বাংলা বলায় বাংলাদেশি বানিয়ে সীমান্তে পুশইন: দিল্লি পুলিশের বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ০৭ ২০:৪৭:০১
বাংলা বলায় বাংলাদেশি বানিয়ে সীমান্তে পুশইন: দিল্লি পুলিশের বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ

বাংলা ভাষায় কথা বলার অপরাধে দিল্লিতে বসবাসকারী পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার এক দম্পতি ও তাদের পাঁচ বছর বয়সী সন্তানকে ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী’ হিসেবে চিহ্নিত করে জোরপূর্বক সীমান্তে পাঠিয়েছে দিল্লি পুলিশ—এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেছে ভারতের শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়া।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ১৮ জুন দিল্লির রোহিণী এলাকার একটি ভাড়া বাসা থেকে ২৬ বছর বয়সী দানিশ শেখ, তার স্ত্রী সোনালী খাতুন (২৪) এবং তাদের শিশু সাবিরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ উঠেছে, বৈধ পরিচয়পত্র, জন্মসনদ এবং ঠিকানার যাবতীয় তথ্যপত্র জমা দেওয়ার পরও কোনো যাচাই-বাছাই ছাড়াই তাদের বাংলাদেশে পুশইন করা হয়।

সোনালীর কাজিন রোশনি বিবি, যিনি দিল্লিতেই থাকেন, জানান, পুলিশের সঙ্গে সাক্ষাতে সকল নথিপত্র দেখানো হলেও পরে জানানো হয় তাদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। রোশনি আরও বলেন, “সোনালী পরে অন্য একজনের ফোন থেকে জানায়, তারা এখন ঢাকার উপকণ্ঠে রয়েছেন এবং স্থানীয় এক ব্যক্তির সহায়তায় কোনোমতে বেঁচে আছেন।”

এ ঘটনাটি বিচ্ছিন্ন নয়। একইভাবে আরও কয়েকজন বাঙালি নাগরিককে একই অভিযোগে সীমান্তে ফেরত পাঠানো হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর আগে মহারাষ্ট্র থেকেও সাতজন বাঙালি শ্রমিককে বিএসএফের মাধ্যমে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছিল। পরে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের হস্তক্ষেপে তাদের ফিরিয়ে আনা হয়।

এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে পশ্চিমবঙ্গ প্রবাসী শ্রমিক কল্যাণ বোর্ডের চেয়ারম্যান ও তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ সামিরুল ইসলাম বলেন, “শুধু বাংলা ভাষায় কথা বলার কারণে ভারতীয় নাগরিকদের বাংলাদেশি আখ্যা দিয়ে দেশছাড়া করা হচ্ছে। এটি জাতিগত বৈষম্য ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়রানির নগ্ন উদাহরণ।”

তিনি জানান, পুরো ঘটনার প্রমাণ তাদের কাছে আছে এবং আদালতের মাধ্যমে দানিশ ও তার পরিবারকে দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। সেইসঙ্গে এ ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে দেশবাসীকে সরব হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

এখনও পর্যন্ত দিল্লি পুলিশ কিংবা কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়নি।

বিশ্লেষকদের মতে, এ ঘটনা শুধু সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘন নয়, বরং এটি রাষ্ট্রীয় বৈষম্যের এক ভয়ংকর প্রবণতার ইঙ্গিত দেয়।

গত মাসেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ ইস্যুতে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোর বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছিলেন, “শুধু বাংলায় কথা বলার কারণে যারা অন্য রাজ্যে পাড়ি জমায়, তাদের বাংলাদেশি বলে সীমান্তে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে—এটি ভাষাগত নিপীড়নের একটি ঘৃণ্য রূপ।”

ঘটনার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক চাপ বাড়ছে, তবে এখনো কেন্দ্রের নিরবতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠেছে।

/আশিক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ