“সিন্ডিকেট ভাঙার যুদ্ধে নামছে সরকার”: ফয়েজ তৈয়্যব

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ০৭ ১৮:৫০:০১
“সিন্ডিকেট ভাঙার যুদ্ধে নামছে সরকার”: ফয়েজ তৈয়্যব

টেলিকম ও আইসিটি খাতে দীর্ঘদিন ধরে চলা অনিয়ম ও দুর্নীতির অবসান ঘটিয়ে একটি স্বচ্ছ, প্রতিযোগিতামূলক ও জনকল্যাণমুখী অবকাঠামো গড়ার লক্ষ্যে সরকার বড় ধরনের নীতিগত পরিবর্তন আনছে। এসব পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা কিছু বিতর্কিত সিন্ডিকেট ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলেই তারা সরকারের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচারে লিপ্ত এমন মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।

সোমবার (৭ জুলাই) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সাম্প্রতিক বিষয়াদি নিয়ে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, দেশীয় ব্যবসা বন্ধ করা হচ্ছে এমন বক্তব্য সম্পূর্ণ অসত্য, অপপ্রচার ও অপব্যাখ্যার ফসল। বাস্তবে দেশীয় ব্যবসা সংরক্ষণ ও বিকাশেই সরকার কাজ করছে। কিন্তু অতীতে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে লাইসেন্সপ্রাপ্ত কিছু মাফিয়া-ধরনের ব্যবসায়ী গোষ্ঠী, যারা দুর্নীতি, দেনা ও ঋণখেলাপির সঙ্গে যুক্ত, তারা তাদের অপরাধ আড়াল করতে এখন সরকারবিরোধী প্রচারে অর্থ ব্যয় করছে।

তিনি জানান, টেলিকম খাতে বিশেষ করে বিটিসিএলের (বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি লিমিটেড) ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ প্রকল্প নিয়ে যত বিতর্ক হচ্ছে, তার সবই পূর্ববর্তী সরকারের আমলে তৈরি হওয়া সমস্যার ফল। ওই সময় প্রকল্পটির টেন্ডার আহ্বান, এলসি সম্পাদন এবং প্রাথমিক অর্থ ছাড়সহ গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া হয়। প্রকল্পের আওতায় ইতোমধ্যে ২৯০ কোটি টাকা অফেরতযোগ্যভাবে পরিশোধ হয়ে গেছে। বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার আগেই এসব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছিল।

ফয়েজ তৈয়্যব বলেন, “এই পরিস্থিতিতে আমরা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছি এবং লিখিতভাবে আমাদের যুক্তিগুলো তুলে ধরেছি। আমরা বলেছি, যেহেতু অর্থ চলে গেছে এবং যেহেতু বিটিসিএলের বর্তমান নেটওয়ার্ক ক্যাপাসিটি খুবই দুর্বল জেলা পর্যায়ে মাত্র ১ জিবিপিএস, যা উন্নতমানের ইন্টারনেট সেবার জন্য সম্পূর্ণ অপ্রতুল সেহেতু প্রযুক্তিগতভাবে এই কাজ দ্রুত শেষ করা দরকার।”

তিনি আরও বলেন, বিটিসিএলের প্রতিদ্বন্দ্বী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ইতোমধ্যেই তাদের নেটওয়ার্ক ও অবকাঠামো উন্নত করেছে। কিন্তু বিটিসিএল তার নেটওয়ার্ক হালনাগাদ করতে না পারলে খুব দ্রুত বাজার থেকে ছিটকে পড়বে। প্রকল্পের আরেকটি অংশ হলো DWDM (Dense Wavelength Division Multiplexing) ফাইবার নেটওয়ার্ক, যা ছাড়া আইপি নেটওয়ার্ক চালু রাখা সম্ভব নয়। আইপি নেটওয়ার্কের প্রায় ৭০-৮০ শতাংশ কাজ শেষ হলেও ফাইবার নেটওয়ার্ক চালু না হওয়ায় সেই ইনফ্রাস্ট্রাকচার অকেজো অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এতে করে ইতোমধ্যে বিনিয়োগ করা প্রায় ৩০০ কোটি টাকা কোনো কাজে আসছে না।

এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য সরকার একটি নিরপেক্ষ কারিগরি কমিটি গঠন করতে যাচ্ছে, যারা টেন্ডারে উল্লেখিত যন্ত্রাংশগুলো যাচাই করে দেখবে সেগুলোর গুণগতমান ও কার্যকারিতা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী আছে কিনা। বিশেষ সহকারী বলেন, “আমরা এমন কোনো টেন্ডারে সম্মতি দিইনি যেখানে প্রথম স্থান অর্জনকারী কোম্পানিকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে চুক্তি দেওয়া হয়েছে। বরং আমরা সর্বত্র স্বচ্ছতা ও প্রতিযোগিতার নীতি অনুসরণ করেছি।”

ব্রিফিংয়ে তিনি আরও বলেন, “যে সব কোম্পানি অতীতে রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে বাজার নিয়ন্ত্রণ করেছে, যারা বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে শত শত কোটি টাকা পাওনা রেখেও নিয়মিত ব্যবসা চালিয়ে গেছে, তারা এখন সরকারের পদক্ষেপে ক্ষুব্ধ। কারণ আমরা তাদের অবৈধ সুবিধা বন্ধ করে দিচ্ছি, এবং তারা নতুন বিনিয়োগ ছাড়া আগের লাইসেন্স ধরে রাখতে পারবে না।”

দেশীয় ব্যবসায়ীদের নিয়ে উদ্ভূত প্রশ্নের জবাবে ফয়েজ তৈয়্যব বলেন, সরকার কোনো দেশীয় ব্যবসায়ীকে বাজার থেকে সরিয়ে দিচ্ছে না। বরং একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে (সাধারণত ১০-১৫ বছর) তাদের লাইসেন্স পুনর্নবীকরণের সুযোগ দেওয়া হবে। তবে বর্তমান যেসব লাইসেন্স আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও আধুনিক কাঠামোর সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়, সেগুলো ভবিষ্যতে বাতিল করা হবে। তখন আগ্রহীরা নতুন করে আবেদন করে ব্যবসায় ফিরতে পারবেন।

তিনি আরও জানান, আইসিটি ও ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় দুটি পৃথক শ্বেতপত্র প্রণয়ন করছে। এর মাধ্যমে এই খাতের অতীত দুর্নীতি, সীমাবদ্ধতা, অদক্ষ ব্যবস্থাপনা ও ভবিষ্যৎ রূপরেখা জনসমক্ষে তুলে ধরা হবে। দুটি প্রকল্পেই আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন গবেষক ও অধ্যাপকরা নেতৃত্ব দিচ্ছেন—মোনাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর নেয়াজ আসাদুল্লাহ এবং বুয়েটের অধ্যাপক কামরুল হাসান।

সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো দুর্নীতি বিষয়ক তথ্য সংগ্রহে পোস্ট বক্স, ই-মেইল এবং গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে তথ্য আহ্বান করেছে। যে কেউ প্রকল্পসংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগ দিতে পারবেন।

ব্রিফিংয়ের শেষাংশে ফয়েজ তৈয়্যব বলেন, “আমরা আড়াই হাজার কোটি টাকার অযৌক্তিক প্রকল্প বাদ দিয়েছি। বাজেটেও নতুন কোনো প্রকল্প তুলিনি। কারণ আমরা এখন পর্যন্ত যে অব্যবস্থাপনার মুখোমুখি হচ্ছি তা আগে নিরসন করতে চাই। এর ফলে হয়তো কিছু গোষ্ঠীর স্বার্থে আঘাত লাগছে, কিন্তু দেশের জন্য যেটা ভালো আমরা সেটাই করব।”

তিনি আরও বলেন, সরকারের এই উদ্যোগকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, যা দুঃখজনক। মিডিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা চাই, মিডিয়া তথ্যনিষ্ঠ এবং নিরপেক্ষ প্রতিবেদন তৈরি করুক। জনগণ জানুক সরকার কী করছে, কার স্বার্থে করছে এবং কাদের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হচ্ছে।”

-শরিফুল, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ