জামালপুরে প্রতিদিন মিলবে ৫০ লাখ ঘনফুট গ্যাস

অর্থনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ০৮ ০৯:৫৪:১৯
জামালপুরে প্রতিদিন মিলবে ৫০ লাখ ঘনফুট গ্যাস

জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলায় গ্যাস অনুসন্ধান কূপ 'জামালপুর-১'-এ বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনযোগ্য গ্যাসের উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স) পরিচালিত এই কূপ থেকে দৈনিক গড়ে ৪০ থেকে ৫০ লাখ ঘনফুট হারে প্রায় পাঁচ বছর গ্যাস উত্তোলন সম্ভব বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। সবকিছু পরিকল্পনামাফিক চললে এটি দেশের ৩০তম গ্যাসক্ষেত্র হিসেবে স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছে।

প্রকল্প সূত্র জানায়, প্রায় ১৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে জামালপুর-১ অনুসন্ধান কূপ খননের কাজ শুরু হয় ২০২৪ সালের ২৪ জানুয়ারি। প্রায় চার মাস পরে, ২০২৪ সালের ২৪ এপ্রিল, দুই হাজার ৬০০ মিটার গভীরতায় তিনটি স্তরে সফলভাবে ডিএসটি (Drill Stem Test) সম্পন্ন হয়। গত ৩১ মে ফ্লেয়ারিংয়ের মাধ্যমে গ্যাসের অস্তিত্ব নিশ্চিত করা হয় এবং এরপর পরীক্ষামূলক উত্তোলন শুরু হয়।

বিশ্লেষণে দেখা গেছে, কূপটির ১,৪৪১ থেকে ১,৪৪৪ মিটার গভীরতায় উচ্চচাপযুক্ত গ্যাসের স্তর পাওয়া গেছে। সেখানে চাপ রেকর্ড হয়েছে ১,১২৪ পিএসআই (পাউন্ড পার স্কয়ার ইঞ্চি)। প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের হিসাব অনুযায়ী, জামালপুর-১ কূপে গ্যাসের মোট মজুত প্রায় ১০ দশমিক ৩ বিলিয়ন ঘনফুট (১,০৩০ কোটি ঘনফুট), এর মধ্যে উত্তোলনযোগ্য অংশ প্রায় ৭ দশমিক ২ বিলিয়ন ঘনফুট (৭২০ কোটি ঘনফুট)।

এই গ্যাসের বাণিজ্যিক মূল্য বাপেক্স মার্জিনে প্রায় ৮২ কোটি টাকা, ভোক্তাপর্যায়ে মূল্য ৪৬৮ কোটি টাকা এবং বিকল্প হিসেবে সমপরিমাণ এলএনজি আমদানি করলে এর ব্যয় হতো প্রায় ১,১০০ কোটি টাকা।

উৎপাদিত গ্যাস সরাসরি জাতীয় গ্রিডে সংযুক্ত না করে যমুনা সার কারখানায় পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে। মাদারগঞ্জের জামালপুর-১ কূপ থেকে যমুনা সার কারখানার দূরত্ব প্রায় ২৫ কিলোমিটার। প্রতিদিন প্রায় ৪০ থেকে ৫০ লাখ ঘনফুট গ্যাস সরবরাহের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। কারখানাটির দৈনিক গ্যাস চাহিদা প্রায় ৪ কোটি ঘনফুট হওয়ায় এই কূপের গ্যাস আংশিক চাহিদা পূরণে অবদান রাখবে। এ জন্য কূপ থেকে কারখানায় পাইপলাইন স্থাপন করতে প্রায় ১০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় হতে পারে।

মাদারগঞ্জ উপজেলার তারতাপাড়া গ্রামে এই গ্যাসক্ষেত্রের সম্ভাবনা প্রথম উঠে আসে ১৯৮৪ সালে সংগৃহীত সিসমিক উপাত্ত থেকে। এরপর ২০১৪ সালে প্রথম দ্বিমাত্রিক (2D) সিসমিক জরিপ এবং ২০১৫ সালে ক্লোজ-গ্রিড সার্ভে সম্পন্ন হয়। ২০১৭ সালে আজারবাইজানের একটি গ্যাস অনুসন্ধানকারী প্রতিষ্ঠান খননকাজ হাতে নিলেও তা শেষ না করে প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ ত্যাগ করে। সাত বছর পর, ২০২৪ সালে বাপেক্স নিজ উদ্যোগে কূপ খননের কার্যক্রম পুনরায় শুরু করে এবং এবার সফল হয়।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, “যদিও প্রাপ্ত গ্যাসের পরিমাণ খুব বেশি নয়, তবুও স্থানীয় শিল্পে ব্যবহারের জন্য এই উৎস খুবই কার্যকর হতে পারে।” তিনি আরও জানান, জামালপুর-১ কূপ থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে আরেকটি অনুসন্ধান কূপ খননের পরিকল্পনা রয়েছে। তার আগে অতিরিক্ত 2D এবং 3D সিসমিক সার্ভে করে ভূগর্ভস্থ গ্যাসমজুতের সুনির্দিষ্ট চিত্র আঁকার চেষ্টা চলছে।

তিনি আরও বলেন, “এই কূপ থেকে যে গ্যাস উত্তোলিত হবে তা সরাসরি ব্যবহারযোগ্য নয়। এজন্য একটি মোবাইল প্রসেসিং প্ল্যান্ট বসিয়ে গ্যাস শোধন করে স্থানীয় শিল্প খাতে সরবরাহ করা হবে। বড় কোনো বিনিয়োগ ছাড়াই এটা বাস্তবায়নযোগ্য।”

যদিও জামালপুর-১ কূপে পাওয়া গ্যাস মজুত দেশের মোট চাহিদার তুলনায় খুব বেশি নয়, তবে স্থানীয় পর্যায়ে শিল্প ও সারের উৎপাদনে এই গ্যাস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। একই সঙ্গে এটি দেশে স্বতন্ত্র অনুসন্ধান সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রমাণ ও বাপেক্সের একটি গৌরবজনক সাফল্য হিসেবেও বিবেচিত হবে। নতুন অনুসন্ধান কূপ ও সিসমিক জরিপের মাধ্যমে ভবিষ্যতে জামালপুর অঞ্চল একটি নতুন শক্তির ভাণ্ডার হয়ে উঠতে পারে—এমনটাই আশা সংশ্লিষ্ট মহলের।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

জামালপুরে প্রতিদিন মিলবে ৫০ লাখ ঘনফুট গ্যাস

জামালপুরে প্রতিদিন মিলবে ৫০ লাখ ঘনফুট গ্যাস

জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলায় গ্যাস অনুসন্ধান কূপ 'জামালপুর-১'-এ বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনযোগ্য গ্যাসের উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড... বিস্তারিত