আওয়ামী লীগ নেতা মো. হেলাল উদ্দিন (৪৮) এবং স্থানীয় কাওন্নারা গ্রামের যুবক রাব্বি মিয়া (২৩)। সোমবার (৭ জুলাই) বিকেলে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। এদের বিরুদ্ধে চলমান একটি সন্ত্রাসবিরোধী মামলায় জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়ার পরই এ পদক্ষেপ নেয়া হয় বলে জানিয়েছেন সাটুরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহিনুল ইসলাম।

গ্রেফতার অভিযানের সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ ঘটনা ঘটে কাওন্নারা গ্রামের রাব্বি মিয়াকে ঘিরে। থানা সূত্রে জানা যায়, রাব্বির বাড়ি থানার খুব কাছেই। পুলিশ তাকে গ্রেফতারের পর তার পরিবারের আহাজারি শুনে আশপাশের বহু মানুষ ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। একপর্যায়ে উত্তেজিত জনতা থানা ঘেরাও করে রাব্বির মুক্তির দাবি জানায়। পরিস্থিতি আরও বেগতিক হয় যখন রাব্বিকে প্রিজনভ্যানে তোলার সময় তার মা থানার সামনে এসে চিৎকার করতে করতে ভ্যানে শুয়ে পড়েন। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার ছেলেকে জেলে নিতে দিব না।’

জনতার বিক্ষোভ ও মানবিক আবেগঘন দৃশ্যের মধ্যে পুলিশ দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এরপর যথাযথ প্রক্রিয়ায় রাব্বিসহ অন্যান্য আসামিদের জেলহাজতে পাঠানো হয়।

থানা সূত্রে জানা গেছে, যেসব কারণে গ্রেফতার অভিযান চালানো হয়, তার মধ্যে রয়েছে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে দায়ের করা একটি মামলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার অভিযোগ। ওই মামলায় মোট ১০ জনের নাম উল্লেখ রয়েছে এবং আরও অজ্ঞাত ৬০ থেকে ৭০ জনকে আসামি করা হয়েছে। তবে পুলিশ এখন পর্যন্ত কাদের কী ধরনের ভূমিকা ছিল, তা বিস্তারিতভাবে জানায়নি।

সাটুরিয়া থানার ওসি মো. শাহিনুল ইসলাম বলেন, ‘মামলার তদন্তে প্রাথমিকভাবে যাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে, শুধু তাদেরই গ্রেফতার করা হয়েছে। বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে আইনানুগ প্রক্রিয়ায় হচ্ছে।’ তিনি আরও জানান, বর্তমান পরিস্থিতি শান্ত এবং থানা ও আশপাশে পুলিশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।

স্থানীয় রাজনীতি এবং ক্ষমতাসীন দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল এই মামলার পেছনে কোনো প্রভাব রেখেছে কিনা তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে স্থানীয় রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। গ্রেফতার ও বিক্ষোভের ঘটনায় সাধারণ মানুষের মাঝেও উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে।

এই ঘটনাটি সাটুরিয়ায় শুধু আইনশৃঙ্খলার প্রশ্নই নয়, বরং স্থানীয় রাজনীতি এবং প্রশাসনের পারস্পরিক সম্পর্কের জটিলতা আরও একবার সামনে নিয়ে এসেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রশাসনের উচিত হবে সব পক্ষকে আস্থায় নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং নিশ্চিত করা যে, আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের পক্ষপাতিত্ব বা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য যেন না থাকে।

এদিকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নেতাদের গ্রেফতারের ঘটনায় দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। আগামী কয়েক দিনে তারা কী ধরনের প্রতিক্রিয়া জানায় তা এলাকার রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মহল।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

জামালপুরে প্রতিদিন মিলবে ৫০ লাখ ঘনফুট গ্যাস

জামালপুরে প্রতিদিন মিলবে ৫০ লাখ ঘনফুট গ্যাস

জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলায় গ্যাস অনুসন্ধান কূপ 'জামালপুর-১'-এ বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনযোগ্য গ্যাসের উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড... বিস্তারিত