ট্রাম্পের নোবেল মনোনয়নে পাকিস্তানের প্রস্তাবে হোয়াইট হাউজের প্রতিক্রিয়া

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ০৮ ০৯:৪৫:১৩
ট্রাম্পের নোবেল মনোনয়নে পাকিস্তানের প্রস্তাবে হোয়াইট হাউজের প্রতিক্রিয়া

২০২৬ সালের শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে মনোনয়ন দেওয়ার পাকিস্তানের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউজ। সোমবার (৭ জুলাই) ওয়াশিংটনে আয়োজিত এক নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র ক্যারোলিন লেভিট এই মনোনয়নের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। পাকিস্তানের জাতীয় সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করে।

মুখপাত্র লেভিট বলেন, “ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্ভাব্য বিপর্যয়কর সামরিক উত্তেজনা প্রশমনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যে কৌশলী ও দৃঢ় কূটনৈতিক নেতৃত্ব দিয়েছেন, পাকিস্তান সেই ভূমিকার স্বীকৃতি দিয়েছে। এই মনোনয়ন তার শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি।”

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ৬ মে থেকে শুরু হওয়া ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত সংঘাত দ্রুতই এক ভয়াবহ সামরিক সঙ্ঘাতে রূপ নেয়। কাশ্মীরের পেহেলগামে এক সন্ত্রাসী হামলার প্রেক্ষিতে ভারত পাকিস্তানের ভেতরে হামলা চালায়, যার পাল্টা জবাবে পাকিস্তানও সামরিক জবাব দেয়। কয়েকদিনের মধ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতি এমন রূপ নেয় যে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছিল না।

এমন উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে হোয়াইট হাউজের সরাসরি হস্তক্ষেপে যুক্তরাষ্ট্র একাধিক দফা গোপন এবং প্রকাশ্য আলোচনার মাধ্যমে যুদ্ধরত দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা গড়ে তোলে। মাত্র চারদিনের টানা কূটনৈতিক আলোচনার পর ১০ মে, ওয়াশিংটন ও জেনেভায় একযোগে স্বাক্ষরিত হয় যুদ্ধবিরতি চুক্তি। চুক্তিটি কার্যকর হওয়ার মধ্য দিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান সংঘাতের অবসান ঘটে এবং সীমান্তে শান্তি ফিরে আসে।

পাকিস্তান সরকার এই যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠায় ট্রাম্প প্রশাসনের ভূমিকাকে ‘নির্ণায়ক’ বলে উল্লেখ করে। ট্রাম্পের মধ্যস্থতা না হলে যুদ্ধটি দীর্ঘমেয়াদী সংঘাতে পরিণত হতো বলে মন্তব্য করেছেন ইসলামাবাদের কর্মকর্তারা।

ট্রাম্প ইতিপূর্বেও দাবি করেছিলেন যে, তিনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার ‘যোগ্য’ ব্যক্তি। তার মতে, ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের অবসান, ইসরাইল-ইরান উত্তেজনা প্রশমন এবং উত্তর কোরিয়া ইস্যুতে কূটনৈতিক অগ্রগতি এই সবকিছুই শান্তি প্রতিষ্ঠায় তার কার্যকর ভূমিকার প্রতিফলন।

তবে নোবেল পুরস্কার না পাওয়া নিয়ে ট্রাম্প অতীতে ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন। তিনি মন্তব্য করেছিলেন, “নোবেল এখন কেবল উদারপন্থীদের হাতেই সীমাবদ্ধ। প্রকৃত শান্তির জন্য কাজ করেও আমি নোবেল পাব না, এটা নিশ্চিত।”

এর আগে ২০২৬ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের এক রিপাবলিকান সদস্যও ট্রাম্পকে মনোনয়ন দেন, ইসরাইল-ইরান সংকট মোকাবেলায় তার মধ্যস্থতার কারণে। এবার পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে নরওয়ের নোবেল কমিটিতে তার নাম পাঠানো হলো।

পাকিস্তানের পক্ষ থেকে ট্রাম্পকে শান্তি পুরস্কারের জন্য প্রস্তাব করাটা কেবল একটি কূটনৈতিক কৃতজ্ঞতার প্রকাশ নয়, এটি দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতেও একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে। ভারত-পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক উত্তেজনার সময় যুক্তরাষ্ট্র কোন অবস্থানে থাকে তা ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এবার ট্রাম্প প্রশাসন পাকিস্তানের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও বিশ্বাসযোগ্য মধ্যস্থতাকারী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলেই প্রতীয়মান হয়।

এমন মনোনয়ন ট্রাম্পের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তিতে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে, বিশেষ করে আসন্ন মার্কিন নির্বাচনের প্রাক্কালে, যেখানে বৈদেশিক নীতি ট্রাম্পের প্রচারের অন্যতম শক্তিশালী হাতিয়ার।

ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের অবসানে কার্যকর মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভূমিকার স্বীকৃতি এখন আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে। পাকিস্তানের প্রস্তাবিত শান্তিতে নোবেল মনোনয়ন ও হোয়াইট হাউজের স্বাগত বক্তব্য সেই স্বীকৃতির আনুষ্ঠানিক রূপ। যদিও নোবেল কমিটি এই মনোনয়ন বিবেচনায় নেবে কি না, তা এখনো অনিশ্চিত; তবে এটি নিঃসন্দেহে ট্রাম্পের জন্য এক কূটনৈতিক সাফল্য এবং রাজনৈতিকভাবে একটি বড় অর্জনের ইঙ্গিত বহন করছে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ