যশোরে আওয়ামী লীগের ১১ নেতাকর্মীর  আদালতে আত্মসমর্পণ

সারাদেশ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ০৮ ০৯:১৯:০৯
 যশোরে আওয়ামী লীগের ১১ নেতাকর্মীর  আদালতে আত্মসমর্পণ

যশোরের শার্শা উপজেলায় দায়ের করা বিস্ফোরকদ্রব্য ও নাশকতা আইনের মামলায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ১১ নেতাকর্মী সোমবার (৭ জুলাই) আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন। যশোরের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ শেখ নাজমুল আলমের আদালতে হাজির হয়ে তারা জামিন আবেদন করেন। বিচারক শারীরিক অসুস্থতা বিবেচনায় একজনের জামিন মঞ্জুর করলেও বাকি ১০ জনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপক্ষের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) নুর আলম পান্নু বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, জামিন পাওয়া ব্যক্তি হলেন কাজিরবেড় গ্রামের সাইফুল ইসলাম। আর জামিন না পাওয়া অন্য দশ নেতাকর্মী হলেন কালাম হোসেন, ইয়ানুর রহমান, আব্দুল মতিন, শাহীন মেম্বার, জাফর, আইজুল, স্বপন, শামসুর রহমান ও মুরাদ হোসেন। এদের মধ্যে কেউ কেউ ইউনিয়ন পর্যায়ের স্থানীয় রাজনীতিতে সক্রিয় ও পরিচিত মুখ বলে জানা গেছে।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ১৪ ডিসেম্বর রাতে শার্শা উপজেলার বুরুজবাগান ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সামনে আওয়ামী লীগের শতাধিক নেতাকর্মী জড়ো হয়ে নাশকতার পরিকল্পনা করছিলেন। তাদের কর্মকাণ্ডে সন্দেহ হলে স্থানীয়রা প্রতিরোধে এগিয়ে গেলে তারা ককটেল নিক্ষেপ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ সময় সাকিব নামে এক যুবককে ঘটনাস্থল থেকে আটক করে স্থানীয় জনগণ।

ঘটনার পরদিন দক্ষিণ বুরুজবাগান গ্রামের বাসিন্দা সাজেদুর রহমান সাজু বাদী হয়ে শার্শা থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় বিস্ফোরকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ও দণ্ডবিধির বিভিন্ন ধারা উল্লেখ করে ৯৪ জনের নাম এজাহারে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এছাড়া অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৩০ থেকে ৪০ জনকে আসামি করা হয়। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, মামলার এজাহারভুক্ত আসামিদের তালিকায় যশোর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা শেখ আফিল উদ্দিনের নামও রয়েছে।

আত্মসমর্পণকারী ১১ নেতাকর্মী এজাহারভুক্ত আসামি হিসেবেই দীর্ঘদিন ধরে পলাতক ছিলেন। দীর্ঘ সময় আত্মগোপনে থাকার পর আদালতের দারস্থ হয়ে তারা আইনি প্রক্রিয়ায় আত্মসমর্পণ করেন।

এই মামলাটি স্থানীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। একটি ইউনিয়ন ভূমি অফিসকে ঘিরে সংঘটিত নাশকতার অভিযোগ এবং তাতে আওয়ামী লীগের সক্রিয় কর্মীদের সংশ্লিষ্টতা ক্ষমতাসীন দলের শৃঙ্খলা ও স্থানীয় স্তরে দলীয় নেতাকর্মীদের আচরণ নিয়েও প্রশ্ন তুলছে। বিশেষ করে সাবেক এমপি শেখ আফিল উদ্দিনের নাম মামলায় থাকায় এটিকে শুধু একটি আইনগত বিষয় না ভেবে রাজনৈতিক বলয়ের ভেতরের দ্বন্দ্ব বা পুনর্বিন্যাস হিসেবেও বিশ্লেষণ করছেন অনেকেই।

এ মামলায় এখনও অনেক আসামি পলাতক রয়েছেন বলে জানা গেছে। তদন্তের অগ্রগতি, গ্রেপ্তার অভিযান ও আদালতের পরবর্তী পদক্ষেপ আগামী দিনে এই মামলার গতি-প্রকৃতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

স্থানীয় রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় থাকা নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে নাশকতার মতো গুরুতর মামলায় আদালতে আত্মসমর্পণ এবং অধিকাংশের জামিন না মঞ্জুর হওয়া আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্রিয়তা এবং বিচার বিভাগের কঠোর অবস্থানকেই নির্দেশ করে। একই সঙ্গে এটি রাজনৈতিক দলগুলোর জন্যও একটি সতর্কবার্তা কোনো পর্যায়ের নেতাকর্মীরাই আইনের ঊর্ধ্বে নন।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ